মোহাম্মদ ইদ্রিস

১৯২০-এর দশকের কোনো এক দিন। ড্যান্ডি শহরের কোনো এক জুট মিলের মালিক মাথায় সোলার হ্যাট পরে আমাদের ফরিদপুর শহরের পাটের বাজার দেখতে এসেছিলেন, দাদার মুখে সে গল্প শুনেছি।
সে ঘটনার প্রায় ১০২ বছর পর অবশেষে দেখলাম স্কটল্যান্ডের ড্যান্ডি শহরে বিশ্বের প্রথম জুটমিল। মিল ঠিক নয়, জুট মিউজিয়াম। পাট উৎপন্ন করত বাংলার কৃষক, আর সব পাটকল ছিল স্কটল্যান্ডে। সহজ বাংলা ভাষায় এরই নাম ছিল সাম্রাজ্যবাদ।
ভারডান্ট ওয়ার্কস মিউজিয়াম
‘গতস্য শোচনা নাস্তি’ অতি পুরোনো সংস্কৃত শ্লোক। তবুও বয়স্কা নর্তকী বারবার আয়না দেখে, বিগত যৌবনের সৌন্দর্য খোঁজে। আর বৃদ্ধ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিগত যৌবনের সুখ চিন্তা করে। আমাদের এক কালের প্রভুদের অবস্থাও ঠিক তাই। এখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নেই, ড্যান্ডি শহরে জুট মিলও নেই। বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা জুট মিলকে মিউজিয়াম বানিয়ে স্কটিশেরা পুরোনো শৌর্য ও ঐশ্বর্য মনে রাখার চেষ্টা করছে।
১৯৫৪ সালে হক-ভাসানি মুসলিম লীগকে ডুবিয়ে দিয়ে যেদিন সরকার গঠনের শপথ নিচ্ছিল, ঠিক সেই দিন নারায়ণগঞ্জের পাটকলে বিহারি আর বাঙালি শ্রমিকদের মধ্য রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা বাঁধিয়ে মুসলিম লীগের গুন্ডারা গণপ্রতিনিধিত্বের সরকারকে খাটো করবার চেষ্টা করেছিল। সে কথা ইতিহাস বইতে পড়েছি। ‘আমরা পাট রপ্তানি করে যে পরিমাণ বিদেশি টাকা আয় করি, তার বেশির ভাগ টাকা পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়’, এই নিয়ে মুসলিম লীগ সমর্থকদের সঙ্গে ঝগড়া করেছি। বাংলার সোনালি আঁশ পাট। স্কুলের পরীক্ষায় ইংরেজি ভাষায় ‘জুট’ রচনা লিখেছি। কিন্তু হাজি আদমজীর ছেলেদের উদ্যোগে তৈরি, দাউদ, বাওয়ানী অথবা খোদ আদমজী জুট মিলটাও কোনো দিন দেখিনি। তাই স্কটল্যান্ডের ড্যান্ডি শহরে বেড়াতে এসে ‘ভারডান্ট ওয়ার্কস’ মিউজিয়াম দেখার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। সুন্দর সাজানো-গোছানো মিউজিয়ামের ভেতর পাটকলে ব্যবহার করা সব যন্ত্রপাতি দেখলাম, আর গাইডের মুখে শুনলাম এক রূপকথার গল্প।
সোনালি আঁশের উত্থান
তিসির তেল আমরা বেশ চিনি। বাংলাদেশে তিসি ফলানো হয় মূলত তেলের জন্য। এ তেল কাঠের বার্নিশ উজ্জ্বল করে, আর ক্রিকেট ব্যাটের স্ট্রোক বাড়ায়। তবে মিসর ও জর্জিয়ায় তিসির চাষ করা করা হয় এ উদ্ভিদের ছাল থেকে সুতা তৈরির জন্য। তিসি গাছের ছাল পাটের মতো প্রক্রিয়াজাত করে যে সুতা বানানো হয়, তার ইংরেজি নাম ফ্ল্যাক্স। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ড্যান্ডি শহরে অনেকগুলো ফ্ল্যাক্স মিল ছিল। সেখানে এই সুতা দিয়ে মোটা ক্যানভাস ও লিনেন কাপড় তৈরি করা হতো। ড্যান্ডি শহরে ফ্ল্যাক্স আমদানি করা হতো কৃষ্ণ সাগর পারের ক্রিমিয়া ও জর্জিয়া অঞ্চল থেকে। রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে উনিশ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে ফ্ল্যাক্সের উৎপাদন এবং সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
প্রায় একই সময় কলকাতা বন্দরে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বণিকেরা ফ্ল্যাক্স আঁশের মতো দেখতে বাংলা পাটের প্রতি নজর দেয়। ১৮২০ সালে প্রথমবারের মতো আড়াই মন ওজনের একটি পাটের বেল ড্যান্ডি শহরে এসে পৌঁছায়।
কিন্তু পাটের আঁশ শক্ত। ফলে ফ্ল্যাক্সের বদলে পাট ব্যবহার করা গেল না। অনেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল যে, তিমি মাছের তেলে পাট ভেজালে তা নরম হয়, যা ফ্ল্যাক্স মিলে ব্যবহার কর যায়। তায়ে (Tay) নদীর তীরে অবস্থিত ড্যান্ডি নৌবন্দর অনেক আগে থেকেই তিমি মাছ ধরা এবং বেচাকেনার বাজার হিসেবে বিখ্যাত ছিল। সেখানে তিমি মাছের তেল সস্তায় এবং প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। লাভ-ক্ষতির অঙ্ক করতে ব্যাপারীদের বেশি সময় লাগল না। ড্যান্ডি শহরে ডেভিড লিন্ডসে তাঁর ফ্ল্যাক্স মিল ‘ভারডান্ট ওয়ার্কস’-এর কিছু বিবর্তন করে ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বিশ্বের প্রথম জুট মিল বা পাটকল।
শুরু হলো পাটের অগ্রযাত্রা। একে একে ড্যান্ডির ফ্ল্যাক্স মিলগুলো জুট মিলে পরিণত হতে থাকল। ড্যান্ডি ডকইয়ার্ডে তৈরি হতে থাকল বড় বড় জাহাজ। ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল খুলে গেলে এশিয়া আর ইউরোপের মধ্যে নৌপথের দূরত্ব কমে যায়। ফলে কাঁচা পাট কলকাতা বন্দর থেকে ৯০ দিনে ড্যান্ডি বন্দরে পৌঁছাতে থাকল। সোনায় সোহাগা। নতুন জুট মিল তৈরি হতে থাকল সেখানে। নেহাত বাংলা ঘরের ছনের চালে আটন-ছাটন আর রুয়া-ফুসসির বাঁধনে কাজে লাগা বাংলার পাট বিলেতি জুট মিলের সৌজন্যে হয়ে উঠল আন্তর্জাতিক বেস্ট সেলার এক পণ্য। আমাদের দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল, যার নাম হলো সোনালি আঁশ। আর নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর বাংলার ড্যান্ডি নামে বিখ্যাত হলো।
বাংলার পাট, ড্যান্ডির নারী
পাট হাটের ফড়িয়া, দালাল, আর পাট গুদামের মালিকদের ব্যাংক ব্যালান্স এবং পেটের ভুঁড়ি দুটোই সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকল। কুষ্টিয়া রেল স্টেশনের পাশে ঠাকুর অ্যান্ড কোম্পানির গুদাম খুলে, ধুতি কাছা দিয়ে পাটের ব্যবসায় নেমে গেলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে, কবির নোবেল প্রাইজ পাওয়া জ্ঞানে কাজ হলো না। পাটের ব্যবসা লাটে উঠল। ধনী হলো ড্যান্ডির জুটমিল মালিকেরা। দিনে দিনে, মাসে মাসে সেখানে বাড়তে থাকল পাটকলের সংখ্যা। ১৯০৯ সালে ড্যান্ডি শহরে ছিল ১৩০টি পাটকল। ১৯০১ সালে ড্যান্ডি শহরের মোট ৮৬ হাজার শ্রমিকের অর্ধেক ছিল পাট শ্রমিক। এর পঁচাত্তর ভাগ ছিল নারী।
হাতে চালানো তাঁতের কাজ কষ্টসাধ্য হওয়ায় তাঁত বুননের কাজে প্রথম দিকে নারী শ্রমিক নেওয়া হতো না। কিন্তু বৈদ্যুতিক তাঁত চালু হলে নারীরা পাটকলে কাজ করার উপযুক্ত বিবেচিত হয়। অর্থনৈতিক প্রয়োজন, ঘরের বাঁধন ছিঁড়ে বাইরে যাওয়ার উৎসাহ আর কম বেতনে কাজ করতে রাজি হওয়া বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিক পাটকলে নিয়োগ পেতে থাকে।
ড্যান্ডিতে এক সময় ৪১ হাজার পাটকল শ্রমিকের মধ্যে ৩১ হাজার ছিল নারী। সে শহরে নারীদের কাজ আছে, নগদ টাকায় বেতন আছে, নারী শ্রমিকদের মধ্যে কমরেডশিপ আছে—কথাগুলো পুরো স্কটল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ল। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, আর স্বাধীনচেতা নারীরা দলে দলে ড্যান্ডি শহরে আসতে থাকল। ১৯১১ সালে সেখানে প্রতি ১০০ জন পুরুষের অনুপাতে নারীর সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। সে সময় ড্যান্ডি শহরের মেয়েরা বিয়ের জন্য ঘরজামাই খুঁজত। ছেলে রান্নাবান্না পারে কি না, বাচ্চাকাচ্চা দেখাশোনা করতে পারবে কি না, জামা কাপড় ধোয়া, ইস্তিরি করার কাজ করতে পারে কি না, বিয়ের জন্য এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো ছেলেদের।
কেটল-বয়লার, জ্যামের শহর কিংবা শি টাউনের গল্প
এই শহরে শ্রমজীবী নারীরা বেকার পুরুষদের বিয়ে করে ঘরে রাখত, আর নিজেরা জুট মিলে কাজ করে টাকা উপার্জন করত। পুরুষেরা বাড়িতে বসে ঘর গৃহস্থালির অবসরে আশপাশের বাগান থেকে স্ট্রবেরি আর ব্ল্যাক কারেন্ট সংগ্রহ করে জ্যাম বানাত। সে সময় ড্যান্ডি ‘জ্যামের শহর’ বলেও প্রভূত খ্যাতি অর্জন করে। পাটের ফিরতি জাহাজে আসা ড্যান্ডির জ্যাম কলকাতার মধ্যবিত্তের ঘরে পৌঁছে যেত। এখন সে শহরে জ্যাম তৈরি হয় না। তবুও কলকাতার মধ্যবিত্ত ঘরে বিকেলের নাশতায় পাউরুটির টোস্ট, আর জ্যাম দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রেওয়াজ রয়ে গেছে।
এক কাপ চা দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রীতি ড্যান্ডি শহরেও ছিল। তবে চা বানানোর দায়িত্ব ছিল পুরুষদের। কেটলিতে পানি গরম করে চা বানাতে হতো। তাই ড্যান্ডির পুরুষদের নাম হয়ে যায় ‘কেটল-বয়লার’। স্কটল্যান্ডের অন্য শহরের মানুষ ড্যান্ডির নাম দেয় ‘শি টাউন’ বা ‘নারীদের শহর’। কিন্তু এ সমস্ত টিটকারি দেওয়া কথা ড্যান্ডির নারীদের একটুকুও বদলাতে পারেনি। তারা দিনে দশ ঘণ্টা কাজ করত। প্রয়োজন হলে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করত। রাতে সুন্দর কাপড় পরে দলে দলে শহরে ঘুরে বেড়াত, থিয়েটার দেখত, নাইট ক্লাবে নাচত, পানাহার করত, আনন্দ ফুর্তি করত। তাদের আনন্দ ফুর্তির মাত্রা একটু বেশি হলে পুলিশ বাধা দিত। দুপক্ষের মধ্যে লড়াই বেধে যেত। কোনো কোনো রাতে ড্যান্ডি শহরের কেন্দ্রস্থল কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতো। বিশ শতকের প্রথম দশকের কোনো এক বছর ড্যান্ডি শহরে শান্তি ভঙ্গের দায়ে হাজত খাটা ১ হাজার ৪০০ মানুষের মধ্যে ৮০০ জনই ছিল নারী।
উপমহাদেশের রক্ত শোষণ করে ধনী হওয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নারী বা পুরুষদের বাহবা দেওয়ার মানুষ আমি নই। তারপরও ড্যান্ডির নারীদের সাহসে বাহবা না দিয়ে পারি না।
শি টাউনের নারীদের শ্রমিক আন্দোলন
ড্যান্ডি শহরে শ্রমিক আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল জুট মিলের নারী শ্রমিকেরা। তবে তারা কোনো দিন পুরুষ নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক সংগঠনের নিয়ম মেনে চলত না। তারা শ্রমের ন্যায্য মূল্য আদায় করা, কারখানা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ধর্মঘট, মিটিং-মিছিল নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করত এবং মাঝেমধ্যে সফলতা লাভ করত।
‘সমান কাজের সমান মূল্য’ পুরুষ-নারীর সমান বেতন এবং বৃহত্তর সমাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকার অর্জনের সংগ্রামে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়েই ড্যান্ডি টাউন কাউন্সিল কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের দেখাশোনা করার জন্য ক্রেস ও নার্সারি প্রতিষ্ঠা করে এবং শুধুমাত্র নারীদের বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করে।
ইংল্যান্ডে নারীদের ভোটের অধিকার অর্জনে ‘সাফরাজেট’ আন্দোলনে ড্যান্ডির নারী শ্রমিকেরা প্রভূত অবদান রাখে। তাদের কাজের দক্ষতা, অর্থনৈতিক শক্তি আর স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ শাসক শ্রেণি অবশেষে ১৯১৮ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটের অধিকার দিতে বাধ্য হয়। ড্যান্ডির নারীরা ১৯২২ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়ে তাদের নতুন অধিকারের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। তারা এই ভোটে নারীদের ভোটাধিকার বিরোধী, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কট্টর সমর্থক এবং ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে পরাজিত করে।
বাংলার বস্ত্রবালিকারা
পাট ব্যবসায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো উন্নতি হয়নি। বাংলার নেংটি পরা কৃষকদের ভাগ্য খোলেনি। কিন্তু ড্যান্ডি শহরের মেয়েরা পাটকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পেরেছিল। পুরো ব্রিটেনে, তথা পশ্চিম ইউরোপীয় মেয়েদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে পেরেছিল।
ড্যান্ডির জুট মিউজিয়াম দেখছি, গাইডের কথা শুনছি, আর আমার কল্পনার চোখে ভেসে উঠছিল তাদেরই উত্তরসূরি পাটের দেশের মানুষ আমার স্বজাতি, অন্য এক তন্তু, তুলার কাপড় সেলাইয়ের কাজে নিয়োজিত ঢাকা শহরের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের চেহারা। কী জুটছে তাদের কপালে?
আমি যখন বাংলাদেশে যাই, তখন এয়ারপোর্ট থেকে ফরিদপুর যাওয়ার পথে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমি গাড়িতে বসে দেখি হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক রাস্তার দুধারে সুশৃঙ্খলভাবে হেঁটে যাচ্ছে। রং-বেরঙের পোশাকে এরা সবাই দেখতে সুন্দর, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। এরা সবাই নারী। এরাই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এদের সংখ্যা ৩২ লাখ। এরা বছরে ৩ দশমিক ১ লাখ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। তবুও গার্মেন্টস শ্রমিক নারীদের অবস্থা এমন কেন? বেতন কম, কাজের নিরাপত্তা নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। কেন?
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ছিল ৯৪ ডলার বা ৮ হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে তা ২ হাজার ৮৮২ ডলার বা ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আমরা এখন পাকিস্তান ও ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি এবং আরও ওপরে যাচ্ছি। কিন্তু যে শিলাখণ্ডের শক্ত ভিত্তির ওপরে দাঁড়িয়ে আমরা আরও ওপরে উঠছি, গার্মেন্টস শিল্পের সেই নারী শ্রমিকদের আমরা কতটা মর্যাদা দিতে শিখেছি? আশা করি বাংলাদেশের পাট যেমন একদিন পশ্চিমা দেশগুলোর নারীমুক্তিতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করেছে, তেমনি আজকের দিনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত নারীরা অদূর ভবিষ্যতে পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোতে নারীমুক্তির সূচনা করবে।
বাংলায় পাটকল ও ড্যান্ডির পতন
১৮৭০ সালে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা কলকাতার প্রথম পাটকল প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে এ ব্যবসায় ড্যান্ডির একচেটিয়া আধিপত্য কমতে থাকে। বিশ শতকের প্রথম দশকের মধ্যে কলকাতা পাটকলের শ্রমিক সংখ্যা ড্যান্ডিকে ছাড়িয়ে যায় এবং পরিবর্তনের গতিধারা অব্যাহত থাকে। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের তীব্রতা এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব পাকিস্তানে নতুন নতুন এবং বড় বড় পাটকল প্রতিষ্ঠিত হলে ড্যান্ডির অবস্থা রাতারাতি বদলে যায়। ১৯৫০-এর দশকে সেখানে পাটকলের সংখ্যা পঞ্চাশের নিচে নেমে যায়।
১৯৯৮ সালের ১৯ অক্টোবর। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩১০ টন কাঁচা পাট নিয়ে এমভি বাংলার ঊর্মি যখন স্কটল্যান্ডের ড্যান্ডি বন্দরে পৌঁছায়, তখন সে শহরের মিলের সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। এর পর ড্যান্ডি বন্দরে আর কোনো দিন পাটের জাহাজ নোঙর করেনি।
শেষ লটের পাটের শেষ কোস্টার কাজ ১৯৯৯ সালের মে মাসে শেষ হলে, তায়েব্যাংক পাওয়ার লুমসের মালিক সব মেশিনপত্র বিক্রি করে দেয় কলকাতা পাটকলের মালিক জি জে ওয়াদওহার কাছে। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে ফিরতি যাত্রায় বাংলার ঊর্মি ড্যান্ডির শেষ পাটকলের শেষ যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে কলকাতা বন্দরে পৌঁছে দেয়। এ যেন বাংলার ছেলে বাংলায় ফিরে আসা।
‘দ্যাট ওয়াজ দি এন্ড’, বলে আমার গাইডের চোখ ছলছল করে উঠল। একজন বয়স্ক পুরুষের চোখে জল দেখে আমিও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। নরম সুরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি এই মিলে কাজ করেছ নাকি?’ একটু মৃদু হেসে তিনি জবাব দিলেন, ‘না, আমার মা করেছে। আমি কাজের বয়সী হওয়ার আগেই এই মিল বন্ধ হয়ে গেছে। মায়ের মুখে অনেক গল্প শুনেছি। আমার মা এখন বেঁচে নেই। মাকে সম্মান জানানোর জন্য আমি সপ্তাহে একদিন এই জুট মিউজিয়ামে ভলান্টিয়ার গাইড হিসেবে কাজ করি। বেতন পাই না। কিন্তু আনন্দ পাই।’
এবার আমার চোখ ছলছল করে উঠল। পেছনে পরের ব্যাচের দর্শক জমা হয়ে গেছে, কথা বাড়াতে পারলাম না। ‘ইউ আর ডুয়িং এ গ্রেট জব, কিপ ইট আপ’, বললাম। হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিলাম। সুভেনির শপে ঢুকতেই চোখে পড়ল একখানা বই ‘জুট নো মোর’। বইখানা কিনলাম।
লেখক: ডিরেক্টর, এশিয়ান রিসোর্স সেন্টার, বার্মিংহাম, ইংল্যান্ড

১৯২০-এর দশকের কোনো এক দিন। ড্যান্ডি শহরের কোনো এক জুট মিলের মালিক মাথায় সোলার হ্যাট পরে আমাদের ফরিদপুর শহরের পাটের বাজার দেখতে এসেছিলেন, দাদার মুখে সে গল্প শুনেছি।
সে ঘটনার প্রায় ১০২ বছর পর অবশেষে দেখলাম স্কটল্যান্ডের ড্যান্ডি শহরে বিশ্বের প্রথম জুটমিল। মিল ঠিক নয়, জুট মিউজিয়াম। পাট উৎপন্ন করত বাংলার কৃষক, আর সব পাটকল ছিল স্কটল্যান্ডে। সহজ বাংলা ভাষায় এরই নাম ছিল সাম্রাজ্যবাদ।
ভারডান্ট ওয়ার্কস মিউজিয়াম
‘গতস্য শোচনা নাস্তি’ অতি পুরোনো সংস্কৃত শ্লোক। তবুও বয়স্কা নর্তকী বারবার আয়না দেখে, বিগত যৌবনের সৌন্দর্য খোঁজে। আর বৃদ্ধ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিগত যৌবনের সুখ চিন্তা করে। আমাদের এক কালের প্রভুদের অবস্থাও ঠিক তাই। এখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নেই, ড্যান্ডি শহরে জুট মিলও নেই। বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা জুট মিলকে মিউজিয়াম বানিয়ে স্কটিশেরা পুরোনো শৌর্য ও ঐশ্বর্য মনে রাখার চেষ্টা করছে।
১৯৫৪ সালে হক-ভাসানি মুসলিম লীগকে ডুবিয়ে দিয়ে যেদিন সরকার গঠনের শপথ নিচ্ছিল, ঠিক সেই দিন নারায়ণগঞ্জের পাটকলে বিহারি আর বাঙালি শ্রমিকদের মধ্য রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা বাঁধিয়ে মুসলিম লীগের গুন্ডারা গণপ্রতিনিধিত্বের সরকারকে খাটো করবার চেষ্টা করেছিল। সে কথা ইতিহাস বইতে পড়েছি। ‘আমরা পাট রপ্তানি করে যে পরিমাণ বিদেশি টাকা আয় করি, তার বেশির ভাগ টাকা পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়’, এই নিয়ে মুসলিম লীগ সমর্থকদের সঙ্গে ঝগড়া করেছি। বাংলার সোনালি আঁশ পাট। স্কুলের পরীক্ষায় ইংরেজি ভাষায় ‘জুট’ রচনা লিখেছি। কিন্তু হাজি আদমজীর ছেলেদের উদ্যোগে তৈরি, দাউদ, বাওয়ানী অথবা খোদ আদমজী জুট মিলটাও কোনো দিন দেখিনি। তাই স্কটল্যান্ডের ড্যান্ডি শহরে বেড়াতে এসে ‘ভারডান্ট ওয়ার্কস’ মিউজিয়াম দেখার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। সুন্দর সাজানো-গোছানো মিউজিয়ামের ভেতর পাটকলে ব্যবহার করা সব যন্ত্রপাতি দেখলাম, আর গাইডের মুখে শুনলাম এক রূপকথার গল্প।
সোনালি আঁশের উত্থান
তিসির তেল আমরা বেশ চিনি। বাংলাদেশে তিসি ফলানো হয় মূলত তেলের জন্য। এ তেল কাঠের বার্নিশ উজ্জ্বল করে, আর ক্রিকেট ব্যাটের স্ট্রোক বাড়ায়। তবে মিসর ও জর্জিয়ায় তিসির চাষ করা করা হয় এ উদ্ভিদের ছাল থেকে সুতা তৈরির জন্য। তিসি গাছের ছাল পাটের মতো প্রক্রিয়াজাত করে যে সুতা বানানো হয়, তার ইংরেজি নাম ফ্ল্যাক্স। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ড্যান্ডি শহরে অনেকগুলো ফ্ল্যাক্স মিল ছিল। সেখানে এই সুতা দিয়ে মোটা ক্যানভাস ও লিনেন কাপড় তৈরি করা হতো। ড্যান্ডি শহরে ফ্ল্যাক্স আমদানি করা হতো কৃষ্ণ সাগর পারের ক্রিমিয়া ও জর্জিয়া অঞ্চল থেকে। রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে উনিশ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে ফ্ল্যাক্সের উৎপাদন এবং সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
প্রায় একই সময় কলকাতা বন্দরে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বণিকেরা ফ্ল্যাক্স আঁশের মতো দেখতে বাংলা পাটের প্রতি নজর দেয়। ১৮২০ সালে প্রথমবারের মতো আড়াই মন ওজনের একটি পাটের বেল ড্যান্ডি শহরে এসে পৌঁছায়।
কিন্তু পাটের আঁশ শক্ত। ফলে ফ্ল্যাক্সের বদলে পাট ব্যবহার করা গেল না। অনেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল যে, তিমি মাছের তেলে পাট ভেজালে তা নরম হয়, যা ফ্ল্যাক্স মিলে ব্যবহার কর যায়। তায়ে (Tay) নদীর তীরে অবস্থিত ড্যান্ডি নৌবন্দর অনেক আগে থেকেই তিমি মাছ ধরা এবং বেচাকেনার বাজার হিসেবে বিখ্যাত ছিল। সেখানে তিমি মাছের তেল সস্তায় এবং প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। লাভ-ক্ষতির অঙ্ক করতে ব্যাপারীদের বেশি সময় লাগল না। ড্যান্ডি শহরে ডেভিড লিন্ডসে তাঁর ফ্ল্যাক্স মিল ‘ভারডান্ট ওয়ার্কস’-এর কিছু বিবর্তন করে ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বিশ্বের প্রথম জুট মিল বা পাটকল।
শুরু হলো পাটের অগ্রযাত্রা। একে একে ড্যান্ডির ফ্ল্যাক্স মিলগুলো জুট মিলে পরিণত হতে থাকল। ড্যান্ডি ডকইয়ার্ডে তৈরি হতে থাকল বড় বড় জাহাজ। ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল খুলে গেলে এশিয়া আর ইউরোপের মধ্যে নৌপথের দূরত্ব কমে যায়। ফলে কাঁচা পাট কলকাতা বন্দর থেকে ৯০ দিনে ড্যান্ডি বন্দরে পৌঁছাতে থাকল। সোনায় সোহাগা। নতুন জুট মিল তৈরি হতে থাকল সেখানে। নেহাত বাংলা ঘরের ছনের চালে আটন-ছাটন আর রুয়া-ফুসসির বাঁধনে কাজে লাগা বাংলার পাট বিলেতি জুট মিলের সৌজন্যে হয়ে উঠল আন্তর্জাতিক বেস্ট সেলার এক পণ্য। আমাদের দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল, যার নাম হলো সোনালি আঁশ। আর নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর বাংলার ড্যান্ডি নামে বিখ্যাত হলো।
বাংলার পাট, ড্যান্ডির নারী
পাট হাটের ফড়িয়া, দালাল, আর পাট গুদামের মালিকদের ব্যাংক ব্যালান্স এবং পেটের ভুঁড়ি দুটোই সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকল। কুষ্টিয়া রেল স্টেশনের পাশে ঠাকুর অ্যান্ড কোম্পানির গুদাম খুলে, ধুতি কাছা দিয়ে পাটের ব্যবসায় নেমে গেলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে, কবির নোবেল প্রাইজ পাওয়া জ্ঞানে কাজ হলো না। পাটের ব্যবসা লাটে উঠল। ধনী হলো ড্যান্ডির জুটমিল মালিকেরা। দিনে দিনে, মাসে মাসে সেখানে বাড়তে থাকল পাটকলের সংখ্যা। ১৯০৯ সালে ড্যান্ডি শহরে ছিল ১৩০টি পাটকল। ১৯০১ সালে ড্যান্ডি শহরের মোট ৮৬ হাজার শ্রমিকের অর্ধেক ছিল পাট শ্রমিক। এর পঁচাত্তর ভাগ ছিল নারী।
হাতে চালানো তাঁতের কাজ কষ্টসাধ্য হওয়ায় তাঁত বুননের কাজে প্রথম দিকে নারী শ্রমিক নেওয়া হতো না। কিন্তু বৈদ্যুতিক তাঁত চালু হলে নারীরা পাটকলে কাজ করার উপযুক্ত বিবেচিত হয়। অর্থনৈতিক প্রয়োজন, ঘরের বাঁধন ছিঁড়ে বাইরে যাওয়ার উৎসাহ আর কম বেতনে কাজ করতে রাজি হওয়া বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিক পাটকলে নিয়োগ পেতে থাকে।
ড্যান্ডিতে এক সময় ৪১ হাজার পাটকল শ্রমিকের মধ্যে ৩১ হাজার ছিল নারী। সে শহরে নারীদের কাজ আছে, নগদ টাকায় বেতন আছে, নারী শ্রমিকদের মধ্যে কমরেডশিপ আছে—কথাগুলো পুরো স্কটল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ল। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, আর স্বাধীনচেতা নারীরা দলে দলে ড্যান্ডি শহরে আসতে থাকল। ১৯১১ সালে সেখানে প্রতি ১০০ জন পুরুষের অনুপাতে নারীর সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। সে সময় ড্যান্ডি শহরের মেয়েরা বিয়ের জন্য ঘরজামাই খুঁজত। ছেলে রান্নাবান্না পারে কি না, বাচ্চাকাচ্চা দেখাশোনা করতে পারবে কি না, জামা কাপড় ধোয়া, ইস্তিরি করার কাজ করতে পারে কি না, বিয়ের জন্য এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো ছেলেদের।
কেটল-বয়লার, জ্যামের শহর কিংবা শি টাউনের গল্প
এই শহরে শ্রমজীবী নারীরা বেকার পুরুষদের বিয়ে করে ঘরে রাখত, আর নিজেরা জুট মিলে কাজ করে টাকা উপার্জন করত। পুরুষেরা বাড়িতে বসে ঘর গৃহস্থালির অবসরে আশপাশের বাগান থেকে স্ট্রবেরি আর ব্ল্যাক কারেন্ট সংগ্রহ করে জ্যাম বানাত। সে সময় ড্যান্ডি ‘জ্যামের শহর’ বলেও প্রভূত খ্যাতি অর্জন করে। পাটের ফিরতি জাহাজে আসা ড্যান্ডির জ্যাম কলকাতার মধ্যবিত্তের ঘরে পৌঁছে যেত। এখন সে শহরে জ্যাম তৈরি হয় না। তবুও কলকাতার মধ্যবিত্ত ঘরে বিকেলের নাশতায় পাউরুটির টোস্ট, আর জ্যাম দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রেওয়াজ রয়ে গেছে।
এক কাপ চা দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রীতি ড্যান্ডি শহরেও ছিল। তবে চা বানানোর দায়িত্ব ছিল পুরুষদের। কেটলিতে পানি গরম করে চা বানাতে হতো। তাই ড্যান্ডির পুরুষদের নাম হয়ে যায় ‘কেটল-বয়লার’। স্কটল্যান্ডের অন্য শহরের মানুষ ড্যান্ডির নাম দেয় ‘শি টাউন’ বা ‘নারীদের শহর’। কিন্তু এ সমস্ত টিটকারি দেওয়া কথা ড্যান্ডির নারীদের একটুকুও বদলাতে পারেনি। তারা দিনে দশ ঘণ্টা কাজ করত। প্রয়োজন হলে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করত। রাতে সুন্দর কাপড় পরে দলে দলে শহরে ঘুরে বেড়াত, থিয়েটার দেখত, নাইট ক্লাবে নাচত, পানাহার করত, আনন্দ ফুর্তি করত। তাদের আনন্দ ফুর্তির মাত্রা একটু বেশি হলে পুলিশ বাধা দিত। দুপক্ষের মধ্যে লড়াই বেধে যেত। কোনো কোনো রাতে ড্যান্ডি শহরের কেন্দ্রস্থল কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতো। বিশ শতকের প্রথম দশকের কোনো এক বছর ড্যান্ডি শহরে শান্তি ভঙ্গের দায়ে হাজত খাটা ১ হাজার ৪০০ মানুষের মধ্যে ৮০০ জনই ছিল নারী।
উপমহাদেশের রক্ত শোষণ করে ধনী হওয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নারী বা পুরুষদের বাহবা দেওয়ার মানুষ আমি নই। তারপরও ড্যান্ডির নারীদের সাহসে বাহবা না দিয়ে পারি না।
শি টাউনের নারীদের শ্রমিক আন্দোলন
ড্যান্ডি শহরে শ্রমিক আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল জুট মিলের নারী শ্রমিকেরা। তবে তারা কোনো দিন পুরুষ নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক সংগঠনের নিয়ম মেনে চলত না। তারা শ্রমের ন্যায্য মূল্য আদায় করা, কারখানা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ধর্মঘট, মিটিং-মিছিল নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করত এবং মাঝেমধ্যে সফলতা লাভ করত।
‘সমান কাজের সমান মূল্য’ পুরুষ-নারীর সমান বেতন এবং বৃহত্তর সমাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকার অর্জনের সংগ্রামে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়েই ড্যান্ডি টাউন কাউন্সিল কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের দেখাশোনা করার জন্য ক্রেস ও নার্সারি প্রতিষ্ঠা করে এবং শুধুমাত্র নারীদের বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করে।
ইংল্যান্ডে নারীদের ভোটের অধিকার অর্জনে ‘সাফরাজেট’ আন্দোলনে ড্যান্ডির নারী শ্রমিকেরা প্রভূত অবদান রাখে। তাদের কাজের দক্ষতা, অর্থনৈতিক শক্তি আর স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ শাসক শ্রেণি অবশেষে ১৯১৮ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটের অধিকার দিতে বাধ্য হয়। ড্যান্ডির নারীরা ১৯২২ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়ে তাদের নতুন অধিকারের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। তারা এই ভোটে নারীদের ভোটাধিকার বিরোধী, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কট্টর সমর্থক এবং ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে পরাজিত করে।
বাংলার বস্ত্রবালিকারা
পাট ব্যবসায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো উন্নতি হয়নি। বাংলার নেংটি পরা কৃষকদের ভাগ্য খোলেনি। কিন্তু ড্যান্ডি শহরের মেয়েরা পাটকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পেরেছিল। পুরো ব্রিটেনে, তথা পশ্চিম ইউরোপীয় মেয়েদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে পেরেছিল।
ড্যান্ডির জুট মিউজিয়াম দেখছি, গাইডের কথা শুনছি, আর আমার কল্পনার চোখে ভেসে উঠছিল তাদেরই উত্তরসূরি পাটের দেশের মানুষ আমার স্বজাতি, অন্য এক তন্তু, তুলার কাপড় সেলাইয়ের কাজে নিয়োজিত ঢাকা শহরের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের চেহারা। কী জুটছে তাদের কপালে?
আমি যখন বাংলাদেশে যাই, তখন এয়ারপোর্ট থেকে ফরিদপুর যাওয়ার পথে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমি গাড়িতে বসে দেখি হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক রাস্তার দুধারে সুশৃঙ্খলভাবে হেঁটে যাচ্ছে। রং-বেরঙের পোশাকে এরা সবাই দেখতে সুন্দর, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। এরা সবাই নারী। এরাই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এদের সংখ্যা ৩২ লাখ। এরা বছরে ৩ দশমিক ১ লাখ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। তবুও গার্মেন্টস শ্রমিক নারীদের অবস্থা এমন কেন? বেতন কম, কাজের নিরাপত্তা নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। কেন?
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ছিল ৯৪ ডলার বা ৮ হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে তা ২ হাজার ৮৮২ ডলার বা ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আমরা এখন পাকিস্তান ও ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি এবং আরও ওপরে যাচ্ছি। কিন্তু যে শিলাখণ্ডের শক্ত ভিত্তির ওপরে দাঁড়িয়ে আমরা আরও ওপরে উঠছি, গার্মেন্টস শিল্পের সেই নারী শ্রমিকদের আমরা কতটা মর্যাদা দিতে শিখেছি? আশা করি বাংলাদেশের পাট যেমন একদিন পশ্চিমা দেশগুলোর নারীমুক্তিতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করেছে, তেমনি আজকের দিনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত নারীরা অদূর ভবিষ্যতে পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোতে নারীমুক্তির সূচনা করবে।
বাংলায় পাটকল ও ড্যান্ডির পতন
১৮৭০ সালে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা কলকাতার প্রথম পাটকল প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে এ ব্যবসায় ড্যান্ডির একচেটিয়া আধিপত্য কমতে থাকে। বিশ শতকের প্রথম দশকের মধ্যে কলকাতা পাটকলের শ্রমিক সংখ্যা ড্যান্ডিকে ছাড়িয়ে যায় এবং পরিবর্তনের গতিধারা অব্যাহত থাকে। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের তীব্রতা এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব পাকিস্তানে নতুন নতুন এবং বড় বড় পাটকল প্রতিষ্ঠিত হলে ড্যান্ডির অবস্থা রাতারাতি বদলে যায়। ১৯৫০-এর দশকে সেখানে পাটকলের সংখ্যা পঞ্চাশের নিচে নেমে যায়।
১৯৯৮ সালের ১৯ অক্টোবর। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩১০ টন কাঁচা পাট নিয়ে এমভি বাংলার ঊর্মি যখন স্কটল্যান্ডের ড্যান্ডি বন্দরে পৌঁছায়, তখন সে শহরের মিলের সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। এর পর ড্যান্ডি বন্দরে আর কোনো দিন পাটের জাহাজ নোঙর করেনি।
শেষ লটের পাটের শেষ কোস্টার কাজ ১৯৯৯ সালের মে মাসে শেষ হলে, তায়েব্যাংক পাওয়ার লুমসের মালিক সব মেশিনপত্র বিক্রি করে দেয় কলকাতা পাটকলের মালিক জি জে ওয়াদওহার কাছে। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে ফিরতি যাত্রায় বাংলার ঊর্মি ড্যান্ডির শেষ পাটকলের শেষ যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে কলকাতা বন্দরে পৌঁছে দেয়। এ যেন বাংলার ছেলে বাংলায় ফিরে আসা।
‘দ্যাট ওয়াজ দি এন্ড’, বলে আমার গাইডের চোখ ছলছল করে উঠল। একজন বয়স্ক পুরুষের চোখে জল দেখে আমিও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। নরম সুরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি এই মিলে কাজ করেছ নাকি?’ একটু মৃদু হেসে তিনি জবাব দিলেন, ‘না, আমার মা করেছে। আমি কাজের বয়সী হওয়ার আগেই এই মিল বন্ধ হয়ে গেছে। মায়ের মুখে অনেক গল্প শুনেছি। আমার মা এখন বেঁচে নেই। মাকে সম্মান জানানোর জন্য আমি সপ্তাহে একদিন এই জুট মিউজিয়ামে ভলান্টিয়ার গাইড হিসেবে কাজ করি। বেতন পাই না। কিন্তু আনন্দ পাই।’
এবার আমার চোখ ছলছল করে উঠল। পেছনে পরের ব্যাচের দর্শক জমা হয়ে গেছে, কথা বাড়াতে পারলাম না। ‘ইউ আর ডুয়িং এ গ্রেট জব, কিপ ইট আপ’, বললাম। হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিলাম। সুভেনির শপে ঢুকতেই চোখে পড়ল একখানা বই ‘জুট নো মোর’। বইখানা কিনলাম।
লেখক: ডিরেক্টর, এশিয়ান রিসোর্স সেন্টার, বার্মিংহাম, ইংল্যান্ড

রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে...
২ দিন আগে
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
৩ দিন আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
৪ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে লোকোশেডের পুকুরে ফেলে দিত। এমনকি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেন থামলে সেই ট্রেন থেকেও সন্দেহভাজন মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে নিয়ে আসত লোকোশেড ক্যাম্পে। তাদের সহায়তা করতে দোসররা তো ছিলই। আর ক্যাম্পে আনা বাঙালিদের ভাগ্যে জুটত নির্মম নির্যাতন। এরপর হত্যা। এবং মৃতদেহগুলোর জায়গা হতো সেই পুকুরেই। দুই দশক আগে সরকারি অর্থায়নে সেই শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বধ্যভূমি এলাকায় নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিশৌধ।
ছবি: মো. সাকিবুল হাসান, উইকিপিডিয়া

রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে লোকোশেডের পুকুরে ফেলে দিত। এমনকি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেন থামলে সেই ট্রেন থেকেও সন্দেহভাজন মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে নিয়ে আসত লোকোশেড ক্যাম্পে। তাদের সহায়তা করতে দোসররা তো ছিলই। আর ক্যাম্পে আনা বাঙালিদের ভাগ্যে জুটত নির্মম নির্যাতন। এরপর হত্যা। এবং মৃতদেহগুলোর জায়গা হতো সেই পুকুরেই। দুই দশক আগে সরকারি অর্থায়নে সেই শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বধ্যভূমি এলাকায় নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিশৌধ।
ছবি: মো. সাকিবুল হাসান, উইকিপিডিয়া

ডান্ডি শহরে ডেভিড লিন্ডসে তাঁর ফ্ল্যাক্স মিল ‘ভারডান্ট ওয়ার্কস’এর কিছু বিবর্তন করে ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বিশ্বের প্রথম জুট মিল বা পাটকল।
২১ জুন ২০২২
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
৩ দিন আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
৪ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?
...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।
আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...
সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?
...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।
আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...
সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

ডান্ডি শহরে ডেভিড লিন্ডসে তাঁর ফ্ল্যাক্স মিল ‘ভারডান্ট ওয়ার্কস’এর কিছু বিবর্তন করে ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বিশ্বের প্রথম জুট মিল বা পাটকল।
২১ জুন ২০২২
রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে...
২ দিন আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
৪ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।
ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।
ছবি: সংগৃহীত

ডান্ডি শহরে ডেভিড লিন্ডসে তাঁর ফ্ল্যাক্স মিল ‘ভারডান্ট ওয়ার্কস’এর কিছু বিবর্তন করে ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বিশ্বের প্রথম জুট মিল বা পাটকল।
২১ জুন ২০২২
রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে...
২ দিন আগে
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
৩ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

ডান্ডি শহরে ডেভিড লিন্ডসে তাঁর ফ্ল্যাক্স মিল ‘ভারডান্ট ওয়ার্কস’এর কিছু বিবর্তন করে ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বিশ্বের প্রথম জুট মিল বা পাটকল।
২১ জুন ২০২২
রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে...
২ দিন আগে
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
৩ দিন আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
৪ দিন আগে