Ajker Patrika

মাসুদ রানা নিয়ে দ্বিতীয় সিনেমার কাজও শুরু হয়ে গেছে

আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০৭: ৪৮
মাসুদ রানা নিয়ে দ্বিতীয় সিনেমার কাজও শুরু হয়ে গেছে

২৫ আগস্ট বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘এম আর-নাইন: ডু অর ডাই’। কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা মাসুদ রানা সিরিজের ধ্বংস পাহাড় অবলম্বনে নির্মিত সিনেমায় মাসুদ রানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অভিনেতা এ বি এম সুমন। সিনেমা ও ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সুমন এবং সিনেমার অন্যতম অভিনেত্রী জেসিয়া ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এস রানা

সুমন তো ব্যারিস্টার হতে চেয়েছিলেন, আর জেসিয়া মডেল। সিনেমায় এলেন কীভাবে?
সুমন: অস্ট্রেলিয়া থেকে যখন দেশে আসি, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কখনোই চাকরি করব না। আমার কাছের কয়েকজন পরামর্শ দিলেন, মডেলিং করো, মিডিয়ায় কাজ করো। এভাবেই শুরু। আমি মডেলিং করতাম। একসময় সিদ্ধান্ত নিই, ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় কাজ করব। একটা টেলিফিল্ম করি আর ১০ পর্বের একটি ধারাবাহিক করি। এর মাঝখানেই সিনেমার প্রস্তাব আসে।
জেসিয়া: মডেলিং করতে করতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সিনেমা করব। যখন অফার আসে, ইয়েস বলে দিই।

পরিবার থেকে সাপোর্ট কেমন পেয়েছিলেন?
সুমন: পরিবারে আমিই একমাত্র মিডিয়ায় কাজ করি। পরিবারের কেউই আমার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। একমাত্র যখন পড়ালেখা করতে চাইনি, তখন বাবা বাধা দিয়েছিলেন।

পড়ালেখা করতে চাননি মানে?
সুমন: ইচ্ছা ছিল ব্যারিস্টার হব। কিন্তু যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে চান্স পেলাম না; বাবাকে বললাম, বাবা, আমি ব্যারিস্টার হতে পারব না, আমি আর পড়তে চাই না। বাবার সাফ কথা, তোমাকে পড়তে হবে। অগত্যা পছন্দ না হলেও কমার্স নিয়েই পড়তে হলো, একসময় আমি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাই।

পরিবার থেকে কে বেশি সাপোর্ট দিলেন?
সুমন: মা আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্টার। কাজের অনুপ্রেরণাটা আমি তাঁর কাছ থেকে বেশি পাই। আর বাবা তো বাবাই, কখনো মুখে বলেন না, কিন্তু বুকের ভেতর ইমোশনটা চেপে রাখেন। আমার ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমা রিলিজের পর ঠিকই অফিস কলিগদের দলেবলে সিনেমা দেখিয়েছেন। বড় বোন, বোনের হাজব্যান্ড—সবাই সাপোর্ট দিয়েছেন।
জেসিয়া: আমি একটা কনজারভেটিভ ফ্যামিলি থেকে এসেছি। তাই শুরুর দিকে ফ্যামিলি সাপোর্ট অতটা পাইনি। এখন সবাই অনেক সাপোর্ট করছেন।

ইন্ডাস্ট্রির কার অভিনয় ভালো লাগে? কার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, আমিও সিনেমা করব?
সুমন: অ্যাকশন ভালো লাগে। তাই আমার প্রিয় মান্না ভাই। জাফর ইকবাল, সোহেল রানার মতো অভিনেতাদের দেখেও আমি ভীষণ অনুপ্রাণিত। এ ছাড়া রোমান্টিক হিরোদের মাঝে সালমান শাহ ছিলেন, এখন শাকিব খান আছেন।
জেসিয়া: নায়িকা শাবনূর আমার সব সময়ের প্রিয়।

অল্প কথায় নিজেদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে বলুন। 
সুমন: মডেলিং থেকে সিনেমায় এসেছি। অভিনয় করেছি ‘অচেনা হৃদয়’, ‘রুদ্র দ্য গ্যাংস্টার’, ‘আদি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘দাহকাল’, ‘ভ্রমর’, ‘হৃদিতা’, ‘অন্তর্জাল’ ও ‘এম আর-নাইন’ সিনেমায়।
জেসিয়া: ২০১৭ সালে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হই। মডেলিং করেছি বেশ কিছুদিন। এরপর কয়েকটা টেলিফিল্ম করে কিছুদিন ব্রেক নিয়েছি। এখন এম আর-নাইন দিয়ে সিনেমা শুরু করলাম।

মাসুদ রানা হয়ে ওঠার জন্য সুমনের প্রস্তুতি কেমন ছিল?
সুমন: আমরা ফাইট প্র্যাকটিস করেছি টানা তিন বছর। এরই মাঝে অ্যাকটিং ক্লাস করতাম। নিজের মাঝে মাসুদ রানাকে ধরে রাখার চেষ্টা করতাম সব সময়। চরিত্রটাকে তো অনেক আগে থেকেই চিনি। মাসুদ রানা যেসব কাজ করে বা যেভাবে চলে, কথা বলে, সেভাবেই চেষ্টা করতাম।

এই সিনেমা চলাকালে নতুন কোনো সিনেমার কাজ করেননি শুনেছি, এটা কি চরিত্রটাকে ধরে রাখার জন্য?
সুমন: অবশ্যই। এটা আমার স্বপ্নের চরিত্র। শুটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর মাঝেই থাকার চেষ্টা করেছি।
জেসিয়া: আমি দীর্ঘদিন মার্শাল আর্ট শিখেছি, অ্যাকটিং শিখেছি। রুপা চরিত্রটার মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি দিনের পর দিন। 

পরিচালক আসিফ আকবরের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
সুমন: তিনি অসাধারণ একজন মানুষ। কাজের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। তাঁর সঙ্গে আরও কাজ করতে চাই। 
জেসিয়া: নির্মাতা হিসেবে তাঁকে অসাধারণ মনে হয়েছে।

সোহেল রানাও মাসুদ রানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর কাছ থেকে কোনো পরামর্শ নিয়েছেন কি না।
সুমন: দুর্ভাগ্যবশত, সিনেমাটি করার আগে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। তা ছাড়া চরিত্রটাকে আমি নিজের মতো করেই ধারণের চেষ্টা করেছি। মাঝখানে কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম দেখা করার। কিন্তু উনি অসুস্থ থাকায় সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি, তাঁর সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিয়েছি।
 
যেভাবে মাসুদ রানাকে কল্পনা করতেন, তেমনটা হয়ে উঠতে পেরেছেন?
সুমন: এই জাজমেন্টটা দর্শক করবেন। তবে একটা ছোট্ট ঘটনা বলতে চাই, অডিশনের সময় যখন কাজীদার (কাজী আনোয়ার হোসেন) কাছে ছবি গেল। অনেক ছবির মাঝখানে কাজীদা আমার ছবিটা তুলে ধরে বললেন, এই যে আমার মাসুদ রানা। আমি কাজীদার বিশ্বাসের জায়গাটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।

সিনেমায় হলিউড-বলিউড অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করলেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সুমন: শিল্পী হিসেবে তাঁরা অসাধারণ! মনে আছে, আমি ৩৬ ঘণ্টা ফ্লাই করে যুক্তরাষ্ট্রে শুটিংয়ে গেলাম। সেটে গিয়ে দেখি, মাইকেল জেই হোয়াইট দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে দেখে মূর্তির মতো হয়ে গেলাম। প্রিয় মানুষকে দেখলে আমার এমন হয়। পরিচালক আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে বললাম, আমি পারব না। পরে তিনি জেইকে গিয়ে বললেন, আমাদের এম আর-নাইন দাঁড়িয়ে আছে, তোমার সামনে আসার সাহস পাচ্ছে না। জেই নিজে এসে আমার সঙ্গে পরিচিত হলেন, গল্প করলেন। একেবারেই যেন মাটির মানুষ। আর অমি বৈদ্যর কথা কী বলব, ও যে কী চমৎকার মানুষ, অসাধারণ এক অভিনেতা!

জেসিয়া: আমি বাংলাদেশ অংশের কাজ করেছি। তাই তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কাজ হয়নি, তবে যতটা দেখেছি, শুনেছি, মুগ্ধ হয়েছি। 

আমাদের শিল্পীদের সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য কোথায়?
সুমন: শিল্পের জায়গায় সবাই সমান। তাঁরাও আর্টিস্ট, আমরাও আর্টিস্ট। কিন্তু প্রোডাকশনের জায়গা থেকে যদি বলেন, তাহলে টেকনোলজিক্যালি তাঁরা অনেক এগিয়ে। সেদিক থেকে চাইলেও আমরা তাঁদের সমান সুযোগ পাই না, তাঁদের সমান হতে পারি না। তবে আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, বেশি দিন লাগবে না তাঁদের সমানে সমান কাজ করতে।

আমাদের অনেক শিল্পীই নাকি কলটাইমই মেনটেইন করেন না। ১০টার কলে বেলা ৩টায় আসেন এমনও শোনা যায়। তাঁদেরও কি এমন হয়?
সুমন: আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন। এমন ঘটনার মুখে পড়তে হয়নি কখনো। সিনেমার আর্টিস্টরা অন টাইমেই সেটে আসেন। আমি যদি সারা দিন বসে থেকেও শট না দিই, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে না হয়, তাতে কিছুই যায় আসে না। আমরা সেটে সময় দেওয়ার জন্যই পেইড হই। ক্যামেরার সামনে কতক্ষণ দাঁড়াতে হয় বলুন, অথচ সময় কিন্তু দিতে হয় অনেক।

৮৩ কোটি টাকার বাজেটের সিনেমাটি দিয়ে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসার কথা বলেছেন প্রযোজক। এটা কীভাবে সম্ভব হবে? সেভাবে প্রচার বা প্রস্তুতি কি নেওয়া হয়েছে?
সুমন: সংখ্যাটা আসলে ফরেন রেভিনিউ-নির্ভর। দেশ থেকে এত টাকা আসবে না। হলিউডের দিকে তাকালে দেখবেন, সিনেমা তৈরির পর ওটা নিয়ে আমাদের দেশের মতো প্রচার চলে না। পরিকল্পনামতো কিছু কনটেন্ট বানিয়ে সেটা অনলাইনে বা মিডিয়ায় ছাড়া হয়, সিনেমাটা সম্পর্কে মানুষকে জানানো হয়। বেস্ট ওয়ে কিন্তু মুখ থেকে মুখে। সিনেমা ভালো হলে মানুষের মুখে মুখেই প্রচার ছড়িয়ে যাবে।
জেসিয়া: আমরা সংবাদপত্র, টিভি বা গণমাধ্যমগুলোতে সময় দিচ্ছি। যাদের মাধ্যমে সিনেমার সব ধরনের খবর মানুষ পেয়ে যাবেন।

কয়েকটা পয়েন্ট বলুন, যে কারণে সিনেমাটি দর্শকদের জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
সুমন: স্পাই এজেন্ট নিয়ে সারা বিশ্বে কাজ হচ্ছে। জেমস বন্ড তো এখনো জনপ্রিয়। আমাদেরও এমন জনপ্রিয় চরিত্র আছে—মাসুদ রানা। প্রায় ছয় দশক ধরে এই ফিকশনাল চরিত্রটা নানা প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। সেই চরিত্রটাই এই সিনেমায় সারা বিশ্বে পরিচিত হচ্ছে, যেটা আমাদের নিজেদের চরিত্র, নিজেদের সিনেমা। যেকোনো বাঙালির জন্য এটা গর্বের। বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণ রয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি সাবটাইটেল রয়েছে।
জেসিয়া: প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভরপুর অ্যাকশন, সেই সঙ্গে গল্পে থাকছে রহস্য। আর মাসুদ রানার মতো জনপ্রিয় চরিত্রের সঙ্গে জার্নি যে কারও জন্যই আনন্দদায়ক হবে।

মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলো সম্পর্কে বলুন…
সুমন: ২৫ আগস্ট এম আর-নাইন মুক্তির পর ৮ সেপ্টেম্বর আসছে আমার অভিনীত ‘অন্তর্জাল’। ওটাও একটা দারুণ সিনেমা। সেটি নিয়েও অনেক আশাবাদী। 

মাসুদ রানা নিয়ে নতুন আরও সিনেমা তৈরি হবে?
সুমন: প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে কন্টিনিউ করে যাব।

কন্টিনিউ করা কি এই সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে? সিনেমা ফ্লপ করলে কি এমন বিশাল বাজেটের নতুন সিনেমা হবে?
সুমন: আমি চিন্তাও করতে চাই না এমন কিছু হবে। আই থিঙ্ক সবকিছু ঠিকঠাকই যাবে। মানুষ পছন্দ করবেন। আর মাসুদ রানা নিয়ে দ্বিতীয় সিনেমার কাজও কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। অ্যাটলিস্ট, লেখার কাজ শেষ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সুমন: ভালো সিনেমা করা, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে বড় করা। যেন আমাদের পরের প্রজন্ম একটা হেলদি আর আনন্দঘন পরিবেশ পায়। আমাদের সিনেমা যেন বিশ্ব জয় করতে পারে।
জেসিয়া: ভালো কাজ করতে চাই। অনেক কাজ করতে চাই। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে চাই।

এখনকার শিল্পীদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ বা সম্পর্কটা কেমন?
সুমন: শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার একবারই দেখা হয়েছে। তিনি চমৎকার মানুষ। তাঁর সিনেমা ভালো লাগে, তিনি আমার তারকা। বাকি যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে যে খুব দেখা হয় তা নয়। আমি আসলে ঘরকুনো মানুষ, কাজ শেষে ঘরে থাকতেই ভালোবাসি।
জেসিয়া: আমি সিনেমায় নতুন। সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়ে ওঠেনি, অতটা দেখা বা যোগাযোগ হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত