চিররঞ্জন সরকার

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের একটা আলাদা ভূমিকা আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ছলেবলে-কৌশলে পরাজিত করার যে অপপ্রয়াস তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ৭ নভেম্বর। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন, তাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীর কিছু মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাঁদের মাত্র দুজন (ফারুক ও রশীদ) ছিলেন চাকরিরত; বাকিরা সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রধানত মেজর র্যাঙ্কের কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই খুনি অফিসাররা খোলামেলাভাবে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকে। পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা প্রকাশ্যে কলকাঠি নাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুক, রশীদ, ডালিমরা বঙ্গভবনে বসে তাঁদের নাটের গুরু খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে দেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের অনুপ্রবেশ ঘটাতে মত্ত ছিলেন। তাঁরা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। ২৮ আগস্ট তাঁরা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদে বসান। কিন্তু জিয়া ছিলেন নামেই সেনাপ্রধান। ঘাতকেরাই সব সিদ্ধান্ত নিতেন।
এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু কর্মকর্তা চেয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেনাবাহিনীর তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে উড়ে এসে জুড়ে বসা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে ৩ নভেম্বর একটা অভিযানও পরিচালনা করেন। এই দলে ছিলেন মেজর হাফিজউদ্দিন, কর্নেল শাফায়েত জামিলসহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা অফিসার।খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াকে বন্দী করে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড নিজ হাতে তুলে নেন।
কিন্তু এই অভ্যুত্থানকারীরা প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের কাছে টিকতে পারেননি। ১৫ আগস্টের হোতারা খালেদ ও তাঁর সহযোগীদের ভারতপন্থীদের অভ্যুত্থান হিসেবে প্রচারণা চালান। এই প্রচারণায় কাজ হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে এই প্রচারণা দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। এদিকে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছিল। ১৫ আগস্টের খুনিচক্র আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার অভিপ্রায়ে জেলের অভ্যন্তরে দলটির ঊর্ধ্বতন চার নেতাকে হত্যা করে গোপনে দেশত্যাগ করে।
এ সময় ঘটনাপরম্পরায় যুক্ত হয়ে পড়ে জাসদ এবং কর্নেল তাহেরের নাম। কর্নেল তাহের ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে এক পা হারানো মানুষটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায়ই কমিউনিজমের দীক্ষা নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশায় জাসদে যোগ দিয়ে এর আর্মস ব্যান্ড বিপ্লবী গণবাহিনীর কমান্ডার হয়েছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হলে বুর্জোয়া সেনাবাহিনীরও বিপ্লবীকরণ দরকার। এ লক্ষ্যে তিনি জাসদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সেনাবাহিনীতে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ নামে একটি সমান্তরাল সেনাকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন।
নভেম্বরের জটিল ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। যোগাযোগ করেন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার জেসিও ও এনসিও পর্যায়ের সেনাসদস্য এবং জিয়ার বিশ্বস্ত অনুসারীদের সঙ্গে। তিনি যেহেতু সেনাবাহিনীতে কর্মরত কেউ নন, সেহেতু কর্মরত একজন সেনাকর্মকর্তাকেই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে চাইলেন। সব দিক বিবেচনা করে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু জিয়াকেই বেছে নিলেন। সে সময় জিয়াকে সামনে রেখে তাহেরের অনুসারী বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা মেতে উঠল অফিসার নিধনে। আর এ বিদ্রোহেই নিহত হলেন খালেদ মোশাররফ, লে. কর্নেল হায়দারসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনাকর্মকর্তা। তবে অফিসার নিধন-প্রক্রিয়া বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। জিয়ার ওপর অসীম আস্থা রেখে তাহের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণভার সম্পূর্ণরূপে ন্যস্ত করেন তাঁর ওপর। সুচতুর জিয়া এই সুযোগে মনোযোগ দেন অপ্রতিহত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দিকে
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুবায়ের তাঁর আত্মজীবনীমূলক ‘আমার জীবন আমার যুদ্ধ’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সায়েম যখন বেতার ভাষণ দেন, তখন জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহের উভয়েই বেতারকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। বেতারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কামরায় বসে জিয়ার সঙ্গে তাহেরের কথাবার্তা হয়। তাহের জিয়াকে বলেন, বিপ্লবী সৈনিকদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। জিয়া যেন তা শোনেন এবং অবিলম্বে মেনে নেন। জিয়া স্বভাবসুলভ ধীরস্থিরভাবে বলেন, তিনি একটু পরে সৈনিকদের সঙ্গে দেখা করবেন।
উল্লেখ্য, বেতারের স্টুডিওতে আসার আগেই রাষ্ট্রপতির ভাষণ রেকর্ড করা হয়েছিল, যাতে আলোচনার সময় তাহের বা জাসদের সশস্ত্র সৈনিকেরা কোনো শর্ত বা দাবিদাওয়া নিয়ে চাপ দিতে না পারে। জিয়ার এ কৌশল ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল।’ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আসলে ক্যু-পাল্টা ক্যুসহ অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়।
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ অত্যন্ত ট্র্যাজিক। সমাজে এবং সেনাবাহিনীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলে জিয়া কঠোরভাবে দমন করেন তাঁর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে। তাঁর জীবন রক্ষাকারী তাহেরকে প্রহসনের ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে ঝোলান ফাঁসিতে। ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান ক্ষমতাকে সংহত করে সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের চরিত্রটাই বদলে দেন। পাকিস্তানি কায়দায় বাংলাদেশেও অবৈধ সেনা শাসনের ভিত রচিত হয়।
জিয়াউর রহমানের পুরো শাসনামল ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করে বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ দখল, অবৈধ উপায়ে একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন, গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হ্যাঁ-না ভোট করা, সংবিধানকে স্থগিত করে সামরিক ফরমানবলে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে তুলে দেওয়া, রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে নিজেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সুযোগ দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু, তথাকথিত ক্যুর অভিযোগে শত শত সেনাকর্মকর্তা হত্যা ও হাজার হাজার সেনাসদস্যের চাকরিচ্যুতি, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের নিরাপত্তা দিয়ে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা।
৭ নভেম্বর আসলে বাংলাদেশবিরোধী চক্রের বিজয়ের দিন। বিএনপি ও তার অনুচরেরা দিনটিকে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। এই নামকরণের মধ্যেও রয়েছে একটা গভীর দুরভিসন্ধি। কর্নেল শাফায়াত জামিল রচিত ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ শীর্ষক বইয়ে বলা হয়েছে, ‘৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের হাত থেকে চিরদিনের জন্য দায়মুক্ত থাকার ব্যবস্থা হিসেবে অত্যন্ত সুচতুরভাবে দিনটিকে “জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস”রূপে ঘোষণা করা হয়েছে।
এটি নিঃসন্দেহে জিয়ার একটি মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘সিপাহি বিদ্রোহে অংশ নেওয়া সিপাহিরা ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত এবং তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যাটালিয়নে ছিল না।’ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যড়যন্ত্র এবং জঘন্য হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্যই বিশেষ মহল ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।
প্রশ্ন হলো, ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় কেন ৭ নভেম্বরের ঘটনাগুলো ঘটেছিল? ষড়যন্ত্রকারীরা কেন মেতে উঠেছিল রক্তের হোলি-খেলায়? এ প্রশ্নের উত্তর আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম-ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের সীমাহীন গর্ব থাকলেও বাস্তবতা হলো, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীনতাবিরোধী এই গোষ্ঠী স্বাধীনতার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭১ সালে তার পরাজয়কে পাকিস্তান ইসলামের পরাজয় হিসেবে মুসলিম বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল।
তাই হাতে গোনা দু-একটি দেশ ছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে মেনে নিতে পুরো মুসলিম বিশ্ব অস্বীকার করে। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতাজনিত ক্ষোভ ও রোষ। একেবারে শূন্য হাতে দেশ গড়ার অভিযানে নেমে বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো তেলের মূল্য তিন গুণ বৃদ্ধি করায় তারা পেট্রোডলারে ভাসতে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মধ্যবিত্ত সমাজ যারা ইতিহাস সৃষ্টি করে, তাদের সব সময়ই পছন্দ স্থিতাবস্থা আর নির্ভার জীবন-জীবিকা। তারা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার এই ইতিবাচক সম্ভাবনাকে স্বাগত জানায়। বঙ্গবন্ধু সরকারও অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি নমনীয় হয় এবং ওআইসিতে যোগ দেয়।
৭ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদার মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও ইহজাতিক চিন্তা-চেতনার ধারার বিপরীতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ভাবদর্শনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। অবক্ষয়ের সেই ধারা থেকে রাজনীতি এখনো মুক্ত হতে পারেনি।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের একটা আলাদা ভূমিকা আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ছলেবলে-কৌশলে পরাজিত করার যে অপপ্রয়াস তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ৭ নভেম্বর। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন, তাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীর কিছু মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাঁদের মাত্র দুজন (ফারুক ও রশীদ) ছিলেন চাকরিরত; বাকিরা সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রধানত মেজর র্যাঙ্কের কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই খুনি অফিসাররা খোলামেলাভাবে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকে। পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা প্রকাশ্যে কলকাঠি নাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুক, রশীদ, ডালিমরা বঙ্গভবনে বসে তাঁদের নাটের গুরু খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে দেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের অনুপ্রবেশ ঘটাতে মত্ত ছিলেন। তাঁরা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। ২৮ আগস্ট তাঁরা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদে বসান। কিন্তু জিয়া ছিলেন নামেই সেনাপ্রধান। ঘাতকেরাই সব সিদ্ধান্ত নিতেন।
এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু কর্মকর্তা চেয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেনাবাহিনীর তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে উড়ে এসে জুড়ে বসা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে ৩ নভেম্বর একটা অভিযানও পরিচালনা করেন। এই দলে ছিলেন মেজর হাফিজউদ্দিন, কর্নেল শাফায়েত জামিলসহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা অফিসার।খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াকে বন্দী করে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড নিজ হাতে তুলে নেন।
কিন্তু এই অভ্যুত্থানকারীরা প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের কাছে টিকতে পারেননি। ১৫ আগস্টের হোতারা খালেদ ও তাঁর সহযোগীদের ভারতপন্থীদের অভ্যুত্থান হিসেবে প্রচারণা চালান। এই প্রচারণায় কাজ হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে এই প্রচারণা দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। এদিকে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছিল। ১৫ আগস্টের খুনিচক্র আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার অভিপ্রায়ে জেলের অভ্যন্তরে দলটির ঊর্ধ্বতন চার নেতাকে হত্যা করে গোপনে দেশত্যাগ করে।
এ সময় ঘটনাপরম্পরায় যুক্ত হয়ে পড়ে জাসদ এবং কর্নেল তাহেরের নাম। কর্নেল তাহের ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে এক পা হারানো মানুষটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায়ই কমিউনিজমের দীক্ষা নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশায় জাসদে যোগ দিয়ে এর আর্মস ব্যান্ড বিপ্লবী গণবাহিনীর কমান্ডার হয়েছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হলে বুর্জোয়া সেনাবাহিনীরও বিপ্লবীকরণ দরকার। এ লক্ষ্যে তিনি জাসদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সেনাবাহিনীতে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ নামে একটি সমান্তরাল সেনাকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন।
নভেম্বরের জটিল ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। যোগাযোগ করেন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার জেসিও ও এনসিও পর্যায়ের সেনাসদস্য এবং জিয়ার বিশ্বস্ত অনুসারীদের সঙ্গে। তিনি যেহেতু সেনাবাহিনীতে কর্মরত কেউ নন, সেহেতু কর্মরত একজন সেনাকর্মকর্তাকেই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে চাইলেন। সব দিক বিবেচনা করে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু জিয়াকেই বেছে নিলেন। সে সময় জিয়াকে সামনে রেখে তাহেরের অনুসারী বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা মেতে উঠল অফিসার নিধনে। আর এ বিদ্রোহেই নিহত হলেন খালেদ মোশাররফ, লে. কর্নেল হায়দারসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনাকর্মকর্তা। তবে অফিসার নিধন-প্রক্রিয়া বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। জিয়ার ওপর অসীম আস্থা রেখে তাহের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণভার সম্পূর্ণরূপে ন্যস্ত করেন তাঁর ওপর। সুচতুর জিয়া এই সুযোগে মনোযোগ দেন অপ্রতিহত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দিকে
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুবায়ের তাঁর আত্মজীবনীমূলক ‘আমার জীবন আমার যুদ্ধ’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সায়েম যখন বেতার ভাষণ দেন, তখন জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহের উভয়েই বেতারকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। বেতারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কামরায় বসে জিয়ার সঙ্গে তাহেরের কথাবার্তা হয়। তাহের জিয়াকে বলেন, বিপ্লবী সৈনিকদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। জিয়া যেন তা শোনেন এবং অবিলম্বে মেনে নেন। জিয়া স্বভাবসুলভ ধীরস্থিরভাবে বলেন, তিনি একটু পরে সৈনিকদের সঙ্গে দেখা করবেন।
উল্লেখ্য, বেতারের স্টুডিওতে আসার আগেই রাষ্ট্রপতির ভাষণ রেকর্ড করা হয়েছিল, যাতে আলোচনার সময় তাহের বা জাসদের সশস্ত্র সৈনিকেরা কোনো শর্ত বা দাবিদাওয়া নিয়ে চাপ দিতে না পারে। জিয়ার এ কৌশল ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল।’ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আসলে ক্যু-পাল্টা ক্যুসহ অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়।
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ অত্যন্ত ট্র্যাজিক। সমাজে এবং সেনাবাহিনীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলে জিয়া কঠোরভাবে দমন করেন তাঁর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে। তাঁর জীবন রক্ষাকারী তাহেরকে প্রহসনের ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে ঝোলান ফাঁসিতে। ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান ক্ষমতাকে সংহত করে সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের চরিত্রটাই বদলে দেন। পাকিস্তানি কায়দায় বাংলাদেশেও অবৈধ সেনা শাসনের ভিত রচিত হয়।
জিয়াউর রহমানের পুরো শাসনামল ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করে বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ দখল, অবৈধ উপায়ে একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন, গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হ্যাঁ-না ভোট করা, সংবিধানকে স্থগিত করে সামরিক ফরমানবলে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে তুলে দেওয়া, রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে নিজেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সুযোগ দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু, তথাকথিত ক্যুর অভিযোগে শত শত সেনাকর্মকর্তা হত্যা ও হাজার হাজার সেনাসদস্যের চাকরিচ্যুতি, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের নিরাপত্তা দিয়ে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা।
৭ নভেম্বর আসলে বাংলাদেশবিরোধী চক্রের বিজয়ের দিন। বিএনপি ও তার অনুচরেরা দিনটিকে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। এই নামকরণের মধ্যেও রয়েছে একটা গভীর দুরভিসন্ধি। কর্নেল শাফায়াত জামিল রচিত ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ শীর্ষক বইয়ে বলা হয়েছে, ‘৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের হাত থেকে চিরদিনের জন্য দায়মুক্ত থাকার ব্যবস্থা হিসেবে অত্যন্ত সুচতুরভাবে দিনটিকে “জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস”রূপে ঘোষণা করা হয়েছে।
এটি নিঃসন্দেহে জিয়ার একটি মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘সিপাহি বিদ্রোহে অংশ নেওয়া সিপাহিরা ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত এবং তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যাটালিয়নে ছিল না।’ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যড়যন্ত্র এবং জঘন্য হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্যই বিশেষ মহল ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।
প্রশ্ন হলো, ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় কেন ৭ নভেম্বরের ঘটনাগুলো ঘটেছিল? ষড়যন্ত্রকারীরা কেন মেতে উঠেছিল রক্তের হোলি-খেলায়? এ প্রশ্নের উত্তর আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম-ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের সীমাহীন গর্ব থাকলেও বাস্তবতা হলো, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীনতাবিরোধী এই গোষ্ঠী স্বাধীনতার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭১ সালে তার পরাজয়কে পাকিস্তান ইসলামের পরাজয় হিসেবে মুসলিম বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল।
তাই হাতে গোনা দু-একটি দেশ ছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে মেনে নিতে পুরো মুসলিম বিশ্ব অস্বীকার করে। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতাজনিত ক্ষোভ ও রোষ। একেবারে শূন্য হাতে দেশ গড়ার অভিযানে নেমে বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো তেলের মূল্য তিন গুণ বৃদ্ধি করায় তারা পেট্রোডলারে ভাসতে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মধ্যবিত্ত সমাজ যারা ইতিহাস সৃষ্টি করে, তাদের সব সময়ই পছন্দ স্থিতাবস্থা আর নির্ভার জীবন-জীবিকা। তারা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার এই ইতিবাচক সম্ভাবনাকে স্বাগত জানায়। বঙ্গবন্ধু সরকারও অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি নমনীয় হয় এবং ওআইসিতে যোগ দেয়।
৭ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদার মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও ইহজাতিক চিন্তা-চেতনার ধারার বিপরীতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ভাবদর্শনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। অবক্ষয়ের সেই ধারা থেকে রাজনীতি এখনো মুক্ত হতে পারেনি।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের একটা আলাদা ভূমিকা আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ছলেবলে-কৌশলে পরাজিত করার যে অপপ্রয়াস তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ৭ নভেম্বর। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন, তাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীর কিছু মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাঁদের মাত্র দুজন (ফারুক ও রশীদ) ছিলেন চাকরিরত; বাকিরা সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রধানত মেজর র্যাঙ্কের কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই খুনি অফিসাররা খোলামেলাভাবে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকে। পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা প্রকাশ্যে কলকাঠি নাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুক, রশীদ, ডালিমরা বঙ্গভবনে বসে তাঁদের নাটের গুরু খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে দেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের অনুপ্রবেশ ঘটাতে মত্ত ছিলেন। তাঁরা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। ২৮ আগস্ট তাঁরা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদে বসান। কিন্তু জিয়া ছিলেন নামেই সেনাপ্রধান। ঘাতকেরাই সব সিদ্ধান্ত নিতেন।
এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু কর্মকর্তা চেয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেনাবাহিনীর তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে উড়ে এসে জুড়ে বসা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে ৩ নভেম্বর একটা অভিযানও পরিচালনা করেন। এই দলে ছিলেন মেজর হাফিজউদ্দিন, কর্নেল শাফায়েত জামিলসহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা অফিসার।খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াকে বন্দী করে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড নিজ হাতে তুলে নেন।
কিন্তু এই অভ্যুত্থানকারীরা প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের কাছে টিকতে পারেননি। ১৫ আগস্টের হোতারা খালেদ ও তাঁর সহযোগীদের ভারতপন্থীদের অভ্যুত্থান হিসেবে প্রচারণা চালান। এই প্রচারণায় কাজ হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে এই প্রচারণা দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। এদিকে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছিল। ১৫ আগস্টের খুনিচক্র আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার অভিপ্রায়ে জেলের অভ্যন্তরে দলটির ঊর্ধ্বতন চার নেতাকে হত্যা করে গোপনে দেশত্যাগ করে।
এ সময় ঘটনাপরম্পরায় যুক্ত হয়ে পড়ে জাসদ এবং কর্নেল তাহেরের নাম। কর্নেল তাহের ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে এক পা হারানো মানুষটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায়ই কমিউনিজমের দীক্ষা নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশায় জাসদে যোগ দিয়ে এর আর্মস ব্যান্ড বিপ্লবী গণবাহিনীর কমান্ডার হয়েছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হলে বুর্জোয়া সেনাবাহিনীরও বিপ্লবীকরণ দরকার। এ লক্ষ্যে তিনি জাসদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সেনাবাহিনীতে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ নামে একটি সমান্তরাল সেনাকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন।
নভেম্বরের জটিল ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। যোগাযোগ করেন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার জেসিও ও এনসিও পর্যায়ের সেনাসদস্য এবং জিয়ার বিশ্বস্ত অনুসারীদের সঙ্গে। তিনি যেহেতু সেনাবাহিনীতে কর্মরত কেউ নন, সেহেতু কর্মরত একজন সেনাকর্মকর্তাকেই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে চাইলেন। সব দিক বিবেচনা করে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু জিয়াকেই বেছে নিলেন। সে সময় জিয়াকে সামনে রেখে তাহেরের অনুসারী বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা মেতে উঠল অফিসার নিধনে। আর এ বিদ্রোহেই নিহত হলেন খালেদ মোশাররফ, লে. কর্নেল হায়দারসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনাকর্মকর্তা। তবে অফিসার নিধন-প্রক্রিয়া বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। জিয়ার ওপর অসীম আস্থা রেখে তাহের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণভার সম্পূর্ণরূপে ন্যস্ত করেন তাঁর ওপর। সুচতুর জিয়া এই সুযোগে মনোযোগ দেন অপ্রতিহত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দিকে
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুবায়ের তাঁর আত্মজীবনীমূলক ‘আমার জীবন আমার যুদ্ধ’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সায়েম যখন বেতার ভাষণ দেন, তখন জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহের উভয়েই বেতারকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। বেতারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কামরায় বসে জিয়ার সঙ্গে তাহেরের কথাবার্তা হয়। তাহের জিয়াকে বলেন, বিপ্লবী সৈনিকদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। জিয়া যেন তা শোনেন এবং অবিলম্বে মেনে নেন। জিয়া স্বভাবসুলভ ধীরস্থিরভাবে বলেন, তিনি একটু পরে সৈনিকদের সঙ্গে দেখা করবেন।
উল্লেখ্য, বেতারের স্টুডিওতে আসার আগেই রাষ্ট্রপতির ভাষণ রেকর্ড করা হয়েছিল, যাতে আলোচনার সময় তাহের বা জাসদের সশস্ত্র সৈনিকেরা কোনো শর্ত বা দাবিদাওয়া নিয়ে চাপ দিতে না পারে। জিয়ার এ কৌশল ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল।’ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আসলে ক্যু-পাল্টা ক্যুসহ অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়।
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ অত্যন্ত ট্র্যাজিক। সমাজে এবং সেনাবাহিনীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলে জিয়া কঠোরভাবে দমন করেন তাঁর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে। তাঁর জীবন রক্ষাকারী তাহেরকে প্রহসনের ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে ঝোলান ফাঁসিতে। ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান ক্ষমতাকে সংহত করে সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের চরিত্রটাই বদলে দেন। পাকিস্তানি কায়দায় বাংলাদেশেও অবৈধ সেনা শাসনের ভিত রচিত হয়।
জিয়াউর রহমানের পুরো শাসনামল ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করে বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ দখল, অবৈধ উপায়ে একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন, গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হ্যাঁ-না ভোট করা, সংবিধানকে স্থগিত করে সামরিক ফরমানবলে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে তুলে দেওয়া, রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে নিজেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সুযোগ দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু, তথাকথিত ক্যুর অভিযোগে শত শত সেনাকর্মকর্তা হত্যা ও হাজার হাজার সেনাসদস্যের চাকরিচ্যুতি, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের নিরাপত্তা দিয়ে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা।
৭ নভেম্বর আসলে বাংলাদেশবিরোধী চক্রের বিজয়ের দিন। বিএনপি ও তার অনুচরেরা দিনটিকে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। এই নামকরণের মধ্যেও রয়েছে একটা গভীর দুরভিসন্ধি। কর্নেল শাফায়াত জামিল রচিত ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ শীর্ষক বইয়ে বলা হয়েছে, ‘৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের হাত থেকে চিরদিনের জন্য দায়মুক্ত থাকার ব্যবস্থা হিসেবে অত্যন্ত সুচতুরভাবে দিনটিকে “জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস”রূপে ঘোষণা করা হয়েছে।
এটি নিঃসন্দেহে জিয়ার একটি মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘সিপাহি বিদ্রোহে অংশ নেওয়া সিপাহিরা ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত এবং তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যাটালিয়নে ছিল না।’ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যড়যন্ত্র এবং জঘন্য হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্যই বিশেষ মহল ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।
প্রশ্ন হলো, ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় কেন ৭ নভেম্বরের ঘটনাগুলো ঘটেছিল? ষড়যন্ত্রকারীরা কেন মেতে উঠেছিল রক্তের হোলি-খেলায়? এ প্রশ্নের উত্তর আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম-ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের সীমাহীন গর্ব থাকলেও বাস্তবতা হলো, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীনতাবিরোধী এই গোষ্ঠী স্বাধীনতার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭১ সালে তার পরাজয়কে পাকিস্তান ইসলামের পরাজয় হিসেবে মুসলিম বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল।
তাই হাতে গোনা দু-একটি দেশ ছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে মেনে নিতে পুরো মুসলিম বিশ্ব অস্বীকার করে। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতাজনিত ক্ষোভ ও রোষ। একেবারে শূন্য হাতে দেশ গড়ার অভিযানে নেমে বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো তেলের মূল্য তিন গুণ বৃদ্ধি করায় তারা পেট্রোডলারে ভাসতে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মধ্যবিত্ত সমাজ যারা ইতিহাস সৃষ্টি করে, তাদের সব সময়ই পছন্দ স্থিতাবস্থা আর নির্ভার জীবন-জীবিকা। তারা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার এই ইতিবাচক সম্ভাবনাকে স্বাগত জানায়। বঙ্গবন্ধু সরকারও অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি নমনীয় হয় এবং ওআইসিতে যোগ দেয়।
৭ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদার মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও ইহজাতিক চিন্তা-চেতনার ধারার বিপরীতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ভাবদর্শনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। অবক্ষয়ের সেই ধারা থেকে রাজনীতি এখনো মুক্ত হতে পারেনি।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের একটা আলাদা ভূমিকা আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ছলেবলে-কৌশলে পরাজিত করার যে অপপ্রয়াস তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ৭ নভেম্বর। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন, তাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীর কিছু মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাঁদের মাত্র দুজন (ফারুক ও রশীদ) ছিলেন চাকরিরত; বাকিরা সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রধানত মেজর র্যাঙ্কের কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই খুনি অফিসাররা খোলামেলাভাবে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকে। পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা প্রকাশ্যে কলকাঠি নাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুক, রশীদ, ডালিমরা বঙ্গভবনে বসে তাঁদের নাটের গুরু খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে দেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের অনুপ্রবেশ ঘটাতে মত্ত ছিলেন। তাঁরা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। ২৮ আগস্ট তাঁরা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদে বসান। কিন্তু জিয়া ছিলেন নামেই সেনাপ্রধান। ঘাতকেরাই সব সিদ্ধান্ত নিতেন।
এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু কর্মকর্তা চেয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেনাবাহিনীর তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে উড়ে এসে জুড়ে বসা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে ৩ নভেম্বর একটা অভিযানও পরিচালনা করেন। এই দলে ছিলেন মেজর হাফিজউদ্দিন, কর্নেল শাফায়েত জামিলসহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা অফিসার।খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াকে বন্দী করে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড নিজ হাতে তুলে নেন।
কিন্তু এই অভ্যুত্থানকারীরা প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের কাছে টিকতে পারেননি। ১৫ আগস্টের হোতারা খালেদ ও তাঁর সহযোগীদের ভারতপন্থীদের অভ্যুত্থান হিসেবে প্রচারণা চালান। এই প্রচারণায় কাজ হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে এই প্রচারণা দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। এদিকে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছিল। ১৫ আগস্টের খুনিচক্র আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার অভিপ্রায়ে জেলের অভ্যন্তরে দলটির ঊর্ধ্বতন চার নেতাকে হত্যা করে গোপনে দেশত্যাগ করে।
এ সময় ঘটনাপরম্পরায় যুক্ত হয়ে পড়ে জাসদ এবং কর্নেল তাহেরের নাম। কর্নেল তাহের ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে এক পা হারানো মানুষটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায়ই কমিউনিজমের দীক্ষা নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশায় জাসদে যোগ দিয়ে এর আর্মস ব্যান্ড বিপ্লবী গণবাহিনীর কমান্ডার হয়েছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হলে বুর্জোয়া সেনাবাহিনীরও বিপ্লবীকরণ দরকার। এ লক্ষ্যে তিনি জাসদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সেনাবাহিনীতে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ নামে একটি সমান্তরাল সেনাকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন।
নভেম্বরের জটিল ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। যোগাযোগ করেন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার জেসিও ও এনসিও পর্যায়ের সেনাসদস্য এবং জিয়ার বিশ্বস্ত অনুসারীদের সঙ্গে। তিনি যেহেতু সেনাবাহিনীতে কর্মরত কেউ নন, সেহেতু কর্মরত একজন সেনাকর্মকর্তাকেই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে চাইলেন। সব দিক বিবেচনা করে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু জিয়াকেই বেছে নিলেন। সে সময় জিয়াকে সামনে রেখে তাহেরের অনুসারী বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা মেতে উঠল অফিসার নিধনে। আর এ বিদ্রোহেই নিহত হলেন খালেদ মোশাররফ, লে. কর্নেল হায়দারসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনাকর্মকর্তা। তবে অফিসার নিধন-প্রক্রিয়া বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। জিয়ার ওপর অসীম আস্থা রেখে তাহের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণভার সম্পূর্ণরূপে ন্যস্ত করেন তাঁর ওপর। সুচতুর জিয়া এই সুযোগে মনোযোগ দেন অপ্রতিহত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দিকে
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুবায়ের তাঁর আত্মজীবনীমূলক ‘আমার জীবন আমার যুদ্ধ’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সায়েম যখন বেতার ভাষণ দেন, তখন জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহের উভয়েই বেতারকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। বেতারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কামরায় বসে জিয়ার সঙ্গে তাহেরের কথাবার্তা হয়। তাহের জিয়াকে বলেন, বিপ্লবী সৈনিকদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। জিয়া যেন তা শোনেন এবং অবিলম্বে মেনে নেন। জিয়া স্বভাবসুলভ ধীরস্থিরভাবে বলেন, তিনি একটু পরে সৈনিকদের সঙ্গে দেখা করবেন।
উল্লেখ্য, বেতারের স্টুডিওতে আসার আগেই রাষ্ট্রপতির ভাষণ রেকর্ড করা হয়েছিল, যাতে আলোচনার সময় তাহের বা জাসদের সশস্ত্র সৈনিকেরা কোনো শর্ত বা দাবিদাওয়া নিয়ে চাপ দিতে না পারে। জিয়ার এ কৌশল ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল।’ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আসলে ক্যু-পাল্টা ক্যুসহ অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়।
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ অত্যন্ত ট্র্যাজিক। সমাজে এবং সেনাবাহিনীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলে জিয়া কঠোরভাবে দমন করেন তাঁর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে। তাঁর জীবন রক্ষাকারী তাহেরকে প্রহসনের ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে ঝোলান ফাঁসিতে। ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান ক্ষমতাকে সংহত করে সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের চরিত্রটাই বদলে দেন। পাকিস্তানি কায়দায় বাংলাদেশেও অবৈধ সেনা শাসনের ভিত রচিত হয়।
জিয়াউর রহমানের পুরো শাসনামল ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করে বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ দখল, অবৈধ উপায়ে একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন, গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হ্যাঁ-না ভোট করা, সংবিধানকে স্থগিত করে সামরিক ফরমানবলে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে তুলে দেওয়া, রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে নিজেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সুযোগ দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু, তথাকথিত ক্যুর অভিযোগে শত শত সেনাকর্মকর্তা হত্যা ও হাজার হাজার সেনাসদস্যের চাকরিচ্যুতি, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের নিরাপত্তা দিয়ে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা।
৭ নভেম্বর আসলে বাংলাদেশবিরোধী চক্রের বিজয়ের দিন। বিএনপি ও তার অনুচরেরা দিনটিকে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। এই নামকরণের মধ্যেও রয়েছে একটা গভীর দুরভিসন্ধি। কর্নেল শাফায়াত জামিল রচিত ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ শীর্ষক বইয়ে বলা হয়েছে, ‘৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের হাত থেকে চিরদিনের জন্য দায়মুক্ত থাকার ব্যবস্থা হিসেবে অত্যন্ত সুচতুরভাবে দিনটিকে “জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস”রূপে ঘোষণা করা হয়েছে।
এটি নিঃসন্দেহে জিয়ার একটি মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘সিপাহি বিদ্রোহে অংশ নেওয়া সিপাহিরা ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত এবং তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যাটালিয়নে ছিল না।’ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যড়যন্ত্র এবং জঘন্য হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্যই বিশেষ মহল ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।
প্রশ্ন হলো, ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় কেন ৭ নভেম্বরের ঘটনাগুলো ঘটেছিল? ষড়যন্ত্রকারীরা কেন মেতে উঠেছিল রক্তের হোলি-খেলায়? এ প্রশ্নের উত্তর আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম-ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের সীমাহীন গর্ব থাকলেও বাস্তবতা হলো, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীনতাবিরোধী এই গোষ্ঠী স্বাধীনতার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭১ সালে তার পরাজয়কে পাকিস্তান ইসলামের পরাজয় হিসেবে মুসলিম বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল।
তাই হাতে গোনা দু-একটি দেশ ছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে মেনে নিতে পুরো মুসলিম বিশ্ব অস্বীকার করে। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতাজনিত ক্ষোভ ও রোষ। একেবারে শূন্য হাতে দেশ গড়ার অভিযানে নেমে বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো তেলের মূল্য তিন গুণ বৃদ্ধি করায় তারা পেট্রোডলারে ভাসতে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মধ্যবিত্ত সমাজ যারা ইতিহাস সৃষ্টি করে, তাদের সব সময়ই পছন্দ স্থিতাবস্থা আর নির্ভার জীবন-জীবিকা। তারা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার এই ইতিবাচক সম্ভাবনাকে স্বাগত জানায়। বঙ্গবন্ধু সরকারও অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি নমনীয় হয় এবং ওআইসিতে যোগ দেয়।
৭ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদার মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও ইহজাতিক চিন্তা-চেতনার ধারার বিপরীতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ভাবদর্শনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। অবক্ষয়ের সেই ধারা থেকে রাজনীতি এখনো মুক্ত হতে পারেনি।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের একটা আলাদা ভূমিকা আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ছলেবলে-কৌশলে পরাজিত করার যে অপপ্রয়াস তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ৭ নভেম্বর।
০৭ নভেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের একটা আলাদা ভূমিকা আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ছলেবলে-কৌশলে পরাজিত করার যে অপপ্রয়াস তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ৭ নভেম্বর।
০৭ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের একটা আলাদা ভূমিকা আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ছলেবলে-কৌশলে পরাজিত করার যে অপপ্রয়াস তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ৭ নভেম্বর।
০৭ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের একটা আলাদা ভূমিকা আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ছলেবলে-কৌশলে পরাজিত করার যে অপপ্রয়াস তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ৭ নভেম্বর।
০৭ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫