নওশাদ জামিল

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; কুয়াশারাশি ঢাকার ওপর প্রবল ক্রোধে, কিংবা ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল। ভোরের হিমরাশি ঠেলে কুয়াশার ভেতর থেকে, ঘুমের ভেতর থেকে, স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে আসে শায়লা। অস্ফুট সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তর পাবে না জেনেও বলে, ‘তোমার মেয়েটার কী নাম রেখেছ? দেখতে কার মতো হয়েছে? তোমার মতো, নাকি তরীর মতো?’
শীতের আলস্য দূরে ঠেলে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বোঝার চেষ্টা করি—ঘটনাটি কি স্মৃতির, নাকি বিস্মৃতির? নাকি স্বপ্নের? বোধহয় স্মৃতি নয়, বিস্মৃতিও নয়। ছায়াই হবে মনে হয়। শায়লা তো আমার কাছে ছায়া হয়েই আছে দূরে। অনেক অনেক দূরে ওড়াউড়ি করে ছায়াগুলো। মাঝেমধ্যে অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে, আবার মিলিয়েও যায়। ছায়া নয়, ভুল বললাম; শায়লা আমার কাছে আছে স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির কাছে তো জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শায়লাকে উত্তর দিই না।
কম্বলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে চারপাশ দেখি—ভোরের একটা মিহি সরু আলোর রেখা ঢুকেছে আমার ঘরে। পর্দা গলে ওই আলোর স্ফুরণ আমাকে স্পর্শ করে। শীতস্পর্শে মুখ থিরথির করে। আমি আবার মুখ ঢুকিয়ে নিই লেপের ভেতরে। বউকে হালকা করে জড়িয়ে ধরি। তারপর বউয়ের বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের অতলে ডুবে যাই।
শায়লার কথা আমার বউ জানে না যে ঠিক তা নয়। তরীর সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই সব বলেছিলাম। তরী সব শুনে, সব জেনে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল; ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘সময় সবকিছুকে ম্লান করে দেয়।’
তরীর কথাই ঠিক। সময় ম্লান করে দিয়েছিল শায়লাকে, আমাকে ভুলিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ কেন শায়লার কথা মনে বাজল? মনের ভেতর খচখচ করে উঠল, কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াহরিণ।
বছর দুয়েক আগে নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে গিয়ে কেওড়াবনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক হরিণ দেখেছিলাম, অনেক কাছ থেকে হরিণের চোখ দেখেছিলাম, তখন শায়লার কথা মনে পড়েছিল। তার হরিণী চোখ মনে পড়েছিল। আমি শায়লার প্রেমে পড়েছিলাম তার গভীর ঘনকালো, নিবিড় চোখ দেখেই। মেয়েদের চোখ যে এত সুন্দর, এত আকর্ষণীয়, এত মোহময় হতে পারে—আমি আগে তা বুঝিনি। একদিন, সম্ভবত সেদিন কী একটা আবৃত্তি উৎসব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সেজেগুজে চোখে কাজল দিয়ে এসেছিল সে। শাড়ি পরেছিল। খোঁপায় ফুল ছিল কি না মনে নেই। উপলক্ষ ছাড়াই মাঝেমধ্যেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দিত, যত্ন করে পরিপাটি হয়ে সাজত। সাধারণত যেসব মেয়ে খুব পরিপাটি করে সাজে, তারা কথা বলে মেপে মেপে, ধীরে ধীরে। শায়লা তেমন নয়। কথা বলতে বলতে হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে। কথায় রাখঢাকের ব্যাপার নেই। ফলে অল্পতেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে গিয়েছিল, গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শায়লার কথা যখন ভাবি, মনে করি, তখন কীভাবে যেন আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়; তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কেন এমন হয়, বুঝতে পারি না। তবে এলোমেলো ভাব কেটেও যায় দ্রুত। তারপর ফিরে আসি নিজের জগতে। ফিরে আসি ঘরে, সংসারে। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি তরী ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছে। ইংরেজি একটা মুভি দেখছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার পাশে বসি। তারপর তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘হঠাৎ এত পিরিত উঠল কেন?’
‘হঠাৎ হবে কেন?’
সে বলে, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন না। আগে উত্তর, পরে প্রশ্ন।’
বউয়ের কথায় আমার খানিকটা অভিমান হয়। অভিমানের সুরে বলি, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না!’ এ কথা শুনে বউ হাসে মৃদু মৃদু। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আহা! আমি তোমাকে তো রাগানোর জন্য বলেছিলাম!’
‘রাগ না, ছাই! তিয়ার জন্মের পর তুমি আমাকে ভুলেই গেছ!’
‘তোমাকে ভুলব কেন! আজব কথা বলো! ঘুমাচ্ছিলা তো, তাই তোমাকে ডাকিনি।’
আমাদের দুই বছরের কন্যা তিয়া। হেলেদুলে, টলমল করে হাঁটতে পারে ও। যখন হাঁটে, কিংবা যখন ওর দুই হাত ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করি, তখন ওকে আমার পুতুলই মনে হয়। ঠিক যেন জাপানি পুতুল। আমার বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে। তিয়ার জন্মের পর থেকে তরী সারাক্ষণ বাচ্চাকে নিয়ে মেতে থাকে। তিয়াকে নিয়ে ডুবে থাকে। যত্ন করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করায়, লোশন মাখিয়ে দেয় ওর কোমল ত্বকে। মাঝেমধ্যে গান শোনায়। ও কিছু বোঝে কি না কে জানে। তবে হাততালি দিয়ে, খুশিতে আবোল-তাবোল শব্দ করে। এতেই তরী খুব খুশি হয়। তখন চুকচুক করে চুমো দেয় তিয়ার মখমল গালে। আমার খুব ভালো লাগে মা-মেয়ের এই চিরন্তন ভালোবাসায়।
সকালে নাশতা করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তিয়াকে আদর করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে শায়লার কথা। শায়লাও কি তবে আমার মেয়ের মা হতে চেয়েছিল?
ছুটির দিন থাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা করে। তারপর কিছুক্ষণ তরীর সঙ্গে সাংসারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। জানতে চাই, ঘরে বাজার আছে কি না। বাজারের কথা শুনে তরী খুশি হয়। কেননা সাধারণত সকালে আমি সংসার কিংবা বাজারবিষয়ক কোনো কথা বলি না। সাংসারিক কথায় খুশি হয়ে সে বলে, ‘বাজারে যেতে হবে না।’ বউয়ের কথায় আমিও খুশি হই খুব।
খুশি প্রকাশ করে তাকে বলি, ‘দুপুরে কী রান্না করবে? গরুর মাংস-খিচুড়ি হবে নাকি?’
‘নিশ্চয় হবে। ফ্রিজে মাংস আছে। তবে রান্নাটা করতে হবে তোমাকেই।’
‘মানে?’
‘মানে আর কী, তুমি রান্না করবে।’
‘আমি একা রান্না করতে পারব না। তুমি যদি হেল্প করো, তাহলে রান্না করতে পারি।’
শেষমেশ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। আমি গরুর মাংস রান্না করব, খিচুড়ি রান্না করবে তরী। রান্না করার বিষয়ে তরী খুব উদাসীন। রান্নাটা এনজয় করে না সে। তবুও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করে। আমাদের অলিখিত চুক্তি এই যে ছুটির দিনে আমরা দুপুরে রান্না করব। একে অপরকে হেল্প করব। দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমি আর তরী পত্রিকা পড়তে পড়তে গল্প করি। সমসাময়িক রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলাপ করি। তারপর এক ফাঁকে তরীকে বলি শায়লার কথা। বলি রাতের ঘটনা। আমার কথা শুনে থ হয়ে গেল সে। কিছুটা রাগত স্বরে বলে, ‘শায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?’
‘তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘না, তোমার ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়! আমাকে মিথ্যা কথা বলতেছ!’
‘তোমাকে মিথ্যা বলব কেন! আমি তো মিথ্যা বলি না, এটা তো তুমি জানোই। এখন মনে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে বললাম।’
শায়লার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কোথায় দেখা হয়েছিল, কবে দেখা হয়েছিল—তরীর চোখে কোনো কৌতূহল নেই। কিছুই বলে না সে। মুখ অন্ধকার করে টিভি দেখতে বসে, কিছুক্ষণ পরে সিনেমায় ডুব মারে। দুপুরের রান্নার কথাও ওঠায় না। কারণটা যে শায়লা তা আর বোঝার বাকি নেই। পরিস্থিতি মাঝারি পর্যায়ের, অভিমানের দিকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গলা উঁচু করে চিল্লাচিল্লি করবে। ১০ মিনিটের একটা ঝড় বইবে। তারপর সব স্বাভাবিক। আপাতত আবহ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। মাঝারি পর্যায়েই থাকবে।
তরীর সঙ্গে আমার তেমন একটা ঝগড়া হয় না, কথা-কাটাকাটিও হয় না। তবে কখনো যদি সে আমার ওপর রাগ করে, তখন মুখের ওপর চিল্লাচিল্লি করে। এখন ওই অবস্থা হবে কি না বুঝতে পারি না। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু কিছুই বলি না। কেননা আমি এখন কিছু বলতে গেলেই ঝড় ওঠার পূর্বাভাব মিলবে। বিপদসংকেত বাড়বে। তাই চুপচাপ হয়ে আমি তরীর সঙ্গে টিভি দেখি কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের রুমে ঢুকে তিয়াকে আদর করি। বুয়া ওকে দুধ গরম করে দিয়েছে। দুধ খেতে খেতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটিকে ডেকে বলি কফি বানাতে। কফির কথা বলে আমার রুমে ঢুকে আমি কী করব ভাবি। খাটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো পড়ে থাকি, ঠিক যেন তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে শায়লার হাসি। কতদিন পর দেখলাম শায়লাকে, কতদিন পর! আমার ভেতরটা হাহাকার করে, মনটা কেমন করে। বুঝতে পারি না কেন এমন করে। শায়লাকে তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় আট বছর আগের স্মৃতি কেন মনে পড়ল? কোথাও কি দেখেছি শায়লাকে, নাকি শায়লার মতো কাউকে দেখেছিলাম!
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। যানজটে গাড়ি থেমে ছিল অনেকক্ষণ, পান্থপথ সিগন্যালে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ি অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ লক্ষ করি, চমকে উঠি—শায়লা দাঁড়িয়ে পথের পাশে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, আমার সামনে দিয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল সে। শায়লা বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। দুই-একবার ডাক দিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস, এইটুকু। মেয়েটি শায়লাই ছিল নাকি কে জানে। নাকি শায়লার মতো অন্য কেউ? শায়লার কথা যত ভাবি, মন তত উথালপাথাল করে।
কাজের মেয়ে কফি দিয়ে যায়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, শায়লাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে। কিন্তু কীভাবে লিখব, কোন জায়গা থেকে শুরু করব—বুঝতে পারি না। মাথাটা হঠাৎ জট পাকিয়ে ওঠে, দুমড়েমুচড়ে জেগে ওঠে স্মৃতিগুলো।
‘তুমি এখনো শুয়ে আছ! আমি তো খিচুড়ি রান্না করছি, মাংস রান্না করবা কখন?’—বউয়ের কথা শুনে যেন জ্ঞান ফেরে আমার। বউকে বলি, ‘ঠিক আছে। রান্না করব।’
আলস্য ঝেড়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে হবে। মাংস অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আমি ঝটপট উঠি বিছানা থেকে। ডিপফ্রিজের ডানা খুলতেই আমার চোখের পাতায় যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমক খেলল সারা শরীরে। তোলপাড় করে অচেনা এক কালো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল মনের বালুকাবেলায়। কয়েকটি বড় বড় মাংসের পোঁটলা। তাতে হালকা কুয়াশা জড়িয়ে। ফ্রিজের ডানা খুলতেই কুয়াশারা জেগে উঠল, চোখের পাতা নড়েচড়ে উঠল। পোঁটলাগুলোর একটিতে পড়ে আছে হরিণের মাংস, যেন ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ যেন ছানাবড়া। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি—মাংসগুলো সতেজ, হিমশীতল বরফে ঢাকা।
সপ্তাহখানেক আগে খুলনা থেকে বেড়াতে এসেছিল আমার বন্ধু সজীব। সে একবার কথাচ্ছলে বলেছিল, ‘হরিণের মাংস আর রেড ওয়াইন দারুণ হবে দোস্ত!’
একদিন সজীব প্রায় পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে উপস্থিত হয় বাসায়। বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করে সে। কিন্তু সারপ্রাইজ তো দূরের কথা, হরিণের মাংস শুনেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তরী। বন্ধুর সামনেই খেপে যায়। রেগে গিয়ে তরী বলে, ‘আমি এই মাংস খাব না। তোমরাও খেতে পারবে না!’ অগত্যা মাংসগুলোর স্থান হয় ডিপফ্রিজের এক কোনায়। মাংস বের করতে দেরি হচ্ছে দেখে তরী বলে, ‘ওইগুলো হরিণের মাংস, গরুর মাংস ওপরের তাকে।’ তরীর কথায় আমি যেন চমকে উঠি, বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সজীব যেদিন এসেছিল, মাংস দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। কেন? হরিণের মাংস তো আমার পছন্দ না। একবার ভুল করে খেতে গিয়ে পরে খারাপই লেগেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে নয়, পশুপ্রেমের জন্যও নয়, অন্য কিছু হতে পারে বোধহয়। সজীব দুই দিন থেকে আবার ফিরে গেছে খুলনায়, তার কর্মস্থলে। বাসায় আমরা জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি। প্রাণখুলে হেসেছি, অনেক গল্প করেছি। আড্ডা দিতে দিতে, ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে সজীব বলে, ‘দোস্ত! শায়লার কী খবর!’ শায়লার কথা শুনে যেন লাফ দিয়ে উঠি। ভাগ্য ভালো যে তখন তরী ছিল না আমাদের আড্ডায়। নেশাতুর কণ্ঠে আমি বলি, ‘শায়লা! আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই দোস্ত!’
আড্ডায় শায়লাকে নিয়ে আমাদের কথা আর এগোয়নি। আমরা আবার নতুন পেগ শুরু করি। কয়েক চুমুক দিয়েই আনন্দে সজীব গান শুরু করে, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি!’
তরী মাংস রান্না করার সব মসলা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমার কাজ শুধু পরিমাণমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়া। যখন চুলায় মাংস বসিয়েছি, বউ তখন পাশে দাঁড়িয়ে। আগুনের লেলিহান শিখায়, মসলার রসায়নে একটু পরই লাল হয়ে ওঠে মাংস। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলতেই ওঠে ধূমায়িত সুঘ্রাণ। ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ঢেকে রাখো!’

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; কুয়াশারাশি ঢাকার ওপর প্রবল ক্রোধে, কিংবা ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল। ভোরের হিমরাশি ঠেলে কুয়াশার ভেতর থেকে, ঘুমের ভেতর থেকে, স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে আসে শায়লা। অস্ফুট সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তর পাবে না জেনেও বলে, ‘তোমার মেয়েটার কী নাম রেখেছ? দেখতে কার মতো হয়েছে? তোমার মতো, নাকি তরীর মতো?’
শীতের আলস্য দূরে ঠেলে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বোঝার চেষ্টা করি—ঘটনাটি কি স্মৃতির, নাকি বিস্মৃতির? নাকি স্বপ্নের? বোধহয় স্মৃতি নয়, বিস্মৃতিও নয়। ছায়াই হবে মনে হয়। শায়লা তো আমার কাছে ছায়া হয়েই আছে দূরে। অনেক অনেক দূরে ওড়াউড়ি করে ছায়াগুলো। মাঝেমধ্যে অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে, আবার মিলিয়েও যায়। ছায়া নয়, ভুল বললাম; শায়লা আমার কাছে আছে স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির কাছে তো জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শায়লাকে উত্তর দিই না।
কম্বলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে চারপাশ দেখি—ভোরের একটা মিহি সরু আলোর রেখা ঢুকেছে আমার ঘরে। পর্দা গলে ওই আলোর স্ফুরণ আমাকে স্পর্শ করে। শীতস্পর্শে মুখ থিরথির করে। আমি আবার মুখ ঢুকিয়ে নিই লেপের ভেতরে। বউকে হালকা করে জড়িয়ে ধরি। তারপর বউয়ের বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের অতলে ডুবে যাই।
শায়লার কথা আমার বউ জানে না যে ঠিক তা নয়। তরীর সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই সব বলেছিলাম। তরী সব শুনে, সব জেনে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল; ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘সময় সবকিছুকে ম্লান করে দেয়।’
তরীর কথাই ঠিক। সময় ম্লান করে দিয়েছিল শায়লাকে, আমাকে ভুলিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ কেন শায়লার কথা মনে বাজল? মনের ভেতর খচখচ করে উঠল, কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াহরিণ।
বছর দুয়েক আগে নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে গিয়ে কেওড়াবনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক হরিণ দেখেছিলাম, অনেক কাছ থেকে হরিণের চোখ দেখেছিলাম, তখন শায়লার কথা মনে পড়েছিল। তার হরিণী চোখ মনে পড়েছিল। আমি শায়লার প্রেমে পড়েছিলাম তার গভীর ঘনকালো, নিবিড় চোখ দেখেই। মেয়েদের চোখ যে এত সুন্দর, এত আকর্ষণীয়, এত মোহময় হতে পারে—আমি আগে তা বুঝিনি। একদিন, সম্ভবত সেদিন কী একটা আবৃত্তি উৎসব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সেজেগুজে চোখে কাজল দিয়ে এসেছিল সে। শাড়ি পরেছিল। খোঁপায় ফুল ছিল কি না মনে নেই। উপলক্ষ ছাড়াই মাঝেমধ্যেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দিত, যত্ন করে পরিপাটি হয়ে সাজত। সাধারণত যেসব মেয়ে খুব পরিপাটি করে সাজে, তারা কথা বলে মেপে মেপে, ধীরে ধীরে। শায়লা তেমন নয়। কথা বলতে বলতে হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে। কথায় রাখঢাকের ব্যাপার নেই। ফলে অল্পতেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে গিয়েছিল, গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শায়লার কথা যখন ভাবি, মনে করি, তখন কীভাবে যেন আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়; তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কেন এমন হয়, বুঝতে পারি না। তবে এলোমেলো ভাব কেটেও যায় দ্রুত। তারপর ফিরে আসি নিজের জগতে। ফিরে আসি ঘরে, সংসারে। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি তরী ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছে। ইংরেজি একটা মুভি দেখছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার পাশে বসি। তারপর তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘হঠাৎ এত পিরিত উঠল কেন?’
‘হঠাৎ হবে কেন?’
সে বলে, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন না। আগে উত্তর, পরে প্রশ্ন।’
বউয়ের কথায় আমার খানিকটা অভিমান হয়। অভিমানের সুরে বলি, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না!’ এ কথা শুনে বউ হাসে মৃদু মৃদু। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আহা! আমি তোমাকে তো রাগানোর জন্য বলেছিলাম!’
‘রাগ না, ছাই! তিয়ার জন্মের পর তুমি আমাকে ভুলেই গেছ!’
‘তোমাকে ভুলব কেন! আজব কথা বলো! ঘুমাচ্ছিলা তো, তাই তোমাকে ডাকিনি।’
আমাদের দুই বছরের কন্যা তিয়া। হেলেদুলে, টলমল করে হাঁটতে পারে ও। যখন হাঁটে, কিংবা যখন ওর দুই হাত ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করি, তখন ওকে আমার পুতুলই মনে হয়। ঠিক যেন জাপানি পুতুল। আমার বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে। তিয়ার জন্মের পর থেকে তরী সারাক্ষণ বাচ্চাকে নিয়ে মেতে থাকে। তিয়াকে নিয়ে ডুবে থাকে। যত্ন করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করায়, লোশন মাখিয়ে দেয় ওর কোমল ত্বকে। মাঝেমধ্যে গান শোনায়। ও কিছু বোঝে কি না কে জানে। তবে হাততালি দিয়ে, খুশিতে আবোল-তাবোল শব্দ করে। এতেই তরী খুব খুশি হয়। তখন চুকচুক করে চুমো দেয় তিয়ার মখমল গালে। আমার খুব ভালো লাগে মা-মেয়ের এই চিরন্তন ভালোবাসায়।
সকালে নাশতা করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তিয়াকে আদর করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে শায়লার কথা। শায়লাও কি তবে আমার মেয়ের মা হতে চেয়েছিল?
ছুটির দিন থাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা করে। তারপর কিছুক্ষণ তরীর সঙ্গে সাংসারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। জানতে চাই, ঘরে বাজার আছে কি না। বাজারের কথা শুনে তরী খুশি হয়। কেননা সাধারণত সকালে আমি সংসার কিংবা বাজারবিষয়ক কোনো কথা বলি না। সাংসারিক কথায় খুশি হয়ে সে বলে, ‘বাজারে যেতে হবে না।’ বউয়ের কথায় আমিও খুশি হই খুব।
খুশি প্রকাশ করে তাকে বলি, ‘দুপুরে কী রান্না করবে? গরুর মাংস-খিচুড়ি হবে নাকি?’
‘নিশ্চয় হবে। ফ্রিজে মাংস আছে। তবে রান্নাটা করতে হবে তোমাকেই।’
‘মানে?’
‘মানে আর কী, তুমি রান্না করবে।’
‘আমি একা রান্না করতে পারব না। তুমি যদি হেল্প করো, তাহলে রান্না করতে পারি।’
শেষমেশ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। আমি গরুর মাংস রান্না করব, খিচুড়ি রান্না করবে তরী। রান্না করার বিষয়ে তরী খুব উদাসীন। রান্নাটা এনজয় করে না সে। তবুও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করে। আমাদের অলিখিত চুক্তি এই যে ছুটির দিনে আমরা দুপুরে রান্না করব। একে অপরকে হেল্প করব। দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমি আর তরী পত্রিকা পড়তে পড়তে গল্প করি। সমসাময়িক রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলাপ করি। তারপর এক ফাঁকে তরীকে বলি শায়লার কথা। বলি রাতের ঘটনা। আমার কথা শুনে থ হয়ে গেল সে। কিছুটা রাগত স্বরে বলে, ‘শায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?’
‘তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘না, তোমার ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়! আমাকে মিথ্যা কথা বলতেছ!’
‘তোমাকে মিথ্যা বলব কেন! আমি তো মিথ্যা বলি না, এটা তো তুমি জানোই। এখন মনে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে বললাম।’
শায়লার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কোথায় দেখা হয়েছিল, কবে দেখা হয়েছিল—তরীর চোখে কোনো কৌতূহল নেই। কিছুই বলে না সে। মুখ অন্ধকার করে টিভি দেখতে বসে, কিছুক্ষণ পরে সিনেমায় ডুব মারে। দুপুরের রান্নার কথাও ওঠায় না। কারণটা যে শায়লা তা আর বোঝার বাকি নেই। পরিস্থিতি মাঝারি পর্যায়ের, অভিমানের দিকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গলা উঁচু করে চিল্লাচিল্লি করবে। ১০ মিনিটের একটা ঝড় বইবে। তারপর সব স্বাভাবিক। আপাতত আবহ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। মাঝারি পর্যায়েই থাকবে।
তরীর সঙ্গে আমার তেমন একটা ঝগড়া হয় না, কথা-কাটাকাটিও হয় না। তবে কখনো যদি সে আমার ওপর রাগ করে, তখন মুখের ওপর চিল্লাচিল্লি করে। এখন ওই অবস্থা হবে কি না বুঝতে পারি না। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু কিছুই বলি না। কেননা আমি এখন কিছু বলতে গেলেই ঝড় ওঠার পূর্বাভাব মিলবে। বিপদসংকেত বাড়বে। তাই চুপচাপ হয়ে আমি তরীর সঙ্গে টিভি দেখি কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের রুমে ঢুকে তিয়াকে আদর করি। বুয়া ওকে দুধ গরম করে দিয়েছে। দুধ খেতে খেতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটিকে ডেকে বলি কফি বানাতে। কফির কথা বলে আমার রুমে ঢুকে আমি কী করব ভাবি। খাটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো পড়ে থাকি, ঠিক যেন তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে শায়লার হাসি। কতদিন পর দেখলাম শায়লাকে, কতদিন পর! আমার ভেতরটা হাহাকার করে, মনটা কেমন করে। বুঝতে পারি না কেন এমন করে। শায়লাকে তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় আট বছর আগের স্মৃতি কেন মনে পড়ল? কোথাও কি দেখেছি শায়লাকে, নাকি শায়লার মতো কাউকে দেখেছিলাম!
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। যানজটে গাড়ি থেমে ছিল অনেকক্ষণ, পান্থপথ সিগন্যালে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ি অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ লক্ষ করি, চমকে উঠি—শায়লা দাঁড়িয়ে পথের পাশে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, আমার সামনে দিয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল সে। শায়লা বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। দুই-একবার ডাক দিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস, এইটুকু। মেয়েটি শায়লাই ছিল নাকি কে জানে। নাকি শায়লার মতো অন্য কেউ? শায়লার কথা যত ভাবি, মন তত উথালপাথাল করে।
কাজের মেয়ে কফি দিয়ে যায়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, শায়লাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে। কিন্তু কীভাবে লিখব, কোন জায়গা থেকে শুরু করব—বুঝতে পারি না। মাথাটা হঠাৎ জট পাকিয়ে ওঠে, দুমড়েমুচড়ে জেগে ওঠে স্মৃতিগুলো।
‘তুমি এখনো শুয়ে আছ! আমি তো খিচুড়ি রান্না করছি, মাংস রান্না করবা কখন?’—বউয়ের কথা শুনে যেন জ্ঞান ফেরে আমার। বউকে বলি, ‘ঠিক আছে। রান্না করব।’
আলস্য ঝেড়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে হবে। মাংস অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আমি ঝটপট উঠি বিছানা থেকে। ডিপফ্রিজের ডানা খুলতেই আমার চোখের পাতায় যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমক খেলল সারা শরীরে। তোলপাড় করে অচেনা এক কালো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল মনের বালুকাবেলায়। কয়েকটি বড় বড় মাংসের পোঁটলা। তাতে হালকা কুয়াশা জড়িয়ে। ফ্রিজের ডানা খুলতেই কুয়াশারা জেগে উঠল, চোখের পাতা নড়েচড়ে উঠল। পোঁটলাগুলোর একটিতে পড়ে আছে হরিণের মাংস, যেন ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ যেন ছানাবড়া। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি—মাংসগুলো সতেজ, হিমশীতল বরফে ঢাকা।
সপ্তাহখানেক আগে খুলনা থেকে বেড়াতে এসেছিল আমার বন্ধু সজীব। সে একবার কথাচ্ছলে বলেছিল, ‘হরিণের মাংস আর রেড ওয়াইন দারুণ হবে দোস্ত!’
একদিন সজীব প্রায় পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে উপস্থিত হয় বাসায়। বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করে সে। কিন্তু সারপ্রাইজ তো দূরের কথা, হরিণের মাংস শুনেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তরী। বন্ধুর সামনেই খেপে যায়। রেগে গিয়ে তরী বলে, ‘আমি এই মাংস খাব না। তোমরাও খেতে পারবে না!’ অগত্যা মাংসগুলোর স্থান হয় ডিপফ্রিজের এক কোনায়। মাংস বের করতে দেরি হচ্ছে দেখে তরী বলে, ‘ওইগুলো হরিণের মাংস, গরুর মাংস ওপরের তাকে।’ তরীর কথায় আমি যেন চমকে উঠি, বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সজীব যেদিন এসেছিল, মাংস দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। কেন? হরিণের মাংস তো আমার পছন্দ না। একবার ভুল করে খেতে গিয়ে পরে খারাপই লেগেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে নয়, পশুপ্রেমের জন্যও নয়, অন্য কিছু হতে পারে বোধহয়। সজীব দুই দিন থেকে আবার ফিরে গেছে খুলনায়, তার কর্মস্থলে। বাসায় আমরা জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি। প্রাণখুলে হেসেছি, অনেক গল্প করেছি। আড্ডা দিতে দিতে, ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে সজীব বলে, ‘দোস্ত! শায়লার কী খবর!’ শায়লার কথা শুনে যেন লাফ দিয়ে উঠি। ভাগ্য ভালো যে তখন তরী ছিল না আমাদের আড্ডায়। নেশাতুর কণ্ঠে আমি বলি, ‘শায়লা! আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই দোস্ত!’
আড্ডায় শায়লাকে নিয়ে আমাদের কথা আর এগোয়নি। আমরা আবার নতুন পেগ শুরু করি। কয়েক চুমুক দিয়েই আনন্দে সজীব গান শুরু করে, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি!’
তরী মাংস রান্না করার সব মসলা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমার কাজ শুধু পরিমাণমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়া। যখন চুলায় মাংস বসিয়েছি, বউ তখন পাশে দাঁড়িয়ে। আগুনের লেলিহান শিখায়, মসলার রসায়নে একটু পরই লাল হয়ে ওঠে মাংস। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলতেই ওঠে ধূমায়িত সুঘ্রাণ। ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ঢেকে রাখো!’

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৫ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৫ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল;
২৫ ডিসেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৫ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল;
২৫ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৫ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল;
২৫ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৫ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৫ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল;
২৫ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৫ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৫ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫