Ajker Patrika

বিদেশি নামে দেদার বিক্রি হচ্ছে দেশি পোশাক

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ৪৫
বিদেশি নামে দেদার বিক্রি হচ্ছে দেশি পোশাক

‘কাস্টোমার আইসা বলে ইন্ডিয়ান আলিয়া কাট, অরগাঞ্জা দেখান, পাকিস্তানি আগানূর দেখান। আমরাও সেইগুলা বাইর কইরা দেই। সেইটা দেশে বানানো, না বিদেশ দিয়া আসছে, তা তো দেখার বিষয় না।’ বলছিলেন রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের বিক্রয়কর্মী সজীব মিয়া। তিনি জানান, বেশির ভাগ ক্রেতা পাকিস্তানি অথবা ভারতীয় পোশাক খোঁজেন। বিক্রয়কর্মীরাও বিদেশি নাম দিয়ে পোশাক দেখান। পছন্দ হলে, দামে মিললে ক্রেতা নিয়ে নেন।

ঈদবাজারে রাজধানীর মার্কেটগুলোয় এভাবেই বিদেশি নামের দেশি পোশাক হরদম বিক্রি হচ্ছে। পোশাকটা যে বাংলাদেশে তৈরি, তা অনেকটা অজানাই থেকে যায়। আবার অনেকে বুঝলেও খুব একটা উচ্চবাচ্য করেন না। চাঁদনী চকে পোশাক কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘আত্মীয়দের জন্য ছয়টা থ্রিপিস কিনলাম। সেলসম্যান বলল এগুলো পাকিস্তানি আগানূর। আমি খুব ভালো করেই জানি এটা আগানূর না। কাপড়টা ভালো হলেই হলো। কোন দেশ তা মুখ্য নয়।’

রমজানের শুরু থেকে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট এলাকা ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ট্রেন্ড শুরু হলেও বাজারে ভারতীয় পোশাকের চাহিদাই বেশি। আলিয়া কাট, আগানূর, নায়রাসহ বিভিন্ন বিদেশি নামের পোশাক বিক্রি হচ্ছে দেদার। বিদেশি নাম ও ট্যাগ জুড়ে দেওয়া হলেও সেগুলোর প্রায় সব দেশেই তৈরি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের বাজারে আমাদের দেশের গার্মেন্টসের তৈরি পোশাকই বিক্রি হচ্ছে বেশি। আমদানি করা পোশাকের বিক্রি খুবই কম।’

দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদ উপলক্ষে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করা হয়েছে। 
এসবের মধ্যে বোতাম, সুতা, জিপারসহ পোশাক তৈরির বিভিন্ন জিনিস রয়েছে।

নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, দেশি পোশাকেরই বিক্রি বেশি। হাতে গোনা কিছু দোকান বাদে সব জায়গায় দেশের গার্মেন্টসের তৈরি পণ্যই বিক্রি হয়। আর ফুটপাতে যত বিক্রি হচ্ছে, তার সবই দেশে তৈরি। হয়তো সেগুলোতে বিদেশি ট্যাগ লাগানো আছে।

মেয়েদের আগ্রহ গাউনে, ছেলেদের পাঞ্জাবি রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, কনকর্ড পুলিশ প্লাজা বিপণিবিতান এবং নিউমার্কেট, গাউছিয়া, মৌচাকসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এবার নারীদের পোশাকের মধ্যে গাউন, গারারা, থ্রিপিস চলছে বেশি।

শাড়ির বিক্রি তুলনামূলক কম। মেয়েশিশুদের গাউন, গারারার পাশাপাশি ফ্রক, স্কার্ট বিক্রি হচ্ছে। পুরুষদের বরাবরের মতোই পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। টি-শার্টও কিনছেন অনেকে। ছেলেশিশুদের পাঞ্জাবি, টি-শার্টের পাশাপাশি হাফ প্যান্ট ও হাফ স্লিভ শার্টের চাহিদা রয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, চৈত্রের গরমের প্রভাব পড়েছে ঈদ কেনাকাটার পছন্দে। নারী-পুরুষ বেশির ভাগই হালকা কাপড় ও হালকা রঙের পোশাক কিনছেন। মৌচাকের পোশাক ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ বলেন, মেয়েরা একটু কারুকাজ করা পোশাক বেশি কেনেন। কিন্তু আজকাল ভারী কারুকাজের চেয়ে হালকা নকশার পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সমীক্ষা অনুযায়ী এবার ঈদে দেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ নিজের, পরিবারের ও নিকটজনদের জন্য পোশাক ও উপহার বাবদ গড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ করবে। সে হিসাবে পোশাক ও উপহার বাবদ এবার ৩৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে।

নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কিছু গোপনীয়তা থাকে। কত টাকার পণ্য বিক্রি করলেন, সেটা সবাই বলতে চান না। ৩৪ হাজার কোটির পণ্য বিক্রি হবে, এটা দোকান মালিক সমিতির নিজস্ব হিসাব। তবে আমরা বলব, এবার ঈদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়ের দোকানে চলে একটি বাতি-ফ্যান, বিদ্যুৎ বিল এল সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান বাদশা ব্যাপারী। দোকানে কেবল একটি বাতি ও একটি ফ্যান চালানো হয়। সাধারণত তাঁর মাসিক বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু চলতি মাসে তাঁর হাতে এসেছে ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকার বিদ্যুৎ বিল। বিল হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের লিটুখান বাজারের দোকানদার বাদশা ব্যাপারী। বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে বাদশা বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমার দোকানে এত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগই নেই। বিলের নম্বরে ফোন করলে শুধু অফিসে যেতে বলে।’

এমন ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন লিটুখান বাজারের আরেক দোকানদার শহীদ খান। বাজারে খাবারের দোকান রয়েছে তাঁর। দোকানে দুটি বাতি, একটি ফ্যান ও একটি ছোট ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। প্রতি মাসে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বিল দিতেন, সেখানে এবার বিল এসেছে ২৪ হাজার ২১৬ টাকা। শহীদ বলেন, ‘বিলটা দেখে দাঁড়াতেই পারছিলাম না। এমন বিল হলে দোকান চালানোই কঠিন হয়ে যাবে।’

বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস ধরে এলাকায় এমন অস্বাভাবিক বিল আসছে। তাঁদের ধারণা, মিটার রিডিং অথবা বিলিং পদ্ধতিতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে সঠিক হিসাব ঠিক করার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিল প্রস্তুতকারী কর্মী সুমি রানী দাস বলেন, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা অফিসে এলে আমরা সরেজমিন যাচাই করে বিল পুনরায় বিবেচনা করব।’

টঙ্গিবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘মিটার রিডিং বা বিলিং সিস্টেমে ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সরেজমিন যাচাই করে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেব। ভোক্তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত