মুজিব রহমান

সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চাষাবাদ, পুকুর খনন এবং অন্যান্য খননের ফলে বর্তমানেও বিক্রমপুর থেকে বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্নসহ ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের মাধ্যমে বিক্রমপুর অঞ্চলে সমৃদ্ধ মানববসতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯১২-১৩ সালে শ্রীযুক্ত পরেশনাথের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং ১৯১৬-১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধীনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এই অঞ্চলে সীমিত উৎখনন করেন। কালের প্রবাহে মাটি চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধারে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন অতীত সমৃদ্ধির সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান খুবই ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং যৌথ সহায়তানির্ভর কর্মযজ্ঞ। বিক্রমপুর অঞ্চলে নতুন করে ২০১০ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’- এর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাকেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের গবেষক দল, জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং অন্যান্য গবেষকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হয়। রামপাল, বজ্রযোগিনী, বল্লালবাড়িসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থানের নাম থেকে বিক্রমপুরের ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে বিক্রমপুর অঞ্চলে বৌদ্ধবিহার থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অতীশ দীপঙ্করের সময় (৯৮২-১০৫৪ খ্রি.) বিক্রমপুরের বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রে নেপাল, তিব্বত, চীন, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ১০০ শিক্ষক ছিলেন। এই অঞ্চলে চন্দ্র, বর্মণ ও সেন রাজবংশের আধিপত্য বিস্তারের সুস্পষ্ট লিপিপ্রমাণ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সুলতানি ও মোগল আমল এবং ব্রিটিশ সময়পর্ব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখানে সমৃদ্ধ মানব বসতি দেখা যায়। প্রাচীন অবশেষগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে হারিয়ে গেলেও সুলতানি (বাবা আদমের মসজিদ), মোগল (মীরকাদিম পুল, ইদ্রাকপুর দুর্গ) ও ঔপনিবেশিক সময়ের বেশ কিছু স্থাপনা এখনো টিকে আছে। বিক্রমপুর অঞ্চল থেকে বেশ কিছু বৌদ্ধ ও হিন্দু ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে।
শুরুতে অনুসন্ধানকৃত প্রত্নস্থানসমূহের মধ্যে সুখবাসপুর, রঘুরামপুর, বজ্রযোগিনী, গুহপাড়া, খানকা প্রভৃতি গ্রামে ৯টি উৎখনন খাদে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করা হয়। প্রথম দিকেই উৎখননে স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্ন হিসেবে ইট, ইটের দেয়াল, পাথরের স্লাব প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ, মৃৎপাত্রের টুকরোসহ বিভিন্ন আকৃতির মৃৎপাত্র, পাথরের নিদর্শনসমূহের মধ্যে পাথরের স্লাব, ভাঙা টুকরোসহ নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন টুকরো, কিছু ধাতব নিদর্শন, উদ্ভিজ ও প্রাণিজ অবশেষ প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়। প্রতিটি উৎখনন খাদে ইটের পুরু স্তরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বসতির ধারাবাহিক অনুক্রম দেখা গেছে। বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে এ ধরনের ইটের বিস্তৃতি উন্নত, বিকশিত ও বিস্তৃত নগরের ইঙ্গিতবাহী ছিল। উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত এসব স্থাপত্যিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ইট-নির্মিত দেয়াল ও পার্শ্ব দেয়ালের সংযুক্তির চিহ্ন একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপত্যের অস্তিত্বের ইঙ্গিত বহন করে। উৎখননে আস্তে আস্তে স্থাপত্যটির প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়। উৎখননকৃত বিভিন্ন প্রত্নপীঠ থেকে বিভিন্ন পরিমাপের ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত ইটের পরিমাপ দেখে আপেক্ষিক তারিখ নির্ণয় পদ্ধতি অনুসারে প্রাথমিকভাবে কোনো কোনো প্রত্নপীঠে প্রাক-মধ্যযুগের বসতির চিহ্ন হিসেবে ওই সময়েরই ধারণা করা হয়েছিল। উৎখননে প্রাপ্ত জৈব অবশেষসমূহের তেজস্ক্রিয় কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্নস্থানসমূহের পরম কালানুক্রম জানা সম্ভব হয়েছে। এগুলো দশম ও একাদশ শতকের (৭৮০ থেকে ১২২৩ খ্রিষ্টাব্দ) নিদর্শন।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে একটি বৌদ্ধবিহার। এখানে অনেকগুলো ভিক্ষুকক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত স্মরণীয় ঘটনা। এই অমূল্য আবিষ্কার বাংলাদেশকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা করে দিচ্ছে। কারণ বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর কীর্তিমান সন্তান ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ জগতে দ্বিতীয় বুদ্ধ এবং পরম পূজনীয়। কিন্তু তাঁর বাল্যজীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। প্রশ্ন জাগে, বাল্যজীবনে তিনি কোথায় বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা-দীক্ষা নেন? বৌদ্ধ ধর্মে তাঁর পাণ্ডিত্যলাভ কি হঠাৎ হয়েছে? জগদ্বিখ্যাত বিক্রমশীলা এবং সোমপুর মহাবিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগলাভ তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি এ কথা সহজে অনুমেয়। বৌদ্ধ ধর্মের অবক্ষয় রোধে তিব্বতের রাজা একাধিকবার দূত পাঠান অতীশের কাছে তিব্বতে গমনের জন্য। এই আমন্ত্রণে তাঁর পাণ্ডিত্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। অতীশ দীপঙ্কর শুধু স্বনামধন্য পণ্ডিতই ছিলেন না, তদানীন্তন রাজনীতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আমাদের ধারণা, প্রাচীন বিক্রমপুরের রঘুরামপুর গ্রামে সদ্য আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহারের সঙ্গে অতীশ দীপঙ্করের একটি গভীর সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক জরিপেই মনে হয়েছিল বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী, রামপাল, সুখবাসপুর, মীরকাদিম, পঞ্চসার, নগর কসবা, সিপাহীপাড়া, দেওসার, সোনারং টঙ্গিবাড়ী প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে প্রাচীন বিক্রমপুর নগর সুবিস্তৃত ছিল। অসংখ্য গ্রাম থেকে মূর্তি, ভাস্কর্য, শিলালিপি পাওয়া গেছে এবং ইট–পাথর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের বিশাল আকৃতির (প্রায় ৬ একর) দেলে (দেউলে) ২০১৩-১৪ সাল থেকে ধারাবাহিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসে একের পর এক স্থাপত্যিক নিদর্শন—বৌদ্ধ মন্দির, মণ্ডপ, অষ্টকোনাকৃতির পঞ্চ স্তূপ, দেয়াল, ইট নির্মিত নালা প্রভৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে পাথরনির্মিত নিদর্শনের পাশাপাশি ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতির পাথরের ছিলকা, নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের অসংখ্য ভেঙে যাওয়া টুকরো থেকে পাথরের শিল্প নির্মাণকেন্দ্র হিসেবেও এখানকার কিছু কিছু স্থানকে চিহ্নিত করা যায়। উৎখননে প্রাচীন শুষ্ক নদী খাতের ওপর মানব বসতির চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ থেকে প্রাচীন নদী খাত ও সমৃদ্ধ মানব বসতির ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। উৎখননের পাশাপাশি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে বিকশিত নগরের ইঙ্গিতবাহী স্থাপত্যিক নিদর্শন, প্রস্তর নিদর্শন, মাটি ও পাথরের তৈজসপত্র আবিষ্কার চলমান। আশা করা যায়, প্রাপ্ত এসব সূত্র ধরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অঞ্চলে জরিপ ও উৎখনন পরিচালনার মাধ্যমে প্রাচীন বিক্রমপুর অঞ্চলের সমৃদ্ধ অতীত খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে আবিষ্কৃত হয় পিরামিড আকৃতির স্তূপ। এটি বৌদ্ধধর্মীয় সমাধি। এর উচ্চতা সাড়ে ৪৩ মিটার, যা ভারতের সাঁচি, ভারহুত, অমরাবতীর সমগোত্রীয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খননকাজে ৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত হয়। ২০১৮-১৯ সালে পরীক্ষামূলক খননে বল্লালবাড়ী থেকে প্রাচীন বসতির আলামত পাওয়া যায়। রঘুরামপুরের খননে বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার এক অনন্য ঘটনা। নাটেশ্বর দেউলে অতীশ দীপঙ্করের সময়ের বৃহৎ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। বৃহৎ ও সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার বাংলাদেশে এটাই প্রথম। দেশের সর্ববৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোনাকৃতির স্তূপের চারদিকে চারটি স্তূপ হলঘরও ছিল। ওই স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশ ও নকশাকৃত ইট। অষ্টকোনাকৃতি স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য স্মারক কুঠুরিটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। এখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহভস্ম ও ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো।
শুরুতে ইটের তৈরি সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। পরেতে দেখা যায় পুরো স্তূপ কমপ্লেক্সজুড়েই রয়েছে সুরক্ষাপ্রাচীরটি। পুরো বসতিজুড়ে সুরক্ষাপ্রাচীর আবিষ্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এর আগে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যাচ্ছিল না।
রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর দেউলের এই অনুসন্ধান ও আবিষ্কারকে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৌদ্ধ স্থাপনা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ইতিমধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নাটেশ্বর থেকে রঘুরামপুর পর্যন্ত একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এমন প্রাচীন নিদর্শন দেখতে পর্যটকেরা এখানে আসবেনই। তাঁদের আকৃষ্ট করতে রঘুরামপুর বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থানে বিক্রমপুর উন্মুক্ত জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের সহযোগিতায় বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির কর্মসূচি পরিচালক নূহ-উল-আলম লেনিন ও গবেষণা পরিচালক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মুন্সিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছে এই অঞ্চলের অবয়ব। সেই সঙ্গে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শনকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হলে অঞ্চলটি আরও উন্নত হয়ে উঠবে।
মুজিব রহমান
সভাপতি, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চাষাবাদ, পুকুর খনন এবং অন্যান্য খননের ফলে বর্তমানেও বিক্রমপুর থেকে বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্নসহ ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের মাধ্যমে বিক্রমপুর অঞ্চলে সমৃদ্ধ মানববসতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯১২-১৩ সালে শ্রীযুক্ত পরেশনাথের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং ১৯১৬-১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধীনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এই অঞ্চলে সীমিত উৎখনন করেন। কালের প্রবাহে মাটি চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধারে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন অতীত সমৃদ্ধির সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান খুবই ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং যৌথ সহায়তানির্ভর কর্মযজ্ঞ। বিক্রমপুর অঞ্চলে নতুন করে ২০১০ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’- এর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাকেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের গবেষক দল, জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং অন্যান্য গবেষকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হয়। রামপাল, বজ্রযোগিনী, বল্লালবাড়িসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থানের নাম থেকে বিক্রমপুরের ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে বিক্রমপুর অঞ্চলে বৌদ্ধবিহার থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অতীশ দীপঙ্করের সময় (৯৮২-১০৫৪ খ্রি.) বিক্রমপুরের বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রে নেপাল, তিব্বত, চীন, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ১০০ শিক্ষক ছিলেন। এই অঞ্চলে চন্দ্র, বর্মণ ও সেন রাজবংশের আধিপত্য বিস্তারের সুস্পষ্ট লিপিপ্রমাণ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সুলতানি ও মোগল আমল এবং ব্রিটিশ সময়পর্ব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখানে সমৃদ্ধ মানব বসতি দেখা যায়। প্রাচীন অবশেষগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে হারিয়ে গেলেও সুলতানি (বাবা আদমের মসজিদ), মোগল (মীরকাদিম পুল, ইদ্রাকপুর দুর্গ) ও ঔপনিবেশিক সময়ের বেশ কিছু স্থাপনা এখনো টিকে আছে। বিক্রমপুর অঞ্চল থেকে বেশ কিছু বৌদ্ধ ও হিন্দু ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে।
শুরুতে অনুসন্ধানকৃত প্রত্নস্থানসমূহের মধ্যে সুখবাসপুর, রঘুরামপুর, বজ্রযোগিনী, গুহপাড়া, খানকা প্রভৃতি গ্রামে ৯টি উৎখনন খাদে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করা হয়। প্রথম দিকেই উৎখননে স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্ন হিসেবে ইট, ইটের দেয়াল, পাথরের স্লাব প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ, মৃৎপাত্রের টুকরোসহ বিভিন্ন আকৃতির মৃৎপাত্র, পাথরের নিদর্শনসমূহের মধ্যে পাথরের স্লাব, ভাঙা টুকরোসহ নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন টুকরো, কিছু ধাতব নিদর্শন, উদ্ভিজ ও প্রাণিজ অবশেষ প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়। প্রতিটি উৎখনন খাদে ইটের পুরু স্তরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বসতির ধারাবাহিক অনুক্রম দেখা গেছে। বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে এ ধরনের ইটের বিস্তৃতি উন্নত, বিকশিত ও বিস্তৃত নগরের ইঙ্গিতবাহী ছিল। উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত এসব স্থাপত্যিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ইট-নির্মিত দেয়াল ও পার্শ্ব দেয়ালের সংযুক্তির চিহ্ন একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপত্যের অস্তিত্বের ইঙ্গিত বহন করে। উৎখননে আস্তে আস্তে স্থাপত্যটির প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়। উৎখননকৃত বিভিন্ন প্রত্নপীঠ থেকে বিভিন্ন পরিমাপের ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত ইটের পরিমাপ দেখে আপেক্ষিক তারিখ নির্ণয় পদ্ধতি অনুসারে প্রাথমিকভাবে কোনো কোনো প্রত্নপীঠে প্রাক-মধ্যযুগের বসতির চিহ্ন হিসেবে ওই সময়েরই ধারণা করা হয়েছিল। উৎখননে প্রাপ্ত জৈব অবশেষসমূহের তেজস্ক্রিয় কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্নস্থানসমূহের পরম কালানুক্রম জানা সম্ভব হয়েছে। এগুলো দশম ও একাদশ শতকের (৭৮০ থেকে ১২২৩ খ্রিষ্টাব্দ) নিদর্শন।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে একটি বৌদ্ধবিহার। এখানে অনেকগুলো ভিক্ষুকক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত স্মরণীয় ঘটনা। এই অমূল্য আবিষ্কার বাংলাদেশকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা করে দিচ্ছে। কারণ বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর কীর্তিমান সন্তান ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ জগতে দ্বিতীয় বুদ্ধ এবং পরম পূজনীয়। কিন্তু তাঁর বাল্যজীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। প্রশ্ন জাগে, বাল্যজীবনে তিনি কোথায় বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা-দীক্ষা নেন? বৌদ্ধ ধর্মে তাঁর পাণ্ডিত্যলাভ কি হঠাৎ হয়েছে? জগদ্বিখ্যাত বিক্রমশীলা এবং সোমপুর মহাবিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগলাভ তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি এ কথা সহজে অনুমেয়। বৌদ্ধ ধর্মের অবক্ষয় রোধে তিব্বতের রাজা একাধিকবার দূত পাঠান অতীশের কাছে তিব্বতে গমনের জন্য। এই আমন্ত্রণে তাঁর পাণ্ডিত্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। অতীশ দীপঙ্কর শুধু স্বনামধন্য পণ্ডিতই ছিলেন না, তদানীন্তন রাজনীতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আমাদের ধারণা, প্রাচীন বিক্রমপুরের রঘুরামপুর গ্রামে সদ্য আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহারের সঙ্গে অতীশ দীপঙ্করের একটি গভীর সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক জরিপেই মনে হয়েছিল বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী, রামপাল, সুখবাসপুর, মীরকাদিম, পঞ্চসার, নগর কসবা, সিপাহীপাড়া, দেওসার, সোনারং টঙ্গিবাড়ী প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে প্রাচীন বিক্রমপুর নগর সুবিস্তৃত ছিল। অসংখ্য গ্রাম থেকে মূর্তি, ভাস্কর্য, শিলালিপি পাওয়া গেছে এবং ইট–পাথর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের বিশাল আকৃতির (প্রায় ৬ একর) দেলে (দেউলে) ২০১৩-১৪ সাল থেকে ধারাবাহিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসে একের পর এক স্থাপত্যিক নিদর্শন—বৌদ্ধ মন্দির, মণ্ডপ, অষ্টকোনাকৃতির পঞ্চ স্তূপ, দেয়াল, ইট নির্মিত নালা প্রভৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে পাথরনির্মিত নিদর্শনের পাশাপাশি ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতির পাথরের ছিলকা, নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের অসংখ্য ভেঙে যাওয়া টুকরো থেকে পাথরের শিল্প নির্মাণকেন্দ্র হিসেবেও এখানকার কিছু কিছু স্থানকে চিহ্নিত করা যায়। উৎখননে প্রাচীন শুষ্ক নদী খাতের ওপর মানব বসতির চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ থেকে প্রাচীন নদী খাত ও সমৃদ্ধ মানব বসতির ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। উৎখননের পাশাপাশি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে বিকশিত নগরের ইঙ্গিতবাহী স্থাপত্যিক নিদর্শন, প্রস্তর নিদর্শন, মাটি ও পাথরের তৈজসপত্র আবিষ্কার চলমান। আশা করা যায়, প্রাপ্ত এসব সূত্র ধরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অঞ্চলে জরিপ ও উৎখনন পরিচালনার মাধ্যমে প্রাচীন বিক্রমপুর অঞ্চলের সমৃদ্ধ অতীত খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে আবিষ্কৃত হয় পিরামিড আকৃতির স্তূপ। এটি বৌদ্ধধর্মীয় সমাধি। এর উচ্চতা সাড়ে ৪৩ মিটার, যা ভারতের সাঁচি, ভারহুত, অমরাবতীর সমগোত্রীয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খননকাজে ৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত হয়। ২০১৮-১৯ সালে পরীক্ষামূলক খননে বল্লালবাড়ী থেকে প্রাচীন বসতির আলামত পাওয়া যায়। রঘুরামপুরের খননে বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার এক অনন্য ঘটনা। নাটেশ্বর দেউলে অতীশ দীপঙ্করের সময়ের বৃহৎ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। বৃহৎ ও সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার বাংলাদেশে এটাই প্রথম। দেশের সর্ববৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোনাকৃতির স্তূপের চারদিকে চারটি স্তূপ হলঘরও ছিল। ওই স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশ ও নকশাকৃত ইট। অষ্টকোনাকৃতি স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য স্মারক কুঠুরিটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। এখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহভস্ম ও ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো।
শুরুতে ইটের তৈরি সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। পরেতে দেখা যায় পুরো স্তূপ কমপ্লেক্সজুড়েই রয়েছে সুরক্ষাপ্রাচীরটি। পুরো বসতিজুড়ে সুরক্ষাপ্রাচীর আবিষ্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এর আগে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যাচ্ছিল না।
রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর দেউলের এই অনুসন্ধান ও আবিষ্কারকে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৌদ্ধ স্থাপনা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ইতিমধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নাটেশ্বর থেকে রঘুরামপুর পর্যন্ত একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এমন প্রাচীন নিদর্শন দেখতে পর্যটকেরা এখানে আসবেনই। তাঁদের আকৃষ্ট করতে রঘুরামপুর বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থানে বিক্রমপুর উন্মুক্ত জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের সহযোগিতায় বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির কর্মসূচি পরিচালক নূহ-উল-আলম লেনিন ও গবেষণা পরিচালক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মুন্সিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছে এই অঞ্চলের অবয়ব। সেই সঙ্গে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শনকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হলে অঞ্চলটি আরও উন্নত হয়ে উঠবে।
মুজিব রহমান
সভাপতি, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
মুজিব রহমান

সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চাষাবাদ, পুকুর খনন এবং অন্যান্য খননের ফলে বর্তমানেও বিক্রমপুর থেকে বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্নসহ ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের মাধ্যমে বিক্রমপুর অঞ্চলে সমৃদ্ধ মানববসতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯১২-১৩ সালে শ্রীযুক্ত পরেশনাথের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং ১৯১৬-১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধীনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এই অঞ্চলে সীমিত উৎখনন করেন। কালের প্রবাহে মাটি চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধারে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন অতীত সমৃদ্ধির সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান খুবই ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং যৌথ সহায়তানির্ভর কর্মযজ্ঞ। বিক্রমপুর অঞ্চলে নতুন করে ২০১০ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’- এর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাকেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের গবেষক দল, জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং অন্যান্য গবেষকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হয়। রামপাল, বজ্রযোগিনী, বল্লালবাড়িসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থানের নাম থেকে বিক্রমপুরের ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে বিক্রমপুর অঞ্চলে বৌদ্ধবিহার থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অতীশ দীপঙ্করের সময় (৯৮২-১০৫৪ খ্রি.) বিক্রমপুরের বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রে নেপাল, তিব্বত, চীন, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ১০০ শিক্ষক ছিলেন। এই অঞ্চলে চন্দ্র, বর্মণ ও সেন রাজবংশের আধিপত্য বিস্তারের সুস্পষ্ট লিপিপ্রমাণ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সুলতানি ও মোগল আমল এবং ব্রিটিশ সময়পর্ব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখানে সমৃদ্ধ মানব বসতি দেখা যায়। প্রাচীন অবশেষগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে হারিয়ে গেলেও সুলতানি (বাবা আদমের মসজিদ), মোগল (মীরকাদিম পুল, ইদ্রাকপুর দুর্গ) ও ঔপনিবেশিক সময়ের বেশ কিছু স্থাপনা এখনো টিকে আছে। বিক্রমপুর অঞ্চল থেকে বেশ কিছু বৌদ্ধ ও হিন্দু ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে।
শুরুতে অনুসন্ধানকৃত প্রত্নস্থানসমূহের মধ্যে সুখবাসপুর, রঘুরামপুর, বজ্রযোগিনী, গুহপাড়া, খানকা প্রভৃতি গ্রামে ৯টি উৎখনন খাদে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করা হয়। প্রথম দিকেই উৎখননে স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্ন হিসেবে ইট, ইটের দেয়াল, পাথরের স্লাব প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ, মৃৎপাত্রের টুকরোসহ বিভিন্ন আকৃতির মৃৎপাত্র, পাথরের নিদর্শনসমূহের মধ্যে পাথরের স্লাব, ভাঙা টুকরোসহ নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন টুকরো, কিছু ধাতব নিদর্শন, উদ্ভিজ ও প্রাণিজ অবশেষ প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়। প্রতিটি উৎখনন খাদে ইটের পুরু স্তরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বসতির ধারাবাহিক অনুক্রম দেখা গেছে। বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে এ ধরনের ইটের বিস্তৃতি উন্নত, বিকশিত ও বিস্তৃত নগরের ইঙ্গিতবাহী ছিল। উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত এসব স্থাপত্যিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ইট-নির্মিত দেয়াল ও পার্শ্ব দেয়ালের সংযুক্তির চিহ্ন একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপত্যের অস্তিত্বের ইঙ্গিত বহন করে। উৎখননে আস্তে আস্তে স্থাপত্যটির প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়। উৎখননকৃত বিভিন্ন প্রত্নপীঠ থেকে বিভিন্ন পরিমাপের ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত ইটের পরিমাপ দেখে আপেক্ষিক তারিখ নির্ণয় পদ্ধতি অনুসারে প্রাথমিকভাবে কোনো কোনো প্রত্নপীঠে প্রাক-মধ্যযুগের বসতির চিহ্ন হিসেবে ওই সময়েরই ধারণা করা হয়েছিল। উৎখননে প্রাপ্ত জৈব অবশেষসমূহের তেজস্ক্রিয় কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্নস্থানসমূহের পরম কালানুক্রম জানা সম্ভব হয়েছে। এগুলো দশম ও একাদশ শতকের (৭৮০ থেকে ১২২৩ খ্রিষ্টাব্দ) নিদর্শন।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে একটি বৌদ্ধবিহার। এখানে অনেকগুলো ভিক্ষুকক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত স্মরণীয় ঘটনা। এই অমূল্য আবিষ্কার বাংলাদেশকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা করে দিচ্ছে। কারণ বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর কীর্তিমান সন্তান ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ জগতে দ্বিতীয় বুদ্ধ এবং পরম পূজনীয়। কিন্তু তাঁর বাল্যজীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। প্রশ্ন জাগে, বাল্যজীবনে তিনি কোথায় বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা-দীক্ষা নেন? বৌদ্ধ ধর্মে তাঁর পাণ্ডিত্যলাভ কি হঠাৎ হয়েছে? জগদ্বিখ্যাত বিক্রমশীলা এবং সোমপুর মহাবিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগলাভ তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি এ কথা সহজে অনুমেয়। বৌদ্ধ ধর্মের অবক্ষয় রোধে তিব্বতের রাজা একাধিকবার দূত পাঠান অতীশের কাছে তিব্বতে গমনের জন্য। এই আমন্ত্রণে তাঁর পাণ্ডিত্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। অতীশ দীপঙ্কর শুধু স্বনামধন্য পণ্ডিতই ছিলেন না, তদানীন্তন রাজনীতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আমাদের ধারণা, প্রাচীন বিক্রমপুরের রঘুরামপুর গ্রামে সদ্য আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহারের সঙ্গে অতীশ দীপঙ্করের একটি গভীর সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক জরিপেই মনে হয়েছিল বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী, রামপাল, সুখবাসপুর, মীরকাদিম, পঞ্চসার, নগর কসবা, সিপাহীপাড়া, দেওসার, সোনারং টঙ্গিবাড়ী প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে প্রাচীন বিক্রমপুর নগর সুবিস্তৃত ছিল। অসংখ্য গ্রাম থেকে মূর্তি, ভাস্কর্য, শিলালিপি পাওয়া গেছে এবং ইট–পাথর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের বিশাল আকৃতির (প্রায় ৬ একর) দেলে (দেউলে) ২০১৩-১৪ সাল থেকে ধারাবাহিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসে একের পর এক স্থাপত্যিক নিদর্শন—বৌদ্ধ মন্দির, মণ্ডপ, অষ্টকোনাকৃতির পঞ্চ স্তূপ, দেয়াল, ইট নির্মিত নালা প্রভৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে পাথরনির্মিত নিদর্শনের পাশাপাশি ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতির পাথরের ছিলকা, নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের অসংখ্য ভেঙে যাওয়া টুকরো থেকে পাথরের শিল্প নির্মাণকেন্দ্র হিসেবেও এখানকার কিছু কিছু স্থানকে চিহ্নিত করা যায়। উৎখননে প্রাচীন শুষ্ক নদী খাতের ওপর মানব বসতির চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ থেকে প্রাচীন নদী খাত ও সমৃদ্ধ মানব বসতির ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। উৎখননের পাশাপাশি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে বিকশিত নগরের ইঙ্গিতবাহী স্থাপত্যিক নিদর্শন, প্রস্তর নিদর্শন, মাটি ও পাথরের তৈজসপত্র আবিষ্কার চলমান। আশা করা যায়, প্রাপ্ত এসব সূত্র ধরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অঞ্চলে জরিপ ও উৎখনন পরিচালনার মাধ্যমে প্রাচীন বিক্রমপুর অঞ্চলের সমৃদ্ধ অতীত খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে আবিষ্কৃত হয় পিরামিড আকৃতির স্তূপ। এটি বৌদ্ধধর্মীয় সমাধি। এর উচ্চতা সাড়ে ৪৩ মিটার, যা ভারতের সাঁচি, ভারহুত, অমরাবতীর সমগোত্রীয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খননকাজে ৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত হয়। ২০১৮-১৯ সালে পরীক্ষামূলক খননে বল্লালবাড়ী থেকে প্রাচীন বসতির আলামত পাওয়া যায়। রঘুরামপুরের খননে বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার এক অনন্য ঘটনা। নাটেশ্বর দেউলে অতীশ দীপঙ্করের সময়ের বৃহৎ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। বৃহৎ ও সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার বাংলাদেশে এটাই প্রথম। দেশের সর্ববৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোনাকৃতির স্তূপের চারদিকে চারটি স্তূপ হলঘরও ছিল। ওই স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশ ও নকশাকৃত ইট। অষ্টকোনাকৃতি স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য স্মারক কুঠুরিটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। এখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহভস্ম ও ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো।
শুরুতে ইটের তৈরি সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। পরেতে দেখা যায় পুরো স্তূপ কমপ্লেক্সজুড়েই রয়েছে সুরক্ষাপ্রাচীরটি। পুরো বসতিজুড়ে সুরক্ষাপ্রাচীর আবিষ্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এর আগে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যাচ্ছিল না।
রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর দেউলের এই অনুসন্ধান ও আবিষ্কারকে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৌদ্ধ স্থাপনা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ইতিমধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নাটেশ্বর থেকে রঘুরামপুর পর্যন্ত একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এমন প্রাচীন নিদর্শন দেখতে পর্যটকেরা এখানে আসবেনই। তাঁদের আকৃষ্ট করতে রঘুরামপুর বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থানে বিক্রমপুর উন্মুক্ত জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের সহযোগিতায় বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির কর্মসূচি পরিচালক নূহ-উল-আলম লেনিন ও গবেষণা পরিচালক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মুন্সিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছে এই অঞ্চলের অবয়ব। সেই সঙ্গে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শনকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হলে অঞ্চলটি আরও উন্নত হয়ে উঠবে।
মুজিব রহমান
সভাপতি, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চাষাবাদ, পুকুর খনন এবং অন্যান্য খননের ফলে বর্তমানেও বিক্রমপুর থেকে বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্নসহ ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের মাধ্যমে বিক্রমপুর অঞ্চলে সমৃদ্ধ মানববসতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯১২-১৩ সালে শ্রীযুক্ত পরেশনাথের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং ১৯১৬-১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধীনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এই অঞ্চলে সীমিত উৎখনন করেন। কালের প্রবাহে মাটি চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধারে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন অতীত সমৃদ্ধির সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান খুবই ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং যৌথ সহায়তানির্ভর কর্মযজ্ঞ। বিক্রমপুর অঞ্চলে নতুন করে ২০১০ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’- এর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাকেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের গবেষক দল, জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং অন্যান্য গবেষকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হয়। রামপাল, বজ্রযোগিনী, বল্লালবাড়িসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থানের নাম থেকে বিক্রমপুরের ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে বিক্রমপুর অঞ্চলে বৌদ্ধবিহার থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অতীশ দীপঙ্করের সময় (৯৮২-১০৫৪ খ্রি.) বিক্রমপুরের বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রে নেপাল, তিব্বত, চীন, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ১০০ শিক্ষক ছিলেন। এই অঞ্চলে চন্দ্র, বর্মণ ও সেন রাজবংশের আধিপত্য বিস্তারের সুস্পষ্ট লিপিপ্রমাণ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সুলতানি ও মোগল আমল এবং ব্রিটিশ সময়পর্ব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখানে সমৃদ্ধ মানব বসতি দেখা যায়। প্রাচীন অবশেষগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে হারিয়ে গেলেও সুলতানি (বাবা আদমের মসজিদ), মোগল (মীরকাদিম পুল, ইদ্রাকপুর দুর্গ) ও ঔপনিবেশিক সময়ের বেশ কিছু স্থাপনা এখনো টিকে আছে। বিক্রমপুর অঞ্চল থেকে বেশ কিছু বৌদ্ধ ও হিন্দু ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে।
শুরুতে অনুসন্ধানকৃত প্রত্নস্থানসমূহের মধ্যে সুখবাসপুর, রঘুরামপুর, বজ্রযোগিনী, গুহপাড়া, খানকা প্রভৃতি গ্রামে ৯টি উৎখনন খাদে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করা হয়। প্রথম দিকেই উৎখননে স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্ন হিসেবে ইট, ইটের দেয়াল, পাথরের স্লাব প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ, মৃৎপাত্রের টুকরোসহ বিভিন্ন আকৃতির মৃৎপাত্র, পাথরের নিদর্শনসমূহের মধ্যে পাথরের স্লাব, ভাঙা টুকরোসহ নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন টুকরো, কিছু ধাতব নিদর্শন, উদ্ভিজ ও প্রাণিজ অবশেষ প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়। প্রতিটি উৎখনন খাদে ইটের পুরু স্তরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বসতির ধারাবাহিক অনুক্রম দেখা গেছে। বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে এ ধরনের ইটের বিস্তৃতি উন্নত, বিকশিত ও বিস্তৃত নগরের ইঙ্গিতবাহী ছিল। উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত এসব স্থাপত্যিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ইট-নির্মিত দেয়াল ও পার্শ্ব দেয়ালের সংযুক্তির চিহ্ন একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপত্যের অস্তিত্বের ইঙ্গিত বহন করে। উৎখননে আস্তে আস্তে স্থাপত্যটির প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়। উৎখননকৃত বিভিন্ন প্রত্নপীঠ থেকে বিভিন্ন পরিমাপের ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত ইটের পরিমাপ দেখে আপেক্ষিক তারিখ নির্ণয় পদ্ধতি অনুসারে প্রাথমিকভাবে কোনো কোনো প্রত্নপীঠে প্রাক-মধ্যযুগের বসতির চিহ্ন হিসেবে ওই সময়েরই ধারণা করা হয়েছিল। উৎখননে প্রাপ্ত জৈব অবশেষসমূহের তেজস্ক্রিয় কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্নস্থানসমূহের পরম কালানুক্রম জানা সম্ভব হয়েছে। এগুলো দশম ও একাদশ শতকের (৭৮০ থেকে ১২২৩ খ্রিষ্টাব্দ) নিদর্শন।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে একটি বৌদ্ধবিহার। এখানে অনেকগুলো ভিক্ষুকক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত স্মরণীয় ঘটনা। এই অমূল্য আবিষ্কার বাংলাদেশকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা করে দিচ্ছে। কারণ বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর কীর্তিমান সন্তান ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ জগতে দ্বিতীয় বুদ্ধ এবং পরম পূজনীয়। কিন্তু তাঁর বাল্যজীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। প্রশ্ন জাগে, বাল্যজীবনে তিনি কোথায় বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা-দীক্ষা নেন? বৌদ্ধ ধর্মে তাঁর পাণ্ডিত্যলাভ কি হঠাৎ হয়েছে? জগদ্বিখ্যাত বিক্রমশীলা এবং সোমপুর মহাবিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগলাভ তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি এ কথা সহজে অনুমেয়। বৌদ্ধ ধর্মের অবক্ষয় রোধে তিব্বতের রাজা একাধিকবার দূত পাঠান অতীশের কাছে তিব্বতে গমনের জন্য। এই আমন্ত্রণে তাঁর পাণ্ডিত্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। অতীশ দীপঙ্কর শুধু স্বনামধন্য পণ্ডিতই ছিলেন না, তদানীন্তন রাজনীতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আমাদের ধারণা, প্রাচীন বিক্রমপুরের রঘুরামপুর গ্রামে সদ্য আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহারের সঙ্গে অতীশ দীপঙ্করের একটি গভীর সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক জরিপেই মনে হয়েছিল বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী, রামপাল, সুখবাসপুর, মীরকাদিম, পঞ্চসার, নগর কসবা, সিপাহীপাড়া, দেওসার, সোনারং টঙ্গিবাড়ী প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে প্রাচীন বিক্রমপুর নগর সুবিস্তৃত ছিল। অসংখ্য গ্রাম থেকে মূর্তি, ভাস্কর্য, শিলালিপি পাওয়া গেছে এবং ইট–পাথর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের বিশাল আকৃতির (প্রায় ৬ একর) দেলে (দেউলে) ২০১৩-১৪ সাল থেকে ধারাবাহিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসে একের পর এক স্থাপত্যিক নিদর্শন—বৌদ্ধ মন্দির, মণ্ডপ, অষ্টকোনাকৃতির পঞ্চ স্তূপ, দেয়াল, ইট নির্মিত নালা প্রভৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে পাথরনির্মিত নিদর্শনের পাশাপাশি ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতির পাথরের ছিলকা, নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের অসংখ্য ভেঙে যাওয়া টুকরো থেকে পাথরের শিল্প নির্মাণকেন্দ্র হিসেবেও এখানকার কিছু কিছু স্থানকে চিহ্নিত করা যায়। উৎখননে প্রাচীন শুষ্ক নদী খাতের ওপর মানব বসতির চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ থেকে প্রাচীন নদী খাত ও সমৃদ্ধ মানব বসতির ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। উৎখননের পাশাপাশি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে বিকশিত নগরের ইঙ্গিতবাহী স্থাপত্যিক নিদর্শন, প্রস্তর নিদর্শন, মাটি ও পাথরের তৈজসপত্র আবিষ্কার চলমান। আশা করা যায়, প্রাপ্ত এসব সূত্র ধরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অঞ্চলে জরিপ ও উৎখনন পরিচালনার মাধ্যমে প্রাচীন বিক্রমপুর অঞ্চলের সমৃদ্ধ অতীত খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে আবিষ্কৃত হয় পিরামিড আকৃতির স্তূপ। এটি বৌদ্ধধর্মীয় সমাধি। এর উচ্চতা সাড়ে ৪৩ মিটার, যা ভারতের সাঁচি, ভারহুত, অমরাবতীর সমগোত্রীয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খননকাজে ৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত হয়। ২০১৮-১৯ সালে পরীক্ষামূলক খননে বল্লালবাড়ী থেকে প্রাচীন বসতির আলামত পাওয়া যায়। রঘুরামপুরের খননে বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার এক অনন্য ঘটনা। নাটেশ্বর দেউলে অতীশ দীপঙ্করের সময়ের বৃহৎ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। বৃহৎ ও সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার বাংলাদেশে এটাই প্রথম। দেশের সর্ববৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোনাকৃতির স্তূপের চারদিকে চারটি স্তূপ হলঘরও ছিল। ওই স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশ ও নকশাকৃত ইট। অষ্টকোনাকৃতি স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য স্মারক কুঠুরিটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। এখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহভস্ম ও ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো।
শুরুতে ইটের তৈরি সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। পরেতে দেখা যায় পুরো স্তূপ কমপ্লেক্সজুড়েই রয়েছে সুরক্ষাপ্রাচীরটি। পুরো বসতিজুড়ে সুরক্ষাপ্রাচীর আবিষ্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এর আগে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যাচ্ছিল না।
রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর দেউলের এই অনুসন্ধান ও আবিষ্কারকে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৌদ্ধ স্থাপনা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ইতিমধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নাটেশ্বর থেকে রঘুরামপুর পর্যন্ত একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এমন প্রাচীন নিদর্শন দেখতে পর্যটকেরা এখানে আসবেনই। তাঁদের আকৃষ্ট করতে রঘুরামপুর বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থানে বিক্রমপুর উন্মুক্ত জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের সহযোগিতায় বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির কর্মসূচি পরিচালক নূহ-উল-আলম লেনিন ও গবেষণা পরিচালক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মুন্সিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছে এই অঞ্চলের অবয়ব। সেই সঙ্গে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শনকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হলে অঞ্চলটি আরও উন্নত হয়ে উঠবে।
মুজিব রহমান
সভাপতি, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৩০ জুন ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৩০ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৩০ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৩০ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫