
রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে ওষুধ আর অন্য হাতে পানির বোতল নিয়ে একমুহূর্ত সময় না নিয়েই উল্টো দিকে শুয়ে পড়লেন আব্বু। তাঁর পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। বোতল গড়িয়ে জল পড়ল মেঝেতে। আমি চিৎকার করেছিলাম কি না, মনে নেই। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ‘কী হয়েছে’, ‘কী হয়েছে’ করছিলাম। অদৃশ্য কিছু বুকে ভর করেছে—এমন অভিব্যক্তি আব্বুর চোখমুখে। এই দৃশ্য পরিবারের আর কেউ দেখেনি। চিৎকার করে বোনকে ডাকলাম। বোন ভাইদের ডাকল। খাওয়া ফেলে হাত না ধুয়েই তারা হাজির। আব্বু ততক্ষণে একটু স্বাভাবিক, তবে এলোপাতাড়ি বুকে হাত দিচ্ছেন। এরপর…
খণ্ড খণ্ড জমাট রক্ত বের হলো আব্বুর মুখ দিয়ে। সামলানো যাচ্ছে না। বালতিভর্তি ঘন রক্ত তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমার বাবার কলিজাটাই বুঝি খণ্ড খণ্ড হয়ে বেরিয়ে আসছে! তিনি মূর্ছা যেতে যেতেও যাচ্ছেন না। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। এল। অ্যাম্বুলেন্সে করে এলেন মাত্র দুজন। একজন ড্রাইভার, অন্যজন সাহায্যকারী। ওই একজন সাহায্যকারী একটা হুইলচেয়ার নিয়ে ওপরে এলেন। আব্বুর শরীর ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানি, ঠিক ওই মুহূর্তে আমি ছাড়াও বাড়ির সবাই টের পেয়েছিলেন, এই মানুষটাকে বুঝি আমরা হারাতে বসেছি…।
এক.
অ্যাম্বুলেন্সে মাত্র একজন সাহায্যকারী এসেছেন রোগীকে নিতে, ভাবা যায়? আব্বুকে দুই ভাই আর আমি মিলে হুইলচেয়ারে বসালাম। বাড়িতে লিফট নেই। আব্বুসহ এই হুইলচেয়ার নামাতে হবে সিঁড়ি দিয়ে উল্টো করে। আমি চিৎকার করছি, ‘না না, আব্বু পড়ে যাবে!’ ভাইয়েরা বললেন, ‘কিচ্ছু হবে না পারব।’ দুই ভাই মিলে নামাতে লাগলেন। বড় ভাই সাহায্যকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, ড্রাইভার সাহেব কি একটু আসতে পারবেন? একটু ধরলে ভালো হয়।’ উনি গিয়ে ড্রাইভারকে জানালে ড্রাইভার অসম্মতি জানান ওপরে আসতে। অগত্যা নিজেদেরই নামাতে হলো। রাত ১২টায় দানবের মতো হুইসেল দিয়ে গড়াতে লাগল অ্যাম্বুলেন্সের চাকা। সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে।
দুই.
অ্যাম্বুলেন্স থামল বারডেমে। আব্বু ততক্ষণে ‘একটু পানি খাব, একটু পানি খাব’ বলছেন। কিন্তু পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন, পানি দেওয়া যাবে না, ব্লিডিং বাড়বে। দায়িত্বরত ডাক্তার ব্লাড প্রেশার মাপলেন ও ইসিজি করলেন। আব্বুকে বললেন, ‘বাবা পানি দিচ্ছি, আগে টেস্টটা করে নিই।’ ডাক্তার অস্থির হয়ে বললেন, ‘এখনই আইসিইউ লাগবে।’ উনি পায়চারি করতে করতে সহকারীকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি স্যালাইন দাও।’ ‘আমাদের আইসিইউ খালি নেই।… নয়তো এখনই কলাপস করবে।’ আমরা ছুটলাম হলি ফ্যামিলির উদ্দেশে।
তিন.
শীতের রাত। ট্রলিতে আব্বুর শরীর নেতিয়ে পড়ে আছে। আইভরি রঙের একটা চাদর নিয়ে এসেছিলাম বাসা থেকে। সেটা গায়ে তুলে দিলাম। দুই ভাই রিসেপশনে কথা বলছে। দায়িত্বরত অ্যাটেনডেন্ট বলছেন, ‘আইসিইউ বেড খালি আছে। পার বেড ২৫ হাজার। ভর্তি করবেন?’ বাঁকা হাসি তাঁর ঠোঁটে। আমি আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু একদিকে তাকিয়ে আছেন। ‘পানি দাও’ আবার বললেন। আব্বুর ডিমেনশিয়া ছিল। তিনি হিসাব রাখেননি এ যাবৎ কয়বার বলেছেন এক কথা…। পেমেন্ট করার পর ভদ্রলোক বলে দিলেন আইসিইউ বেডের হদিস। দুজন আয়া চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে আব্বুর গায়ে হাসপাতালের সাদা চাদর ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই শীতের মধ্যে কম্বল আনে নাই এরা!’
চার.
আব্বু আইসিইউর অজানা ঘরে আড়াল হয়ে গেলেন। বাইরের বেঞ্চে আমরা বসে। রাত সোয়া ৩টা তখন। আমরা তিন ভাইবোন আর পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার সেখানে। বড় ভাই রয়ে গেলেন। বাকি দুই ভাইবোন চলে এলাম। বাড়ি ফিরে মনে হলো, ঘরে আলো কেমন কমে গেছে। সে কী দীর্ঘ রাত। আম্মু তখন এক মাসের রোগী। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে আবার। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন। তাঁর গা ঘেঁষে শুয়েছি। আম্মুর চুলে ভাটিকা হেয়ার অয়েলের ঘ্রাণ। অতীত ব্যাপারটা অদ্ভুত—চাইলে চোখের সামনে ধরা দেয়। কিন্তু ভবিষ্যৎটা দেখা যায় না।
ক্লাস ফাইভে যখন উঠলাম, তখন চট্টগ্রাম থেকে একবার আমার বড় বোন এল। আব্বু-আম্মুর জন্য নিয়ে এল ভাটিকা হেয়ার অয়েল। কী সুন্দর ঘ্রাণ তেলের, আবার মাথা ঠান্ডাও হয়ে যায়! আব্বুর রাতে ঘুম হতো না ভালো। ঘুমানোর আগে মাথার চাঁদিতে দেওয়ার জন্যই এনেছিল আমার বোন। এতে মাথা ঠান্ডা হবে আর আব্বু ঘুমাতেও পারবেন। কিন্তু ওই তেল আমার দেওয়া নিষেধ ছিল। কারণ ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে পড়ার সময় মাথা ঘোরাচ্ছে এই বাহানায় ওই তেল দেওয়ার সুযোগ পেতাম।
ভাটিকার ঘ্রাণটাই আমাকে টানত মূলত। সে সময় আম্মু চুলে তেল দেওয়ার কথা বললেই বলতাম, যদি ভাটিকা দিতে দাও তাহলে তেল দেব, নয়তো না। আম্মু তখন অকারণ বকবক করতেন। কিন্তু তাঁর মনে হতো তিনি যৌক্তিক কথা বলছেন। আব্বু আম্মুকে বলতেন, দাও না। কী হবে দিলে? তখন আব্বু বসতেন খাটের ওপরে আর আমি রান্নাঘর থেকে মোড়া এনে খাটের কাছে আব্বুর সামনে বসতাম। আব্বু পেছন থেকেই আমার মাথার মাঝ বরাবর সিঁথি করে চুলকে দুই ভাগ করতেন। তারপর এক এক পাশ করে তেল লাগাতেন। বলতেন, তেল হচ্ছে চুলের খাবার। তুমি না খেলে যেমন পুষ্টি পাবে না, তেমনি চুলও তেল না পেলে পুষ্টি না পেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
মাঝেমধ্যে তেল দিতে দিতে একটা হিন্দি গানও গাইতেন আব্বু। তখন জানতাম না গানটা আসলে কার বা কোন সিনেমার। গানটা হচ্ছে, ‘চান্দনি জেইসা রাঙ হ্যায় তেরা, সোনে জেইসে বাল/ এক তুহি ধানবান হ্যায় গোরি, বাকি সাব কাঙাল।’
এই রাত কখন শেষ হবে…।
পাঁচ.
পরদিন হাসপাতালে গিয়ে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে একবার আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে পারলাম। তাঁর বুক অবধি তুলে দেওয়া সবুজ কম্বল। এক হাতে স্যালাইন, আরেক হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাইরে ডোনারদের লাইন। আব্বুর দুই হাত বেডের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমাকে বললেন, ‘বাবা খুলে দাও। আমি এক কাত হয়ে ঘুমাব।’ আমি সিস্টারকে প্রশ্ন করলাম, ‘আব্বুর হাত-পা বেঁধে রেখেছেন কেন?’ বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক নড়াচড়া করে। খালি বলেন খুলে দাও। এত নড়াচড়া করলে ব্লাড স্যালাইন সব বেরিয়ে একাকার হবে। ওনাকে বারবার বলছি, তা-ও একই কথা বলেন!’ আমি জানালাম, ‘আমার বাবার ডিমেনশিয়া আছে। তিনি জানেন না ঠিক কতবার কী কথা বলছেন।’ তাঁদের তাড়াহুড়োয় আব্বুর কপালে একটু চুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলাম। আব্বু কী বললেন শুনলাম না। এটাই শেষ চুমু।
ছয়.
করিডরে বসে আছি। আইসিইউ থেকে একজন নার্স বেরিয়ে এলেন। আমার ভাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবার কী অবস্থা?’ নার্স এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’ ভাই জিজ্ঞাসু চোখে তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি আবারও বললেন, ‘এক কথা বারবার বলেন।’ আমি তাকিয়ে রইলাম। রোগ সম্পর্কে বুঝতে পেরেও একজন কীভাবে এভাবে বলে? এ ঘটনার পর আব্বুকে প্যাথেড্রিন দেওয়া হয়। চোখ খোলা অবস্থায় আর দেখিনি।
সাত.
পরদিন সকালে আব্বুর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তাঁর মাথার তালুতে বারবার স্পর্শ করছিলাম। আব্বু কি সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন? মনে হচ্ছিল, পুরো পৃথিবীতে আব্বুর মৃতদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা। কী অদ্ভুত, না? বাবা ছাড়া বেঁচে থাকা যায়? অথচ ওরা কী অবলীলায় বলে দিল, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে ওষুধ আর অন্য হাতে পানির বোতল নিয়ে একমুহূর্ত সময় না নিয়েই উল্টো দিকে শুয়ে পড়লেন আব্বু। তাঁর পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। বোতল গড়িয়ে জল পড়ল মেঝেতে। আমি চিৎকার করেছিলাম কি না, মনে নেই। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ‘কী হয়েছে’, ‘কী হয়েছে’ করছিলাম। অদৃশ্য কিছু বুকে ভর করেছে—এমন অভিব্যক্তি আব্বুর চোখমুখে। এই দৃশ্য পরিবারের আর কেউ দেখেনি। চিৎকার করে বোনকে ডাকলাম। বোন ভাইদের ডাকল। খাওয়া ফেলে হাত না ধুয়েই তারা হাজির। আব্বু ততক্ষণে একটু স্বাভাবিক, তবে এলোপাতাড়ি বুকে হাত দিচ্ছেন। এরপর…
খণ্ড খণ্ড জমাট রক্ত বের হলো আব্বুর মুখ দিয়ে। সামলানো যাচ্ছে না। বালতিভর্তি ঘন রক্ত তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমার বাবার কলিজাটাই বুঝি খণ্ড খণ্ড হয়ে বেরিয়ে আসছে! তিনি মূর্ছা যেতে যেতেও যাচ্ছেন না। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। এল। অ্যাম্বুলেন্সে করে এলেন মাত্র দুজন। একজন ড্রাইভার, অন্যজন সাহায্যকারী। ওই একজন সাহায্যকারী একটা হুইলচেয়ার নিয়ে ওপরে এলেন। আব্বুর শরীর ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানি, ঠিক ওই মুহূর্তে আমি ছাড়াও বাড়ির সবাই টের পেয়েছিলেন, এই মানুষটাকে বুঝি আমরা হারাতে বসেছি…।
এক.
অ্যাম্বুলেন্সে মাত্র একজন সাহায্যকারী এসেছেন রোগীকে নিতে, ভাবা যায়? আব্বুকে দুই ভাই আর আমি মিলে হুইলচেয়ারে বসালাম। বাড়িতে লিফট নেই। আব্বুসহ এই হুইলচেয়ার নামাতে হবে সিঁড়ি দিয়ে উল্টো করে। আমি চিৎকার করছি, ‘না না, আব্বু পড়ে যাবে!’ ভাইয়েরা বললেন, ‘কিচ্ছু হবে না পারব।’ দুই ভাই মিলে নামাতে লাগলেন। বড় ভাই সাহায্যকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, ড্রাইভার সাহেব কি একটু আসতে পারবেন? একটু ধরলে ভালো হয়।’ উনি গিয়ে ড্রাইভারকে জানালে ড্রাইভার অসম্মতি জানান ওপরে আসতে। অগত্যা নিজেদেরই নামাতে হলো। রাত ১২টায় দানবের মতো হুইসেল দিয়ে গড়াতে লাগল অ্যাম্বুলেন্সের চাকা। সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে।
দুই.
অ্যাম্বুলেন্স থামল বারডেমে। আব্বু ততক্ষণে ‘একটু পানি খাব, একটু পানি খাব’ বলছেন। কিন্তু পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন, পানি দেওয়া যাবে না, ব্লিডিং বাড়বে। দায়িত্বরত ডাক্তার ব্লাড প্রেশার মাপলেন ও ইসিজি করলেন। আব্বুকে বললেন, ‘বাবা পানি দিচ্ছি, আগে টেস্টটা করে নিই।’ ডাক্তার অস্থির হয়ে বললেন, ‘এখনই আইসিইউ লাগবে।’ উনি পায়চারি করতে করতে সহকারীকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি স্যালাইন দাও।’ ‘আমাদের আইসিইউ খালি নেই।… নয়তো এখনই কলাপস করবে।’ আমরা ছুটলাম হলি ফ্যামিলির উদ্দেশে।
তিন.
শীতের রাত। ট্রলিতে আব্বুর শরীর নেতিয়ে পড়ে আছে। আইভরি রঙের একটা চাদর নিয়ে এসেছিলাম বাসা থেকে। সেটা গায়ে তুলে দিলাম। দুই ভাই রিসেপশনে কথা বলছে। দায়িত্বরত অ্যাটেনডেন্ট বলছেন, ‘আইসিইউ বেড খালি আছে। পার বেড ২৫ হাজার। ভর্তি করবেন?’ বাঁকা হাসি তাঁর ঠোঁটে। আমি আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু একদিকে তাকিয়ে আছেন। ‘পানি দাও’ আবার বললেন। আব্বুর ডিমেনশিয়া ছিল। তিনি হিসাব রাখেননি এ যাবৎ কয়বার বলেছেন এক কথা…। পেমেন্ট করার পর ভদ্রলোক বলে দিলেন আইসিইউ বেডের হদিস। দুজন আয়া চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে আব্বুর গায়ে হাসপাতালের সাদা চাদর ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই শীতের মধ্যে কম্বল আনে নাই এরা!’
চার.
আব্বু আইসিইউর অজানা ঘরে আড়াল হয়ে গেলেন। বাইরের বেঞ্চে আমরা বসে। রাত সোয়া ৩টা তখন। আমরা তিন ভাইবোন আর পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার সেখানে। বড় ভাই রয়ে গেলেন। বাকি দুই ভাইবোন চলে এলাম। বাড়ি ফিরে মনে হলো, ঘরে আলো কেমন কমে গেছে। সে কী দীর্ঘ রাত। আম্মু তখন এক মাসের রোগী। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে আবার। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন। তাঁর গা ঘেঁষে শুয়েছি। আম্মুর চুলে ভাটিকা হেয়ার অয়েলের ঘ্রাণ। অতীত ব্যাপারটা অদ্ভুত—চাইলে চোখের সামনে ধরা দেয়। কিন্তু ভবিষ্যৎটা দেখা যায় না।
ক্লাস ফাইভে যখন উঠলাম, তখন চট্টগ্রাম থেকে একবার আমার বড় বোন এল। আব্বু-আম্মুর জন্য নিয়ে এল ভাটিকা হেয়ার অয়েল। কী সুন্দর ঘ্রাণ তেলের, আবার মাথা ঠান্ডাও হয়ে যায়! আব্বুর রাতে ঘুম হতো না ভালো। ঘুমানোর আগে মাথার চাঁদিতে দেওয়ার জন্যই এনেছিল আমার বোন। এতে মাথা ঠান্ডা হবে আর আব্বু ঘুমাতেও পারবেন। কিন্তু ওই তেল আমার দেওয়া নিষেধ ছিল। কারণ ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে পড়ার সময় মাথা ঘোরাচ্ছে এই বাহানায় ওই তেল দেওয়ার সুযোগ পেতাম।
ভাটিকার ঘ্রাণটাই আমাকে টানত মূলত। সে সময় আম্মু চুলে তেল দেওয়ার কথা বললেই বলতাম, যদি ভাটিকা দিতে দাও তাহলে তেল দেব, নয়তো না। আম্মু তখন অকারণ বকবক করতেন। কিন্তু তাঁর মনে হতো তিনি যৌক্তিক কথা বলছেন। আব্বু আম্মুকে বলতেন, দাও না। কী হবে দিলে? তখন আব্বু বসতেন খাটের ওপরে আর আমি রান্নাঘর থেকে মোড়া এনে খাটের কাছে আব্বুর সামনে বসতাম। আব্বু পেছন থেকেই আমার মাথার মাঝ বরাবর সিঁথি করে চুলকে দুই ভাগ করতেন। তারপর এক এক পাশ করে তেল লাগাতেন। বলতেন, তেল হচ্ছে চুলের খাবার। তুমি না খেলে যেমন পুষ্টি পাবে না, তেমনি চুলও তেল না পেলে পুষ্টি না পেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
মাঝেমধ্যে তেল দিতে দিতে একটা হিন্দি গানও গাইতেন আব্বু। তখন জানতাম না গানটা আসলে কার বা কোন সিনেমার। গানটা হচ্ছে, ‘চান্দনি জেইসা রাঙ হ্যায় তেরা, সোনে জেইসে বাল/ এক তুহি ধানবান হ্যায় গোরি, বাকি সাব কাঙাল।’
এই রাত কখন শেষ হবে…।
পাঁচ.
পরদিন হাসপাতালে গিয়ে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে একবার আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে পারলাম। তাঁর বুক অবধি তুলে দেওয়া সবুজ কম্বল। এক হাতে স্যালাইন, আরেক হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাইরে ডোনারদের লাইন। আব্বুর দুই হাত বেডের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমাকে বললেন, ‘বাবা খুলে দাও। আমি এক কাত হয়ে ঘুমাব।’ আমি সিস্টারকে প্রশ্ন করলাম, ‘আব্বুর হাত-পা বেঁধে রেখেছেন কেন?’ বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক নড়াচড়া করে। খালি বলেন খুলে দাও। এত নড়াচড়া করলে ব্লাড স্যালাইন সব বেরিয়ে একাকার হবে। ওনাকে বারবার বলছি, তা-ও একই কথা বলেন!’ আমি জানালাম, ‘আমার বাবার ডিমেনশিয়া আছে। তিনি জানেন না ঠিক কতবার কী কথা বলছেন।’ তাঁদের তাড়াহুড়োয় আব্বুর কপালে একটু চুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলাম। আব্বু কী বললেন শুনলাম না। এটাই শেষ চুমু।
ছয়.
করিডরে বসে আছি। আইসিইউ থেকে একজন নার্স বেরিয়ে এলেন। আমার ভাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবার কী অবস্থা?’ নার্স এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’ ভাই জিজ্ঞাসু চোখে তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি আবারও বললেন, ‘এক কথা বারবার বলেন।’ আমি তাকিয়ে রইলাম। রোগ সম্পর্কে বুঝতে পেরেও একজন কীভাবে এভাবে বলে? এ ঘটনার পর আব্বুকে প্যাথেড্রিন দেওয়া হয়। চোখ খোলা অবস্থায় আর দেখিনি।
সাত.
পরদিন সকালে আব্বুর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তাঁর মাথার তালুতে বারবার স্পর্শ করছিলাম। আব্বু কি সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন? মনে হচ্ছিল, পুরো পৃথিবীতে আব্বুর মৃতদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা। কী অদ্ভুত, না? বাবা ছাড়া বেঁচে থাকা যায়? অথচ ওরা কী অবলীলায় বলে দিল, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে ওষুধ আর অন্য হাতে পানির বোতল নিয়ে একমুহূর্ত সময় না নিয়েই উল্টো দিকে শুয়ে পড়লেন আব্বু। তাঁর পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। বোতল গড়িয়ে জল পড়ল মেঝেতে। আমি চিৎকার করেছিলাম কি না, মনে নেই। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ‘কী হয়েছে’, ‘কী হয়েছে’ করছিলাম। অদৃশ্য কিছু বুকে ভর করেছে—এমন অভিব্যক্তি আব্বুর চোখমুখে। এই দৃশ্য পরিবারের আর কেউ দেখেনি। চিৎকার করে বোনকে ডাকলাম। বোন ভাইদের ডাকল। খাওয়া ফেলে হাত না ধুয়েই তারা হাজির। আব্বু ততক্ষণে একটু স্বাভাবিক, তবে এলোপাতাড়ি বুকে হাত দিচ্ছেন। এরপর…
খণ্ড খণ্ড জমাট রক্ত বের হলো আব্বুর মুখ দিয়ে। সামলানো যাচ্ছে না। বালতিভর্তি ঘন রক্ত তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমার বাবার কলিজাটাই বুঝি খণ্ড খণ্ড হয়ে বেরিয়ে আসছে! তিনি মূর্ছা যেতে যেতেও যাচ্ছেন না। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। এল। অ্যাম্বুলেন্সে করে এলেন মাত্র দুজন। একজন ড্রাইভার, অন্যজন সাহায্যকারী। ওই একজন সাহায্যকারী একটা হুইলচেয়ার নিয়ে ওপরে এলেন। আব্বুর শরীর ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানি, ঠিক ওই মুহূর্তে আমি ছাড়াও বাড়ির সবাই টের পেয়েছিলেন, এই মানুষটাকে বুঝি আমরা হারাতে বসেছি…।
এক.
অ্যাম্বুলেন্সে মাত্র একজন সাহায্যকারী এসেছেন রোগীকে নিতে, ভাবা যায়? আব্বুকে দুই ভাই আর আমি মিলে হুইলচেয়ারে বসালাম। বাড়িতে লিফট নেই। আব্বুসহ এই হুইলচেয়ার নামাতে হবে সিঁড়ি দিয়ে উল্টো করে। আমি চিৎকার করছি, ‘না না, আব্বু পড়ে যাবে!’ ভাইয়েরা বললেন, ‘কিচ্ছু হবে না পারব।’ দুই ভাই মিলে নামাতে লাগলেন। বড় ভাই সাহায্যকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, ড্রাইভার সাহেব কি একটু আসতে পারবেন? একটু ধরলে ভালো হয়।’ উনি গিয়ে ড্রাইভারকে জানালে ড্রাইভার অসম্মতি জানান ওপরে আসতে। অগত্যা নিজেদেরই নামাতে হলো। রাত ১২টায় দানবের মতো হুইসেল দিয়ে গড়াতে লাগল অ্যাম্বুলেন্সের চাকা। সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে।
দুই.
অ্যাম্বুলেন্স থামল বারডেমে। আব্বু ততক্ষণে ‘একটু পানি খাব, একটু পানি খাব’ বলছেন। কিন্তু পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন, পানি দেওয়া যাবে না, ব্লিডিং বাড়বে। দায়িত্বরত ডাক্তার ব্লাড প্রেশার মাপলেন ও ইসিজি করলেন। আব্বুকে বললেন, ‘বাবা পানি দিচ্ছি, আগে টেস্টটা করে নিই।’ ডাক্তার অস্থির হয়ে বললেন, ‘এখনই আইসিইউ লাগবে।’ উনি পায়চারি করতে করতে সহকারীকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি স্যালাইন দাও।’ ‘আমাদের আইসিইউ খালি নেই।… নয়তো এখনই কলাপস করবে।’ আমরা ছুটলাম হলি ফ্যামিলির উদ্দেশে।
তিন.
শীতের রাত। ট্রলিতে আব্বুর শরীর নেতিয়ে পড়ে আছে। আইভরি রঙের একটা চাদর নিয়ে এসেছিলাম বাসা থেকে। সেটা গায়ে তুলে দিলাম। দুই ভাই রিসেপশনে কথা বলছে। দায়িত্বরত অ্যাটেনডেন্ট বলছেন, ‘আইসিইউ বেড খালি আছে। পার বেড ২৫ হাজার। ভর্তি করবেন?’ বাঁকা হাসি তাঁর ঠোঁটে। আমি আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু একদিকে তাকিয়ে আছেন। ‘পানি দাও’ আবার বললেন। আব্বুর ডিমেনশিয়া ছিল। তিনি হিসাব রাখেননি এ যাবৎ কয়বার বলেছেন এক কথা…। পেমেন্ট করার পর ভদ্রলোক বলে দিলেন আইসিইউ বেডের হদিস। দুজন আয়া চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে আব্বুর গায়ে হাসপাতালের সাদা চাদর ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই শীতের মধ্যে কম্বল আনে নাই এরা!’
চার.
আব্বু আইসিইউর অজানা ঘরে আড়াল হয়ে গেলেন। বাইরের বেঞ্চে আমরা বসে। রাত সোয়া ৩টা তখন। আমরা তিন ভাইবোন আর পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার সেখানে। বড় ভাই রয়ে গেলেন। বাকি দুই ভাইবোন চলে এলাম। বাড়ি ফিরে মনে হলো, ঘরে আলো কেমন কমে গেছে। সে কী দীর্ঘ রাত। আম্মু তখন এক মাসের রোগী। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে আবার। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন। তাঁর গা ঘেঁষে শুয়েছি। আম্মুর চুলে ভাটিকা হেয়ার অয়েলের ঘ্রাণ। অতীত ব্যাপারটা অদ্ভুত—চাইলে চোখের সামনে ধরা দেয়। কিন্তু ভবিষ্যৎটা দেখা যায় না।
ক্লাস ফাইভে যখন উঠলাম, তখন চট্টগ্রাম থেকে একবার আমার বড় বোন এল। আব্বু-আম্মুর জন্য নিয়ে এল ভাটিকা হেয়ার অয়েল। কী সুন্দর ঘ্রাণ তেলের, আবার মাথা ঠান্ডাও হয়ে যায়! আব্বুর রাতে ঘুম হতো না ভালো। ঘুমানোর আগে মাথার চাঁদিতে দেওয়ার জন্যই এনেছিল আমার বোন। এতে মাথা ঠান্ডা হবে আর আব্বু ঘুমাতেও পারবেন। কিন্তু ওই তেল আমার দেওয়া নিষেধ ছিল। কারণ ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে পড়ার সময় মাথা ঘোরাচ্ছে এই বাহানায় ওই তেল দেওয়ার সুযোগ পেতাম।
ভাটিকার ঘ্রাণটাই আমাকে টানত মূলত। সে সময় আম্মু চুলে তেল দেওয়ার কথা বললেই বলতাম, যদি ভাটিকা দিতে দাও তাহলে তেল দেব, নয়তো না। আম্মু তখন অকারণ বকবক করতেন। কিন্তু তাঁর মনে হতো তিনি যৌক্তিক কথা বলছেন। আব্বু আম্মুকে বলতেন, দাও না। কী হবে দিলে? তখন আব্বু বসতেন খাটের ওপরে আর আমি রান্নাঘর থেকে মোড়া এনে খাটের কাছে আব্বুর সামনে বসতাম। আব্বু পেছন থেকেই আমার মাথার মাঝ বরাবর সিঁথি করে চুলকে দুই ভাগ করতেন। তারপর এক এক পাশ করে তেল লাগাতেন। বলতেন, তেল হচ্ছে চুলের খাবার। তুমি না খেলে যেমন পুষ্টি পাবে না, তেমনি চুলও তেল না পেলে পুষ্টি না পেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
মাঝেমধ্যে তেল দিতে দিতে একটা হিন্দি গানও গাইতেন আব্বু। তখন জানতাম না গানটা আসলে কার বা কোন সিনেমার। গানটা হচ্ছে, ‘চান্দনি জেইসা রাঙ হ্যায় তেরা, সোনে জেইসে বাল/ এক তুহি ধানবান হ্যায় গোরি, বাকি সাব কাঙাল।’
এই রাত কখন শেষ হবে…।
পাঁচ.
পরদিন হাসপাতালে গিয়ে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে একবার আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে পারলাম। তাঁর বুক অবধি তুলে দেওয়া সবুজ কম্বল। এক হাতে স্যালাইন, আরেক হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাইরে ডোনারদের লাইন। আব্বুর দুই হাত বেডের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমাকে বললেন, ‘বাবা খুলে দাও। আমি এক কাত হয়ে ঘুমাব।’ আমি সিস্টারকে প্রশ্ন করলাম, ‘আব্বুর হাত-পা বেঁধে রেখেছেন কেন?’ বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক নড়াচড়া করে। খালি বলেন খুলে দাও। এত নড়াচড়া করলে ব্লাড স্যালাইন সব বেরিয়ে একাকার হবে। ওনাকে বারবার বলছি, তা-ও একই কথা বলেন!’ আমি জানালাম, ‘আমার বাবার ডিমেনশিয়া আছে। তিনি জানেন না ঠিক কতবার কী কথা বলছেন।’ তাঁদের তাড়াহুড়োয় আব্বুর কপালে একটু চুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলাম। আব্বু কী বললেন শুনলাম না। এটাই শেষ চুমু।
ছয়.
করিডরে বসে আছি। আইসিইউ থেকে একজন নার্স বেরিয়ে এলেন। আমার ভাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবার কী অবস্থা?’ নার্স এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’ ভাই জিজ্ঞাসু চোখে তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি আবারও বললেন, ‘এক কথা বারবার বলেন।’ আমি তাকিয়ে রইলাম। রোগ সম্পর্কে বুঝতে পেরেও একজন কীভাবে এভাবে বলে? এ ঘটনার পর আব্বুকে প্যাথেড্রিন দেওয়া হয়। চোখ খোলা অবস্থায় আর দেখিনি।
সাত.
পরদিন সকালে আব্বুর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তাঁর মাথার তালুতে বারবার স্পর্শ করছিলাম। আব্বু কি সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন? মনে হচ্ছিল, পুরো পৃথিবীতে আব্বুর মৃতদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা। কী অদ্ভুত, না? বাবা ছাড়া বেঁচে থাকা যায়? অথচ ওরা কী অবলীলায় বলে দিল, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে ওষুধ আর অন্য হাতে পানির বোতল নিয়ে একমুহূর্ত সময় না নিয়েই উল্টো দিকে শুয়ে পড়লেন আব্বু। তাঁর পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। বোতল গড়িয়ে জল পড়ল মেঝেতে। আমি চিৎকার করেছিলাম কি না, মনে নেই। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ‘কী হয়েছে’, ‘কী হয়েছে’ করছিলাম। অদৃশ্য কিছু বুকে ভর করেছে—এমন অভিব্যক্তি আব্বুর চোখমুখে। এই দৃশ্য পরিবারের আর কেউ দেখেনি। চিৎকার করে বোনকে ডাকলাম। বোন ভাইদের ডাকল। খাওয়া ফেলে হাত না ধুয়েই তারা হাজির। আব্বু ততক্ষণে একটু স্বাভাবিক, তবে এলোপাতাড়ি বুকে হাত দিচ্ছেন। এরপর…
খণ্ড খণ্ড জমাট রক্ত বের হলো আব্বুর মুখ দিয়ে। সামলানো যাচ্ছে না। বালতিভর্তি ঘন রক্ত তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমার বাবার কলিজাটাই বুঝি খণ্ড খণ্ড হয়ে বেরিয়ে আসছে! তিনি মূর্ছা যেতে যেতেও যাচ্ছেন না। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। এল। অ্যাম্বুলেন্সে করে এলেন মাত্র দুজন। একজন ড্রাইভার, অন্যজন সাহায্যকারী। ওই একজন সাহায্যকারী একটা হুইলচেয়ার নিয়ে ওপরে এলেন। আব্বুর শরীর ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানি, ঠিক ওই মুহূর্তে আমি ছাড়াও বাড়ির সবাই টের পেয়েছিলেন, এই মানুষটাকে বুঝি আমরা হারাতে বসেছি…।
এক.
অ্যাম্বুলেন্সে মাত্র একজন সাহায্যকারী এসেছেন রোগীকে নিতে, ভাবা যায়? আব্বুকে দুই ভাই আর আমি মিলে হুইলচেয়ারে বসালাম। বাড়িতে লিফট নেই। আব্বুসহ এই হুইলচেয়ার নামাতে হবে সিঁড়ি দিয়ে উল্টো করে। আমি চিৎকার করছি, ‘না না, আব্বু পড়ে যাবে!’ ভাইয়েরা বললেন, ‘কিচ্ছু হবে না পারব।’ দুই ভাই মিলে নামাতে লাগলেন। বড় ভাই সাহায্যকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, ড্রাইভার সাহেব কি একটু আসতে পারবেন? একটু ধরলে ভালো হয়।’ উনি গিয়ে ড্রাইভারকে জানালে ড্রাইভার অসম্মতি জানান ওপরে আসতে। অগত্যা নিজেদেরই নামাতে হলো। রাত ১২টায় দানবের মতো হুইসেল দিয়ে গড়াতে লাগল অ্যাম্বুলেন্সের চাকা। সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে।
দুই.
অ্যাম্বুলেন্স থামল বারডেমে। আব্বু ততক্ষণে ‘একটু পানি খাব, একটু পানি খাব’ বলছেন। কিন্তু পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন, পানি দেওয়া যাবে না, ব্লিডিং বাড়বে। দায়িত্বরত ডাক্তার ব্লাড প্রেশার মাপলেন ও ইসিজি করলেন। আব্বুকে বললেন, ‘বাবা পানি দিচ্ছি, আগে টেস্টটা করে নিই।’ ডাক্তার অস্থির হয়ে বললেন, ‘এখনই আইসিইউ লাগবে।’ উনি পায়চারি করতে করতে সহকারীকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি স্যালাইন দাও।’ ‘আমাদের আইসিইউ খালি নেই।… নয়তো এখনই কলাপস করবে।’ আমরা ছুটলাম হলি ফ্যামিলির উদ্দেশে।
তিন.
শীতের রাত। ট্রলিতে আব্বুর শরীর নেতিয়ে পড়ে আছে। আইভরি রঙের একটা চাদর নিয়ে এসেছিলাম বাসা থেকে। সেটা গায়ে তুলে দিলাম। দুই ভাই রিসেপশনে কথা বলছে। দায়িত্বরত অ্যাটেনডেন্ট বলছেন, ‘আইসিইউ বেড খালি আছে। পার বেড ২৫ হাজার। ভর্তি করবেন?’ বাঁকা হাসি তাঁর ঠোঁটে। আমি আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু একদিকে তাকিয়ে আছেন। ‘পানি দাও’ আবার বললেন। আব্বুর ডিমেনশিয়া ছিল। তিনি হিসাব রাখেননি এ যাবৎ কয়বার বলেছেন এক কথা…। পেমেন্ট করার পর ভদ্রলোক বলে দিলেন আইসিইউ বেডের হদিস। দুজন আয়া চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে আব্বুর গায়ে হাসপাতালের সাদা চাদর ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই শীতের মধ্যে কম্বল আনে নাই এরা!’
চার.
আব্বু আইসিইউর অজানা ঘরে আড়াল হয়ে গেলেন। বাইরের বেঞ্চে আমরা বসে। রাত সোয়া ৩টা তখন। আমরা তিন ভাইবোন আর পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার সেখানে। বড় ভাই রয়ে গেলেন। বাকি দুই ভাইবোন চলে এলাম। বাড়ি ফিরে মনে হলো, ঘরে আলো কেমন কমে গেছে। সে কী দীর্ঘ রাত। আম্মু তখন এক মাসের রোগী। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে আবার। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন। তাঁর গা ঘেঁষে শুয়েছি। আম্মুর চুলে ভাটিকা হেয়ার অয়েলের ঘ্রাণ। অতীত ব্যাপারটা অদ্ভুত—চাইলে চোখের সামনে ধরা দেয়। কিন্তু ভবিষ্যৎটা দেখা যায় না।
ক্লাস ফাইভে যখন উঠলাম, তখন চট্টগ্রাম থেকে একবার আমার বড় বোন এল। আব্বু-আম্মুর জন্য নিয়ে এল ভাটিকা হেয়ার অয়েল। কী সুন্দর ঘ্রাণ তেলের, আবার মাথা ঠান্ডাও হয়ে যায়! আব্বুর রাতে ঘুম হতো না ভালো। ঘুমানোর আগে মাথার চাঁদিতে দেওয়ার জন্যই এনেছিল আমার বোন। এতে মাথা ঠান্ডা হবে আর আব্বু ঘুমাতেও পারবেন। কিন্তু ওই তেল আমার দেওয়া নিষেধ ছিল। কারণ ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে পড়ার সময় মাথা ঘোরাচ্ছে এই বাহানায় ওই তেল দেওয়ার সুযোগ পেতাম।
ভাটিকার ঘ্রাণটাই আমাকে টানত মূলত। সে সময় আম্মু চুলে তেল দেওয়ার কথা বললেই বলতাম, যদি ভাটিকা দিতে দাও তাহলে তেল দেব, নয়তো না। আম্মু তখন অকারণ বকবক করতেন। কিন্তু তাঁর মনে হতো তিনি যৌক্তিক কথা বলছেন। আব্বু আম্মুকে বলতেন, দাও না। কী হবে দিলে? তখন আব্বু বসতেন খাটের ওপরে আর আমি রান্নাঘর থেকে মোড়া এনে খাটের কাছে আব্বুর সামনে বসতাম। আব্বু পেছন থেকেই আমার মাথার মাঝ বরাবর সিঁথি করে চুলকে দুই ভাগ করতেন। তারপর এক এক পাশ করে তেল লাগাতেন। বলতেন, তেল হচ্ছে চুলের খাবার। তুমি না খেলে যেমন পুষ্টি পাবে না, তেমনি চুলও তেল না পেলে পুষ্টি না পেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
মাঝেমধ্যে তেল দিতে দিতে একটা হিন্দি গানও গাইতেন আব্বু। তখন জানতাম না গানটা আসলে কার বা কোন সিনেমার। গানটা হচ্ছে, ‘চান্দনি জেইসা রাঙ হ্যায় তেরা, সোনে জেইসে বাল/ এক তুহি ধানবান হ্যায় গোরি, বাকি সাব কাঙাল।’
এই রাত কখন শেষ হবে…।
পাঁচ.
পরদিন হাসপাতালে গিয়ে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে একবার আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে পারলাম। তাঁর বুক অবধি তুলে দেওয়া সবুজ কম্বল। এক হাতে স্যালাইন, আরেক হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাইরে ডোনারদের লাইন। আব্বুর দুই হাত বেডের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমাকে বললেন, ‘বাবা খুলে দাও। আমি এক কাত হয়ে ঘুমাব।’ আমি সিস্টারকে প্রশ্ন করলাম, ‘আব্বুর হাত-পা বেঁধে রেখেছেন কেন?’ বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক নড়াচড়া করে। খালি বলেন খুলে দাও। এত নড়াচড়া করলে ব্লাড স্যালাইন সব বেরিয়ে একাকার হবে। ওনাকে বারবার বলছি, তা-ও একই কথা বলেন!’ আমি জানালাম, ‘আমার বাবার ডিমেনশিয়া আছে। তিনি জানেন না ঠিক কতবার কী কথা বলছেন।’ তাঁদের তাড়াহুড়োয় আব্বুর কপালে একটু চুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলাম। আব্বু কী বললেন শুনলাম না। এটাই শেষ চুমু।
ছয়.
করিডরে বসে আছি। আইসিইউ থেকে একজন নার্স বেরিয়ে এলেন। আমার ভাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবার কী অবস্থা?’ নার্স এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে বললেন, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’ ভাই জিজ্ঞাসু চোখে তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি আবারও বললেন, ‘এক কথা বারবার বলেন।’ আমি তাকিয়ে রইলাম। রোগ সম্পর্কে বুঝতে পেরেও একজন কীভাবে এভাবে বলে? এ ঘটনার পর আব্বুকে প্যাথেড্রিন দেওয়া হয়। চোখ খোলা অবস্থায় আর দেখিনি।
সাত.
পরদিন সকালে আব্বুর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তাঁর মাথার তালুতে বারবার স্পর্শ করছিলাম। আব্বু কি সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন? মনে হচ্ছিল, পুরো পৃথিবীতে আব্বুর মৃতদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা। কী অদ্ভুত, না? বাবা ছাড়া বেঁচে থাকা যায়? অথচ ওরা কী অবলীলায় বলে দিল, ‘আপনার আব্বা অনেক জ্বালায়!’

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে...
১৯ জুন ২০২২
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে...
১৯ জুন ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে...
১৯ জুন ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।
স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।
স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

রাত তখন ১১টা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও আব্বুর ঘরে গেলাম ওষুধগুলো দিতে। জানুয়ারির শীতের রাত। অর্ধেকটা লেপ গায়ে তুলে আব্বু খাটের ওপর বসে আছেন। এক হাতে ওষুধ, অন্য হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম, ‘আব্বু খাও’। ‘হুম’ বলে এক হাতে...
১৯ জুন ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে