Ajker Patrika

দখলের দৌরাত্ম্য

দখলের সংক্রমণে জেরবার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল

  • দখলের উৎসবে প্রাচীর দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক একর।
  • প্রাচীরের বাইরে জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বস্তি, ঘর, দোকান।
  • প্রাচীরের ভেতরে বসে মাদক ও জুয়ার আসর, নেই নিরাপত্তা।
  • দেয়াল ভেঙে পকেট গেট বানিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দখলের সংক্রমণ থেকে বেরই হতে পারছে না রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। দখলের থাবায় ক্রমে আয়তন কমছে বিশেষায়িত এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটির। সীমানা প্রাচীরের বাইরে জমি দখল করে গড়ে উঠেছে সাততলা বস্তি, ঘর, দোকান, কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে সন্ধ্যা ও রাতে বসে মাদক ও জুয়ার আসর।

হাসপাতালের প্রধান ফটক এবং দেয়াল ভেঙে করা পকেট গেট দিয়ে চলাচল করে আশপাশের বাসিন্দারা। এতে ব্যাহত হচ্ছে পরিবেশ। নিরাপত্তাহীনতার কারণে আবাসিক এলাকায় থাকেন না চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা নিতে রোগীদেরও আগ্রহ কম।

হাসপাতাল সূত্র বলেছে, দখলের সঙ্গে হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। বস্তিতে তাঁদের কারও কারও ১০০ থেকে ২০০ ঘর রয়েছে। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানিয়ে বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিলেও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে দখলের বিস্তার ঘটেছে। গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও চিত্র বদলায়নি।

মহাখালীতে হেলথ জোনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে সরকারি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের অবস্থান। সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল থাকলেও মহাখালীরটিই বড়। এটি ১০০ শয্যার এবং দেশে সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। এখানে কুকুর, বানর, বিড়াল, শিয়ালসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর কামড়ে আহত রোগী, ধনুষ্টংকার, ভাইরাল এনকেফেলাইটিস, ডিপথেরিয়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস, এইচআইভি পজিটিভ, কোভিড-১৯, জন্ডিস, জলবসন্ত, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হামসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্তদের ভর্তি করে চিকিৎসা ও টিকা দেওয়া হয়। অথচ অবহেলিত এই হাসপাতাল পূর্ণ সক্ষমতায় সেবা দিতে পারছে না। পরিবেশসহ বিভিন্ন কারণে চিকিৎসা নিতে রোগীদেরও আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন নামে ১৯৫৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। ১৯৭২ সালে এর নামকরণ করা হয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। তখন হাসপাতালকে ৩৫ একর জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। পরে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টার, ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি), ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অর্গানাইজেশন (টেমো), পরিবার পরিকল্পনা পণ্যগার, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টার, কুষ্ঠ হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টার, আইপিএইচ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বঙ্গমাতা জাতীয় সেলুলার এবং মলিকুলার রিসার্চ সেন্টারসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ওই জমি থেকে ২৪ একর জমি দেওয়া হয়। তবে একমাত্র বঙ্গমাতা জাতীয় সেলুলার এবং মলিকুলার রিসার্চ সেন্টারের নামে ৩ একর জমির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। বাকি ২১ একর জমি এখনো সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের নামে থাকায় খাজনা দিতে হয় এই প্রতিষ্ঠানকেই।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে দেওয়ার পর হাসপাতালের কাছে থাকা বাকি ১১ একর জমির বেশির ভাগই বেদখল হয়ে গেছে। দখল না হওয়া জমিতে হাসপাতালের মূল ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, মসজিদ, মন্দির, গাড়ির গ্যারেজ, পানির পাম্প হাউস, জলাতঙ্ক প্রতিরোধমূলক ভবন রয়েছে। প্রাচীরের বাইরে থাকা জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বস্তিঘর; কাঁচা, আধা পাকা ও পাকাঘর; দোকান; রিকশার গ্যারেজ; কাঁচাবাজার; রাজনৈতিক দলের কার্যালয়সহ অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। তবে প্রাচীরের ভেতরেও স্বস্তি নেই। প্রাচীরের ভেতরে ভবনের সামনে সন্ধ্যা ও রাতে বসে মাদক ও জুয়ার আসর। নিরাপত্তাহীনতার কারণে আবাসিক এলাকায় থাকছেন না চিকিৎসকেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিএমআরসির দক্ষিণ পাশে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সাততলা মূল ভবন। অবৈধ দখল থেকে রক্ষা করতে দুই দশক আগে হাসপাতাল ভবনের চারপাশে প্রাচীর তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে প্রাচীরের পশ্চিম দিকের দেয়াল ভেঙে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াতের পথ করেছেন। হাসপাতালের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে দক্ষিণের পকেট গেট দিয়ে বের হন তাঁরা। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সারাক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচি। দুপুরের পর মানুষের সমাগম বাড়ে। কয়েকজন বললেন, সন্ধ্যায় মাদক ও জুয়ার আসরও বসে। এতে চিকিৎসা বিঘ্নিত হয়। রাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন রোগী, তাঁদের স্বজন এবং সেবাদানকারীরা।

দক্ষিণ পাশে প্রাচীর ঘেঁষে হাসপাতাল জামে মসজিদ। কয়েক গজ দূরে কর্মচারীদের চারটি আবাসিক ভবন (অনামিকা ১, ২, ৩, ৪)। আরেক পাশে চিকিৎসক ও নার্সদের আবাসিক এলাকা। সেখানে ফটক দিয়ে ঢুকতে শুরুর ভবনটি নার্সিং সুপার ভবন, সার্জন কোয়ার্টার (বলাকা-২), তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ভবন (বলাকা-৩), নার্সিং ডরমিটরি (বলাকা-৫), সিনিয়র কনসালট্যান্ট কোয়ার্টার (বলাকা-১)। দিনেও সেখানে মাদকের আসর বসাতে দেখা গেছে। বস্তিবাসীরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণের শেষ প্রান্তে গরুও চরান। শেষ মাথায় বানানো হয়েছে পকেট গেট। সবজি চাষও করা হচ্ছে। এই কম্পাউন্ডের গেটে জাকের পার্টির কার্যালয়। সেখানে প্রতি বেলা বড় ডেকচিতে রান্না হয় বলে জানা গেল। এই প্রাঙ্গণের বাইরে হাসপাতালের থাকা অন্তত ৭ একর জমি বেদখল হয়েছে। মূল প্রাচীর ঘিরে ময়লার স্তূপ। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয় হাসপাতাল এলাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাততলা বস্তি’ দিন দিন হাসপাতালকে গ্রাস করছে। অবৈধ স্থাপনা হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকার সীমানার মধ্যে বিস্তার লাভ করছে। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

জানা যায়, হাসপাতালের জায়গা দখল চলছে কয়েক দশক ধরে। এর পেছনে ওই হাসপাতালের কর্মচারী ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত। কারও কারও এই বস্তিতে ১০০ থেকে ২০০ ঘর রয়েছে। তাঁরা মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, দখল হওয়া জমি উদ্ধারে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় কার্যক্রম নেওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকায় তা স্থগিত হয়। বর্তমানে প্রাচীরের বাইরে হাসপাতালের খালি জায়গা দখল করে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ স্থাপনা, বস্তিঘর, দোকান, রিকশা গ্যারেজে অবৈধভাবে হাসপাতালের বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এই বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসনকে। গত জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। কোনো কোনো মাসে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা বিল হয়। অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে হাসপাতালের ইলেকট্রিশিয়ান জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেদখল হওয়া জমি ও স্থাপনা উদ্ধার এবং নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানিয়ে বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে। তবে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির গুলশান বিভাগে ও ৯ মার্চ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের বহু জমি অবৈধভাবে দখল হয়েছে। হাসপাতালে আগত রোগী ও সেবাদানকারীদের নিরাপত্তাহীনতার কথা আমরা জেনেছি। আমরা এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যার চেয়ে কয়েক গুণ রোগী থাকলেও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিরাপত্তা ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে মোট শয্যার বিপরীতে ৫০ শতাংশ রোগী ভর্তি থাকে। হাসপাতালটিতে ১০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৫টি শয্যা চালু রয়েছে। পাঁচ শয্যার হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) থাকলেও জনবলের অভাবে তা অকার্যকর। অস্ত্রোপচারের কক্ষ (ওটি) এখনো নির্মাণাধীন। ওটি না থাকায় সংক্রামক ও জটিল রোগী, এইচআইভি আক্রান্ত রোগী ও প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। চিকিৎসক এবং অন্যান্য জনবলের সংকটও রয়েছে হাসপাতালটিতে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করা সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আরিফুল বাসার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসপাতালের জমি অবৈধ দখলের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেবে। আমরা চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

অবৈধ দখল রোধ ও নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলে জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২৭-৩০ ডিসেম্বর রাতে কর্ণফুলী টানেলে নিয়ন্ত্রিত হবে যান চলাচল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলের রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হবে।

আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা শিকদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় প্রয়োজন অনুযায়ী ‘পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা’ অথবা ‘আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা’ টিউবের ট্রাফিক ডাইভারসনের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল অব্যাহত রাখা হবে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যমান ট্রাফিকের চাপ অনুযায়ী টানেলের উভয়মুখে যাত্রীদের সর্বনিম্ন ৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

এদিকে কর্ণফুলী টানেলের নিরাপদ ও কার্যকর রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে যাত্রী ও চালকদের সহযোগিতা কামনা করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যৌনকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ, কুয়াকাটায় জামায়াত নেতা বহিষ্কার

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
বহিষ্কার করা জামায়াত নেতা আ. হালিম। ছবি: সংগৃহীত
বহিষ্কার করা জামায়াত নেতা আ. হালিম। ছবি: সংগৃহীত

নিজের বাড়িতে যৌনকর্মীদের (পতিতা) আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কুয়াকাটা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি আ. হালিমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেন কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা মো. শহীদুল ইসলাম।

জামায়াত নেতারা বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিশেষ রোকন বৈঠক আহ্বান করা হয়। বৈঠকে উত্থাপিত অভিযোগ ও প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিষয়টি জামায়াতে ইসলামীর নীতিমালা ও আদর্শ পরিপন্থী। তাই সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আ. হালিমকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মোহাম্মদ মাঈনুল ইসলাম মন্নান, লতাচাপলী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির রাসেল মুসুল্লি, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আল আমিন মৃধা, যুব জামায়াতের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সিকদার এবং জামায়াতের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি শাহাবুদ্দিন ফরাজি।

কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মোহাম্মদ মাঈনুল ইসলাম মন্নান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন। এখানে ব্যক্তির চেয়ে সংগঠনের আদর্শ ও নৈতিকতা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো নেতার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠলে তা দলীয়ভাবে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। সংগঠনের সুনাম ও আদর্শ রক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ রোকন বৈঠক ডেকে কুয়াকাটা পৌর ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী করতে হলে অবশ্যই সাংগঠনিক নিয়মকানুন ও দলীয় নীতিমালা মেনে চলতে হয়।’

তবে অভিযুক্ত মো. আ. হালিম তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বাসায় ছয়টি পরিবার ভাড়া থাকে। এর মধ্যে একটি বাসা মা-মেয়ে পরিচয়ে চারজন নারী দুই মাস আগে ভাড়া নেন। তাঁরা কোথায় কী কাজ করেন, তা আমার জানার বিষয় নয়। আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি শিগগির সংবাদ সম্মেলন করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দলবদলেও রক্ষা পেলেন না ছাত্রলীগ নেতা, ডিবির হাতে আটক

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০১
মোহাম্মদ শাহীন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ শাহীন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপিতে যোগদানের এক দিন পার না হতেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কুমিল্লা উত্তর জেলার সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহীন মিয়াকে (৩৪) আটক করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলার ১ নম্বর বড়শালঘর ইউনিয়নের সৈয়দপুর বাজারে তাঁর নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘শাহীন ফার্মেসি’ থেকে ডিবি ও থানা-পুলিশের যৌথ অভিযানে তাঁকে আটক করা হয়।

মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বড়শালঘর গ্রামের মৃত শহিদ মেম্বারের ছেলে। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের আস্থাভাজন ছিলেন।

এর আগে গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে দেবিদ্বার পৌর এলাকার গুনাইঘরে ‘শহীদ জিয়া মিলনায়তনে’ আনুষ্ঠানিকভাবে শালঘর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী বিএনপিতে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, টানা চারবারের সাবেক এমপি ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির হাতে তাঁরা বিএনপির পতাকা তুলে দেন। যোগদানকারীদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহীন মিয়াও ছিলেন।

ওই যোগদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয় আওয়ামী লীগের বড়শালঘর ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম জারু চেয়ারম্যানের নির্দেশে এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য আলম হাজারীর নেতৃত্বে। যোগদানকারীরা সবাই সাবেক আওয়ামী লীগ এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সমর্থক ছিলেন।

এ বিষয়ে সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী ইউপি সদস্য আলম হাজারী বলেন, ‘শাহীনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কেন তাঁকে আটক করা হলো, সেটিও আমরা জানি না।’

কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রেজভিউল আহসান মুন্সি বলেন, ‘মোহাম্মদ শাহীন মিয়া আমাদের পুরোনো কর্মী। বিগত সরকারের আমলে নিরাপত্তার কারণে তিনি ভিন্নভাবে চলাফেরা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।’

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার শাহীন মিয়াকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন। অভিযানে থাকা ওসি (তদন্ত) মঈনুদ্দিনের কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।

মঈনুদ্দিন বলেন, ‘শাহীনকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। কোন মামলায় তাঁকে আটক দেখানো হয়েছে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে।’

এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মো. শামসুল আলম শাহ বলেন, গ্রেপ্তারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‎আরমানিটোলায় বহুতল ভবনে আগুন‎, ৪০ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস

‎রাজধানীর আরমানিটোলার বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠতলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে আজ সকালে খুদে বার্তায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়।

‎‎ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া যায়। খবর পাওয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস

হাজী টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সদরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে ২টি, সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে ৫টি এবং সূত্রাপুর ফায়ার স্টেশন থেকে ২টিসহ মোট ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে। পরে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।‎

তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত