Ajker Patrika

আসল খেজুর রসের রং ও স্বাদ মধুর মতো

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আসল খেজুর রসের রং ও স্বাদ মধুর মতো

শীতকাল আসন্ন, গ্রামে সকালের শিশিরের সঙ্গে মৃদু শীত অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পরপরই কনকনে শীতের আবহ। শীতের সকাল মানেই খেজুর রস, ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, রসের পায়েসসহ আরও অনেক বাহারি সব পিঠাপুলির আয়োজন। এই খাবারগুলো তৈরি করা হয় খেজুরের রস কিংবা পাটালি গুড় দিয়ে। এ ছাড়া গ্রামে শীত মানেই খোলা চিতই, দুধ চিতই, রস চিতই, দুধ পুলি, তেলে ভাজা পিঠা, কলার পিঠা, মুড়ির মোয়া, খইয়ের মুড়কিসহ প্রতিদিন নানা আয়োজন। সব আয়োজনের সঙ্গেই খেজুর গুড় ও রসের গভীর এক আত্মীয়তা। খেজুর রস বা খেজুর গুড় ছাড়া এসব পিঠা তৈরি চলেই না। 

শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। তবে গ্রামের মানুষের সচেতনতার অভাব ও নির্বিচারে খেজুর গাছ নিধন করায় দিনদিন পরিবেশবান্ধব এ খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। 

টাঙ্গাইলের সখীপুরে অধিকাংশ বাড়ির আঙিনায় রয়েছে খেজুর গাছ। রাস্তার পাশে ও বাড়ির আঙিনায় অনেকটা অনাদরেই বেড়ে ওঠা খেজুর গাছগুলো থেকে প্রতিবার রস সংগ্রহ করা হয়। এবার রাজশাহী থেকে বেশ কয়েকটি দল এসেছে সখীপুরে। তাঁরা খেজুর রস সংগ্রহের উদ্দেশে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে গাছের কাণ্ড পরিষ্কার ও কাঠি বা নলি বসানোর কাজ শেষ। শুরু হয়েছে গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব। 

এ বিষয়ে রাজশাহী থেকে আসা গাছি আবদুস ছালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা পেশাগত কারণে এখানে এসেছি। চাহিদা মত খেজুর গাছ না পাওয়ার কারণে দলের সদস্য অনেকেই হতাশ। যে খেজুর গাছের যে রস পাওয়া যাচ্ছে তাতে আশানুরূপ গুড় তৈরি করতে পরব কিনা এ নিয়ে অনেকের হতাশা রয়েছে। তারপরও এ বছর প্রায় ১৫০ টির মতো গাছ পেয়েছি। এর মধ্যে প্রতিদিন ৬০-৭০টি গাছ থেকে রস পাওয়া যাবে। আশা করছি পূর্ণ মৌসুমে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে গুড় পাওয়া যাবে। 
 
তিনি আরও বলেন, শীত একটু বেশি পড়লে পিঠাপুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। তাই খেজুর রস ও গুড়ের দামও বাড়বে বলে আশা করছি। যে পরিমাণ শ্রম দিতে হয় সেই অনুযায়ী লাভ করতে পারি না। তবুও পেশাগত কারণে এই কাজ করছি। 

উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের আনোয়ার হোসেন স্মৃতিচারণ করে বলেন, এক সময় ভোরবেলায় এক টাকায় গ্লাস কাঁচা রস ও জ্বাল দেওয়া খেজুর রস ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে কিনে খেতাম। এখন বাজারে যে খেজুর রস ও গুড় পাওয়া যায় এতে সেই স্বাদই পাওয়া যায় না। আসল রসের রং ও স্বাদ মধুর মতো লাগত। 

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর শীতেই মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতি-পুতীদের পিঠাপুলির দাওয়াত খাওয়াতে হয়। বছরের ওই এক-দুইটা দিন বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। পরিবারের সবাই একত্রিত হয়। সবার কলকাকলিতে বাড়িটা ভরে উঠে। খরচ করেও শান্তি পাই। মূল আয়োজনই থাকে খেজুর রস-গুড় আর দুধের পিঠাকে (রস আর দুধের মিশ্রণে ভেজানো চিতই পিঠা) কেন্দ্র করে। 

এ বিষয়ে উপজেলার মৌশা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগের মতো খেজুর গাছ এখন আর চোখে পড়ে না। শুধু রাস্তার পাশে কিংবা জমির আইলে কিছু খেজুরগাছ এখনো রয়ে গেছে। গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় খেজুরের রস সংগ্রহের ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশুদ্ধ রস ও গুড় পেতে অবশ্যই খেজুর গাছের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। 

এ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অধিকাংশ অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। অন্তত আসল রস ও গুড়ের জন্য হলেও এসব গাছ রক্ষা করা প্রয়োজন। খেজুর গাছ রক্ষায় স্থানীয়দের আরও সচেতন হতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজধানীর দক্ষিণখানে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর দক্ষিণখানে প্রকাশ্যে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণখানের নদ্দাপাড়ার তালতলা মোড়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম শাহজাহান শেখ (৪৫)। তিনি দক্ষিণখানের আশকোনা ডিলার বাড়ির হাকিম উদ্দিনের ছেলে। জানা গেছে, শাহজাহান শেখ বিমানবন্দর থানা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি আশকোনা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ও ডিশের ব্যবসা করতেন।

ওই এলাকার ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান মিয়াদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শাহজাহান ডিলার একটি গলি থেকে দৌড়ে তালতলা মোড়ের দিকে আসেন। তখন কয়েক দুর্বৃত্ত পেছন থেকে দৌড়ে এসে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তাঁর মাথা দুই খণ্ড হয়ে যায়। পরে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।’

মাহফুজ আরও জানান, দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি ও একটি ক্যাপ (টুপি) ফেলে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রকাশ্যে কিছু লোক শাহজাহানকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই দক্ষিণখান থানা পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

ডিএমপির দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, কতিপয় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাহজাহান শেখকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মাথা, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম করে। তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের শনাক্তকরণসহ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেত্রকোনায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় পানিতে ডুবে ১৪ মাস বয়সী এক শিশু মারা গেছে। আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের বড়খাপন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।   

শিশু হাবিবুর রহমান ত্বহা বড়খাপন গ্রামের আওলাদ মিয়া ও তানজিলা খাতুন দম্পতির ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিদ্দিক হোসেন জানান, সকালে শিশুটির মা ঘরের ভেতরে রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় সবার অজান্তে ত্বহা বাড়ির পাশের একটি ছোট ডোবায় পড়ে যায়। কিছু সময় পর শিশুটিকে দেখতে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে ডোবা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে দ্রুত কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

কলমাকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটি মারা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে অবৈধ ব্যাটারি কারখানার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন

নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীতে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইটিপি ছাড়াই পরিচালিত অবৈধ শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে চারটি কারখানার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী জেলার সদর ও মাধবদী থানাধীন এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল। অভিযানকালে পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় জেলা পুলিশ ও র‍্যাব-১১-এর একটি টহল দল অভিযানে সহায়তা করে।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কারখানাগুলো হচ্ছে নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর এলাকার মেসার্স রিহাম টেক্সটাইল, মাধবদীর বাগদাদ ডাইং, একই উপজেলার মেসার্স জে অ্যান্ড বি টেক্সটাইল মিলস এবং সদর উপজেলার ডেং ফেং লিমিটেড।

নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইটিপিবিহীনভাবে পরিচালিত তিনটি ডাইং ও একটি ব্যাটারি কারখানার সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পরিবেশদূষণ রোধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল-বদর ও আল-শামস নয়, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে পার্শ্ববর্তী দেশ— জামায়াতের বুলি বিএনপি নেতার মুখে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৪৭
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার জন্য ‘আল-বদর, আল-শামস’ দায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের লোকেরা তাঁদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

‘একটি রাজনৈতিক দলকে’ বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী করা হলেও তা ‘সঠিক ইতিহাস নয়’ নয় বলে তাঁর ভাষ্য। ওই রাজনৈতিক দলটি যাতে বর্তমান সরকারের কাছে ‘ইতিহাস সংশোধনের দাবি’ জানান, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।

গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা চলছে।

একই দিন রাজধানীর ফার্মগেইটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে দাবি করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বামপন্থি ও কলকাতাকেন্দ্রিক কিছু বুদ্ধিজীবী এবং ভারতপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নাম জড়িয়ে আসছেন। তবে ইতিহাসের নানা তথ্য ও সত্য সামনে আসায় প্রমাণ হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দাদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। কারণ, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রাক্কালে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের একই সুরে বিএনপি নেতা ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘আজকেও পত্রিকা পড়লাম। পত্রিকার পাতার সম্পাদকীয় কলাম ও বিভিন্ন জায়াগায় লিখেছে যে, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে আল-বদর, আল-শামস। আমাদের ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতারা আছেন, তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বিএনপিরে দোষারোপ করে (আপনারা) অনেক কথা বলেন। যখন আপনাদের দোষারোপ করে ইতিহাস লেখা হয়, আপনারা কেন সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন না?’

তিনি আরো বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর তো কোনো আল-বদর, আল-শামস আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেন নাই। হত্যা করেছিল (তারা), যারা সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হবে কি হবে না বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করতে চেয়েছিল। যারা দেশ স্বাধীন হতে দেবে কি দেবে না...! সেদিন পার্শ্ববর্তী কোনো এক দেশের লোকেরা পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ বেঁধেছিল, সেটাকে টার্গেট করে আমাদের বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।’

জামায়াতকে উদ্দেশ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলামিক দলগুলো যাদেরকে টার্গেট করে বিভিন্ন বাম সংগঠন, বাম-মনা সাংবাদিক এখনো আপনাদেরকে টার্গেট করে কথা বলেন, আর ইতিহাসের পাতায় আপনাদেরকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। কেন আপনারা এটা সংশোধন করেন না, কেন আপনারা দাবি জানান না? শুধু কোনো জায়গায় স্টেজে উঠলেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে (কথা) বলেন, কিন্তু কোনোটা প্রমাণ করতে পারেন না। অতএব রাজনৈতিক ইসলামিক দল, এখানে কাদেরকে বলছি, উনারা ভালো করে বুঝতেছেন।’

টিপু আরো বলেন, ‘ইতিহাসটাকে সঠিক করে তুলে ধরার জন্য আপনারা সরকারের কাছে দাবি জানান। আগামী প্রজন্মের কাছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আপনারাই শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন। অতএব ইতিহাস সঠিক যেন লেখা হয়, কারা হত্যা করেছে, সেটা যেন লেখা হয়।’

বক্তব্যের শুরুতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

ওই সভায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।

সভায় জামায়াতের মহানগর কমিটির আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার বিএনপি নেতা টিপুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আগামী সরকারের কাছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনার দাবি জানাই।’

এ সময় জামায়াত নেতাকে থামিয়ে দিয়ে টিপু বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর বা এর আগে স্বাধীনতার পর অনেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল...অতএব সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্যই আমি আহ্বান করছি। পাশাপাশি এই বক্তব্যে কারও যদি গাত্রদাহ হয়, তাহলে আগামীতে বক্তব্য দেওয়ার সময় আপনারাও বিএনপির যাতে গাত্রদাহ না হয়, সেইদিকে খেয়াল করে বক্তব্য দেবেন।’

এ সময় আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধির কথাও বলেন টিপু।

বক্তব্যের শেষ দিকে আবারও বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার দাবি জানিয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আবারও বুদ্ধিজীবী দিবসের ইতিহাস ডিসি সাহেবের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের কাছে তুলে ধরবেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস, বিজয় দিবসের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস যেন সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়। ৫ অগাস্ট হয়ে গেল, অনেকে অনেক কথা বলি, কিন্তু এখনো স্বাধীনতার ঘোষকের যে ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস, বুদ্ধিজীবীর ইতিহাস- এখনো কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় নাই।’

আগামী বছরেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস সংশোধনেরও দাবি জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে জেলা সিভিল সার্জন এ এফ এম মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, এনসিপির জেলা কমিটির সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল আমিন, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ এবং গণঅধিকার পরিষদ জেলা সভাপতি মো. নাহিদ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় তাৎক্ষণিক বিএনপি নেতা টিপুর বক্তব্য নিয়ে কেউ প্রতিবাদ বা বিরুদ্ধমত প্রকাশ না করলেও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানান।

অথচ গতকাল তাঁর বিকালেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে, একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা।

‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজশ করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত