রেজওয়ান তানিম

এই তো দিন তিনেক আগে বেশ কয়েকটি দৈনিকে মোটামুটি গুরুত্ব দিয়েই ছাপা হয় সংবাদটি। বিষয়টা আকস্মিক বলে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারে না। পত্রিকা অফিসে ফোন করে নিশ্চিত হতে চায়, সত্যি ঘটনাটা ঘটেছে কি না।
নিশ্চিত করে জানবার পর সকলেই শোক প্রকাশ করতে থাকে।
পত্রিকায় সকালে এলেও রাত তিনটার দিকে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে টিভিতে প্রথম সংবাদটা আসে। সংবাদটা হলো ‘নন্দিত লেখক রাশেদ আহমেদুল হকের মহাপ্রয়াণ’। দ্রুতই খবরটা বাকি চ্যানেলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
সর্বসাধারণে না হলেও সচেতন পাঠকের কাছে নাম পৌঁছেছে অনেককাল আগেই। লেখার ভিন্নতর বয়ানভঙ্গির জন্য সমালোচকদেরও মুগ্ধ করেছেন তিনি। অগুনতি মানুষ না হলেও তাঁর পাঠকেরা স্বাভাবিকভাবেই শোকার্ত হয়।
চিরকুমার লোকটির প্রয়াণে ফেসবুকে প্রচুর স্ট্যাটাস দেখা যায়। কেউ কেউ তাঁর স্মরণে কাঁদেন, বলেন, ‘আহা এমন নির্বিবাদী লোক এ যুগে বিরল, কখনো খ্যাতির পেছনে দৌড়াননি।’
বিতর্কিত সমালোচকেরা স্বভাবসুলভ উপায়ে এই সময়টাও নিজেকে জাহির করতে কাজে লাগালেন। ফেসবুকে গুনে গুনে চারটা শব্দের স্ট্যাটাস দিলেন, যাতে রাশেদ আহমেদুল হক–এই তিন শব্দের সঙ্গে ছিল একটি ইংরেজি শব্দ ‘অ্যাভারেজ’। অনেকেই তাঁকে খারিজ করলেও একটি পত্রিকায় আব্দুল মোনেম প্রশংসা করে লেখেন, ‘লেখায় নিজের আত্মা মিশিয়েছেন বলেই তা এত জীবন্ত, জলের মতো বহমান।’
রাশেদ আহমেদুল হক যখন মারা যান, তখন পুরো ঘর ছিল ফাঁকা। আর ফাঁকা বলেই বিষয়টা রহস্যের জন্ম দেয়। কেউ ভাবে হার্টফেল, কেউবা স্ট্রোক আবার যারা ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসী, গুজব রটায় আত্মহত্যার। সাধারণ মানুষ থেকে পাঠক বা সমালোচক, সকল পক্ষই তাই পোস্টমর্টেমের ফলাফল জানার অপেক্ষায় থাকে।
অথচ সেই রাতে কেউ যদি ও বাড়িতে উপস্থিত থাকত, তবে লোকটা বেঁচেও যেতে পারত। উপস্থিত ব্যক্তিটি দেখতে পেত বিছানায় শুয়ে লেখক প্রচণ্ড মাথাব্যথায় কাতর।
এমন সময় শুনতে পাচ্ছেন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বাইরের দরজায় এ যুগে বেল না বাজিয়ে কেই-বা এমন করে, ভাবেননি রাশেদ সাহেব। শুরুতে কানে লাগা মৃদু ধ্বনি ক্রমে বাড়তে থাকে। সহকারী আব্দুল নোমানকে বার দু-তিন ডাক দেবার পরেও সাড়া মেলে না। শেষে মনে পড়ে ছুটিতে আছে সে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর কাছে এখন আছে জহরপুরে।
দরজার শব্দ বাড়তে থাকে আর গলা চড়ে রাশেদ সাহেবের। রহিমার মা, রহিমার মা ডাকে সাড়া মেলে না যথারীতি। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে থাকা লেখকের মনে থাকে না, সন্ধ্যের পর রহিমার মা ঘরে ফিরে যায়।
মিনিট দশেক পর বহু কষ্টে উঠে দরজার দিকে আগান। খুলে দিলে দেখতে পান, কালো টি-শার্ট আর নেভি ব্লু জিনস প্যান্ট পরা অস্থিরমুখো একটা লোকের পায়চারি।
দেখামাত্র যেন সমস্ত পীড়া চলে যায় আর হেসে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি এলে?’
লোকটা রাশেদ সাহেবের উচ্ছ্বাসকে প্রশ্রয় দেয় না। তাকে চিন্তিত দেখায়। মুখে সামান্য হাসির ভাব এনে ঘরে ঢোকে, ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় রাশেদ সাহেবকে।
ভ্রু কুঁচকানো অবস্থায় কপালে হাত রাখে।
জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে লেখকের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন আর সামান্য বাকি থাকা নিজের শেষ লেখাটি লিখছেন মৃত্যুপূর্ব সময়ে, পাগলাটে এক ঘোরগ্রস্ততায়। বিড়বিড় করে আওড়ানো পুরোনো কথকতা থামবার নয়। সবটা জুড়ে লোকটা, চলতে থাকে আটত্রিশ বছর আগের স্মৃতিচারণা।
সেদিনও ছিল বৃষ্টিমুখর, ঠিক আজকের আষাঢ় রাতটা যেমন। ঝকঝকে রোদ, আলো ওঠা দিন অথচ একটু পরেই কালো আকাশ—সবাইকে আশ্চর্য করে ঝরতে শুরু করল বৃষ্টি। কয়েক ঘণ্টা ধরে ঝরা বেয়নেট বৃষ্টির ফোঁটাগুলোয় সব যেন ঝাপসা হয়ে আসছে। এমন আলসে দিনে পাশবারান্দায় বসে রাশেদ সাহেবের অবসরের গান গাওয়া, ব্যাপারটা মন্দ নয়।
একটু পরে সে এল। কালো রঙের চেক শার্ট, সঙ্গে বেলবটম প্যান্ট; নিতান্ত সাদামাটা পোশাক তার। রাশেদ আহমেদুল তখন লেখালেখি শুরু করেছেন কেবল। লোকটাকে দেখে বললেন—
আপনি কে? আপনাকে আগে কখনো দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না।
লোকটা উত্তর না দিয়ে হাসল। উল্টো পাশে রাখা বেতের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল। বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রাশেদের দিকে।
রাশেদ উত্তর না পেয়ে বেশ বিরক্ত হলেন। লোকটাকে ঢুকতে দিল কে, সেটা ভেবেও বিরক্তবোধ করছিলেন। তখন তিনি গলায় রাগের ভাব তুলে বললেন—কথা বলছেন না কেন? কে আপনি, কী চান এখানে?
তখন লোকটা হাসল, বেশ এক আমুদে হাসি। তারপর বলল—চিনতে পারছেন না? আপনিই তো আমাকে ডেকে আনলেন। কী নিয়ে যেন আলাপ করবেন বলেছিলেন।
রাশেদ একটু যেন থমকে গেলেন। এরপর বিস্ময় নিয়ে বললেন—আপনিই কি সে?
লোকটা মাথা নাড়ল। রাশেদ প্রশ্ন করতে মুখ খোলার আগেই তাঁকে ইশারায় থামিয়ে দিল লোকটি। রাশেদ তখনো তরুণ, দেশের নামকরা কথাশিল্পী নন। তবে ঠিক বুঝতে পারছেন না, লেখায় নিয়মিত হবেন কি না।
এই পোড়া দেশে লেখক হবার চেয়ে কুকুরজন্মও যে ঢের সুখের, সে কথা তো শরৎবাবু বহু আগেই বলে গেছেন। তবুও কি এই অজানায় ঝাঁপ দেয়া ঠিক হবে?
রাশেদের না করা প্রশ্নকে ‘জানি’ বলে থামিয়ে দেবার পর, উত্তর না দিয়ে লোকটা গল্প শুরু করল। বিষয় অতি সাধারণ, বৃষ্টিতে ভিজবার গল্প। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন। ঝমঝম বৃষ্টিতে লোকটার কথারা ছিল যেন শনশন হাওয়া, যাকে বলে মাতাল বাতাস। অনেক কথার শেষে যাবার আগে সে বলে গেল—
তুমি না জানলেও, মন ঠিকই জানে কী চায় সে। প্রশ্ন করো না মনের কাছে, ঝাঁপ দেবে কি না অতল আগুনে। নিজের কবর নিজেই খুঁড়লে, খারাপ কী? সবাইকেই তো সেখানে যেতে হবে, তুমি না হয় নিজেই তার ব্যবস্থা করলে।
দরজা বন্ধ করে ফিরে এলেন রাশেদ। জানলা দিয়ে দেখছেন ওর চলে যাওয়া। মিনিট দশেক পর দরজায় আওয়াজ। সে ফিরে এসেছে আবার। রাশেদের হাতে একটা কলম তুলে দিয়ে বলল, তোমার জন্যে, ভুলে গিয়েছিলাম দিতে। ভালো থেকো। কোনো সমস্যা হলে ডেকো, চলে আসব যত দ্রুত পারি।
কলমটা এত বছরেও হাতছাড়া হয়নি রাশেদের, বিড়বিড় করে বলতে থাকেন লোকটাকে। কী এক অদ্ভুত গর্বে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাঁর মুখ। লোকটা ওর মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করে, যদিও তাতে তেমন কাজ হয় না। ব্যথাটা বাড়তে থাকলে হাত বাড়িয়ে লোকটাকে স্পর্শ করতে চান রাশেদ আহমেদুল হক। কিন্তু তা আর হয় না। মৃত্যুপথযাত্রী রাশেদের মতো লোকটাও বুঝতে পারে, সময় শেষ, ডাক এসেছে ওপারের। কিছুক্ষণ পর বিছানায় এলিয়ে পড়ে নিথর হাতটা।
চোখের পাপড়িগুলো কিছু একটা বেরিয়ে যাবার অযাচিত বেদনা কী করে যেন অনুভব করে। আর প্রায় সাথে সাথেই দুজনে লিপ্ত হয় জীবনের শেষ আলিঙ্গনে, যা থেকে জেগে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই।
মৃত্যুর আগে রাশেদ আহমেদুল টের পান লোকটার চলে যাওয়া। ‘সে’ চলেছে অনন্তের পথে। কিছুক্ষণ আগে পার্থিব সবকিছু থেকে বিদায় নেয়া রাশেদের মনে হয়তো লোকটার সেই কালো শার্ট আর বেলবটম প্যান্টে আটত্রিশ বছর আগের অবয়বে হাজির হওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। মৃত্যু নিকটে বলেই হয়তো ছায়াহীন অবয়বটির মানুষ হওয়া নিয়েও তার মনে কোনো প্রশ্ন ছিল না।
কিন্তু প্রথম দিনের উজ্জ্বল স্মৃতি, মেঘমেদুর বর্ষাদিনের অমন সুখময় দিনেও ঝুমবৃষ্টিতে বর্ষাতি ছাড়া ঘরে ঢুকে পড়া লোকটার গায়ে বৃষ্টির ছাঁট না থাকা কেন রাশেদ আহমেদুল হকের মতো লেখকের মনে প্রশ্ন জাগায় না—সেটা এখনো আমাদের মতো পাঠকদের জন্য বিস্ময়ের বৈকি!

এই তো দিন তিনেক আগে বেশ কয়েকটি দৈনিকে মোটামুটি গুরুত্ব দিয়েই ছাপা হয় সংবাদটি। বিষয়টা আকস্মিক বলে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারে না। পত্রিকা অফিসে ফোন করে নিশ্চিত হতে চায়, সত্যি ঘটনাটা ঘটেছে কি না।
নিশ্চিত করে জানবার পর সকলেই শোক প্রকাশ করতে থাকে।
পত্রিকায় সকালে এলেও রাত তিনটার দিকে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে টিভিতে প্রথম সংবাদটা আসে। সংবাদটা হলো ‘নন্দিত লেখক রাশেদ আহমেদুল হকের মহাপ্রয়াণ’। দ্রুতই খবরটা বাকি চ্যানেলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
সর্বসাধারণে না হলেও সচেতন পাঠকের কাছে নাম পৌঁছেছে অনেককাল আগেই। লেখার ভিন্নতর বয়ানভঙ্গির জন্য সমালোচকদেরও মুগ্ধ করেছেন তিনি। অগুনতি মানুষ না হলেও তাঁর পাঠকেরা স্বাভাবিকভাবেই শোকার্ত হয়।
চিরকুমার লোকটির প্রয়াণে ফেসবুকে প্রচুর স্ট্যাটাস দেখা যায়। কেউ কেউ তাঁর স্মরণে কাঁদেন, বলেন, ‘আহা এমন নির্বিবাদী লোক এ যুগে বিরল, কখনো খ্যাতির পেছনে দৌড়াননি।’
বিতর্কিত সমালোচকেরা স্বভাবসুলভ উপায়ে এই সময়টাও নিজেকে জাহির করতে কাজে লাগালেন। ফেসবুকে গুনে গুনে চারটা শব্দের স্ট্যাটাস দিলেন, যাতে রাশেদ আহমেদুল হক–এই তিন শব্দের সঙ্গে ছিল একটি ইংরেজি শব্দ ‘অ্যাভারেজ’। অনেকেই তাঁকে খারিজ করলেও একটি পত্রিকায় আব্দুল মোনেম প্রশংসা করে লেখেন, ‘লেখায় নিজের আত্মা মিশিয়েছেন বলেই তা এত জীবন্ত, জলের মতো বহমান।’
রাশেদ আহমেদুল হক যখন মারা যান, তখন পুরো ঘর ছিল ফাঁকা। আর ফাঁকা বলেই বিষয়টা রহস্যের জন্ম দেয়। কেউ ভাবে হার্টফেল, কেউবা স্ট্রোক আবার যারা ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসী, গুজব রটায় আত্মহত্যার। সাধারণ মানুষ থেকে পাঠক বা সমালোচক, সকল পক্ষই তাই পোস্টমর্টেমের ফলাফল জানার অপেক্ষায় থাকে।
অথচ সেই রাতে কেউ যদি ও বাড়িতে উপস্থিত থাকত, তবে লোকটা বেঁচেও যেতে পারত। উপস্থিত ব্যক্তিটি দেখতে পেত বিছানায় শুয়ে লেখক প্রচণ্ড মাথাব্যথায় কাতর।
এমন সময় শুনতে পাচ্ছেন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বাইরের দরজায় এ যুগে বেল না বাজিয়ে কেই-বা এমন করে, ভাবেননি রাশেদ সাহেব। শুরুতে কানে লাগা মৃদু ধ্বনি ক্রমে বাড়তে থাকে। সহকারী আব্দুল নোমানকে বার দু-তিন ডাক দেবার পরেও সাড়া মেলে না। শেষে মনে পড়ে ছুটিতে আছে সে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর কাছে এখন আছে জহরপুরে।
দরজার শব্দ বাড়তে থাকে আর গলা চড়ে রাশেদ সাহেবের। রহিমার মা, রহিমার মা ডাকে সাড়া মেলে না যথারীতি। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে থাকা লেখকের মনে থাকে না, সন্ধ্যের পর রহিমার মা ঘরে ফিরে যায়।
মিনিট দশেক পর বহু কষ্টে উঠে দরজার দিকে আগান। খুলে দিলে দেখতে পান, কালো টি-শার্ট আর নেভি ব্লু জিনস প্যান্ট পরা অস্থিরমুখো একটা লোকের পায়চারি।
দেখামাত্র যেন সমস্ত পীড়া চলে যায় আর হেসে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি এলে?’
লোকটা রাশেদ সাহেবের উচ্ছ্বাসকে প্রশ্রয় দেয় না। তাকে চিন্তিত দেখায়। মুখে সামান্য হাসির ভাব এনে ঘরে ঢোকে, ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় রাশেদ সাহেবকে।
ভ্রু কুঁচকানো অবস্থায় কপালে হাত রাখে।
জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে লেখকের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন আর সামান্য বাকি থাকা নিজের শেষ লেখাটি লিখছেন মৃত্যুপূর্ব সময়ে, পাগলাটে এক ঘোরগ্রস্ততায়। বিড়বিড় করে আওড়ানো পুরোনো কথকতা থামবার নয়। সবটা জুড়ে লোকটা, চলতে থাকে আটত্রিশ বছর আগের স্মৃতিচারণা।
সেদিনও ছিল বৃষ্টিমুখর, ঠিক আজকের আষাঢ় রাতটা যেমন। ঝকঝকে রোদ, আলো ওঠা দিন অথচ একটু পরেই কালো আকাশ—সবাইকে আশ্চর্য করে ঝরতে শুরু করল বৃষ্টি। কয়েক ঘণ্টা ধরে ঝরা বেয়নেট বৃষ্টির ফোঁটাগুলোয় সব যেন ঝাপসা হয়ে আসছে। এমন আলসে দিনে পাশবারান্দায় বসে রাশেদ সাহেবের অবসরের গান গাওয়া, ব্যাপারটা মন্দ নয়।
একটু পরে সে এল। কালো রঙের চেক শার্ট, সঙ্গে বেলবটম প্যান্ট; নিতান্ত সাদামাটা পোশাক তার। রাশেদ আহমেদুল তখন লেখালেখি শুরু করেছেন কেবল। লোকটাকে দেখে বললেন—
আপনি কে? আপনাকে আগে কখনো দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না।
লোকটা উত্তর না দিয়ে হাসল। উল্টো পাশে রাখা বেতের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল। বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রাশেদের দিকে।
রাশেদ উত্তর না পেয়ে বেশ বিরক্ত হলেন। লোকটাকে ঢুকতে দিল কে, সেটা ভেবেও বিরক্তবোধ করছিলেন। তখন তিনি গলায় রাগের ভাব তুলে বললেন—কথা বলছেন না কেন? কে আপনি, কী চান এখানে?
তখন লোকটা হাসল, বেশ এক আমুদে হাসি। তারপর বলল—চিনতে পারছেন না? আপনিই তো আমাকে ডেকে আনলেন। কী নিয়ে যেন আলাপ করবেন বলেছিলেন।
রাশেদ একটু যেন থমকে গেলেন। এরপর বিস্ময় নিয়ে বললেন—আপনিই কি সে?
লোকটা মাথা নাড়ল। রাশেদ প্রশ্ন করতে মুখ খোলার আগেই তাঁকে ইশারায় থামিয়ে দিল লোকটি। রাশেদ তখনো তরুণ, দেশের নামকরা কথাশিল্পী নন। তবে ঠিক বুঝতে পারছেন না, লেখায় নিয়মিত হবেন কি না।
এই পোড়া দেশে লেখক হবার চেয়ে কুকুরজন্মও যে ঢের সুখের, সে কথা তো শরৎবাবু বহু আগেই বলে গেছেন। তবুও কি এই অজানায় ঝাঁপ দেয়া ঠিক হবে?
রাশেদের না করা প্রশ্নকে ‘জানি’ বলে থামিয়ে দেবার পর, উত্তর না দিয়ে লোকটা গল্প শুরু করল। বিষয় অতি সাধারণ, বৃষ্টিতে ভিজবার গল্প। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন। ঝমঝম বৃষ্টিতে লোকটার কথারা ছিল যেন শনশন হাওয়া, যাকে বলে মাতাল বাতাস। অনেক কথার শেষে যাবার আগে সে বলে গেল—
তুমি না জানলেও, মন ঠিকই জানে কী চায় সে। প্রশ্ন করো না মনের কাছে, ঝাঁপ দেবে কি না অতল আগুনে। নিজের কবর নিজেই খুঁড়লে, খারাপ কী? সবাইকেই তো সেখানে যেতে হবে, তুমি না হয় নিজেই তার ব্যবস্থা করলে।
দরজা বন্ধ করে ফিরে এলেন রাশেদ। জানলা দিয়ে দেখছেন ওর চলে যাওয়া। মিনিট দশেক পর দরজায় আওয়াজ। সে ফিরে এসেছে আবার। রাশেদের হাতে একটা কলম তুলে দিয়ে বলল, তোমার জন্যে, ভুলে গিয়েছিলাম দিতে। ভালো থেকো। কোনো সমস্যা হলে ডেকো, চলে আসব যত দ্রুত পারি।
কলমটা এত বছরেও হাতছাড়া হয়নি রাশেদের, বিড়বিড় করে বলতে থাকেন লোকটাকে। কী এক অদ্ভুত গর্বে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাঁর মুখ। লোকটা ওর মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করে, যদিও তাতে তেমন কাজ হয় না। ব্যথাটা বাড়তে থাকলে হাত বাড়িয়ে লোকটাকে স্পর্শ করতে চান রাশেদ আহমেদুল হক। কিন্তু তা আর হয় না। মৃত্যুপথযাত্রী রাশেদের মতো লোকটাও বুঝতে পারে, সময় শেষ, ডাক এসেছে ওপারের। কিছুক্ষণ পর বিছানায় এলিয়ে পড়ে নিথর হাতটা।
চোখের পাপড়িগুলো কিছু একটা বেরিয়ে যাবার অযাচিত বেদনা কী করে যেন অনুভব করে। আর প্রায় সাথে সাথেই দুজনে লিপ্ত হয় জীবনের শেষ আলিঙ্গনে, যা থেকে জেগে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই।
মৃত্যুর আগে রাশেদ আহমেদুল টের পান লোকটার চলে যাওয়া। ‘সে’ চলেছে অনন্তের পথে। কিছুক্ষণ আগে পার্থিব সবকিছু থেকে বিদায় নেয়া রাশেদের মনে হয়তো লোকটার সেই কালো শার্ট আর বেলবটম প্যান্টে আটত্রিশ বছর আগের অবয়বে হাজির হওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। মৃত্যু নিকটে বলেই হয়তো ছায়াহীন অবয়বটির মানুষ হওয়া নিয়েও তার মনে কোনো প্রশ্ন ছিল না।
কিন্তু প্রথম দিনের উজ্জ্বল স্মৃতি, মেঘমেদুর বর্ষাদিনের অমন সুখময় দিনেও ঝুমবৃষ্টিতে বর্ষাতি ছাড়া ঘরে ঢুকে পড়া লোকটার গায়ে বৃষ্টির ছাঁট না থাকা কেন রাশেদ আহমেদুল হকের মতো লেখকের মনে প্রশ্ন জাগায় না—সেটা এখনো আমাদের মতো পাঠকদের জন্য বিস্ময়ের বৈকি!

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৫ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৫ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

এই তো দিন তিনেক আগে বেশ কয়েকটি দৈনিকে মোটামুটি গুরুত্ব দিয়েই ছাপা হয় সংবাদটি। বিষয়টা আকস্মিক বলে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারে না। পত্রিকা অফিসে ফোন করে নিশ্চিত হতে চায়, সত্যি ঘটনাটা ঘটেছে কি না।
২২ অক্টোবর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৫ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

এই তো দিন তিনেক আগে বেশ কয়েকটি দৈনিকে মোটামুটি গুরুত্ব দিয়েই ছাপা হয় সংবাদটি। বিষয়টা আকস্মিক বলে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারে না। পত্রিকা অফিসে ফোন করে নিশ্চিত হতে চায়, সত্যি ঘটনাটা ঘটেছে কি না।
২২ অক্টোবর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৫ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

এই তো দিন তিনেক আগে বেশ কয়েকটি দৈনিকে মোটামুটি গুরুত্ব দিয়েই ছাপা হয় সংবাদটি। বিষয়টা আকস্মিক বলে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারে না। পত্রিকা অফিসে ফোন করে নিশ্চিত হতে চায়, সত্যি ঘটনাটা ঘটেছে কি না।
২২ অক্টোবর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৫ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৫ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

এই তো দিন তিনেক আগে বেশ কয়েকটি দৈনিকে মোটামুটি গুরুত্ব দিয়েই ছাপা হয় সংবাদটি। বিষয়টা আকস্মিক বলে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারে না। পত্রিকা অফিসে ফোন করে নিশ্চিত হতে চায়, সত্যি ঘটনাটা ঘটেছে কি না।
২২ অক্টোবর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৫ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৫ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫