জাহীদ রেজা নূর

শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন উথালপাতাল হাওয়া। যারা তাদের ছোটখাটো সঞ্চয় ব্যাংকে রেখেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ একদিন দেখলেন সেই টাকা কাগজ হয়ে গেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেকেছে। সে যে কী ভয়াবহ জীবন ছিল রাশিয়ায়, সে কথা এখন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। সমাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের টানাপোড়েনের ছুরিটা একেবারে সরাসরি গিয়ে আঘাত করেছিল নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের বুকে।
১৯৯৪ সাল বুঝি ছিল সেটা। সে সময় হঠাৎ করেই সরকারি দোকানগুলোয় কমতে শুরু করল পণ্য। দোকানের বিভিন্ন শেলফ হয়ে গেল শূন্য। যেহেতু তখনো সরকারি দোকানে সরকারি দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, সেহেতু পেনশনে চলে যারা কিংবা যাদের আয় একেবারেই জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে না, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকত সরকারি দোকানের দিকে।
‘শাকসবজি এবং ফলমূল’ নামে ছিল সরকারি দোকান। সেখানে সব ধরনের সবজি এবং ফলমূল পাওয়া যেত। এগুলো আসত যৌথ খামার থেকে। ব্যক্তিগত মালিকানার সবজি বা ফলমূল অবশ্য দেখতে ছিল অনেক সুন্দর, কো-অপারেটিভ বাজারে সেগুলো বিক্রি হতো। কিন্তু তার দাম ছিল চড়া। ফলে সেখানে যেতে হলে পকেট থাকতে হতো স্বাস্থ্যবান। তখন এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল যে, কিছু মানুষের পকেটে এসে জমা হয়েছিল টাকাপয়সা, বাদবাকি মানুষ আতঙ্কের দৃষ্টিতে জীবনকে দেখে সময় কাটাচ্ছিলেন। সময় সত্যিই কাটবে কি না, সে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল কারও কারও মনে।
হঠাৎ যদি কখনো শাকসবজি এবং ফলমূল নিয়ে কোনো ট্রাক এসে থামত এই দোকানের সামনে, তখন কোথা থেকে সেই খবর পৌঁছে যেত বুড়োবুড়ির কাছে, সে কথা কে বলবে! কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই দোকানের সামনে যে কিউ (সারি) পড়ে যেত, সেটা দৈর্ঘ্যে দুই কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আগে যারা ১০ কেজি আলু, ১০ কেজি মুলা, পাঁচটা সবুজ বাঁধাকপি, পাঁচ বা দশ কেজি আপেল অবলীলায় কিনে নিয়ে যেতেন, তাঁরা এ সময় চাইলেই সেভাবে বাজার করতে পারতেন না। সেই আর্থিক সংগতি তাঁদের তখন আর নেই। ২ কেজি আলু কিংবা ২ কেজি আপেল কিনতে পারলেই তাঁরা নিজেদের ধন্য মনে করতেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ছিল সে রকম একটি দোকান। ভাষাবিজ্ঞানের একটা ক্লাসের পর ৪০ মিনিটের বিরতি ছিল। সে কারণে বাইরে এসেছিলাম খোলা হাওয়ায় দাঁড়াব বলে। এ সময় দেখলাম একটা কিউ দ্রুত বেড়ে চলেছে। বলে রাখি, সেটা এমন এক সময়, যখন হঠাৎ করে কোনো কিউ বাড়তে থাকলে মানুষ জিজ্ঞেস না করেই সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ত। সামনের কাউকে জিজ্ঞেস করলেও হয়তো-বা সত্যিকার তথ্যটি পাওয়া যেত না। কারণ, প্রত্যেকেই দাঁড়িয়ে গেছে কিছু একটা পাওয়া যাবে বলে। সরকারি দোকানে কিছু একটা এলেই কেবল সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের অনেকের রান্নাঘরে হাঁড়ি চড়ত।
তখন একটু একটু করে কালোবাজারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খোলা কোনো মাঠ পেলেই তারা বসে যাচ্ছে তাদের পণ্য নিয়ে। কিন্তু দাম পাঁচ গুণ-দশ গুণ বেশি। যাদের হাতে কাঁচা টাকা আছে, তারা সরকারি দোকানে না গিয়ে এসব কালোবাজারিদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেত। মূলত গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য তখনো সরকারি দোকান ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন।
পরের ক্লাসটা খুব জরুরি ছিল না। তাই কিউতে দাঁড়িয়ে পকেটের টাকাপয়সার হিসাব মিলিয়ে ফেললাম। দেখলাম কিছু কেনার মতো সামর্থ্য আমার আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের অনেকেই ততক্ষণে লাইনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদের মতো তারাও জানে না, কী কেনার জন্য এই কিউ।
কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে চাউর হয়ে যায়, দোকানে এসেছে সবুজ আপেল। এবং সে কথা জানার পর একটা ঘটনা ঘটে, যা এযাবৎকাল কোনো দিন কোথাও দেখিনি।
সোভিয়েত ইউনিয়নে বড়দের সম্মান করা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। বাসে-ট্রামে বয়স্কদের দেখলে কিংবা সন্তানসম্ভবা নারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে তখনই আসন ছেড়ে দেয় যাত্রীরা। অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যদি বাস বা মেট্রো রেলে ওঠেন, কিংবা যদি পরিবহনে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো সৈনিককে, তবে সবাই তাঁদের সামনে এগিয়ে দেয়। আসন ছেড়ে দেয়।
লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, দেখা গেল, দোকানের দিক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দুজন নারী-পুরুষ এগিয়ে আসছেন। মাঝে মাঝেই তাঁরা লাইনে দাঁড়ানো কারও কারও সঙ্গে কথা বলছেন এবং তারপর পেছনে আমাদের দিকে হাঁটছেন। কৌতূহল হলো। তাঁরা কি কিছু বলতে চাইছেন? সেটা অবশ্য জানা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই।
আমাদের চার-পাঁচজন আগেই যে রুশ তরুণেরা দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বুড়ি বললেন, ‘বুড়োর হার্টে অসুখ! ডাক্তার বলেছে সবুজ আপেল খেতে! কেউ কি একটু কিউতে দাঁড়াতে দেবে, তাহলে ২ কেজি আপেল কেনা যেত।’
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে এক তরুণ বলল, ‘দেখলে তো দাদিমা, যুদ্ধ করে কেমন দেশের জন্ম দিয়েছ তোমরা!’
বুড়োবুড়ির চোখ-মুখ মলিন হয়ে গেল।
বুড়ো বললেন, ‘দেশটা তো মুক্ত করে তোমাদের হাতেই দিয়েছিলাম! তোমরা দেশটাকে কী বানালে?’
একই রকম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আরেক তরুণ বলল, ‘যা করে তা তো তোমাদের কমিউনিস্ট পার্টি করেছে! আমাদের দোষ দিচ্ছ কেন? জার্মানিতে মানুষেরা এখন কত ভালো আছে। আর আমাদের অবস্থা?’
বুড়োবুড়ি বুঝলেন, যুদ্ধ নিয়ে কথা বলা মানে বৃথা বাক্যব্যয়! তাই অনুনয় করলেন, ‘বুড়োর হার্টে অসুখ! তোমরা কেউ কি একটু কিউতে দাঁড়াতে দেবে? পেছনে গেলে দোকানে হয়তো আর আপেল থাকবে না!’
এক তরুণ বলল, ‘কালোবাজারে বহু আপেল পাওয়া যায়। লাইনে না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে কিনে খাও।’
এমন নয় যে ওরা জানত না, এই বুড়োবুড়ির পক্ষে বাজার থেকে উচ্চমূল্যে আপেল কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু বুড়োবুড়ির প্রতি কোনো ধরনের সম্মান বা করুণা ওরা দেখাল না। সরকারি দোকানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের লাইনে দাঁড়ানোর কোনো নিয়ম নেই। বিনা কিউতে তাঁরা খাদ্য-পণ্য নিতে পারবেন, সে কথা লেখা আছে দোকানে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁদের লাইন ছেড়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছেই কারও মধ্যে দেখা গেল না।
আমি বুড়োবুড়িকে যখন আমার জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি, তখন পেছন থেকে মধ্যবয়সী এক রুশ নাগরিক বলে উঠলেন, ‘এদের যদি জায়গা ছেড়ে দাও, তাহলে কিন্তু তোমাকে দাঁড়াতে হবে লাইনের শেষ মাথায় গিয়ে! সেটা কি বুঝতে পারছ?’
ওই লোকের কথার কোনো জবাব আমি দিইনি সেদিন। জায়গা ছেড়ে দেওয়ায় বুড়োবুড়ির চোখে কৃতজ্ঞতার যে প্রকাশ আমি দেখেছিলাম, তা আজও ভুলতে পারিনি। যখন ফিরে আসব, তখন বুড়ি আবার বলছিলেন, ‘জানো ছেলে, বুড়োর হার্টে অসুখ। ডাক্তার বলেছে সবুজ আপেল খেতে। বুড়ো না বাঁচলে আমি আর বেঁচে থেকে কী করব?’
জানি না সেই সবুজ আপেল খেয়ে বুড়ো আর কত দিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এখনো তাঁদের দুজনের সেই মমতায়-ঘেরা চাহনি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মনে হয়, কোথায় যেন একটা ভুল হয়ে গেছে, যা শুধরে নেওয়ার মতো কেউ নেই।

শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন উথালপাতাল হাওয়া। যারা তাদের ছোটখাটো সঞ্চয় ব্যাংকে রেখেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ একদিন দেখলেন সেই টাকা কাগজ হয়ে গেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেকেছে। সে যে কী ভয়াবহ জীবন ছিল রাশিয়ায়, সে কথা এখন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। সমাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের টানাপোড়েনের ছুরিটা একেবারে সরাসরি গিয়ে আঘাত করেছিল নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের বুকে।
১৯৯৪ সাল বুঝি ছিল সেটা। সে সময় হঠাৎ করেই সরকারি দোকানগুলোয় কমতে শুরু করল পণ্য। দোকানের বিভিন্ন শেলফ হয়ে গেল শূন্য। যেহেতু তখনো সরকারি দোকানে সরকারি দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, সেহেতু পেনশনে চলে যারা কিংবা যাদের আয় একেবারেই জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে না, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকত সরকারি দোকানের দিকে।
‘শাকসবজি এবং ফলমূল’ নামে ছিল সরকারি দোকান। সেখানে সব ধরনের সবজি এবং ফলমূল পাওয়া যেত। এগুলো আসত যৌথ খামার থেকে। ব্যক্তিগত মালিকানার সবজি বা ফলমূল অবশ্য দেখতে ছিল অনেক সুন্দর, কো-অপারেটিভ বাজারে সেগুলো বিক্রি হতো। কিন্তু তার দাম ছিল চড়া। ফলে সেখানে যেতে হলে পকেট থাকতে হতো স্বাস্থ্যবান। তখন এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল যে, কিছু মানুষের পকেটে এসে জমা হয়েছিল টাকাপয়সা, বাদবাকি মানুষ আতঙ্কের দৃষ্টিতে জীবনকে দেখে সময় কাটাচ্ছিলেন। সময় সত্যিই কাটবে কি না, সে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল কারও কারও মনে।
হঠাৎ যদি কখনো শাকসবজি এবং ফলমূল নিয়ে কোনো ট্রাক এসে থামত এই দোকানের সামনে, তখন কোথা থেকে সেই খবর পৌঁছে যেত বুড়োবুড়ির কাছে, সে কথা কে বলবে! কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই দোকানের সামনে যে কিউ (সারি) পড়ে যেত, সেটা দৈর্ঘ্যে দুই কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আগে যারা ১০ কেজি আলু, ১০ কেজি মুলা, পাঁচটা সবুজ বাঁধাকপি, পাঁচ বা দশ কেজি আপেল অবলীলায় কিনে নিয়ে যেতেন, তাঁরা এ সময় চাইলেই সেভাবে বাজার করতে পারতেন না। সেই আর্থিক সংগতি তাঁদের তখন আর নেই। ২ কেজি আলু কিংবা ২ কেজি আপেল কিনতে পারলেই তাঁরা নিজেদের ধন্য মনে করতেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ছিল সে রকম একটি দোকান। ভাষাবিজ্ঞানের একটা ক্লাসের পর ৪০ মিনিটের বিরতি ছিল। সে কারণে বাইরে এসেছিলাম খোলা হাওয়ায় দাঁড়াব বলে। এ সময় দেখলাম একটা কিউ দ্রুত বেড়ে চলেছে। বলে রাখি, সেটা এমন এক সময়, যখন হঠাৎ করে কোনো কিউ বাড়তে থাকলে মানুষ জিজ্ঞেস না করেই সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ত। সামনের কাউকে জিজ্ঞেস করলেও হয়তো-বা সত্যিকার তথ্যটি পাওয়া যেত না। কারণ, প্রত্যেকেই দাঁড়িয়ে গেছে কিছু একটা পাওয়া যাবে বলে। সরকারি দোকানে কিছু একটা এলেই কেবল সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের অনেকের রান্নাঘরে হাঁড়ি চড়ত।
তখন একটু একটু করে কালোবাজারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খোলা কোনো মাঠ পেলেই তারা বসে যাচ্ছে তাদের পণ্য নিয়ে। কিন্তু দাম পাঁচ গুণ-দশ গুণ বেশি। যাদের হাতে কাঁচা টাকা আছে, তারা সরকারি দোকানে না গিয়ে এসব কালোবাজারিদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেত। মূলত গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য তখনো সরকারি দোকান ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন।
পরের ক্লাসটা খুব জরুরি ছিল না। তাই কিউতে দাঁড়িয়ে পকেটের টাকাপয়সার হিসাব মিলিয়ে ফেললাম। দেখলাম কিছু কেনার মতো সামর্থ্য আমার আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের অনেকেই ততক্ষণে লাইনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদের মতো তারাও জানে না, কী কেনার জন্য এই কিউ।
কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে চাউর হয়ে যায়, দোকানে এসেছে সবুজ আপেল। এবং সে কথা জানার পর একটা ঘটনা ঘটে, যা এযাবৎকাল কোনো দিন কোথাও দেখিনি।
সোভিয়েত ইউনিয়নে বড়দের সম্মান করা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। বাসে-ট্রামে বয়স্কদের দেখলে কিংবা সন্তানসম্ভবা নারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে তখনই আসন ছেড়ে দেয় যাত্রীরা। অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যদি বাস বা মেট্রো রেলে ওঠেন, কিংবা যদি পরিবহনে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো সৈনিককে, তবে সবাই তাঁদের সামনে এগিয়ে দেয়। আসন ছেড়ে দেয়।
লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, দেখা গেল, দোকানের দিক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দুজন নারী-পুরুষ এগিয়ে আসছেন। মাঝে মাঝেই তাঁরা লাইনে দাঁড়ানো কারও কারও সঙ্গে কথা বলছেন এবং তারপর পেছনে আমাদের দিকে হাঁটছেন। কৌতূহল হলো। তাঁরা কি কিছু বলতে চাইছেন? সেটা অবশ্য জানা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই।
আমাদের চার-পাঁচজন আগেই যে রুশ তরুণেরা দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বুড়ি বললেন, ‘বুড়োর হার্টে অসুখ! ডাক্তার বলেছে সবুজ আপেল খেতে! কেউ কি একটু কিউতে দাঁড়াতে দেবে, তাহলে ২ কেজি আপেল কেনা যেত।’
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে এক তরুণ বলল, ‘দেখলে তো দাদিমা, যুদ্ধ করে কেমন দেশের জন্ম দিয়েছ তোমরা!’
বুড়োবুড়ির চোখ-মুখ মলিন হয়ে গেল।
বুড়ো বললেন, ‘দেশটা তো মুক্ত করে তোমাদের হাতেই দিয়েছিলাম! তোমরা দেশটাকে কী বানালে?’
একই রকম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আরেক তরুণ বলল, ‘যা করে তা তো তোমাদের কমিউনিস্ট পার্টি করেছে! আমাদের দোষ দিচ্ছ কেন? জার্মানিতে মানুষেরা এখন কত ভালো আছে। আর আমাদের অবস্থা?’
বুড়োবুড়ি বুঝলেন, যুদ্ধ নিয়ে কথা বলা মানে বৃথা বাক্যব্যয়! তাই অনুনয় করলেন, ‘বুড়োর হার্টে অসুখ! তোমরা কেউ কি একটু কিউতে দাঁড়াতে দেবে? পেছনে গেলে দোকানে হয়তো আর আপেল থাকবে না!’
এক তরুণ বলল, ‘কালোবাজারে বহু আপেল পাওয়া যায়। লাইনে না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে কিনে খাও।’
এমন নয় যে ওরা জানত না, এই বুড়োবুড়ির পক্ষে বাজার থেকে উচ্চমূল্যে আপেল কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু বুড়োবুড়ির প্রতি কোনো ধরনের সম্মান বা করুণা ওরা দেখাল না। সরকারি দোকানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের লাইনে দাঁড়ানোর কোনো নিয়ম নেই। বিনা কিউতে তাঁরা খাদ্য-পণ্য নিতে পারবেন, সে কথা লেখা আছে দোকানে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁদের লাইন ছেড়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছেই কারও মধ্যে দেখা গেল না।
আমি বুড়োবুড়িকে যখন আমার জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি, তখন পেছন থেকে মধ্যবয়সী এক রুশ নাগরিক বলে উঠলেন, ‘এদের যদি জায়গা ছেড়ে দাও, তাহলে কিন্তু তোমাকে দাঁড়াতে হবে লাইনের শেষ মাথায় গিয়ে! সেটা কি বুঝতে পারছ?’
ওই লোকের কথার কোনো জবাব আমি দিইনি সেদিন। জায়গা ছেড়ে দেওয়ায় বুড়োবুড়ির চোখে কৃতজ্ঞতার যে প্রকাশ আমি দেখেছিলাম, তা আজও ভুলতে পারিনি। যখন ফিরে আসব, তখন বুড়ি আবার বলছিলেন, ‘জানো ছেলে, বুড়োর হার্টে অসুখ। ডাক্তার বলেছে সবুজ আপেল খেতে। বুড়ো না বাঁচলে আমি আর বেঁচে থেকে কী করব?’
জানি না সেই সবুজ আপেল খেয়ে বুড়ো আর কত দিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এখনো তাঁদের দুজনের সেই মমতায়-ঘেরা চাহনি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মনে হয়, কোথায় যেন একটা ভুল হয়ে গেছে, যা শুধরে নেওয়ার মতো কেউ নেই।
জাহীদ রেজা নূর

শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন উথালপাতাল হাওয়া। যারা তাদের ছোটখাটো সঞ্চয় ব্যাংকে রেখেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ একদিন দেখলেন সেই টাকা কাগজ হয়ে গেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেকেছে। সে যে কী ভয়াবহ জীবন ছিল রাশিয়ায়, সে কথা এখন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। সমাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের টানাপোড়েনের ছুরিটা একেবারে সরাসরি গিয়ে আঘাত করেছিল নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের বুকে।
১৯৯৪ সাল বুঝি ছিল সেটা। সে সময় হঠাৎ করেই সরকারি দোকানগুলোয় কমতে শুরু করল পণ্য। দোকানের বিভিন্ন শেলফ হয়ে গেল শূন্য। যেহেতু তখনো সরকারি দোকানে সরকারি দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, সেহেতু পেনশনে চলে যারা কিংবা যাদের আয় একেবারেই জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে না, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকত সরকারি দোকানের দিকে।
‘শাকসবজি এবং ফলমূল’ নামে ছিল সরকারি দোকান। সেখানে সব ধরনের সবজি এবং ফলমূল পাওয়া যেত। এগুলো আসত যৌথ খামার থেকে। ব্যক্তিগত মালিকানার সবজি বা ফলমূল অবশ্য দেখতে ছিল অনেক সুন্দর, কো-অপারেটিভ বাজারে সেগুলো বিক্রি হতো। কিন্তু তার দাম ছিল চড়া। ফলে সেখানে যেতে হলে পকেট থাকতে হতো স্বাস্থ্যবান। তখন এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল যে, কিছু মানুষের পকেটে এসে জমা হয়েছিল টাকাপয়সা, বাদবাকি মানুষ আতঙ্কের দৃষ্টিতে জীবনকে দেখে সময় কাটাচ্ছিলেন। সময় সত্যিই কাটবে কি না, সে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল কারও কারও মনে।
হঠাৎ যদি কখনো শাকসবজি এবং ফলমূল নিয়ে কোনো ট্রাক এসে থামত এই দোকানের সামনে, তখন কোথা থেকে সেই খবর পৌঁছে যেত বুড়োবুড়ির কাছে, সে কথা কে বলবে! কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই দোকানের সামনে যে কিউ (সারি) পড়ে যেত, সেটা দৈর্ঘ্যে দুই কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আগে যারা ১০ কেজি আলু, ১০ কেজি মুলা, পাঁচটা সবুজ বাঁধাকপি, পাঁচ বা দশ কেজি আপেল অবলীলায় কিনে নিয়ে যেতেন, তাঁরা এ সময় চাইলেই সেভাবে বাজার করতে পারতেন না। সেই আর্থিক সংগতি তাঁদের তখন আর নেই। ২ কেজি আলু কিংবা ২ কেজি আপেল কিনতে পারলেই তাঁরা নিজেদের ধন্য মনে করতেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ছিল সে রকম একটি দোকান। ভাষাবিজ্ঞানের একটা ক্লাসের পর ৪০ মিনিটের বিরতি ছিল। সে কারণে বাইরে এসেছিলাম খোলা হাওয়ায় দাঁড়াব বলে। এ সময় দেখলাম একটা কিউ দ্রুত বেড়ে চলেছে। বলে রাখি, সেটা এমন এক সময়, যখন হঠাৎ করে কোনো কিউ বাড়তে থাকলে মানুষ জিজ্ঞেস না করেই সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ত। সামনের কাউকে জিজ্ঞেস করলেও হয়তো-বা সত্যিকার তথ্যটি পাওয়া যেত না। কারণ, প্রত্যেকেই দাঁড়িয়ে গেছে কিছু একটা পাওয়া যাবে বলে। সরকারি দোকানে কিছু একটা এলেই কেবল সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের অনেকের রান্নাঘরে হাঁড়ি চড়ত।
তখন একটু একটু করে কালোবাজারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খোলা কোনো মাঠ পেলেই তারা বসে যাচ্ছে তাদের পণ্য নিয়ে। কিন্তু দাম পাঁচ গুণ-দশ গুণ বেশি। যাদের হাতে কাঁচা টাকা আছে, তারা সরকারি দোকানে না গিয়ে এসব কালোবাজারিদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেত। মূলত গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য তখনো সরকারি দোকান ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন।
পরের ক্লাসটা খুব জরুরি ছিল না। তাই কিউতে দাঁড়িয়ে পকেটের টাকাপয়সার হিসাব মিলিয়ে ফেললাম। দেখলাম কিছু কেনার মতো সামর্থ্য আমার আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের অনেকেই ততক্ষণে লাইনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদের মতো তারাও জানে না, কী কেনার জন্য এই কিউ।
কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে চাউর হয়ে যায়, দোকানে এসেছে সবুজ আপেল। এবং সে কথা জানার পর একটা ঘটনা ঘটে, যা এযাবৎকাল কোনো দিন কোথাও দেখিনি।
সোভিয়েত ইউনিয়নে বড়দের সম্মান করা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। বাসে-ট্রামে বয়স্কদের দেখলে কিংবা সন্তানসম্ভবা নারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে তখনই আসন ছেড়ে দেয় যাত্রীরা। অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যদি বাস বা মেট্রো রেলে ওঠেন, কিংবা যদি পরিবহনে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো সৈনিককে, তবে সবাই তাঁদের সামনে এগিয়ে দেয়। আসন ছেড়ে দেয়।
লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, দেখা গেল, দোকানের দিক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দুজন নারী-পুরুষ এগিয়ে আসছেন। মাঝে মাঝেই তাঁরা লাইনে দাঁড়ানো কারও কারও সঙ্গে কথা বলছেন এবং তারপর পেছনে আমাদের দিকে হাঁটছেন। কৌতূহল হলো। তাঁরা কি কিছু বলতে চাইছেন? সেটা অবশ্য জানা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই।
আমাদের চার-পাঁচজন আগেই যে রুশ তরুণেরা দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বুড়ি বললেন, ‘বুড়োর হার্টে অসুখ! ডাক্তার বলেছে সবুজ আপেল খেতে! কেউ কি একটু কিউতে দাঁড়াতে দেবে, তাহলে ২ কেজি আপেল কেনা যেত।’
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে এক তরুণ বলল, ‘দেখলে তো দাদিমা, যুদ্ধ করে কেমন দেশের জন্ম দিয়েছ তোমরা!’
বুড়োবুড়ির চোখ-মুখ মলিন হয়ে গেল।
বুড়ো বললেন, ‘দেশটা তো মুক্ত করে তোমাদের হাতেই দিয়েছিলাম! তোমরা দেশটাকে কী বানালে?’
একই রকম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আরেক তরুণ বলল, ‘যা করে তা তো তোমাদের কমিউনিস্ট পার্টি করেছে! আমাদের দোষ দিচ্ছ কেন? জার্মানিতে মানুষেরা এখন কত ভালো আছে। আর আমাদের অবস্থা?’
বুড়োবুড়ি বুঝলেন, যুদ্ধ নিয়ে কথা বলা মানে বৃথা বাক্যব্যয়! তাই অনুনয় করলেন, ‘বুড়োর হার্টে অসুখ! তোমরা কেউ কি একটু কিউতে দাঁড়াতে দেবে? পেছনে গেলে দোকানে হয়তো আর আপেল থাকবে না!’
এক তরুণ বলল, ‘কালোবাজারে বহু আপেল পাওয়া যায়। লাইনে না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে কিনে খাও।’
এমন নয় যে ওরা জানত না, এই বুড়োবুড়ির পক্ষে বাজার থেকে উচ্চমূল্যে আপেল কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু বুড়োবুড়ির প্রতি কোনো ধরনের সম্মান বা করুণা ওরা দেখাল না। সরকারি দোকানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের লাইনে দাঁড়ানোর কোনো নিয়ম নেই। বিনা কিউতে তাঁরা খাদ্য-পণ্য নিতে পারবেন, সে কথা লেখা আছে দোকানে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁদের লাইন ছেড়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছেই কারও মধ্যে দেখা গেল না।
আমি বুড়োবুড়িকে যখন আমার জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি, তখন পেছন থেকে মধ্যবয়সী এক রুশ নাগরিক বলে উঠলেন, ‘এদের যদি জায়গা ছেড়ে দাও, তাহলে কিন্তু তোমাকে দাঁড়াতে হবে লাইনের শেষ মাথায় গিয়ে! সেটা কি বুঝতে পারছ?’
ওই লোকের কথার কোনো জবাব আমি দিইনি সেদিন। জায়গা ছেড়ে দেওয়ায় বুড়োবুড়ির চোখে কৃতজ্ঞতার যে প্রকাশ আমি দেখেছিলাম, তা আজও ভুলতে পারিনি। যখন ফিরে আসব, তখন বুড়ি আবার বলছিলেন, ‘জানো ছেলে, বুড়োর হার্টে অসুখ। ডাক্তার বলেছে সবুজ আপেল খেতে। বুড়ো না বাঁচলে আমি আর বেঁচে থেকে কী করব?’
জানি না সেই সবুজ আপেল খেয়ে বুড়ো আর কত দিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এখনো তাঁদের দুজনের সেই মমতায়-ঘেরা চাহনি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মনে হয়, কোথায় যেন একটা ভুল হয়ে গেছে, যা শুধরে নেওয়ার মতো কেউ নেই।

শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন উথালপাতাল হাওয়া। যারা তাদের ছোটখাটো সঞ্চয় ব্যাংকে রেখেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ একদিন দেখলেন সেই টাকা কাগজ হয়ে গেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেকেছে। সে যে কী ভয়াবহ জীবন ছিল রাশিয়ায়, সে কথা এখন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। সমাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের টানাপোড়েনের ছুরিটা একেবারে সরাসরি গিয়ে আঘাত করেছিল নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের বুকে।
১৯৯৪ সাল বুঝি ছিল সেটা। সে সময় হঠাৎ করেই সরকারি দোকানগুলোয় কমতে শুরু করল পণ্য। দোকানের বিভিন্ন শেলফ হয়ে গেল শূন্য। যেহেতু তখনো সরকারি দোকানে সরকারি দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, সেহেতু পেনশনে চলে যারা কিংবা যাদের আয় একেবারেই জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে না, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকত সরকারি দোকানের দিকে।
‘শাকসবজি এবং ফলমূল’ নামে ছিল সরকারি দোকান। সেখানে সব ধরনের সবজি এবং ফলমূল পাওয়া যেত। এগুলো আসত যৌথ খামার থেকে। ব্যক্তিগত মালিকানার সবজি বা ফলমূল অবশ্য দেখতে ছিল অনেক সুন্দর, কো-অপারেটিভ বাজারে সেগুলো বিক্রি হতো। কিন্তু তার দাম ছিল চড়া। ফলে সেখানে যেতে হলে পকেট থাকতে হতো স্বাস্থ্যবান। তখন এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল যে, কিছু মানুষের পকেটে এসে জমা হয়েছিল টাকাপয়সা, বাদবাকি মানুষ আতঙ্কের দৃষ্টিতে জীবনকে দেখে সময় কাটাচ্ছিলেন। সময় সত্যিই কাটবে কি না, সে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল কারও কারও মনে।
হঠাৎ যদি কখনো শাকসবজি এবং ফলমূল নিয়ে কোনো ট্রাক এসে থামত এই দোকানের সামনে, তখন কোথা থেকে সেই খবর পৌঁছে যেত বুড়োবুড়ির কাছে, সে কথা কে বলবে! কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই দোকানের সামনে যে কিউ (সারি) পড়ে যেত, সেটা দৈর্ঘ্যে দুই কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আগে যারা ১০ কেজি আলু, ১০ কেজি মুলা, পাঁচটা সবুজ বাঁধাকপি, পাঁচ বা দশ কেজি আপেল অবলীলায় কিনে নিয়ে যেতেন, তাঁরা এ সময় চাইলেই সেভাবে বাজার করতে পারতেন না। সেই আর্থিক সংগতি তাঁদের তখন আর নেই। ২ কেজি আলু কিংবা ২ কেজি আপেল কিনতে পারলেই তাঁরা নিজেদের ধন্য মনে করতেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ছিল সে রকম একটি দোকান। ভাষাবিজ্ঞানের একটা ক্লাসের পর ৪০ মিনিটের বিরতি ছিল। সে কারণে বাইরে এসেছিলাম খোলা হাওয়ায় দাঁড়াব বলে। এ সময় দেখলাম একটা কিউ দ্রুত বেড়ে চলেছে। বলে রাখি, সেটা এমন এক সময়, যখন হঠাৎ করে কোনো কিউ বাড়তে থাকলে মানুষ জিজ্ঞেস না করেই সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ত। সামনের কাউকে জিজ্ঞেস করলেও হয়তো-বা সত্যিকার তথ্যটি পাওয়া যেত না। কারণ, প্রত্যেকেই দাঁড়িয়ে গেছে কিছু একটা পাওয়া যাবে বলে। সরকারি দোকানে কিছু একটা এলেই কেবল সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের অনেকের রান্নাঘরে হাঁড়ি চড়ত।
তখন একটু একটু করে কালোবাজারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খোলা কোনো মাঠ পেলেই তারা বসে যাচ্ছে তাদের পণ্য নিয়ে। কিন্তু দাম পাঁচ গুণ-দশ গুণ বেশি। যাদের হাতে কাঁচা টাকা আছে, তারা সরকারি দোকানে না গিয়ে এসব কালোবাজারিদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেত। মূলত গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য তখনো সরকারি দোকান ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন।
পরের ক্লাসটা খুব জরুরি ছিল না। তাই কিউতে দাঁড়িয়ে পকেটের টাকাপয়সার হিসাব মিলিয়ে ফেললাম। দেখলাম কিছু কেনার মতো সামর্থ্য আমার আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের অনেকেই ততক্ষণে লাইনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদের মতো তারাও জানে না, কী কেনার জন্য এই কিউ।
কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে চাউর হয়ে যায়, দোকানে এসেছে সবুজ আপেল। এবং সে কথা জানার পর একটা ঘটনা ঘটে, যা এযাবৎকাল কোনো দিন কোথাও দেখিনি।
সোভিয়েত ইউনিয়নে বড়দের সম্মান করা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। বাসে-ট্রামে বয়স্কদের দেখলে কিংবা সন্তানসম্ভবা নারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে তখনই আসন ছেড়ে দেয় যাত্রীরা। অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যদি বাস বা মেট্রো রেলে ওঠেন, কিংবা যদি পরিবহনে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো সৈনিককে, তবে সবাই তাঁদের সামনে এগিয়ে দেয়। আসন ছেড়ে দেয়।
লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, দেখা গেল, দোকানের দিক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দুজন নারী-পুরুষ এগিয়ে আসছেন। মাঝে মাঝেই তাঁরা লাইনে দাঁড়ানো কারও কারও সঙ্গে কথা বলছেন এবং তারপর পেছনে আমাদের দিকে হাঁটছেন। কৌতূহল হলো। তাঁরা কি কিছু বলতে চাইছেন? সেটা অবশ্য জানা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই।
আমাদের চার-পাঁচজন আগেই যে রুশ তরুণেরা দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বুড়ি বললেন, ‘বুড়োর হার্টে অসুখ! ডাক্তার বলেছে সবুজ আপেল খেতে! কেউ কি একটু কিউতে দাঁড়াতে দেবে, তাহলে ২ কেজি আপেল কেনা যেত।’
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে এক তরুণ বলল, ‘দেখলে তো দাদিমা, যুদ্ধ করে কেমন দেশের জন্ম দিয়েছ তোমরা!’
বুড়োবুড়ির চোখ-মুখ মলিন হয়ে গেল।
বুড়ো বললেন, ‘দেশটা তো মুক্ত করে তোমাদের হাতেই দিয়েছিলাম! তোমরা দেশটাকে কী বানালে?’
একই রকম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আরেক তরুণ বলল, ‘যা করে তা তো তোমাদের কমিউনিস্ট পার্টি করেছে! আমাদের দোষ দিচ্ছ কেন? জার্মানিতে মানুষেরা এখন কত ভালো আছে। আর আমাদের অবস্থা?’
বুড়োবুড়ি বুঝলেন, যুদ্ধ নিয়ে কথা বলা মানে বৃথা বাক্যব্যয়! তাই অনুনয় করলেন, ‘বুড়োর হার্টে অসুখ! তোমরা কেউ কি একটু কিউতে দাঁড়াতে দেবে? পেছনে গেলে দোকানে হয়তো আর আপেল থাকবে না!’
এক তরুণ বলল, ‘কালোবাজারে বহু আপেল পাওয়া যায়। লাইনে না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে কিনে খাও।’
এমন নয় যে ওরা জানত না, এই বুড়োবুড়ির পক্ষে বাজার থেকে উচ্চমূল্যে আপেল কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু বুড়োবুড়ির প্রতি কোনো ধরনের সম্মান বা করুণা ওরা দেখাল না। সরকারি দোকানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের লাইনে দাঁড়ানোর কোনো নিয়ম নেই। বিনা কিউতে তাঁরা খাদ্য-পণ্য নিতে পারবেন, সে কথা লেখা আছে দোকানে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁদের লাইন ছেড়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছেই কারও মধ্যে দেখা গেল না।
আমি বুড়োবুড়িকে যখন আমার জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি, তখন পেছন থেকে মধ্যবয়সী এক রুশ নাগরিক বলে উঠলেন, ‘এদের যদি জায়গা ছেড়ে দাও, তাহলে কিন্তু তোমাকে দাঁড়াতে হবে লাইনের শেষ মাথায় গিয়ে! সেটা কি বুঝতে পারছ?’
ওই লোকের কথার কোনো জবাব আমি দিইনি সেদিন। জায়গা ছেড়ে দেওয়ায় বুড়োবুড়ির চোখে কৃতজ্ঞতার যে প্রকাশ আমি দেখেছিলাম, তা আজও ভুলতে পারিনি। যখন ফিরে আসব, তখন বুড়ি আবার বলছিলেন, ‘জানো ছেলে, বুড়োর হার্টে অসুখ। ডাক্তার বলেছে সবুজ আপেল খেতে। বুড়ো না বাঁচলে আমি আর বেঁচে থেকে কী করব?’
জানি না সেই সবুজ আপেল খেয়ে বুড়ো আর কত দিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এখনো তাঁদের দুজনের সেই মমতায়-ঘেরা চাহনি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মনে হয়, কোথায় যেন একটা ভুল হয়ে গেছে, যা শুধরে নেওয়ার মতো কেউ নেই।

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

সে সময় হঠাৎ করেই সরকারি দোকানগুলোয় কমতে শুরু করল পণ্য। দোকানের বিভিন্ন শেলফ হয়ে গেল শূন্য। যেহেতু তখনো সরকারি দোকানে সরকারি দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, সেহেতু পেনশনে চলে যারা কিংবা যাদের আয় একেবারেই জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে না, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকত সরকারি দোকা
০৯ আগস্ট ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

সে সময় হঠাৎ করেই সরকারি দোকানগুলোয় কমতে শুরু করল পণ্য। দোকানের বিভিন্ন শেলফ হয়ে গেল শূন্য। যেহেতু তখনো সরকারি দোকানে সরকারি দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, সেহেতু পেনশনে চলে যারা কিংবা যাদের আয় একেবারেই জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে না, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকত সরকারি দোকা
০৯ আগস্ট ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সে সময় হঠাৎ করেই সরকারি দোকানগুলোয় কমতে শুরু করল পণ্য। দোকানের বিভিন্ন শেলফ হয়ে গেল শূন্য। যেহেতু তখনো সরকারি দোকানে সরকারি দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, সেহেতু পেনশনে চলে যারা কিংবা যাদের আয় একেবারেই জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে না, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকত সরকারি দোকা
০৯ আগস্ট ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

সে সময় হঠাৎ করেই সরকারি দোকানগুলোয় কমতে শুরু করল পণ্য। দোকানের বিভিন্ন শেলফ হয়ে গেল শূন্য। যেহেতু তখনো সরকারি দোকানে সরকারি দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, সেহেতু পেনশনে চলে যারা কিংবা যাদের আয় একেবারেই জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে না, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকত সরকারি দোকা
০৯ আগস্ট ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে