
রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে ওষুধ আর অন্য হাতে পানির বোতল নিয়ে একমুহূর্ত সময় না নিয়েই উল্টো দিকে শুয়ে পড়লেন আব্বু। তাঁর পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। বোতল গড়িয়ে জল পড়ল মেঝেতে। আমি চিৎকার করেছিলাম কি না, মনে নেই। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ‘কী হয়েছে’, ‘কী হয়েছে’ করছিলাম। অদৃশ্য কিছু বুকে ভর করেছে—এমন অভিব্যক্তি আব্বুর চোখমুখে। এই দৃশ্য পরিবারের আর কেউ দেখেনি। চিৎকার করে বোনকে ডাকলাম। বোন ভাইদের ডাকল। খাওয়া ফেলে হাত না ধুয়েই তারা হাজির। আব্বু ততক্ষণে একটু স্বাভাবিক, তবে এলোপাতাড়ি বুকে হাত দিচ্ছেন। এরপর…
খণ্ড খণ্ড জমাট রক্ত বের হলো আব্বুর মুখ দিয়ে। সামলানো যাচ্ছে না। বালতিভর্তি ঘন রক্ত তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমার বাবার কলিজাটাই বুঝি খণ্ড খণ্ড হয়ে বেরিয়ে আসছে! তিনি মূর্ছা যেতে যেতেও যাচ্ছেন না। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। এল। অ্যাম্বুলেন্সে করে এলেন মাত্র দুজন। একজন ড্রাইভার, অন্যজন সাহায্যকারী। ওই একজন সাহায্যকারী একটা হুইলচেয়ার নিয়ে ওপরে এলেন। আব্বুর শরীর ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানি, ঠিক ওই মুহূর্তে আমি ছাড়াও বাড়ির সবাই টের পেয়েছিলেন, এই মানুষটাকে বুঝি আমরা হারাতে বসেছি…।
এক.
অ্যাম্বুলেন্সে মাত্র একজন সাহায্যকারী এসেছেন রোগীকে নিতে, ভাবা যায়? আব্বুকে দুই ভাই আর আমি মিলে হুইলচেয়ারে বসালাম। বাড়িতে লিফট নেই। আব্বুসহ এই হুইলচেয়ার নামাতে হবে সিঁড়ি দিয়ে উল্টো করে। আমি চিৎকার করছি, ‘না না, আব্বু পড়ে যাবে!’ ভাইয়েরা বললেন, ‘কিচ্ছু হবে না পারব।’ দুই ভাই মিলে নামাতে লাগলেন। বড় ভাই সাহায্যকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, ড্রাইভার সাহেব কি একটু আসতে পারবেন? একটু ধরলে ভালো হয়।’ উনি গিয়ে ড্রাইভারকে জানালে ড্রাইভার অসম্মতি জানান ওপরে আসতে। অগত্যা নিজেদেরই নামাতে হলো। রাত ১২টায় দানবের মতো হুইসেল দিয়ে গড়াতে লাগল অ্যাম্বুলেন্সের চাকা। সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে।
দুই.
অ্যাম্বুলেন্স থামল বারডেমে। আব্বু ততক্ষণে ‘একটু পানি খাব, একটু পানি খাব’ বলছেন। কিন্তু পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন, পানি দেওয়া যাবে না, ব্লিডিং বাড়বে। দায়িত্বরত ডাক্তার ব্লাড প্রেশার মাপলেন ও ইসিজি করলেন। আব্বুকে বললেন, ‘বাবা পানি দিচ্ছি, আগে টেস্টটা করে নিই।’ ডাক্তার অস্থির হয়ে বললেন, ‘এখনই আইসিইউ লাগবে।’ উনি পায়চারি করতে করতে সহকারীকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি স্যালাইন দাও।’ ‘আমাদের আইসিইউ খালি নেই।… নয়তো এখনই কলাপস করবে।’ আমরা ছুটলাম হলি ফ্যামিলির উদ্দেশে।
তিন.
শীতের রাত। ট্রলিতে আব্বুর শরীর নেতিয়ে পড়ে আছে। আইভরি রঙের একটা চাদর নিয়ে এসেছিলাম বাসা থেকে। সেটা গায়ে তুলে দিলাম। দুই ভাই রিসেপশনে কথা বলছে। দায়িত্বরত অ্যাটেনডেন্ট বলছেন, ‘আইসিইউ বেড খালি আছে। পার বেড ২৫ হাজার। ভর্তি করবেন?’ বাঁকা হাসি তাঁর ঠোঁটে। আমি আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু একদিকে তাকিয়ে আছেন। ‘পানি দাও’ আবার বললেন। আব্বুর ডিমেনশিয়া ছিল। তিনি হিসাব রাখেননি এ যাবৎ কয়বার বলেছেন এক কথা…। পেমেন্ট করার পর ভদ্রলোক বলে দিলেন আইসিইউ বেডের হদিস। দুজন আয়া চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে আব্বুর গায়ে হাসপাতালের সাদা চাদর ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই শীতের মধ্যে কম্বল আনে নাই এরা!’
চার.
আব্বু আইসিইউর অজানা ঘরে আড়াল হয়ে গেলেন। বাইরের বেঞ্চে আমরা বসে। রাত সোয়া ৩টা তখন। আমরা তিন ভাইবোন আর পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার সেখানে। বড় ভাই রয়ে গেলেন। বাকি দুই ভাইবোন চলে এলাম। বাড়ি ফিরে মনে হলো, ঘরে আলো কেমন কমে গেছে। সে কী দীর্ঘ রাত। আম্মু তখন এক মাসের রোগী। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে আবার। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন। তাঁর গা ঘেঁষে শুয়েছি। আম্মুর চুলে ভাটিকা হেয়ার অয়েলের ঘ্রাণ। অতীত ব্যাপারটা অদ্ভুত—চাইলে চোখের সামনে ধরা দেয়। কিন্তু ভবিষ্যৎটা দেখা যায় না।
ক্লাস ফাইভে যখন উঠলাম, তখন চট্টগ্রাম থেকে একবার আমার বড় বোন এল। আব্বু-আম্মুর জন্য নিয়ে এল ভাটিকা হেয়ার অয়েল। কী সুন্দর ঘ্রাণ তেলের, আবার মাথা ঠান্ডাও হয়ে যায়! আব্বুর রাতে ঘুম হতো না ভালো। ঘুমানোর আগে মাথার চাঁদিতে দেওয়ার জন্যই এনেছিল আমার বোন। এতে মাথা ঠান্ডা হবে আর আব্বু ঘুমাতেও পারবেন। কিন্তু ওই তেল আমার দেওয়া নিষেধ ছিল। কারণ ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে পড়ার সময় মাথা ঘোরাচ্ছে এই বাহানায় ওই তেল দেওয়ার সুযোগ পেতাম।
ভাটিকার ঘ্রাণটাই আমাকে টানত মূলত। সে সময় আম্মু চুলে তেল দেওয়ার কথা বললেই বলতাম, যদি ভাটিকা দিতে দাও তাহলে তেল দেব, নয়তো না। আম্মু তখন অকারণ বকবক করতেন। কিন্তু তাঁর মনে হতো তিনি যৌক্তিক কথা বলছেন। আব্বু আম্মুকে বলতেন, দাও না। কী হবে দিলে? তখন আব্বু বসতেন খাটের ওপরে আর আমি রান্নাঘর থেকে মোড়া এনে খাটের কাছে আব্বুর সামনে বসতাম। আব্বু পেছন থেকেই আমার মাথার মাঝ বরাবর সিঁথি করে চুলকে দুই ভাগ করতেন। তারপর এক এক পাশ করে তেল লাগাতেন। বলতেন, তেল হচ্ছে চুলের খাবার। তুমি না খেলে যেমন পুষ্টি পাবে না, তেমনি চুলও তেল না পেলে পুষ্টি না পেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
মাঝেমধ্যে তেল দিতে দিতে একটা হিন্দি গানও গাইতেন আব্বু। তখন জানতাম না গানটা আসলে কার বা কোন সিনেমার। গানটা হচ্ছে, ‘চান্দনি জেইসা রাঙ হ্যায় তেরা, সোনে জেইসে বাল/ এক তুহি ধানবান হ্যায় গোরি, বাকি সাব কাঙাল।’
এই রাত কখন শেষ হবে…।
পাঁচ.
পরদিন হাসপাতালে গিয়ে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে একবার আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে পারলাম। তাঁর বুক অবধি তুলে দেওয়া সবুজ কম্বল। এক হাতে স্যালাইন, আরেক হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাইরে ডোনারদের লাইন। আব্বুর দুই হাত বেডের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমাকে বললেন, ‘বাবা খুলে দাও। আমি এক কাত হয়ে ঘুমাব।’ আমি সিস্টারকে প্রশ্ন করলাম, ‘আব্বুর হাত-পা বেঁধে রেখেছেন কেন?’ বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক নড়াচড়া করে। খালি বলেন খুলে দাও। এত নড়াচড়া করলে ব্লাড স্যালাইন সব বেরিয়ে একাকার হবে। ওনাকে বারবার বলছি, তা-ও একই কথা বলেন!’ আমি জানালাম, ‘আমার বাবার ডিমেনশিয়া আছে। তিনি জানেন না ঠিক কতবার কী কথা বলছেন।’ তাঁদের তাড়াহুড়োয় আব্বুর কপালে একটু চুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলাম। আব্বু কী বললেন শুনলাম না। এটাই শেষ চুমু।
ছয়.
করিডরে বসে আছি। আইসিইউ থেকে একজন নার্স বেরিয়ে এলেন। আমার ভাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবার কী অবস্থা?’ নার্স এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’ ভাই জিজ্ঞাসু চোখে তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি আবারও বললেন, ‘এক কথা বারবার বলেন।’ আমি তাকিয়ে রইলাম। রোগ সম্পর্কে বুঝতে পেরেও একজন কীভাবে এভাবে বলে? এ ঘটনার পর আব্বুকে প্যাথেড্রিন দেওয়া হয়। চোখ খোলা অবস্থায় আর দেখিনি।
সাত.
পরদিন সকালে আব্বুর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তাঁর মাথার তালুতে বারবার স্পর্শ করছিলাম। আব্বু কি সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন? মনে হচ্ছিল, পুরো পৃথিবীতে আব্বুর মৃতদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা। কী অদ্ভুত, না? বাবা ছাড়া বেঁচে থাকা যায়? অথচ ওরা কী অবলীলায় বলে দিল, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে ওষুধ আর অন্য হাতে পানির বোতল নিয়ে একমুহূর্ত সময় না নিয়েই উল্টো দিকে শুয়ে পড়লেন আব্বু। তাঁর পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। বোতল গড়িয়ে জল পড়ল মেঝেতে। আমি চিৎকার করেছিলাম কি না, মনে নেই। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ‘কী হয়েছে’, ‘কী হয়েছে’ করছিলাম। অদৃশ্য কিছু বুকে ভর করেছে—এমন অভিব্যক্তি আব্বুর চোখমুখে। এই দৃশ্য পরিবারের আর কেউ দেখেনি। চিৎকার করে বোনকে ডাকলাম। বোন ভাইদের ডাকল। খাওয়া ফেলে হাত না ধুয়েই তারা হাজির। আব্বু ততক্ষণে একটু স্বাভাবিক, তবে এলোপাতাড়ি বুকে হাত দিচ্ছেন। এরপর…
খণ্ড খণ্ড জমাট রক্ত বের হলো আব্বুর মুখ দিয়ে। সামলানো যাচ্ছে না। বালতিভর্তি ঘন রক্ত তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমার বাবার কলিজাটাই বুঝি খণ্ড খণ্ড হয়ে বেরিয়ে আসছে! তিনি মূর্ছা যেতে যেতেও যাচ্ছেন না। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। এল। অ্যাম্বুলেন্সে করে এলেন মাত্র দুজন। একজন ড্রাইভার, অন্যজন সাহায্যকারী। ওই একজন সাহায্যকারী একটা হুইলচেয়ার নিয়ে ওপরে এলেন। আব্বুর শরীর ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানি, ঠিক ওই মুহূর্তে আমি ছাড়াও বাড়ির সবাই টের পেয়েছিলেন, এই মানুষটাকে বুঝি আমরা হারাতে বসেছি…।
এক.
অ্যাম্বুলেন্সে মাত্র একজন সাহায্যকারী এসেছেন রোগীকে নিতে, ভাবা যায়? আব্বুকে দুই ভাই আর আমি মিলে হুইলচেয়ারে বসালাম। বাড়িতে লিফট নেই। আব্বুসহ এই হুইলচেয়ার নামাতে হবে সিঁড়ি দিয়ে উল্টো করে। আমি চিৎকার করছি, ‘না না, আব্বু পড়ে যাবে!’ ভাইয়েরা বললেন, ‘কিচ্ছু হবে না পারব।’ দুই ভাই মিলে নামাতে লাগলেন। বড় ভাই সাহায্যকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, ড্রাইভার সাহেব কি একটু আসতে পারবেন? একটু ধরলে ভালো হয়।’ উনি গিয়ে ড্রাইভারকে জানালে ড্রাইভার অসম্মতি জানান ওপরে আসতে। অগত্যা নিজেদেরই নামাতে হলো। রাত ১২টায় দানবের মতো হুইসেল দিয়ে গড়াতে লাগল অ্যাম্বুলেন্সের চাকা। সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে।
দুই.
অ্যাম্বুলেন্স থামল বারডেমে। আব্বু ততক্ষণে ‘একটু পানি খাব, একটু পানি খাব’ বলছেন। কিন্তু পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন, পানি দেওয়া যাবে না, ব্লিডিং বাড়বে। দায়িত্বরত ডাক্তার ব্লাড প্রেশার মাপলেন ও ইসিজি করলেন। আব্বুকে বললেন, ‘বাবা পানি দিচ্ছি, আগে টেস্টটা করে নিই।’ ডাক্তার অস্থির হয়ে বললেন, ‘এখনই আইসিইউ লাগবে।’ উনি পায়চারি করতে করতে সহকারীকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি স্যালাইন দাও।’ ‘আমাদের আইসিইউ খালি নেই।… নয়তো এখনই কলাপস করবে।’ আমরা ছুটলাম হলি ফ্যামিলির উদ্দেশে।
তিন.
শীতের রাত। ট্রলিতে আব্বুর শরীর নেতিয়ে পড়ে আছে। আইভরি রঙের একটা চাদর নিয়ে এসেছিলাম বাসা থেকে। সেটা গায়ে তুলে দিলাম। দুই ভাই রিসেপশনে কথা বলছে। দায়িত্বরত অ্যাটেনডেন্ট বলছেন, ‘আইসিইউ বেড খালি আছে। পার বেড ২৫ হাজার। ভর্তি করবেন?’ বাঁকা হাসি তাঁর ঠোঁটে। আমি আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু একদিকে তাকিয়ে আছেন। ‘পানি দাও’ আবার বললেন। আব্বুর ডিমেনশিয়া ছিল। তিনি হিসাব রাখেননি এ যাবৎ কয়বার বলেছেন এক কথা…। পেমেন্ট করার পর ভদ্রলোক বলে দিলেন আইসিইউ বেডের হদিস। দুজন আয়া চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে আব্বুর গায়ে হাসপাতালের সাদা চাদর ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই শীতের মধ্যে কম্বল আনে নাই এরা!’
চার.
আব্বু আইসিইউর অজানা ঘরে আড়াল হয়ে গেলেন। বাইরের বেঞ্চে আমরা বসে। রাত সোয়া ৩টা তখন। আমরা তিন ভাইবোন আর পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার সেখানে। বড় ভাই রয়ে গেলেন। বাকি দুই ভাইবোন চলে এলাম। বাড়ি ফিরে মনে হলো, ঘরে আলো কেমন কমে গেছে। সে কী দীর্ঘ রাত। আম্মু তখন এক মাসের রোগী। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে আবার। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন। তাঁর গা ঘেঁষে শুয়েছি। আম্মুর চুলে ভাটিকা হেয়ার অয়েলের ঘ্রাণ। অতীত ব্যাপারটা অদ্ভুত—চাইলে চোখের সামনে ধরা দেয়। কিন্তু ভবিষ্যৎটা দেখা যায় না।
ক্লাস ফাইভে যখন উঠলাম, তখন চট্টগ্রাম থেকে একবার আমার বড় বোন এল। আব্বু-আম্মুর জন্য নিয়ে এল ভাটিকা হেয়ার অয়েল। কী সুন্দর ঘ্রাণ তেলের, আবার মাথা ঠান্ডাও হয়ে যায়! আব্বুর রাতে ঘুম হতো না ভালো। ঘুমানোর আগে মাথার চাঁদিতে দেওয়ার জন্যই এনেছিল আমার বোন। এতে মাথা ঠান্ডা হবে আর আব্বু ঘুমাতেও পারবেন। কিন্তু ওই তেল আমার দেওয়া নিষেধ ছিল। কারণ ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে পড়ার সময় মাথা ঘোরাচ্ছে এই বাহানায় ওই তেল দেওয়ার সুযোগ পেতাম।
ভাটিকার ঘ্রাণটাই আমাকে টানত মূলত। সে সময় আম্মু চুলে তেল দেওয়ার কথা বললেই বলতাম, যদি ভাটিকা দিতে দাও তাহলে তেল দেব, নয়তো না। আম্মু তখন অকারণ বকবক করতেন। কিন্তু তাঁর মনে হতো তিনি যৌক্তিক কথা বলছেন। আব্বু আম্মুকে বলতেন, দাও না। কী হবে দিলে? তখন আব্বু বসতেন খাটের ওপরে আর আমি রান্নাঘর থেকে মোড়া এনে খাটের কাছে আব্বুর সামনে বসতাম। আব্বু পেছন থেকেই আমার মাথার মাঝ বরাবর সিঁথি করে চুলকে দুই ভাগ করতেন। তারপর এক এক পাশ করে তেল লাগাতেন। বলতেন, তেল হচ্ছে চুলের খাবার। তুমি না খেলে যেমন পুষ্টি পাবে না, তেমনি চুলও তেল না পেলে পুষ্টি না পেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
মাঝেমধ্যে তেল দিতে দিতে একটা হিন্দি গানও গাইতেন আব্বু। তখন জানতাম না গানটা আসলে কার বা কোন সিনেমার। গানটা হচ্ছে, ‘চান্দনি জেইসা রাঙ হ্যায় তেরা, সোনে জেইসে বাল/ এক তুহি ধানবান হ্যায় গোরি, বাকি সাব কাঙাল।’
এই রাত কখন শেষ হবে…।
পাঁচ.
পরদিন হাসপাতালে গিয়ে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে একবার আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে পারলাম। তাঁর বুক অবধি তুলে দেওয়া সবুজ কম্বল। এক হাতে স্যালাইন, আরেক হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাইরে ডোনারদের লাইন। আব্বুর দুই হাত বেডের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমাকে বললেন, ‘বাবা খুলে দাও। আমি এক কাত হয়ে ঘুমাব।’ আমি সিস্টারকে প্রশ্ন করলাম, ‘আব্বুর হাত-পা বেঁধে রেখেছেন কেন?’ বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক নড়াচড়া করে। খালি বলেন খুলে দাও। এত নড়াচড়া করলে ব্লাড স্যালাইন সব বেরিয়ে একাকার হবে। ওনাকে বারবার বলছি, তা-ও একই কথা বলেন!’ আমি জানালাম, ‘আমার বাবার ডিমেনশিয়া আছে। তিনি জানেন না ঠিক কতবার কী কথা বলছেন।’ তাঁদের তাড়াহুড়োয় আব্বুর কপালে একটু চুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলাম। আব্বু কী বললেন শুনলাম না। এটাই শেষ চুমু।
ছয়.
করিডরে বসে আছি। আইসিইউ থেকে একজন নার্স বেরিয়ে এলেন। আমার ভাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবার কী অবস্থা?’ নার্স এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’ ভাই জিজ্ঞাসু চোখে তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি আবারও বললেন, ‘এক কথা বারবার বলেন।’ আমি তাকিয়ে রইলাম। রোগ সম্পর্কে বুঝতে পেরেও একজন কীভাবে এভাবে বলে? এ ঘটনার পর আব্বুকে প্যাথেড্রিন দেওয়া হয়। চোখ খোলা অবস্থায় আর দেখিনি।
সাত.
পরদিন সকালে আব্বুর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তাঁর মাথার তালুতে বারবার স্পর্শ করছিলাম। আব্বু কি সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন? মনে হচ্ছিল, পুরো পৃথিবীতে আব্বুর মৃতদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা। কী অদ্ভুত, না? বাবা ছাড়া বেঁচে থাকা যায়? অথচ ওরা কী অবলীলায় বলে দিল, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
১৬ ঘণ্টা আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
২ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৩ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?
...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।
আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...
সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?
...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।
আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...
সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে...
১৯ জুন ২০২২
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
২ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৩ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।
ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।
ছবি: সংগৃহীত

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে...
১৯ জুন ২০২২
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
১৬ ঘণ্টা আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৩ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে...
১৯ জুন ২০২২
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
১৬ ঘণ্টা আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
২ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে...
১৯ জুন ২০২২
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
১৬ ঘণ্টা আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
২ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৩ দিন আগে