Ajker Patrika

পীরের ডেরায় করোনা বলতে কিছু নেই!

আবদুল হামিদ, ঢাকা
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৫৯
পীরের ডেরায় করোনা বলতে কিছু নেই!

গত বুধবার বেলা ১১টা। রাজধানীর রাজারবাগ পীরের দরবারের প্রবেশ ফটকে গিয়ে দেখা গেল একটি বেঞ্চে বসে আছেন তিনজন, যাঁরা দরবার শরিফের ভেতরে ঢুকছেন, তাঁদের তল্লাশি করছেন এঁদের দুজন। এর মধ্যে একজন জানতে চাইলেন, কেন ভেতরে যাবেন? বলা হলো, হুজুর সম্পর্কে জানার জন্যই আসা। এই জবাবে পাওয়া গেল ঢোকার অনুমতি। তবে একজন বললেন, মুখের মাস্ক খুলে ঢুকতে হবে। এখানে করোনা বলতে কিছু নেই। ভেতরে কেউ মাস্ক পরে না। ভেতরে কোনো মানুষের ছবি তোলা যাবে না, ইলেকট্রনিক যন্ত্র নিয়ে ঢোকা যাবে না।

রাজারবাগের এই পীর দিল্লুর রহমান ও তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা তদন্তে গত মঙ্গলবার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাঁর ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সম্পত্তি রয়েছে, সেগুলোর উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রাজারবাগের পীর ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দিয়ে মানুষের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ অনেক দিনের। এমন কয়েকজনের রিটের পর ওই আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন বুধবার তাঁদের সার্বিক অবস্থা জানতে গন্তব্য আলোচিত সেই দরবার শরিফ।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ৩ নম্বর গেটের সামনে পৌঁছে দেখা গেল উল্টো দিকের রাস্তার পাশ দিয়ে সারি সারি কাভার্ড ভ্যান রাখা। সব কাভার্ড ভ্যানের গায়েই রাজারবাগ দরবারের বড় বড় ব্যানার ও পোস্টার সাঁটানো। লেখা—আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্র। সেখানে বিক্রি হয় দরবার শরিফে তৈরি নানা দ্রব্য। গ্রিনলাইন পরিবহনের কাউন্টারের সামনে থেকে দরবার শরিফের মুখ পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের অংশ পীরের মালিকানাধীন গাড়ির দখলে।

ফটকে তল্লাশির পর মাস্ক খুলেই ঢুকতে হলো ভেতরে। তবে সঙ্গে দেওয়া হলো আজিজ নামের একজনকে। প্রথমে নেওয়া হলো লাইব্রেরিতে। সেখানে দেখা পাওয়া গেল পীরের এক মুরিদের। তিনি জানালেন পীরের লেখা বিভিন্ন বই সম্পর্কে।

আজিজ এরপর নিয়ে গেলেন লাইব্রেরি লাগোয়া মার্কেটে। এক ছাদের নিচেই সব আয়োজন। মোট পাঁচ ভাগে বিভক্ত সেই মার্কেট। একটিতে বিক্রি হচ্ছে প্রসাধনী, এক জায়গায় কাঠ দিয়ে বানানো সবকিছু। সেখানে আছে কাঠের থালা, গ্লাস, বাটি, চামচ, খুন্তিসহ খাওয়া ও সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র। সঙ্গে থাকা আজিজ জানালেন, দরবার শরিফে কাঠের থালায় ভাত খাওয়ার নিয়ম। মাটি-কাঠের গ্লাস বা কাঠের বাটিতে পানি খেতে হবে।

জানা গেল, পীর দিল্লুর রহমানের আসন পাঁচতলায়। সেখানে দিনের বেলা যাওয়া নিষেধ। তিনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন। সন্ধ্যার পর সবাই যেতে পারবে।

দরবার থেকে বেরিয়ে লাগোয়া গলির কয়েকজন দোকানদারের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা জানালেন, দরবারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে সমস্যা হয়। পীরের মুরিদরা হুমকি-ধমকি দেন। একজন বলেন, পত্রিকায় দেখেছি পীরসাহেব এলাকার এক ব্যক্তির জমি দখল করে নিতে মামলা করেছেন।

পীরের দেখা পেতে ওই দিনই রাত ১১টা ১৫ মিনিটে আরারও রাজারবাগ শরিফের গেটে। সকালে ছোট গেট খোলা থাকলেও গভীর রাতে মূল গেট খোলা। ওপরে চলছে পীরের বয়ান। ঢোকার সময় আবারও সেই মাস্ক বিড়ম্বনা। খুলতে না চাইলে গেটে দায়িত্বে থাকা মুরিদ আবুল হাসান (৪৫) বলতে শুরু করলেন, ‘আমাদের এখানে কেউ মাস্ক পরে না। করোনা বলতে কিছু নাই। অ্যালার্জি বেড়ে গেলে এবং ঠান্ডা লাগলে সরকার এটাকে করোনা বলে দিচ্ছে। সরকার করোনার যে রিপোর্ট দেখায়, সব ভুয়া। আমরা এসব বিশ্বাস করি না।’

নিচতলায় জুতা রেখে ওপরের দিকে ওঠা শুরু। দোতলায় ছাত্র আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাত শাখার থাকার ব্যবস্থা। তৃতীয় তলায় দেখা মিলল যুবা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাতদের আবাসিক জায়গা। এঁদের মধ্যে অনেকই মুরিদদের মোবাইল সংরক্ষণের জন্য বসে আছেন। চারতলায় ভারী লোহার দরজা। কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা গেটের সামনে। বোঝা গেল, পীর চারতলাতেই থাকেন।

পাঁচতলায় চলছে পীরের বয়ান। কনফারেন্স রুমের ডান দিকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস বিক্রির স্টল রয়েছে। সেখান থেকে ৫৫ টাকার একটা টুপি কেনার পর মাথায় পরিয়ে দিলেন দায়িত্বরত একজন।

ভেতরে প্রবেশ করতেই ভিন্ন চিত্র। সবার গায়ে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা-পাগড়ি। এক শর মতো শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ বসা। কনফারেন্স কক্ষটি তিন ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি অংশে চারটি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), একটি ডায়াস ও ১২টি ফ্যানসহ গ্লাস দিয়ে সংরক্ষিত, কেউ ছিল না। মধ্য অংশে ২৪টি ফ্যান ও ১০টি এসি এবং ২০টির মতো স্পিকার লাগানো। সেখানে মুরিদেরা বসেন। আরেক অংশে বসেন কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি, পীর দিল্লুর রহমান। সেখানে দুটি এসি, সঙ্গে ফ্যান। স্বচ্ছ গ্লাস দিয়ে ঘেরা। সেখানে থাকেন পীরের কাছের মুরিদরা। বাইরে দুই পাশে দুজন নিরাপত্তাপ্রহরী।

কাছে যাওয়ার সুযোগ হলো না। একটু দূর থেকেই দেখতে হলো। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া লোকটিই পীর দিল্লুর রহমান। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা আর পাগড়ি পরা পীরের প্রায় মুখের সঙ্গে লাগোয়া তিনটি স্পিকার। তবু তাঁর কথা স্পষ্ট নয়। কিছু বোঝা যায়, বেশির ভাগই বোঝা যায় না। তবে মুরিদরা কিছুক্ষণ পরপর অদ্ভুত আওয়াজ করেন। জানা গেল, প্রতি রাতে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বয়ান করেন দিল্লুর রহমান।

যা বোঝা গেল, পীরসাহেবের বুধবারের বয়ান ছিল সমসাময়িক বিষয় নিয়ে। তিনি বলেন, ‘দুই টাকার মিডিয়া ও পত্রিকা আমার কিছুই করতে পারবে না। তা ছাড়া মিডিয়া নিউজ করছে, এখানে নাকি কিছুই চলে না, বন্ধ হয়ে গেছে। এসব মিথ্যা কথা। আদালত ও পুলিশ মিলে মজলিশ বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছে। তারা বন্ধ করে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কই, মজলিশ তো বন্ধ করতে পারল না।’

এত মানুষের যাতায়াত হলেও একটিও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) নেই রাজারবাগ পীরের আস্তানায়। তাদের দাবি, ছবি তোলা হারাম। এক মুরিদ বললেন, ইসলাম বুঝতে হলে এখানে আসতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠছে মরা মাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুকুরটিতে এই মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই পুকুরটিতে মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে চারপাশে পচা-গলা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরপাড় দিয়ে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরটিতে মাছ চাষ করায় বিভিন্ন সময় মাছ মরার ঘটনা ঘটছে। এতে পুকুরের পানিতে দূষণ ঘটছে। দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

বিবির পুকুরের সঙ্গে অতীতে কীর্তনখোলা নদীর সংযোগ ছিল। বর্তমানে নদী থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকাসহ ময়লা ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নীল রং ধারণ করা পানিতে একধরনের স্তর পড়ে গেছে।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তত্ত্বাবধানে থাকা বিবির পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন সময় সেই মাছ মরে পচে ভেসে উঠে। এতে দুর্গন্ধে পুকুরপাড়ে আসা বিনোদনপ্রেমী ও পথচারীদের টেকা দায় হয়ে পড়ে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, পুকুরপাড়ে এসে মরা মাছের গন্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। দ্রুত মরা মাছ অপসারণ করে পুকুরটির পানিদূষণ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বিবির পুকুরটির অবস্থান। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় নানা সময় মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হয়তো পুকুরের পানির মান খারাপ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে উচিত হবে, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিদর্শক রকিব উদ্দিন বলেন, বিবির পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পানির মান দেখতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং নদীর পানির মানমাত্রা পরীক্ষা করেন। বিবির পুকুরের পরিস্থিতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, মরা মাছ দ্রুত অপসারণের জন্য ইজারাদারকে বলা হচ্ছে। যদিও তাঁরা পুকুরের পানি দূষণ ঠেকাতে কিছু অংশ জাল দিয়ে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বিবির পুকুর বরিশাল নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়। উনিশ শতকে জনসাধারণের জলকষ্ট দূর করতে জিন্নাত বিবি নামে এক মুসলিম নারীর উদ্যোগে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই পুকুরটি সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত এবং এটি বরিশাল নগরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এখন আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সিয়াম, নিভে গেলেন হাতবোমায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছেন সিয়াম মজুমদার (২১)। তাই চার বছর আগে ঋণগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। নিউ ইস্কাটনের একটি মোটরকার ডেকোরেশন দোকানে কাজ করে পরিবারকে সহায়তাও করতেন তিনি। ঋণ পরিশোধের পর দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেলের বিস্ফোরণে সিয়ামের সেই স্বপ্ন থেমে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ককটেলটি ওপর থেকে এসে তাঁর মাথায় লাগে।

সিয়ামের পরিবার জানায়, ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন তাঁর বাবা আলী আকবর মজুমদার। মা সিজু বেগম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ নেন। ছোট ভাই সেজান মজুমদারও ইস্কাটন এলাকায় একটি গাড়ি ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করছিলেন ঋণমুক্ত হওয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ ইস্কাটনের দুই হাজার গলির ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে ভেঙে পড়েছেন সিয়ামের মা সিজু বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ছোট ভাই সেজান মজুমদার বলেন, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ভাই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এই মৃত্যু পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছেলের মরদেহ নিতে গিয়ে বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় এসে ছেলেকে হারাতে হবে—এমনটা জানলে তিনি কখনোই ঢাকায় আসতেন না।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ১০ মিনিটে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বিস্ফোরকদ্রব্যের আঘাতে সিয়াম মজুমদার নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি মগবাজার-নিউ ইস্কাটন সড়কে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ঘটনাস্থলের চা-দোকানি মো. ফারুক আজ বিকেলে বলেন, চা বানানোর সময় বিকট শব্দ হয়। পরে দেখা যায়, সিয়াম মাটিতে পড়ে আছেন, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা হাতিরঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাস্টার্সের সনদ জাল: কলেজের সভাপতির পদ হারালেন সবুজ খাঁন

ভোলা প্রতিনিধি
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত

‎মাস্টার্সের সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ হারালেন মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবুজ খাঁনের সভাপতির পদ বাতিল করে নতুন সভাপতি মনোনয়নের নির্দেশ দিয়েছে।‎

‎মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন দক্ষিণ আইচা থানাধীন চরমানিকা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী মিয়ার ছেলে।‎

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সবুজ খাঁন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত মাস্টার্স ডিগ্রির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব েনন। তবে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গত ১ নভেম্বর জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই কার্যক্রম শুরু করে।‎

‎সূত্র আরও জানায়, যাচাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবুজ খাঁনের দাখিল করা সনদে কোনো ক্রমিক নম্বর নেই, কোর্স কোডে অসংগতি রয়েছে এবং স্বাক্ষর ও তারিখেও গরমিল পাওয়া গেছে। এসব কারণে সনদ দুটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।‎

‎বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসে। পরে গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক লিখিত নির্দেশনায় দক্ষিণ আইচা কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়, মো. সিরাজুল ইসলামের মাস্টার্স সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর সভাপতির দায়িত্ব আর বৈধ নয়। ফলে শূন্য ঘোষিত পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য তিনজন প্রার্থীর নাম শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‎

‎এই আদেশ প্রকাশের পর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।‎

‎কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ থেকে সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁনের অব্যাহতিপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেইলে পাওয়ার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ আইচা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কলেজের সভাপতির সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি কথা শুনেছি। এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। তবে আমি এর প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করব।’ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেও জানান সবুজ খাঁন।

সবুজ খাঁন নিজেকে থানা বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও দলের কোনো সাংগঠনিক পদে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেক ডিজঅনারের মামলা: ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েদির মৃত্যু

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কয়েদি মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

ওই কয়েদির নাম বিমল কুমার দাস (৬২)। কয়েদি নম্বর ২৫২৫। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার কদমতলী আমিরাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন। তিনি মাদারীপুর কারাগারে ছিলেন। ওই হাজতি ডায়াবেটিসসহ বয়সের বিভিন্ন রোগে  ভুগছিলেন। মাদারীপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে মাদারীপুর কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে আনা হয়। ফরিদপুরে আসামাত্রই তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল শুক্রবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত