জাহীদ রেজা নূর

শংকরদা এসেছেন মস্কো থেকে, উঠেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেটা আমাদের ক্রাসনাদার শহর থেকে ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে। হলুদ রঙের বাসে করে যেতে হয় সেখানে।
আমরা তখন প্রিপারেটরি ফ্যাকাল্টিতে রুশ ভাষা রপ্ত করছি। অর্থাৎ, সেটা ১৯৮৬ সালের শেষভাগ অথবা ১৯৮৭ সালের শুরু। মস্কোর তিমিরইয়াজিভ কৃষি ইনস্টিটিউটে যারা পড়াশোনা করেন, তাঁরা তাঁদের ব্যবহারিক কাজের একটা অংশ আমাদের শহরে এসে করেন। শংকরদাও একই কাজে সেখান থেকে এসেছেন। আগেও এসেছেন। সে সুবাদে আমাদের কুবান কৃষি ইনস্টিটিউটের বড় ভাইদের সঙ্গে পিএইচডির ছাত্র শংকরদার জানাশোনা। তিনিই ছুটির দিনে আমাদের নিয়ে যেতে বলেছেন তাঁর হোস্টেলে। দুপুরে রান্না করে খাওয়াবেন। সম্ভবত পঞ্চম বর্ষের মাসুদ ভাই, চতুর্থ বর্ষের শ্যামলদা আর তৃতীয় বর্ষের জয়নাল ভাই আর প্রথম বর্ষের দেবাশীষদার সঙ্গে প্রিপারেটরির আমি আর রিপন গিয়েছিলাম শংকরদার ওখানে।
ক্রাসনাদার শহরে ধান হয় প্রচুর। অনেকটা ট্রপিক্যাল ও সাব ট্রপিক্যাল আবহাওয়া। মাছও পাওয়া যায় নদীতে। মিষ্টি পানির তাজা মাছ সোভিয়েত ইউনিয়নের সবখানে পাওয়া যেত না। আমরা তাই ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র মতো টিকে থাকতে পারছিলাম বিদেশ-বিভুঁইয়ে।
ক্রাসনাদার কৃষি ইনস্টিটিউটের (এখন তা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে) সামনের বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল এগারোটার দিকে বাসে উঠেছিলাম আমরা। সকালে নাশতা করেছি। শংকরদার ওখানে গিয়ে দুপুরে ভাত খাব। এখানে বলে রাখি, আমরা যখন পড়াশোনা করতাম, তখন দাওয়াত মানে বিশাল খাদ্যভান্ডার নয়। মাছ অথবা মাংস, সঙ্গে একটা সবজি কিংবা ডাল—তাতেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা। যে স্টাইপেন্ড পেতাম, সেটা দিয়ে চলতে হতো, বাড়তি আয়ের উপায় ছিল না। তাই বুঝেশুনে চলতাম।
বাসটা যখন চলা শুরু করল, তখন পঞ্চম প্রসূতি হাসপাতাল পার হওয়ার পর থেকেই দুধারে দেখতে পেলাম বিস্তৃত ফসলের খেত। ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়েছে সে মাঠগুলো। একটু দূরেই কুবান নদী। এই নদীটি আমাদের কত যে আপন ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না; সেটা এখন শুধুই স্মৃতি। বাস যখন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি আমাদের নামিয়ে দিল, তখন সামনের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে মাসুদ ভাই অথবা জয়নাল ভাই বললেন, ‘স্মাৎরি, এতা দিন।’
মানে, ‘দ্যাখো, এগুলো বাঙ্গি!’
ছোট ছোট রসালো বাঙ্গি ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত খেতে। মাসুদ ভাই বললেন, ‘যদি কেউ খেতে চাও, খেতে পারো।’
তখনই বাঙালির দল নেমে পড়ল খেতে। বাঙ্গিগুলো আকারে ছোট। ফাটিয়ে খাওয়া শুরু হলো। আর তখনই বোঝা গেল, এ এক অবিশ্বাস্য রসালো বাঙ্গি! বাংলাদেশে এ ধরনের মিষ্টি আর রসালো বাঙ্গি কখনো দেখিনি। ফলে যা হলো, সেই রসালো বাঙ্গিতে তৃষ্ণা নিবারণ হতে লাগল। যে চাষিরা এই জমি চাষ করেছেন, ফসল ফলিয়েছেন, তাঁরাও বাঙালিদের এই কাণ্ড-কারখানা দেখে হাসছিলেন মিটিমিটি। বলছিলেন, ‘কুশাইতে, রিবইয়াতা! (খাও, খাও, ছেলেরা)।’
তখনো বিদেশিদের খুব ভালোবাসত গ্রামের মানুষেরা। শহুরে সোভিয়েত নাগরিকদের সঙ্গে শহরের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য ছিল। যারা বিদেশিদের প্রতিদিন দেখত, তারা একভাবে জানত বিদেশিদের। তাদের চোখে এই বিদেশিদের ভালো-মন্দ ছিল বইয়ের খোলা পাতার মতো। অন্যদিকে যারা কালেভদ্রে বিদেশিদের সংস্পর্শে আসত, তাদের কাছে বিদেশিরা ছিল বিস্ময়! সে ব্যাপারে পরে একসময় লেখা যাবে।
সরাসরি ফসলের মাঠ থেকে এভাবে বাঙ্গি তুলে খাওয়ার অভিজ্ঞতা এর আগে ছিল না। এটাই ছিল প্রথমবারের মতো। তাই সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
সে যুগে মোবাইল ফোন আসেনি। যোগাযোগ হতো ল্যান্ডফোনে। চিঠিপত্রেরও কদর ছিল। আমরা যে এসে পৌঁছেছি, সেটা তখনো শংকরদা জানেন না। জানবেন কী করে? পাগল হয়ে বাঙ্গি-ভক্ষণরত শিক্ষার্থীরা তো পিকনিকের আনন্দ পেয়ে গেছে ততক্ষণে!
রোদটা প্রখর ছিল, নাকি মেঘ এসে ছায়া দিচ্ছিল মাথার ওপরে, সে কথা এখন আর মনে নেই। তবে মনে আছে, মাসুদ ভাই, শ্যামল দাসহ অন্যদের সঙ্গে আমরা কৃষিক্ষেত্রগুলো দেখছিলাম। কোন জমিতে কোন ধরনের ধান নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, সেটা তাঁরা জেনে নিচ্ছিলেন। এভাবেই কেটে গেল আরও ঘণ্টা-দুই। আর তখনই কেবল মনে পড়ল পেটে দানাপানি পড়েনি অনেকক্ষণ। তখনই কেবল মনে পড়ল, আমরা তো শংকরদার ঘরে আজ খাব।
এবার হোস্টেলে শংকরদার রুম খোঁজা শুরু হলো। খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। আমরা পৌঁছে গেলাম তাঁর ঘরে। তিনি খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘চা খাও, আমি সেই ফাঁকে ভাতটা চড়িয়ে আসি।’
এখন ভাত চড়াবেন! তার মানে তিনি কোনো প্রস্তুতি নেননি! আমাদের পেটে যে ছুঁচোর ডনবৈঠক শুরু হয়ে গেছে, সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না! একটু হতাশ হলাম। মনে হলো, ডিম ভাজি আর ডাল দিয়েই আজ আমাদের দুপুরের খাবার খেতে হবে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বোঝা গেল, শংকরদার প্রস্তুতি ছিল। তিনি আগেই রান্না করে রেখেছেন। কজন আসবে, তা জেনে ভাত চড়াতে গেছেন।
খাবারের তালিকায় ছিল বেগুন দিয়ে চিংড়ি, ডাল আর মাংস।
‘কিসের মাংস এটা শংকর দা? মুরগি?’
‘না, খরগোশ। খুব টেস্টি। খেয়েছ আগে?’
‘না। আমি তো খাইনি আগে!’ আমতা-আমতা করি।
‘খাবে তো? নাকি ডিম ভেজে দেব?’
ডিম ভাজা! খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, ডিম ভাজা খাব! মাংসের হাঁড়ির দিকে তাকাই। বড় বড় মাংসের টুকরো, কষানো। তবে তার সঙ্গে গোল গোল আলু ভেজে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। লোভনীয় খাবার।
কোনো রকম দ্বিধা না করে খরগোশের মাংস তুলে নিলাম প্লেটে। এবং তারপর মাংস ছিঁড়ে মুখে দিতেই মনে হলো—অমৃত! এত স্বাদের তরকারি বহুদিন খাইনি। সেদিন খরগোশের মাংসটা খুবই সুস্বাদু হয়েছিল, আজও মনে হয়, সেই তৃপ্তির অনুভূতিটা পাই।
সেদিন জেনেছিলাম, খরগোশ দু রকম হয়। একরকম খরগোশের পা থাকে বাইরের দিকে, সেগুলো খাওয়া যায়। আরেক ধরনের খরগোশের পা থাকে ভেতরের দিকে গুটানো, সেগুলো খাওয়া যায় না। সেগুলো বাড়িতে পোষ মানায় অনেকে। উল্টো বললাম নাকি, সে সন্দেহ অবশ্য আছে আমার। হতে পারে গুটানো পায়ের খরগোশই খেতে হয়।
শংকরদার রান্নার হাত ভালো নাকি খরগোশের মাংসটাই সুস্বাদু—এই প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরতে থাকে। আবার এ-ও মনে হয়, আমাদের পেটে এত খিদে ছিল বলে মাংসটাকে অমৃত বলে মনে হয়েছে!
সে যাই হোক, সেই খরগোশের মাংস যে শুধু উদরপূর্তির জন্য খাইনি, বরং তা খাওয়ার সময় মনও হয়েছিল অংশীদার—সেটা মেনে নিলেই কেবল বোঝা যাবে, কেন এত দিন পরও সেই সুখস্মৃতিটা মনের কোনে লুকিয়ে আছে।

শংকরদা এসেছেন মস্কো থেকে, উঠেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেটা আমাদের ক্রাসনাদার শহর থেকে ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে। হলুদ রঙের বাসে করে যেতে হয় সেখানে।
আমরা তখন প্রিপারেটরি ফ্যাকাল্টিতে রুশ ভাষা রপ্ত করছি। অর্থাৎ, সেটা ১৯৮৬ সালের শেষভাগ অথবা ১৯৮৭ সালের শুরু। মস্কোর তিমিরইয়াজিভ কৃষি ইনস্টিটিউটে যারা পড়াশোনা করেন, তাঁরা তাঁদের ব্যবহারিক কাজের একটা অংশ আমাদের শহরে এসে করেন। শংকরদাও একই কাজে সেখান থেকে এসেছেন। আগেও এসেছেন। সে সুবাদে আমাদের কুবান কৃষি ইনস্টিটিউটের বড় ভাইদের সঙ্গে পিএইচডির ছাত্র শংকরদার জানাশোনা। তিনিই ছুটির দিনে আমাদের নিয়ে যেতে বলেছেন তাঁর হোস্টেলে। দুপুরে রান্না করে খাওয়াবেন। সম্ভবত পঞ্চম বর্ষের মাসুদ ভাই, চতুর্থ বর্ষের শ্যামলদা আর তৃতীয় বর্ষের জয়নাল ভাই আর প্রথম বর্ষের দেবাশীষদার সঙ্গে প্রিপারেটরির আমি আর রিপন গিয়েছিলাম শংকরদার ওখানে।
ক্রাসনাদার শহরে ধান হয় প্রচুর। অনেকটা ট্রপিক্যাল ও সাব ট্রপিক্যাল আবহাওয়া। মাছও পাওয়া যায় নদীতে। মিষ্টি পানির তাজা মাছ সোভিয়েত ইউনিয়নের সবখানে পাওয়া যেত না। আমরা তাই ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র মতো টিকে থাকতে পারছিলাম বিদেশ-বিভুঁইয়ে।
ক্রাসনাদার কৃষি ইনস্টিটিউটের (এখন তা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে) সামনের বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল এগারোটার দিকে বাসে উঠেছিলাম আমরা। সকালে নাশতা করেছি। শংকরদার ওখানে গিয়ে দুপুরে ভাত খাব। এখানে বলে রাখি, আমরা যখন পড়াশোনা করতাম, তখন দাওয়াত মানে বিশাল খাদ্যভান্ডার নয়। মাছ অথবা মাংস, সঙ্গে একটা সবজি কিংবা ডাল—তাতেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা। যে স্টাইপেন্ড পেতাম, সেটা দিয়ে চলতে হতো, বাড়তি আয়ের উপায় ছিল না। তাই বুঝেশুনে চলতাম।
বাসটা যখন চলা শুরু করল, তখন পঞ্চম প্রসূতি হাসপাতাল পার হওয়ার পর থেকেই দুধারে দেখতে পেলাম বিস্তৃত ফসলের খেত। ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়েছে সে মাঠগুলো। একটু দূরেই কুবান নদী। এই নদীটি আমাদের কত যে আপন ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না; সেটা এখন শুধুই স্মৃতি। বাস যখন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি আমাদের নামিয়ে দিল, তখন সামনের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে মাসুদ ভাই অথবা জয়নাল ভাই বললেন, ‘স্মাৎরি, এতা দিন।’
মানে, ‘দ্যাখো, এগুলো বাঙ্গি!’
ছোট ছোট রসালো বাঙ্গি ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত খেতে। মাসুদ ভাই বললেন, ‘যদি কেউ খেতে চাও, খেতে পারো।’
তখনই বাঙালির দল নেমে পড়ল খেতে। বাঙ্গিগুলো আকারে ছোট। ফাটিয়ে খাওয়া শুরু হলো। আর তখনই বোঝা গেল, এ এক অবিশ্বাস্য রসালো বাঙ্গি! বাংলাদেশে এ ধরনের মিষ্টি আর রসালো বাঙ্গি কখনো দেখিনি। ফলে যা হলো, সেই রসালো বাঙ্গিতে তৃষ্ণা নিবারণ হতে লাগল। যে চাষিরা এই জমি চাষ করেছেন, ফসল ফলিয়েছেন, তাঁরাও বাঙালিদের এই কাণ্ড-কারখানা দেখে হাসছিলেন মিটিমিটি। বলছিলেন, ‘কুশাইতে, রিবইয়াতা! (খাও, খাও, ছেলেরা)।’
তখনো বিদেশিদের খুব ভালোবাসত গ্রামের মানুষেরা। শহুরে সোভিয়েত নাগরিকদের সঙ্গে শহরের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য ছিল। যারা বিদেশিদের প্রতিদিন দেখত, তারা একভাবে জানত বিদেশিদের। তাদের চোখে এই বিদেশিদের ভালো-মন্দ ছিল বইয়ের খোলা পাতার মতো। অন্যদিকে যারা কালেভদ্রে বিদেশিদের সংস্পর্শে আসত, তাদের কাছে বিদেশিরা ছিল বিস্ময়! সে ব্যাপারে পরে একসময় লেখা যাবে।
সরাসরি ফসলের মাঠ থেকে এভাবে বাঙ্গি তুলে খাওয়ার অভিজ্ঞতা এর আগে ছিল না। এটাই ছিল প্রথমবারের মতো। তাই সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
সে যুগে মোবাইল ফোন আসেনি। যোগাযোগ হতো ল্যান্ডফোনে। চিঠিপত্রেরও কদর ছিল। আমরা যে এসে পৌঁছেছি, সেটা তখনো শংকরদা জানেন না। জানবেন কী করে? পাগল হয়ে বাঙ্গি-ভক্ষণরত শিক্ষার্থীরা তো পিকনিকের আনন্দ পেয়ে গেছে ততক্ষণে!
রোদটা প্রখর ছিল, নাকি মেঘ এসে ছায়া দিচ্ছিল মাথার ওপরে, সে কথা এখন আর মনে নেই। তবে মনে আছে, মাসুদ ভাই, শ্যামল দাসহ অন্যদের সঙ্গে আমরা কৃষিক্ষেত্রগুলো দেখছিলাম। কোন জমিতে কোন ধরনের ধান নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, সেটা তাঁরা জেনে নিচ্ছিলেন। এভাবেই কেটে গেল আরও ঘণ্টা-দুই। আর তখনই কেবল মনে পড়ল পেটে দানাপানি পড়েনি অনেকক্ষণ। তখনই কেবল মনে পড়ল, আমরা তো শংকরদার ঘরে আজ খাব।
এবার হোস্টেলে শংকরদার রুম খোঁজা শুরু হলো। খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। আমরা পৌঁছে গেলাম তাঁর ঘরে। তিনি খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘চা খাও, আমি সেই ফাঁকে ভাতটা চড়িয়ে আসি।’
এখন ভাত চড়াবেন! তার মানে তিনি কোনো প্রস্তুতি নেননি! আমাদের পেটে যে ছুঁচোর ডনবৈঠক শুরু হয়ে গেছে, সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না! একটু হতাশ হলাম। মনে হলো, ডিম ভাজি আর ডাল দিয়েই আজ আমাদের দুপুরের খাবার খেতে হবে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বোঝা গেল, শংকরদার প্রস্তুতি ছিল। তিনি আগেই রান্না করে রেখেছেন। কজন আসবে, তা জেনে ভাত চড়াতে গেছেন।
খাবারের তালিকায় ছিল বেগুন দিয়ে চিংড়ি, ডাল আর মাংস।
‘কিসের মাংস এটা শংকর দা? মুরগি?’
‘না, খরগোশ। খুব টেস্টি। খেয়েছ আগে?’
‘না। আমি তো খাইনি আগে!’ আমতা-আমতা করি।
‘খাবে তো? নাকি ডিম ভেজে দেব?’
ডিম ভাজা! খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, ডিম ভাজা খাব! মাংসের হাঁড়ির দিকে তাকাই। বড় বড় মাংসের টুকরো, কষানো। তবে তার সঙ্গে গোল গোল আলু ভেজে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। লোভনীয় খাবার।
কোনো রকম দ্বিধা না করে খরগোশের মাংস তুলে নিলাম প্লেটে। এবং তারপর মাংস ছিঁড়ে মুখে দিতেই মনে হলো—অমৃত! এত স্বাদের তরকারি বহুদিন খাইনি। সেদিন খরগোশের মাংসটা খুবই সুস্বাদু হয়েছিল, আজও মনে হয়, সেই তৃপ্তির অনুভূতিটা পাই।
সেদিন জেনেছিলাম, খরগোশ দু রকম হয়। একরকম খরগোশের পা থাকে বাইরের দিকে, সেগুলো খাওয়া যায়। আরেক ধরনের খরগোশের পা থাকে ভেতরের দিকে গুটানো, সেগুলো খাওয়া যায় না। সেগুলো বাড়িতে পোষ মানায় অনেকে। উল্টো বললাম নাকি, সে সন্দেহ অবশ্য আছে আমার। হতে পারে গুটানো পায়ের খরগোশই খেতে হয়।
শংকরদার রান্নার হাত ভালো নাকি খরগোশের মাংসটাই সুস্বাদু—এই প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরতে থাকে। আবার এ-ও মনে হয়, আমাদের পেটে এত খিদে ছিল বলে মাংসটাকে অমৃত বলে মনে হয়েছে!
সে যাই হোক, সেই খরগোশের মাংস যে শুধু উদরপূর্তির জন্য খাইনি, বরং তা খাওয়ার সময় মনও হয়েছিল অংশীদার—সেটা মেনে নিলেই কেবল বোঝা যাবে, কেন এত দিন পরও সেই সুখস্মৃতিটা মনের কোনে লুকিয়ে আছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

শংকরদা এসেছেন মস্কো থেকে, উঠেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেটা আমাদের ক্রাসনাদার শহর থেকে ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে। হলুদ রঙের বাসে করে যেতে হয় সেখানে।
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

শংকরদা এসেছেন মস্কো থেকে, উঠেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেটা আমাদের ক্রাসনাদার শহর থেকে ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে। হলুদ রঙের বাসে করে যেতে হয় সেখানে।
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

শংকরদা এসেছেন মস্কো থেকে, উঠেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেটা আমাদের ক্রাসনাদার শহর থেকে ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে। হলুদ রঙের বাসে করে যেতে হয় সেখানে।
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

শংকরদা এসেছেন মস্কো থেকে, উঠেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেটা আমাদের ক্রাসনাদার শহর থেকে ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে। হলুদ রঙের বাসে করে যেতে হয় সেখানে।
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগে