Ajker Patrika

সেই রাতে গল্প আমার ওপরে ভর করেছিল

মনিজা রহমান
সেই রাতে গল্প আমার  ওপরে ভর করেছিল

শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়।

রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ।

সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী চাও?’

‘আমি কী চাই তাতে তোমার কী! তুমি তো অপয়া!’—মেজাজ খারাপ করে কথাটা বলি আমি।

দাঁড়কাক আমাকে দেখে ভেংচি কাটে—‘আমি মরা ডালে বসে সারা দিন তোমাকে দেখি, আর তুমি আমাকে এত পর ভাব!’

‘ভাববই তো! তুমি আমাকে নিয়ে সব সময় রং-তামাশা করো!’

প্রতিদিন আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়কাক আমাকে বিভ্রান্ত করে। দাঁড় করিয়ে দেয় এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে!

জীবনের কাছে আমি কী চাই আসলে! গল্পের কোনো প্লট খুঁজে ফিরি ইতিউতি। সেই রাতে দাঁড়কাক নিজেই যেন নেমে এল গল্প হয়ে! নয়তো পথেঘাটে এত মানুষ থাকতে গল্প এসে আমার ঘাড়ে পড়বে কেন!

উবার ইটস-এর হয়ে ফুড ডেলিভারি করা ছেলেটার কাজ। ভেসপার মতো একটা বাহনে বসে থাকতে দেখলাম ওকে। একদম সেই মরা গাছটার নিচে। আমাকে নিত্য ভেংচি দেয়া দাঁড়কাকটি নেই কোথাও। যে কারণে আমার মনে হতে লাগল, এই দাঁড়কাকটি আসলে ওই তরুণ নয়তো!

ছেলেটার বয়স হবে পঁচিশ থেকে আটাশের মধ্যে। কালো মুখে কালো চাপদাড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম ভারতের দক্ষিণ দিকের কোনো প্রদেশের মানুষ হবে। সে আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলছিল, তবু সেই বাংলা এত দুর্বোধ্য যে তেলেগু কিংবা তামিলের মতো মনে হচ্ছিল।

ছেলেটা একটা ঠিকানা খুঁজছিল ফুড ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। যে কোম্পানির অধীনে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট, তার বিল্ডিংগুলো সব একই রকম দেখতে। মনে হবে অনেকগুলো যমজ ভাইবোন চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

রাত তখন এগারোটা পার হয়ে গেছে। আমাদের এই নিরিবিলি ঝিঁঝিডাকা জায়গাটির জন্য মধ্যরাত বলা যায়। জ্যাকসন হাইটস থেকে একটা প্রোগাম শেষে রীতিমতো ঝলমলে সাজে ঘরে ফিরছি আমি তখন।

হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ছেলেটা ভেসপা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাইহিল জুতা পরা আমার সামনে ছেলেটাকে বেশ বেঁটে মনে হয়। ও যেন আমার মনের কথা ধরতে পারে।

‘দেখেন আপনার সামনে আমি কত বেঁটে। ওই মহিলা আপনার চেয়েও লম্বা, মোটা আর চওড়া। ওনার সঙ্গে কি আমাকে মানায়!’

আমি যেন সপ্ত আসমান থেকে পড়ি। ছেলেটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝি না।

‘কার কথা বলছেন?’ 
 ‘ওই মহিলা হলো কাগজপত্রে আমার স্ত্রী। আমার নাম রাজন মিয়া। বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে বাড়ি। মামায় মিলাইয়া দিছে মহিলার সঙ্গে। মহিলা বলছে, আমাকে হাজব্যান্ড বানায়া নিব।’ 
‘তারপর কি নেয়নি?’

‘তেতাল্লিশ হাজার ডলার দেবার পরে সে আমারে বিয়ে করছে। এখানে আসার পরে পহেলা সে ব্যবহার ভালো করছে। কোনো খারাপ করছে না। কিন্তু এখন তার ছাতালি খাইতে খাইতে আমার জীবন শেষ।’

‘ছাতালি কী জিনিস?’

‘ছাতালি মানে সে আমারে হার্ড টাইম দিছে। আমি যা ইনকাম করি সব সে নিয়া যায়। মহিলা ভালা না। ওর জামাই বাংলাদেশে চইল্যা গেছে। ও সিস্টেম কইরা পাঠাইয়া দিছে। জামাইয়ের বাড়ি-গাড়ি সব নিয়া নিছে। নিজে গাড়ি চালায়ে এদিক-ওদিক আয় যায়। তবে কোনো জব করে না। বাড়িতে সব সময় ড্রিংক করে। আমাকে ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায় বোতল কিনে আনার জন্য।

তারপর যদি একজনের লগে থাকত তাও কথা ছিল! মহিলা ভালা না।’

‘চুক্তি অনুযায়ী তো মহিলার এখন আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা!’

‘সেইটাই তো দ্যায় না। কী যে একখান বিপদে আছি!’

হালকা-পাতলা গড়নের ছেলেটির কালো চাপদাড়ির কালো চেহারা বেদনায় আরও বিবর্ণ হয়। আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝি না—‘আপনার যে মামা, বিয়ের ঘটকালি করছিল, ওনাকে কিছু বলেন নাই?’

‘মামা বলছে, ও তোমার কাগজপত্র আটকে দেবে। চুপচাপ ওর কথামতো কাজ চালিয়ে যাও না মাতি। আবার কোন ফান্দে ফালায়া দিবে।’

বুঝতে পারি কঠিন পরিস্থিতি। সারা দিন তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকলেও এখন আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। চমৎকার হাওয়া বইছে চারদিকে। বাসায় এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করি না। গল্পটা শেষ পর্যন্ত শোনার আগ্রহবোধ করি।

রাজন মিয়া তার ফুড ডেলিভারি শেষে ফিরে আসে। আমি ভেসপার কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখি।

‘এখন কি বাসায় যাবেন স্ত্রীর কাছে?’

‘বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না। এ জন্য রাইতকালে কাজ করি। অনেক লোক ওর কাছে আসে। সবাই এক সাথি বসি ড্রিংক করে। আমার ভালা লাগে না।’

‘আপনাদের কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে?’

‘তিন বছর ধরে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে দুই বছর মেয়াদের গ্রিন কার্ড পেয়েছি। দশ বছরের মেয়াদের পেলে বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে যাব। আমার তো বয়স চলে যাচ্ছে। বিয়ে করা দরকার।’

‘দশ বছরের গ্রিন কার্ড পেলে ভদ্রমহিলা আপনার কিছু করতে পারবে না?’

‘মামায় বলছে, দশ বছরের গ্রিন কার্ড নিয়ে অন্য সিটিতে চলে যেতে। তখন আমি বললাম, ওর সঙ্গে আমার যায় না। আমি ডিভোর্সের আবেদন করব।’

‘চুক্তি অনুযায়ী কি প্রথম গ্রিন কার্ডের পরে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ছিল?’

‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা মহিলা দেয় নাই। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার সঙ্গে সে এনজয় করতে চায়। কিছু বললে বড় বড় চোখ করি মাতে। নিজেরে কী বুঝাইতে চায় নিজেই জানে না।’

‘এনজয়’ শব্দটা শোনার পরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। কিন্তু রাজন মিয়া আমার অস্বস্তি ধরতে পারে না। তাকে কথা বলার নেশায় পেয়েছে।

‘মহিলা আমাকে দিয়া পা মালিশ করায়। তেল রেখে দেয়। আমাকে ওইটা লাগাইতে বলে। পায়ে আবার নূপুর পরে।’

‘আপনাদের কি ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়েছিল?’

‘আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। লোকজন এসে খাওয়াদাওয়া করছে। তার ভিডিও করেছি। বিয়েটা যে আসল সেটা বোঝানোর জন্য এটা করেছি। কিন্তু আমি কবুল বলিনি।’

‘তাহলে তো ধর্মীয়ভাবে আপনারা স্বামী-স্ত্রী নন!’

‘মহিলা এসব কেয়ার করে না। ওর কাছে ইয়াং ছেলেপিলেও আসে। আমরা সিলোটি। বড় মনের মানুষ। কেউ হেল্প চাইলে আমরা আউগাইয়া যাই। কিন্তু আমার হেল্পে কেউ আসে নাই। এই দেশের আইনেও পুরুষদের কোনো সুবিধা নাই।’

আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াই। আমেরিকান আইন নারীকে অধিকার দিয়েছে বেশি। কেউ কেউ কি এই অধিকারের সুবিধা নেয় না! রাজন মিয়া অসহায় চেহারা নিয়ে ভেসপায় গিয়ে বসে। ওর কাজ শেষ হবে ভোরে।

‘আপনাকে ভালা মানুষ মনে করিয়া কথাগুলি বললাম। ওর স্বভাব যদি ভালো হইতো, সুন্দর কইরা কথা বলতো, তাহলে হয়তো ও যা বলছে মানতাম। কিন্তু সে তো তা করে না। সে আমাকে টাকার বিনিময়ে আনছে। এখন আর কী চায় সে! তার প্রাণের শখ মিটাইবে আমাকে দিয়া। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার একটা মন আছে না! তারে যদি এক শ জনে এসে হাতায় আমি কেন তার সঙ্গে রোমান্স করব? আমি ইতা লাইক করি না।’

রাজন মিয়ার কথায় নারী-পুরুষের চিরন্তন জৈবিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সুর। কথাবার্তা চালিয়ে নিতে অস্বস্তি হয়। অনেকটা জোর করে বিদায় নিয়ে চলে আসি। চাবি দিয়ে বাসার গেট খোলার আগে পেছনে ফিরে তাকাই। কর্পূরের মতো উবে গেছে রাজন মিয়া। আমি দ্রুত হেঁটে আবার রাস্তার পাশে চলে আসি। ‘না, কোথাও রাজন মিয়ার ছায়া নেই!’ এতটুকু সময়ের মধ্যে এভাবে কেউ অদৃশ্য হতে পারে দেখে বিস্মিত হই।

মড়া গাছটার দিকে তাকাতে চমকে গিয়ে দেখি ওই দাঁড়কাকটা বসে আছে। আমাকে দেখামাত্র ভেংচি কাটে। তারপর সেই পুরোনো গৎবাঁধা, কিন্তু চিরন্তন প্রশ্নটা করে।

‘জীবনের কাছে কী চাও তুমি?’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত