Ajker Patrika

ইংল্যান্ডে ইংরেজি উচ্চারণে ভিন্নতা

আরিফ আবেদ আদিত্য
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২২, ১৬: ৩৬
ইংল্যান্ডে ইংরেজি উচ্চারণে ভিন্নতা

নন-ইংলিশ স্পিকিং দেশের কান যেভাবে ইংরেজি শুনে অভ্যস্ত, তা প্রথম ধাক্কাতেই ভিরমি খাবে বিলাতে এসে। আমারও তেমনটি হয়েছে। ব্রিটিশদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বারবার শুধু মনে হচ্ছিল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কী ইংরেজি ভাষা শিখলাম! কীসের আইইএলটিএস দিলাম! সবকিছু অনর্থ মনে হচ্ছিল, যখন নেটিভ ইংলিশরা আমার সঠিক ব্যাকরণে বলা কথা বুঝতে না পেরে বারবার বলছিল—পারডন! মাফ করবে—কী বললে? এরা কথায় কথায় পারডন, অ্যাপোলজি ইত্যাদি শব্দ বলবেই। আর আলাপের মাঝখানে পারডন, অ্যাপোলজি ইত্যাদি বললে কার আর বেশি কথা বলার খেই থাকে। ফলে, মুখ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়—নিজেকে তখন বোবা বোবা লাগে। প্রথম কয়েক সপ্তাহ তাই ‘ইয়েস’ ‘নো’ ‘ভেরি গুড’ দিয়েই চালিয়ে নিতে হয়। 

 টেমসের পাড়ে লন্ডন ব্রিজ সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানে সহকর্মীদের সঙ্গে লেখকনেটিভ ব্রিটিশরা এত দ্রুত ও এমন উচ্চারণে কথা বলে যে মনে হয় ভিন্ন কোনো ভাষায় কথা বলছে। চলতি পথে কারও সঙ্গে চোখাচোখি হলে এরা একটা মুচকি হাসি ফেরত দেবে—কখনো কখনো ‘হাই’ বলে সম্ভাষণ করবে। আর সামান্য পরিচিত হলে এরা বলে ‘হ্যালো মেট’ বা ‘হাই দেয়ার’। আবার কেউ কেউ বলে—আর ইউ অল রাইট? (এরা উচ্চারণ করে এভাবে ‘আ’অয়াইট’)—এই উচ্চারণ ধরতেই আমার এক সপ্তাহ লেগেছিল। ইংল্যান্ডের যত উত্তরে যাওয়া হবে, ততই উচ্চারণের এই পার্থক্য ধরা পড়ে।

 ইংল্যান্ডে ইংরেজি ভাষার উচ্চারণ বৈচিত্র্যের কারণে নিজেকে প্রথম দিকে মনে হয়েছে ভিনগ্রহের কোনো আগন্তুক। মাঝে মাঝে মনে হতো, এই জীবনে আমি কোনো দিন ইংরেজি ভাষা শুনিনি, শেখা তো দূরের কথা। প্রথম কয়েক দিন নেটিভ ব্রিটিশদের অর্ধ-উচ্চারিত শব্দ ও বাক্য শুনে প্রায় বোবা হয়ে যেতাম। এদিকে আমি যতই গ্র্যামার-অ্যাকসেন্ট ঠিক করে কথা বলি, এরা এমন ভান করত, আমি যেন কোনো অজানা ভাষায় কমিউনিকেট করছি। অথচ ক্লাস-লেকচারে প্রফেসরদের কথা ঠিকই বুঝতাম, নোট নিতাম। যাহোক, ধীরে ধীরে আয়ত্তে আসতে থাকে।

সেন্ট্রাল লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ারে মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যের সামনেলন্ডনের টেমস নদীর উত্তর পাড়ে পড়েছে ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকা এবং দক্ষিণ পাড়ে পড়েছে কেন্ট। আমি থাকি দক্ষিণাঞ্চলে। ইংরেজি ভাষার ডায়ালেক্ট এতই বৈচিত্র্যময় যে এ নিয়ে নানা কৌতুকের চল আছে। যেমন, তিন আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান ও ব্রিটিশ এক বারে বসে গল্প করছে।

প্রথমে আমেরিকান বলল, জানো, আমেরিকা কত বড়? তুমি গাড়িতে চার দিন ধরে একই দিকে যাবে—চার দিন পরও তুমি একই প্রদেশে থাকবে।

তা শোনে অস্ট্রেলিয়ান বলল, আরে, এ আর তেমন কী? অস্ট্রেলিয়া কেমন জানো? চার ঘণ্টা ধরে প্লেনে যাবে; তারপরও দেখবে তুমি একই প্রদেশে আছ।

তখন ব্রিটিশ অট্টহাসি দিতে দিতে বলে, তোমাদের কথা শুনে হাসি থামাতেই পারছি না। শোনো, ইংল্যান্ডে তুমি মাত্র দুই ঘণ্টা হাঁটলে ইংরেজি ভাষার দশ রকমের উচ্চারণ পাবে।

উপভাষা বুঝো হে? উপভাষার ভূগোল জেনে গপ্পো দাও প্লিজ! 
ইংল্যান্ডের নেটিভ স্পিকারদের ভাষার ক্ষেত্রে মিডল-নর্দার্ন-সাউথ-ইস্ট-ওয়েস্ট অঞ্চলের যেমন আলাদা উচ্চারণ আছে, তেমনি ব্ল্যাক কান্ট্রি, বার্মিংহাম, নটিংহ্যাম, স্কটিশ, আইরিশ ইত্যাদি আরও নানা উপভাষা আছে। এখানে ইংরেজি উচ্চারণ শুনেই ধরে নেওয়া যায়, ব্যক্তিটি কোন অঞ্চলের বাসিন্দা। আফ্রিকান-আরব-ইন্ডিয়ান-চাইনিজদের ইংরেজি উচ্চারণের কথা বলাই বাহুল্য—নিজেদের দেশের বাক্ভঙ্গি এরা ব্যবহার করে। ফলে খুব সহজেই বলে দেওয়া যায় কে কোন বংশোদ্ভূত জাতি। আবার ইউরোপের বাসিন্দা যেমন, রোমানিয়া, পোলিশ, ফরাসি এদের ইংরেজি উচ্চারণও আলাদা।

টেমসের পাড়ে সুরম্য অট্টালিকা ও আজকের লন্ডনসেন্ট্রাল লন্ডনে যেখানে বিগবেন টাওয়ার দৃশ্যমান, টেমস নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত—সেখানে ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকায় জন্ম আধুনিক ইংরেজি ভাষার জনক জেফ্রি চসারের (১৩৪০-১৪০০)। নিজের এলাকার সর্বসাধারণের মুখের ভাষাতেই তিনি ১৩৮৭-১৪০০ সময়কালে লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত গল্পসংগ্রহ ‘দ্য ক্যানটারবারি টেইলস’। তখন মানুষের মুখের বুলিতে সাহিত্য রচনা করা যায়—তা কল্পনাও করা যেত না। ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার ‘বুলি’ বা স্থানীয় ভাষা গড়ে উঠেছিল নরমান-শাসনের (১০৬৬) আগেই। স্মর্তব্য, ইংল্যান্ডের ইতিহাস পড়ানো হয় এই ১০৬৬ থেকে।

টেমসের উত্তর পাড়ের সাধারণ মানুষেরা আনুমানিক ১১৫০ থেকে ১৫০০ সাল পর্যন্ত তাদের দৈনন্দিন জীবনে, চলাফেরায়, হাটবাজারে পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্য এই ভাষা ব্যবহার করত। চসারের সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে গেলেও ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব থাকায় ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার মানুষকেও আনুষ্ঠানিকতা বা ভ্রমণ, সবই করতে হয়েছে লাতিন ভাষায় (কারণ, ধর্মীয় শাস্ত্র ছিল লাতিন ভাষায়)। যদিও শাসক নরমানদের ফরমান করা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ভাষা ফরাসিতে। 

বাংলা ভাষা বা সর্বসাধারণের ‘বুলি’ মধ্যযুগে ঠিক এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল। মোগল শাসকদের দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফারসি এবং বেদ-গীতা-উপনিষদ ছিল সংস্কৃত ভাষায়। ফলে, সাহিত্যের ভাষা সংগত কারণেই ফারসি-সংস্কৃত মিশ্রিত হয়েছে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ আমলে ফারসির পরিবর্তে নতুন শাসকের ভাষা সরকারি দপ্তরে স্থান করে নেয়। ফারসি-সংস্কৃতের মধ্যে তখন ইংরেজির প্রবেশ ঘটে (ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের শব্দও যুক্ত হয়)। কলোনিয়াল যুগে বাঙালি মুসলমান সমাজ সাহিত্যচর্চায় এগিয়ে এলে বাংলা ভাষায় যোগ হয় আরবি শব্দের। 

 সেন্ট্রাল লন্ডন, যেখানে বিগবেন, পার্লামেন্ট, ওয়েস্ট মিনিস্টার এবে, বাকিংহাম প্যালেস অবস্থিতযাহোক, ইংল্যান্ডে নরমান-শাসন অবসান হলে লন্ডনের ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার অনানুষ্ঠানিক এই ভাষাই পরে পুরো ইংল্যান্ডে ‘মিডল ইংলিশ ভাষা’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। আধুনিক ইংরেজি ভাষা মূলত এটিকে অনুসরণ করেই গড়ে উঠেছে। বিবিসি যে সংবাদ উপস্থাপন করে সেটা এই মিডল ইংলিশেই—তাই এই ইংরেজি আমাদের সহজে বোধগম্য হয়। আমেরিকান ইংরেজি ও ব্রিটিশ ইংরেজিতে বড় পার্থক্য হলো এই উচ্চারণে। ব্রিটিশরা অত্যন্ত সুমধুর বাক্ভঙ্গিতে ইংরেজি বলে—যেটি আমেরিকানরা করে না। ব্রিটিশদের সুর তুলে ইংরেজি বলার স্টাইল অনেকের কাছে প্রথম প্রথম কর্কশ মনে হলেও পরে সয়ে যায়—বিশেষ করে ককনিদের উচ্চারণ। তবে অভিজাত শ্রেণির ইংলিশ বলার ধরন বেশ সুশ্রাব্য বৈকি!

ঔপনিবেশিক ফরাসি ও লাতিন ছুড়ে ফেলে দিয়ে চসার টেমসের উত্তর পাড়ের এলাকার মানুষের মুখের ভাষায় সাহিত্য রচনার মাধ্যমে কেবল তৎকালীন রোমান ও নরমান-ফরাসিদের উপনিবেশবাদের অবদমনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি; মূলত তাঁর প্রচেষ্টা আধুনিক ইংরেজি ভাষার গোড়াপত্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যার কারণে পরে আমরা পৃথিবী বিখ্যাত সব ইংরেজ কবি-সাহিত্যিক পেয়েছি। অপরদিকে, মধ্যযুগে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য কবি আব্দুল হাকিমকে লড়াই করতে হয়েছে। আধুনিক যুগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাংলাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলা কথ্যরীতি বা ‘বুলি’ অন্য ভাষাকে ‘অপর’ না করে আপন করে নিয়ে নিজের মতো করে একটা ছাঁচ দিয়েছে। বাংলা ভাষা নানান যুগ ও শাসনামলে আগত/প্রযুক্ত বিদেশি ভাষাকে আত্মসাৎ করেছে, বাংলা ভাষার এমন বিদেশি ভাষাকে নিপুণভাবে হজম করার অপূর্ব ক্ষমতায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত