Ajker Patrika

দখলের দৌরাত্ম্য

দখলের সংক্রমণে জেরবার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল

  • দখলের উৎসবে প্রাচীর দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক একর।
  • প্রাচীরের বাইরে জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বস্তি, ঘর, দোকান।
  • প্রাচীরের ভেতরে বসে মাদক ও জুয়ার আসর, নেই নিরাপত্তা।
  • দেয়াল ভেঙে পকেট গেট বানিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দখলের সংক্রমণ থেকে বেরই হতে পারছে না রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। দখলের থাবায় ক্রমে আয়তন কমছে বিশেষায়িত এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটির। সীমানা প্রাচীরের বাইরে জমি দখল করে গড়ে উঠেছে সাততলা বস্তি, ঘর, দোকান, কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে সন্ধ্যা ও রাতে বসে মাদক ও জুয়ার আসর।

হাসপাতালের প্রধান ফটক এবং দেয়াল ভেঙে করা পকেট গেট দিয়ে চলাচল করে আশপাশের বাসিন্দারা। এতে ব্যাহত হচ্ছে পরিবেশ। নিরাপত্তাহীনতার কারণে আবাসিক এলাকায় থাকেন না চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা নিতে রোগীদেরও আগ্রহ কম।

হাসপাতাল সূত্র বলেছে, দখলের সঙ্গে হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। বস্তিতে তাঁদের কারও কারও ১০০ থেকে ২০০ ঘর রয়েছে। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানিয়ে বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিলেও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে দখলের বিস্তার ঘটেছে। গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও চিত্র বদলায়নি।

মহাখালীতে হেলথ জোনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে সরকারি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের অবস্থান। সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল থাকলেও মহাখালীরটিই বড়। এটি ১০০ শয্যার এবং দেশে সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। এখানে কুকুর, বানর, বিড়াল, শিয়ালসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর কামড়ে আহত রোগী, ধনুষ্টংকার, ভাইরাল এনকেফেলাইটিস, ডিপথেরিয়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস, এইচআইভি পজিটিভ, কোভিড-১৯, জন্ডিস, জলবসন্ত, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হামসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্তদের ভর্তি করে চিকিৎসা ও টিকা দেওয়া হয়। অথচ অবহেলিত এই হাসপাতাল পূর্ণ সক্ষমতায় সেবা দিতে পারছে না। পরিবেশসহ বিভিন্ন কারণে চিকিৎসা নিতে রোগীদেরও আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন নামে ১৯৫৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। ১৯৭২ সালে এর নামকরণ করা হয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। তখন হাসপাতালকে ৩৫ একর জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। পরে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টার, ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি), ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অর্গানাইজেশন (টেমো), পরিবার পরিকল্পনা পণ্যগার, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টার, কুষ্ঠ হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টার, আইপিএইচ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বঙ্গমাতা জাতীয় সেলুলার এবং মলিকুলার রিসার্চ সেন্টারসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ওই জমি থেকে ২৪ একর জমি দেওয়া হয়। তবে একমাত্র বঙ্গমাতা জাতীয় সেলুলার এবং মলিকুলার রিসার্চ সেন্টারের নামে ৩ একর জমির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। বাকি ২১ একর জমি এখনো সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের নামে থাকায় খাজনা দিতে হয় এই প্রতিষ্ঠানকেই।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে দেওয়ার পর হাসপাতালের কাছে থাকা বাকি ১১ একর জমির বেশির ভাগই বেদখল হয়ে গেছে। দখল না হওয়া জমিতে হাসপাতালের মূল ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, মসজিদ, মন্দির, গাড়ির গ্যারেজ, পানির পাম্প হাউস, জলাতঙ্ক প্রতিরোধমূলক ভবন রয়েছে। প্রাচীরের বাইরে থাকা জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বস্তিঘর; কাঁচা, আধা পাকা ও পাকাঘর; দোকান; রিকশার গ্যারেজ; কাঁচাবাজার; রাজনৈতিক দলের কার্যালয়সহ অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। তবে প্রাচীরের ভেতরেও স্বস্তি নেই। প্রাচীরের ভেতরে ভবনের সামনে সন্ধ্যা ও রাতে বসে মাদক ও জুয়ার আসর। নিরাপত্তাহীনতার কারণে আবাসিক এলাকায় থাকছেন না চিকিৎসকেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিএমআরসির দক্ষিণ পাশে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সাততলা মূল ভবন। অবৈধ দখল থেকে রক্ষা করতে দুই দশক আগে হাসপাতাল ভবনের চারপাশে প্রাচীর তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে প্রাচীরের পশ্চিম দিকের দেয়াল ভেঙে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াতের পথ করেছেন। হাসপাতালের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে দক্ষিণের পকেট গেট দিয়ে বের হন তাঁরা। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সারাক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচি। দুপুরের পর মানুষের সমাগম বাড়ে। কয়েকজন বললেন, সন্ধ্যায় মাদক ও জুয়ার আসরও বসে। এতে চিকিৎসা বিঘ্নিত হয়। রাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন রোগী, তাঁদের স্বজন এবং সেবাদানকারীরা।

দক্ষিণ পাশে প্রাচীর ঘেঁষে হাসপাতাল জামে মসজিদ। কয়েক গজ দূরে কর্মচারীদের চারটি আবাসিক ভবন (অনামিকা ১, ২, ৩, ৪)। আরেক পাশে চিকিৎসক ও নার্সদের আবাসিক এলাকা। সেখানে ফটক দিয়ে ঢুকতে শুরুর ভবনটি নার্সিং সুপার ভবন, সার্জন কোয়ার্টার (বলাকা-২), তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ভবন (বলাকা-৩), নার্সিং ডরমিটরি (বলাকা-৫), সিনিয়র কনসালট্যান্ট কোয়ার্টার (বলাকা-১)। দিনেও সেখানে মাদকের আসর বসাতে দেখা গেছে। বস্তিবাসীরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণের শেষ প্রান্তে গরুও চরান। শেষ মাথায় বানানো হয়েছে পকেট গেট। সবজি চাষও করা হচ্ছে। এই কম্পাউন্ডের গেটে জাকের পার্টির কার্যালয়। সেখানে প্রতি বেলা বড় ডেকচিতে রান্না হয় বলে জানা গেল। এই প্রাঙ্গণের বাইরে হাসপাতালের থাকা অন্তত ৭ একর জমি বেদখল হয়েছে। মূল প্রাচীর ঘিরে ময়লার স্তূপ। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয় হাসপাতাল এলাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাততলা বস্তি’ দিন দিন হাসপাতালকে গ্রাস করছে। অবৈধ স্থাপনা হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকার সীমানার মধ্যে বিস্তার লাভ করছে। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

জানা যায়, হাসপাতালের জায়গা দখল চলছে কয়েক দশক ধরে। এর পেছনে ওই হাসপাতালের কর্মচারী ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত। কারও কারও এই বস্তিতে ১০০ থেকে ২০০ ঘর রয়েছে। তাঁরা মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, দখল হওয়া জমি উদ্ধারে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় কার্যক্রম নেওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকায় তা স্থগিত হয়। বর্তমানে প্রাচীরের বাইরে হাসপাতালের খালি জায়গা দখল করে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ স্থাপনা, বস্তিঘর, দোকান, রিকশা গ্যারেজে অবৈধভাবে হাসপাতালের বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এই বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসনকে। গত জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। কোনো কোনো মাসে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা বিল হয়। অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে হাসপাতালের ইলেকট্রিশিয়ান জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেদখল হওয়া জমি ও স্থাপনা উদ্ধার এবং নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানিয়ে বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে। তবে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির গুলশান বিভাগে ও ৯ মার্চ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের বহু জমি অবৈধভাবে দখল হয়েছে। হাসপাতালে আগত রোগী ও সেবাদানকারীদের নিরাপত্তাহীনতার কথা আমরা জেনেছি। আমরা এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যার চেয়ে কয়েক গুণ রোগী থাকলেও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিরাপত্তা ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে মোট শয্যার বিপরীতে ৫০ শতাংশ রোগী ভর্তি থাকে। হাসপাতালটিতে ১০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৫টি শয্যা চালু রয়েছে। পাঁচ শয্যার হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) থাকলেও জনবলের অভাবে তা অকার্যকর। অস্ত্রোপচারের কক্ষ (ওটি) এখনো নির্মাণাধীন। ওটি না থাকায় সংক্রামক ও জটিল রোগী, এইচআইভি আক্রান্ত রোগী ও প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। চিকিৎসক এবং অন্যান্য জনবলের সংকটও রয়েছে হাসপাতালটিতে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করা সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আরিফুল বাসার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসপাতালের জমি অবৈধ দখলের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেবে। আমরা চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

অবৈধ দখল রোধ ও নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলে জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গলায় রশি পেঁচানো নছিমনচালকের লাশ উদ্ধার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ডোবায় নছিমনচালকের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডোবায় নছিমনচালকের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ওমর আলী শেখ (৫০) নামের এক নছিমনচালকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে মোবারকগঞ্জ চিনিকল ফার্মের সড়কের ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণ, নছিমনচালককে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত ওমর আলী কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার হাটবেলাটপুর গ্রামের ছাত্তার শেখের ছেলে।

বারোবাজারের ইসমাইল নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বারোবাজারে শ্রমিকের কাজ করতাম। কিছুদিন আগে ওমর আলী নছিমন কিনেছে। সে বারোবাজারের মাছের ভাড়া টানে। সকালে তার মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ হচ্ছিল না। পরে জানতে পারি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির গলায় ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ রয়েছে। এ ছাড়া রশি দিয়ে তাঁর গলা পেঁচানো। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত