Ajker Patrika

স্মৃতির বারান্দায়

আলমগীর মোহাম্মদ
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ০৫
স্মৃতির বারান্দায়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।

গ্রাম থেকে এলেও সরকারি কলেজের পরিবেশ ধরতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমাদের শিক্ষকেরা আন্তরিক ছিলেন। দর্শন বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ুন কবির একদিন আমাকে বললেন, ‘এই ছেলে তুমি ফিলোসোফি নিয়ে ভার্সিটিতে পড়বে।’ 

যুক্তিবিদ্যা আমি ভালো বুঝতাম। সাথে তো মুখস্থ বিদ্যার জোর ছিলই। স্যারের সেদিনের উৎসাহ মনে আরও সাহস জুগিয়েছিল। পরে আমার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম নিজামী আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। অবশ্য পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই। 

আমি প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার গিয়েছিলাম ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। জারুলতলার বুদ্ধিজীবী চত্বরে একদল সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, কাঁধে খাদির শাল নিয়ে অধ্যাপককে দেখলাম। তাঁরা বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জড়ো হয়েছেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সেই দৃশ্য। ভর্তি শেষে আমাদের প্রথম ক্লাস হয় ১২০ নম্বর কক্ষে, যাকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস বলা হয় আরকি। শিক্ষকেরা কথা বললেন একে একে। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমি কথা বলেছিলাম। সেদিন সাহস সঞ্চয় করে কী কী বলেছিলাম, মনে না থাকলেও এতটুকু মনে আছে, ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে পারার খুশি প্রকাশ করেছিলাম। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ আমার কাছে প্লেটোর কথিত রূপক গুহের মতো। কেন ভর্তি হয়েছিলাম, বিভাগের সিলেবাসে কী আছে, ইংরেজি বিভাগের ভিশন-মিশন কী—কোনো কিছুই না জেনে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। ইংরেজি বিভাগের সিলেবাস আমাদের অনেকের চোখ খুলে দিয়েছিল। বিভাগ নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক প্রচলিত মিথ শুনে যখন হতাশায় আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই প্রথমবর্ষ ফাইনালের রুটিন পাই আমরা। দীর্ঘদিনের সেশনজট, লো সিজিপিএ,  নিয়মিত ক্লাস না হওয়া—এসব কথা শুনে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাবিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ আলী। স্যারের সঙ্গে দেখা করে রুটিনের কথা শুনে আর বিভাগ পরিবর্তনের কথা ভাবিনি। পরে নানা রকম সরল, গরল, আনন্দ, তিক্ততার মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের কোর্স সাত বছর দশ মাসে পাস করে বের হই। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চারটি বিভাগের একটি হলো ইংরেজি বিভাগ। প্রতিষ্ঠালগ্নে দেশের খ্যাতনামা ও মেধাবী সব শিক্ষক দিয়ে যাত্রা করা এই বিভাগে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। অজ্ঞাত কারণে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হয় না বিভাগে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলেও জনবল ঘাটতির কারণে ঠিক সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হয় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সেশনজট কমছেই না। চার বছরের কোর্স করতে ছয় বছর লেগে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ। সাথে বিশ্ববিদ্যালয়েরও অর্থ অপচয় হচ্ছে। সেশনজটের সাথে আছে লো-সিজিপিএর অভিশাপ, যার কারণে বিভাগ থেকে গত দশ-বারো বছরে পাস করা কোনো শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি মেধাতালিকায় প্রথম-দ্বিতীয় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীরাও একই অভিশাপের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই বিভাগের স্নাতকেরা। কোথাও আবেদনের সুযোগ পেলেও প্রথম যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হলো আপনার সিজিপিএ এত কম কেন? 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স পঞ্চান্ন পেরোল এবার। কিন্তু এত বছরেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পেরেছে? কার্ডিনাল নিউম্যানের ‘দ্য আইডিয়া অব ইউনিভার্সিটি’-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা আমরা পাই, তার সঙ্গে কতটুকু মিল আছে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের? ইংরেজি ও বাংলা পাশাপাশি দুটো বিভাগ। সাহিত্যের এই দুটি বিভাগ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সাহিত্যে কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা। 

গবেষণার কথা বলবেন? সে আলাপ বরং না করাই ভালো। গত ৫৫ বছরে কতজন গবেষক তৈরি করতে পেরেছে ইংরেজি বিভাগ? অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে গবেষণাকে খুব পরিষ্কার ভাষায় নিরুৎসাহিত করা হয়। মাস্টার্সে থিসিস করানো হয় না। পিএইচডি এমফিলে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে কোনো কোনো বিভাগের প্রথম-দ্বিতীয় স্থান অধিকারীরাও আবেদন করতে পারেন না। নানা সময়ে এই ব্যাপারে আগ্রহীরা শিক্ষকদের দ্বারস্থ হলেও কোনো সুরাহা হয় না। এদিকে এই অনীহার কারণে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকার পরও গবেষণা কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই জায়গায় চবি পুরোপুরি ব্যর্থ। 

আট বছরের শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কখনো শিক্ষার্থীবান্ধব মনে হয়নি আমার। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেট সরবরাহ ত্বরান্বিত করা, উন্নত মানের ল্যাব সুবিধা (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব নেই) নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারের নিয়মনীতি শিথিল করা, শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি ও মানোন্নয়ন করা, শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে মানসম্মত পরিবহনের ব্যবস্থা করা, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা, চাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনমতো আবাসন নিশ্চিত করা প্রভৃতি কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে করছেন না। সুদূর চট্টগ্রাম শহর থেকে যাওয়া-আসা করার ব্যস্ততায় দিনের অনেকটা সময় অপচয় হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। আবাসন সংকট সমাধান করা গেলে, যাতায়াতের মাধ্যমগুলো মানসম্মত করতে পারলে এই অপচয় অনেকটা রোধ করা সম্ভব। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কী চট্টগ্রাম তথা দেশবাসীর মেধা-মনন বিকাশে সার্থক ভূমিকা পালন করছে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হবে। দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বড় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টায় পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক চর্চা, গবেষণায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারত, যদি সংশ্লিষ্ট সবাই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতেন। 

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ইতিবাচক দিক হলো বর্তমানে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে  নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কোনো মেধাবী মুখকে প্রাণ দিতে হচ্ছে না আর। বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণা হচ্ছে। সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন চবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমার জন্য সুখের। পঞ্চান্নতম বর্ষপূর্তিতে আমরা আশা করি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ থেকে নিয়মিত গবেষণা জার্নাল বের হবে ছাত্র-শিক্ষকের যৌথ উদ্যোগে, একটা অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে, চবি প্রেস থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা বই, গবেষণা প্রকাশিত হবে—এতটুকু আশা করা যায়। আর সবচেয়ে বড় আশা—শীঘ্রই সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রসমাজ। 

লেখক: শিক্ষক, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত