Ajker Patrika

অস্ত্র প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন সহজলভ্য করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ২৫
অস্ত্র প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন সহজলভ্য করার  আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত মিউনিখ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃত্ব, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অংশ নেন। 

আজ শুক্রবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জার্মানি সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্য দেন তিনি। সম্মেলনে তিনি জানান, ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’—সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এই আলোচনায় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মটলে এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোসা জামির। 

প্যানেলে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে শেখ হাসিনা গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের, অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সকল প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হয়, এ বিষয়ে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি ও তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানান। 

প্যানেলে শেখ হাসিনা, অর্থহীন অস্ত্র-প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও কার্যকর করার জন্য সকলকে অনুরোধ করেন। মানবতার অস্তিত্বের সংকটকালে ক্ষুদ্র স্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে-এই রূঢ় বাস্তবতা আমি সকলের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানান। 

ওই দিনই উইমেন পলিটিক্যাল লিডারসের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সিলভানা কচ মেহরিন শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃ নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান এবং গত দেড় দশকে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আলোচনায় শেখ হাসিনা আমাদের সরকারের-বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত নীতিসমূহের বিষয়ে আলোকপাত করেন। 

জার্মান সফরের প্রথম দিনে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনাকালে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এলএনজি সরবরাহ প্রভৃতির পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও দ্রুত সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থনের ব্যাপারে তিনি আশ্বস্ত করেন। বৈঠকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও আমরা আলোচনা করেন তাঁরা। 

বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন নীতি ও অংশীদারত্ব বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গের সঙ্গে বৈঠককালে শেখ হাসিনা চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংক হতে অঙ্গীকারকৃত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দ্রুত ছাড়ের আহ্বান জানান। বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয় ও উচ্চ-আয়ের দেশের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হওয়ার কাঙ্ক্ষিত পথে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে ট্রটসেনবার্গ শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন। 

একই দিনে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানম ঘেব্রেসিউস সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে—বিশেষ করে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বিশ্বের বাকি দেশগুলোকে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল অনুসরণ করার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন। 

জার্মানি সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। আলোচনাকালে বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং আইসিটি খাতে ড্যানিশ কোম্পানিসমূহের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের পাশাপাশি তিনি বিরাজমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাঁর সরকারের মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকার বিষয়েও শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন ফ্রেডেরিকসেন। 

সফরের দ্বিতীয় দিনে সকালে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় শেখ হাসিনার। বৈঠককালে দুই নেতা বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়ন, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতসমূহে জ্ঞান-প্রযুক্তি-উদ্ভাবন বিস্তারে বিদ্যমান সহযোগিতা আরও গভীরতর করার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। 

একইদিন সকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। সাক্ষাৎকালে এই দুই নেতা দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দুই দেশের বাণিজ্য নিজস্ব মুদ্রায় পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। এ সময় জয়শংকর আগামী এপ্রিল/মে মাসে ভারতীয় সাধারণ নির্বাচন পর দুই দেশের নতুন সরকারের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চবার্ষিক সহযোগিতা বিষয়ক রোডম্যাপ প্রণয়নের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনায় মিয়ানমার ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বিষয়েও পারস্পরিক মতবিনিময় করা হয়। 

এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। সাক্ষাৎকালে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিমান চলাচল অংশীদারত্ব, অভিবাসন, রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ইউক্রেন ও গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ এবং মিয়ানমার ও লোহিত সাগরে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। 

একই দিনে জার্মান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী সভেনিয়া শুলৎজা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইইউয়ের জিএসপি প্লাস বাণিজ্য সুবিধাসহ, পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে জার্মান বিনিয়োগ ও সার্বিক জলবায়ু সহনশীলতা অর্জন বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। 

এই দিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর। বৈঠককালে তাঁরা বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং গম, ভোজ্যতেল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের দ্রুত সমাধানের কার্যকর উপায় অন্বেষণের অনুরোধ করেন। 

এরপর শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে নেতৃত্বদানের জন্য আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেন এবং এ বছর নভেম্বরে বাকুতে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৯ সম্মেলনে যোগদানের জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান। 

ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই নেতা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও হাইড্রোজেন প্রযুক্তি এবং দক্ষ অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন। এ ছাড়া, আমরা ইউক্রেন ও গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের প্রসঙ্গে মতবিনিময় করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক। ছবি: প্রেস উইং
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক। ছবি: প্রেস উইং

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’

গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই সতর্কবার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর আক্রমণটি ‘খুবই সিম্বলিক’ আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়।

রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন দলের বৈঠকের পর তাঁর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। শাহবাগ অথবা শহীদ মিনারে যে প্রতিবাদ সভা হবে, সেখানে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পরদিন শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করা হয় জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ওসমান হাদিকে। মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।

জুলাই আন্দোলনের সময় এক থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মধ্যে দূরত্ব দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। এই অবস্থার মধ্যে হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাদির ওপর হামলাকে ‘ষড়যন্ত্রের’অংশ হিসেবে তুলে ধরেন তিন দলের নেতারা। সেখানে হারিয়ে যাওয়া ঐক্য পুনরুদ্ধারের তাগিদও দেন তাঁরা।

বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে, এমন কথা আমরা কেন বলব?’

হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে, তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টক শোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।

অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে মন্তব্য করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’

বৈঠকে উপস্থিত থাকা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দলগুলোকে সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য দলগুলোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অবস্থান নেবে তারা। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে, সে জন্য পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথাও বলেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা।

যমুনায় ওসমান হাদির পরিবার

ওসমান হাদির পরিবার গতকাল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আবদুল্লাহ আল জাবের, ফাতিমা তাসনিম জুমা ও মো. বোরহান উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা এ সময় ওসমান হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁদের।

ওসমান হাদির বোন বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকেই সে বিপ্লবী। বিদ্রোহী কবিতা তার প্রিয়, সে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসত। তার একটি ১০ মাসের সন্তান আছে। হাদি আমাদের মেরুদণ্ড।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওর অনেক কাজ, ওকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা বিপ্লবী সরকার। যে করেই হোক জুলাই বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।’

অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা জাবের বলেন, ‘৫ই আগস্টের পর অনেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ওসমান হাদি বাসায় ফিরে যায়নি। সে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করত এবং জুলাই বিপ্লবের জন্য দিনরাত কাজ করছে। যে ছেলেটা গুলি করেছে, শুনতে পাচ্ছি সে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছে সেটা তদন্ত করতে হবে।’

এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

বিজয়ের পূর্বক্ষণে বেছে বেছে হত্যা করা হয় বুদ্ধিজীবীদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাঙালিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। বধ্যভূমি হয়ে ওঠে রায়েরবাজার, মিরপুরসহ বেশ কিছু এলাকা। দিনটি স্মরণে পরিষ্কার করা হচ্ছে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাঙালিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। বধ্যভূমি হয়ে ওঠে রায়েরবাজার, মিরপুরসহ বেশ কিছু এলাকা। দিনটি স্মরণে পরিষ্কার করা হচ্ছে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাসই বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছিল, তবে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে একযোগে ধরে নেওয়া হয় বহু বুদ্ধিজীবীকে। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে। এদিনটিকে তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে জাতি।

পাকিস্তানের সামরিক জান্তা পরিকল্পনা করেছিল, বুদ্ধিজীবীশূন্য করে দিলে বাংলাদেশ কোনো দিন স্বাধীন হলেও আত্মনির্ভর হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ ছিলেন শিক্ষক। ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সামরিক শাসকদের ক্ষোভ ছিল। একাত্তরে সে ক্ষোভ ঘৃণায় পরিণত হয়।

গবেষকদের ধারণা, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা রাও ফরমান আলী। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গভর্নর হাউস থেকে তাঁর একটি ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা ছিল। তাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে আটক হয়ে প্রাণ হারান। পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীসহ অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে গবেষকেরা মনে করেন।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা—তখনই খবর পাওয়া যায়, রাজধানীর রায়েরবাজারের বধ্যভূমির। সেখানে ইটের গাদার মধ্যে পড়ে ছিল বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর বিকৃত মরদেহ। কারও হাত-চোখ বাঁধা। বুক, মাথা ও পিঠে ছিল গুলির আঘাত এবং সারা দেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। ভয়ঙ্কর নির্মমভাবে নির্যাতনের পর তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। ক্রমেই বের হতে থাকে আরও বধ্যভূমি। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে শোকাতুর হয় জাতি। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে চিরজাগরূক রাখতে রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমির স্থানে পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ।

রায়েরবাজার ছাড়া ঢাকা শহরের প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাঙলা কলেজের পশ্চাদ্‌ভাগ, হরিরামপুর গোরস্তান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এবং মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত। ডিসেম্বরের বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে হত্যা করা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ফজলে রাব্বী, আলীম চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, নিজামুদ্দীন আহমদ, সেলিনা পারভীন, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, চিকিৎসাসেবাসহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল বলে নিহতদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সমকালীন সংবাদপত্রের খবর ও গবেষণা সূত্রে জানা যায়। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে এ কাজ করেছিল বাঙালি রাজাকার ও মুসলিম লীগাররা। তারা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে এসে লোকজনকে চিনিয়ে দিয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের পরামর্শ দিয়েছে। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল।

বাংলাপিডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। শহীদদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ২ জন। রাও ফরমান আলী হত্যার জন্য মোট ১৫০০ বাঙালির তালিকা করেছিলেন বলে জানা যায়।

যুদ্ধের শেষ কয়েক দিন

এদিকে নিশ্চিত পরাজয়ের প্রাক্কালে এসে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানিদের শীর্ষপর্যায়ে মতভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে রাও ফরমান আলীর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুদ্ধবিরতির আবেদন পাঠানোকে তারই প্রমাণ মনে করা হয়। ঢাকার শহরতলিতে অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনীর গোলা এসে পড়ছিল। শহরের কয়েকটি স্থানে তো মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অপারেশন আগে থেকেই চলছিল। জেনারেল নিয়াজী তখনো দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। মনস্থির করতে পারেননি প্রাদেশিক গভর্নর মালেকও। তবে ১৪ ডিসেম্বরই গভর্নর হাউসে (বর্তমান বঙ্গভবন) মালেক মন্ত্রিসভার বৈঠক চলার সময় ভারতীয় বিমানের বোমা হামলার পর তিনি ভড়কে গিয়ে সপারিষদ পদত্যাগ করে বসেন। ছটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের হামলায় গভর্নর হাউসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এদিকে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য মিত্রবাহিনীর জেনারেল মানেকশর আহ্বান রেডিওতে বারবার প্রচারিত হতে থাকে। ১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল নিয়াজী ও গভর্নর মালেককে ‘যুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণের অনুমোদন দেন। উপায় না দেখে নিয়াজী শেষ চেষ্টা হিসেবে মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর অবশিষ্ট সেনারা এক জায়গায় সমবেত হবে। সেখান থেকে তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে দিতে হবে। ১৫ তারিখ প্রস্তাবটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়।

এদিকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জাহাজ চট্টগ্রাম উপকূলে ঘেঁষার চেষ্টা করতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশি বাহিনীর সেনারা বন্দর অচল করতে উদ্যোগ নেন। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী এতে সহায়তা করে। বন্দরে প্রচুর বোমা ফেলে তা অচল করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের অদূরে কুমিরার কাছে ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় ২৩ ডিভিশনের ৮৩ ব্রিগেডের যোদ্ধারা। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম দখলে নেওয়া। সব মিলিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং ঢাকার পতন তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ৬ জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরও ৮ জনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।

তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।

বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের বিশেষ নিরাপত্তা চেয়ে ডিএমপিকে ইসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে দেওয়া ইসির এক চিঠিতে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার এবং সিনিয়র সচিবের বিশেষ নিরাপত্তা বিধান প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট বিদ্যমান থাকলেও নির্বাচনকালে তাঁর জন্য অতিরিক্ত আরও একটি গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট প্রয়োজন। এ ছাড়া চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের ঢাকার বাসভবন ও অফিসে যাতায়াতসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট দেওয়া প্রয়োজন।

এ ছাড়া মহাপুলিশ পরিদর্শককে দেওয়া অন্য চিঠিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারির পর দুর্বৃত্তরা লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিস এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে সারা দেশে মাঠপর্যায়ের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিস এবং উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসসমূহে নির্বাচন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালপত্র, যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে বিধায় উক্ত অফিসসমূহে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি ও নির্বাচনী মালপত্রের সুরক্ষাসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক বলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসসমূহের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।

এছাড়া পুলিশ কমিশনার বরাবর দেওয়া আরেকটি চিঠিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগ করতে বলা হয়েছে।

ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত