Ajker Patrika

প্রজন্মের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও সুন্দর রূপ প্রতিফলিত হোক

এ কে এম শামসুদ্দিন
প্রজন্মের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও সুন্দর রূপ প্রতিফলিত হোক

প্রতিদিনের ঘটনা বা গল্পই আগামী দিনের ইতিহাস। এই গল্পে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা থাকে। ইতিহাস আমাদের পায়ের নিচের মাটিকে শক্ত করে। সে ইতিহাস গৌরবময় হলে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শক্তি জোগায়; ন্যায়ের অজুহাতে শক্তিধর শাসকের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রবণতাকে লজ্জা দেয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই নিজেদের ইতিহাস জানা দরকার। কিন্তু যে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাসংগ্রামের ফলে বিশ্ব দরবারে বাঙালির জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রকৃত ইতিহাসচর্চা আমরা কতজন করি? দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই ঘটনাবহুল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগের কাছেই অস্পষ্ট ও অস্বচ্ছ। তাদের কাছে স্বাধীনতা মানেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা। কিন্তু যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের বিজয়, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা, উনসত্তরের গণ–আন্দোলন, সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরষ্কুশ জয়লাভ, অতঃপর সশস্ত্র যুদ্ধের পথ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে–এ প্রজন্মের কতজনের চেতনায় সে ধারাবাহিক ইতিহাস উদ্ভাসিত হয়? স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা আমাদের উত্তরসূরিদের মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ ইতিহাস জানাতে পারিনি। এটি আমাদের অনেক বড় ব্যর্থতা। এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপিত হচ্ছে। এই সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, সভা-সমাবেশ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যে আয়োজন করা হয়েছে, সেসব অনুষ্ঠানেও কি আমরা স্বাধীনতার ইতিহাসের সত্য ও সুন্দর রূপ তুলে ধরতে পেরেছি?

আমাদের তরুণদের ভেতর এমনিতেই ইতিহাসচর্চা খুব কম হয়। নতুন প্রজন্মের নাগরিকরা যখন একসঙ্গে বসে আড্ডা  দেয় তখন মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গটি খুব কমই আলোচিত হয়। বছর ঘুরে যখন স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস ফিরে আসে, তখন ওই একটি দিনেই মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধের কথা বেশি বেশি আলোচিত হয়। বিভিন্ন মিডিয়া এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বছরের অন্যান্য সময় তো নয়ই, এসব বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানেও স্বাধীনতার পটভূমিতে শের–ই–বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, এমনকি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় চার নেতার অতুলনীয় আত্মত্যাগের কথা কমই আলোচনা হয়। ফলে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে জাতীয় এই নেতাদের সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের ধারণা স্পষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পদে চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে আমার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করতে চাই। ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আমার একটি কমন প্রশ্ন থাকত। প্রশ্নটি ছিল, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কবে’? প্রশ্নটি সহজ হলেও উত্তর শুনে অবাক হতাম। অধিকাংশ প্রার্থীর উত্তর ছিল, ১৬ ডিসেম্বর। উত্তর শুনে পাল্টা জিজ্ঞেস করতাম, ‘তাহলে স্বাধীনতা দিবস কবে’? তাঁদের উত্তর, ২৬ মার্চ। ১৬ ডিসেম্বর যদি দেশ স্বাধীন হয়ে থাকে তাহলে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হয় কী করে, জিজ্ঞেস করতেই প্রার্থীরা কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে থাকতেন। স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও পার্থক্য যাঁরা বোঝেন না, তাঁরা স্বাধীনতার পটভূমি সম্পর্কে কতটুকু জানবে, তা বলাই বাহুল্য। আমি ইন্টারভিউ বোর্ডে অবাক হয়ে লক্ষ করেছি, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম জিজ্ঞেস করায় প্রায় সবাই উত্তর দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’! বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের নাম খুব কম প্রার্থীই উত্তর দিয়েছেন। আমি এ ধরনের প্রায় সাতটি ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্য কিংবা সভাপতি হিসেবে আনুমানিক ১০–১২ হাজার প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিয়েছি। শতকরা হিসাবে, মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ প্রার্থীর কাছ থেকে এ দুটি সহজ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়েছি।

এ কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য। একটি কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। কথাটি শতভাগ সত্য। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি, এ কথা যিনি স্বীকার করেন না, তিনি যেন এ দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকেই অস্বীকার করলেন। বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী, তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে সামনে রেখেই শত্রুর মোকাবিলা করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে কোনো কিছু দিয়েই পরিমাপ করা যায় না। তাই বলে জাতীয় অন্য নেতাদের অবদানের কথা অস্বীকার করি কী করে? তাহলে যে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটবে।! তাঁরা যে আমাদের ইতিহাসেরই অংশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম কোনো একক ঘটনার গল্প নয়। ধারাবাহিক আন্দোলন ও সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপটি পায় মুক্তিযুদ্ধে। আমার বন্ধু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিশিষ্ট গবেষক মেজর  (অব.) সাইদুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়, আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রাম ছিল রিলে রেসের মতো। যে রেস শুরু হয়েছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন দিয়ে; যার শেষ এবং চূড়ান্ত রূপটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাঙালি চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করে। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে বিশ্ববাসীকে সেদিন বুঝিয়ে দিয়েছিল–বাঙালি যোদ্ধার জাতি। কিন্তু ৯ মাসের সেই সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করা এত সহজ ছিল না। নানা রকম সীমাবদ্ধতার মধ্যে যে নেতারা তাঁদের প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বের গুণাবলিতে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিলেন, তাঁদের  জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁরই গঠিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান সেদিন মুক্তিযুদ্ধকে দৃঢ়তার সঙ্গে পরিচালনা করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। অথচ প্রবাসী সরকার গঠন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে গিয়ে সেদিন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁদের। এ বাধা-বিপত্তি নিজ দলের সদস্যদের কাছ থেকেও এসেছিল প্রবলভাবে।

 প্রবাসী সরকারের কথা বলতে গেলে প্রথমেই যার নাম করতে হয় তিনি হলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন সেদিন। দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে অনেকেই মনে করতেন তিনিই বোধ হয় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি।  অনেক নেতাই তখন মুজিবনগর সরকারের সমালোচক ছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীন ছিলেন বহুদিনের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য তিনি পেয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অন্ধ অনুরাগী ছিলেন। শুধু তা–ই নয়, বঙ্গবন্ধুকেই তিনি তাঁর জীবনের একমাত্র নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। মন ও মানসিকতার দিক থেকে তিনি অন্য নেতাদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। অন্যদের মতো সংকীর্ণ মনোবৃত্তি কখনোই তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি কর্তব্যে ছিলেন অটল, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে বজ্রকঠিন প্রত্যয় নিয়ে সেদিন জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর চরিত্রের এসব গুণে মুগ্ধ হয়েই দলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে অধীনস্থ বেশির ভাগ বেসামরিক কর্মচারী তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করেছিলেন।

তবে ভিন্ন মনোভাব ও ভিন্ন চিন্তার স্রোতোধারার মানুষ যে ছিল না, তা নয়। প্রবাসী সরকার গঠনের প্রথম থেকেই তাজউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদের অন্যতম সদস্য খোন্দকার মোশতাক আহমদ চরম অসন্তুষ্ট ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতি ভিন্ন মনোভাব প্রকাশ করে যেকোনো কাজেই তিনি বাধা সৃষ্টি করেছেন। শুধু তা–ই নয়, প্রবাসী সরকারের অগোচরে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া ‘মুজিবকে চাও, না স্বাধীনতা চাও? স্বাধীনতা চাইলে মুজিবকে হারাতে হবে। কোনটা চাও’? এমন তত্ত্ব ছড়িয়ে দিয়ে দলীয় নেতা–কর্মী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন। খোন্দকার মোশতাকের পাশাপাশি আরও অনেকেই প্রবাসী সরকারের অনেক পদক্ষেপকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। প্রভাবশালী কিছু যুবনেতা প্রাথমিক পর্যায় থেকেই নিজেদের প্রবাসী সরকারের কর্তৃত্বের বাইরে রেখেছিলেন। যুবনেতাদের এমন ভিন্ন পথে হাঁটা প্রবাসী সরকারের জন্য কখনোই সুখকর ছিল না। তাঁদের এমন অনেক বিরূপ আচরণ মুক্তিযুদ্ধের ময়দানেও প্রভাব বিস্তার করেছিল। তা ছাড়া, বামপন্থী, ডানপন্থী সমস্যা তো ছিলই। এসব অযাচিত সমস্যা প্রবাসী সরকারকেই সামাল দিতে হয়েছে। তবে এসব কোনো কিছুই তাজউদ্দীন আহমদকে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে একবিন্দুও বিচ্যুত করতে পারেনি। এত বাধা-বিপত্তির পরও তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখে স্বাধীনতা অর্জনের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদের তখন একটাই চাওয়া ছিল, ‘আমরা মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতাও চাই’। শেষ পর্যন্ত নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, সব বিভ্রান্তি দূর করে দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকেও ফিরে পেয়েছিল এ দেশের মানুষ।
মুক্তিযুদ্ধের সেই ক্রান্তিলগ্নে, অন্তর্ঘাতমূলক অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয়ের মধ্যেও মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যরা দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তাজউদ্দীন আহমদকে সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতা করে গিয়েছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ অন্যরা একাগ্র মন নিয়ে, নিজেদের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে পরিশ্রম করে গেছেন। স্বাধীনতার এই দীর্ঘ রেসের চূড়ান্ত পর্বে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জাতীয় নেতাদের এই অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যপটে তাঁরা যে ভূমিকা পালন করেছেন, আমরা কি আমাদের সন্তানদের তাঁদের সেই ভূমিকার কথা বলতে পেরেছি? প্রতিবছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস আসে, আবার চলেও যায়। এসব জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানমালায় তাঁদের অবদানের কথা, তাঁদের আত্মত্যাগের কথা কতটুকু তুলে ধরেছি?

আজকাল অনেকের মুখে প্রায়ই শুনি বর্তমান প্রজন্মের সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে তাদের ভেতর এই আগ্রহের জন্ম হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি শুভ লক্ষণ। তাদের এই চেতনাবোধকে আরও উসকে দিতে হবে। তাহলেই তাদের দেশপ্রেমের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হবে। এর জন্য চাই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তাদের সামনে তুলে ধরা। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সবার অবদানের কথা সমানভাবে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হলে ইতিহাসের সত্য ও সুন্দরকে উপস্থাপন করা জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু মুখে নয়, মনেপ্রাণে, তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডেই যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুরণিত হয়। মনে রাখতে হবে, সঠিক ইতিহাস জানা জরুরি শুধু সত্য কিংবা মিথ্যা নির্ণয় করার জন্য নয়; ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যকে, ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যও। 

এ কে এম শামসুদ্দিন
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।

নাদিম নেওয়াজ
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

নিরাপত্তা ও সেবায় মার্কেট শেয়ারে এগিয়ে সিটি ব্যাংক

দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
তৌহিদুল আলম
তৌহিদুল আলম

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।

ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?

তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।

মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

১৫০০‍-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে সুবিধা দেয় ঢাকা ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।

গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।

ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

মাস্টারকার্ডেই সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।

দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।

গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।

ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত