Ajker Patrika

সিঙ্গাপুরে হাইকমিশনার তৌহিদুলের বিলাসী চিকিৎসা, ব্যয় ৫ কোটি

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৩: ৫১
সিঙ্গাপুরে হাইকমিশনার তৌহিদুলের বিলাসী চিকিৎসা, ব্যয় ৫ কোটি

কূটনীতিক হিসেবে চাকরিজীবনে নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বারবার আলোচনায় এসেছেন তিনি। কখনো নারীঘটিত বিষয়, আবার কখনো ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় তিন-তিনবার রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব থেকে প্রত্যাখ্যাতও হয়েছেন। কিন্তু এবার আলোচনায় এসেছেন ভিন্ন একটি ঘটনা নিয়ে। হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কমপক্ষে ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা চিকিৎসার খরচ হিসাবে দেখিয়েছেন। আলোচিত এই কূটনীতিকের নাম মো. তৌহিদুল ইসলাম। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার পদে দায়িত্বরত আছেন তিনি।

বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডার ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা এক যুগ ধরে যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় কোনো ধরনের জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে।

তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ উঠেছে অস্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যয় দেখানো নিয়ে। সরকারি খাত থেকে টাকা নিয়ে নিজের চশমা মেরামত, দাঁতের চিকিৎসা, স্ত্রীর রূপচর্চা, স্পা খরচসহ নানাভাবে খরচ দেখিয়েছেন তিনি। অথচ ‘ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রাকশন ফর দ্য গাইডেন্স অব বাংলাদেশ মিশন অ্যাব্রোড’ ১১ অনুচ্ছেদে-২ (iv) এবং মেডিকেল অ্যাটেনডেন্স রুলস ১৯৫৮-এর ২ (i) অনুযায়ী, এসব খাতে টাকা খরচের সুযোগ নেই।

জানা যায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দেন মো. তৌহিদুল ইসলাম। এর পর থেকে তিনি সর্বমোট ৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৪ হাজার ৩০০ টাকা চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে দেখিয়েছেন। সম্প্রতি সরকারি একটি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের এ কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরে দায়িত্ব পালনকালে প্রতিবছর গড়ে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮১ হাজার ৭৫ টাকা চিকিৎসাবাবদ ব্যয় করেছেন। তাঁর চিকিৎসাবাবদ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৩৩ হাজার ২০০ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ কোটি ৯ লাখ ৯ হাজার ৮০০ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯০ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে বড় অঙ্কের খরচ দেখানো হয়েছে হাইকমিশনারের চোখের চিকিৎসা, চশমা পরিবর্তনের নামে। পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রেডিয়াম গ্রুপ থেকে স্পার নামেও মোটা অঙ্কের টাকা সরকারি কোষাগার থেকে খরচ দেখানো হয়েছে। চিকিৎসার জন্য খরচে যে বিল-ভাউচার সংযুক্ত করেছেন, তা কম্পিউটার থেকে তৈরি করে প্রিন্ট করা বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে হাইকমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব টাকা খরচ করা হয়েছে, তা ভিআইপিদের জন্য। আমি কোনো টাকা খরচ করিনি। আর আগে যেসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছিল, তা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তৌহিদুল ইসলামকে নিয়ে সব সময় কিছুটা অস্বস্তিতে ছিল সরকার। এ কর্মকর্তাকে অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডসে পদায়ন করা হলে দেশ দুটি তাঁকে গ্রহণ করেনি। এরপর তাঁকে জেনেভায় রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব দেওয়া হলে তৎকালীন সরকারপ্রধান পরপর তিনবার তা নাকচ করে দেন। তারপরও এই কূটনীতিককে আগলে রাখেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেটে সুরমা নদীর চর খননকাজের উদ্বোধন শেষে তৌহিদুল ইসলামকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘কূটনীতিক হিসেবে তৌহিদুল ভেরি গুড অফিসার ও তুখোড় ছেলে। অযথা একটি দল তৌহিদুলের বিপক্ষে লেগেছে। তবে যত দিন মন্ত্রী আছি, তত দিন তৌহিদুলকে ডিফেন্ড করে যাব।’

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা তৌহিদুল বর্তমানেও এলাকাপ্রীতি কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান বেশ শক্ত করেছেন বলে জানা গেছে। সিঙ্গাপুরে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে চাকরিতে আছেন কাউন্সেলর তৌফিকুর রহমান, হেড অব চ্যান্সেরি ও কাউন্সিলর পাসপোর্ট ওয়াসিমুল বারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (অ্যাকাউন্টস) ফিরোজ আহমদ এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। তাঁদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একজন পাসপোর্ট অফিসারকে দিয়ে ‘মাই পাসপোর্ট চ্যানেল’ নামে একটি ভিডিও চ্যানেলে কনটেন্ট আপলোড করিয়ে অর্থ আয় করেন, যা সরকারি কোষাগারে জমা হয় না।

এর আগে ২০১৩ সালে ইতালির মিলানে কনস্যুলার জেনারেল হিসেবে কর্মরত থাকাকালে মো. তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে এবার ১ কোটি টাকা প্রতারণার মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সালমান এফ রহমান। ফাইল ছবি
সালমান এফ রহমান। ফাইল ছবি

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তাঁর ভাই এ এস এফ রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এবার ১ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা প্রতারণার মামলা করা হয়েছে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে আজ রোববার মামলাটি করেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন মো. মাহবুব আলম।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ খান মজলিশ, তাঁর ভাই ইমরান খান মজলিশ, গুলজার হোসাইন ও সৈয়দ সামিউল ওয়াদুদ ওরফে সামি ওয়াদুদ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সালমান এফ রহমানের কোম্পানি অ্যাভিয়েশন লিমিটেডে বাদী ও বিমানবাহিনীর সাবেক দুই ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ রাশেদুল আমীন ও জাহিদুর রহমান চাকরি নিয়েছিলেন পাইলট হিসেবে। শেখ হাসিনার উপদেষ্টা দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করতেন হেলিকপ্টারে করে। কোম্পানিতে থাকাকালে পাইলট তিনজন বেতন-ভাতা পেয়েছিলেন ঠিকই। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে কোম্পানি থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনজনের ১ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আসামিরা পরিশোধ না করায় প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।

ভুয়া কোম্পানি দেখিয়ে নিয়োগের মাধ্যমে ওই তিন পাইলটের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৩ আগস্ট সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৬
আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত
আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

দুদকের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রের প্রায় ২৪ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও উত্থাপন করা হয়েছে।

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উল্লিখিত অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশন একটি সমন্বিত তদন্ত টিম গঠন করেছে। পাশাপাশি সংস্থাটির একজন পরিচালককে তদারক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর। কমিশন আইনিপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান পরিচালনা করবে। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হলে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুধু বিধিবিধান দিয়ে অবৈধ আয় বন্ধ হবে না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ফাইল ছবি
শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ফাইল ছবি

রাজনৈতিক চাহিদা থাকলে এবং সদিচ্ছা না থাকলে কেবল বিধিবিধান দিয়ে অবৈধ আয় বা দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি মনে করেন, অবৈধ আয় কমাতে হলে দিনের শেষে তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করে। তা না হলে দুর্নীতির একটি উৎস বন্ধ করলে দ্রুতই আরেকটি উৎস চালু হয়ে যায়।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন।

এ বছরের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’। উদ্বোধনী অধিবেশনে গণতন্ত্র ও উন্নয়নবিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

তিনি তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ‘দেশে যদি একটি অশুভ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, তাহলে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার দিয়ে তার সমাধান হবে না।’ তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ভারতে ঘুষ নেওয়া ও দেওয়া দুটোই অপরাধ হলেও আমাদের দেশে শুধু ঘুষ নেওয়াকে অপরাধ বলে মনে করা হয়, দেওয়াটাকে নয়।’

উন্নয়ন সম্পর্কে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু গণতান্ত্রিক দেশেই নয়, চীন–ভিয়েতনামের মতো দেশেও হয়েছে। কেননা, এসব দেশে জবাবদিহির একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘উদারনীতিকরণের সফলতা মূল্যবোধ ও আস্থার ওপর নির্ভর করে।’

জবাবদিহির সঙ্গে দায়িত্ববোধের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বর্তমান সময়ের একটি প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘এখনকার প্রাথমিক শিক্ষকেরা ছাত্রদের পরীক্ষা বন্ধ করে ও তাদের জিম্মি করে আন্দোলন করছেন। অথচ আমাদের সময় শিক্ষকেরা বাসায় এসে খোঁজখবর নিতেন। এটাই হলো দায়িত্ববোধ।’

সামাজিক আচরণবিধি, মূল্যবোধ ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামাজিক মূল্যবোধ তৈরি করা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত।’

আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দেশের প্রশাসনিক বাস্তবতার একটি চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আগের অনেক প্রকল্প পরিচালক চলে গেছেন; কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই নতুন প্রকল্প পরিচালক পাওয়া যাচ্ছে না।’

বর্তমান মেয়াদের আগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সে সময় (আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার) কোনো কাজ করতে বললেই তা হয়ে যেত। সচিব ছিলেন আকবর আলি খান ও সা’দত হুসাইন। কিন্তু এখন বললেই কাজ হয় না; কোথায় সমস্যা আছে, তা নিজেকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ও বুঝতে হয়।’

সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এম এনামুল হক। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দুই দিনের গবেষণা সম্মেলনে প্রায় অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে যুব বেকারত্ব, দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য খাতে নানা সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসবে।’

উদ্বোধনী অধিবেশনের পর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরও একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে চারটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মন্ডল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা চলতি সপ্তাহেই: ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১৫
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা চলতি সপ্তাহেই: ইসি
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চলতি সপ্তাহের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট নিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ইসি।

আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে দশম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ ও গণভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। আর শেষ হবে বিকেল সাড়ে ৪টায়। আগের চেয়ে এক ঘণ্টা বাড়বে। এ ছাড়া প্রতিটি বুথে একটি বাড়তি গোপন কক্ষ করা হবে। যেখানে কক্ষ বাড়ানো যাবে না, সেখানে বাইরে আলাদা গোপন কক্ষ করা হবে।’

তফসিল বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘খুব শিগগির, এই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট নিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল উপলক্ষে বিটিভির মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ রেকর্ড করা হবে। আমরা বিটিভিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ রেকর্ড করার জন্য কালকে চিঠি দেব।’

সানাউল্লাহ বলেন, ভোটের আগের রাতেই ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। আর তফসিল ঘোষণার তিন দিন পর পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য দেশের ভেতরের ভোটারদের নিবন্ধন চলবে।

‎আচরণবিধি প্রতিপালনে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে প্রতিটি উপজেলায় দুজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘এরপর ভোটের পাঁচ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানো হবে। তফসিল ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে পোস্টার সরাতে। না সরালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

‎আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, তফসিলের পর নতুন কোনো প্রকল্প অনুমোদন করতে পারবে না উপদেষ্টা পরিষদ। আইন যাদের পারমিট করবে, তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

‎নির্বাচনে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সরকারি, আধা সরকারি এবং সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নেওয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের এই মুহূর্তে ভোটের কাজে নিযুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

আজ দশম কমিশনের সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত