বিনায়ক সেন

এক. কেন ‘অর্থনৈতিক দর্শন’?
বঙ্গবন্ধুর ‘অর্থনৈতিক দর্শন’ শব্দটা কারও কারও কাছে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে। এ তো জানা কথাই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো প্রথাগত অর্থে ‘তাত্ত্বিক’ ছিলেন না, যেরকমটা আমরা সচরাচর ভাবতে অভ্যস্ত মার্কস, লেনিন, গান্ধী বা মাও সে তুংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি গতিধারা নিয়ে বঙ্গবন্ধু নানা সময়েই গভীরভাবে ভেবেছেন। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, নয়া চীন ভ্রমণের স্মৃতিচারণা, তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের ধারা-উপধারা, স্বাধীনতার আগে ও পরের বিভিন্ন ভাষণের সংগ্রহ প্রকাশের পর এখন আস্তে আস্তে একটি চিন্তাশীল মনের প্রতিকৃতি আমাদের সামনে ফুটে উঠছে, যা আগে ততটা দৃষ্টিগোচর হয়নি।
এই লেখাগুলো থেকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের কয়েকটি মৌলিক দিক শনাক্ত করা যায়। এসব দিকের শুধু ঐতিহাসিক মূল্যই রয়েছে তা নয়, বর্তমানের উন্নয়নধারার গতিমুখ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এদের পদ্ধতিগত মূল্য অপরিসীম। সাম্প্রতিক এক দশকে উন্নয়নের নৈতিক দিক, উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক, অর্থাৎ ‘আইডিয়া অব জাস্টিস’ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। পজিটিভ বনাম নর্মাটিভ সায়েন্সের মধ্যে কৃত্রিম দেয়াল তুলে যারা উটপাখির মতো নিজস্ব সীমিত মাইক্রো অথবা ম্যাক্রো অর্থনৈতিক বলয়ে সংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণা চালিয়ে গেছেন, তাঁরা এখন পড়েছেন বিপাকে। অর্থশাস্ত্রীয় গবেষণা ও নীতি প্রণয়নে আগের মতো আর নিছক ‘টেকনোক্রেটিক’ সমাধানের মধ্যে নিজেকে গণ্ডিবদ্ধ বা পরিতৃপ্ত করা যাচ্ছে না। টান দিতে হচ্ছে দারিদ্র্য, জিডিপি বা বৈষম্যের পরিমাপের পেছনের তত্ত্বাগত বিবেচনা ও মৌল অনুমান নিয়েই। প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রাধিকার নির্বাচনের পেছনের নৈতিক বিবেচনাবোধ নিয়ে।
এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়। সমগ্র বিশ্বেই একটি আত্মসমীক্ষা চলছে ইকোনমিকস ও এথিক্স নিয়ে। অমর্ত্য সেন ‘আইডিয়া অব জাস্টিস’ নিয়ে লিখেছেন, মাইকেল স্যান্ডেল লিখেছেন ‘দা টিরানি অব মেরিট’ তথাকথিত মেরিটক্রেসি-শাসিত সমাজের অন্ধকার দিকের কথা। এমনকি জাতিসংঘ ঘোষিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ (এসডিজি) এমন কতগুলো ‘কনসেপ্ট’ নিয়ে এসেছে, যার সূচক নির্মাণের জন্য প্রয়োজন প্রচুর নৈতিক আলোচনা। অন্যদিকে, এমন কিছু সূচক এর তালিকায় এসেছে, যা ‘ফলাফলের’ চেয়ে গুরুত্ব দেয় ‘প্রক্রিয়ার’ ওপরে। এসব কিছুর জন্যই আমাদের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতি হাত বাড়াতে হয়। এবং এই সূত্রেই বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনকে পুনরুদ্ধার ও পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়েই গড়ে উঠেছে বর্তমান লেখাটির সংক্ষিপ্ত উপজীব্য।
দুই. বঙ্গবন্ধুর ‘সুযোগের সমতার’ সমাজ
বঙ্গবন্ধু ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দটিকে নিজস্ব আদলে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ৭ জুন এক ভাষণে তিনি তাঁর অর্থও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন এভাবে: ‘এ সমাজতন্ত্র হলো বাংলার মানুষের সমাজতন্ত্র, তার অর্থ হলো শোষণহীন সমাজ, সম্পদের সুষম বণ্টন।’ সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহ, গণচীন প্রভৃতি দেশে যে সমাজতন্ত্র গড়ে উঠেছিল, তার সঙ্গে এর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এসব দেশে গণতন্ত্র নেই। আর বঙ্গবন্ধুর কথা হলো, ‘দুনিয়ায় আমি বাংলার মাটি থেকে দেখাতে চাই যে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমি সমাজতন্ত্রকে কায়েম করব।’ কেননা, ‘আমি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’ এ জন্যই তিনি বলেছেন, আমাদের সংবিধানের মূল স্তম্ভ যে ‘সমাজতন্ত্র’, তাকে ‘আমি দুনিয়া থেকে ভাড়া করে আনতে চাই না।’
প্রথাগত সমাজতন্ত্রের মডেল যেমন তিনি অনুসরণ করতে চান না, তেমনি তিনি উদ্গ্রীব নন সুইডেন-নরওয়ে স্টাইলের ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সোশ্যালিজমের’ প্রতি। এমনকি আগ্রহী নন ব্রিটেনের লেবার পার্টির সোশ্যালিজমের প্রতিও। কেননা, তিনি জানেন যে এসব দেশের মাথা পিছু আয়, কর-জিডিপির অনুপাত, ট্যাক্সিং-স্পেনডিং পাওয়ার আমাদের দেশের চেয়ে অনেক ওপরে। ৭২ সালে এই তুলনামূলক ব্যবধান ছিল আরও বেশি মাত্রায় প্রকট। একটি পশ্চাৎপদ কৃষিপ্রধান দেশে গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রেখে সমাজতন্ত্র নির্মাণের পথ যে ইউরোপের চেয়ে আলাদা হবে, তা তার অজানা ছিল না।
অনেকেই মনে করে থাকেন যে বঙ্গবন্ধু ওপরের কথাগুলো বুঝি ১৯৭২ সালেই এসে প্রথমে বলেছেন। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর কিছুকাল স্থবির হয়েছিল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আইয়ুবের আমলে। সেখান থেকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ ১৯৬৪ সালে। সেই পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁরই নেতৃত্বে প্রণীত হয় পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নতুন করে নির্মিত ঘোষণা ও কর্মসূচি। এ সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করে তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদে বলেছিলেন: ‘১৯৬৪ সালের মার্চ মাসের ৬, ৭, ৮ তারিখে ঢাকার গ্রিন রোডের আমবাগানে যে কাউন্সিল অধিবেশন [হয়েছিল], তাতে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে পরিষ্কার ভাষায় এ দেশের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন ধাপে জাতীয়করণের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার বিধান আওয়ামী লীগের ইশতেহারে গৃহীত হয়। তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরবচ্ছিন্নভাবে এ দেশে সমাজতন্ত্রের কথা বলে এসেছেন। আগে সমাজতন্ত্রের কথা মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝত না।’
সমাজতন্ত্র সম্পর্কে পরিষ্কার বুঝের জন্য দুটি কথা ব্যাখ্যা করা জরুরি। প্রথমত, সমাজতন্ত্র শব্দটিকে বঙ্গবন্ধু জাতীয়করণ তথা রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার নামান্তর বলে মনে করেননি। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র ছিল ‘just and egalitarian society’র সমাজ। ন্যায়ানুগ ও সমতাবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানুষের মধ্যে ‘সুযোগের সমতা’ (বা ‘ইকুয়ালিটি অব অপরচুনিটি’) প্রতিষ্ঠা করে। এবং এটা করতে হবে গণতন্ত্রের নিয়মকানুন, প্রথা-মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে; কোনো একনায়কতন্ত্র বা অসহিষ্ণুপনা প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে নয়। দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে এক কথা আর ক্ষমতায় যাওয়ার পরে আরেক কথা—এ রকম দ্বৈত সত্তা বঙ্গবন্ধুর ছিল না। নইলে সত্তরের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের বৈরী পরিবেশের ভেতরে বাস করে তিনি সমাজতন্ত্রের কথা তুলতে পারতেন না জনরায়ের জন্য।
এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ১০ অক্টোবর রেডিও পাকিস্তান থেকে প্রচারিত লিখিত ভাষণে পূর্ব বাংলার জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন: ‘আমাদের বিশ্বাস, শাসনতান্ত্রিক এই কাঠামোর মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশে একটা সামাজিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব এবং অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’ নির্বাচনের আগেই তিনি বলেন ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা বিলোপ, জায়গিরদারি-জমিদারি-সরদারি প্রভৃতি সামন্তবাদী মালিকানার অবসান, কৃষিব্যবস্থাকে প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ, ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে সরকারি খাসজমির বণ্টন, চাষিদের মধ্যে বহুমুখী সমবায় গঠন, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা, মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সবার জন্য খোলা রাখা, প্রতি ইউনিয়নে একটি করে পল্লি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং প্রতি থানা সদরে একটি করে হাসপাতাল করার কথা। ‘১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পরিসংখ্যান একটা ভয়াবহ সত্য’—এই একটি কথার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের চিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেদিন।
বঙ্গবন্ধু সেদিনের প্রাক-নির্বাচনী ভাষণে জাতীয়করণের গুরুত্বও তুলে ধরেছিলেন, তবে সেটা ব্যক্তিমালিকানাকে বাদ দিয়ে নয়। সেদিন তিনি বলেছিলেন: ‘জাতীয়করণের নামে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে অর্থনীতির মূল চাবিকাঠিগুলো জনগণের মালিকানায় আনা অত্যাবশ্যক বলে আমরা বিশ্বাস করি। [তবে] বেসরকারি পর্যায়ে এর নিজস্ব ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে। একচেটিয়াবাদ ও কার্টেল প্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলোপ সাধন করতে হবে।’
এ ছাড়া প্রাক-নির্বাচনী বক্তৃতায় দলের অসাম্প্রদায়িক নীতির কথা তিনি জোরের সঙ্গে তুলে ধরেন। পাকিস্তানের বৈরী পরিবেশে সেটি নির্বাচনী বক্তৃতায় আনার মতো দৃঢ় মেরুদণ্ড ও সৎসাহস তাঁর ছিল: ‘সকল নাগরিকের সমান অধিকারে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিশ্চয় জানা আছে যে, আমরা সব সময়ই সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে আসছি। সংখ্যালঘুরা অন্যান্য নাগরিকের মতোই সমান অধিকার ভোগ করবে। আইনের সমান রক্ষাকবচ সর্বক্ষেত্রেই পাবে।’
এ কথা প্রযোজ্য উপজাতীয় এলাকার ক্ষেত্রেও। এই সৎসাহসের প্রতি অমর্ত্য সেন সম্প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ভারত এই সেক্যুলার নীতি থেকে হালের বছরগুলোতে ক্রমশ সরে আসছে। বঙ্গবন্ধুকে তিনি শুধু ‘Friend of Bengal’ না বলে গোটা ‘বিশ্বেরই বন্ধু’ বলে অভিহিত করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন Friend of the World —এভাবে আমরা তাঁকে নতুনভাবে চিনতে পারি।
তিন. বঙ্গবন্ধুর ‘সুষম বণ্টনের সমাজ’ এবং এসডিজি
এবারে বোধকরি বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের’ অর্থ কিছুটা হলেও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। আগেই বলেছি, সমাজতন্ত্র মানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাভিত্তিক সমাজ নয়। সমাজতন্ত্রকে এমনকি শুধু সম্পত্তির ওপরে মালিকানার নিরিখে বিচার করা বলে না। মালিকানার বিচার সমাজতন্ত্রের একটি মূল দিক, তবে একমাত্র দিক নয়, প্রধানতম দিকও নয়। এর কারণ, সমাজতন্ত্র প্রতিশ্রুতি দেয় প্রত্যেক নাগরিককে ‘সুযোগের সমতা’ অধিকারের। সুযোগের সমতা বা equality of opportunity সমাজতন্ত্রের মৌলিক শর্তের একটি অবশ্যপূরণীয় শর্ত।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের সুবিখ্যাত ১৩ নং অনুচ্ছেদে আমরা পাই সামাজিক মালিকানার কথা, তথা জনগণের মালিকানার কথা। সেটা বলতে শুধু জাতীয়করণকৃত কলকারখানা বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়নি। সেখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায়ী মালিকানা ও ব্যক্তিমালিকানার সমন্বয়ে মিশ্র মালিকানা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর চোখে সামাজিক মালিকানার অর্থ মালিকানার উপরিউক্ত তিনটি ফরম। আসল কথা হচ্ছে, মালিকানা সে রাষ্ট্রীয় হোক বা ব্যক্তিমালিকানাই হোক, তা উদ্দেশ্য সিদ্ধির ‘উপায়’মাত্র। উপায় ও উদ্দেশ্যের মধ্যে গুলিয়ে ফেললে সমাজতন্ত্রের চরিত্রে বিকৃতি দেখা দিতে বাধ্য। মালিকানা সম্পর্কের বিশুদ্ধতা রক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনকল্যাণ। সে জন্যই বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ কী তা বোঝার জন্য পরিণামবাদী (Consequentialist) দৃষ্টিভঙ্গিকে আশ্রয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজতন্ত্রকে কার্যকর করতে হলে তাকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ভাষায় কথা বলতে হবে, ‘অধিকারের ভাষায়’ কথা বলতে শিখতে হবে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের ১৯ ও ২০ নম্বর অনুচ্ছেদ।
১৯ নং অনুচ্ছেদের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুযোগের সমতার’ কথা, আর এর ২ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুষম বণ্টনের কথা’। ১ নং ধারায় বলা হয়েছে: ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ আজকে যেটা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-এর ১ নং (No Poverty), ২ নং (Zero Hunger), ৩ নং (Good Health & Well-being), ৪ নং (Quality Education), ৫ নং (Gender Equality), ৬ নং (Clean Water and Sanitation), ৭ নং (Affordable & Clean Energy), এবং ৮ নং (Decent Work & Economic Growth) লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের ইশতেহার, ’৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার এবং ’৭২ সালের সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৫ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’ পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল ‘পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে’ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা এবং এর মাধ্যমে ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা’ করার কথা। শুধু বিষয়টাকে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যেই সীমিত রাখা হয়নি। সেখানে আরও বলা ছিল ‘কর্মের অধিকার’ নিশ্চিত করার কথা এবং ‘যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার’ প্রদানের গুরুত্ব। যাঁরা পিছিয়ে পড়ে থাকবেন দারিদ্র্যের বিষ-বৃত্তের ভেতরে, তাঁদের প্রতি রাষ্ট্র সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
হাল আমলের তথাকথিত ‘সোশ্যাল প্রোটেকশন’ কর্মসূচির বহু আগেই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটতম সহকর্মীদের চিন্তায় এসেছিল পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার কথা, যার সংজ্ঞা ছিল নিম্নরূপ: ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার।’
শুধু ‘সুযোগের সমতার’ অধিকার নয়, আরও বেশি কিছু ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনে। তিনি বুঝেছিলেন যে ইকুয়ালিটি অব অপরচুনিটি সুষম বণ্টনের সমাজের দিকে এগোনোর একটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত বটে, কিন্তু যথেষ্ট পূর্বশর্ত নয়। সমাজের একটি মুষ্টিমেয় অংশই উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ লাভ করে দরিদ্র দশা থেকে সচ্ছল দশায় উন্নীত হতে পারবে। সবার ক্ষেত্রে অদৃষ্ট সমান প্রসন্ন হয় না, সবার ন্যাচারাল ব্যুৎপত্তি বা প্রতিভাও সমান নয়। কিন্তু তাই বলে কি যারা দীনের চেয়ে দীন, যারা আজীবন কায়িক শ্রমের ভেতরে, খেটে খাওয়া মানুষ যাদের বলি, তাদের কাজের কি মূল্যায়ন করা হবে না? তারা কি ফ্রন্টলাইন বা অ্যাসেনশিয়াল ওয়ার্কার্স হিসেবে স্বীকৃত ও সম্মানিত হবে না? তাদের কি সমান ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা (Common Good) পাওয়ার অধিকার নেই?
বঙ্গবন্ধু এই লক্ষ্যে বিশেষ করে ১৪ নং অনুচ্ছেদের প্রস্তাব করেছিলেন: ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’ এবং তার জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে মেহনতি মানুষকে সহায়তা করতে হবে, দেখভাল করতে হবে। আজকের Universal Basic Income-এর ধারণার পূর্ব ছায়াও আমরা এখানে দেখতে পাই। অন্যত্র ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রকারান্তরে তিনি উল্লেখ করলেন ‘equality of outcomes’-এর কথা। এটি এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রা ‘বৈষম্য হ্রাস করার’ সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সেদিন তিনি বলেছিলেন: ‘এই সরকার ন্যায়ভিত্তিক ও গ্রামীণ জীবনের মধ্যকার বৈষম্য সম্পর্কে সচেতন। সেই সব ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার, যাঁরা পাট চাষিদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে মানুষ হয়েছেন, তাঁদের গ্রামে ফিরে যেতে হবে। আমি ইতিমধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামে কাজ করার জন্য ৫০০ ডাক্তার নিযুক্ত করেছি। বাংলাদেশে মানুষ মানুষে ব্যক্তিত্বে বৈষম্য থাকবে না। সম্পদের বণ্টনব্যবস্থায় সমতা আনতে হবে এবং উচ্চতর আয় ও নিম্নতর উপার্জনের ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বৈষম্য এত দিন ধরে বিরাজ করছিল, সেটা দূর করার ব্যবস্থাদি উদ্ভাবনের জন্য আমি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার কথা বিবেচনা করছি।’
বঙ্গবন্ধুর এই উপলব্ধিই বাহাত্তরের সংবিধানের ১৯ (২) ধারায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ’ করার জন্য এবং নাগরিকদের মধ্যে ‘সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত’ করার জন্য ‘সর্বত্র সুষম সুযোগ-সুবিধা’ প্রদানে রাষ্ট্রের তরফে ‘কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ’ করার কথা। পরিশেষে, ২০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল শ্রম অনুযায়ী বণ্টনের কথা: ‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্য অনুসারে এবং প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী’ এই নীতির ভিত্তিতে ‘প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।’ অর্থাৎ, নারী-পুরুষ, জাতি-বর্ণনির্বিশেষে সমান কর্মের জন্য অসমান পারিশ্রমিক সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে পরিগণিত হবে। এখানে এসডিজির ৫ নং লক্ষ্যমাত্রা (Gender Equality) এবং ৮ নং (Decent Work & Economic Growth)-এর সাদৃশ্য দৃশ্যমান।
৪. দুটো অভিযোগের উত্তরে
সবশেষে, বঙ্গবন্ধুর উপরিউক্ত অর্থনৈতিক দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটো অভিযোগের কথা তুলতে চাই। একটি অভিযোগ বেশি শোনা যায় ‘বামপন্থী’ অবস্থান থেকে, আরেকটি ‘ডানপন্থী’ অবস্থান থেকে। ‘বামপন্থী’ অভিযোগের মর্মার্থ হলো, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত ১৫ নং ধারার ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’, ১৭ নং ধারার ‘অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা’, ১৮ নং ধারার ‘জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা’, ১৯ নং ধারার ‘সুযোগের সমতা’ এবং ২০ নং ধারার ‘কর্মের অধিকার ও সম্মান’—এ সবই সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার ‘মূলনীতির’ অধ্যায়ে সন্নিবেশিত কেবল। এসব ‘ভালো ভালো’ কথা সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে স্থান পায়নি। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মৌলিক অধিকার অধ্যায়ে স্থান পেলে এসব বাস্তবায়নের পেছনে রাষ্ট্রের সচেষ্ট দায়বদ্ধতা থাকত। বঙ্গবন্ধু (ও তাঁর নিকটতম সহকর্মীরা) এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন। পাল্টা যুক্তি তাঁরা দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালেই গণপরিষদে সংবিধান নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন। তাঁদের যুক্তি ছিল, ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে যেসব অধিকার দেওয়া আছে, সেগুলোর আশু বাস্তবায়ন না ঘটলে বা ব্যত্যয় ঘটলে তার জন্য নাগরিকেরা অবিলম্বে কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি সুবিধা আশু-ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলেই এসব উন্নয়ন-ধারাকে রাষ্ট্রের ‘মৌলিক নীতিমালার’ ভেতরে রাখা হয়েছে ‘ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নযোগ্য অধিকার’ হিসেবে বা যাকে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী বলেছেন ‘progressively realizable rights’ বলে। প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের সক্ষমতা বাড়তে থাকলে এসব অধ্যায়কে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে চিহ্নিত করা সহজতর হবে।
এবার আসি ‘ডানপন্থী’ অভিযোগের বিষয়ে। ইতিপূর্বে আমি বলেছি, বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’কে কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করতে চাননি। তিনি নাগরিকের কল্যাণ, স্বাধীনতা ও ‘অধিকারের’ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে আত্মস্থ করেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা বিধান করা এবং ক্রমান্বয়ে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা (যেটা এখন এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রায় বিধৃত হয়েছে)। ডানপন্থীদের অভিযোগ হলো, তাহলে ১৯৭২ সালে এত তড়িঘড়ি করে ‘জাতীয়করণ’ করা হলো কেন এবং কেনই বা ব্যক্তি-পুঁজির বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেওয়া হলো? এ নিয়ে নানাজনই লিখেছেন আগে, সম্প্রতি আমিও লিখেছি। এখানে পাল্টা যুক্তি হচ্ছে ত্রিবিধ। প্রথমত, জাতীয়করণকৃত বেশির ভাগ কলকারখানার বা পরিসম্পদের মালিকানা ছিল অবাঙালি শিল্পপতিদের হাতে। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বা চলাকালীনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তাঁদের ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাপয়সা সব তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। বাংলাদেশেও বাইশ পরিবারের মতো অর্থনৈতিক সম্পদ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটুক, সেটি বঙ্গবন্ধু কখনোই চাননি। এ জন্যই প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যক্তি-পুঁজিকে সর্বতো উপায়ে সহায়তা দেওয়া হয়, কিন্তু বৃহৎ ব্যক্তি-পুঁজির বিকাশকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। কালক্রমে (১৯৭৪ সালেই) বৃহৎ ব্যক্তি পুঁজির ‘সিলিং’ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা তখনকার দিনের বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তার বিকাশের জন্য যথেষ্ট পরিসরই দিয়েছিল। তৃতীয়ত, গত চার দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ ‘রপ্তানিমূলক’ শিল্পে এবং সাম্প্রতিক দশকে ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদামুখীন’ শিল্পে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সুস্থ ব্যক্তি খাতের বিকাশের পথে বিনিয়োগের সিলিং-জনিত প্রতিবন্ধকতা কৃত্রিমভাবে আরোপ করার প্রয়োজনীয়তাও অনেক আগেই নিঃশেষিত হয়েছে। কিন্তু তার মানে কি এই যে, ব্যক্তি-পুঁজির ওপরে রাষ্ট্রের ‘নজরদারির’ প্রয়োজনীয়তাও সেই সঙ্গে লুপ্ত হয়ে গেছে? ‘মার্কেট-ফ্রেন্ডলি’ হওয়া এবং ‘বিজনেস-ফ্রেন্ডলি’ হওয়া তো সমার্থক শব্দ নয়। ২০১০-এর দশকের অভিজ্ঞতা এখানে মিশ্র তথ্য-প্রমাণ দিচ্ছে।
ব্যক্তি খাতের সাফল্যের পাশাপাশি সরকারি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যক্তি খাতের দায়দেনাও (Default) বিস্তর এবং ক্রমবর্ধমান। যে হারে ব্যক্তি খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটেছে ২০১০-এর দশকে, সেই হারে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়েনি। ফলে সামাজিক কল্যাণের ক্ষেত্রে বা Common Goods সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের যে ভূমিকা প্রত্যাশিত ছিল, তা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসেনি।
‘মার্কেট ইকোনমি’ হওয়ার পাশাপাশি আমরা যেন অতিদ্রুত ‘মার্কেট সোসাইটিতে’ পরিণত হচ্ছি। মার্কেট ইকোনমি আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার এ দেশে, কোনো সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা যেন উত্তরোত্তর কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত না হয়ে কেবল মার্কেট সোসাইটিতে রূপান্তরিত না হই। শেষোক্ত সমাজে সবকিছু, সব মূল্যবোধই, শেষ পর্যন্ত ‘কেনাবেচার’ সামগ্রীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেটা বিদ্যাদান, চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে ‘সামাজিক উদ্যোগ’, এমনকি আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পর্যন্ত। এ ধরনের সমাজ শেষাবধি মানুষের বাসযোগ্য ভূমি থাকে না। বঙ্গবন্ধুর দর্শনে এ ধরনের ডিস্টোপিয়ান ‘মার্কেট-সোসাইটির’ কোনো স্থান ছিল না। এ জন্যই তাঁকে জনগণের তদারকি, জনগণের মালিকানা ও জনস্বার্থের প্রয়োজনে সংবিধানের ৪৭ নং অনুচ্ছেদ যুক্ত করতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান নৈয়ায়িক দার্শনিক জন রাউলস, অমর্ত্য সেন ও মাইকেল স্যান্ডেলের অনুবর্তী। আমাদের সমাজের স্বভাবত ধর্মবিহিত মূল্যবোধ এই অবস্থানের প্রতিই সমর্থন জানায়।
বিনায়ক সেন
অর্থনীতিবিদ

এক. কেন ‘অর্থনৈতিক দর্শন’?
বঙ্গবন্ধুর ‘অর্থনৈতিক দর্শন’ শব্দটা কারও কারও কাছে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে। এ তো জানা কথাই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো প্রথাগত অর্থে ‘তাত্ত্বিক’ ছিলেন না, যেরকমটা আমরা সচরাচর ভাবতে অভ্যস্ত মার্কস, লেনিন, গান্ধী বা মাও সে তুংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি গতিধারা নিয়ে বঙ্গবন্ধু নানা সময়েই গভীরভাবে ভেবেছেন। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, নয়া চীন ভ্রমণের স্মৃতিচারণা, তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের ধারা-উপধারা, স্বাধীনতার আগে ও পরের বিভিন্ন ভাষণের সংগ্রহ প্রকাশের পর এখন আস্তে আস্তে একটি চিন্তাশীল মনের প্রতিকৃতি আমাদের সামনে ফুটে উঠছে, যা আগে ততটা দৃষ্টিগোচর হয়নি।
এই লেখাগুলো থেকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের কয়েকটি মৌলিক দিক শনাক্ত করা যায়। এসব দিকের শুধু ঐতিহাসিক মূল্যই রয়েছে তা নয়, বর্তমানের উন্নয়নধারার গতিমুখ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এদের পদ্ধতিগত মূল্য অপরিসীম। সাম্প্রতিক এক দশকে উন্নয়নের নৈতিক দিক, উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক, অর্থাৎ ‘আইডিয়া অব জাস্টিস’ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। পজিটিভ বনাম নর্মাটিভ সায়েন্সের মধ্যে কৃত্রিম দেয়াল তুলে যারা উটপাখির মতো নিজস্ব সীমিত মাইক্রো অথবা ম্যাক্রো অর্থনৈতিক বলয়ে সংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণা চালিয়ে গেছেন, তাঁরা এখন পড়েছেন বিপাকে। অর্থশাস্ত্রীয় গবেষণা ও নীতি প্রণয়নে আগের মতো আর নিছক ‘টেকনোক্রেটিক’ সমাধানের মধ্যে নিজেকে গণ্ডিবদ্ধ বা পরিতৃপ্ত করা যাচ্ছে না। টান দিতে হচ্ছে দারিদ্র্য, জিডিপি বা বৈষম্যের পরিমাপের পেছনের তত্ত্বাগত বিবেচনা ও মৌল অনুমান নিয়েই। প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রাধিকার নির্বাচনের পেছনের নৈতিক বিবেচনাবোধ নিয়ে।
এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়। সমগ্র বিশ্বেই একটি আত্মসমীক্ষা চলছে ইকোনমিকস ও এথিক্স নিয়ে। অমর্ত্য সেন ‘আইডিয়া অব জাস্টিস’ নিয়ে লিখেছেন, মাইকেল স্যান্ডেল লিখেছেন ‘দা টিরানি অব মেরিট’ তথাকথিত মেরিটক্রেসি-শাসিত সমাজের অন্ধকার দিকের কথা। এমনকি জাতিসংঘ ঘোষিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ (এসডিজি) এমন কতগুলো ‘কনসেপ্ট’ নিয়ে এসেছে, যার সূচক নির্মাণের জন্য প্রয়োজন প্রচুর নৈতিক আলোচনা। অন্যদিকে, এমন কিছু সূচক এর তালিকায় এসেছে, যা ‘ফলাফলের’ চেয়ে গুরুত্ব দেয় ‘প্রক্রিয়ার’ ওপরে। এসব কিছুর জন্যই আমাদের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতি হাত বাড়াতে হয়। এবং এই সূত্রেই বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনকে পুনরুদ্ধার ও পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়েই গড়ে উঠেছে বর্তমান লেখাটির সংক্ষিপ্ত উপজীব্য।
দুই. বঙ্গবন্ধুর ‘সুযোগের সমতার’ সমাজ
বঙ্গবন্ধু ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দটিকে নিজস্ব আদলে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ৭ জুন এক ভাষণে তিনি তাঁর অর্থও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন এভাবে: ‘এ সমাজতন্ত্র হলো বাংলার মানুষের সমাজতন্ত্র, তার অর্থ হলো শোষণহীন সমাজ, সম্পদের সুষম বণ্টন।’ সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহ, গণচীন প্রভৃতি দেশে যে সমাজতন্ত্র গড়ে উঠেছিল, তার সঙ্গে এর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এসব দেশে গণতন্ত্র নেই। আর বঙ্গবন্ধুর কথা হলো, ‘দুনিয়ায় আমি বাংলার মাটি থেকে দেখাতে চাই যে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমি সমাজতন্ত্রকে কায়েম করব।’ কেননা, ‘আমি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’ এ জন্যই তিনি বলেছেন, আমাদের সংবিধানের মূল স্তম্ভ যে ‘সমাজতন্ত্র’, তাকে ‘আমি দুনিয়া থেকে ভাড়া করে আনতে চাই না।’
প্রথাগত সমাজতন্ত্রের মডেল যেমন তিনি অনুসরণ করতে চান না, তেমনি তিনি উদ্গ্রীব নন সুইডেন-নরওয়ে স্টাইলের ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সোশ্যালিজমের’ প্রতি। এমনকি আগ্রহী নন ব্রিটেনের লেবার পার্টির সোশ্যালিজমের প্রতিও। কেননা, তিনি জানেন যে এসব দেশের মাথা পিছু আয়, কর-জিডিপির অনুপাত, ট্যাক্সিং-স্পেনডিং পাওয়ার আমাদের দেশের চেয়ে অনেক ওপরে। ৭২ সালে এই তুলনামূলক ব্যবধান ছিল আরও বেশি মাত্রায় প্রকট। একটি পশ্চাৎপদ কৃষিপ্রধান দেশে গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রেখে সমাজতন্ত্র নির্মাণের পথ যে ইউরোপের চেয়ে আলাদা হবে, তা তার অজানা ছিল না।
অনেকেই মনে করে থাকেন যে বঙ্গবন্ধু ওপরের কথাগুলো বুঝি ১৯৭২ সালেই এসে প্রথমে বলেছেন। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর কিছুকাল স্থবির হয়েছিল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আইয়ুবের আমলে। সেখান থেকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ ১৯৬৪ সালে। সেই পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁরই নেতৃত্বে প্রণীত হয় পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নতুন করে নির্মিত ঘোষণা ও কর্মসূচি। এ সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করে তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদে বলেছিলেন: ‘১৯৬৪ সালের মার্চ মাসের ৬, ৭, ৮ তারিখে ঢাকার গ্রিন রোডের আমবাগানে যে কাউন্সিল অধিবেশন [হয়েছিল], তাতে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে পরিষ্কার ভাষায় এ দেশের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন ধাপে জাতীয়করণের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার বিধান আওয়ামী লীগের ইশতেহারে গৃহীত হয়। তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরবচ্ছিন্নভাবে এ দেশে সমাজতন্ত্রের কথা বলে এসেছেন। আগে সমাজতন্ত্রের কথা মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝত না।’
সমাজতন্ত্র সম্পর্কে পরিষ্কার বুঝের জন্য দুটি কথা ব্যাখ্যা করা জরুরি। প্রথমত, সমাজতন্ত্র শব্দটিকে বঙ্গবন্ধু জাতীয়করণ তথা রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার নামান্তর বলে মনে করেননি। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র ছিল ‘just and egalitarian society’র সমাজ। ন্যায়ানুগ ও সমতাবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানুষের মধ্যে ‘সুযোগের সমতা’ (বা ‘ইকুয়ালিটি অব অপরচুনিটি’) প্রতিষ্ঠা করে। এবং এটা করতে হবে গণতন্ত্রের নিয়মকানুন, প্রথা-মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে; কোনো একনায়কতন্ত্র বা অসহিষ্ণুপনা প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে নয়। দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে এক কথা আর ক্ষমতায় যাওয়ার পরে আরেক কথা—এ রকম দ্বৈত সত্তা বঙ্গবন্ধুর ছিল না। নইলে সত্তরের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের বৈরী পরিবেশের ভেতরে বাস করে তিনি সমাজতন্ত্রের কথা তুলতে পারতেন না জনরায়ের জন্য।
এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ১০ অক্টোবর রেডিও পাকিস্তান থেকে প্রচারিত লিখিত ভাষণে পূর্ব বাংলার জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন: ‘আমাদের বিশ্বাস, শাসনতান্ত্রিক এই কাঠামোর মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশে একটা সামাজিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব এবং অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’ নির্বাচনের আগেই তিনি বলেন ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা বিলোপ, জায়গিরদারি-জমিদারি-সরদারি প্রভৃতি সামন্তবাদী মালিকানার অবসান, কৃষিব্যবস্থাকে প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ, ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে সরকারি খাসজমির বণ্টন, চাষিদের মধ্যে বহুমুখী সমবায় গঠন, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা, মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সবার জন্য খোলা রাখা, প্রতি ইউনিয়নে একটি করে পল্লি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং প্রতি থানা সদরে একটি করে হাসপাতাল করার কথা। ‘১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পরিসংখ্যান একটা ভয়াবহ সত্য’—এই একটি কথার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের চিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেদিন।
বঙ্গবন্ধু সেদিনের প্রাক-নির্বাচনী ভাষণে জাতীয়করণের গুরুত্বও তুলে ধরেছিলেন, তবে সেটা ব্যক্তিমালিকানাকে বাদ দিয়ে নয়। সেদিন তিনি বলেছিলেন: ‘জাতীয়করণের নামে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে অর্থনীতির মূল চাবিকাঠিগুলো জনগণের মালিকানায় আনা অত্যাবশ্যক বলে আমরা বিশ্বাস করি। [তবে] বেসরকারি পর্যায়ে এর নিজস্ব ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে। একচেটিয়াবাদ ও কার্টেল প্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলোপ সাধন করতে হবে।’
এ ছাড়া প্রাক-নির্বাচনী বক্তৃতায় দলের অসাম্প্রদায়িক নীতির কথা তিনি জোরের সঙ্গে তুলে ধরেন। পাকিস্তানের বৈরী পরিবেশে সেটি নির্বাচনী বক্তৃতায় আনার মতো দৃঢ় মেরুদণ্ড ও সৎসাহস তাঁর ছিল: ‘সকল নাগরিকের সমান অধিকারে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিশ্চয় জানা আছে যে, আমরা সব সময়ই সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে আসছি। সংখ্যালঘুরা অন্যান্য নাগরিকের মতোই সমান অধিকার ভোগ করবে। আইনের সমান রক্ষাকবচ সর্বক্ষেত্রেই পাবে।’
এ কথা প্রযোজ্য উপজাতীয় এলাকার ক্ষেত্রেও। এই সৎসাহসের প্রতি অমর্ত্য সেন সম্প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ভারত এই সেক্যুলার নীতি থেকে হালের বছরগুলোতে ক্রমশ সরে আসছে। বঙ্গবন্ধুকে তিনি শুধু ‘Friend of Bengal’ না বলে গোটা ‘বিশ্বেরই বন্ধু’ বলে অভিহিত করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন Friend of the World —এভাবে আমরা তাঁকে নতুনভাবে চিনতে পারি।
তিন. বঙ্গবন্ধুর ‘সুষম বণ্টনের সমাজ’ এবং এসডিজি
এবারে বোধকরি বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের’ অর্থ কিছুটা হলেও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। আগেই বলেছি, সমাজতন্ত্র মানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাভিত্তিক সমাজ নয়। সমাজতন্ত্রকে এমনকি শুধু সম্পত্তির ওপরে মালিকানার নিরিখে বিচার করা বলে না। মালিকানার বিচার সমাজতন্ত্রের একটি মূল দিক, তবে একমাত্র দিক নয়, প্রধানতম দিকও নয়। এর কারণ, সমাজতন্ত্র প্রতিশ্রুতি দেয় প্রত্যেক নাগরিককে ‘সুযোগের সমতা’ অধিকারের। সুযোগের সমতা বা equality of opportunity সমাজতন্ত্রের মৌলিক শর্তের একটি অবশ্যপূরণীয় শর্ত।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের সুবিখ্যাত ১৩ নং অনুচ্ছেদে আমরা পাই সামাজিক মালিকানার কথা, তথা জনগণের মালিকানার কথা। সেটা বলতে শুধু জাতীয়করণকৃত কলকারখানা বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়নি। সেখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায়ী মালিকানা ও ব্যক্তিমালিকানার সমন্বয়ে মিশ্র মালিকানা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর চোখে সামাজিক মালিকানার অর্থ মালিকানার উপরিউক্ত তিনটি ফরম। আসল কথা হচ্ছে, মালিকানা সে রাষ্ট্রীয় হোক বা ব্যক্তিমালিকানাই হোক, তা উদ্দেশ্য সিদ্ধির ‘উপায়’মাত্র। উপায় ও উদ্দেশ্যের মধ্যে গুলিয়ে ফেললে সমাজতন্ত্রের চরিত্রে বিকৃতি দেখা দিতে বাধ্য। মালিকানা সম্পর্কের বিশুদ্ধতা রক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনকল্যাণ। সে জন্যই বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ কী তা বোঝার জন্য পরিণামবাদী (Consequentialist) দৃষ্টিভঙ্গিকে আশ্রয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজতন্ত্রকে কার্যকর করতে হলে তাকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ভাষায় কথা বলতে হবে, ‘অধিকারের ভাষায়’ কথা বলতে শিখতে হবে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের ১৯ ও ২০ নম্বর অনুচ্ছেদ।
১৯ নং অনুচ্ছেদের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুযোগের সমতার’ কথা, আর এর ২ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুষম বণ্টনের কথা’। ১ নং ধারায় বলা হয়েছে: ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ আজকে যেটা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-এর ১ নং (No Poverty), ২ নং (Zero Hunger), ৩ নং (Good Health & Well-being), ৪ নং (Quality Education), ৫ নং (Gender Equality), ৬ নং (Clean Water and Sanitation), ৭ নং (Affordable & Clean Energy), এবং ৮ নং (Decent Work & Economic Growth) লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের ইশতেহার, ’৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার এবং ’৭২ সালের সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৫ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’ পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল ‘পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে’ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা এবং এর মাধ্যমে ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা’ করার কথা। শুধু বিষয়টাকে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যেই সীমিত রাখা হয়নি। সেখানে আরও বলা ছিল ‘কর্মের অধিকার’ নিশ্চিত করার কথা এবং ‘যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার’ প্রদানের গুরুত্ব। যাঁরা পিছিয়ে পড়ে থাকবেন দারিদ্র্যের বিষ-বৃত্তের ভেতরে, তাঁদের প্রতি রাষ্ট্র সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
হাল আমলের তথাকথিত ‘সোশ্যাল প্রোটেকশন’ কর্মসূচির বহু আগেই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটতম সহকর্মীদের চিন্তায় এসেছিল পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার কথা, যার সংজ্ঞা ছিল নিম্নরূপ: ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার।’
শুধু ‘সুযোগের সমতার’ অধিকার নয়, আরও বেশি কিছু ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনে। তিনি বুঝেছিলেন যে ইকুয়ালিটি অব অপরচুনিটি সুষম বণ্টনের সমাজের দিকে এগোনোর একটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত বটে, কিন্তু যথেষ্ট পূর্বশর্ত নয়। সমাজের একটি মুষ্টিমেয় অংশই উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ লাভ করে দরিদ্র দশা থেকে সচ্ছল দশায় উন্নীত হতে পারবে। সবার ক্ষেত্রে অদৃষ্ট সমান প্রসন্ন হয় না, সবার ন্যাচারাল ব্যুৎপত্তি বা প্রতিভাও সমান নয়। কিন্তু তাই বলে কি যারা দীনের চেয়ে দীন, যারা আজীবন কায়িক শ্রমের ভেতরে, খেটে খাওয়া মানুষ যাদের বলি, তাদের কাজের কি মূল্যায়ন করা হবে না? তারা কি ফ্রন্টলাইন বা অ্যাসেনশিয়াল ওয়ার্কার্স হিসেবে স্বীকৃত ও সম্মানিত হবে না? তাদের কি সমান ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা (Common Good) পাওয়ার অধিকার নেই?
বঙ্গবন্ধু এই লক্ষ্যে বিশেষ করে ১৪ নং অনুচ্ছেদের প্রস্তাব করেছিলেন: ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’ এবং তার জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে মেহনতি মানুষকে সহায়তা করতে হবে, দেখভাল করতে হবে। আজকের Universal Basic Income-এর ধারণার পূর্ব ছায়াও আমরা এখানে দেখতে পাই। অন্যত্র ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রকারান্তরে তিনি উল্লেখ করলেন ‘equality of outcomes’-এর কথা। এটি এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রা ‘বৈষম্য হ্রাস করার’ সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সেদিন তিনি বলেছিলেন: ‘এই সরকার ন্যায়ভিত্তিক ও গ্রামীণ জীবনের মধ্যকার বৈষম্য সম্পর্কে সচেতন। সেই সব ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার, যাঁরা পাট চাষিদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে মানুষ হয়েছেন, তাঁদের গ্রামে ফিরে যেতে হবে। আমি ইতিমধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামে কাজ করার জন্য ৫০০ ডাক্তার নিযুক্ত করেছি। বাংলাদেশে মানুষ মানুষে ব্যক্তিত্বে বৈষম্য থাকবে না। সম্পদের বণ্টনব্যবস্থায় সমতা আনতে হবে এবং উচ্চতর আয় ও নিম্নতর উপার্জনের ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বৈষম্য এত দিন ধরে বিরাজ করছিল, সেটা দূর করার ব্যবস্থাদি উদ্ভাবনের জন্য আমি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার কথা বিবেচনা করছি।’
বঙ্গবন্ধুর এই উপলব্ধিই বাহাত্তরের সংবিধানের ১৯ (২) ধারায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ’ করার জন্য এবং নাগরিকদের মধ্যে ‘সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত’ করার জন্য ‘সর্বত্র সুষম সুযোগ-সুবিধা’ প্রদানে রাষ্ট্রের তরফে ‘কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ’ করার কথা। পরিশেষে, ২০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল শ্রম অনুযায়ী বণ্টনের কথা: ‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্য অনুসারে এবং প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী’ এই নীতির ভিত্তিতে ‘প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।’ অর্থাৎ, নারী-পুরুষ, জাতি-বর্ণনির্বিশেষে সমান কর্মের জন্য অসমান পারিশ্রমিক সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে পরিগণিত হবে। এখানে এসডিজির ৫ নং লক্ষ্যমাত্রা (Gender Equality) এবং ৮ নং (Decent Work & Economic Growth)-এর সাদৃশ্য দৃশ্যমান।
৪. দুটো অভিযোগের উত্তরে
সবশেষে, বঙ্গবন্ধুর উপরিউক্ত অর্থনৈতিক দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটো অভিযোগের কথা তুলতে চাই। একটি অভিযোগ বেশি শোনা যায় ‘বামপন্থী’ অবস্থান থেকে, আরেকটি ‘ডানপন্থী’ অবস্থান থেকে। ‘বামপন্থী’ অভিযোগের মর্মার্থ হলো, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত ১৫ নং ধারার ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’, ১৭ নং ধারার ‘অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা’, ১৮ নং ধারার ‘জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা’, ১৯ নং ধারার ‘সুযোগের সমতা’ এবং ২০ নং ধারার ‘কর্মের অধিকার ও সম্মান’—এ সবই সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার ‘মূলনীতির’ অধ্যায়ে সন্নিবেশিত কেবল। এসব ‘ভালো ভালো’ কথা সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে স্থান পায়নি। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মৌলিক অধিকার অধ্যায়ে স্থান পেলে এসব বাস্তবায়নের পেছনে রাষ্ট্রের সচেষ্ট দায়বদ্ধতা থাকত। বঙ্গবন্ধু (ও তাঁর নিকটতম সহকর্মীরা) এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন। পাল্টা যুক্তি তাঁরা দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালেই গণপরিষদে সংবিধান নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন। তাঁদের যুক্তি ছিল, ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে যেসব অধিকার দেওয়া আছে, সেগুলোর আশু বাস্তবায়ন না ঘটলে বা ব্যত্যয় ঘটলে তার জন্য নাগরিকেরা অবিলম্বে কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি সুবিধা আশু-ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলেই এসব উন্নয়ন-ধারাকে রাষ্ট্রের ‘মৌলিক নীতিমালার’ ভেতরে রাখা হয়েছে ‘ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নযোগ্য অধিকার’ হিসেবে বা যাকে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী বলেছেন ‘progressively realizable rights’ বলে। প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের সক্ষমতা বাড়তে থাকলে এসব অধ্যায়কে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে চিহ্নিত করা সহজতর হবে।
এবার আসি ‘ডানপন্থী’ অভিযোগের বিষয়ে। ইতিপূর্বে আমি বলেছি, বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’কে কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করতে চাননি। তিনি নাগরিকের কল্যাণ, স্বাধীনতা ও ‘অধিকারের’ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে আত্মস্থ করেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা বিধান করা এবং ক্রমান্বয়ে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা (যেটা এখন এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রায় বিধৃত হয়েছে)। ডানপন্থীদের অভিযোগ হলো, তাহলে ১৯৭২ সালে এত তড়িঘড়ি করে ‘জাতীয়করণ’ করা হলো কেন এবং কেনই বা ব্যক্তি-পুঁজির বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেওয়া হলো? এ নিয়ে নানাজনই লিখেছেন আগে, সম্প্রতি আমিও লিখেছি। এখানে পাল্টা যুক্তি হচ্ছে ত্রিবিধ। প্রথমত, জাতীয়করণকৃত বেশির ভাগ কলকারখানার বা পরিসম্পদের মালিকানা ছিল অবাঙালি শিল্পপতিদের হাতে। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বা চলাকালীনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তাঁদের ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাপয়সা সব তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। বাংলাদেশেও বাইশ পরিবারের মতো অর্থনৈতিক সম্পদ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটুক, সেটি বঙ্গবন্ধু কখনোই চাননি। এ জন্যই প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যক্তি-পুঁজিকে সর্বতো উপায়ে সহায়তা দেওয়া হয়, কিন্তু বৃহৎ ব্যক্তি-পুঁজির বিকাশকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। কালক্রমে (১৯৭৪ সালেই) বৃহৎ ব্যক্তি পুঁজির ‘সিলিং’ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা তখনকার দিনের বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তার বিকাশের জন্য যথেষ্ট পরিসরই দিয়েছিল। তৃতীয়ত, গত চার দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ ‘রপ্তানিমূলক’ শিল্পে এবং সাম্প্রতিক দশকে ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদামুখীন’ শিল্পে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সুস্থ ব্যক্তি খাতের বিকাশের পথে বিনিয়োগের সিলিং-জনিত প্রতিবন্ধকতা কৃত্রিমভাবে আরোপ করার প্রয়োজনীয়তাও অনেক আগেই নিঃশেষিত হয়েছে। কিন্তু তার মানে কি এই যে, ব্যক্তি-পুঁজির ওপরে রাষ্ট্রের ‘নজরদারির’ প্রয়োজনীয়তাও সেই সঙ্গে লুপ্ত হয়ে গেছে? ‘মার্কেট-ফ্রেন্ডলি’ হওয়া এবং ‘বিজনেস-ফ্রেন্ডলি’ হওয়া তো সমার্থক শব্দ নয়। ২০১০-এর দশকের অভিজ্ঞতা এখানে মিশ্র তথ্য-প্রমাণ দিচ্ছে।
ব্যক্তি খাতের সাফল্যের পাশাপাশি সরকারি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যক্তি খাতের দায়দেনাও (Default) বিস্তর এবং ক্রমবর্ধমান। যে হারে ব্যক্তি খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটেছে ২০১০-এর দশকে, সেই হারে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়েনি। ফলে সামাজিক কল্যাণের ক্ষেত্রে বা Common Goods সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের যে ভূমিকা প্রত্যাশিত ছিল, তা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসেনি।
‘মার্কেট ইকোনমি’ হওয়ার পাশাপাশি আমরা যেন অতিদ্রুত ‘মার্কেট সোসাইটিতে’ পরিণত হচ্ছি। মার্কেট ইকোনমি আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার এ দেশে, কোনো সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা যেন উত্তরোত্তর কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত না হয়ে কেবল মার্কেট সোসাইটিতে রূপান্তরিত না হই। শেষোক্ত সমাজে সবকিছু, সব মূল্যবোধই, শেষ পর্যন্ত ‘কেনাবেচার’ সামগ্রীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেটা বিদ্যাদান, চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে ‘সামাজিক উদ্যোগ’, এমনকি আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পর্যন্ত। এ ধরনের সমাজ শেষাবধি মানুষের বাসযোগ্য ভূমি থাকে না। বঙ্গবন্ধুর দর্শনে এ ধরনের ডিস্টোপিয়ান ‘মার্কেট-সোসাইটির’ কোনো স্থান ছিল না। এ জন্যই তাঁকে জনগণের তদারকি, জনগণের মালিকানা ও জনস্বার্থের প্রয়োজনে সংবিধানের ৪৭ নং অনুচ্ছেদ যুক্ত করতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান নৈয়ায়িক দার্শনিক জন রাউলস, অমর্ত্য সেন ও মাইকেল স্যান্ডেলের অনুবর্তী। আমাদের সমাজের স্বভাবত ধর্মবিহিত মূল্যবোধ এই অবস্থানের প্রতিই সমর্থন জানায়।
বিনায়ক সেন
অর্থনীতিবিদ
বিনায়ক সেন

এক. কেন ‘অর্থনৈতিক দর্শন’?
বঙ্গবন্ধুর ‘অর্থনৈতিক দর্শন’ শব্দটা কারও কারও কাছে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে। এ তো জানা কথাই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো প্রথাগত অর্থে ‘তাত্ত্বিক’ ছিলেন না, যেরকমটা আমরা সচরাচর ভাবতে অভ্যস্ত মার্কস, লেনিন, গান্ধী বা মাও সে তুংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি গতিধারা নিয়ে বঙ্গবন্ধু নানা সময়েই গভীরভাবে ভেবেছেন। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, নয়া চীন ভ্রমণের স্মৃতিচারণা, তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের ধারা-উপধারা, স্বাধীনতার আগে ও পরের বিভিন্ন ভাষণের সংগ্রহ প্রকাশের পর এখন আস্তে আস্তে একটি চিন্তাশীল মনের প্রতিকৃতি আমাদের সামনে ফুটে উঠছে, যা আগে ততটা দৃষ্টিগোচর হয়নি।
এই লেখাগুলো থেকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের কয়েকটি মৌলিক দিক শনাক্ত করা যায়। এসব দিকের শুধু ঐতিহাসিক মূল্যই রয়েছে তা নয়, বর্তমানের উন্নয়নধারার গতিমুখ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এদের পদ্ধতিগত মূল্য অপরিসীম। সাম্প্রতিক এক দশকে উন্নয়নের নৈতিক দিক, উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক, অর্থাৎ ‘আইডিয়া অব জাস্টিস’ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। পজিটিভ বনাম নর্মাটিভ সায়েন্সের মধ্যে কৃত্রিম দেয়াল তুলে যারা উটপাখির মতো নিজস্ব সীমিত মাইক্রো অথবা ম্যাক্রো অর্থনৈতিক বলয়ে সংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণা চালিয়ে গেছেন, তাঁরা এখন পড়েছেন বিপাকে। অর্থশাস্ত্রীয় গবেষণা ও নীতি প্রণয়নে আগের মতো আর নিছক ‘টেকনোক্রেটিক’ সমাধানের মধ্যে নিজেকে গণ্ডিবদ্ধ বা পরিতৃপ্ত করা যাচ্ছে না। টান দিতে হচ্ছে দারিদ্র্য, জিডিপি বা বৈষম্যের পরিমাপের পেছনের তত্ত্বাগত বিবেচনা ও মৌল অনুমান নিয়েই। প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রাধিকার নির্বাচনের পেছনের নৈতিক বিবেচনাবোধ নিয়ে।
এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়। সমগ্র বিশ্বেই একটি আত্মসমীক্ষা চলছে ইকোনমিকস ও এথিক্স নিয়ে। অমর্ত্য সেন ‘আইডিয়া অব জাস্টিস’ নিয়ে লিখেছেন, মাইকেল স্যান্ডেল লিখেছেন ‘দা টিরানি অব মেরিট’ তথাকথিত মেরিটক্রেসি-শাসিত সমাজের অন্ধকার দিকের কথা। এমনকি জাতিসংঘ ঘোষিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ (এসডিজি) এমন কতগুলো ‘কনসেপ্ট’ নিয়ে এসেছে, যার সূচক নির্মাণের জন্য প্রয়োজন প্রচুর নৈতিক আলোচনা। অন্যদিকে, এমন কিছু সূচক এর তালিকায় এসেছে, যা ‘ফলাফলের’ চেয়ে গুরুত্ব দেয় ‘প্রক্রিয়ার’ ওপরে। এসব কিছুর জন্যই আমাদের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতি হাত বাড়াতে হয়। এবং এই সূত্রেই বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনকে পুনরুদ্ধার ও পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়েই গড়ে উঠেছে বর্তমান লেখাটির সংক্ষিপ্ত উপজীব্য।
দুই. বঙ্গবন্ধুর ‘সুযোগের সমতার’ সমাজ
বঙ্গবন্ধু ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দটিকে নিজস্ব আদলে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ৭ জুন এক ভাষণে তিনি তাঁর অর্থও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন এভাবে: ‘এ সমাজতন্ত্র হলো বাংলার মানুষের সমাজতন্ত্র, তার অর্থ হলো শোষণহীন সমাজ, সম্পদের সুষম বণ্টন।’ সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহ, গণচীন প্রভৃতি দেশে যে সমাজতন্ত্র গড়ে উঠেছিল, তার সঙ্গে এর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এসব দেশে গণতন্ত্র নেই। আর বঙ্গবন্ধুর কথা হলো, ‘দুনিয়ায় আমি বাংলার মাটি থেকে দেখাতে চাই যে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমি সমাজতন্ত্রকে কায়েম করব।’ কেননা, ‘আমি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’ এ জন্যই তিনি বলেছেন, আমাদের সংবিধানের মূল স্তম্ভ যে ‘সমাজতন্ত্র’, তাকে ‘আমি দুনিয়া থেকে ভাড়া করে আনতে চাই না।’
প্রথাগত সমাজতন্ত্রের মডেল যেমন তিনি অনুসরণ করতে চান না, তেমনি তিনি উদ্গ্রীব নন সুইডেন-নরওয়ে স্টাইলের ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সোশ্যালিজমের’ প্রতি। এমনকি আগ্রহী নন ব্রিটেনের লেবার পার্টির সোশ্যালিজমের প্রতিও। কেননা, তিনি জানেন যে এসব দেশের মাথা পিছু আয়, কর-জিডিপির অনুপাত, ট্যাক্সিং-স্পেনডিং পাওয়ার আমাদের দেশের চেয়ে অনেক ওপরে। ৭২ সালে এই তুলনামূলক ব্যবধান ছিল আরও বেশি মাত্রায় প্রকট। একটি পশ্চাৎপদ কৃষিপ্রধান দেশে গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রেখে সমাজতন্ত্র নির্মাণের পথ যে ইউরোপের চেয়ে আলাদা হবে, তা তার অজানা ছিল না।
অনেকেই মনে করে থাকেন যে বঙ্গবন্ধু ওপরের কথাগুলো বুঝি ১৯৭২ সালেই এসে প্রথমে বলেছেন। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর কিছুকাল স্থবির হয়েছিল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আইয়ুবের আমলে। সেখান থেকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ ১৯৬৪ সালে। সেই পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁরই নেতৃত্বে প্রণীত হয় পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নতুন করে নির্মিত ঘোষণা ও কর্মসূচি। এ সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করে তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদে বলেছিলেন: ‘১৯৬৪ সালের মার্চ মাসের ৬, ৭, ৮ তারিখে ঢাকার গ্রিন রোডের আমবাগানে যে কাউন্সিল অধিবেশন [হয়েছিল], তাতে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে পরিষ্কার ভাষায় এ দেশের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন ধাপে জাতীয়করণের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার বিধান আওয়ামী লীগের ইশতেহারে গৃহীত হয়। তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরবচ্ছিন্নভাবে এ দেশে সমাজতন্ত্রের কথা বলে এসেছেন। আগে সমাজতন্ত্রের কথা মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝত না।’
সমাজতন্ত্র সম্পর্কে পরিষ্কার বুঝের জন্য দুটি কথা ব্যাখ্যা করা জরুরি। প্রথমত, সমাজতন্ত্র শব্দটিকে বঙ্গবন্ধু জাতীয়করণ তথা রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার নামান্তর বলে মনে করেননি। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র ছিল ‘just and egalitarian society’র সমাজ। ন্যায়ানুগ ও সমতাবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানুষের মধ্যে ‘সুযোগের সমতা’ (বা ‘ইকুয়ালিটি অব অপরচুনিটি’) প্রতিষ্ঠা করে। এবং এটা করতে হবে গণতন্ত্রের নিয়মকানুন, প্রথা-মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে; কোনো একনায়কতন্ত্র বা অসহিষ্ণুপনা প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে নয়। দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে এক কথা আর ক্ষমতায় যাওয়ার পরে আরেক কথা—এ রকম দ্বৈত সত্তা বঙ্গবন্ধুর ছিল না। নইলে সত্তরের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের বৈরী পরিবেশের ভেতরে বাস করে তিনি সমাজতন্ত্রের কথা তুলতে পারতেন না জনরায়ের জন্য।
এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ১০ অক্টোবর রেডিও পাকিস্তান থেকে প্রচারিত লিখিত ভাষণে পূর্ব বাংলার জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন: ‘আমাদের বিশ্বাস, শাসনতান্ত্রিক এই কাঠামোর মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশে একটা সামাজিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব এবং অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’ নির্বাচনের আগেই তিনি বলেন ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা বিলোপ, জায়গিরদারি-জমিদারি-সরদারি প্রভৃতি সামন্তবাদী মালিকানার অবসান, কৃষিব্যবস্থাকে প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ, ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে সরকারি খাসজমির বণ্টন, চাষিদের মধ্যে বহুমুখী সমবায় গঠন, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা, মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সবার জন্য খোলা রাখা, প্রতি ইউনিয়নে একটি করে পল্লি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং প্রতি থানা সদরে একটি করে হাসপাতাল করার কথা। ‘১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পরিসংখ্যান একটা ভয়াবহ সত্য’—এই একটি কথার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের চিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেদিন।
বঙ্গবন্ধু সেদিনের প্রাক-নির্বাচনী ভাষণে জাতীয়করণের গুরুত্বও তুলে ধরেছিলেন, তবে সেটা ব্যক্তিমালিকানাকে বাদ দিয়ে নয়। সেদিন তিনি বলেছিলেন: ‘জাতীয়করণের নামে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে অর্থনীতির মূল চাবিকাঠিগুলো জনগণের মালিকানায় আনা অত্যাবশ্যক বলে আমরা বিশ্বাস করি। [তবে] বেসরকারি পর্যায়ে এর নিজস্ব ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে। একচেটিয়াবাদ ও কার্টেল প্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলোপ সাধন করতে হবে।’
এ ছাড়া প্রাক-নির্বাচনী বক্তৃতায় দলের অসাম্প্রদায়িক নীতির কথা তিনি জোরের সঙ্গে তুলে ধরেন। পাকিস্তানের বৈরী পরিবেশে সেটি নির্বাচনী বক্তৃতায় আনার মতো দৃঢ় মেরুদণ্ড ও সৎসাহস তাঁর ছিল: ‘সকল নাগরিকের সমান অধিকারে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিশ্চয় জানা আছে যে, আমরা সব সময়ই সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে আসছি। সংখ্যালঘুরা অন্যান্য নাগরিকের মতোই সমান অধিকার ভোগ করবে। আইনের সমান রক্ষাকবচ সর্বক্ষেত্রেই পাবে।’
এ কথা প্রযোজ্য উপজাতীয় এলাকার ক্ষেত্রেও। এই সৎসাহসের প্রতি অমর্ত্য সেন সম্প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ভারত এই সেক্যুলার নীতি থেকে হালের বছরগুলোতে ক্রমশ সরে আসছে। বঙ্গবন্ধুকে তিনি শুধু ‘Friend of Bengal’ না বলে গোটা ‘বিশ্বেরই বন্ধু’ বলে অভিহিত করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন Friend of the World —এভাবে আমরা তাঁকে নতুনভাবে চিনতে পারি।
তিন. বঙ্গবন্ধুর ‘সুষম বণ্টনের সমাজ’ এবং এসডিজি
এবারে বোধকরি বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের’ অর্থ কিছুটা হলেও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। আগেই বলেছি, সমাজতন্ত্র মানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাভিত্তিক সমাজ নয়। সমাজতন্ত্রকে এমনকি শুধু সম্পত্তির ওপরে মালিকানার নিরিখে বিচার করা বলে না। মালিকানার বিচার সমাজতন্ত্রের একটি মূল দিক, তবে একমাত্র দিক নয়, প্রধানতম দিকও নয়। এর কারণ, সমাজতন্ত্র প্রতিশ্রুতি দেয় প্রত্যেক নাগরিককে ‘সুযোগের সমতা’ অধিকারের। সুযোগের সমতা বা equality of opportunity সমাজতন্ত্রের মৌলিক শর্তের একটি অবশ্যপূরণীয় শর্ত।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের সুবিখ্যাত ১৩ নং অনুচ্ছেদে আমরা পাই সামাজিক মালিকানার কথা, তথা জনগণের মালিকানার কথা। সেটা বলতে শুধু জাতীয়করণকৃত কলকারখানা বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়নি। সেখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায়ী মালিকানা ও ব্যক্তিমালিকানার সমন্বয়ে মিশ্র মালিকানা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর চোখে সামাজিক মালিকানার অর্থ মালিকানার উপরিউক্ত তিনটি ফরম। আসল কথা হচ্ছে, মালিকানা সে রাষ্ট্রীয় হোক বা ব্যক্তিমালিকানাই হোক, তা উদ্দেশ্য সিদ্ধির ‘উপায়’মাত্র। উপায় ও উদ্দেশ্যের মধ্যে গুলিয়ে ফেললে সমাজতন্ত্রের চরিত্রে বিকৃতি দেখা দিতে বাধ্য। মালিকানা সম্পর্কের বিশুদ্ধতা রক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনকল্যাণ। সে জন্যই বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ কী তা বোঝার জন্য পরিণামবাদী (Consequentialist) দৃষ্টিভঙ্গিকে আশ্রয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজতন্ত্রকে কার্যকর করতে হলে তাকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ভাষায় কথা বলতে হবে, ‘অধিকারের ভাষায়’ কথা বলতে শিখতে হবে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের ১৯ ও ২০ নম্বর অনুচ্ছেদ।
১৯ নং অনুচ্ছেদের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুযোগের সমতার’ কথা, আর এর ২ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুষম বণ্টনের কথা’। ১ নং ধারায় বলা হয়েছে: ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ আজকে যেটা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-এর ১ নং (No Poverty), ২ নং (Zero Hunger), ৩ নং (Good Health & Well-being), ৪ নং (Quality Education), ৫ নং (Gender Equality), ৬ নং (Clean Water and Sanitation), ৭ নং (Affordable & Clean Energy), এবং ৮ নং (Decent Work & Economic Growth) লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের ইশতেহার, ’৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার এবং ’৭২ সালের সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৫ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’ পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল ‘পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে’ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা এবং এর মাধ্যমে ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা’ করার কথা। শুধু বিষয়টাকে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যেই সীমিত রাখা হয়নি। সেখানে আরও বলা ছিল ‘কর্মের অধিকার’ নিশ্চিত করার কথা এবং ‘যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার’ প্রদানের গুরুত্ব। যাঁরা পিছিয়ে পড়ে থাকবেন দারিদ্র্যের বিষ-বৃত্তের ভেতরে, তাঁদের প্রতি রাষ্ট্র সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
হাল আমলের তথাকথিত ‘সোশ্যাল প্রোটেকশন’ কর্মসূচির বহু আগেই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটতম সহকর্মীদের চিন্তায় এসেছিল পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার কথা, যার সংজ্ঞা ছিল নিম্নরূপ: ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার।’
শুধু ‘সুযোগের সমতার’ অধিকার নয়, আরও বেশি কিছু ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনে। তিনি বুঝেছিলেন যে ইকুয়ালিটি অব অপরচুনিটি সুষম বণ্টনের সমাজের দিকে এগোনোর একটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত বটে, কিন্তু যথেষ্ট পূর্বশর্ত নয়। সমাজের একটি মুষ্টিমেয় অংশই উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ লাভ করে দরিদ্র দশা থেকে সচ্ছল দশায় উন্নীত হতে পারবে। সবার ক্ষেত্রে অদৃষ্ট সমান প্রসন্ন হয় না, সবার ন্যাচারাল ব্যুৎপত্তি বা প্রতিভাও সমান নয়। কিন্তু তাই বলে কি যারা দীনের চেয়ে দীন, যারা আজীবন কায়িক শ্রমের ভেতরে, খেটে খাওয়া মানুষ যাদের বলি, তাদের কাজের কি মূল্যায়ন করা হবে না? তারা কি ফ্রন্টলাইন বা অ্যাসেনশিয়াল ওয়ার্কার্স হিসেবে স্বীকৃত ও সম্মানিত হবে না? তাদের কি সমান ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা (Common Good) পাওয়ার অধিকার নেই?
বঙ্গবন্ধু এই লক্ষ্যে বিশেষ করে ১৪ নং অনুচ্ছেদের প্রস্তাব করেছিলেন: ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’ এবং তার জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে মেহনতি মানুষকে সহায়তা করতে হবে, দেখভাল করতে হবে। আজকের Universal Basic Income-এর ধারণার পূর্ব ছায়াও আমরা এখানে দেখতে পাই। অন্যত্র ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রকারান্তরে তিনি উল্লেখ করলেন ‘equality of outcomes’-এর কথা। এটি এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রা ‘বৈষম্য হ্রাস করার’ সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সেদিন তিনি বলেছিলেন: ‘এই সরকার ন্যায়ভিত্তিক ও গ্রামীণ জীবনের মধ্যকার বৈষম্য সম্পর্কে সচেতন। সেই সব ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার, যাঁরা পাট চাষিদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে মানুষ হয়েছেন, তাঁদের গ্রামে ফিরে যেতে হবে। আমি ইতিমধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামে কাজ করার জন্য ৫০০ ডাক্তার নিযুক্ত করেছি। বাংলাদেশে মানুষ মানুষে ব্যক্তিত্বে বৈষম্য থাকবে না। সম্পদের বণ্টনব্যবস্থায় সমতা আনতে হবে এবং উচ্চতর আয় ও নিম্নতর উপার্জনের ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বৈষম্য এত দিন ধরে বিরাজ করছিল, সেটা দূর করার ব্যবস্থাদি উদ্ভাবনের জন্য আমি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার কথা বিবেচনা করছি।’
বঙ্গবন্ধুর এই উপলব্ধিই বাহাত্তরের সংবিধানের ১৯ (২) ধারায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ’ করার জন্য এবং নাগরিকদের মধ্যে ‘সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত’ করার জন্য ‘সর্বত্র সুষম সুযোগ-সুবিধা’ প্রদানে রাষ্ট্রের তরফে ‘কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ’ করার কথা। পরিশেষে, ২০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল শ্রম অনুযায়ী বণ্টনের কথা: ‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্য অনুসারে এবং প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী’ এই নীতির ভিত্তিতে ‘প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।’ অর্থাৎ, নারী-পুরুষ, জাতি-বর্ণনির্বিশেষে সমান কর্মের জন্য অসমান পারিশ্রমিক সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে পরিগণিত হবে। এখানে এসডিজির ৫ নং লক্ষ্যমাত্রা (Gender Equality) এবং ৮ নং (Decent Work & Economic Growth)-এর সাদৃশ্য দৃশ্যমান।
৪. দুটো অভিযোগের উত্তরে
সবশেষে, বঙ্গবন্ধুর উপরিউক্ত অর্থনৈতিক দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটো অভিযোগের কথা তুলতে চাই। একটি অভিযোগ বেশি শোনা যায় ‘বামপন্থী’ অবস্থান থেকে, আরেকটি ‘ডানপন্থী’ অবস্থান থেকে। ‘বামপন্থী’ অভিযোগের মর্মার্থ হলো, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত ১৫ নং ধারার ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’, ১৭ নং ধারার ‘অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা’, ১৮ নং ধারার ‘জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা’, ১৯ নং ধারার ‘সুযোগের সমতা’ এবং ২০ নং ধারার ‘কর্মের অধিকার ও সম্মান’—এ সবই সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার ‘মূলনীতির’ অধ্যায়ে সন্নিবেশিত কেবল। এসব ‘ভালো ভালো’ কথা সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে স্থান পায়নি। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মৌলিক অধিকার অধ্যায়ে স্থান পেলে এসব বাস্তবায়নের পেছনে রাষ্ট্রের সচেষ্ট দায়বদ্ধতা থাকত। বঙ্গবন্ধু (ও তাঁর নিকটতম সহকর্মীরা) এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন। পাল্টা যুক্তি তাঁরা দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালেই গণপরিষদে সংবিধান নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন। তাঁদের যুক্তি ছিল, ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে যেসব অধিকার দেওয়া আছে, সেগুলোর আশু বাস্তবায়ন না ঘটলে বা ব্যত্যয় ঘটলে তার জন্য নাগরিকেরা অবিলম্বে কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি সুবিধা আশু-ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলেই এসব উন্নয়ন-ধারাকে রাষ্ট্রের ‘মৌলিক নীতিমালার’ ভেতরে রাখা হয়েছে ‘ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নযোগ্য অধিকার’ হিসেবে বা যাকে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী বলেছেন ‘progressively realizable rights’ বলে। প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের সক্ষমতা বাড়তে থাকলে এসব অধ্যায়কে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে চিহ্নিত করা সহজতর হবে।
এবার আসি ‘ডানপন্থী’ অভিযোগের বিষয়ে। ইতিপূর্বে আমি বলেছি, বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’কে কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করতে চাননি। তিনি নাগরিকের কল্যাণ, স্বাধীনতা ও ‘অধিকারের’ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে আত্মস্থ করেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা বিধান করা এবং ক্রমান্বয়ে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা (যেটা এখন এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রায় বিধৃত হয়েছে)। ডানপন্থীদের অভিযোগ হলো, তাহলে ১৯৭২ সালে এত তড়িঘড়ি করে ‘জাতীয়করণ’ করা হলো কেন এবং কেনই বা ব্যক্তি-পুঁজির বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেওয়া হলো? এ নিয়ে নানাজনই লিখেছেন আগে, সম্প্রতি আমিও লিখেছি। এখানে পাল্টা যুক্তি হচ্ছে ত্রিবিধ। প্রথমত, জাতীয়করণকৃত বেশির ভাগ কলকারখানার বা পরিসম্পদের মালিকানা ছিল অবাঙালি শিল্পপতিদের হাতে। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বা চলাকালীনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তাঁদের ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাপয়সা সব তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। বাংলাদেশেও বাইশ পরিবারের মতো অর্থনৈতিক সম্পদ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটুক, সেটি বঙ্গবন্ধু কখনোই চাননি। এ জন্যই প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যক্তি-পুঁজিকে সর্বতো উপায়ে সহায়তা দেওয়া হয়, কিন্তু বৃহৎ ব্যক্তি-পুঁজির বিকাশকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। কালক্রমে (১৯৭৪ সালেই) বৃহৎ ব্যক্তি পুঁজির ‘সিলিং’ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা তখনকার দিনের বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তার বিকাশের জন্য যথেষ্ট পরিসরই দিয়েছিল। তৃতীয়ত, গত চার দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ ‘রপ্তানিমূলক’ শিল্পে এবং সাম্প্রতিক দশকে ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদামুখীন’ শিল্পে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সুস্থ ব্যক্তি খাতের বিকাশের পথে বিনিয়োগের সিলিং-জনিত প্রতিবন্ধকতা কৃত্রিমভাবে আরোপ করার প্রয়োজনীয়তাও অনেক আগেই নিঃশেষিত হয়েছে। কিন্তু তার মানে কি এই যে, ব্যক্তি-পুঁজির ওপরে রাষ্ট্রের ‘নজরদারির’ প্রয়োজনীয়তাও সেই সঙ্গে লুপ্ত হয়ে গেছে? ‘মার্কেট-ফ্রেন্ডলি’ হওয়া এবং ‘বিজনেস-ফ্রেন্ডলি’ হওয়া তো সমার্থক শব্দ নয়। ২০১০-এর দশকের অভিজ্ঞতা এখানে মিশ্র তথ্য-প্রমাণ দিচ্ছে।
ব্যক্তি খাতের সাফল্যের পাশাপাশি সরকারি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যক্তি খাতের দায়দেনাও (Default) বিস্তর এবং ক্রমবর্ধমান। যে হারে ব্যক্তি খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটেছে ২০১০-এর দশকে, সেই হারে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়েনি। ফলে সামাজিক কল্যাণের ক্ষেত্রে বা Common Goods সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের যে ভূমিকা প্রত্যাশিত ছিল, তা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসেনি।
‘মার্কেট ইকোনমি’ হওয়ার পাশাপাশি আমরা যেন অতিদ্রুত ‘মার্কেট সোসাইটিতে’ পরিণত হচ্ছি। মার্কেট ইকোনমি আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার এ দেশে, কোনো সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা যেন উত্তরোত্তর কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত না হয়ে কেবল মার্কেট সোসাইটিতে রূপান্তরিত না হই। শেষোক্ত সমাজে সবকিছু, সব মূল্যবোধই, শেষ পর্যন্ত ‘কেনাবেচার’ সামগ্রীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেটা বিদ্যাদান, চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে ‘সামাজিক উদ্যোগ’, এমনকি আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পর্যন্ত। এ ধরনের সমাজ শেষাবধি মানুষের বাসযোগ্য ভূমি থাকে না। বঙ্গবন্ধুর দর্শনে এ ধরনের ডিস্টোপিয়ান ‘মার্কেট-সোসাইটির’ কোনো স্থান ছিল না। এ জন্যই তাঁকে জনগণের তদারকি, জনগণের মালিকানা ও জনস্বার্থের প্রয়োজনে সংবিধানের ৪৭ নং অনুচ্ছেদ যুক্ত করতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান নৈয়ায়িক দার্শনিক জন রাউলস, অমর্ত্য সেন ও মাইকেল স্যান্ডেলের অনুবর্তী। আমাদের সমাজের স্বভাবত ধর্মবিহিত মূল্যবোধ এই অবস্থানের প্রতিই সমর্থন জানায়।
বিনায়ক সেন
অর্থনীতিবিদ

এক. কেন ‘অর্থনৈতিক দর্শন’?
বঙ্গবন্ধুর ‘অর্থনৈতিক দর্শন’ শব্দটা কারও কারও কাছে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে। এ তো জানা কথাই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো প্রথাগত অর্থে ‘তাত্ত্বিক’ ছিলেন না, যেরকমটা আমরা সচরাচর ভাবতে অভ্যস্ত মার্কস, লেনিন, গান্ধী বা মাও সে তুংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি গতিধারা নিয়ে বঙ্গবন্ধু নানা সময়েই গভীরভাবে ভেবেছেন। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, নয়া চীন ভ্রমণের স্মৃতিচারণা, তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের ধারা-উপধারা, স্বাধীনতার আগে ও পরের বিভিন্ন ভাষণের সংগ্রহ প্রকাশের পর এখন আস্তে আস্তে একটি চিন্তাশীল মনের প্রতিকৃতি আমাদের সামনে ফুটে উঠছে, যা আগে ততটা দৃষ্টিগোচর হয়নি।
এই লেখাগুলো থেকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের কয়েকটি মৌলিক দিক শনাক্ত করা যায়। এসব দিকের শুধু ঐতিহাসিক মূল্যই রয়েছে তা নয়, বর্তমানের উন্নয়নধারার গতিমুখ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এদের পদ্ধতিগত মূল্য অপরিসীম। সাম্প্রতিক এক দশকে উন্নয়নের নৈতিক দিক, উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক, অর্থাৎ ‘আইডিয়া অব জাস্টিস’ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। পজিটিভ বনাম নর্মাটিভ সায়েন্সের মধ্যে কৃত্রিম দেয়াল তুলে যারা উটপাখির মতো নিজস্ব সীমিত মাইক্রো অথবা ম্যাক্রো অর্থনৈতিক বলয়ে সংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণা চালিয়ে গেছেন, তাঁরা এখন পড়েছেন বিপাকে। অর্থশাস্ত্রীয় গবেষণা ও নীতি প্রণয়নে আগের মতো আর নিছক ‘টেকনোক্রেটিক’ সমাধানের মধ্যে নিজেকে গণ্ডিবদ্ধ বা পরিতৃপ্ত করা যাচ্ছে না। টান দিতে হচ্ছে দারিদ্র্য, জিডিপি বা বৈষম্যের পরিমাপের পেছনের তত্ত্বাগত বিবেচনা ও মৌল অনুমান নিয়েই। প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রাধিকার নির্বাচনের পেছনের নৈতিক বিবেচনাবোধ নিয়ে।
এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়। সমগ্র বিশ্বেই একটি আত্মসমীক্ষা চলছে ইকোনমিকস ও এথিক্স নিয়ে। অমর্ত্য সেন ‘আইডিয়া অব জাস্টিস’ নিয়ে লিখেছেন, মাইকেল স্যান্ডেল লিখেছেন ‘দা টিরানি অব মেরিট’ তথাকথিত মেরিটক্রেসি-শাসিত সমাজের অন্ধকার দিকের কথা। এমনকি জাতিসংঘ ঘোষিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ (এসডিজি) এমন কতগুলো ‘কনসেপ্ট’ নিয়ে এসেছে, যার সূচক নির্মাণের জন্য প্রয়োজন প্রচুর নৈতিক আলোচনা। অন্যদিকে, এমন কিছু সূচক এর তালিকায় এসেছে, যা ‘ফলাফলের’ চেয়ে গুরুত্ব দেয় ‘প্রক্রিয়ার’ ওপরে। এসব কিছুর জন্যই আমাদের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতি হাত বাড়াতে হয়। এবং এই সূত্রেই বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনকে পুনরুদ্ধার ও পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়েই গড়ে উঠেছে বর্তমান লেখাটির সংক্ষিপ্ত উপজীব্য।
দুই. বঙ্গবন্ধুর ‘সুযোগের সমতার’ সমাজ
বঙ্গবন্ধু ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দটিকে নিজস্ব আদলে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ৭ জুন এক ভাষণে তিনি তাঁর অর্থও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন এভাবে: ‘এ সমাজতন্ত্র হলো বাংলার মানুষের সমাজতন্ত্র, তার অর্থ হলো শোষণহীন সমাজ, সম্পদের সুষম বণ্টন।’ সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহ, গণচীন প্রভৃতি দেশে যে সমাজতন্ত্র গড়ে উঠেছিল, তার সঙ্গে এর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এসব দেশে গণতন্ত্র নেই। আর বঙ্গবন্ধুর কথা হলো, ‘দুনিয়ায় আমি বাংলার মাটি থেকে দেখাতে চাই যে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমি সমাজতন্ত্রকে কায়েম করব।’ কেননা, ‘আমি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’ এ জন্যই তিনি বলেছেন, আমাদের সংবিধানের মূল স্তম্ভ যে ‘সমাজতন্ত্র’, তাকে ‘আমি দুনিয়া থেকে ভাড়া করে আনতে চাই না।’
প্রথাগত সমাজতন্ত্রের মডেল যেমন তিনি অনুসরণ করতে চান না, তেমনি তিনি উদ্গ্রীব নন সুইডেন-নরওয়ে স্টাইলের ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সোশ্যালিজমের’ প্রতি। এমনকি আগ্রহী নন ব্রিটেনের লেবার পার্টির সোশ্যালিজমের প্রতিও। কেননা, তিনি জানেন যে এসব দেশের মাথা পিছু আয়, কর-জিডিপির অনুপাত, ট্যাক্সিং-স্পেনডিং পাওয়ার আমাদের দেশের চেয়ে অনেক ওপরে। ৭২ সালে এই তুলনামূলক ব্যবধান ছিল আরও বেশি মাত্রায় প্রকট। একটি পশ্চাৎপদ কৃষিপ্রধান দেশে গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রেখে সমাজতন্ত্র নির্মাণের পথ যে ইউরোপের চেয়ে আলাদা হবে, তা তার অজানা ছিল না।
অনেকেই মনে করে থাকেন যে বঙ্গবন্ধু ওপরের কথাগুলো বুঝি ১৯৭২ সালেই এসে প্রথমে বলেছেন। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর কিছুকাল স্থবির হয়েছিল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আইয়ুবের আমলে। সেখান থেকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ ১৯৬৪ সালে। সেই পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁরই নেতৃত্বে প্রণীত হয় পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নতুন করে নির্মিত ঘোষণা ও কর্মসূচি। এ সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করে তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদে বলেছিলেন: ‘১৯৬৪ সালের মার্চ মাসের ৬, ৭, ৮ তারিখে ঢাকার গ্রিন রোডের আমবাগানে যে কাউন্সিল অধিবেশন [হয়েছিল], তাতে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে পরিষ্কার ভাষায় এ দেশের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন ধাপে জাতীয়করণের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার বিধান আওয়ামী লীগের ইশতেহারে গৃহীত হয়। তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরবচ্ছিন্নভাবে এ দেশে সমাজতন্ত্রের কথা বলে এসেছেন। আগে সমাজতন্ত্রের কথা মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝত না।’
সমাজতন্ত্র সম্পর্কে পরিষ্কার বুঝের জন্য দুটি কথা ব্যাখ্যা করা জরুরি। প্রথমত, সমাজতন্ত্র শব্দটিকে বঙ্গবন্ধু জাতীয়করণ তথা রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার নামান্তর বলে মনে করেননি। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র ছিল ‘just and egalitarian society’র সমাজ। ন্যায়ানুগ ও সমতাবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানুষের মধ্যে ‘সুযোগের সমতা’ (বা ‘ইকুয়ালিটি অব অপরচুনিটি’) প্রতিষ্ঠা করে। এবং এটা করতে হবে গণতন্ত্রের নিয়মকানুন, প্রথা-মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে; কোনো একনায়কতন্ত্র বা অসহিষ্ণুপনা প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে নয়। দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে এক কথা আর ক্ষমতায় যাওয়ার পরে আরেক কথা—এ রকম দ্বৈত সত্তা বঙ্গবন্ধুর ছিল না। নইলে সত্তরের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের বৈরী পরিবেশের ভেতরে বাস করে তিনি সমাজতন্ত্রের কথা তুলতে পারতেন না জনরায়ের জন্য।
এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ১০ অক্টোবর রেডিও পাকিস্তান থেকে প্রচারিত লিখিত ভাষণে পূর্ব বাংলার জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন: ‘আমাদের বিশ্বাস, শাসনতান্ত্রিক এই কাঠামোর মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশে একটা সামাজিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব এবং অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’ নির্বাচনের আগেই তিনি বলেন ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা বিলোপ, জায়গিরদারি-জমিদারি-সরদারি প্রভৃতি সামন্তবাদী মালিকানার অবসান, কৃষিব্যবস্থাকে প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ, ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে সরকারি খাসজমির বণ্টন, চাষিদের মধ্যে বহুমুখী সমবায় গঠন, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা, মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সবার জন্য খোলা রাখা, প্রতি ইউনিয়নে একটি করে পল্লি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং প্রতি থানা সদরে একটি করে হাসপাতাল করার কথা। ‘১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পরিসংখ্যান একটা ভয়াবহ সত্য’—এই একটি কথার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের চিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেদিন।
বঙ্গবন্ধু সেদিনের প্রাক-নির্বাচনী ভাষণে জাতীয়করণের গুরুত্বও তুলে ধরেছিলেন, তবে সেটা ব্যক্তিমালিকানাকে বাদ দিয়ে নয়। সেদিন তিনি বলেছিলেন: ‘জাতীয়করণের নামে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে অর্থনীতির মূল চাবিকাঠিগুলো জনগণের মালিকানায় আনা অত্যাবশ্যক বলে আমরা বিশ্বাস করি। [তবে] বেসরকারি পর্যায়ে এর নিজস্ব ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে। একচেটিয়াবাদ ও কার্টেল প্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলোপ সাধন করতে হবে।’
এ ছাড়া প্রাক-নির্বাচনী বক্তৃতায় দলের অসাম্প্রদায়িক নীতির কথা তিনি জোরের সঙ্গে তুলে ধরেন। পাকিস্তানের বৈরী পরিবেশে সেটি নির্বাচনী বক্তৃতায় আনার মতো দৃঢ় মেরুদণ্ড ও সৎসাহস তাঁর ছিল: ‘সকল নাগরিকের সমান অধিকারে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিশ্চয় জানা আছে যে, আমরা সব সময়ই সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে আসছি। সংখ্যালঘুরা অন্যান্য নাগরিকের মতোই সমান অধিকার ভোগ করবে। আইনের সমান রক্ষাকবচ সর্বক্ষেত্রেই পাবে।’
এ কথা প্রযোজ্য উপজাতীয় এলাকার ক্ষেত্রেও। এই সৎসাহসের প্রতি অমর্ত্য সেন সম্প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ভারত এই সেক্যুলার নীতি থেকে হালের বছরগুলোতে ক্রমশ সরে আসছে। বঙ্গবন্ধুকে তিনি শুধু ‘Friend of Bengal’ না বলে গোটা ‘বিশ্বেরই বন্ধু’ বলে অভিহিত করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন Friend of the World —এভাবে আমরা তাঁকে নতুনভাবে চিনতে পারি।
তিন. বঙ্গবন্ধুর ‘সুষম বণ্টনের সমাজ’ এবং এসডিজি
এবারে বোধকরি বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের’ অর্থ কিছুটা হলেও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। আগেই বলেছি, সমাজতন্ত্র মানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাভিত্তিক সমাজ নয়। সমাজতন্ত্রকে এমনকি শুধু সম্পত্তির ওপরে মালিকানার নিরিখে বিচার করা বলে না। মালিকানার বিচার সমাজতন্ত্রের একটি মূল দিক, তবে একমাত্র দিক নয়, প্রধানতম দিকও নয়। এর কারণ, সমাজতন্ত্র প্রতিশ্রুতি দেয় প্রত্যেক নাগরিককে ‘সুযোগের সমতা’ অধিকারের। সুযোগের সমতা বা equality of opportunity সমাজতন্ত্রের মৌলিক শর্তের একটি অবশ্যপূরণীয় শর্ত।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের সুবিখ্যাত ১৩ নং অনুচ্ছেদে আমরা পাই সামাজিক মালিকানার কথা, তথা জনগণের মালিকানার কথা। সেটা বলতে শুধু জাতীয়করণকৃত কলকারখানা বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়নি। সেখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায়ী মালিকানা ও ব্যক্তিমালিকানার সমন্বয়ে মিশ্র মালিকানা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর চোখে সামাজিক মালিকানার অর্থ মালিকানার উপরিউক্ত তিনটি ফরম। আসল কথা হচ্ছে, মালিকানা সে রাষ্ট্রীয় হোক বা ব্যক্তিমালিকানাই হোক, তা উদ্দেশ্য সিদ্ধির ‘উপায়’মাত্র। উপায় ও উদ্দেশ্যের মধ্যে গুলিয়ে ফেললে সমাজতন্ত্রের চরিত্রে বিকৃতি দেখা দিতে বাধ্য। মালিকানা সম্পর্কের বিশুদ্ধতা রক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনকল্যাণ। সে জন্যই বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ কী তা বোঝার জন্য পরিণামবাদী (Consequentialist) দৃষ্টিভঙ্গিকে আশ্রয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজতন্ত্রকে কার্যকর করতে হলে তাকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ভাষায় কথা বলতে হবে, ‘অধিকারের ভাষায়’ কথা বলতে শিখতে হবে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের ১৯ ও ২০ নম্বর অনুচ্ছেদ।
১৯ নং অনুচ্ছেদের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুযোগের সমতার’ কথা, আর এর ২ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুষম বণ্টনের কথা’। ১ নং ধারায় বলা হয়েছে: ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ আজকে যেটা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-এর ১ নং (No Poverty), ২ নং (Zero Hunger), ৩ নং (Good Health & Well-being), ৪ নং (Quality Education), ৫ নং (Gender Equality), ৬ নং (Clean Water and Sanitation), ৭ নং (Affordable & Clean Energy), এবং ৮ নং (Decent Work & Economic Growth) লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের ইশতেহার, ’৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার এবং ’৭২ সালের সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৫ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’ পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল ‘পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে’ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা এবং এর মাধ্যমে ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা’ করার কথা। শুধু বিষয়টাকে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যেই সীমিত রাখা হয়নি। সেখানে আরও বলা ছিল ‘কর্মের অধিকার’ নিশ্চিত করার কথা এবং ‘যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার’ প্রদানের গুরুত্ব। যাঁরা পিছিয়ে পড়ে থাকবেন দারিদ্র্যের বিষ-বৃত্তের ভেতরে, তাঁদের প্রতি রাষ্ট্র সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
হাল আমলের তথাকথিত ‘সোশ্যাল প্রোটেকশন’ কর্মসূচির বহু আগেই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটতম সহকর্মীদের চিন্তায় এসেছিল পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার কথা, যার সংজ্ঞা ছিল নিম্নরূপ: ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার।’
শুধু ‘সুযোগের সমতার’ অধিকার নয়, আরও বেশি কিছু ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনে। তিনি বুঝেছিলেন যে ইকুয়ালিটি অব অপরচুনিটি সুষম বণ্টনের সমাজের দিকে এগোনোর একটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত বটে, কিন্তু যথেষ্ট পূর্বশর্ত নয়। সমাজের একটি মুষ্টিমেয় অংশই উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ লাভ করে দরিদ্র দশা থেকে সচ্ছল দশায় উন্নীত হতে পারবে। সবার ক্ষেত্রে অদৃষ্ট সমান প্রসন্ন হয় না, সবার ন্যাচারাল ব্যুৎপত্তি বা প্রতিভাও সমান নয়। কিন্তু তাই বলে কি যারা দীনের চেয়ে দীন, যারা আজীবন কায়িক শ্রমের ভেতরে, খেটে খাওয়া মানুষ যাদের বলি, তাদের কাজের কি মূল্যায়ন করা হবে না? তারা কি ফ্রন্টলাইন বা অ্যাসেনশিয়াল ওয়ার্কার্স হিসেবে স্বীকৃত ও সম্মানিত হবে না? তাদের কি সমান ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা (Common Good) পাওয়ার অধিকার নেই?
বঙ্গবন্ধু এই লক্ষ্যে বিশেষ করে ১৪ নং অনুচ্ছেদের প্রস্তাব করেছিলেন: ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’ এবং তার জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে মেহনতি মানুষকে সহায়তা করতে হবে, দেখভাল করতে হবে। আজকের Universal Basic Income-এর ধারণার পূর্ব ছায়াও আমরা এখানে দেখতে পাই। অন্যত্র ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রকারান্তরে তিনি উল্লেখ করলেন ‘equality of outcomes’-এর কথা। এটি এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রা ‘বৈষম্য হ্রাস করার’ সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সেদিন তিনি বলেছিলেন: ‘এই সরকার ন্যায়ভিত্তিক ও গ্রামীণ জীবনের মধ্যকার বৈষম্য সম্পর্কে সচেতন। সেই সব ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার, যাঁরা পাট চাষিদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে মানুষ হয়েছেন, তাঁদের গ্রামে ফিরে যেতে হবে। আমি ইতিমধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামে কাজ করার জন্য ৫০০ ডাক্তার নিযুক্ত করেছি। বাংলাদেশে মানুষ মানুষে ব্যক্তিত্বে বৈষম্য থাকবে না। সম্পদের বণ্টনব্যবস্থায় সমতা আনতে হবে এবং উচ্চতর আয় ও নিম্নতর উপার্জনের ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বৈষম্য এত দিন ধরে বিরাজ করছিল, সেটা দূর করার ব্যবস্থাদি উদ্ভাবনের জন্য আমি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার কথা বিবেচনা করছি।’
বঙ্গবন্ধুর এই উপলব্ধিই বাহাত্তরের সংবিধানের ১৯ (২) ধারায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ’ করার জন্য এবং নাগরিকদের মধ্যে ‘সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত’ করার জন্য ‘সর্বত্র সুষম সুযোগ-সুবিধা’ প্রদানে রাষ্ট্রের তরফে ‘কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ’ করার কথা। পরিশেষে, ২০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল শ্রম অনুযায়ী বণ্টনের কথা: ‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্য অনুসারে এবং প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী’ এই নীতির ভিত্তিতে ‘প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।’ অর্থাৎ, নারী-পুরুষ, জাতি-বর্ণনির্বিশেষে সমান কর্মের জন্য অসমান পারিশ্রমিক সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে পরিগণিত হবে। এখানে এসডিজির ৫ নং লক্ষ্যমাত্রা (Gender Equality) এবং ৮ নং (Decent Work & Economic Growth)-এর সাদৃশ্য দৃশ্যমান।
৪. দুটো অভিযোগের উত্তরে
সবশেষে, বঙ্গবন্ধুর উপরিউক্ত অর্থনৈতিক দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটো অভিযোগের কথা তুলতে চাই। একটি অভিযোগ বেশি শোনা যায় ‘বামপন্থী’ অবস্থান থেকে, আরেকটি ‘ডানপন্থী’ অবস্থান থেকে। ‘বামপন্থী’ অভিযোগের মর্মার্থ হলো, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত ১৫ নং ধারার ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’, ১৭ নং ধারার ‘অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা’, ১৮ নং ধারার ‘জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা’, ১৯ নং ধারার ‘সুযোগের সমতা’ এবং ২০ নং ধারার ‘কর্মের অধিকার ও সম্মান’—এ সবই সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার ‘মূলনীতির’ অধ্যায়ে সন্নিবেশিত কেবল। এসব ‘ভালো ভালো’ কথা সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে স্থান পায়নি। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মৌলিক অধিকার অধ্যায়ে স্থান পেলে এসব বাস্তবায়নের পেছনে রাষ্ট্রের সচেষ্ট দায়বদ্ধতা থাকত। বঙ্গবন্ধু (ও তাঁর নিকটতম সহকর্মীরা) এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন। পাল্টা যুক্তি তাঁরা দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালেই গণপরিষদে সংবিধান নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন। তাঁদের যুক্তি ছিল, ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে যেসব অধিকার দেওয়া আছে, সেগুলোর আশু বাস্তবায়ন না ঘটলে বা ব্যত্যয় ঘটলে তার জন্য নাগরিকেরা অবিলম্বে কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি সুবিধা আশু-ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলেই এসব উন্নয়ন-ধারাকে রাষ্ট্রের ‘মৌলিক নীতিমালার’ ভেতরে রাখা হয়েছে ‘ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নযোগ্য অধিকার’ হিসেবে বা যাকে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী বলেছেন ‘progressively realizable rights’ বলে। প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের সক্ষমতা বাড়তে থাকলে এসব অধ্যায়কে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে চিহ্নিত করা সহজতর হবে।
এবার আসি ‘ডানপন্থী’ অভিযোগের বিষয়ে। ইতিপূর্বে আমি বলেছি, বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’কে কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করতে চাননি। তিনি নাগরিকের কল্যাণ, স্বাধীনতা ও ‘অধিকারের’ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে আত্মস্থ করেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা বিধান করা এবং ক্রমান্বয়ে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা (যেটা এখন এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রায় বিধৃত হয়েছে)। ডানপন্থীদের অভিযোগ হলো, তাহলে ১৯৭২ সালে এত তড়িঘড়ি করে ‘জাতীয়করণ’ করা হলো কেন এবং কেনই বা ব্যক্তি-পুঁজির বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেওয়া হলো? এ নিয়ে নানাজনই লিখেছেন আগে, সম্প্রতি আমিও লিখেছি। এখানে পাল্টা যুক্তি হচ্ছে ত্রিবিধ। প্রথমত, জাতীয়করণকৃত বেশির ভাগ কলকারখানার বা পরিসম্পদের মালিকানা ছিল অবাঙালি শিল্পপতিদের হাতে। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বা চলাকালীনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তাঁদের ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাপয়সা সব তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। বাংলাদেশেও বাইশ পরিবারের মতো অর্থনৈতিক সম্পদ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটুক, সেটি বঙ্গবন্ধু কখনোই চাননি। এ জন্যই প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যক্তি-পুঁজিকে সর্বতো উপায়ে সহায়তা দেওয়া হয়, কিন্তু বৃহৎ ব্যক্তি-পুঁজির বিকাশকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। কালক্রমে (১৯৭৪ সালেই) বৃহৎ ব্যক্তি পুঁজির ‘সিলিং’ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা তখনকার দিনের বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তার বিকাশের জন্য যথেষ্ট পরিসরই দিয়েছিল। তৃতীয়ত, গত চার দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ ‘রপ্তানিমূলক’ শিল্পে এবং সাম্প্রতিক দশকে ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদামুখীন’ শিল্পে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সুস্থ ব্যক্তি খাতের বিকাশের পথে বিনিয়োগের সিলিং-জনিত প্রতিবন্ধকতা কৃত্রিমভাবে আরোপ করার প্রয়োজনীয়তাও অনেক আগেই নিঃশেষিত হয়েছে। কিন্তু তার মানে কি এই যে, ব্যক্তি-পুঁজির ওপরে রাষ্ট্রের ‘নজরদারির’ প্রয়োজনীয়তাও সেই সঙ্গে লুপ্ত হয়ে গেছে? ‘মার্কেট-ফ্রেন্ডলি’ হওয়া এবং ‘বিজনেস-ফ্রেন্ডলি’ হওয়া তো সমার্থক শব্দ নয়। ২০১০-এর দশকের অভিজ্ঞতা এখানে মিশ্র তথ্য-প্রমাণ দিচ্ছে।
ব্যক্তি খাতের সাফল্যের পাশাপাশি সরকারি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যক্তি খাতের দায়দেনাও (Default) বিস্তর এবং ক্রমবর্ধমান। যে হারে ব্যক্তি খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটেছে ২০১০-এর দশকে, সেই হারে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়েনি। ফলে সামাজিক কল্যাণের ক্ষেত্রে বা Common Goods সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের যে ভূমিকা প্রত্যাশিত ছিল, তা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসেনি।
‘মার্কেট ইকোনমি’ হওয়ার পাশাপাশি আমরা যেন অতিদ্রুত ‘মার্কেট সোসাইটিতে’ পরিণত হচ্ছি। মার্কেট ইকোনমি আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার এ দেশে, কোনো সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা যেন উত্তরোত্তর কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত না হয়ে কেবল মার্কেট সোসাইটিতে রূপান্তরিত না হই। শেষোক্ত সমাজে সবকিছু, সব মূল্যবোধই, শেষ পর্যন্ত ‘কেনাবেচার’ সামগ্রীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেটা বিদ্যাদান, চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে ‘সামাজিক উদ্যোগ’, এমনকি আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পর্যন্ত। এ ধরনের সমাজ শেষাবধি মানুষের বাসযোগ্য ভূমি থাকে না। বঙ্গবন্ধুর দর্শনে এ ধরনের ডিস্টোপিয়ান ‘মার্কেট-সোসাইটির’ কোনো স্থান ছিল না। এ জন্যই তাঁকে জনগণের তদারকি, জনগণের মালিকানা ও জনস্বার্থের প্রয়োজনে সংবিধানের ৪৭ নং অনুচ্ছেদ যুক্ত করতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান নৈয়ায়িক দার্শনিক জন রাউলস, অমর্ত্য সেন ও মাইকেল স্যান্ডেলের অনুবর্তী। আমাদের সমাজের স্বভাবত ধর্মবিহিত মূল্যবোধ এই অবস্থানের প্রতিই সমর্থন জানায়।
বিনায়ক সেন
অর্থনীতিবিদ

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

বঙ্গবন্ধুর ‘অর্থনৈতিক দর্শন’ শব্দটা কারও কারও কাছে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে। এ তো জানা কথাই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো প্রথাগত অর্থে ‘তাত্ত্বিক’ ছিলেন না, যেরকমটা আমরা সচরাচর ভাবতে অভ্যস্ত মার্কস, লেনিন, গান্ধী বা মাও সে তুংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
২৯ জুন ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

বঙ্গবন্ধুর ‘অর্থনৈতিক দর্শন’ শব্দটা কারও কারও কাছে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে। এ তো জানা কথাই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো প্রথাগত অর্থে ‘তাত্ত্বিক’ ছিলেন না, যেরকমটা আমরা সচরাচর ভাবতে অভ্যস্ত মার্কস, লেনিন, গান্ধী বা মাও সে তুংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
২৯ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

বঙ্গবন্ধুর ‘অর্থনৈতিক দর্শন’ শব্দটা কারও কারও কাছে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে। এ তো জানা কথাই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো প্রথাগত অর্থে ‘তাত্ত্বিক’ ছিলেন না, যেরকমটা আমরা সচরাচর ভাবতে অভ্যস্ত মার্কস, লেনিন, গান্ধী বা মাও সে তুংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
২৯ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

বঙ্গবন্ধুর ‘অর্থনৈতিক দর্শন’ শব্দটা কারও কারও কাছে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে। এ তো জানা কথাই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো প্রথাগত অর্থে ‘তাত্ত্বিক’ ছিলেন না, যেরকমটা আমরা সচরাচর ভাবতে অভ্যস্ত মার্কস, লেনিন, গান্ধী বা মাও সে তুংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
২৯ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫