Ajker Patrika

তিউনিসীয় কর্তৃত্ববাদ ও আমার কারাবন্দী বাবা

কাউথার ফারজানি
তিউনিসীয় কর্তৃত্ববাদ ও আমার কারাবন্দী বাবা

আগে যখন বাবা দিবস কাছে আসত, তখন আমি প্রায়ই বাবাকে জ্বালাতাম। বলতাম, প্রতিটি দিনই বাবা দিবস। বাবা আমার কথা শুনে হাসতেন। বাবা দিবসে আমরা একে অপরকে ফোন করতাম, আড্ডা দিতাম এবং আমি তাঁকে বলতাম—আমি গর্বিত যে তিনি আমার বাবা।

এবারের বাবা দিবসে এসবের কিছুই হয়নি। কোনো হাসাহাসি হয়নি, কেউ কাউকে কোনো বার্তা পাঠাইনি। বাবা দিবসে আমি ও ভাইবোনেরা এই প্রার্থনা করেছি যে আমাদের বাবা যেন নিরাপদে ও সুস্থভাবে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।

বাবা সাইদ ফারজানিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তিউনিসিয়ায় আটক করা হয়। তিনি বিরোধী এন্নাহদা পার্টির একজন সদস্য এবং সেই ১০ জন বিশিষ্ট বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে একজন, যাঁরা ভিন্ন মত অবলম্বনের জন্য প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের সর্বশেষ দমনপীড়নের শিকার হয়ে আটক হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি এবং কোনো কিছুর জন্য তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্তও করা হয়নি। আমাদের সন্দেহ, তাঁর প্রকৃত অপরাধ—তিনি নিজের দেশকে খুব বেশি ভালোবাসেন এবং সেখানে কর্তৃত্ববাদের ফিরে আসার বিরোধিতা করছেন।

বাবাকে গ্রেপ্তারের প্রায় চার মাস হয়ে গেছে। আমরা এখনো তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। আমরা জানি যে বাবা এখন কারাগারের একটি কক্ষে ১২০ জন বন্দীর সঙ্গে জঘন্য অবস্থায় রয়েছেন। এসব বন্দীর মধ্যে কিছু নৃশংস অপরাধী রয়েছে, যারা কিনা প্রায়ই অন্যদের ওপর হামলা করে।

বাবাকে যখন প্রথম কারারুদ্ধ করা হয়, তখন তিনি অনশন শুরু করেন। তাঁর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁকে অনশন ভেঙে ফেলতে হয়। কারাগারে ফেরত পাঠানোর পর, সেলের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এবং অন্য বন্দীদের অবিরত ধূমপানের কারণে তাঁর ব্রঙ্কাইটিস হয়ে যায়। তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তারপর একটি ইনহেলার দিয়ে তাঁকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। এই ইনহেলার আগে কখনো তাঁর দরকার পড়েনি। এটা সত্যিই আমাদের উদ্বিগ্ন করেছিল। গত চার মাসের দুঃস্বপ্ন ৩০ বছরের বেশি আগের সময়ের এই স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।

বাবা যখন প্রথম কারারুদ্ধ হন, তখন আমার বয়স তিন বছর। এটি ছিল ১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাস। তিউনিসিয়ার তৎকালীন স্বৈরশাসক জাইন এল আবিদিন বেন আলি তখন সবেমাত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি বিরোধী এন্নাহদা পার্টি এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়নের নির্দেশ দেন। বেন আলির ভয় ছিল, এন্নাহদার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা তাঁর প্রেসিডেন্সির ক্ষতির কারণ হতে পারে।

মাঝরাতে ওরা বাবাকে ধরতে এসেছিল। এক ডজন সশস্ত্র পুলিশের সদর দরজা দিয়ে জোর করে ঢোকার শব্দে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলাম। তারা মাকে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, বাবাকে হাতকড়া পরায় এবং তারপর বাড়ি লুটপাট করে।

আমি নীরবে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করতে হাসার চেষ্টা করেছিলেন। আমি মনে করতে পারি না যে এটি কতক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল। তবে মনে আছে, আমার সাত বছর বয়সী বড় ভাই সেফেদিন একজন ভয়ংকর-দর্শন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আপনি কি আমার বাবাকে মেরে ফেলবেন?’ লোকটি তখন তাকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেয়েছিলেন। এরপর ভাই ভয়ে চুপ হয়ে যায়।

এই প্রথম আমি বাবাকে বিপদে পড়তে দেখেছিলাম এবং বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি অজেয় নন এবং পৃথিবী তত নিরাপদ স্থান নয়। নিয়ে যাওয়ার আগে, বাবা জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি আমাকে আদর করতে পারেন কি না। আমি বাবার দিকে হেঁটে গেলাম, নিচু হয়ে তাঁকে চুমু দিতে দিলাম।

বাবাকে শেষ পর্যন্ত ১৯৮৯ সালে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি হুইলচেয়ারে করে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। কারণ নির্যাতনকারীরা তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল। যেদিন তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন, সেদিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। কিন্তু আমরা আর আগের জীবনে ফিরে যেতে পারিনি। বাবা জানতেন, বেন আলির অত্যাচারের খড়্গ তাঁর ওপর আবার নেমে আসবে। এটি কেবল সময়ের ব্যাপার, তাই তিনি তাঁর প্রিয় দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর কিছুদিন পর আমরাও সেখানে তাঁর সঙ্গে যোগ দিলাম।

অত্যাচার ও কারাবাস বাবার শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল কিন্তু তাঁর মনকে নয়। নির্বাসনে তিনি পরিবারের পাশাপাশি দেশের জন্যও নিজেকে উৎসর্গ করেন। তিনি তিউনিসিয়ায় মানবাধিকারের সক্রিয় সমর্থক এবং বেন আলির শাসনের সোচ্চার সমালোচক ছিলেন। তিনি প্রায়ই তিউনিসিয়ার বন্দীদের মুক্তির জন্য প্রচার চালাতেন। তিউনিসিয়ার নৃশংস স্বৈরশাসন সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করেছেন।

২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে তিউনিসিয়ার বিপ্লবে বেন আলির পতন হলে বাবা তৎক্ষণাৎ তিউনিস চলে যান। তাঁর দল এন্নাহদাকে অবশেষে আইনগতভাবে রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় এবং তিউনিসিয়ায় প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক নির্বাচনে দলটি জয়লাভ করে। 
২০১৯ সালে বাবা পার্লামেন্টের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হওয়ার পর তিনি তাঁর নিজ শহর কাইরুয়ানকে অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে চেয়েছিলেন। তিনি সেই আসনে জিতেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি শেয়ার ট্যাক্সিতে করে শহরে ভ্রমণ এবং তাঁর নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সভা করা শুরু করেন।

এরপর ২০২১ সালের জুলাই মাসে কাইস সাইদ তিউনিসিয়ায় একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করেন, পার্লামেন্ট স্থগিত এবং নির্বাহী ও বিধানিক ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি দেশকে আবার কর্তৃত্ববাদের অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে আনেন।

বাবা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁকে খুব শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি জানতেন যে তিনি একটি টার্গেট তালিকায় আছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে গেছে। তিনি চাইলে পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু এবার তিনি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

নির্বাসন থেকে ফিরে আসার পর বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা-ই ঘটুক না কেন, আর কখনো তিউনিসিয়া ছাড়বেন না। একজন বয়স্ক মানুষ হিসেবে দেশেই মরতে চেয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে থাকার সময় বাবা ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার অধিকার ত্যাগ করেছিলেন, যদিও তিনি এটি পাওয়ার অধিকারী ছিলেন। তিনি তিউনিসিয়ার একজন নাগরিক হিসেবে বেন আলির বিরোধিতা করতে চেয়েছিলেন, একজন তিউনিসিয়ান হিসেবে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন এবং বিদেশি পাসপোর্ট 
ছাড়াই তিউনিসিয়ার রাজনীতিতে অংশ নিতে চেয়েছিলেন।

গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে বাবা আমাদের এমন কিছু বলেছিলেন, যা আমরা ইতিমধ্যেই জানতাম। তিনি এ জীবনটাই বেছে নিয়েছেন, তাঁর সিদ্ধান্তগুলো নীতির ভিত্তিতে নেওয়া, কোনো ভয় থেকে নয় এবং তিনি স্বাধীনতা, মর্যাদা ও তিউনিসীয়দের প্রাপ্য অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

যেদিন বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিন আমি এতটাই রাগ, বেদনা, দুঃখ ও অবিচার অনুভব করেছি যে আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না। তাঁকে হারানোর সেই শৈশবের ট্রমা আবার ফিরে এসেছিল।

একটি বিষয় যা আমাকে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত করে তা হলো, বাবার মতো লোকদের সহজেই ‘ইসলামপন্থী’ তকমা দিয়ে তাঁদের অমানবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। তাঁরা যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা একপাশে সরিয়ে রেখে তাঁদের কারাদণ্ডকে দ্রুত মান্যতা দেওয়া হয়েছে। বাবা কোনো রাজনৈতিক আদর্শের অন্ধ অনুসারী নন। তিনি একজন নীতিমান মানুষ, স্বাধীনতার প্রবক্তা এবং গণতন্ত্রের একজন নির্ভীক সমর্থক। তিনি একজন কোমল, স্নেহময় পিতাও বটে, যিনি তাঁর সন্তানদের নাম ধরে গান করেন। এমন একজন বাবার মেয়ে হতে পেরে আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করি।

অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, গ্রেপ্তারের কথা শুনে ভয়ে আমি কি কখনো বাবাকে তিউনিসিয়া ছেড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি? না, আমি কখনোই তা করিনি। গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি যে নিজের দেশ ছেড়ে যাননি, এ জন্য আমি তাঁকে খুব ভালোবাসি এবং শ্রদ্ধা করি।

এই বাবা দিবসে আমি বাবার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম তাঁকে একটুখানি জড়িয়ে ধরতে, একটু কথা বলতে, চেয়েছিলাম তাঁর হাসি দেখতে। কিন্তু হলো না। আমি তাঁকে খুব মিস করছি। কিন্তু আমি এই সত্যে সান্ত্বনা পাই যে যদিও তিনি শারীরিকভাবে কারাগারে বন্দী, কিন্তু মনের দিক দিয়ে তিনি সবচেয়ে মুক্ত মানুষ।

লেখক: তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অ্যাকটিভিস্ট 

(১৮ জুন বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে আল জাজিরা পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত