মামুনুর রশীদ

রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি হিসেবে। ভারতবর্ষে এসেই তিনি এক বিশাল রত্নভান্ডারের সন্ধান পান। কলকাতায় এসে সেখান থেকে কাশিমবাজার গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে গভীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। যাঁরা ধনকুবের, যেমন জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ তাঁরা নবাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মীর জাফর আলি খাঁও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সেই সঙ্গে আছেন নবাব আলিবর্দীর জ্যেষ্ঠ কন্যা ঘসেটি বেগম। ক্লাইভ বুঝতে পারলেন এর মধ্য থেকে ব্রিটিশদের অবাধ বাণিজ্যের জন্য প্রধান বাধা হচ্ছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। কিন্তু এই নবাবকে ধনকুবের এবং মন্ত্রিসভার অনেকেই গ্রহণ করছেন না। এই ষড়যন্ত্রে প্রায়ই যোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত নানা যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুর্শিদাবাদ কবজা করে ফেললেন ক্লাইভ।
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার পর মুর্শিদাবাদের কোষাগার তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলেন। ব্যাপক লুণ্ঠন চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ, সোনাদানা লুটপাট করে তিনি ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে কিছু ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হলেও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠে। এ অবস্থা থেকে তিনি দিল্লির স্বীকৃতিস্বরূপ সনদটি তাঁর ব্যক্তিগত নামে করিয়ে নেন। কোম্পানির শাসন ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করে। একের পর এক লুণ্ঠন করে ভারতবর্ষকে দরিদ্র করে ফেলে। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের প্রাচুর্য দিন দিন বাড়তেই থাকে। অর্থ, মূল্যবান সোনা, হীরা, জহরত, মণিমুক্তা এসব পাচার করে ইয়র্কশায়ারের ছিঁচকে মাস্তান ক্লাইভ ‘লর্ড’ উপাধিতে ভূষিত হন। সম্পদ পাচারের ক্ষেত্রে তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীকালে এমন শাসনব্যবস্থা চালু হয়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে সম্পদ পাচারে একটা বড় সুযোগ তৈরি করে নেয়। এক শ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানির শাসন চলে। এই শাসনকালে এ দেশের কাঁচামাল লুণ্ঠন করে ইংল্যান্ডে নতুন নতুন কারখানা চালু হয়। ভারতবর্ষের শাসনভার ইংল্যান্ডের সরকার গ্রহণ করলে এই সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া নানাভাবে আরও প্রসারিত হয়। এই লুটেরারা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে দরিদ্র রেখে দেশটাকে ধর্মের নামে দুই ভাগ করে সসম্মানে দেশে ফিরে যায়। বাংলার পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান নাম ধারণ করে নতুন এক উপনিবেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্যক্লিষ্ট এই পূর্ব বাংলা নানান আন্দোলন, সংগ্রাম এবং সবশেষে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে বিদায় করতে সক্ষম হয়।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ আবারও ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়। ক্লাইভের পথ ধরে কিছু দানব বাংলাদেশের সম্পদকে বিদেশে পাচারের একটা উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। রাজনৈতিক অনুমোদনে এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারের প্রবাহ অক্ষুণ্নই থেকে গেল। ক্লাইভ বিজিত ভারতবর্ষের সম্পদ নিজ দেশে নিয়ে গিয়েছিল আর ‘নব্য ক্লাইভরা’ নিজের দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করতে থাকে। এই পাচারে প্রথমে আবারও সেই ইংল্যান্ড এবং পরে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ সমৃদ্ধ হতে থাকে। শুধু সম্পদ নয়, মেধা পাচারেরও একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি হয়।
এই পাচারকারীরা নানা দিক থেকে প্রভাবশালী, তাই তাদের টিকির নাগাল পাওয়া রাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী সবাই একযোগে যুক্ত হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের মানি লন্ডারিংয়ের আইনকানুন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হলো না। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি—সবটা মিলিয়ে জনগণ এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে। বহু বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যাপারে প্রতিদিনই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বা কানাডায় কীভাবে বেগমপাড়াগুলো গড়ে উঠেছে, কীভাবে ইংল্যান্ডে বিশাল একটি অভিবাসী দল এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, কী প্রক্রিয়ায় সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ জমা হচ্ছে—এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। আজকের দিনে ডিজিটাল প্রযুক্তির কিছু কিছু দুর্বলতার কারণে সেগুলো ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কার কত অর্থ জমা হয়েছে, তারও হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এসবের তেমন কোনো প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না।
আজকাল মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা সন্তানসন্ততিদের এ দেশে পড়ালেখা করাতে চায় না। নানা কারণেই দেশটাকে নিরাপদ ভাবে না এবং বাসযোগ্যও মনে করে না। যে শিক্ষিত শ্রেণি ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক—সকল দেশের সেরা’ এ গানটি শুনতে শুনতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে, দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা প্রদান করে, তারাই ছেলেমেয়েকে ও লেভেল, এ লেভেল পড়িয়ে দ্রুত টাকা পাচার করে বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। এই ভর্তি করা শুধু শিক্ষার জন্য নয়, এমনটি ভাবাও যায় না যে তারা শিক্ষার পাট চুকিয়ে নিজ দেশে ফিরে আসবে। ওই অবৈধ অর্থ দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি কেনারও একটা ব্যবস্থা করে ফেলে। প্রায়ই শোনা যায়, অমুকের এতগুলো বাড়ি, তমুকের খামারবাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট অথবা কারও কারও আরও নানান ধরনের সম্পদ সেখানে কেনা হয়ে গেছে।
এ কথাও সত্যি, ওই সব দেশে অভিবাসন নিয়ে অনেকেই ওখানকার উপার্জিত অর্থে বড় ধরনের সম্পদের অধিকারী হয়েছে এবং সে দেশের সমাজে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সম্মান নিয়ে বসবাস করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ওই সব দেশে উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্বদেশে বিভিন্ন জায়গায় টাকা লগ্নি করছে। সেই লগ্নির পরিমাণ অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশের অদক্ষ শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থ পাঠানোর চেয়ে অনেক কম। দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারিভাবে যে অর্থ বরাদ্দ আছে তাতে কোনো সম্মানজনক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না; বরং শিক্ষা-বাণিজ্যে বিশাল বিশাল প্রাইভেট স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। সেখানেও একটাই বড় আকাঙ্ক্ষা, কোনো একটি পর্যায়ে তাদের সন্তানদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নিতে হবে।
বিদেশে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা কোনো অন্যায় কাজ নয়। একসময় মেধাবী ছাত্ররা এ দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তারা বিদেশের স্কলারশিপে পড়ালেখা করে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থও দেশে নিয়ে আসতে পারত। মেধাবী ছাত্রদের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা এখনো আছে। কিন্তু এখনকার সময়ে সেই মেধাবী ছাত্ররা আর দেশে ফিরে আসছে না। অবশ্য আমাদের দেশে মেধাকে সহ্য করার ক্ষমতাও অধিকাংশ বাঙালির নেই। যারা মেধাবী নয়, তাদেরও শক্তি এত বেশি যে একজন মেধাবী ও সৎ মানুষ এই সমাজে বিভিন্ন চাপে টিকতে পারে না। আমার জানামতে, দেশের সেবা করার জন্য অনেকেই ফিরে এসেছিল কিন্তু তারা এখানে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি। বেশ কিছুদিন কালক্ষেপণ করে আবার বিদেশে ফিরে গেছে।
ক্লাইভের প্রেতাত্মারা দেশটাকে দুর্নীতির একটা অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। আর এই দুর্নীতির উৎস কোনো উৎপাদনশীল খাত নয়, একেবারে শূন্যের ওপরে নির্ভর। নিয়োগ-বাণিজ্য, তদবির-বাণিজ্য, ঘুষ—এসবেই মুখ্যভাবে দুর্নীতির কাজটা হয়। এই লোকগুলোর মধ্যে বিন্দুমাত্র বিবেক নেই, এরা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করে, মরণাপন্ন মানুষকে নিয়ে দুর্নীতি করে, একেবারে অনুপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়ে দুর্নীতি করে। কালক্রমে দুর্নীতিটা এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে কোথাও টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির এই টাকাটা দেশে আসারও প্রয়োজন পড়ে না। মোটা কমিশনের টাকা বিদেশের ব্যাংকেই জমা হয়।
দেশে উন্নয়নের সমান্তরালে প্রচুর দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়ে থাকে। এক কিলোমিটার রাস্তা করতে গিয়ে দেশে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তা বিদেশি যেকোনো রাষ্ট্রের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এই উদ্বৃত্ত টাকাটিও কিন্তু ক্লাইভের প্রেতাত্মারা এ দেশে রাখে না। বর্তমানে যেসব সত্যিকারের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষ নিজ অর্থে বাজার করে (অধিকাংশ উচ্চবিত্ত লোকেরা নিজ অর্থে বাজার করে না) ক্ষুন্নি বৃত্তির জন্য, তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে হাহাকার উঠে গেছে। কারণ প্রতিদিনই ওই প্রেতাত্মারা জিনিসপাতির দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়েই যাচ্ছে। প্রতিকারহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর এসব নানা স্তরের ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আরও মহান মহান ক্লাইভ গড়ে তুলছে।
প্রসঙ্গত, একটি কথা বলে রাখি। এই শহরে একদা টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত, পরবর্তীকালে টাকায় তিন মণ চাল পাওয়া যেত ১৭৫৭ সালে। সেই ঢাকা শহরে ১৭৭৪ সালে টাকায় ছয় সের চাল পাওয়া যেত; যা ওই ছিঁচকে মাস্তান ক্লাইভেরই কল্যাণে। সেই সময়ে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় দুর্ভিক্ষে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। ক্লাইভের প্রেতাত্মারা কি দেশটাকে সেই দিকেই নিয়ে যাবে?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি হিসেবে। ভারতবর্ষে এসেই তিনি এক বিশাল রত্নভান্ডারের সন্ধান পান। কলকাতায় এসে সেখান থেকে কাশিমবাজার গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে গভীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। যাঁরা ধনকুবের, যেমন জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ তাঁরা নবাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মীর জাফর আলি খাঁও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সেই সঙ্গে আছেন নবাব আলিবর্দীর জ্যেষ্ঠ কন্যা ঘসেটি বেগম। ক্লাইভ বুঝতে পারলেন এর মধ্য থেকে ব্রিটিশদের অবাধ বাণিজ্যের জন্য প্রধান বাধা হচ্ছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। কিন্তু এই নবাবকে ধনকুবের এবং মন্ত্রিসভার অনেকেই গ্রহণ করছেন না। এই ষড়যন্ত্রে প্রায়ই যোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত নানা যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুর্শিদাবাদ কবজা করে ফেললেন ক্লাইভ।
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার পর মুর্শিদাবাদের কোষাগার তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলেন। ব্যাপক লুণ্ঠন চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ, সোনাদানা লুটপাট করে তিনি ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে কিছু ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হলেও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠে। এ অবস্থা থেকে তিনি দিল্লির স্বীকৃতিস্বরূপ সনদটি তাঁর ব্যক্তিগত নামে করিয়ে নেন। কোম্পানির শাসন ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করে। একের পর এক লুণ্ঠন করে ভারতবর্ষকে দরিদ্র করে ফেলে। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের প্রাচুর্য দিন দিন বাড়তেই থাকে। অর্থ, মূল্যবান সোনা, হীরা, জহরত, মণিমুক্তা এসব পাচার করে ইয়র্কশায়ারের ছিঁচকে মাস্তান ক্লাইভ ‘লর্ড’ উপাধিতে ভূষিত হন। সম্পদ পাচারের ক্ষেত্রে তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীকালে এমন শাসনব্যবস্থা চালু হয়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে সম্পদ পাচারে একটা বড় সুযোগ তৈরি করে নেয়। এক শ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানির শাসন চলে। এই শাসনকালে এ দেশের কাঁচামাল লুণ্ঠন করে ইংল্যান্ডে নতুন নতুন কারখানা চালু হয়। ভারতবর্ষের শাসনভার ইংল্যান্ডের সরকার গ্রহণ করলে এই সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া নানাভাবে আরও প্রসারিত হয়। এই লুটেরারা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে দরিদ্র রেখে দেশটাকে ধর্মের নামে দুই ভাগ করে সসম্মানে দেশে ফিরে যায়। বাংলার পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান নাম ধারণ করে নতুন এক উপনিবেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্যক্লিষ্ট এই পূর্ব বাংলা নানান আন্দোলন, সংগ্রাম এবং সবশেষে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে বিদায় করতে সক্ষম হয়।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ আবারও ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়। ক্লাইভের পথ ধরে কিছু দানব বাংলাদেশের সম্পদকে বিদেশে পাচারের একটা উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। রাজনৈতিক অনুমোদনে এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারের প্রবাহ অক্ষুণ্নই থেকে গেল। ক্লাইভ বিজিত ভারতবর্ষের সম্পদ নিজ দেশে নিয়ে গিয়েছিল আর ‘নব্য ক্লাইভরা’ নিজের দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করতে থাকে। এই পাচারে প্রথমে আবারও সেই ইংল্যান্ড এবং পরে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ সমৃদ্ধ হতে থাকে। শুধু সম্পদ নয়, মেধা পাচারেরও একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি হয়।
এই পাচারকারীরা নানা দিক থেকে প্রভাবশালী, তাই তাদের টিকির নাগাল পাওয়া রাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী সবাই একযোগে যুক্ত হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের মানি লন্ডারিংয়ের আইনকানুন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হলো না। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি—সবটা মিলিয়ে জনগণ এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে। বহু বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যাপারে প্রতিদিনই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বা কানাডায় কীভাবে বেগমপাড়াগুলো গড়ে উঠেছে, কীভাবে ইংল্যান্ডে বিশাল একটি অভিবাসী দল এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, কী প্রক্রিয়ায় সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ জমা হচ্ছে—এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। আজকের দিনে ডিজিটাল প্রযুক্তির কিছু কিছু দুর্বলতার কারণে সেগুলো ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কার কত অর্থ জমা হয়েছে, তারও হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এসবের তেমন কোনো প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না।
আজকাল মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা সন্তানসন্ততিদের এ দেশে পড়ালেখা করাতে চায় না। নানা কারণেই দেশটাকে নিরাপদ ভাবে না এবং বাসযোগ্যও মনে করে না। যে শিক্ষিত শ্রেণি ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক—সকল দেশের সেরা’ এ গানটি শুনতে শুনতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে, দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা প্রদান করে, তারাই ছেলেমেয়েকে ও লেভেল, এ লেভেল পড়িয়ে দ্রুত টাকা পাচার করে বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। এই ভর্তি করা শুধু শিক্ষার জন্য নয়, এমনটি ভাবাও যায় না যে তারা শিক্ষার পাট চুকিয়ে নিজ দেশে ফিরে আসবে। ওই অবৈধ অর্থ দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি কেনারও একটা ব্যবস্থা করে ফেলে। প্রায়ই শোনা যায়, অমুকের এতগুলো বাড়ি, তমুকের খামারবাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট অথবা কারও কারও আরও নানান ধরনের সম্পদ সেখানে কেনা হয়ে গেছে।
এ কথাও সত্যি, ওই সব দেশে অভিবাসন নিয়ে অনেকেই ওখানকার উপার্জিত অর্থে বড় ধরনের সম্পদের অধিকারী হয়েছে এবং সে দেশের সমাজে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সম্মান নিয়ে বসবাস করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ওই সব দেশে উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্বদেশে বিভিন্ন জায়গায় টাকা লগ্নি করছে। সেই লগ্নির পরিমাণ অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশের অদক্ষ শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থ পাঠানোর চেয়ে অনেক কম। দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারিভাবে যে অর্থ বরাদ্দ আছে তাতে কোনো সম্মানজনক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না; বরং শিক্ষা-বাণিজ্যে বিশাল বিশাল প্রাইভেট স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। সেখানেও একটাই বড় আকাঙ্ক্ষা, কোনো একটি পর্যায়ে তাদের সন্তানদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নিতে হবে।
বিদেশে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা কোনো অন্যায় কাজ নয়। একসময় মেধাবী ছাত্ররা এ দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তারা বিদেশের স্কলারশিপে পড়ালেখা করে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থও দেশে নিয়ে আসতে পারত। মেধাবী ছাত্রদের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা এখনো আছে। কিন্তু এখনকার সময়ে সেই মেধাবী ছাত্ররা আর দেশে ফিরে আসছে না। অবশ্য আমাদের দেশে মেধাকে সহ্য করার ক্ষমতাও অধিকাংশ বাঙালির নেই। যারা মেধাবী নয়, তাদেরও শক্তি এত বেশি যে একজন মেধাবী ও সৎ মানুষ এই সমাজে বিভিন্ন চাপে টিকতে পারে না। আমার জানামতে, দেশের সেবা করার জন্য অনেকেই ফিরে এসেছিল কিন্তু তারা এখানে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি। বেশ কিছুদিন কালক্ষেপণ করে আবার বিদেশে ফিরে গেছে।
ক্লাইভের প্রেতাত্মারা দেশটাকে দুর্নীতির একটা অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। আর এই দুর্নীতির উৎস কোনো উৎপাদনশীল খাত নয়, একেবারে শূন্যের ওপরে নির্ভর। নিয়োগ-বাণিজ্য, তদবির-বাণিজ্য, ঘুষ—এসবেই মুখ্যভাবে দুর্নীতির কাজটা হয়। এই লোকগুলোর মধ্যে বিন্দুমাত্র বিবেক নেই, এরা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করে, মরণাপন্ন মানুষকে নিয়ে দুর্নীতি করে, একেবারে অনুপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়ে দুর্নীতি করে। কালক্রমে দুর্নীতিটা এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে কোথাও টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির এই টাকাটা দেশে আসারও প্রয়োজন পড়ে না। মোটা কমিশনের টাকা বিদেশের ব্যাংকেই জমা হয়।
দেশে উন্নয়নের সমান্তরালে প্রচুর দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়ে থাকে। এক কিলোমিটার রাস্তা করতে গিয়ে দেশে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তা বিদেশি যেকোনো রাষ্ট্রের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এই উদ্বৃত্ত টাকাটিও কিন্তু ক্লাইভের প্রেতাত্মারা এ দেশে রাখে না। বর্তমানে যেসব সত্যিকারের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষ নিজ অর্থে বাজার করে (অধিকাংশ উচ্চবিত্ত লোকেরা নিজ অর্থে বাজার করে না) ক্ষুন্নি বৃত্তির জন্য, তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে হাহাকার উঠে গেছে। কারণ প্রতিদিনই ওই প্রেতাত্মারা জিনিসপাতির দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়েই যাচ্ছে। প্রতিকারহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর এসব নানা স্তরের ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আরও মহান মহান ক্লাইভ গড়ে তুলছে।
প্রসঙ্গত, একটি কথা বলে রাখি। এই শহরে একদা টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত, পরবর্তীকালে টাকায় তিন মণ চাল পাওয়া যেত ১৭৫৭ সালে। সেই ঢাকা শহরে ১৭৭৪ সালে টাকায় ছয় সের চাল পাওয়া যেত; যা ওই ছিঁচকে মাস্তান ক্লাইভেরই কল্যাণে। সেই সময়ে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় দুর্ভিক্ষে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। ক্লাইভের প্রেতাত্মারা কি দেশটাকে সেই দিকেই নিয়ে যাবে?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি হিসেবে। ভারতবর্ষে এসেই তিনি এক বিশাল রত্নভান্ডারের সন্ধান পান। কলকাতায় এসে সেখান থেকে কাশিমবাজার গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে গভীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। যাঁরা ধনকুবের, যেমন জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ তাঁরা নবাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মীর জাফর আলি খাঁও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সেই সঙ্গে আছেন নবাব আলিবর্দীর জ্যেষ্ঠ কন্যা ঘসেটি বেগম। ক্লাইভ বুঝতে পারলেন এর মধ্য থেকে ব্রিটিশদের অবাধ বাণিজ্যের জন্য প্রধান বাধা হচ্ছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। কিন্তু এই নবাবকে ধনকুবের এবং মন্ত্রিসভার অনেকেই গ্রহণ করছেন না। এই ষড়যন্ত্রে প্রায়ই যোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত নানা যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুর্শিদাবাদ কবজা করে ফেললেন ক্লাইভ।
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার পর মুর্শিদাবাদের কোষাগার তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলেন। ব্যাপক লুণ্ঠন চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ, সোনাদানা লুটপাট করে তিনি ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে কিছু ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হলেও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠে। এ অবস্থা থেকে তিনি দিল্লির স্বীকৃতিস্বরূপ সনদটি তাঁর ব্যক্তিগত নামে করিয়ে নেন। কোম্পানির শাসন ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করে। একের পর এক লুণ্ঠন করে ভারতবর্ষকে দরিদ্র করে ফেলে। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের প্রাচুর্য দিন দিন বাড়তেই থাকে। অর্থ, মূল্যবান সোনা, হীরা, জহরত, মণিমুক্তা এসব পাচার করে ইয়র্কশায়ারের ছিঁচকে মাস্তান ক্লাইভ ‘লর্ড’ উপাধিতে ভূষিত হন। সম্পদ পাচারের ক্ষেত্রে তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীকালে এমন শাসনব্যবস্থা চালু হয়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে সম্পদ পাচারে একটা বড় সুযোগ তৈরি করে নেয়। এক শ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানির শাসন চলে। এই শাসনকালে এ দেশের কাঁচামাল লুণ্ঠন করে ইংল্যান্ডে নতুন নতুন কারখানা চালু হয়। ভারতবর্ষের শাসনভার ইংল্যান্ডের সরকার গ্রহণ করলে এই সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া নানাভাবে আরও প্রসারিত হয়। এই লুটেরারা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে দরিদ্র রেখে দেশটাকে ধর্মের নামে দুই ভাগ করে সসম্মানে দেশে ফিরে যায়। বাংলার পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান নাম ধারণ করে নতুন এক উপনিবেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্যক্লিষ্ট এই পূর্ব বাংলা নানান আন্দোলন, সংগ্রাম এবং সবশেষে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে বিদায় করতে সক্ষম হয়।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ আবারও ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়। ক্লাইভের পথ ধরে কিছু দানব বাংলাদেশের সম্পদকে বিদেশে পাচারের একটা উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। রাজনৈতিক অনুমোদনে এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারের প্রবাহ অক্ষুণ্নই থেকে গেল। ক্লাইভ বিজিত ভারতবর্ষের সম্পদ নিজ দেশে নিয়ে গিয়েছিল আর ‘নব্য ক্লাইভরা’ নিজের দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করতে থাকে। এই পাচারে প্রথমে আবারও সেই ইংল্যান্ড এবং পরে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ সমৃদ্ধ হতে থাকে। শুধু সম্পদ নয়, মেধা পাচারেরও একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি হয়।
এই পাচারকারীরা নানা দিক থেকে প্রভাবশালী, তাই তাদের টিকির নাগাল পাওয়া রাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী সবাই একযোগে যুক্ত হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের মানি লন্ডারিংয়ের আইনকানুন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হলো না। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি—সবটা মিলিয়ে জনগণ এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে। বহু বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যাপারে প্রতিদিনই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বা কানাডায় কীভাবে বেগমপাড়াগুলো গড়ে উঠেছে, কীভাবে ইংল্যান্ডে বিশাল একটি অভিবাসী দল এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, কী প্রক্রিয়ায় সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ জমা হচ্ছে—এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। আজকের দিনে ডিজিটাল প্রযুক্তির কিছু কিছু দুর্বলতার কারণে সেগুলো ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কার কত অর্থ জমা হয়েছে, তারও হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এসবের তেমন কোনো প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না।
আজকাল মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা সন্তানসন্ততিদের এ দেশে পড়ালেখা করাতে চায় না। নানা কারণেই দেশটাকে নিরাপদ ভাবে না এবং বাসযোগ্যও মনে করে না। যে শিক্ষিত শ্রেণি ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক—সকল দেশের সেরা’ এ গানটি শুনতে শুনতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে, দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা প্রদান করে, তারাই ছেলেমেয়েকে ও লেভেল, এ লেভেল পড়িয়ে দ্রুত টাকা পাচার করে বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। এই ভর্তি করা শুধু শিক্ষার জন্য নয়, এমনটি ভাবাও যায় না যে তারা শিক্ষার পাট চুকিয়ে নিজ দেশে ফিরে আসবে। ওই অবৈধ অর্থ দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি কেনারও একটা ব্যবস্থা করে ফেলে। প্রায়ই শোনা যায়, অমুকের এতগুলো বাড়ি, তমুকের খামারবাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট অথবা কারও কারও আরও নানান ধরনের সম্পদ সেখানে কেনা হয়ে গেছে।
এ কথাও সত্যি, ওই সব দেশে অভিবাসন নিয়ে অনেকেই ওখানকার উপার্জিত অর্থে বড় ধরনের সম্পদের অধিকারী হয়েছে এবং সে দেশের সমাজে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সম্মান নিয়ে বসবাস করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ওই সব দেশে উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্বদেশে বিভিন্ন জায়গায় টাকা লগ্নি করছে। সেই লগ্নির পরিমাণ অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশের অদক্ষ শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থ পাঠানোর চেয়ে অনেক কম। দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারিভাবে যে অর্থ বরাদ্দ আছে তাতে কোনো সম্মানজনক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না; বরং শিক্ষা-বাণিজ্যে বিশাল বিশাল প্রাইভেট স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। সেখানেও একটাই বড় আকাঙ্ক্ষা, কোনো একটি পর্যায়ে তাদের সন্তানদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নিতে হবে।
বিদেশে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা কোনো অন্যায় কাজ নয়। একসময় মেধাবী ছাত্ররা এ দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তারা বিদেশের স্কলারশিপে পড়ালেখা করে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থও দেশে নিয়ে আসতে পারত। মেধাবী ছাত্রদের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা এখনো আছে। কিন্তু এখনকার সময়ে সেই মেধাবী ছাত্ররা আর দেশে ফিরে আসছে না। অবশ্য আমাদের দেশে মেধাকে সহ্য করার ক্ষমতাও অধিকাংশ বাঙালির নেই। যারা মেধাবী নয়, তাদেরও শক্তি এত বেশি যে একজন মেধাবী ও সৎ মানুষ এই সমাজে বিভিন্ন চাপে টিকতে পারে না। আমার জানামতে, দেশের সেবা করার জন্য অনেকেই ফিরে এসেছিল কিন্তু তারা এখানে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি। বেশ কিছুদিন কালক্ষেপণ করে আবার বিদেশে ফিরে গেছে।
ক্লাইভের প্রেতাত্মারা দেশটাকে দুর্নীতির একটা অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। আর এই দুর্নীতির উৎস কোনো উৎপাদনশীল খাত নয়, একেবারে শূন্যের ওপরে নির্ভর। নিয়োগ-বাণিজ্য, তদবির-বাণিজ্য, ঘুষ—এসবেই মুখ্যভাবে দুর্নীতির কাজটা হয়। এই লোকগুলোর মধ্যে বিন্দুমাত্র বিবেক নেই, এরা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করে, মরণাপন্ন মানুষকে নিয়ে দুর্নীতি করে, একেবারে অনুপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়ে দুর্নীতি করে। কালক্রমে দুর্নীতিটা এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে কোথাও টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির এই টাকাটা দেশে আসারও প্রয়োজন পড়ে না। মোটা কমিশনের টাকা বিদেশের ব্যাংকেই জমা হয়।
দেশে উন্নয়নের সমান্তরালে প্রচুর দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়ে থাকে। এক কিলোমিটার রাস্তা করতে গিয়ে দেশে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তা বিদেশি যেকোনো রাষ্ট্রের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এই উদ্বৃত্ত টাকাটিও কিন্তু ক্লাইভের প্রেতাত্মারা এ দেশে রাখে না। বর্তমানে যেসব সত্যিকারের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষ নিজ অর্থে বাজার করে (অধিকাংশ উচ্চবিত্ত লোকেরা নিজ অর্থে বাজার করে না) ক্ষুন্নি বৃত্তির জন্য, তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে হাহাকার উঠে গেছে। কারণ প্রতিদিনই ওই প্রেতাত্মারা জিনিসপাতির দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়েই যাচ্ছে। প্রতিকারহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর এসব নানা স্তরের ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আরও মহান মহান ক্লাইভ গড়ে তুলছে।
প্রসঙ্গত, একটি কথা বলে রাখি। এই শহরে একদা টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত, পরবর্তীকালে টাকায় তিন মণ চাল পাওয়া যেত ১৭৫৭ সালে। সেই ঢাকা শহরে ১৭৭৪ সালে টাকায় ছয় সের চাল পাওয়া যেত; যা ওই ছিঁচকে মাস্তান ক্লাইভেরই কল্যাণে। সেই সময়ে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় দুর্ভিক্ষে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। ক্লাইভের প্রেতাত্মারা কি দেশটাকে সেই দিকেই নিয়ে যাবে?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি হিসেবে। ভারতবর্ষে এসেই তিনি এক বিশাল রত্নভান্ডারের সন্ধান পান। কলকাতায় এসে সেখান থেকে কাশিমবাজার গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে গভীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। যাঁরা ধনকুবের, যেমন জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ তাঁরা নবাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মীর জাফর আলি খাঁও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সেই সঙ্গে আছেন নবাব আলিবর্দীর জ্যেষ্ঠ কন্যা ঘসেটি বেগম। ক্লাইভ বুঝতে পারলেন এর মধ্য থেকে ব্রিটিশদের অবাধ বাণিজ্যের জন্য প্রধান বাধা হচ্ছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। কিন্তু এই নবাবকে ধনকুবের এবং মন্ত্রিসভার অনেকেই গ্রহণ করছেন না। এই ষড়যন্ত্রে প্রায়ই যোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত নানা যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুর্শিদাবাদ কবজা করে ফেললেন ক্লাইভ।
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার পর মুর্শিদাবাদের কোষাগার তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলেন। ব্যাপক লুণ্ঠন চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ, সোনাদানা লুটপাট করে তিনি ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে কিছু ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হলেও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠে। এ অবস্থা থেকে তিনি দিল্লির স্বীকৃতিস্বরূপ সনদটি তাঁর ব্যক্তিগত নামে করিয়ে নেন। কোম্পানির শাসন ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করে। একের পর এক লুণ্ঠন করে ভারতবর্ষকে দরিদ্র করে ফেলে। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের প্রাচুর্য দিন দিন বাড়তেই থাকে। অর্থ, মূল্যবান সোনা, হীরা, জহরত, মণিমুক্তা এসব পাচার করে ইয়র্কশায়ারের ছিঁচকে মাস্তান ক্লাইভ ‘লর্ড’ উপাধিতে ভূষিত হন। সম্পদ পাচারের ক্ষেত্রে তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীকালে এমন শাসনব্যবস্থা চালু হয়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে সম্পদ পাচারে একটা বড় সুযোগ তৈরি করে নেয়। এক শ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানির শাসন চলে। এই শাসনকালে এ দেশের কাঁচামাল লুণ্ঠন করে ইংল্যান্ডে নতুন নতুন কারখানা চালু হয়। ভারতবর্ষের শাসনভার ইংল্যান্ডের সরকার গ্রহণ করলে এই সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া নানাভাবে আরও প্রসারিত হয়। এই লুটেরারা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে দরিদ্র রেখে দেশটাকে ধর্মের নামে দুই ভাগ করে সসম্মানে দেশে ফিরে যায়। বাংলার পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান নাম ধারণ করে নতুন এক উপনিবেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্যক্লিষ্ট এই পূর্ব বাংলা নানান আন্দোলন, সংগ্রাম এবং সবশেষে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে বিদায় করতে সক্ষম হয়।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ আবারও ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়। ক্লাইভের পথ ধরে কিছু দানব বাংলাদেশের সম্পদকে বিদেশে পাচারের একটা উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। রাজনৈতিক অনুমোদনে এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারের প্রবাহ অক্ষুণ্নই থেকে গেল। ক্লাইভ বিজিত ভারতবর্ষের সম্পদ নিজ দেশে নিয়ে গিয়েছিল আর ‘নব্য ক্লাইভরা’ নিজের দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করতে থাকে। এই পাচারে প্রথমে আবারও সেই ইংল্যান্ড এবং পরে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ সমৃদ্ধ হতে থাকে। শুধু সম্পদ নয়, মেধা পাচারেরও একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি হয়।
এই পাচারকারীরা নানা দিক থেকে প্রভাবশালী, তাই তাদের টিকির নাগাল পাওয়া রাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী সবাই একযোগে যুক্ত হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের মানি লন্ডারিংয়ের আইনকানুন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হলো না। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি—সবটা মিলিয়ে জনগণ এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে। বহু বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যাপারে প্রতিদিনই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বা কানাডায় কীভাবে বেগমপাড়াগুলো গড়ে উঠেছে, কীভাবে ইংল্যান্ডে বিশাল একটি অভিবাসী দল এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, কী প্রক্রিয়ায় সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ জমা হচ্ছে—এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। আজকের দিনে ডিজিটাল প্রযুক্তির কিছু কিছু দুর্বলতার কারণে সেগুলো ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কার কত অর্থ জমা হয়েছে, তারও হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এসবের তেমন কোনো প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না।
আজকাল মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা সন্তানসন্ততিদের এ দেশে পড়ালেখা করাতে চায় না। নানা কারণেই দেশটাকে নিরাপদ ভাবে না এবং বাসযোগ্যও মনে করে না। যে শিক্ষিত শ্রেণি ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক—সকল দেশের সেরা’ এ গানটি শুনতে শুনতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে, দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা প্রদান করে, তারাই ছেলেমেয়েকে ও লেভেল, এ লেভেল পড়িয়ে দ্রুত টাকা পাচার করে বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। এই ভর্তি করা শুধু শিক্ষার জন্য নয়, এমনটি ভাবাও যায় না যে তারা শিক্ষার পাট চুকিয়ে নিজ দেশে ফিরে আসবে। ওই অবৈধ অর্থ দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি কেনারও একটা ব্যবস্থা করে ফেলে। প্রায়ই শোনা যায়, অমুকের এতগুলো বাড়ি, তমুকের খামারবাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট অথবা কারও কারও আরও নানান ধরনের সম্পদ সেখানে কেনা হয়ে গেছে।
এ কথাও সত্যি, ওই সব দেশে অভিবাসন নিয়ে অনেকেই ওখানকার উপার্জিত অর্থে বড় ধরনের সম্পদের অধিকারী হয়েছে এবং সে দেশের সমাজে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সম্মান নিয়ে বসবাস করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ওই সব দেশে উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্বদেশে বিভিন্ন জায়গায় টাকা লগ্নি করছে। সেই লগ্নির পরিমাণ অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশের অদক্ষ শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থ পাঠানোর চেয়ে অনেক কম। দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারিভাবে যে অর্থ বরাদ্দ আছে তাতে কোনো সম্মানজনক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না; বরং শিক্ষা-বাণিজ্যে বিশাল বিশাল প্রাইভেট স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। সেখানেও একটাই বড় আকাঙ্ক্ষা, কোনো একটি পর্যায়ে তাদের সন্তানদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নিতে হবে।
বিদেশে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা কোনো অন্যায় কাজ নয়। একসময় মেধাবী ছাত্ররা এ দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তারা বিদেশের স্কলারশিপে পড়ালেখা করে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থও দেশে নিয়ে আসতে পারত। মেধাবী ছাত্রদের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা এখনো আছে। কিন্তু এখনকার সময়ে সেই মেধাবী ছাত্ররা আর দেশে ফিরে আসছে না। অবশ্য আমাদের দেশে মেধাকে সহ্য করার ক্ষমতাও অধিকাংশ বাঙালির নেই। যারা মেধাবী নয়, তাদেরও শক্তি এত বেশি যে একজন মেধাবী ও সৎ মানুষ এই সমাজে বিভিন্ন চাপে টিকতে পারে না। আমার জানামতে, দেশের সেবা করার জন্য অনেকেই ফিরে এসেছিল কিন্তু তারা এখানে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি। বেশ কিছুদিন কালক্ষেপণ করে আবার বিদেশে ফিরে গেছে।
ক্লাইভের প্রেতাত্মারা দেশটাকে দুর্নীতির একটা অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। আর এই দুর্নীতির উৎস কোনো উৎপাদনশীল খাত নয়, একেবারে শূন্যের ওপরে নির্ভর। নিয়োগ-বাণিজ্য, তদবির-বাণিজ্য, ঘুষ—এসবেই মুখ্যভাবে দুর্নীতির কাজটা হয়। এই লোকগুলোর মধ্যে বিন্দুমাত্র বিবেক নেই, এরা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করে, মরণাপন্ন মানুষকে নিয়ে দুর্নীতি করে, একেবারে অনুপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়ে দুর্নীতি করে। কালক্রমে দুর্নীতিটা এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে কোথাও টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির এই টাকাটা দেশে আসারও প্রয়োজন পড়ে না। মোটা কমিশনের টাকা বিদেশের ব্যাংকেই জমা হয়।
দেশে উন্নয়নের সমান্তরালে প্রচুর দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়ে থাকে। এক কিলোমিটার রাস্তা করতে গিয়ে দেশে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তা বিদেশি যেকোনো রাষ্ট্রের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এই উদ্বৃত্ত টাকাটিও কিন্তু ক্লাইভের প্রেতাত্মারা এ দেশে রাখে না। বর্তমানে যেসব সত্যিকারের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষ নিজ অর্থে বাজার করে (অধিকাংশ উচ্চবিত্ত লোকেরা নিজ অর্থে বাজার করে না) ক্ষুন্নি বৃত্তির জন্য, তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে হাহাকার উঠে গেছে। কারণ প্রতিদিনই ওই প্রেতাত্মারা জিনিসপাতির দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়েই যাচ্ছে। প্রতিকারহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর এসব নানা স্তরের ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আরও মহান মহান ক্লাইভ গড়ে তুলছে।
প্রসঙ্গত, একটি কথা বলে রাখি। এই শহরে একদা টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত, পরবর্তীকালে টাকায় তিন মণ চাল পাওয়া যেত ১৭৫৭ সালে। সেই ঢাকা শহরে ১৭৭৪ সালে টাকায় ছয় সের চাল পাওয়া যেত; যা ওই ছিঁচকে মাস্তান ক্লাইভেরই কল্যাণে। সেই সময়ে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় দুর্ভিক্ষে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। ক্লাইভের প্রেতাত্মারা কি দেশটাকে সেই দিকেই নিয়ে যাবে?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি হিসেবে। ভারতবর্ষে এসেই তিনি এক বিশাল রত্নভান্ডারের সন্ধান পান। কলকাতায় এসে সেখান থেকে কাশিমবাজার গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে গভীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। যাঁরা ধনকুবের, যেমন জগৎ
১৯ অক্টোবর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি হিসেবে। ভারতবর্ষে এসেই তিনি এক বিশাল রত্নভান্ডারের সন্ধান পান। কলকাতায় এসে সেখান থেকে কাশিমবাজার গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে গভীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। যাঁরা ধনকুবের, যেমন জগৎ
১৯ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি হিসেবে। ভারতবর্ষে এসেই তিনি এক বিশাল রত্নভান্ডারের সন্ধান পান। কলকাতায় এসে সেখান থেকে কাশিমবাজার গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে গভীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। যাঁরা ধনকুবের, যেমন জগৎ
১৯ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি হিসেবে। ভারতবর্ষে এসেই তিনি এক বিশাল রত্নভান্ডারের সন্ধান পান। কলকাতায় এসে সেখান থেকে কাশিমবাজার গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে গভীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। যাঁরা ধনকুবের, যেমন জগৎ
১৯ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫