ইমু হাসান

দুই পাড়ের ভাঙন রোধ করতে সুয়েজ খালে জাহাজের সর্বোচ্চ গতিসীমা কমবেশি ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্যমতে, এখানে জাহাজ চলে গরুর গাড়ির গতিতে। তাই যেকালে মানুষ জাহাজে করে বিলাত যেত, তখন তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন সুয়েজ বন্দরে নেমে ট্রেনে করে কায়রো গিয়ে, সেখানে এক দিন কাটিয়ে আবার পোর্ট সৈয়দ থেকে জাহাজে ওঠার জন্য। তাঁর মতে, এই দীর্ঘ সময় জাহাজে বসে থেকে ক্লান্ত না হয়ে ঝটিকা সফরে আর কিছু না হোক, অন্তত পিরামিডটা দেখে নেওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতীয় আর ইউরোপীয় সভ্যতার বাইরে একটা নতুন সভ্যতা তো দেখা হবে! ‘গুরুবাক্য শিরোধার্য’। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ইউরোপে যাওয়ার একটা সুযোগ হয়েছিল। খুঁজতে থাকলাম চলতি পথে আর কোথায় ঢু মারা যায়, কোন বিমানে গেলে কোথায় ট্রানজিট; কেননা এ ক্ষেত্রে বাড়তি ঝঞ্ঝাট। বিশেষত, বাড়তি সময় ও বিমানভাড়ার কোনো ঝক্কি নেই। পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকল ইস্তাম্বুল। সেই একই ভাবনা, আর কিছু না হোক শেষ বিকেলের আলোয় বসফরাসের পাড়ে বসে এক বেলা হাওয়া তো খাওয়া যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ, শুরু করলাম খোঁজখবর নেওয়া। বিদেশে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবলেই আমার মাথায় প্রথম যে চিন্তাটা ঘুরপাক খেতে থাকে তা হলো, ভিসা পাব তো? খোঁজ নিয়ে জানলাম সেনজেন ভিসা থাকলে তুরস্কের অন অ্যারাইভাল ভিসা পেতে কোনো সমস্যা হয় না, তবুও বাড়তি সাবধানতা হিসেবে আর সময় বাঁচাতে অন অ্যারাইভাল ভিসার আশায় না থেকে আগেই ই-ভিসা করে নিলাম। ভিসা ফি পড়ল বাংলা টাকায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা মাত্র। হিসাব করে দেখলাম, এর বাইরে এক রাত থাকতে ২-৩ হাজার টাকা আর পেটেভাতে ঘুরতে ৩-৪ হাজার টাকা, সর্বমোট ১০-১৫ হাজার টাকায় একটা নতুন দেশ দেখা যাবে। আর যায় কই? এ তো ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার চেয়েও সস্তা! শেষ ধাপ হিসেবে ইউরোপ যাওয়ার সময় টার্কিশ এয়ারের টিকিট কাটলাম ফেরার পথে ইস্তাম্বুলে এক রাত দেড় দিনের ট্রানজিটসহ।
ইউরোপে আমার শেষ স্টপেজ ছিল রোম। একদম সকালের ফ্লাইট, ভোররাত আনুমানিক ৪টার দিকে এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করতে হবে। এদিকে রোমের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ হয়ে যায় রাত ১১টার দিকে (একটু কমবেশি হতে পারে, স্পষ্ট মনে নেই)। বিকল্প আছে ট্যাক্সি, যাতে খরচ পড়বে প্রায় ৫০ ইউরো! আমার পুরো ইস্তাম্বুল ট্রিপের বাজেটের সমান!! রোমের বন্ধুদের যাবতীয় অনুরোধ ও মায়া উপেক্ষা করে শেষ মেট্রো ধরে এয়ারপোর্টে চলে এসে একটা ট্রলিতে আমার যাবতীয় মালামাল চাপিয়ে দুই-তিনটা সিট জুড়ে ঝিমাতে ঝিমাতে হেডফোনে গান শুনছিলাম আর ব্রাউজ করে ইস্তাম্বুল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জড়ো করছিলাম। কিন্তু কোথায় হোটেল নেব বুঝতে পারছিলাম না। ইস্তাম্বুল চেনা দূরে থাক, আগে ইস্তাম্বুল গেছে এমন কাউকে চিনিও না। হঠাৎ চোখে পড়ল ইসিলের মেসেজ। তুর্কি ড্যান্স কোরিওগ্রাফার ইসিলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ব্রাসেলস যাওয়ার পথে, প্লেনে। দিন দুয়েক আগে তাকে মেসেঞ্জারে নক করে লিখেছিলাম, ‘আমি দেড় দিনের জন্য তোমার দেশে যাব বসফরাসের তীরে দাঁড়িয়ে একটু হাওয়া আর দু চুমুক কফির আশায়। কোন এলাকায় হোটেলে উঠলে আমার মনের বাসনা সহজে পূরণ হবে জানালে কৃতার্থ হই।’ এত স্বল্প পরিচয়ে মেসেজ পাঠাতে একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল। তারপরও সাত-পাঁচ ভেবে পাঠানো মেসেজের জবাব যে একদম সময়মতো পেয়ে যাব, তা কল্পনাতেও ছিল না। তার মেসেজ দেখে হালে পানি পেলাম বলে মনে হলো। চট করে মাথায় আরেকটা বুদ্ধি চলে এলো, দেড় দিনের জন্য ইস্তাম্বুল গিয়ে হোটেল খুঁজে সময় নষ্ট করার কী দরকার? অনলাইনে বুক করে নিলেই তো হয়! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আমার হাতে আর খুব বেশি সময় নেই, বোর্ডিং আর অন্যান্য বিষয় নিয়ে এখনই ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে। প্রাণসখা সেবা চৌধুরীকে ফোন করে বললাম, আমি প্লেনে উঠে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি কারাকৈ বা এর আশপাশের কোনো হোটেল বুক করে আমাকে ঠিকানাটা যেন পাঠায় (আমার যে সিম তা তুরস্কে কাজ করবে না, তাই ঠিকানাটা ফ্লাই করার আগেই জরুরি ভিত্তিতে দরকার)। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেবা জানাল, একটা হোটেল মোটামুটি পছন্দ হয়েছে কিন্তু পেমেন্টে জটিলতা হচ্ছে, তাই কনফার্ম করা যাচ্ছে না। আপাতত আমাকে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিচ্ছে আর সে ভাইয়ার (আমার বড় ভাই) সঙ্গে সমন্বয় করে তার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে রুম কনফার্ম করার চেষ্টা করছে। আমি বললাম, তবে তা-ই হোক, আগে তো যাই।
ই-ভিসা দেখিয়ে পাসপোর্টে এন্ট্রান্স সিল লাগিয়ে ইমিগ্রেশন থেকে বেরিয়ে প্রথমেই বুক ভরে একটা জোরে নিশ্বাস নিলাম, আহ ইস্তাম্বুল, আহ তুরস্ক! অটোমান, বাইজেন্টাইনের কেন্দ্রভূমি! নানান জাতি-ধর্মের মিলনমেলা! মনটা আঁকুপাঁকু করতে লাগল, কখন হোটেলে গিয়ে বাক্স-প্যাটরা রেখে ছুটে যাব বসফরাসের পাড়ে, সময় তো মাত্র দেড় দিন! কারাকৈর কোনো সরাসরি বাস না থাকায় আলি আহমেদ হামিদগামী একটা বাসে চেপে বসলাম। পথে একটা জায়গায় নেমে বাস চেঞ্জ করতে হবে, ১৮ লিরা ভাড়া। বগল বাজাতে বাজাতে বাসে চেপে বসলাম (হোটেলের পিক সার্ভিস চেয়েছিল ৫০ ইউরো!! এর কম মনে হয় তারা গুনতে পারে না)।
তুমুল স্পিডে বাস চলছে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে তুরস্ক। মাত্র দেড় দিনের সফর। আমার হাঁ করে শহর দেখার কথা কিন্তু সেদিকে আমার নজর নেই। আমার টেনশন জায়গামতো বাস থেকে নামতে পারব তো? বাসে কোনো হেলপার নেই, পথের পাশের সাইনবোর্ড বেশির ভাগই টার্কিশ ভাষায় লেখা, যা দু-একটা ইংরেজি শব্দ চোখে পড়ে, তা-ও পড়তে পড়তে হারিয়ে যায় বাসের গতির কারণে। একটু পর পর উঠে গিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করি, আমার স্টপেজ কখন আসবে? ড্রাইভার বিরক্ত হয়ে বলে, সিটে বসে সিটবেল্ট বাঁধো। আমি ভাঙা ভাঙা ইংরেজি আর করুণ ইশারায় ড্রাইভারকে বোঝাতে চাইলাম, ভাই, আমার দেশে বাসে সিটবেল্টের বালাই নেই, উপরন্তু হ্যান্ডেলের সঙ্গে ঝোলানো বেল্টে ঝুলে ঝুলে আমরা মাইলের পর মাইল পাড়ি দিই, আমার পড়ে যাওয়ার ভয় নেই, আছে হারিয়ে যাওয়ার ভয়। তুমি আমাকে তোমার পাশের হেলপারের সিটে বসতে দাও আর জায়গামতো নামিয়ে দাও। কে শোনে কার কথা! তার গরম চক্ষু সইতে না পেরে সিটে গিয়ে বেল্ট বেঁধে টুকটাক আশপাশের যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা সবাই আলি আহমেদ নামবে। উসখুস করতে করতে অবশেষে নির্দিষ্ট স্টপেজে নামলাম (নামটা ভুলে গেছি)। এ যেন ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে এসে পড়লাম। কোথায় পাই বদলি বাস, কোনদিকেই বা যাই? একটু ধাতস্থ হয়ে দুয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, কারাকৈ এখান থেকে কমবেশি এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে, মেট্রোর একটা স্টপেজ সামনে। হেঁটে গেলে সামনে যে দুটি ব্রিজ দেখা যাচ্ছে তার দ্বিতীয়টা পেরোলেই পৌঁছে যাব। যখন শুনলাম ব্রিজগুলো বসফরাসের বুকে, আমার আর মেট্রোতে উঠতে ইচ্ছে করল না। আমার ধারণা ছিল, শহর থেকে বাসে করে বসফরাসে যেতে হবে (আমার দৌড় তো সাগর/সমুদ্র মানে বঙ্গোপসাগর), কিন্তু এভাবে যে সাগরের বুকজুড়ে শহর গড়ে উঠেছে বা শহরের অলিগলির মতো যে সাগর থাকতে পারে, তা আমার কল্পনারও অনেক বাইরে ছিল। ভাবলাম, ঘুরতেই যখন এসেছি, বসফরাসের বাতাস খেতে খেতে হেঁটে হেঁটে চলে যাই। কাঁধে ব্যাগ আর হাতে ট্রলি টেনে শুরু করলাম হাঁটা। কিছু পথচারীর পিছু পিছু একটা জেব্রা ক্রসিং খুঁজে নিয়ে পথ রাস্তা পেরিয়ে ব্রিজের কাছাকাছি আসতেই নাকে একটা আঁশটে গন্ধ এসে ধাক্কা দিল। মনে হলো আরেকটু এগিয়ে গেলেই কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তটা পেয়ে যাব। ভাবতে ভাবতে ব্রিজে উঠে চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার দশা। সারি সারি লোক ব্রিজে দাঁড়িয়ে সাগরের বাতাস খেতে খেতে সাগরে ছিপ ফেলে টপাটপ মাছ তুলছে। পানির দেশের লোক আমি, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা আমার অতিপরিচিত দৃশ্য। কিন্তু সাগরের ওপরে ব্রিজে দাঁড়িয়ে এক-দেড় শ ফুট নিচে ছিপ ফেলে মাছ ধরা আমার কল্পনাকেও হার মানায়। কেউ যদি প্রশ্ন করে উচ্চতা মেপেছি কি না, তাহলেই আমি ধরা। তবে ব্রিজের নিচ দিয়ে যে বহুতল জাহাজগুলো যাচ্ছিল, সেগুলো এত নিচ দিয়ে যাচ্ছিল, তা দেখে মনে মনে ভেবে নিলাম উচ্চতা এক-দেড় শ ফুট তো হবেই হবে। মনে পড়ে গেল সেই মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথা, যাদের হাতে এখানে মানব বসতির সূত্রপাত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে (ইন্টারনেট থেকে পাওয়া জ্ঞান)।
বসফরাসের বাতাস খেতে খেতে ব্রিজ পার হয়ে মনে হলো এইবার কোন দিকে? চারদিকে ব্যস্ত মানুষের ভিড়, তা ছাড়া কে যে ভালো আর কে যে বাটপার, তা-ও তো বোঝার উপায় নেই। সাধারণত মধ্যবয়স্ক মানুষ, যারা ফ্যামিলি নিয়ে বের হয়েছে, তারা নিরাপদ হয় কিন্তু এমন কাউকে আশপাশে দেখা যাচ্ছে না। অবশেষে দুই তরুণকে দেখে মনে হলো জিজ্ঞাসা করা যায়। আমার বাড়ানো ঠিকানা দেখে তারা নিজেদের মাঝে কিছুক্ষণ আলাপ করে অবশেষে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পেরে পকেট থেকে মোবাইল বের করল। তারপর হাসিমুখে বলল, আমি হোটেলের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। সামনে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হাতের বাঁ দিকে। খুশিমনে তাদের দেখানো পথে যাচ্ছি তো যাচ্ছি কিন্তু হোটেল আর পাই না। আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, সাড়া নেই। আরও একজনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে এগোচ্ছি, হোটেল তো পাই না! বাঁ পাশের রাস্তাগুলো ঢাল বেয়ে উঁচু উঁচু পাহাড়ে উঠে গেছে! মনে মনে প্রমাদ গুনছি, এই বাক্স-প্যাটরা টেনে না আবার ওই পাহাড়ে উঠতে হয়। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে একজন বলল, এই বাঁ পাশের রাস্তা ধরে সেজা ওপরে উঠে যাও, পেলেও পেতে পারো। খাড়া হয়ে ওপরে উঠে গেছে রাস্তা। অগত্যা মধুসূদন! বাক্স-প্যাটরা টেনে ওপরে উঠে শুনি, এই পথে না, আমার হোটেল সামনের ঢালে। পরের ঢালে উঠে শুনি, এই ঢালেও না, সামনের ঢালে হতে পারে! নেমে এলাম। টার্কিশ সিম নেওয়া হয়নি, তাই গুগল ম্যাপও কাজ করছে না! পথের আশপাশে অনেক হোটেল আছে কিন্তু নেহাত অনলাইনে হোটেল বুক করে পেমেন্ট করা আছে তাই টাকার মায়ায় ঘুরতে ঘুরতে খুঁজতে লাগলাম, পথচারীদের জিজ্ঞাসা করে করে এগোতে লাগলাম। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমি কী বলি তারা বোঝে না, আমিও তাদের উচ্চারণ ধরতে পারি না। ঘুরপাক খেতে খেতে মনে হলো পথচারীদের জিজ্ঞাসা না করে রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে জিজ্ঞাসা করা ভালো। প্রথম যে দোকানটা পেলাম তাতে জিজ্ঞাসা করতেই দোকানি বেশ গম্ভীরভাবে বলল—সামনে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কত সামনে? এক রাস্তা, নাকি ডান-বাম আছে? আরও গম্ভীর হয়ে সে হাত তুলে আমার প্রশ্নবাণ থামিয়ে বলল, প্রথম উত্তরটা কমপ্লিমেন্টারি ছিল। এখন থেকে প্রতি প্রশ্নের জন্য চার্জ ৫ লিরা। একটু হোঁচট খেয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, অনেক কষ্টে গম্ভীর করে রাখা মুখের ওপরে হাসি হাসি চোখ! সাথে সাথেই আমার অবচেতন মন আমাকে সিগন্যাল দিল, এই লোকের ওপর ভরসা করা যায়। তার হাত ধরে যা বললাম, বাংলায় এর মানে দাঁড়ায়, ‘ভাই মারলেও তুমি, রাখলেও তুমি, আমি দেড় দিনের জন্য তোমার দেশে এসে দেড় ঘণ্টা ধরে হোটেল খুঁজছি।’ ওই ভদ্রলোক তারপর আমাকে ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিলেন, আর আমি তিন মিনিটের মধ্যে হোটেল পেয়ে গেলাম। ছিমছাম ছোট এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হোটেল, ঢুকতেই রিসিপশনে বসা তরুণী হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। নাম বলে আমার রুমের কথা বলতেই তারা জানাল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেমেন্ট সম্পন্ন না হওয়ায় আমার বুকিং বাতিল হয়ে গেছে, তবে আমার কপাল ভালো যে তাদের একটা রুম এখনো খালি আছে, আমি চাইলে সেটা নিতে পারি। হোটেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেটে কানেক্ট হতেই দেখি সেবার বেশ কিছু মেসেজ, কার্ডে ঝামেলার কারণে পেমেন্ট করা যায়নি। রিসিপশনিস্টের কোনো কথাই আর কানে ঢুকছিল না। স্ক্রিনের লেখাগুলো ঝাপসা হয়ে আসতে লাগল, চোখে ভাসতে লাগল টাকার মায়ায় দেড়/দুই ঘণ্টা ধরে বাক্স-প্যাটরা টেনে টেনে পেরোনো পথ—পাহাড়ের ঢাল আর পথের দুই পাশের হোটেলের সারি।
জিনিসপত্র রুমবন্দী করে একটা জম্পেশ শাওয়ার দিয়েই ছুট লাগালাম নিচে। হোটেলের রিসিপশনিস্টের দেওয়া ম্যাপ আর বর্ণনা ভরসা করে ৫ মিনিটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম বসফরাসের জেটিতে। ২০ লিরা দিয়ে ট্যুরিস্ট লঞ্চের টিকেট কেটে জেটিতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। হাতে ঘণ্টা দেড়েক সময় আছে, চাইলে এদিক-সেদিক ঘুরে আসা যেত কিন্তু পথ হারানোর ভয়ে কোথাও না গিয়ে জেটিতে বসেই মানুষ দেখতে লাগলাম। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, দিনের কাজ শেষে বাড়ি ফেরা লোকের ভিড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্ট্রিটফুড বিক্রেতাদের আনাগোনা। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে আমাদের কত রকম ফর্মালিটি পোহাতে হয়, আর এখানে দিনের কাজ শেষে ভিসা- পাসপোর্ট ছাড়াই দলে দলে লোকে ইউরোপ থেকে এশিয়ার দিকে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ এশিয়া থেকে ইউরোপে ফিরছে! একটা শহর দুটি মহাদেশ! ইস্তাম্বুল সম্ভবত গ্লোবাল ম্যাপের একমাত্র শহর, যার একটা পাশ পড়েছে এশিয়ায়, আরেকটা ইউরোপে।
দিনের আলো কমে আসার সাথে সাথে বাড়তে লাগল শীতের প্রকোপ। যেখানে দিনের বেলায় আমি ক্রমাগত ঘামছিলাম, সেখানে সন্ধ্যা হওয়ার পর আমি পর্যাপ্ত শীতের কাপড়, টুপি, দস্তানা এগুলো পরেও কাঁপতে লাগলাম। কনকনে শীতের মধ্যেও আমি বাইরে বেরিয়ে ডকে দাঁড়ালাম। সাধের বসফরাস বলে কথা! এক কাপ ধূমায়িত কফি হাতে বন্ধু-স্বজনদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিতে না পারার আফসোস বুকে চেপে শিপের রেলিং ধরে দুচোখ ভরে উপভোগ করতে লাগলাম বসফরাস। পাশে বেশ কয়েকটা গ্রুপ হুল্লোড় করছে আর আমার বুকের ভেতর দগদগে ঘায়ের সৃষ্টি হচ্ছে। তার ওপর নুনের ছিটার মতো দু-একটি গ্রুপ আবার আমাকে দিয়ে তাদের গ্রুপ ছবিও তুলিয়ে নিল। ছবি তোলার ফাঁকে তাদের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবার বসফরাসেই মগ্ন হলাম। লঞ্চ চলছে, দুই ধারে নানা রঙের আলোয় ঝলমল করছে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আর বর্তমান স্থাপত্যগুলো। একেকটা করে বিশেষ স্থাপনা পার হচ্ছে আর মাইকে কয়েকটি ভাষায় তার বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ সেদিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে দেখি, এটা ফলো করতে গেলে দেখা হয় না, আবার দেখতে গেলে ধারাবিবরণী খেয়াল করা হয় না।
আমি নামধাম বোঝার চেয়ে চারদিকের রূপ উপভোগ করতে লাগলাম আর কল্পনার ঘোড়াকে ছুটিয়ে দিলাম সময়ের উলটোরথে। এই তো বসফরাস, বাইজেন্টাইন-অটোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম রক্ষক ও ভৌগোলিক গুরুত্বের চিহ্ন-চাবিকাঠি। আমি ভাসতে ভাসতে চলে গেলাম ইস্তাম্বুল থেকে কনস্টান্টিনোপল, অটোমান থেকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে। সেখানে দেখা হলো কত কত সম্রাট আর সুলতান, জেনোইস (বাইজেন্টাইনদের বিশেষ বাহিনী), জানিসারিসের (অটোমানদের বিশেষ বাহিনী) সাথে; ওই তো গোল্ডেন হর্ন, এখানেই তো আলাদা হয়েছে কৃষ্ণসাগর থেকে মারমারা সাগর। এই গোল্ডেন হর্নেই ছিল বাইজেন্টাইনদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যূহ, যার কারণে শত্রুরা স্থলপথে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রধান শহর কনস্টান্টিনোপল (ইস্তাম্বুল) অবরোধ করে থাকলেও সহজেই তারা বসফরাস দিয়ে রসদ সংগ্রহ করতে পারত। ফলে কোনো অবরোধই সহজে তাদের কাবু করতে পারত না। অটোমান সুলতান মাহমুদ বিষয়টা বিশ্লেষণ করে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন স্থল ও জল উভয় পথে একসঙ্গে অবরোধ করার জন্য। কিন্তু তার মাঝারি পাল্লার কামানসমেত নৌবাহিনী গোল্ডেন হর্নের প্রতিরক্ষা ব্যূহের ভারী কামানগুলোর সামনে টিকতেই পারছিল না। অবরোধের ব্যপ্তি বাড়ছিল কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। তখন তারা এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করল। পোতাশ্রয়ের পেছনের পাহাড়গুলোর বুকে রাতের আঁধারে রাস্তা তৈরি করে তাতে গাছ-তেল চর্বি দিয়ে পিচ্ছিল করে সন্তর্পণে সাগর থেকে জাহাজগুলো সে পিচ্ছিল রাস্তা দিয়ে টেনে পাহাড় ডিঙিয়ে পোতাশ্রয়ে নিয়ে আসে। সকালে দেখা যায় এখন আমি যেখানে লঞ্চে ঘুরছি, গোল্ডেন হর্ন আর কনস্টান্টিনোপলের মধ্যবর্তী সেই বসফরাস পোতাশ্রয়ে বীরদর্পে ভাসছে ৭০টা অটোমান যুদ্ধজাহাজ। তারপর অটোমানদের কনস্টান্টিনোপল দখল করে তাকে ইস্তাম্বুল বানানো ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। এভাবেই এখানে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ইতি টেনে সূত্রপাত হয়েছিল অটোমানদের আমল। কল্পনায় ভাসতে ভাসতে আচমকা একটা ঝাঁকি লেগে বাস্তবে ফিরে এলাম। আমাদের জাহাজ গোল্ডেন হর্ন চক্কর দিয়ে জেটিতে এসে ভিড়েছে, এ তারই ঝাঁকুনি।
জাহাজ থেকে নামতে না নামতেই হঠাৎ রণবাদ্য শুরু হয়ে গেল। কোথা থেকে হঠাৎ এক কিশোর এসে ছোট এক ঢাকের মতো বাদ্যযন্ত্র তুমুল তালে বাজাতে শুরু করেছে। আধুনিককালে আমরা যে ব্যান্ড মিউজিক শুনি, তার সূচনার অন্যতম সূতিকাগার কিন্তু অটোমানদের রণসংগীত। সব ট্যুরিস্টের সাথে দাঁড়িয়ে সে কথা মনে মনে জাবর কাটতে কাটতে অজানা সে কিশোরের অপূর্ব বাজনা উপভোগ করতে লাগলাম। মনে মনে একটা ভাবও চলে এল, আগের দিনে সুলতানরা যুদ্ধ জয় করে ফিরে এলে যেমন ঢাকঢোল-বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে আওয়াজ দিত, অনেকটা ওই রকম ভাব নিয়েই সেই তালে তালে সম্পন্ন করে ফেললাম আমার বসফরাসের তীরে দাঁড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে হাওয়া খাওয়ার খায়েশ।

দুই পাড়ের ভাঙন রোধ করতে সুয়েজ খালে জাহাজের সর্বোচ্চ গতিসীমা কমবেশি ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্যমতে, এখানে জাহাজ চলে গরুর গাড়ির গতিতে। তাই যেকালে মানুষ জাহাজে করে বিলাত যেত, তখন তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন সুয়েজ বন্দরে নেমে ট্রেনে করে কায়রো গিয়ে, সেখানে এক দিন কাটিয়ে আবার পোর্ট সৈয়দ থেকে জাহাজে ওঠার জন্য। তাঁর মতে, এই দীর্ঘ সময় জাহাজে বসে থেকে ক্লান্ত না হয়ে ঝটিকা সফরে আর কিছু না হোক, অন্তত পিরামিডটা দেখে নেওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতীয় আর ইউরোপীয় সভ্যতার বাইরে একটা নতুন সভ্যতা তো দেখা হবে! ‘গুরুবাক্য শিরোধার্য’। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ইউরোপে যাওয়ার একটা সুযোগ হয়েছিল। খুঁজতে থাকলাম চলতি পথে আর কোথায় ঢু মারা যায়, কোন বিমানে গেলে কোথায় ট্রানজিট; কেননা এ ক্ষেত্রে বাড়তি ঝঞ্ঝাট। বিশেষত, বাড়তি সময় ও বিমানভাড়ার কোনো ঝক্কি নেই। পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকল ইস্তাম্বুল। সেই একই ভাবনা, আর কিছু না হোক শেষ বিকেলের আলোয় বসফরাসের পাড়ে বসে এক বেলা হাওয়া তো খাওয়া যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ, শুরু করলাম খোঁজখবর নেওয়া। বিদেশে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবলেই আমার মাথায় প্রথম যে চিন্তাটা ঘুরপাক খেতে থাকে তা হলো, ভিসা পাব তো? খোঁজ নিয়ে জানলাম সেনজেন ভিসা থাকলে তুরস্কের অন অ্যারাইভাল ভিসা পেতে কোনো সমস্যা হয় না, তবুও বাড়তি সাবধানতা হিসেবে আর সময় বাঁচাতে অন অ্যারাইভাল ভিসার আশায় না থেকে আগেই ই-ভিসা করে নিলাম। ভিসা ফি পড়ল বাংলা টাকায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা মাত্র। হিসাব করে দেখলাম, এর বাইরে এক রাত থাকতে ২-৩ হাজার টাকা আর পেটেভাতে ঘুরতে ৩-৪ হাজার টাকা, সর্বমোট ১০-১৫ হাজার টাকায় একটা নতুন দেশ দেখা যাবে। আর যায় কই? এ তো ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার চেয়েও সস্তা! শেষ ধাপ হিসেবে ইউরোপ যাওয়ার সময় টার্কিশ এয়ারের টিকিট কাটলাম ফেরার পথে ইস্তাম্বুলে এক রাত দেড় দিনের ট্রানজিটসহ।
ইউরোপে আমার শেষ স্টপেজ ছিল রোম। একদম সকালের ফ্লাইট, ভোররাত আনুমানিক ৪টার দিকে এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করতে হবে। এদিকে রোমের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ হয়ে যায় রাত ১১টার দিকে (একটু কমবেশি হতে পারে, স্পষ্ট মনে নেই)। বিকল্প আছে ট্যাক্সি, যাতে খরচ পড়বে প্রায় ৫০ ইউরো! আমার পুরো ইস্তাম্বুল ট্রিপের বাজেটের সমান!! রোমের বন্ধুদের যাবতীয় অনুরোধ ও মায়া উপেক্ষা করে শেষ মেট্রো ধরে এয়ারপোর্টে চলে এসে একটা ট্রলিতে আমার যাবতীয় মালামাল চাপিয়ে দুই-তিনটা সিট জুড়ে ঝিমাতে ঝিমাতে হেডফোনে গান শুনছিলাম আর ব্রাউজ করে ইস্তাম্বুল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জড়ো করছিলাম। কিন্তু কোথায় হোটেল নেব বুঝতে পারছিলাম না। ইস্তাম্বুল চেনা দূরে থাক, আগে ইস্তাম্বুল গেছে এমন কাউকে চিনিও না। হঠাৎ চোখে পড়ল ইসিলের মেসেজ। তুর্কি ড্যান্স কোরিওগ্রাফার ইসিলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ব্রাসেলস যাওয়ার পথে, প্লেনে। দিন দুয়েক আগে তাকে মেসেঞ্জারে নক করে লিখেছিলাম, ‘আমি দেড় দিনের জন্য তোমার দেশে যাব বসফরাসের তীরে দাঁড়িয়ে একটু হাওয়া আর দু চুমুক কফির আশায়। কোন এলাকায় হোটেলে উঠলে আমার মনের বাসনা সহজে পূরণ হবে জানালে কৃতার্থ হই।’ এত স্বল্প পরিচয়ে মেসেজ পাঠাতে একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল। তারপরও সাত-পাঁচ ভেবে পাঠানো মেসেজের জবাব যে একদম সময়মতো পেয়ে যাব, তা কল্পনাতেও ছিল না। তার মেসেজ দেখে হালে পানি পেলাম বলে মনে হলো। চট করে মাথায় আরেকটা বুদ্ধি চলে এলো, দেড় দিনের জন্য ইস্তাম্বুল গিয়ে হোটেল খুঁজে সময় নষ্ট করার কী দরকার? অনলাইনে বুক করে নিলেই তো হয়! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আমার হাতে আর খুব বেশি সময় নেই, বোর্ডিং আর অন্যান্য বিষয় নিয়ে এখনই ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে। প্রাণসখা সেবা চৌধুরীকে ফোন করে বললাম, আমি প্লেনে উঠে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি কারাকৈ বা এর আশপাশের কোনো হোটেল বুক করে আমাকে ঠিকানাটা যেন পাঠায় (আমার যে সিম তা তুরস্কে কাজ করবে না, তাই ঠিকানাটা ফ্লাই করার আগেই জরুরি ভিত্তিতে দরকার)। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেবা জানাল, একটা হোটেল মোটামুটি পছন্দ হয়েছে কিন্তু পেমেন্টে জটিলতা হচ্ছে, তাই কনফার্ম করা যাচ্ছে না। আপাতত আমাকে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিচ্ছে আর সে ভাইয়ার (আমার বড় ভাই) সঙ্গে সমন্বয় করে তার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে রুম কনফার্ম করার চেষ্টা করছে। আমি বললাম, তবে তা-ই হোক, আগে তো যাই।
ই-ভিসা দেখিয়ে পাসপোর্টে এন্ট্রান্স সিল লাগিয়ে ইমিগ্রেশন থেকে বেরিয়ে প্রথমেই বুক ভরে একটা জোরে নিশ্বাস নিলাম, আহ ইস্তাম্বুল, আহ তুরস্ক! অটোমান, বাইজেন্টাইনের কেন্দ্রভূমি! নানান জাতি-ধর্মের মিলনমেলা! মনটা আঁকুপাঁকু করতে লাগল, কখন হোটেলে গিয়ে বাক্স-প্যাটরা রেখে ছুটে যাব বসফরাসের পাড়ে, সময় তো মাত্র দেড় দিন! কারাকৈর কোনো সরাসরি বাস না থাকায় আলি আহমেদ হামিদগামী একটা বাসে চেপে বসলাম। পথে একটা জায়গায় নেমে বাস চেঞ্জ করতে হবে, ১৮ লিরা ভাড়া। বগল বাজাতে বাজাতে বাসে চেপে বসলাম (হোটেলের পিক সার্ভিস চেয়েছিল ৫০ ইউরো!! এর কম মনে হয় তারা গুনতে পারে না)।
তুমুল স্পিডে বাস চলছে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে তুরস্ক। মাত্র দেড় দিনের সফর। আমার হাঁ করে শহর দেখার কথা কিন্তু সেদিকে আমার নজর নেই। আমার টেনশন জায়গামতো বাস থেকে নামতে পারব তো? বাসে কোনো হেলপার নেই, পথের পাশের সাইনবোর্ড বেশির ভাগই টার্কিশ ভাষায় লেখা, যা দু-একটা ইংরেজি শব্দ চোখে পড়ে, তা-ও পড়তে পড়তে হারিয়ে যায় বাসের গতির কারণে। একটু পর পর উঠে গিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করি, আমার স্টপেজ কখন আসবে? ড্রাইভার বিরক্ত হয়ে বলে, সিটে বসে সিটবেল্ট বাঁধো। আমি ভাঙা ভাঙা ইংরেজি আর করুণ ইশারায় ড্রাইভারকে বোঝাতে চাইলাম, ভাই, আমার দেশে বাসে সিটবেল্টের বালাই নেই, উপরন্তু হ্যান্ডেলের সঙ্গে ঝোলানো বেল্টে ঝুলে ঝুলে আমরা মাইলের পর মাইল পাড়ি দিই, আমার পড়ে যাওয়ার ভয় নেই, আছে হারিয়ে যাওয়ার ভয়। তুমি আমাকে তোমার পাশের হেলপারের সিটে বসতে দাও আর জায়গামতো নামিয়ে দাও। কে শোনে কার কথা! তার গরম চক্ষু সইতে না পেরে সিটে গিয়ে বেল্ট বেঁধে টুকটাক আশপাশের যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা সবাই আলি আহমেদ নামবে। উসখুস করতে করতে অবশেষে নির্দিষ্ট স্টপেজে নামলাম (নামটা ভুলে গেছি)। এ যেন ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে এসে পড়লাম। কোথায় পাই বদলি বাস, কোনদিকেই বা যাই? একটু ধাতস্থ হয়ে দুয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, কারাকৈ এখান থেকে কমবেশি এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে, মেট্রোর একটা স্টপেজ সামনে। হেঁটে গেলে সামনে যে দুটি ব্রিজ দেখা যাচ্ছে তার দ্বিতীয়টা পেরোলেই পৌঁছে যাব। যখন শুনলাম ব্রিজগুলো বসফরাসের বুকে, আমার আর মেট্রোতে উঠতে ইচ্ছে করল না। আমার ধারণা ছিল, শহর থেকে বাসে করে বসফরাসে যেতে হবে (আমার দৌড় তো সাগর/সমুদ্র মানে বঙ্গোপসাগর), কিন্তু এভাবে যে সাগরের বুকজুড়ে শহর গড়ে উঠেছে বা শহরের অলিগলির মতো যে সাগর থাকতে পারে, তা আমার কল্পনারও অনেক বাইরে ছিল। ভাবলাম, ঘুরতেই যখন এসেছি, বসফরাসের বাতাস খেতে খেতে হেঁটে হেঁটে চলে যাই। কাঁধে ব্যাগ আর হাতে ট্রলি টেনে শুরু করলাম হাঁটা। কিছু পথচারীর পিছু পিছু একটা জেব্রা ক্রসিং খুঁজে নিয়ে পথ রাস্তা পেরিয়ে ব্রিজের কাছাকাছি আসতেই নাকে একটা আঁশটে গন্ধ এসে ধাক্কা দিল। মনে হলো আরেকটু এগিয়ে গেলেই কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তটা পেয়ে যাব। ভাবতে ভাবতে ব্রিজে উঠে চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার দশা। সারি সারি লোক ব্রিজে দাঁড়িয়ে সাগরের বাতাস খেতে খেতে সাগরে ছিপ ফেলে টপাটপ মাছ তুলছে। পানির দেশের লোক আমি, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা আমার অতিপরিচিত দৃশ্য। কিন্তু সাগরের ওপরে ব্রিজে দাঁড়িয়ে এক-দেড় শ ফুট নিচে ছিপ ফেলে মাছ ধরা আমার কল্পনাকেও হার মানায়। কেউ যদি প্রশ্ন করে উচ্চতা মেপেছি কি না, তাহলেই আমি ধরা। তবে ব্রিজের নিচ দিয়ে যে বহুতল জাহাজগুলো যাচ্ছিল, সেগুলো এত নিচ দিয়ে যাচ্ছিল, তা দেখে মনে মনে ভেবে নিলাম উচ্চতা এক-দেড় শ ফুট তো হবেই হবে। মনে পড়ে গেল সেই মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথা, যাদের হাতে এখানে মানব বসতির সূত্রপাত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে (ইন্টারনেট থেকে পাওয়া জ্ঞান)।
বসফরাসের বাতাস খেতে খেতে ব্রিজ পার হয়ে মনে হলো এইবার কোন দিকে? চারদিকে ব্যস্ত মানুষের ভিড়, তা ছাড়া কে যে ভালো আর কে যে বাটপার, তা-ও তো বোঝার উপায় নেই। সাধারণত মধ্যবয়স্ক মানুষ, যারা ফ্যামিলি নিয়ে বের হয়েছে, তারা নিরাপদ হয় কিন্তু এমন কাউকে আশপাশে দেখা যাচ্ছে না। অবশেষে দুই তরুণকে দেখে মনে হলো জিজ্ঞাসা করা যায়। আমার বাড়ানো ঠিকানা দেখে তারা নিজেদের মাঝে কিছুক্ষণ আলাপ করে অবশেষে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পেরে পকেট থেকে মোবাইল বের করল। তারপর হাসিমুখে বলল, আমি হোটেলের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। সামনে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হাতের বাঁ দিকে। খুশিমনে তাদের দেখানো পথে যাচ্ছি তো যাচ্ছি কিন্তু হোটেল আর পাই না। আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, সাড়া নেই। আরও একজনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে এগোচ্ছি, হোটেল তো পাই না! বাঁ পাশের রাস্তাগুলো ঢাল বেয়ে উঁচু উঁচু পাহাড়ে উঠে গেছে! মনে মনে প্রমাদ গুনছি, এই বাক্স-প্যাটরা টেনে না আবার ওই পাহাড়ে উঠতে হয়। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে একজন বলল, এই বাঁ পাশের রাস্তা ধরে সেজা ওপরে উঠে যাও, পেলেও পেতে পারো। খাড়া হয়ে ওপরে উঠে গেছে রাস্তা। অগত্যা মধুসূদন! বাক্স-প্যাটরা টেনে ওপরে উঠে শুনি, এই পথে না, আমার হোটেল সামনের ঢালে। পরের ঢালে উঠে শুনি, এই ঢালেও না, সামনের ঢালে হতে পারে! নেমে এলাম। টার্কিশ সিম নেওয়া হয়নি, তাই গুগল ম্যাপও কাজ করছে না! পথের আশপাশে অনেক হোটেল আছে কিন্তু নেহাত অনলাইনে হোটেল বুক করে পেমেন্ট করা আছে তাই টাকার মায়ায় ঘুরতে ঘুরতে খুঁজতে লাগলাম, পথচারীদের জিজ্ঞাসা করে করে এগোতে লাগলাম। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমি কী বলি তারা বোঝে না, আমিও তাদের উচ্চারণ ধরতে পারি না। ঘুরপাক খেতে খেতে মনে হলো পথচারীদের জিজ্ঞাসা না করে রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে জিজ্ঞাসা করা ভালো। প্রথম যে দোকানটা পেলাম তাতে জিজ্ঞাসা করতেই দোকানি বেশ গম্ভীরভাবে বলল—সামনে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কত সামনে? এক রাস্তা, নাকি ডান-বাম আছে? আরও গম্ভীর হয়ে সে হাত তুলে আমার প্রশ্নবাণ থামিয়ে বলল, প্রথম উত্তরটা কমপ্লিমেন্টারি ছিল। এখন থেকে প্রতি প্রশ্নের জন্য চার্জ ৫ লিরা। একটু হোঁচট খেয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, অনেক কষ্টে গম্ভীর করে রাখা মুখের ওপরে হাসি হাসি চোখ! সাথে সাথেই আমার অবচেতন মন আমাকে সিগন্যাল দিল, এই লোকের ওপর ভরসা করা যায়। তার হাত ধরে যা বললাম, বাংলায় এর মানে দাঁড়ায়, ‘ভাই মারলেও তুমি, রাখলেও তুমি, আমি দেড় দিনের জন্য তোমার দেশে এসে দেড় ঘণ্টা ধরে হোটেল খুঁজছি।’ ওই ভদ্রলোক তারপর আমাকে ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিলেন, আর আমি তিন মিনিটের মধ্যে হোটেল পেয়ে গেলাম। ছিমছাম ছোট এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হোটেল, ঢুকতেই রিসিপশনে বসা তরুণী হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। নাম বলে আমার রুমের কথা বলতেই তারা জানাল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেমেন্ট সম্পন্ন না হওয়ায় আমার বুকিং বাতিল হয়ে গেছে, তবে আমার কপাল ভালো যে তাদের একটা রুম এখনো খালি আছে, আমি চাইলে সেটা নিতে পারি। হোটেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেটে কানেক্ট হতেই দেখি সেবার বেশ কিছু মেসেজ, কার্ডে ঝামেলার কারণে পেমেন্ট করা যায়নি। রিসিপশনিস্টের কোনো কথাই আর কানে ঢুকছিল না। স্ক্রিনের লেখাগুলো ঝাপসা হয়ে আসতে লাগল, চোখে ভাসতে লাগল টাকার মায়ায় দেড়/দুই ঘণ্টা ধরে বাক্স-প্যাটরা টেনে টেনে পেরোনো পথ—পাহাড়ের ঢাল আর পথের দুই পাশের হোটেলের সারি।
জিনিসপত্র রুমবন্দী করে একটা জম্পেশ শাওয়ার দিয়েই ছুট লাগালাম নিচে। হোটেলের রিসিপশনিস্টের দেওয়া ম্যাপ আর বর্ণনা ভরসা করে ৫ মিনিটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম বসফরাসের জেটিতে। ২০ লিরা দিয়ে ট্যুরিস্ট লঞ্চের টিকেট কেটে জেটিতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। হাতে ঘণ্টা দেড়েক সময় আছে, চাইলে এদিক-সেদিক ঘুরে আসা যেত কিন্তু পথ হারানোর ভয়ে কোথাও না গিয়ে জেটিতে বসেই মানুষ দেখতে লাগলাম। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, দিনের কাজ শেষে বাড়ি ফেরা লোকের ভিড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্ট্রিটফুড বিক্রেতাদের আনাগোনা। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে আমাদের কত রকম ফর্মালিটি পোহাতে হয়, আর এখানে দিনের কাজ শেষে ভিসা- পাসপোর্ট ছাড়াই দলে দলে লোকে ইউরোপ থেকে এশিয়ার দিকে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ এশিয়া থেকে ইউরোপে ফিরছে! একটা শহর দুটি মহাদেশ! ইস্তাম্বুল সম্ভবত গ্লোবাল ম্যাপের একমাত্র শহর, যার একটা পাশ পড়েছে এশিয়ায়, আরেকটা ইউরোপে।
দিনের আলো কমে আসার সাথে সাথে বাড়তে লাগল শীতের প্রকোপ। যেখানে দিনের বেলায় আমি ক্রমাগত ঘামছিলাম, সেখানে সন্ধ্যা হওয়ার পর আমি পর্যাপ্ত শীতের কাপড়, টুপি, দস্তানা এগুলো পরেও কাঁপতে লাগলাম। কনকনে শীতের মধ্যেও আমি বাইরে বেরিয়ে ডকে দাঁড়ালাম। সাধের বসফরাস বলে কথা! এক কাপ ধূমায়িত কফি হাতে বন্ধু-স্বজনদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিতে না পারার আফসোস বুকে চেপে শিপের রেলিং ধরে দুচোখ ভরে উপভোগ করতে লাগলাম বসফরাস। পাশে বেশ কয়েকটা গ্রুপ হুল্লোড় করছে আর আমার বুকের ভেতর দগদগে ঘায়ের সৃষ্টি হচ্ছে। তার ওপর নুনের ছিটার মতো দু-একটি গ্রুপ আবার আমাকে দিয়ে তাদের গ্রুপ ছবিও তুলিয়ে নিল। ছবি তোলার ফাঁকে তাদের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবার বসফরাসেই মগ্ন হলাম। লঞ্চ চলছে, দুই ধারে নানা রঙের আলোয় ঝলমল করছে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আর বর্তমান স্থাপত্যগুলো। একেকটা করে বিশেষ স্থাপনা পার হচ্ছে আর মাইকে কয়েকটি ভাষায় তার বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ সেদিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে দেখি, এটা ফলো করতে গেলে দেখা হয় না, আবার দেখতে গেলে ধারাবিবরণী খেয়াল করা হয় না।
আমি নামধাম বোঝার চেয়ে চারদিকের রূপ উপভোগ করতে লাগলাম আর কল্পনার ঘোড়াকে ছুটিয়ে দিলাম সময়ের উলটোরথে। এই তো বসফরাস, বাইজেন্টাইন-অটোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম রক্ষক ও ভৌগোলিক গুরুত্বের চিহ্ন-চাবিকাঠি। আমি ভাসতে ভাসতে চলে গেলাম ইস্তাম্বুল থেকে কনস্টান্টিনোপল, অটোমান থেকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে। সেখানে দেখা হলো কত কত সম্রাট আর সুলতান, জেনোইস (বাইজেন্টাইনদের বিশেষ বাহিনী), জানিসারিসের (অটোমানদের বিশেষ বাহিনী) সাথে; ওই তো গোল্ডেন হর্ন, এখানেই তো আলাদা হয়েছে কৃষ্ণসাগর থেকে মারমারা সাগর। এই গোল্ডেন হর্নেই ছিল বাইজেন্টাইনদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যূহ, যার কারণে শত্রুরা স্থলপথে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রধান শহর কনস্টান্টিনোপল (ইস্তাম্বুল) অবরোধ করে থাকলেও সহজেই তারা বসফরাস দিয়ে রসদ সংগ্রহ করতে পারত। ফলে কোনো অবরোধই সহজে তাদের কাবু করতে পারত না। অটোমান সুলতান মাহমুদ বিষয়টা বিশ্লেষণ করে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন স্থল ও জল উভয় পথে একসঙ্গে অবরোধ করার জন্য। কিন্তু তার মাঝারি পাল্লার কামানসমেত নৌবাহিনী গোল্ডেন হর্নের প্রতিরক্ষা ব্যূহের ভারী কামানগুলোর সামনে টিকতেই পারছিল না। অবরোধের ব্যপ্তি বাড়ছিল কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। তখন তারা এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করল। পোতাশ্রয়ের পেছনের পাহাড়গুলোর বুকে রাতের আঁধারে রাস্তা তৈরি করে তাতে গাছ-তেল চর্বি দিয়ে পিচ্ছিল করে সন্তর্পণে সাগর থেকে জাহাজগুলো সে পিচ্ছিল রাস্তা দিয়ে টেনে পাহাড় ডিঙিয়ে পোতাশ্রয়ে নিয়ে আসে। সকালে দেখা যায় এখন আমি যেখানে লঞ্চে ঘুরছি, গোল্ডেন হর্ন আর কনস্টান্টিনোপলের মধ্যবর্তী সেই বসফরাস পোতাশ্রয়ে বীরদর্পে ভাসছে ৭০টা অটোমান যুদ্ধজাহাজ। তারপর অটোমানদের কনস্টান্টিনোপল দখল করে তাকে ইস্তাম্বুল বানানো ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। এভাবেই এখানে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ইতি টেনে সূত্রপাত হয়েছিল অটোমানদের আমল। কল্পনায় ভাসতে ভাসতে আচমকা একটা ঝাঁকি লেগে বাস্তবে ফিরে এলাম। আমাদের জাহাজ গোল্ডেন হর্ন চক্কর দিয়ে জেটিতে এসে ভিড়েছে, এ তারই ঝাঁকুনি।
জাহাজ থেকে নামতে না নামতেই হঠাৎ রণবাদ্য শুরু হয়ে গেল। কোথা থেকে হঠাৎ এক কিশোর এসে ছোট এক ঢাকের মতো বাদ্যযন্ত্র তুমুল তালে বাজাতে শুরু করেছে। আধুনিককালে আমরা যে ব্যান্ড মিউজিক শুনি, তার সূচনার অন্যতম সূতিকাগার কিন্তু অটোমানদের রণসংগীত। সব ট্যুরিস্টের সাথে দাঁড়িয়ে সে কথা মনে মনে জাবর কাটতে কাটতে অজানা সে কিশোরের অপূর্ব বাজনা উপভোগ করতে লাগলাম। মনে মনে একটা ভাবও চলে এল, আগের দিনে সুলতানরা যুদ্ধ জয় করে ফিরে এলে যেমন ঢাকঢোল-বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে আওয়াজ দিত, অনেকটা ওই রকম ভাব নিয়েই সেই তালে তালে সম্পন্ন করে ফেললাম আমার বসফরাসের তীরে দাঁড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে হাওয়া খাওয়ার খায়েশ।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

দুই পাড়ের ভাঙন রোধ করতে সুয়েজ খালে জাহাজের সর্বোচ্চ গতিসীমা কমবেশি ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্যমতে, এখানে জাহাজ চলে গরুর গাড়ির গতিতে। তাই যেকালে মানুষ জাহাজে করে বিলাত যেত, তখন তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন সুয়েজ বন্দরে নেমে ট্রেনে করে কায়রো গিয়ে, সেখানে এক দিন কাটিয়ে আবার পোর্ট সৈয়দ থেকে জ
০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

দুই পাড়ের ভাঙন রোধ করতে সুয়েজ খালে জাহাজের সর্বোচ্চ গতিসীমা কমবেশি ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্যমতে, এখানে জাহাজ চলে গরুর গাড়ির গতিতে। তাই যেকালে মানুষ জাহাজে করে বিলাত যেত, তখন তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন সুয়েজ বন্দরে নেমে ট্রেনে করে কায়রো গিয়ে, সেখানে এক দিন কাটিয়ে আবার পোর্ট সৈয়দ থেকে জ
০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

দুই পাড়ের ভাঙন রোধ করতে সুয়েজ খালে জাহাজের সর্বোচ্চ গতিসীমা কমবেশি ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্যমতে, এখানে জাহাজ চলে গরুর গাড়ির গতিতে। তাই যেকালে মানুষ জাহাজে করে বিলাত যেত, তখন তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন সুয়েজ বন্দরে নেমে ট্রেনে করে কায়রো গিয়ে, সেখানে এক দিন কাটিয়ে আবার পোর্ট সৈয়দ থেকে জ
০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

দুই পাড়ের ভাঙন রোধ করতে সুয়েজ খালে জাহাজের সর্বোচ্চ গতিসীমা কমবেশি ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্যমতে, এখানে জাহাজ চলে গরুর গাড়ির গতিতে। তাই যেকালে মানুষ জাহাজে করে বিলাত যেত, তখন তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন সুয়েজ বন্দরে নেমে ট্রেনে করে কায়রো গিয়ে, সেখানে এক দিন কাটিয়ে আবার পোর্ট সৈয়দ থেকে জ
০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫