Ajker Patrika

জামিনে বেরিয়েই ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হন ‘ডিবি হেফাজতে’ মৃত এজাজ

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ২২: ৫০
হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজ। ছবি: সংগৃহীত
হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সহযোগী হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে মৃত্যুর আগে এজাজ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ফাহিম আহম্মেদ নামে ভর্তি ছিলেন। এমনকি কাগজপত্রে তিনি তাঁর বাবার নাম-ঠিকানাও দিয়েছিলেন ভুল।

জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে ডিবি পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহতের শরীরে আঘাতের দাগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ডিবি হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করেছে ডিএমপি।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলার জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে গিয়ে এজাজের ভর্তি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নথিতে দেখা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি হন এজাজ। তবে তিনি ভর্তি ফরমে প্রকৃত নাম আড়াল করে ফাহিম আহম্মেদ নাম দেন। তাঁর সঙ্গে এ সময় এক ব্যক্তিও ছিলেন। তাঁকে তিনি বাবা পরিচয় দেন। বাবার নাম লেখেন কামরুল ইসলাম। ধানমন্ডি ৯/এ-এর একটি বাসা নম্বর দেওয়া হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বাসায় তিনি থাকেন না।

হাসপাতালের নথিতে আরও দেখা যায়, হাসপাতালটির কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ গোলাম ফাহাদ ভূঁইয়ার অধীনে তিনি ভর্তি হন। ভর্তির পর তাঁকে হাসপাতালটির ২০৩ নম্বর কেবিনে নেওয়া হয়। তাঁর চারটি পরীক্ষা করে কিডনি রোগের বিষয়ে নিশ্চিত হন চিকিৎসকেরা। এরপর তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। সে সময় পুলিশের ৩০-৪০ জন সদস্য ছিলেন।

হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালক মো. মুরাদ হোসেন খান বলেন, ‘ডিবির সদস্যরা জ্যাকেট পরা ছিলেন। তাঁরা হাসপাতালে এসেই ২০৩ নম্বর কেবিনে কে ভর্তি, তাঁর বিষয়ে তথ্য চান। কেবিনে গিয়ে তাঁরা ওই রোগীকে দেখতে চান। এরপর ডিবি পুলিশ ডিউটি ডক্টরকে নিয়ে ওই কেবিনে যান। তাঁরা কিছু তথ্য যাচাই-বাছাই করেন। পরে ডিবির একজন অফিসার হাসপাতালের ডিউটি ডক্টরকে বলেন, এই রোগী ফাহিম আহম্মেদ না, তার নাম এজাজ। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তাকে তাঁরা নিয়ে যেতে চান। এরপর হাসপাতাল থেকে ডিবি পুলিশ শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে তাঁকে নিয়ে যায়।’

মুরাদ হোসেন আরও বলেন, ‘এজাজের কিডনির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাই আমরা দ্রুত তাঁর চিকিৎসা শুরু করি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে যখন নিয়ে যায়, তাতে আমাদের স্টাফরা বাধা দিতে পারেননি। কারণ, তাঁরা অনেক ডিবি সদস্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে যান।’

জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে বের করে নেওয়ার পর এজাজকে সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁর নাম লেখা হয় এজাজ ওরফে ফাহিম আহম্মেদ। ভর্তি রসিদে ডিবির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ভর্তির আগে পথে দুই ঘণ্টা সময় কী হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, জিগাতলা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে ভোররাতে ২ ঘণ্টা সময় লাগার কথা নয়। এজাজের পরিবারের অভিযোগ, এই সময় এজাজকে মারধর করা হয়।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢামেক হাসপাতালে শনিবার ভোরে ভর্তির পর তাঁর ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়। এরপর একই দিন রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে এজাজের মৃত্যু হয়।

এজাজের মৃত্যুর পর মোহাম্মদপুর থানার এসআই শেখ কাদের আহম্মেদ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, এজাজের ডান ও বাম ঊরুর পেছন দিকে নিতম্ব পর্যন্ত রক্তজমা কালশিটে দাগ আছে। পা সামান্য ফোলা। পায়ের পাতা ও আঙুল স্বাভাবিক। বুক ও পিঠের মাঝামাঝি পুরোনো দাগ। পিঠে রক্ত জমা কালচে দাগ আছে এবং দুই হাতে হ্যান্ডকাফ পরানোর দাগ রয়েছে।

নিহত এজাজের বাবা শাহ আলমের দাবি, জামিনে থাকা সত্ত্বেও শুক্রবার মাঝরাতে জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে এজাজকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরে শনিবার ভোরে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে একই দিন রাত সাড়ে ৮টায় তিনি মারা যান। ওয়ারী জোনের একজন এডিসির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগও করেন তিনি।

ডিবির সূত্র জানিয়েছে, ডিবির ওয়ারীর একাধিক টিম এজাজকে গ্রেপ্তারে ওই হাসপাতালে গিয়েছিল। তবে এ বিষয়ে ডিবি কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

ডিবি ও মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজ শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁকে ১১ মার্চ সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশে সোপর্দ করে। ১২ মার্চ তাঁকে আদালতে তোলে পুলিশ। অসুস্থতার কারণে তিনি আদালত থেকে জামিন পান। এরপর ১৪ মার্চ রাতে তিনি জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি হন। ডিবি তাঁকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে ডিবি হেফাজতে এজাজের মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেছেন, ‘এজাজ ডিবি হেফাজতে মারা যায়নি। কিছুদিন আগে গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হন এজাজ। জামিন পাওয়ার পর আমরা তাঁকে নজরদারিতে রাখি। এরপর থেকে তিনি ধানমন্ডির জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে রেফার করেন। গতকাল শনিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান এজাজ। যেহেতু তাঁর নামে মামলা রয়েছে, তাই ঢামেক হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে থানা-পুলিশ ও ডিবি পুলিশ উপস্থিত ছিল।’

সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত ১৫ আগস্ট শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম, পিচ্চি হেলাল ও ইমনের সঙ্গে জামিনে মুক্তি পান এজাজ। মুক্তির পর থেকেই তিনি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। কিছুদিন আগে এলিফ্যান্ট রোডে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ও কোপানোর ঘটনার মূল হোতা ছিলেন এজাজ। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও কলাবাগান এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতেন তিনি।

শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও পিচ্চি হেলাল বর্তমানে পলাতক থাকায় তাঁদের সন্ত্রাসী গ্যাং এজাজের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছিল। এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, এজাজের নেতৃত্বে ১২০ থেকে ১৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী চক্র সক্রিয় রয়েছে।

এজাজের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ ১২ থেকে ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর নতুন নাম ‘শহীদ ওসমান হাদি’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার ওপর নির্মিত শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালে। সে সময় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়। তবে ৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সেতু থেকে নাসিম ওসমানের নাম মুছে ফেলা হয়। এবার জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ওসমান হাদির নামে সেতুটির নামকরণ করেছেন বন্দর এলাকার ছাত্র-জনতা।

শুক্রবার বিকেলে ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। মিছিলটি বন্দর রেললাইন এলাকা থেকে শুরু হয়ে মদনগঞ্জ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা।

নতুন নামকরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই ছাত্র-জনতার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। আয়োজকদের দাবি, ওসমান হাদিকে স্মরণীয় করে রাখা এবং তাঁর হত্যার বিচার নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আয়োজকদের একজন রেদোয়ান ইসলাম বলেন, ‘হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এরপর সিদ্ধান্ত নিই, তাঁর নাম স্মরণীয় করে রাখতে সেতুর নামকরণ করব। এর আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী নাসিম ওসমানের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। এবার সেখানে দেশের একজন মহানায়ক হাদি ভাইয়ের নাম স্থাপন করা হলো। শিগগিরই সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই নাম স্থায়ী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় মাদারীপুর অন্ধকারে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় অন্ধকারে ঢেকে গেছে মাদারীপুর জেলা। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশা দেখা যায়।

এর আগে দিনভর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, সূর্যের দেখা মেলেনি। রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল করেছে ধীরগতিতে ও সতর্কতার সঙ্গে।

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণত রাত ১২টা পর্যন্ত রিকশা চালাই। কিন্তু আজ হঠাৎ অনেক কুয়াশা পড়েছে, রাস্তাও ফাঁকা। তাই আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

ডিসি ব্রিজ এলাকার মুদিদোকানি রানা বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখি। আজ কুয়াশা আর শীত বেশি থাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকেই দোকান বন্ধ করেছি।’

মাদারীপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থাকতে পারে। এ সময় সাধারণ মানুষকে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলায়ও যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানান এবং মহাসড়কে চলাচলকারী চালকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় চার-পাঁচ দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তাতীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। তবে শীত নিবারণের জন্য সরকারি সহায়তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। শীতার্ত মানুষের অভিযোগ, প্রয়োজনের সময় তারা কম্বল পাচ্ছে না। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বেদপাড়া এলাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় সন্ধ্যা রানী (৫০) নামের এক নারীকে। শীতের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় হাত-পা কোঁকড়া হয়ে যাচ্ছে। আগুন পোহাইলেও ঠিকমতো কাজ হয় না। আগের বছর শীত আসার আগেই কম্বল পাইছিলাম। এবার শীত আইসা চলি যাচ্ছে, কেউ খোঁজও নিল না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘এবার শীতে কি সরকার থাকি কোনো কম্বলের ব্যবস্থাই নাই, নাকি সবগুলা লোকজনে ভাগ করে খাইছে?’

এই অভিযোগ শুধু সন্ধ্যা রানীর নয়; কয়েক দিনে সরেজমিনে উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিস্তাতীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনমজুর, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ শীত নিবারণে সরকারি সহায়তার কোনো দৃশ্যমান উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙ্গী পাইকান এলাকায় আলুখেতে কাজ করার সময় কথা হয় দিনমজুর নুর আমিনের (৫৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা বাড়ার কারণে কোমর আর ঘাড়ের ব্যথা এমন হইছে যে ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না, ঘাড়ও সোজা করতে পারি না। তবুও কাজ করা লাগে। বসে থাকলে কি আর পেট চলবে?’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর গত বুধবার গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চলতি শীতে শীতার্ত মানুষের জন্য উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে নির্বাচনী কিছু জটিলতার কারণে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় কম্বলগুলো উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ১০০টি করে কম্বল সরবরাহ করা হয়।

জানতে চাইলে মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁদের ইউনিয়নের জন্য ১০০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। শনিবার (আজ) সেগুলো বিতরণ করা হবে।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন সচিব পিআইও অফিস থেকে ১০০টি কম্বল এনেছেন। তবে সঠিক তথ্য খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজীবুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাসিক সমন্বয় সভায় ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, জরুরি অবস্থা ছাড়া কোনো কম্বল বিতরণ করা যাবে না। নির্বাচনী কিছু জটিলতাও রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কম্বলের বরাদ্দ ছিল। আমরা সেগুলো বিতরণ করে ফেলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি

একসময়ের জ্ঞানের বাতিঘর আজ নিকষ কালো অন্ধকার

মেহেদী হাসান, (দিনাজপুর) ফুলবাড়ী
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দূর থেকে তাকালেই মনে হয়, কোনো পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি। লতা-পাতায় ঢাকা দেয়াল, আগাছায় ভরা চত্বর আর তালাবদ্ধ দরজার ভেতরে মাকড়সার জাল। অথচ একসময় এ জায়গাটিই ছিল পাঠকের ভিড়ে মুখর, জ্ঞানের আলোয় উজ্জ্বল এক প্রজন্মের আশ্রয়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামে শতবর্ষী ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’ আজ নীরব অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে—ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে।

জানা গেছে, ১৯১৬ সালে তৎকালীন জমিদার সুরেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর ছেলে ক্ষীতিশ চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ফুলবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে সুজাপুর গ্রামে যাত্রা শুরু করে এ পাবলিক লাইব্রেরিটি। সুজাপুর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পর দরিদ্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বইয়ের সংকট দূর করতে বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়। বাবার স্মৃতি অমর করে রাখতে এর নামকরণ করা হয় ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’।

একসময় এ লাইব্রেরিতে ছিল বিপুল বই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা গ্রন্থে ভরপুর ছিল তাকগুলো। পাঠকদের পদচারণে মুখর ছিল পুরো প্রাঙ্গণ। এ লাইব্রেরি থেকেই বহু মানুষ জ্ঞানের আলোয় পথচলা শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে যেমন ছোট যমুনা নদী আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে, তেমনি এ লাইব্রেরিও ধীরে ধীরে হারিয়েছে তার প্রাণ। সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরির অমূল্য বই ও আসবাবপত্র।

দীর্ঘ নীরবতার পর ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর লাইব্রেরি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরোনো ভবনের পাশে ১২ শতাংশ জমিতে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে পুরোনো ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয় ১ হাজার ১২০টি বই। ২০১৫ সালে আরও ২ লাখ টাকা অনুদানে নির্মিত হয় অতিরিক্ত একটি ঘর। ২০১৭ সালে সেখানে চালু হয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এলাকার শিক্ষিত যুবকেরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। পাঠকদের পদচারণে আবারও মুখর হয়ে ওঠে লাইব্রেরিটি। গঠিত হয় পরিচালনা কমিটি। মনে হয়েছিল, আবার বুঝি ফিরবে সেই দিন।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থাভাব, লাইব্রেরিয়ানের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের চাপে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কে নেবে এর দায়িত্ব—এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এর মধ্যেই আঘাত হানে করোনা মহামারি। বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতের আঁধারে চুরি যায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছয়টি কম্পিউটার। এভাবেই নতুন আশার শেষ আলোটুকুও যেন নিভে যায়।

এ বিষয়ে ইউএনও আহমেদ হাছান জানান, তিনি লাইব্রেরিটি পরিদর্শন করে পরিচালনা কমিটিকে আপাতত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে লাইব্রেরি খুলে বসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে জনবলসংকটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত