Ajker Patrika

মঙ্গা নয় চাঙা

আব্দুল খালেক ফারুক
মঙ্গা নয় চাঙা

২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘কুড়িগ্রামে এখন মঙ্গা নেই, কুড়িগ্রাম এখন চাঙা।’ সেই সভায় কুড়িগ্রামকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে আন্তনগর ট্রেন চালু, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেন, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কারণে বদলে গেছে দৃশ্যপট।

সেই জনসভার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের সন্তান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। উৎফুল্ল চিত্তে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উক্তিটি সমর্থন করেন। সভামঞ্চের খুব কাছেই তিনি এখন শায়িত আছেন চিরনিদ্রায়।

বস্তুত, কাজের অভাবে কুড়িগ্রামে আশ্বিন-কার্তিকসহ বছরের কয়েকটা মাস আকাল জেঁকে বসেছিল একসময়। খাদ্যাভাবে, বিনা চিকিৎসায় মারা যেত হতভাগ্য মানুষ। বিশেষ করে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে কুড়িগ্রামের চিলমারীর জেলেপাড়ার এক তরুণীর জাল পরা ছবি দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। সেই দুর্ভিক্ষে কুড়িগ্রামে মাত্র তিন মাসে ১৬ হাজার ৪৮৮ জন মারা যায়। এর মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলায় সর্বাধিক ৯ হাজার মানুষ মারা যায়।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে কুড়িগ্রাম এগিয়ে গেছে অনেকখানি। এর প্রমাণ জেলার চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন, ধরলা ও তিস্তা নদীর ওপর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতু নির্মাণ, তিস্তা ও দুধকুমারের ওপর আরও দুটি সেতু নির্মাণাধীন থাকা, দুটি স্থলবন্দর চালু, একটি নৌবন্দর চালুর উদ্যোগ, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি। 
এসব অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে কর্মসংস্থান বেড়েছে। ন্যায্যমূল্য মিলছে কৃষিপণ্যের। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে সরাসরি আন্তনগর ট্রেন চালুসহ রেল যোগাযোগের উন্নয়ন, শিক্ষার উন্নয়ন, বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের গার্মেন্টসে কর্মসংস্থান, ১৬টি নদীর বুকে জেগে ওঠা অনুর্বর চরে নানা ফসলের সমাহার, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা অগ্রগতি দৃশ্যমান।

মঙ্গা আর অনুন্নয়নের প্রতীক হয়ে ওঠা কুড়িগ্রাম এখন খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা। বালুকাময় চরের জমি ব্যবহার, নানা ধরনের ধান ও সবজি উৎপাদন, সেচব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং কৃষিপ্রযুক্তির ক্রমাগত ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এই অভাবনীয় সাফল্য এসেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় বার্ষিক খাদ্যের চাহিদা ছিল (চাল ও গম) ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন। অথচ খাদ্য উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৫১ হাজার ১৮ মেট্রিক টন। এই বছরে খাদ্য উদ্বৃত্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন। চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৬০ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ সম্প্রসারণের কারণে প্রতিবছর বাড়ছে ধানের উৎপাদন।  

জমিতে ধান বোনা আর কাটার মধ্যবর্তী সময়, বিশেষ করে আশ্বিন-কার্তিকে একসময় মঙ্গার কবলে পড়ে অর্ধাহারে–অনাহারে বহু মানুষ দিন কাটাত। অনেকে মারা যেত অভুক্ত থেকে এবং অপুষ্টিতে ভুগে।

যমুনা সেতু চালুর পর ঘর ছাড়তে শুরু করে কুড়িগ্রামের দরিদ্র মানুষ। এখন ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত পোশাকশিল্পে জেলার লক্ষাধিক মানুষ কাজ করে। প্রতিদিন প্রায় ২০০ দূরপাল্লার বাস কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে যায়। এর বেশির ভাগ যাত্রীই গার্মেন্টস আর বিভিন্ন নির্মাণশিল্পের শ্রমিক। আগে কুড়িগ্রামের গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শণের ঘর ছিল, পরে শণ উঠে গিয়ে চকচকে টিনের ঘর ওঠে। এখন বাড়িতে বাড়িতে পাকা-আধা পাকা দালান নির্মিত হচ্ছে। আগে একজন দিনমজুর দিনমান খেটে দুই কেজি চালের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতেন, এখন দৈনিক মজুরির টাকায় ৮-১০ কেজি চাল ক্রয়ের সংগতি আছে দিনমজুরদের। এ ছাড়া দিনমজুরদের ছেলেরা পিতার পেশায় না এসে গার্মেন্টসের শ্রমিক হচ্ছে বা অন্য কোনো কাজ বেছে নিচ্ছে। তাই ধান কাটার মৌসুমে মজুর সংকটের অভাবনীয় ঘটনাও ঘটছে। এ সবই অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সুলক্ষণ।

কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর কারণে নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলা জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছিল স্থবিরতা। কিন্তু ধরলা নদীর ওপর দুটি সেতু নির্মাণের পর বদলে গেছে দৃশ্যপট।

১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম শহরসংলগ্ন প্রথম ধরলা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করেন। ফুলবাড়ী উপজেলার কুলাঘাটে ২০১৮ সালের ৩ জুন ৯৫০ মিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’ চালুর পর সীমান্তবর্তী এই তিন উপজেলায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে বিপ্লব। ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে সেই দুই সেতুর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন সহজতর হয়েছে। মাঝপথে দুধকুমার নদের ওপর আর একটি সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চার লেন বা প্রশস্ত সড়ক ও বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় অপার সম্ভাবনার প্রহর গুনছে মানুষ। ২০১২ সালে তিস্তা রেলসেতুর পাশে আর একটি সড়ক সেতু নির্মাণের ফলে যাতায়াতের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার কয়েক লাখ মানুষ। আগে রেলসেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন, বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করার কারণে সময় নষ্ট হতো। এই সঙ্গে চিলমারীর হরিপুরে তিস্তা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ তৃতীয় তিস্তা সেতু নির্মাণ সমাপ্ত হলে ঢাকার সঙ্গে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে কুড়িগ্রামে। আর রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের বহুমুখী পথ খুলে যাবে কুড়িগ্রামবাসীর জন্য।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ নামে একটি আন্তনগর ট্রেন চালু হয় ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর। এর আগের বছর রংপুর এক্সপ্রেসের সঙ্গে একটি শাটল ট্রেন যুক্ত করে দেওয়ায় ট্রেন যোগাযোগের সুফল নিতে শুরু করে কুড়িগ্রামবাসী। এখন সরাসরি ট্রেন চালুর কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আসা-যাওয়া করতে পারেন। ফলে ব্যবসা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে পণ্য পরিবহনে সুবিধা ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল সহজতর হওয়ায় এই খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে অভাবনীয়। বহু বেকার যুবক এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর মিশুক-রিকশা কিনে পথে নেমেছেন। তাঁদের দৈনিক গড় আয় কমপক্ষে ৫০০ টাকা। আগে ঢাকা বা বিভিন্ন এলাকায় যারা রিকশা চালাতেন, তাঁরাও থিতু হওয়ার চেষ্টা করছেন নিজ গ্রামে। দূর গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ার পর অটোরিকশা, মোবাইল ফোন, টিভি মেরামতসহ নানা ধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 
আসাম সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চালু হয়েছে সোনাহাট স্থলবন্দর। ২০১৮ সালে বন্দরটি চালুর পর ভারত থেকে নিয়মিত পাথর ও কয়লা আমদানি করছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তাতে দূরত্ব ও খরচ কমে গেছে। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিকের। এই স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন প্রক্রিয়াধীন। এটি চালু হলে ভারত গমনে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। একইভাবে রৌমারীর নতুন বন্দর এলাকায় রৌমারী বন্দরটি দিয়ে আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে এই বন্দর দিয়ে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ব্রহ্মপুত্রের পারে ঐতিহাসিক চিলমারী বন্দরের উন্নয়ন শুরু হয়েছে। নির্মিত হচ্ছে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এই বন্দর চালু হলে ভারতের আসাম থেকে বাংলাদেশের পায়রা বন্দর পর্যন্ত আন্তদেশীয় পণ্য আনা-নেওয়া সহজতর হবে।

ব্রহ্মপুত্র বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলাকে। চিলমারী বন্দর থেকে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে জেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াত অনেক সহজতর হবে। নদীকেন্দ্রিক পর্যটন সম্ভাবনার কথাও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই কুড়িগ্রাম। ১৯৯৭ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক সম্মান (অনার্স) ও কয়েকটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর চালুর পর প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সামনে এগোনোর অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সারিতে রয়েছেন কুড়িগ্রামের অনেক উজ্জ্বল মুখ। বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিবছর সফল শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। দারিদ্র্য জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য মেধাবী মুখ। এ সবই কুড়িগ্রামের সম্ভাবনা।

কুড়িগ্রামবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি উপহার কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচনসহ কারিগরি দিক নিয়ে কাজ চলছে। কৃষিপ্রধান কুড়িগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে ফসলের নতুন নতুন জাত নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের আরেকটি দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

এত অগ্রগতির পরেও শিল্পায়নের অভাব কুড়িগ্রামবাসীর হতাশার মূল জায়গা। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠা পেলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এখন এটির স্থান নির্বাচনের কাজ চলমান। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে গড়ে উঠবে ছোট-বড় শিল্পকারখানা। দারিদ্র্য ঘুচে উন্নত জেলাগুলোর সারিতে চলে যাবে কুড়িগ্রাম। মঙ্গা আর অনাহার হবে দূর অতীত। উন্মোচিত হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। 

আব্দুল খালেক ফারুক
লেখক ও সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।

নাদিম নেওয়াজ
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

নিরাপত্তা ও সেবায় মার্কেট শেয়ারে এগিয়ে সিটি ব্যাংক

দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
তৌহিদুল আলম
তৌহিদুল আলম

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।

ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?

তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।

মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

১৫০০‍-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে সুবিধা দেয় ঢাকা ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।

গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।

ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

মাস্টারকার্ডেই সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।

দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।

গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।

ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত