নওশাদ জামিল

আপনি প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। মূলত বিদেশেই শিল্পচর্চা করছেন। নিজেকে কীভাবে (বাংলাদেশি/প্রবাসী) দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার শিল্পকর্ম ও সমস্ত সত্তাজুড়েই আছে বাংলাদেশ। মূলত আমার চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই বহন করে। চিত্রকর্মের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাই।
বিদেশে অনেকগুলো একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বিদেশের অসংখ্য আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন শিল্পীর কাজ দেখেছেন। সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন। বিদেশে প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে অনেকগুলো প্রদর্শনীতেই অংশ নিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক মানের ও বড় আকারের প্রদর্শনীতে অংশ নিতেই বেশি পছন্দ করি। আন্তর্জাতিক মানের আর্ট বায়েনিয়াল, আর্ট মিউজিয়াম, বিভিন্ন গ্যালারিতে যখন প্রদর্শনী করা হয়, তখন বড় স্পেস ও সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের আধুনিক সুব্যবস্থাও করা হয়; যার ফলে আমার বড় কাজগুলো, ইনস্টলেশনগুলো প্রদর্শন করতে সুবিধা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর সঙ্গে ছবি প্রদর্শিত হলে নিজের অবস্থান বোঝা যায়, পাশাপাশি নতুন অনেক কিছুর অংশী হওয়া যায়।সাধারণত প্রদর্শনীর স্থান, আয়তন, সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আর্টওয়ার্ক ইনস্টল করা হয়। বিদেশে যেহেতু বড় স্পেস থাকে, সেহেতু আমি বড় আকারের ইনস্টলেশন আর্ট করি। বিদেশের গ্যালারি, শিল্প জাদুঘর, বায়েনিয়ালে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক।
সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর তৃতীয় আসর আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিল্পী, স্থপতি, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং সমালোচকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেব। যেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড. কোয়ান জেফ বেইস এবং ক্যামেরুনের বারথেলেমি টগুওর নাম উল্লেখ করা হয়। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আফ্রিকা এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের মেলবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
আপনার চিত্রকর্মে ঔপনিবেশিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। ইতিহাসের আলোকে বৃহত্তর বাংলাকে দেখার প্রয়াস রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাই।
বৃহত্তর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমার চিত্রকলার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এ বিষয়টার প্রতি আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই। আমার নানা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। এক অর্থে সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমার বাবাও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি পরে আইনজীবী হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ অঞ্চলের গল্প ও ইতিহাস, পুরাণ আমাদের শোনাতেন। ছোটবেলায় মনের গহিনে যে বীজ বপন হয়েছিল, বড় হওয়ার পর তার ডালপালা, শেকড়বাকড়, লতাপাতাই বিস্তৃত হয়েছে ক্যানভাসে। আমি সাধারণত নিজস্ব শৈলী দিয়ে, শিল্প-প্রকরণ ও আঙ্গিক দিয়ে ইতিহাসের বাঁকে আলো ফেলতে চেষ্টা করি। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান শাসনামল ছাড়াও প্রাচীনকালের বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলগুলো উপলব্ধি করি, তারপর কাগজে কিংবা ক্যানভাসে তা তুলে ধরারও চেষ্টা করি।
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নাকি ‘মানুষের জন্য শিল্প’—আপনি কোন ধারাকে বিশ্বাস করেন? আপনার ছবি কোন শ্রেণির মানুষের (দর্শক) জন্য?
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারাকে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্যই আমার শিল্পকর্ম। আমার আর্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্কেচ, জলরং, প্যাস্টেল রং এবং মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছি। কাজগুলো কোথাও প্রকাশ করিনি। শিল্পের জন্য তা এঁকেছি। ভবিষ্যতে তা হয়তো প্রদর্শন করা হবে।
শিল্পকর্মে আপনি জাতীয়তাবাদ, নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী?
শিল্পকর্মে আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিদেশে বসবাস ও বিদেশে প্রদর্শনী বেশি করলেও দেশাত্মবোধ আমার মনেপ্রাণে সব সময় কাজ করে। বিদেশ শুধু নয়, দেশেও আমি প্রদর্শনী করেছি। দর্শনার্থী ও শিল্পপিয়াসীদের সাড়াও পেয়েছি। ভবিষ্যতে নিয়মিতই দেশে প্রদর্শনী করতে চাই, দেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে কাজও করতে চাই।
এস এম সুলতানের চিত্রকলা আপনার বেশ প্রিয়। তাঁর কাজে আমাদের সাধারণ মানুষের বয়ান যেমন উঠে এসেছে, তেমনি নন্দনবোধের খোরাক হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের ব্যাখ্যা কী?
সুলতান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর মতো আপাদমস্তক সাধক শিল্পী আমাদের আর আসেনি। তিনি আমাদের গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষ, ঐতিহ্য, লোকাচার-ব্রতকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, চিত্রকর্মে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন। সুলতানের চিত্রকলা ও শিল্পদর্শন আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার ক্যানভাসে তৈলচিত্র কাজকে ‘লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস’ বলছেন। এ ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস আমার অন্যতম সিগনেচার ধারা। এ ধারায় আমিই প্রথম কাজ করেছি, বিশ্বে তা পরিচিত করেছি। এ ধারায় সাধারণত ক্যানভাস মসৃণ থাকে না, থাকে অসম ও একটু উঁচু-নিচু ক্যানভাসের পার্শ্ব। এ ধারার কাজগুলো সাধারণত বড় আকারের হয় এবং প্রতিটি পেইন্টিংয়ের এক প্রান্তে অসম আকৃতি থাকে। লেপা স্টাইলটা আমি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পেয়েছি। দক্ষিণ বাংলার মানুষেরা যেভাবে মাটির ঘর করে, তার দেয়ালে মাটির লেপা থাকে, গোবর, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে লেপা দেওয়া হয়। আমি তা থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটা তেলরঙের আস্তর দিয়ে ক্যানভাসে প্রলেপ দিই, যা আমি স্টেনসিল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করি। লে-আউট অনুযায়ী স্টেনসিল কাটতে আমি ক্যানভাসে আঠালো টেপ লাগিয়ে রাখি। সেগুলো খোসা ছাড়ার পর, মাটির দেয়ালে যেমন মাটির মিশ্রণ প্লাস্টার করা হয়, তেমনি আমি পুরু তেল রঙের স্তর প্রয়োগ করি।
যতদূর জানি চারুকলায় মেধাবী শিল্পী ও শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ তিন পর্যায়েই আপনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, পেয়েছেন খ্যাতি ও সম্মান। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কেন যোগ দেননি? কিংবা দেশে থাকেননি কেন?
নিজের মতো শিল্পকর্মচর্চা করতেই আগ্রহী ছিলাম বরাবরই। আমার প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তো অনেক দিন আগের কথা! এখন শুধু ভবিষ্যতের কথাই হোক। স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা এবং প্রদর্শনী করতে চেয়েছি। এ জন্যই পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সাধনায় নিজের পথ করে নিয়েছি। অতীত নয় শুধু ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আমার মুখ্য চিন্তা। আমেরিকায় থাকলেও প্রায় নিয়মিতই আসার চেষ্টা করি দেশে, ভবিষ্যৎতে দেশে বড় আকারের আর্ট স্টুডিও করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশে থাকলেও মনের গহিনে থাকে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে সমসাময়িক শিল্পচর্চা ও শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন।
চিত্রকলা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আগে ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ের, বর্তমানে ওই ধ্যান-ধারণা বিস্তৃত হয়েছে। চারুকলার সীমাও বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। চিত্রকলার নতুন ভাষার সন্ধান করছেন তরুণেরা। বিভিন্ন মাধ্যমেও কাজ করছেন দারুণভাবে। তরুণদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পারলেও আধুনিক শিল্পকলার ভাষা ও ব্যাপ্তি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এক দশক ধরে প্রসারিত করেছে। আমাদের চারুকলার পৃষ্ঠপোষকতা, চর্চা ও প্রদর্শনী বৃদ্ধি করেছে শুধু তারাই। দর্শনার্থী ও সমঝদারও বেড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিল্পকলা অনেক প্রসারিত হয়েছে শুধু নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলোর কারণে।

আপনি প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। মূলত বিদেশেই শিল্পচর্চা করছেন। নিজেকে কীভাবে (বাংলাদেশি/প্রবাসী) দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার শিল্পকর্ম ও সমস্ত সত্তাজুড়েই আছে বাংলাদেশ। মূলত আমার চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই বহন করে। চিত্রকর্মের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাই।
বিদেশে অনেকগুলো একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বিদেশের অসংখ্য আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন শিল্পীর কাজ দেখেছেন। সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন। বিদেশে প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে অনেকগুলো প্রদর্শনীতেই অংশ নিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক মানের ও বড় আকারের প্রদর্শনীতে অংশ নিতেই বেশি পছন্দ করি। আন্তর্জাতিক মানের আর্ট বায়েনিয়াল, আর্ট মিউজিয়াম, বিভিন্ন গ্যালারিতে যখন প্রদর্শনী করা হয়, তখন বড় স্পেস ও সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের আধুনিক সুব্যবস্থাও করা হয়; যার ফলে আমার বড় কাজগুলো, ইনস্টলেশনগুলো প্রদর্শন করতে সুবিধা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর সঙ্গে ছবি প্রদর্শিত হলে নিজের অবস্থান বোঝা যায়, পাশাপাশি নতুন অনেক কিছুর অংশী হওয়া যায়।সাধারণত প্রদর্শনীর স্থান, আয়তন, সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আর্টওয়ার্ক ইনস্টল করা হয়। বিদেশে যেহেতু বড় স্পেস থাকে, সেহেতু আমি বড় আকারের ইনস্টলেশন আর্ট করি। বিদেশের গ্যালারি, শিল্প জাদুঘর, বায়েনিয়ালে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক।
সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর তৃতীয় আসর আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিল্পী, স্থপতি, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং সমালোচকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেব। যেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড. কোয়ান জেফ বেইস এবং ক্যামেরুনের বারথেলেমি টগুওর নাম উল্লেখ করা হয়। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আফ্রিকা এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের মেলবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
আপনার চিত্রকর্মে ঔপনিবেশিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। ইতিহাসের আলোকে বৃহত্তর বাংলাকে দেখার প্রয়াস রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাই।
বৃহত্তর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমার চিত্রকলার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এ বিষয়টার প্রতি আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই। আমার নানা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। এক অর্থে সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমার বাবাও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি পরে আইনজীবী হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ অঞ্চলের গল্প ও ইতিহাস, পুরাণ আমাদের শোনাতেন। ছোটবেলায় মনের গহিনে যে বীজ বপন হয়েছিল, বড় হওয়ার পর তার ডালপালা, শেকড়বাকড়, লতাপাতাই বিস্তৃত হয়েছে ক্যানভাসে। আমি সাধারণত নিজস্ব শৈলী দিয়ে, শিল্প-প্রকরণ ও আঙ্গিক দিয়ে ইতিহাসের বাঁকে আলো ফেলতে চেষ্টা করি। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান শাসনামল ছাড়াও প্রাচীনকালের বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলগুলো উপলব্ধি করি, তারপর কাগজে কিংবা ক্যানভাসে তা তুলে ধরারও চেষ্টা করি।
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নাকি ‘মানুষের জন্য শিল্প’—আপনি কোন ধারাকে বিশ্বাস করেন? আপনার ছবি কোন শ্রেণির মানুষের (দর্শক) জন্য?
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারাকে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্যই আমার শিল্পকর্ম। আমার আর্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্কেচ, জলরং, প্যাস্টেল রং এবং মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছি। কাজগুলো কোথাও প্রকাশ করিনি। শিল্পের জন্য তা এঁকেছি। ভবিষ্যতে তা হয়তো প্রদর্শন করা হবে।
শিল্পকর্মে আপনি জাতীয়তাবাদ, নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী?
শিল্পকর্মে আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিদেশে বসবাস ও বিদেশে প্রদর্শনী বেশি করলেও দেশাত্মবোধ আমার মনেপ্রাণে সব সময় কাজ করে। বিদেশ শুধু নয়, দেশেও আমি প্রদর্শনী করেছি। দর্শনার্থী ও শিল্পপিয়াসীদের সাড়াও পেয়েছি। ভবিষ্যতে নিয়মিতই দেশে প্রদর্শনী করতে চাই, দেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে কাজও করতে চাই।
এস এম সুলতানের চিত্রকলা আপনার বেশ প্রিয়। তাঁর কাজে আমাদের সাধারণ মানুষের বয়ান যেমন উঠে এসেছে, তেমনি নন্দনবোধের খোরাক হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের ব্যাখ্যা কী?
সুলতান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর মতো আপাদমস্তক সাধক শিল্পী আমাদের আর আসেনি। তিনি আমাদের গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষ, ঐতিহ্য, লোকাচার-ব্রতকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, চিত্রকর্মে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন। সুলতানের চিত্রকলা ও শিল্পদর্শন আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার ক্যানভাসে তৈলচিত্র কাজকে ‘লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস’ বলছেন। এ ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস আমার অন্যতম সিগনেচার ধারা। এ ধারায় আমিই প্রথম কাজ করেছি, বিশ্বে তা পরিচিত করেছি। এ ধারায় সাধারণত ক্যানভাস মসৃণ থাকে না, থাকে অসম ও একটু উঁচু-নিচু ক্যানভাসের পার্শ্ব। এ ধারার কাজগুলো সাধারণত বড় আকারের হয় এবং প্রতিটি পেইন্টিংয়ের এক প্রান্তে অসম আকৃতি থাকে। লেপা স্টাইলটা আমি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পেয়েছি। দক্ষিণ বাংলার মানুষেরা যেভাবে মাটির ঘর করে, তার দেয়ালে মাটির লেপা থাকে, গোবর, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে লেপা দেওয়া হয়। আমি তা থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটা তেলরঙের আস্তর দিয়ে ক্যানভাসে প্রলেপ দিই, যা আমি স্টেনসিল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করি। লে-আউট অনুযায়ী স্টেনসিল কাটতে আমি ক্যানভাসে আঠালো টেপ লাগিয়ে রাখি। সেগুলো খোসা ছাড়ার পর, মাটির দেয়ালে যেমন মাটির মিশ্রণ প্লাস্টার করা হয়, তেমনি আমি পুরু তেল রঙের স্তর প্রয়োগ করি।
যতদূর জানি চারুকলায় মেধাবী শিল্পী ও শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ তিন পর্যায়েই আপনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, পেয়েছেন খ্যাতি ও সম্মান। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কেন যোগ দেননি? কিংবা দেশে থাকেননি কেন?
নিজের মতো শিল্পকর্মচর্চা করতেই আগ্রহী ছিলাম বরাবরই। আমার প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তো অনেক দিন আগের কথা! এখন শুধু ভবিষ্যতের কথাই হোক। স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা এবং প্রদর্শনী করতে চেয়েছি। এ জন্যই পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সাধনায় নিজের পথ করে নিয়েছি। অতীত নয় শুধু ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আমার মুখ্য চিন্তা। আমেরিকায় থাকলেও প্রায় নিয়মিতই আসার চেষ্টা করি দেশে, ভবিষ্যৎতে দেশে বড় আকারের আর্ট স্টুডিও করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশে থাকলেও মনের গহিনে থাকে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে সমসাময়িক শিল্পচর্চা ও শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন।
চিত্রকলা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আগে ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ের, বর্তমানে ওই ধ্যান-ধারণা বিস্তৃত হয়েছে। চারুকলার সীমাও বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। চিত্রকলার নতুন ভাষার সন্ধান করছেন তরুণেরা। বিভিন্ন মাধ্যমেও কাজ করছেন দারুণভাবে। তরুণদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পারলেও আধুনিক শিল্পকলার ভাষা ও ব্যাপ্তি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এক দশক ধরে প্রসারিত করেছে। আমাদের চারুকলার পৃষ্ঠপোষকতা, চর্চা ও প্রদর্শনী বৃদ্ধি করেছে শুধু তারাই। দর্শনার্থী ও সমঝদারও বেড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিল্পকলা অনেক প্রসারিত হয়েছে শুধু নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলোর কারণে।
নওশাদ জামিল

আপনি প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। মূলত বিদেশেই শিল্পচর্চা করছেন। নিজেকে কীভাবে (বাংলাদেশি/প্রবাসী) দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার শিল্পকর্ম ও সমস্ত সত্তাজুড়েই আছে বাংলাদেশ। মূলত আমার চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই বহন করে। চিত্রকর্মের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাই।
বিদেশে অনেকগুলো একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বিদেশের অসংখ্য আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন শিল্পীর কাজ দেখেছেন। সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন। বিদেশে প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে অনেকগুলো প্রদর্শনীতেই অংশ নিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক মানের ও বড় আকারের প্রদর্শনীতে অংশ নিতেই বেশি পছন্দ করি। আন্তর্জাতিক মানের আর্ট বায়েনিয়াল, আর্ট মিউজিয়াম, বিভিন্ন গ্যালারিতে যখন প্রদর্শনী করা হয়, তখন বড় স্পেস ও সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের আধুনিক সুব্যবস্থাও করা হয়; যার ফলে আমার বড় কাজগুলো, ইনস্টলেশনগুলো প্রদর্শন করতে সুবিধা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর সঙ্গে ছবি প্রদর্শিত হলে নিজের অবস্থান বোঝা যায়, পাশাপাশি নতুন অনেক কিছুর অংশী হওয়া যায়।সাধারণত প্রদর্শনীর স্থান, আয়তন, সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আর্টওয়ার্ক ইনস্টল করা হয়। বিদেশে যেহেতু বড় স্পেস থাকে, সেহেতু আমি বড় আকারের ইনস্টলেশন আর্ট করি। বিদেশের গ্যালারি, শিল্প জাদুঘর, বায়েনিয়ালে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক।
সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর তৃতীয় আসর আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিল্পী, স্থপতি, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং সমালোচকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেব। যেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড. কোয়ান জেফ বেইস এবং ক্যামেরুনের বারথেলেমি টগুওর নাম উল্লেখ করা হয়। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আফ্রিকা এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের মেলবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
আপনার চিত্রকর্মে ঔপনিবেশিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। ইতিহাসের আলোকে বৃহত্তর বাংলাকে দেখার প্রয়াস রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাই।
বৃহত্তর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমার চিত্রকলার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এ বিষয়টার প্রতি আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই। আমার নানা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। এক অর্থে সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমার বাবাও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি পরে আইনজীবী হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ অঞ্চলের গল্প ও ইতিহাস, পুরাণ আমাদের শোনাতেন। ছোটবেলায় মনের গহিনে যে বীজ বপন হয়েছিল, বড় হওয়ার পর তার ডালপালা, শেকড়বাকড়, লতাপাতাই বিস্তৃত হয়েছে ক্যানভাসে। আমি সাধারণত নিজস্ব শৈলী দিয়ে, শিল্প-প্রকরণ ও আঙ্গিক দিয়ে ইতিহাসের বাঁকে আলো ফেলতে চেষ্টা করি। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান শাসনামল ছাড়াও প্রাচীনকালের বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলগুলো উপলব্ধি করি, তারপর কাগজে কিংবা ক্যানভাসে তা তুলে ধরারও চেষ্টা করি।
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নাকি ‘মানুষের জন্য শিল্প’—আপনি কোন ধারাকে বিশ্বাস করেন? আপনার ছবি কোন শ্রেণির মানুষের (দর্শক) জন্য?
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারাকে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্যই আমার শিল্পকর্ম। আমার আর্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্কেচ, জলরং, প্যাস্টেল রং এবং মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছি। কাজগুলো কোথাও প্রকাশ করিনি। শিল্পের জন্য তা এঁকেছি। ভবিষ্যতে তা হয়তো প্রদর্শন করা হবে।
শিল্পকর্মে আপনি জাতীয়তাবাদ, নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী?
শিল্পকর্মে আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিদেশে বসবাস ও বিদেশে প্রদর্শনী বেশি করলেও দেশাত্মবোধ আমার মনেপ্রাণে সব সময় কাজ করে। বিদেশ শুধু নয়, দেশেও আমি প্রদর্শনী করেছি। দর্শনার্থী ও শিল্পপিয়াসীদের সাড়াও পেয়েছি। ভবিষ্যতে নিয়মিতই দেশে প্রদর্শনী করতে চাই, দেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে কাজও করতে চাই।
এস এম সুলতানের চিত্রকলা আপনার বেশ প্রিয়। তাঁর কাজে আমাদের সাধারণ মানুষের বয়ান যেমন উঠে এসেছে, তেমনি নন্দনবোধের খোরাক হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের ব্যাখ্যা কী?
সুলতান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর মতো আপাদমস্তক সাধক শিল্পী আমাদের আর আসেনি। তিনি আমাদের গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষ, ঐতিহ্য, লোকাচার-ব্রতকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, চিত্রকর্মে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন। সুলতানের চিত্রকলা ও শিল্পদর্শন আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার ক্যানভাসে তৈলচিত্র কাজকে ‘লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস’ বলছেন। এ ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস আমার অন্যতম সিগনেচার ধারা। এ ধারায় আমিই প্রথম কাজ করেছি, বিশ্বে তা পরিচিত করেছি। এ ধারায় সাধারণত ক্যানভাস মসৃণ থাকে না, থাকে অসম ও একটু উঁচু-নিচু ক্যানভাসের পার্শ্ব। এ ধারার কাজগুলো সাধারণত বড় আকারের হয় এবং প্রতিটি পেইন্টিংয়ের এক প্রান্তে অসম আকৃতি থাকে। লেপা স্টাইলটা আমি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পেয়েছি। দক্ষিণ বাংলার মানুষেরা যেভাবে মাটির ঘর করে, তার দেয়ালে মাটির লেপা থাকে, গোবর, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে লেপা দেওয়া হয়। আমি তা থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটা তেলরঙের আস্তর দিয়ে ক্যানভাসে প্রলেপ দিই, যা আমি স্টেনসিল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করি। লে-আউট অনুযায়ী স্টেনসিল কাটতে আমি ক্যানভাসে আঠালো টেপ লাগিয়ে রাখি। সেগুলো খোসা ছাড়ার পর, মাটির দেয়ালে যেমন মাটির মিশ্রণ প্লাস্টার করা হয়, তেমনি আমি পুরু তেল রঙের স্তর প্রয়োগ করি।
যতদূর জানি চারুকলায় মেধাবী শিল্পী ও শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ তিন পর্যায়েই আপনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, পেয়েছেন খ্যাতি ও সম্মান। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কেন যোগ দেননি? কিংবা দেশে থাকেননি কেন?
নিজের মতো শিল্পকর্মচর্চা করতেই আগ্রহী ছিলাম বরাবরই। আমার প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তো অনেক দিন আগের কথা! এখন শুধু ভবিষ্যতের কথাই হোক। স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা এবং প্রদর্শনী করতে চেয়েছি। এ জন্যই পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সাধনায় নিজের পথ করে নিয়েছি। অতীত নয় শুধু ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আমার মুখ্য চিন্তা। আমেরিকায় থাকলেও প্রায় নিয়মিতই আসার চেষ্টা করি দেশে, ভবিষ্যৎতে দেশে বড় আকারের আর্ট স্টুডিও করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশে থাকলেও মনের গহিনে থাকে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে সমসাময়িক শিল্পচর্চা ও শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন।
চিত্রকলা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আগে ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ের, বর্তমানে ওই ধ্যান-ধারণা বিস্তৃত হয়েছে। চারুকলার সীমাও বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। চিত্রকলার নতুন ভাষার সন্ধান করছেন তরুণেরা। বিভিন্ন মাধ্যমেও কাজ করছেন দারুণভাবে। তরুণদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পারলেও আধুনিক শিল্পকলার ভাষা ও ব্যাপ্তি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এক দশক ধরে প্রসারিত করেছে। আমাদের চারুকলার পৃষ্ঠপোষকতা, চর্চা ও প্রদর্শনী বৃদ্ধি করেছে শুধু তারাই। দর্শনার্থী ও সমঝদারও বেড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিল্পকলা অনেক প্রসারিত হয়েছে শুধু নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলোর কারণে।

আপনি প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। মূলত বিদেশেই শিল্পচর্চা করছেন। নিজেকে কীভাবে (বাংলাদেশি/প্রবাসী) দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার শিল্পকর্ম ও সমস্ত সত্তাজুড়েই আছে বাংলাদেশ। মূলত আমার চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই বহন করে। চিত্রকর্মের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাই।
বিদেশে অনেকগুলো একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বিদেশের অসংখ্য আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন শিল্পীর কাজ দেখেছেন। সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন। বিদেশে প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে অনেকগুলো প্রদর্শনীতেই অংশ নিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক মানের ও বড় আকারের প্রদর্শনীতে অংশ নিতেই বেশি পছন্দ করি। আন্তর্জাতিক মানের আর্ট বায়েনিয়াল, আর্ট মিউজিয়াম, বিভিন্ন গ্যালারিতে যখন প্রদর্শনী করা হয়, তখন বড় স্পেস ও সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের আধুনিক সুব্যবস্থাও করা হয়; যার ফলে আমার বড় কাজগুলো, ইনস্টলেশনগুলো প্রদর্শন করতে সুবিধা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর সঙ্গে ছবি প্রদর্শিত হলে নিজের অবস্থান বোঝা যায়, পাশাপাশি নতুন অনেক কিছুর অংশী হওয়া যায়।সাধারণত প্রদর্শনীর স্থান, আয়তন, সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আর্টওয়ার্ক ইনস্টল করা হয়। বিদেশে যেহেতু বড় স্পেস থাকে, সেহেতু আমি বড় আকারের ইনস্টলেশন আর্ট করি। বিদেশের গ্যালারি, শিল্প জাদুঘর, বায়েনিয়ালে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক।
সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর তৃতীয় আসর আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিল্পী, স্থপতি, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং সমালোচকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেব। যেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড. কোয়ান জেফ বেইস এবং ক্যামেরুনের বারথেলেমি টগুওর নাম উল্লেখ করা হয়। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আফ্রিকা এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের মেলবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
আপনার চিত্রকর্মে ঔপনিবেশিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। ইতিহাসের আলোকে বৃহত্তর বাংলাকে দেখার প্রয়াস রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাই।
বৃহত্তর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমার চিত্রকলার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এ বিষয়টার প্রতি আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই। আমার নানা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। এক অর্থে সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমার বাবাও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি পরে আইনজীবী হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ অঞ্চলের গল্প ও ইতিহাস, পুরাণ আমাদের শোনাতেন। ছোটবেলায় মনের গহিনে যে বীজ বপন হয়েছিল, বড় হওয়ার পর তার ডালপালা, শেকড়বাকড়, লতাপাতাই বিস্তৃত হয়েছে ক্যানভাসে। আমি সাধারণত নিজস্ব শৈলী দিয়ে, শিল্প-প্রকরণ ও আঙ্গিক দিয়ে ইতিহাসের বাঁকে আলো ফেলতে চেষ্টা করি। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান শাসনামল ছাড়াও প্রাচীনকালের বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলগুলো উপলব্ধি করি, তারপর কাগজে কিংবা ক্যানভাসে তা তুলে ধরারও চেষ্টা করি।
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নাকি ‘মানুষের জন্য শিল্প’—আপনি কোন ধারাকে বিশ্বাস করেন? আপনার ছবি কোন শ্রেণির মানুষের (দর্শক) জন্য?
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারাকে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্যই আমার শিল্পকর্ম। আমার আর্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্কেচ, জলরং, প্যাস্টেল রং এবং মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছি। কাজগুলো কোথাও প্রকাশ করিনি। শিল্পের জন্য তা এঁকেছি। ভবিষ্যতে তা হয়তো প্রদর্শন করা হবে।
শিল্পকর্মে আপনি জাতীয়তাবাদ, নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী?
শিল্পকর্মে আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিদেশে বসবাস ও বিদেশে প্রদর্শনী বেশি করলেও দেশাত্মবোধ আমার মনেপ্রাণে সব সময় কাজ করে। বিদেশ শুধু নয়, দেশেও আমি প্রদর্শনী করেছি। দর্শনার্থী ও শিল্পপিয়াসীদের সাড়াও পেয়েছি। ভবিষ্যতে নিয়মিতই দেশে প্রদর্শনী করতে চাই, দেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে কাজও করতে চাই।
এস এম সুলতানের চিত্রকলা আপনার বেশ প্রিয়। তাঁর কাজে আমাদের সাধারণ মানুষের বয়ান যেমন উঠে এসেছে, তেমনি নন্দনবোধের খোরাক হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের ব্যাখ্যা কী?
সুলতান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর মতো আপাদমস্তক সাধক শিল্পী আমাদের আর আসেনি। তিনি আমাদের গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষ, ঐতিহ্য, লোকাচার-ব্রতকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, চিত্রকর্মে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন। সুলতানের চিত্রকলা ও শিল্পদর্শন আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার ক্যানভাসে তৈলচিত্র কাজকে ‘লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস’ বলছেন। এ ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস আমার অন্যতম সিগনেচার ধারা। এ ধারায় আমিই প্রথম কাজ করেছি, বিশ্বে তা পরিচিত করেছি। এ ধারায় সাধারণত ক্যানভাস মসৃণ থাকে না, থাকে অসম ও একটু উঁচু-নিচু ক্যানভাসের পার্শ্ব। এ ধারার কাজগুলো সাধারণত বড় আকারের হয় এবং প্রতিটি পেইন্টিংয়ের এক প্রান্তে অসম আকৃতি থাকে। লেপা স্টাইলটা আমি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পেয়েছি। দক্ষিণ বাংলার মানুষেরা যেভাবে মাটির ঘর করে, তার দেয়ালে মাটির লেপা থাকে, গোবর, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে লেপা দেওয়া হয়। আমি তা থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটা তেলরঙের আস্তর দিয়ে ক্যানভাসে প্রলেপ দিই, যা আমি স্টেনসিল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করি। লে-আউট অনুযায়ী স্টেনসিল কাটতে আমি ক্যানভাসে আঠালো টেপ লাগিয়ে রাখি। সেগুলো খোসা ছাড়ার পর, মাটির দেয়ালে যেমন মাটির মিশ্রণ প্লাস্টার করা হয়, তেমনি আমি পুরু তেল রঙের স্তর প্রয়োগ করি।
যতদূর জানি চারুকলায় মেধাবী শিল্পী ও শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ তিন পর্যায়েই আপনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, পেয়েছেন খ্যাতি ও সম্মান। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কেন যোগ দেননি? কিংবা দেশে থাকেননি কেন?
নিজের মতো শিল্পকর্মচর্চা করতেই আগ্রহী ছিলাম বরাবরই। আমার প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তো অনেক দিন আগের কথা! এখন শুধু ভবিষ্যতের কথাই হোক। স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা এবং প্রদর্শনী করতে চেয়েছি। এ জন্যই পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সাধনায় নিজের পথ করে নিয়েছি। অতীত নয় শুধু ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আমার মুখ্য চিন্তা। আমেরিকায় থাকলেও প্রায় নিয়মিতই আসার চেষ্টা করি দেশে, ভবিষ্যৎতে দেশে বড় আকারের আর্ট স্টুডিও করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশে থাকলেও মনের গহিনে থাকে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে সমসাময়িক শিল্পচর্চা ও শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন।
চিত্রকলা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আগে ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ের, বর্তমানে ওই ধ্যান-ধারণা বিস্তৃত হয়েছে। চারুকলার সীমাও বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। চিত্রকলার নতুন ভাষার সন্ধান করছেন তরুণেরা। বিভিন্ন মাধ্যমেও কাজ করছেন দারুণভাবে। তরুণদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পারলেও আধুনিক শিল্পকলার ভাষা ও ব্যাপ্তি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এক দশক ধরে প্রসারিত করেছে। আমাদের চারুকলার পৃষ্ঠপোষকতা, চর্চা ও প্রদর্শনী বৃদ্ধি করেছে শুধু তারাই। দর্শনার্থী ও সমঝদারও বেড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিল্পকলা অনেক প্রসারিত হয়েছে শুধু নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলোর কারণে।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫