Ajker Patrika

যৌথখামারে

জাহীদ রেজা নূর
যৌথখামারে

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ রুবল দাম। সে সময় একেকজন শিক্ষার্থী ৯০ রুবল স্টাইপেন্ড পেতেন। তার মানে এক মাসের স্টাইপেন্ডের চেয়েও বেশি দাম ক্যামেরাটার। কিন্তু কাজ করার পর যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে তো কেনা যাবে একটা ক্যামেরা! এ চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল। হোক না রাশিয়ান ক্যামেরা, ক্যানন বা নাইকনের মতো ক্যারিশমা নেই তার। কিন্তু তার লেন্স? তার ছবির স্পষ্টতা? যেকোনো ক্যামেরাকেই তো জেনিত হারিয়ে দেবে। আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতাম এভাবে: সোভিয়েত ইউনিয়নে তো সাদা-কালো ছবি তুলতে হবে। রঙিন ফিল্ম নেই বললেই চলে। যদিও কখনো রঙিন ফিল্ম (আগফা) কেনার সুযোগ হতো, তবুও সে ফিল্মে যে ছবি উঠত, তা ছিল ঘোলাটে। সোভিয়েত নাগরিকেরা পত্রিকা, জার্নালের পাতা ছাড়া ভালো ছবি দেখার সুযোগ পেত না। এগুলো এখন অলীক কথাবার্তা বলে মনে হতে পারে। 

যাই হোক, আমাদের নির্মাণ শ্রমিক হওয়ার সুযোগ ঘটল না। সাইবেরিয়ার নির্মাণ শ্রমিক হয়ে গেলে অনেক টাকা উপার্জন করা যায় বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো যৌথখামারের জন্য। ক্রাসনাদারের অদূরে দিনস্কি রাইয়নে যাব আমরা। যে কালখোজ বা যৌথ খামারে কাজ করব, তার নাম ‘জাভেতি লেনিনা’ (লেনিনের অঙ্গীকার)। 

শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো সকালের দিকেই। বেশি সময় লাগল না। সম্ভবত এক ঘণ্টারও কম সময়ে আমরা পৌঁছেছিলাম সেই কালখোজে। ঢুকতেই একটা বড় হলঘর। সেখানেই ডাইনিং টেবিল। যারা এই শিবিরে থাকবে, তাদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন এখানেই। একটু হেঁটে ভিতরের দিকে ঢুকলে লম্বা দুই সারিতে কয়েকটি ঘর। সে ঘরগুলোতেই আমাদের ঠাঁই হলো। আমরা যে ঘরে ছিলাম, সেখানে আমি আর রিপন। বাকি আটজন ছিল ইথিওপিয়ার ছেলে। মেয়েরা ছিল বিপরীত দিকের ঘরগুলোয়। 

এখানে বলে রাখা ভালো, যারাই যৌথখামারে কিংবা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেত, তারা বিদেশে যেত না টাকা কামাতে। হয় তাদের সুযোগ ছিল না, নতুবা পার্টির নির্দেশ মেনে এই কাজ করত। প্রথম দিন আমাদের কোনো কাজ করতে হয়নি। যিনি আমাদের তত্ত্বাবধান করছিলেন, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী কাজ করতে হবে। প্রথম দিন আমাদের যেতে হবে আপেল বাগানে। সেখানে ঝুড়ি ভরে আপেল কুড়িয়ে গাড়িতে এনে ফেলতে হবে। যত খুশি আপেল খাওয়া যাবে। কিন্তু শিবিরে বয়ে আনা যাবে না। দ্বিতীয় দিন নিয়ে যাওয়া হবে আলুর খেতে। দুপুর পর্যন্ত আলু তুলে গাড়ি ভরতে হবে। ছোট-বড় সব আলু একসঙ্গে তুলতে হবে। আলাদা করার দরকার নেই। তৃতীয় দিন নিড়ানি। আগাছা হয়েছে খেতে, সেই খেত পরিষ্কার করতে হবে। চতুর্থ দিন থেকে কী করতে হয়েছিল, তা ধারাবাহিকভাবে মনে নেই। তবে লাই কুড়াতে হয়েছিল একদিন, সেটা মনে আছে। 

প্রতিদিন বিকেলে টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ ছিল। দুটো টেবিল ছিল। ভলিবল খেলা যেত। সন্ধ্যায় কখনো কখনো আয়োজন করা হতো দিস্কোতেকা (ডিসকোটেকা)। সেখানে নাচ হতো। সে সময় মডার্ন টকিং মাতিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েত তরুণের মন। `ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই সোউল’, ‘শেরি শেরি লেডি’, গান দুটোর কথাই বেশি মনে পড়ে। যেকোনো নাচের অনুষ্ঠানে এই গান দুটোর উপস্থিতি ছিল অবধারিত। 

লারা নামে একটি মেয়ে ছিল মাদাগাস্কারের। ও আমাকে খুব পছন্দ করত। না, প্রেমিক হিসেবে আমাকে দেখত না ও। সহজেই মিশতে পারত। কথা বলতে ভালোবাসত। ওর মধ্যে একটা ‘মা মা’ বা ‘বড়বোন বড়বোন’ ভাব ছিল। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যেত, ওদের জীবন গড়ে উঠেছে ইউরোপ, এশিয়া, আর আফ্রিকার মিলিত সংস্কৃতিতে। 

যেহেতু শ্রমিক বা কৃষক হিসেবে কাজ করছি, তাই আমাদের খাওয়াটা ছিল দেখার মতো। বাহুল্য ছিল না, কিন্তু পুষ্টির শতভাগ জোগান থাকত খাবারে। বোর্শ; অর্থাৎ, গরুর মাংস আর বাঁধা কপি দিয়ে তৈরি সুপ ছিল শুরুতে। এর পর বড় আকারের একটি বিফ স্টেক। একটু সাদা ভাত অথবা স্ম্যাশ্ড পটেটো, তাতে মাখনের প্রলেপ। প্রচুর সালাদ থাকত। স্মিতানা নামে ঘন দই থাকত। থাকত কমপোত নামে ফল জাল দিয়ে তৈরি পানীয়। আর কী কী থাকত, তা খেয়াল নেই। 

গরুর মাংস আমার সব সময়ের প্রিয় খাবার। তাই খাওয়াটা ভালো লাগত। কখনো বিফ স্টেকের পরিবর্তে থাকত গুলইয়াশ। এটাও ঘন ঝোলে গরুর মাংস। ভাত বা আলুভর্তা দিয়ে তা খেতে খুব ভালো লাগত। 

যে পানীয়টির কথা বলা হয়নি, সেটা হলো ক্ভাস। উচ্চারণ (kvas)। কাজ শেষে ক্যাম্প বা শিবিরে ফেরার পর বিশাল এক ড্রামে থাকত এই পানীয়। আহা! ঠান্ডা সেই পানীয় জুড়িয়ে দিত মন। 

এটাই ছিল আমাদের প্রথম রুশ গ্রাম দেখা। ‘আমুদে পরিবার’ নামে একটা রুশ বই পড়েছিলাম ছেলেবেলায়। সেখানে রুশ গ্রামের বর্ণনা ছিল। এখানে এসে সেই বইটির কথা স্মরণে এল। প্রথম দিন বিকেলে আমি আর রিপন হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। থেমেছিলাম কেবল নদীর ধারে একটা সেতুর কাছে এসে। সেখানে খড়ের ওপর বসেছিলাম। রিপন বেশ ভালো গান গায়। কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছিল ও। আমি আবৃত্তি করেছিলাম কয়েকটি কবিতা। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। তার রক্তিম আভা যখন পুরো পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছিল, তখনই আমরা ফিরে এসেছিলাম আমাদের ক্যাম্পে। 

গ্রামের মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে ওরা কথা বলার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকত। বোঝা যেত, স্কুলে ভূগোল পড়ানো হলেও পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নেই। কেউ কেউ অবশ্য বুঝতেন, কিংবা না বুঝে মাথা নাড়তেন। 

যেমন, একজন আমাদের দেখে বললেন, ‘তোমরা কি কিউবা থেকে এসেছ?’ 
আমরা বললাম, ‘না। আমরা এসেছি বাংলাদেশ থেকে।’ 
‘তার মানে আফ্রিকা?’ 
‘না। এটা বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশ। ভারতের পাশে।’ 
‘ও, ভারত? রাজ কাপুরের ভারত? মিৎখুনের (মিঠুন) ভারত।’ 

বোঝা গেল, ওদের সিনেমা হলগুলোতে রাজকাপুর, আর মিঠুন খুব জনপ্রিয়। মিঠুনের ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবিটি খুব দেখত সোভিয়েত জনগণ। 

সেদিন যখন আওয়াজ বাড়িয়ে সংগীতের ব্যবস্থা করা হলো, তখন লারা আমার কাছে এসে বলল, ‘রেজা, দাভাই তানসুয়েম’ (রেজা, চলো নাচি)।’ 

আমি বললাম, ‘ই্য়া নি উমেয়ু তানৎসিভাত। (আমি নাচতে পারি না)।’ 
‘ইশতো তি গাভারিশ। দাভাই তানৎসিভাত। (কী বলছিস, আয় নাচি) ’
‘ইয়া নি বুদু তানৎসিভাত। (আমি নাচব না)।’ 
‘নু রেজা, তিন ইশিও মালাদোই। (কিন্তু রেজা, তুমি এখনো তরুণ)।’ 

লারা যতই আমাকে নাচার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকুক না কেন, আমি নাচিনি। এখন ভাবি, কী হতো একটু নাচলে? কেন এতটা একরোখা ছিলাম আমি? বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে গেলে ফরাসি হতে হয়। অথচ আমি যেন পণ করেছিলাম, যেখানেই যাই না কেন, বাঙালি থাকব। এখন বুঝতে পারি, আমার ভাবনা অনেক বেশি জড় ভাবনা ছিল। বাঙালি হতে গিয়ে মানুষ হওয়ার চর্চা কি একটু ধাক্কা খেয়ে যায়নি? এগুলো অবশ্য এখনকার উপলব্ধি। তখন তো নিজের অবস্থান নিয়ে সুখীই ছিলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বধ্যভূমি ৭১

সম্পাদকীয়
বধ্যভূমি ৭১

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রহনপুর গণকবর

সম্পাদকীয়
রহনপুর গণকবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

সম্পাদকীয়
ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।

আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।

বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।

তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।

সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।

তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত