Ajker Patrika

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পদ এক মাস ধরে শূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পদ এক মাস ধরে শূন্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব পেয়েছেন। এরপর প্রায় এক মাস ধরে প্রধান অর্থনীতিবিদ ছাড়াই চলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রধান অর্থনীতিবিদের পদ ফাঁকা হওয়ার পর এ পদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো হাবিবুর রহমানই সামাল দিচ্ছেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

তিন বছরের বেশি সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ফয়সাল আহমেদ প্রধান অর্থনীতিবিদের পদ ছেড়ে দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমানকে প্রধান অর্থনীতিবিদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতর থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রথম প্রধান অর্থনীতিবিদ।

অফিশিয়াল নির্দেশনার মাধ্যমে ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হাবিবুর রহমানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করলে পদটি ফাঁকা হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, প্রধান অর্থনীতিবিদ নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সীমাবদ্ধতার মাঝেও সাফল্যের গল্প

সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মোংলা ইপিজেডে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। ছবি: আজকের পত্রিকা
১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মোংলা ইপিজেডে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। ছবি: আজকের পত্রিকা

গ্যাস-সংযোগ নেই, বিমানবন্দর নেই; রয়েছে নাব্যতাসংকট, নাগরিক সুবিধাও সীমিত—এত সব প্রতিকূলতার মধ্যেও গত এক দশকে ৪ গুণ রপ্তানি এবং প্রায় ১২ গুণ বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাফল্য দেখিয়েছে মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। এ সময় প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্প ও অর্থনীতিতে মোংলা ইপিজেড হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

বন্দরের পাশে গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চল

মোংলা ইপিজেড সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরের সুবিধা কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালে বন্দরের মাত্র ২৭০ মিটার দূরে ৩০২.৯৭ একর জমির ওপর ইপিজেডটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে প্রায় ২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ২৭৮টি শিল্প প্লট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৭৫টি প্লট এরই মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ৩৬টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৩টি বিদেশি মালিকানাধীন, দুটি যৌথ উদ্যোগ এবং ১১টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান। আরও ১১টি কারখানা চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে উল্লম্ফন

২০০১ সালে একটি কৃষি প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মাধ্যমে মোংলা ইপিজেডের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম বছরে যেখানে মাত্র ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছিল, বর্তমানে সেখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কাজ করছেন।

২০১৫ সাল পর্যন্ত মোংলা ইপিজেডে মোট বিনিয়োগ ছিল ২৬৫ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সেই বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ১০ বছরে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ। একই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা, যা এক দশক আগে ছিল ৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ।

বহুমুখী শিল্পে কর্মসংস্থান

বর্তমানে মোংলা ইপিজেডে তৈরি পোশাক, টাওয়েল, লাগেজ ও ট্রাভেল ব্যাগ, স্টিল টিউব, কার সিট হিটিং প্যাড, রাবার পণ্য, পরচুলা, পাটজাত পণ্য, পলি ব্যাগ এবং অ্যাগ্রো প্রসেসিং শিল্প গড়ে উঠেছে। এসব পণ্য ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন উপব্যবস্থাপক মাকরুজ্জামান বলেন, মোংলা ইপিজেড প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বন্দরের কার্যক্রম বাড়ানো। কাঁচামাল আমদানি এবং উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির ফলে মোংলা বন্দরের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

গ্যাস, বিমানবন্দর ও নিরাপত্তা সংকট

সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে বড় কিছু চ্যালেঞ্জ। গ্যাস-সংযোগ না থাকা, নাব্যতাসংকট, বিমানবন্দরের অভাব, সুন্দরবনের নিকটবর্তী অবস্থান এবং লবণাক্ত এলাকার কারণে শিল্প পরিচালনায় ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

ভারতীয় মালিকানাধীন ভিআইপি লাগেজ বিডি প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, মোংলায় বিমানবন্দর না থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়; পাশাপাশি ইপিজেড ও বন্দর এলাকায় আলাদা থানা না থাকায় নিরাপত্তাঝুঁকিও রয়েছে।

পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জিনলাইট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হৃদয় হোসাইন বলেন, গ্যাস ছাড়া শিল্প উৎপাদন দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই করা কঠিন। ২০০৭ সালে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়া আমরা মোংলা বন্দরের সুবিধাও পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। বন্দরে নাব্যতাসংকটের কারণে কনটেইনার জাহাজ আগমনের সংখ্যাও চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় অনেক কম। কনটেইনারপ্রতি খরচও বেশি।

সম্ভাবনার অপেক্ষায়

মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক কালাম মো. আবুল বাসার বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, আদমজী ও কর্ণফুলী ইপিজেডে বর্তমানে কোনো প্লট খালি না থাকায় সাম্প্রতিককালে মোংলায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। গ্যাস-সংযোগ, বন্দর উন্নয়ন, বিমানবন্দর এবং নিরাপত্তা অবকাঠামো উন্নত করা গেলে মোংলা ইপিজেড দেশের রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, আগে মোংলা এলাকার অর্থনীতি ছিল কৃষি ও চিংড়িনির্ভর। এখন শ্রমিকেরা টয়োটা গাড়ির হিটিং প্যাড, ভিআইপি লাগেজ ব্যাগ, টাওয়েল, ফ্যাশন উইগ, পাটজাত পণ্য, অ্যাগ্রো প্রসেসিং পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত আছেন। এসব পণ্য ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আগুনে পুড়ে যাওয়া নোট বদলে অপেক্ষা ৮ সপ্তাহ

  • ভিন্ন নোট জোড়ায় শাস্তি যাবজ্জীবন, জরিমানা কোটি টাকা।
  • ছেঁড়া টাকা বদলানো যাবে শাখাতেই।
  • বদলের ক্ষেত্রে নোটের ৯০ শতাংশের বেশি অংশ থাকতে হবে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আগুনে পুড়ে যাওয়া নোট বদলে অপেক্ষা ৮ সপ্তাহ

আগুনে পুড়ে যাওয়া টাকা এখন আর ব্যাংকের শাখায় বদলানো যাবে না। এমন নোট নিয়ে গ্রাহককে যেতে হবে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর টাকা ফেরত পেতে সময় লাগবে কমপক্ষে আট সপ্তাহ। অন্যদিকে ভিন্ন নোটের অংশ জোড়া লাগিয়ে বা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা নোট উপস্থাপন করলে শাস্তি হবে সর্বোচ্চ—যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা।

নতুন নোট বিনিময় নির্দেশনা ইস্যুতে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নতুন প্রবিধানে প্রচলিত নোটকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে—পুনঃপ্রচলনযোগ্য, অপ্রচলনযোগ্য, ছেঁড়া-ফাটা বা ক্ষতিগ্রস্ত, দাবিযোগ্য এবং আগুনে পোড়া নোট। এর মধ্যে ছেঁড়া-ফাটা, ক্ষতিগ্রস্ত ও অপ্রচলনযোগ্য নোট বিনিময় সেবা নিয়মিতভাবেই সব বাণিজ্যিক ব্যাংক শাখায় দিতে হবে। এসব নোটের জন্য গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকে যেতে হবে না। শর্ত পূরণ হলে শাখা থেকেই সম্পূর্ণ বিনিময়মূল্য পরিশোধ করা হবে। শর্ত অনুযায়ী, নোটের মোট আয়তনের ৯০ শতাংশের বেশি অংশ থাকতে হবে এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে শনাক্তযোগ্য হতে হবে। নোট দুই টুকরা হলে উভয় অংশ একই নোটের হতে হবে এবং সঠিকভাবে জোড়া লাগানো থাকতে হবে। তবে একাধিক নোটের অংশ জোড়া দিয়ে তৈরি ‘বিল্ট-আপ’ নোট বা কোনো জাল নোট উপস্থাপন করা যাবে না। এটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। জাল নোট প্রতিরোধ আইন, ২০২২ অনুযায়ী, এ অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

তবে আগুনে পোড়া নোটের ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা। কোনো ব্যাংক শাখা এই ধরনের নোট বদলাতে বা এর বিপরীতে টাকা দিতে পারবে না। গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকটস্থ অফিসের হেল্প ডেস্ক বা দাবি শাখায় আবেদন করতে হবে। যাচাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক নোটের মূল্য নির্ধারণ করবে এবং আবেদন জমা দেওয়ার সর্বোচ্চ আট সপ্তাহের মধ্যে অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত জানাবে। অনুমোদন মিললে টাকা জমা হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে।

দাবিযোগ্য নোটের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এসব নোটের জন্য শাখা পর্যায়ে সরাসরি টাকা দেওয়া যাবে না। নোট উপস্থাপনকারীকে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে এবং পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে। ব্যাংক শাখা আবেদন গ্রহণ করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু অফিসে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের পর অর্থ পরিশোধ করা হবে।

গত ৯ অক্টোবর জারি করা প্রজ্ঞাপনে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নোট প্রত্যর্পণ প্রবিধান, ২০২৫’ কার্যকর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আগের ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নোট রিফান্ড রেগুলেশন ২০১২’ বাতিল হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, নোট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং গ্রাহক ভোগান্তি কমানোই নতুন নির্দেশনার মূল লক্ষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমন্বয়হীনতা ও অবহেলায় থমকে প্রকল্পের কাজ

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
সমন্বয়হীনতা ও অবহেলায় থমকে প্রকল্পের কাজ

সরকারি কাজে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতা এবং দায়িত্বে অবহেলার যে উদাহরণ প্রায়ই দেখা যায়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প সেই সংকটকে আরও স্পষ্ট করেছে। দেশের পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্যে ৯৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ শীর্ষক দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাইতে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় সংশোধিত পর্যায়ে আরও দুই বছর বৃদ্ধির পরও সেই সময়সীমা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত আরও ৫ মাস অতিবাহিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। অথচ প্রকল্পের কাজের বড় অংশের বাস্তব অগ্রগতি সেই শূন্যতেই আটকে আছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পাঁচ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। অথচ প্রায় সাড়ে চার বছরেও বেজা তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমির সমস্যা এখনো মেটাতে পারেনি। আর জমি জটিলতা না কাটায় সেখানে এক ইঞ্চি কাজও এগোয়নি; বরং কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির। আর বাকি দুই অঞ্চলে ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ এগোলেও চারদিক ঘিরে সীমানাপ্রাচীর বা গেট নির্মাণের কাজ শুরুই হয়নি। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় সড়ক উন্নয়নকাজও পুরোপুরি অসম্পূর্ণ থাকায় সেখানে অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর সুযোগও তৈরি হয়নি। ফলে অগ্রগতির অংশেও প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছায়নি।

এই বাস্তবতায় আশানুরূপ অগ্রগতির প্রত্যাশায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় তৃতীয়বারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আইএমইডি সংশ্লিষ্ট পরিদর্শন দল। প্রস্তাবটি বর্তমানে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় অনুমোদন পেলে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের জুনে।

তবে এই বর্ধিত সময়ের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গভীর শঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য সাবেক প্রকল্প পরিচালক হুমায়ুন কবির জানান, নানা বাস্তবতায় অতিরিক্ত সময়েও প্রকল্প সম্পন্ন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ার কারণ জানতে আইএমইডির সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করে। পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের আওতাভুক্ত পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সাবরাং, সোনাদিয়া ও নাফ ট্যুরিজম পার্কে এখনো জমি হস্তান্তর সম্পন্ন হয়নি। ফলে এসব এলাকায় কাজ শুরু করা যায়নি।

অন্যদিকে জামালপুর সদর ও মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি হস্তান্তরের পর ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ হলেও সড়ক নির্মাণ অসম্পূর্ণ থাকায় অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন সম্ভব হয়নি।

আইএমইডির ভাষ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই কাজ শুরু করা হয়েছিল। তবে জমি হস্তান্তরে বিলম্ব, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত জটিলতা, সমন্বয়ের ঘাটতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে সড়ক নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। এসব কারণই প্রকল্পের অগ্রগতির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি। আর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বিভাগের সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইস্টার্ন ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইস্টার্ন ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকার একটি সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বন্ডটি অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত করতে হবে।

আজ বুধবার ৯৮৮তম কমিশন সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

বিএসইসি জানায়, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের আনসিকিউরড, নন-কনভার্টিবল, ফুললি রিডিমেবল, ফ্লোটিং রেট, কুপন বিয়ারিং সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব কমিশন সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্ডটি হবে আনসিকিউরড, অর্থাৎ এর বিপরীতে ব্যাংক কোনো নির্দিষ্ট সম্পদ জামানত হিসেবে রাখছে না। একই সঙ্গে এটি নন-কনভার্টিবল, ফলে ভবিষ্যতে এই বন্ডকে শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে না। তবে বন্ডটি ফুললি রিডিমেবল, অর্থাৎ মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের সম্পূর্ণ মূল টাকা ফেরত পাবেন।

এই বন্ডের কুপন রেট বা সুদের হার হবে ফ্লোটিং রেট, অর্থাৎ বাজারভিত্তিক রেফারেন্স রেটের সঙ্গে ওঠানামা করবে। বন্ডটি কুপন বিয়ারিং, ফলে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ পাবেন।

বন্ডটির কুপন রেট নির্ধারণ করা হয়েছে রেফারেন্স রেটের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ কুপন মার্জিন যোগ করে। অর্থাৎ, যদি রেফারেন্স রেট ৮ শতাংশ হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা মোট ১১ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। ভবিষ্যতে রেফারেন্স রেট বাড়লে বা কমলে বন্ডের কুপন রেটও সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে।

এই বন্ড প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠান, উচ্চসম্পদশালী ব্যক্তি, স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিমা কোম্পানিগুলো এতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। বন্ডটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

বিএসইসি জানায়, এই বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যাসেল–৩ নীতিমালার অধীনে ইস্টার্ন ব্যাংকের টায়ার-২ মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হবে। আন্তর্জাতিক এই নীতিমালার লক্ষ্য হলো ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা বাড়ানো এবং আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা জোরদার করা।

ব্যাংকিং খাতে টায়ার-২ মূলধনের মধ্যে সাধারণত সাব-অর্ডিনেট বন্ড অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা দেউলিয়াত্বের ক্ষেত্রে আমানতকারী ও অন্যান্য বড় ঋণের পরে পরিশোধযোগ্য। এ কারণে এসব বন্ড তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদের হার সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।

বন্ডটির ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি। আর ইস্যুর অ্যারেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত