আব্দুর রহমান

বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিল্লি যখন এগিয়ে যাওয়ার মঞ্চ প্রস্তুত করছে, ঠিক তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাত! হঠাৎ করে ‘মোদির বন্ধু ট্রাম্প’ বৈরী আচরণ করতে শুরু করেছেন!
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারতকে একাধিকবার ‘বন্ধু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সরাসরি সাক্ষাতে, বক্তৃতায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতিতে তিনি এই শব্দ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেই বন্ধুর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন! পাশাপাশি শাস্তিস্বরূপ ভারতের ছয় কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, তাঁর দেশ শুল্ক আলোচনার ক্ষেত্রে ভারতকে কোনো ছাড় দেবে না।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা খুবই কম। কারণ, তাদের শুল্কহার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য নেই বললেই চলে এবং এভাবেই থাকুক।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমার কিছু আসে যায় না। তারা চাইলে তাদের মরা অর্থনীতি একসঙ্গে ডোবাতে পারে!’
অপরদিকে পাকিস্তান আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, বিশেষ করে, জ্বালানি, খনিজ ও আকরিক, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ অন্যান্য খাতে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার ঘোষণা করেছেন, তাঁর প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যার মধ্যে দেশটির ‘বিশাল’ খনিজ তেল রিজার্ভের যৌথ উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত।
চুক্তির অতিরিক্ত বিস্তারিত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র কেন ভারতকে দূরে ঠেলে পাকিস্তানকে কাছে টানছে, সে বিষয়ে বিশ্লেষকেরা একাধিক মত দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হতে পারে—ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দ্রুতই এই যুদ্ধ থামাবেন। কিন্তু ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কিছুই হয়নি।
ট্রাম্প রাশিয়াকে নানাভাবে সুবিধা দেওয়ার কথা দিয়ে, হুমকি দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুতিন কর্ণপাত করেননি। এমনকি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও রাশিয়ার অর্থনীতিকে খুব একটা চাপে ফেলতে পারেনি। বিশেষ করে, ভারতের মতো দেশগুলো রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে থাকায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প কোনো লুকোছাপাও করেননি। তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমার কিছু আসে যায় না। তারা চাইলে তাদের মরা অর্থনীতি একসঙ্গে ডোবাতে পারে!’ তবে এই অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তির ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প কী বোঝাতে চাইলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে ভারতীয় বিশ্লেষক চন্দ্রশেখর শ্রীনিবাসনের মতে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে যে তেল চুক্তি করেছে, তার উদ্দেশ্য আসলে টাকা নয়, বরং ভারতের ওপর চাপ তৈরি করা।
তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের চাওয়া, ভারত যেন রাশিয়ার তেলের বদলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল কেনে। যদিও মোদি আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে তেল কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভারত এখনো রাশিয়ার বড় ক্রেতা। এটা ট্রাম্পকে খুশি করেনি। পাকিস্তানকে সাহায্য করে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ভারতকে বার্তা দিচ্ছে—যদি আমাদের কথা না মানো, তবে তোমার শত্রুকেই আমরা শক্তি দেব।’
বিশ্লেষকদের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম আরও এক বড় কারণ, গত মে মাসে চলা চার দিনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বন্ধে নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন। পাকিস্তান তাঁর এই দাবির সঙ্গে তাল মেলালেও ভারত কঠোর ভাষায় বিরোধিতা করেছে। ভারত জোর দিয়ে বলেছে, যুদ্ধবিরতি কেবল দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে। এখানে তৃতীয় পক্ষের কোনো ভূমিকা ছিল না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং নয়াদিল্লি এই অবস্থান তুলে ধরেছে যে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মধ্যস্থতা ছিল না।
তবে ভারতকে ছেড়ে পাকিস্তানকে আরও কাছে টানার ব্যাপারে ট্রাম্পকে আকৃষ্ট করেছে আরও একটি বিষয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পলিট্যাক্টের প্রধান কৌশলবিদ আরিফ আনসার বলেন, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগ্রহী করে তোলে।
আরিফ আনসার বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলেও পাকিস্তান প্রমাণ করেছে—তারা বড় প্রতিপক্ষকে কৌশলে টপকে যেতে পারে। এই কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত স্বার্থে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
বিষয়টির পক্ষে প্রমাণও মেলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তা করেন, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিকট অতীতে তো বটেই, সুদূর অতীতেও হোয়াইট হাউসে অন্য দেশের হাতে গোনা কয়েকজন সেনাপ্রধানকে আতিথেয়তা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অধ্যাপক রেজা আহমদ রুমি বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে ট্রাম্পের মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ শুধু প্রথা ভাঙা নয়, এটা প্রথার সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এটা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, পাকিস্তান এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নজরেই নেই, তারা ঘনিষ্ঠ পরিসরে চলে এসেছে—অন্তত এই মুহূর্তে।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের এই সম্পর্কের ইতিহাস পুরোনো। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ওয়াশিংটনের পক্ষ নেয়। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করলে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে আফগান মুজাহিদীনদের সহায়তা করে। এই সহযোগিতার ফলে সোভিয়েত সেনারা আফগানিস্তান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এরপর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নামে, তখনো পাকিস্তান পাশে দাঁড়ায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর আস্থা হারাতে থাকে। বিশেষ করে, ২০১১ সালে ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে পাওয়া যাওয়ার পর। শহরটি রাজধানী ইসলামাবাদের কাছেই।
এরপর ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান কৌশলগত সম্পর্ক আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এর পর থেকে পাকিস্তান অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ক্রমেই চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দা ও গবেষণা ব্যুরোতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান-বিষয়ক বিশ্লেষক ওয়াইনবাম বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে সম্মান পাচ্ছে, তা বাইডেন প্রশাসনের সময় পায়নি। ওয়াইনবামের ভাষ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সহায়তা চেয়েছিলেন এবং তা পেয়েছেনও।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘আইসিং অন দ্য কেক’ বা আকর্ষণীয় সংযুক্তি হিসেবে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কিছু সুবিধা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াইনবাম। এর মধ্যে রয়েছে—শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, বিরল খনিজ সম্পদ দেওয়ার প্রস্তাব ও ক্রিপ্টোকারেন্সি-সম্পর্কিত সুযোগ। প্রতিরক্ষা, রোবোটিকস ও ইলেকট্রনিকস শিল্পে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ এখন পাকিস্তান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের কথাও রয়েছে।
পাকিস্তান সম্প্রতি একটি ‘ক্রিপ্টো কাউন্সিল’ গঠন করেছে। এই খাতে বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। রেজা আহমেদ রুমি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায়, পাকিস্তান যেন আঞ্চলিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে, অথচ এর বিনিময়ে খুব বেশি কিছু দিচ্ছে না। মুনিরের জন্য এটা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার সুযোগ এবং দেশের ভেতরে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করার কৌশল হতে পারে।
যাই হোক, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, এ বিষয়ে বোধ হয় আর কোনো সন্দেহ নেই। সে ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক কেমন হবে বা কোন দিকে মোড় নেবে, সেটিও ধর্তব্যে আনার বিষয়। যদিও এখনই নিশ্চিত করে বলা মুশকিল যে, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ফলে চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন হবে। কারণ, পাকিস্তানে চীনের কৌশলগত, অর্থনৈতিকসহ নানা বিনিয়োগ রয়েছে। এমনকি যে যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের ওপর আধিপত্য দেখিয়েছে, তাতেও চীনের সরাসরি অবদান রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান তৈরিতে প্রযুক্তি সহায়তা করছে চীন। দেশটিতে বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। আরব সাগরের তীরের গদর বন্দর প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। কারাকোরাম পর্বতের বুক চিরে পাকিস্তান থেকে চীন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার মহাসড়ক দুই দেশকে সংযুক্ত করেছে। কেবল তাই নয়, পাকিস্তান বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে চীনকে আকসাই চীনসংলগ্ন এলাকায় বিশাল ভূখণ্ড উপহার দিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক চীন কীভাবে নেবে, সেটিও ভাবনার বিষয়।
এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র যদি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তাহলে কি ভারত চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে? এই প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একসময় বন্ধুত্বের সম্পর্ক দেখা গেলেও সম্প্রতি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুটা কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। একাধিক ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা ও শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা ধীরগতিতে চলছে।
চলতি বছরের জুনে কানাডায় জি-৭ সম্মেলনের পর ট্রাম্প মোদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানালেও মোদি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ মাসের শুরুতেই ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপের অভিযোগ দিয়েছে। এতে স্পষ্ট, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা মসৃণভাবে চলছে না, বিশেষ করে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার পর।
ভারত এখন ট্রাম্পের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখবে, তা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে এবং বিকল্প হিসেবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাইয়ের কথা বিবেচনা করছে—এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের থিংকট্যাংক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের’ বৈদেশিক নীতিবিষয়ক প্রধান হর্ষ পন্ত। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে চীনের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বাড়ছে এবং এটি দ্বিপক্ষীয়—চীনও ভারতের দিকে হাত বাড়াচ্ছে।
কিছু দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর প্রথমবারের মতো বেইজিং সফর করেন। ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর চীনা বিনিয়োগে যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল, ভারত এখন তা কিছুটা শিথিল করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
যদিও চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বরাবরই টানাপোড়েনের এবং চীন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সামরিক সহায়তাকারী, তবুও ভারতের পক্ষ থেকে কিছুটা নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে কখনো কঠোর, আবার কখনো নরম অবস্থান নেওয়ায় ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্লারি বলেন, হোয়াইট হাউসে এমন একজন খেয়ালি নেতার অবস্থান থাকায় ভারত মনে করছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতেই পারে। তিনি আরও বলেন, ভারত চিন্তিত যে, চীন শুধু পাকিস্তানকেই সহায়তা করছে না, বরং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতেও তার প্রভাব বাড়ছে। তবে ভারত এখন চীনের ওপর সরাসরি চাপ না দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতেই কৌশলগত চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, আরব নিউজ ও এনডিটিভি

বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিল্লি যখন এগিয়ে যাওয়ার মঞ্চ প্রস্তুত করছে, ঠিক তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাত! হঠাৎ করে ‘মোদির বন্ধু ট্রাম্প’ বৈরী আচরণ করতে শুরু করেছেন!
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারতকে একাধিকবার ‘বন্ধু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সরাসরি সাক্ষাতে, বক্তৃতায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতিতে তিনি এই শব্দ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেই বন্ধুর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন! পাশাপাশি শাস্তিস্বরূপ ভারতের ছয় কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, তাঁর দেশ শুল্ক আলোচনার ক্ষেত্রে ভারতকে কোনো ছাড় দেবে না।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা খুবই কম। কারণ, তাদের শুল্কহার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য নেই বললেই চলে এবং এভাবেই থাকুক।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমার কিছু আসে যায় না। তারা চাইলে তাদের মরা অর্থনীতি একসঙ্গে ডোবাতে পারে!’
অপরদিকে পাকিস্তান আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, বিশেষ করে, জ্বালানি, খনিজ ও আকরিক, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ অন্যান্য খাতে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার ঘোষণা করেছেন, তাঁর প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যার মধ্যে দেশটির ‘বিশাল’ খনিজ তেল রিজার্ভের যৌথ উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত।
চুক্তির অতিরিক্ত বিস্তারিত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র কেন ভারতকে দূরে ঠেলে পাকিস্তানকে কাছে টানছে, সে বিষয়ে বিশ্লেষকেরা একাধিক মত দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হতে পারে—ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দ্রুতই এই যুদ্ধ থামাবেন। কিন্তু ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কিছুই হয়নি।
ট্রাম্প রাশিয়াকে নানাভাবে সুবিধা দেওয়ার কথা দিয়ে, হুমকি দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুতিন কর্ণপাত করেননি। এমনকি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও রাশিয়ার অর্থনীতিকে খুব একটা চাপে ফেলতে পারেনি। বিশেষ করে, ভারতের মতো দেশগুলো রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে থাকায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প কোনো লুকোছাপাও করেননি। তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমার কিছু আসে যায় না। তারা চাইলে তাদের মরা অর্থনীতি একসঙ্গে ডোবাতে পারে!’ তবে এই অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তির ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প কী বোঝাতে চাইলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে ভারতীয় বিশ্লেষক চন্দ্রশেখর শ্রীনিবাসনের মতে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে যে তেল চুক্তি করেছে, তার উদ্দেশ্য আসলে টাকা নয়, বরং ভারতের ওপর চাপ তৈরি করা।
তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের চাওয়া, ভারত যেন রাশিয়ার তেলের বদলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল কেনে। যদিও মোদি আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে তেল কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভারত এখনো রাশিয়ার বড় ক্রেতা। এটা ট্রাম্পকে খুশি করেনি। পাকিস্তানকে সাহায্য করে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ভারতকে বার্তা দিচ্ছে—যদি আমাদের কথা না মানো, তবে তোমার শত্রুকেই আমরা শক্তি দেব।’
বিশ্লেষকদের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম আরও এক বড় কারণ, গত মে মাসে চলা চার দিনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বন্ধে নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন। পাকিস্তান তাঁর এই দাবির সঙ্গে তাল মেলালেও ভারত কঠোর ভাষায় বিরোধিতা করেছে। ভারত জোর দিয়ে বলেছে, যুদ্ধবিরতি কেবল দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে। এখানে তৃতীয় পক্ষের কোনো ভূমিকা ছিল না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং নয়াদিল্লি এই অবস্থান তুলে ধরেছে যে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মধ্যস্থতা ছিল না।
তবে ভারতকে ছেড়ে পাকিস্তানকে আরও কাছে টানার ব্যাপারে ট্রাম্পকে আকৃষ্ট করেছে আরও একটি বিষয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পলিট্যাক্টের প্রধান কৌশলবিদ আরিফ আনসার বলেন, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগ্রহী করে তোলে।
আরিফ আনসার বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলেও পাকিস্তান প্রমাণ করেছে—তারা বড় প্রতিপক্ষকে কৌশলে টপকে যেতে পারে। এই কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত স্বার্থে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
বিষয়টির পক্ষে প্রমাণও মেলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তা করেন, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিকট অতীতে তো বটেই, সুদূর অতীতেও হোয়াইট হাউসে অন্য দেশের হাতে গোনা কয়েকজন সেনাপ্রধানকে আতিথেয়তা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অধ্যাপক রেজা আহমদ রুমি বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে ট্রাম্পের মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ শুধু প্রথা ভাঙা নয়, এটা প্রথার সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এটা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, পাকিস্তান এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নজরেই নেই, তারা ঘনিষ্ঠ পরিসরে চলে এসেছে—অন্তত এই মুহূর্তে।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের এই সম্পর্কের ইতিহাস পুরোনো। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ওয়াশিংটনের পক্ষ নেয়। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করলে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে আফগান মুজাহিদীনদের সহায়তা করে। এই সহযোগিতার ফলে সোভিয়েত সেনারা আফগানিস্তান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এরপর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নামে, তখনো পাকিস্তান পাশে দাঁড়ায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর আস্থা হারাতে থাকে। বিশেষ করে, ২০১১ সালে ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে পাওয়া যাওয়ার পর। শহরটি রাজধানী ইসলামাবাদের কাছেই।
এরপর ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান কৌশলগত সম্পর্ক আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এর পর থেকে পাকিস্তান অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ক্রমেই চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দা ও গবেষণা ব্যুরোতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান-বিষয়ক বিশ্লেষক ওয়াইনবাম বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে সম্মান পাচ্ছে, তা বাইডেন প্রশাসনের সময় পায়নি। ওয়াইনবামের ভাষ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সহায়তা চেয়েছিলেন এবং তা পেয়েছেনও।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘আইসিং অন দ্য কেক’ বা আকর্ষণীয় সংযুক্তি হিসেবে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কিছু সুবিধা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াইনবাম। এর মধ্যে রয়েছে—শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, বিরল খনিজ সম্পদ দেওয়ার প্রস্তাব ও ক্রিপ্টোকারেন্সি-সম্পর্কিত সুযোগ। প্রতিরক্ষা, রোবোটিকস ও ইলেকট্রনিকস শিল্পে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ এখন পাকিস্তান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের কথাও রয়েছে।
পাকিস্তান সম্প্রতি একটি ‘ক্রিপ্টো কাউন্সিল’ গঠন করেছে। এই খাতে বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। রেজা আহমেদ রুমি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায়, পাকিস্তান যেন আঞ্চলিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে, অথচ এর বিনিময়ে খুব বেশি কিছু দিচ্ছে না। মুনিরের জন্য এটা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার সুযোগ এবং দেশের ভেতরে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করার কৌশল হতে পারে।
যাই হোক, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, এ বিষয়ে বোধ হয় আর কোনো সন্দেহ নেই। সে ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক কেমন হবে বা কোন দিকে মোড় নেবে, সেটিও ধর্তব্যে আনার বিষয়। যদিও এখনই নিশ্চিত করে বলা মুশকিল যে, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ফলে চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন হবে। কারণ, পাকিস্তানে চীনের কৌশলগত, অর্থনৈতিকসহ নানা বিনিয়োগ রয়েছে। এমনকি যে যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের ওপর আধিপত্য দেখিয়েছে, তাতেও চীনের সরাসরি অবদান রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান তৈরিতে প্রযুক্তি সহায়তা করছে চীন। দেশটিতে বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। আরব সাগরের তীরের গদর বন্দর প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। কারাকোরাম পর্বতের বুক চিরে পাকিস্তান থেকে চীন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার মহাসড়ক দুই দেশকে সংযুক্ত করেছে। কেবল তাই নয়, পাকিস্তান বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে চীনকে আকসাই চীনসংলগ্ন এলাকায় বিশাল ভূখণ্ড উপহার দিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক চীন কীভাবে নেবে, সেটিও ভাবনার বিষয়।
এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র যদি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তাহলে কি ভারত চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে? এই প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একসময় বন্ধুত্বের সম্পর্ক দেখা গেলেও সম্প্রতি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুটা কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। একাধিক ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা ও শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা ধীরগতিতে চলছে।
চলতি বছরের জুনে কানাডায় জি-৭ সম্মেলনের পর ট্রাম্প মোদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানালেও মোদি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ মাসের শুরুতেই ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপের অভিযোগ দিয়েছে। এতে স্পষ্ট, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা মসৃণভাবে চলছে না, বিশেষ করে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার পর।
ভারত এখন ট্রাম্পের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখবে, তা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে এবং বিকল্প হিসেবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাইয়ের কথা বিবেচনা করছে—এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের থিংকট্যাংক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের’ বৈদেশিক নীতিবিষয়ক প্রধান হর্ষ পন্ত। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে চীনের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বাড়ছে এবং এটি দ্বিপক্ষীয়—চীনও ভারতের দিকে হাত বাড়াচ্ছে।
কিছু দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর প্রথমবারের মতো বেইজিং সফর করেন। ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর চীনা বিনিয়োগে যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল, ভারত এখন তা কিছুটা শিথিল করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
যদিও চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বরাবরই টানাপোড়েনের এবং চীন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সামরিক সহায়তাকারী, তবুও ভারতের পক্ষ থেকে কিছুটা নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে কখনো কঠোর, আবার কখনো নরম অবস্থান নেওয়ায় ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্লারি বলেন, হোয়াইট হাউসে এমন একজন খেয়ালি নেতার অবস্থান থাকায় ভারত মনে করছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতেই পারে। তিনি আরও বলেন, ভারত চিন্তিত যে, চীন শুধু পাকিস্তানকেই সহায়তা করছে না, বরং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতেও তার প্রভাব বাড়ছে। তবে ভারত এখন চীনের ওপর সরাসরি চাপ না দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতেই কৌশলগত চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, আরব নিউজ ও এনডিটিভি

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্ব
৩১ জুলাই ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্ব
৩১ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্ব
৩১ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্ব
৩১ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে