Ajker Patrika

বিনা খরচে আইনগত সহায়তা পাবেন যেভাবে

সুলতান মাহমুদ
আপডেট : ০৮ মে ২০২৩, ১৭: ২০
বিনা খরচে আইনগত সহায়তা পাবেন যেভাবে

কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার কামারপাড়া গ্রামের হুমাইরা আক্তার রুমকি। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই দাম্পত্য কলহ শুরু হলে চলে আসেন বাবার বাড়ি। সে সময় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। স্বামী মমিনুল ইসলামও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। রুমকি প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থাকেন, হয়তো স্বামী তাঁকে নিতে আসবেন। কিন্তু দিন গড়িয়ে মাস পেরোয়, মমিনুল আসেন না।

রুমকি ও তাঁর বাবা-মা স্থানীয়দের মাধ্যমে মীমাংসার উদ্যোগ নেন। কিন্তু মমিনুল সাড়া দেন না। এর মধ্যে রুমকির কোলজুড়ে আসে একটি কন্যাসন্তান। এবার রুমকি ও তাঁর পরিবারের লোকজন আশায় বুক বেঁধে থাকেন। অন্তত সন্তানের মুখ দেখতে মমিনুল আসবেন। কিন্তু সেই আশার গুড়েও বালি! 

রুমকির পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও প্রতিকার পায়নি। মমিনুল স্ত্রী-সন্তান কারও খোঁজ নেন না। রুমকির সন্তান আস্তে আস্তে হাঁটতে শেখে। কিন্তু বাবাকে দেখা হয় না। এভাবে কেটে যায় চারটি বছর। মমিনুল স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে যান না, খোঁজও নেন না। রুমকির প্রতীক্ষার শেষ হয় না। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। 

অবশেষে রুমকির পরিবার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের শরণাপন্ন হয়। লিগ্যাল এইড অফিস থেকে মমিনুলকে নোটিশ করে কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে অভিযোগ শোনেন। মীমাংসার প্রস্তাব দেন। মমিনুলকে স্ত্রী ও সন্তানের গুরুত্ব বোঝানো হয়। আইনগত ঝামেলার বিষয়েও তাঁকে সতর্ক করা হয়। মমিনুল যেন সংজ্ঞা ফিরে পান! তিনি স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে নিতে রাজি হন। 

লিগ্যাল এইড অফিসারের উদ্যোগে মমিনুল-রুমকির চার বছরের দাম্পত্য কলহের অবসান ঘটে। তাঁদের মেয়ে পায় বাবাকে। বর্তমানে মমিনুল ও রুমকি মেয়েকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার করছেন।

রুমকি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমানে আমার স্বামীর মধ্যে একটা পরিবর্তন আসছে। তিনি আর আগের মতো নেই। আমার ও মেয়ের ভরণপোষণও ঠিকমতো দিচ্ছেন। আমরা এখন ভালো আছি। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আমাদের চার বছরের কষ্টের অবসান হয়েছে। আমার মেয়ে তার বাবা পেয়েছে।’

রুমকি-মমিনুল দম্পতির মতো শত শত পরিবারের কলহ, নির্যাতন, প্রতারণা, পাওনা টাকা আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের নিষ্পত্তি ও আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস। এসব সেবা মিলছে সম্পূর্ণ বিনা খরচে। এতে মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও অর্থ খরচ থেকে রেহাই পাচ্ছে শত শত পরিবার। মিলছে হয়রানি থেকে মুক্তি। 

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আইনগত সহায়তা
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জনকে সহায়তা দিয়েছে। সংস্থাটি দেশব্যাপী আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৬ জনকে আইনি পরামর্শ দিয়েছে। একই সময়ে সংস্থাটি ৮২ হাজার ৫৮৮টি বিরোধ/মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করেছে এবং বিরোধে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ টাকা আদায় করে দিয়েছে।

বিনা খরচে আইনগত সহায়তা পাবেন যেভাবে

  • জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টার থেকে আইনগত সহায়তা পাওয়া যাবে। সরকার ২০১৬ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে টোল ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন চালু করেছে। 

অফিস চলাকালীন এই কল সেন্টারের ১৬৪৩০ নম্বরে যে কোনো মোবাইল/টেলিফোন থেকে কল করে আইনি পরামর্শ, আইনগত তথ্য, লিগ্যাল কাউন্সেলিং, মামলা করার প্রাথমিক তথ্য, সরকারি আইনি সেবা সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শ, সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ সম্পর্কিত সেবা পাওয়া যায়। এর জন্য কোনো কলচার্জ কাটা যায় না। 

  • জেলা পর্যায়ের মামলা পরিচালনায় আইনগত সহায়তা লাভের জন্য ৬৪টি জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। সুপ্রিম কোর্টে সরকারি আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত ‘সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের’ মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। 
  • ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য বিশেষ কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। চৌকি আদালতে সরকারি আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চৌকি আদালত বিশেষ কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। 
  • বিডি লিগ্যাল এইড অ্যাপের সহায়তায়ও এই সেবা পাওয়া যায়। অনলাইনে আইনি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার ২০১৮ সালে বিডি লিগ্যাল এইড অ্যাপ চালু করে। বিদেশ থেকে +৮৮০৯১২৩১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে বিনা খরচে সরকারি আইনি সেবা নেওয়া যাবে। 

যাঁরা আইনগত সহায়তা পাবেন:
কোনো মামলায় বাদী, বিবাদী বা আসামি যে কেউ আইনগত সহায়তা পেতে পারেন। আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা, ২০১৪-এর ধারা ২-এ বলা হয়েছে কারা আইনগত সহায়তা পাবেন।

  • আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি, যার বাৎসরিক আয় ১ লাখ টাকার বেশি নয়। 
  •  উচ্চ আদালতে এই সেবা পাবেন, যার বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি নয়। 
  • কর্মে অক্ষম, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন কোনো ব্যক্তি। অর্থাৎ একজন বেকার ব্যক্তি আইনগত সহায়তা পেতে পারেন। 
  • কোনো মুক্তিযোদ্ধা, যিনি বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে অক্ষম।
  • কোনো শ্রমিক, যাঁর বাৎসরিক আয় ১ লাখ টাকার বেশি নয়। 
  • যেকোনো শিশু। 
  • মানব পাচারের শিকার কোনো ব্যক্তি। 
  • শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার কোনো নারী ও শিশু। 
  • যাঁর কোনো আশ্রয় নেই অর্থাৎ নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে। 
  • ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি। 
  • পারিবারিক সহিংসতার শিকার অথবা সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন কোনো ব্যক্তি। 
  • বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন কোনো ব্যক্তি। 
  • ভিজিডি কার্ডধারী কোনো দুস্থ মা। 
  • দুর্বৃত্ত কর্তৃক অ্যাসিডদগ্ধ নারী বা শিশু। 
  • আদর্শগ্রামে জমি বা ঘর বরাদ্দ পাওয়া কোনো ব্যক্তি। 
  • অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুস্থ নারী। 
  • যেকোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। 
  • আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি। 
  • বিনা বিচারে আটক এমন কোনো ব্যক্তি, যিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল। 
  • আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় ও অসচ্ছল বলে বিবেচিত কোনো ব্যক্তি। 
  • জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে সুপারিশকৃত বা বিবেচিত কোনো ব্যক্তি। 

এ ছাড়া আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০-এর উদ্দেশ্য পূরণে, সংস্থা সময়-সময় চিহ্নিত আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থসামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি, যিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা বা মামলা পরিচালনায় অসমর্থ, তিনিও আইনগত সহায়তা পাবেন।

আইনগত সহায়তা পাওয়ার শর্ত
অনেকের মধ্যে এমন একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, মামলা করার প্রয়োজন হলেই হয়তো জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে। কিন্তু মামলা করার প্রয়োজন ছাড়াও যেকোনো আইনগত পরামর্শের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা পাওয়া যায়। কোনো ব্যক্তি যখন কোনো প্রকারের আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হন, তখন জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা থেকে আইনি পরামর্শ নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড অফিসার আইনগত পরামর্শ দেন, আপস-মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করেন বা মামলায় সহযোগিতা করেন। যেকোনো ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্ট, জেলায় অবস্থিত নিম্ন আদালত, শ্রম আদালতে আইনগত সহায়তা পেতে পারেন। 

আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ধারা ৩ অনুযায়ী প্রত্যেক বিচারপ্রার্থীকে তাঁর নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং আইনগত সহায়তার কারণ উল্লেখ করে সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া সাদা কাগজে লিখেও আবেদন করা যায়। 

আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারের বিষয় হলে সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। অন্যান্য আদালতে বিচারের বিষয় হলে জেলা কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। শ্রম আদালতে বিচারের বিষয় হলে শ্রম আদালতের বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। 

এ ছাড়া বিচারাধীন মামলার আইনগত সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতকে জানিয়ে সহযোগিতা পাওয়া যায়। 

যেভাবে আবেদন করা যাবে
দুইভাবে আবেদন করা যায়। এক. অনলাইনে। দুই. সরাসরি লিগ্যাল এইড অফিসে গিয়ে। লিগ্যাল এইডের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে। 

যদি কেউ অনলাইনে আবেদন করেন, তাহলে ওই দিন তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লিগ্যাল এইড অফিস থেকে যোগাযোগ করে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় আবেদনটি গ্রহণ করা হবে কি না। যদি গ্রহণ করা হয়, তাহলে একটি আবেদন নম্বর তৈরি হবে। এরপর একটি নির্দিষ্ট তারিখে উভয় পক্ষকে লিগ্যাল এইড অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করা হয়। 

যদি নির্দিষ্ট তারিখে উভয় পক্ষ আসে, তাহলে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। যদি অপর পক্ষ না আসে, তাহলে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

আর যদি সরাসরি কেউ লিগ্যাল এইড অফিসে গিয়ে হাজির হন, তাহলে সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সেবাপ্রার্থী ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁর নাম-ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করবেন। এরপর উভয় পক্ষকে একটি নির্দিষ্ট দিনে লিগ্যাল এইড অফিসে আসার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করা হবে। যদি অপর পক্ষ না আসে তাহলে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

সশরীরে কোথায় যোগাযোগ করবেন
প্রতি জেলায় জেলা জজ আদালত ভবনে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির অফিস রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ এর চেয়ারম্যান। সেখানে যোগাযোগ করলে লিগ্যাল এইড অফিসার ও কর্মচারীরা আইনগত সহায়তার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা দেবেন। সুপ্রিম কোর্টের বিষয়ে আইনগত সহায়তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস রয়েছে। 

এ ছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা কমিটি রয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যান ওই কমিটির চেয়ারম্যান। প্রতি ইউনিয়নে ইউনিয়ন কমিটি রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওই কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কমিটিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনগত সহায়তার বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া যায়। এ ছাড়া জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় হেল্পলাইন থেকে সাহায্য নিয়ে যোগাযোগ করা যায়।

বিচারপ্রার্থী বা আইনগত সহায়তাপ্রার্থীর দায়িত্ব
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ৪ ধারা মতে বিচারপ্রার্থীর কিছু দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে—আবেদন নির্ভুল হতে হবে এবং পরিপূর্ণ তথ্য দিতে হবে। কমিটি, লিগ্যাল এইড অফিসার এবং নিযুক্ত আইনজীবীকে সহায়তা করতে হবে। কমিটি যেসব শর্ত দেবে, তা পালন করতে হবে।

আইনজীবী নিয়োগ
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ৫ ধারামতে, কোনো বিচারপ্রার্থীকে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে মামলা পরিচালনার জন্য কমিটি তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের মধ্যে থেকে তিনজন আইনজীবীকে মনোনীত করবে এবং বিচারপ্রার্থীর সম্মতি সাপেক্ষে তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ করা হবে। 

(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আজকের পত্রিকার কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গুম ও হাওর-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০০
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: পিআইডি

গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ ও বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি সংরক্ষণ অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে গুম ও হাওর-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।

পরে প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে ব্যক্তি অন্যূন পাঁচ বছর ধরে গুম থাকলে এবং জীবিত ফিরে না এলে ট্রাইবুন্যাল তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিসাপিয়ার্ড’ বা ‘গুম’ ঘোষণা করতে পারবে।

সরকার ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইবুনাল’-এর জন্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে পারবে। ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারীও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রাইব্যুনাল আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন এবং গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রী বা তাঁর ওপর নির্ভরশীল পরিবারের কোনো সদস্য কমিশনের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে গুম হওয়া ব্যক্তির সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবেন।

এদিকে, বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি সংরক্ষণ অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়াও নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের ইকোসিস্টেম বিশ্বে বিরল ও অনন্য। কিন্তু নদী ও নদীপথের বাধা সৃষ্টি করে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, বিষ ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং পর্যটনের বিরূপ প্রভাবের কারণে এই ইকোসিস্টেম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পড়ছে। অন্যদিক, জলাশয় রক্ষায় আইনি কাঠামোরও অপ্রতুলতা রয়েছে।

এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব, কর্তৃত্ব ও অধিক্ষেত্র সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে। হাওর ও জলাভূমি এলাকার জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারির বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, হাওর ও জলাভূমি এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত হাওর ও জলাভূমি এলাকা ঘোষণা করার বিধানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ ছাড়া, হাওর ও জলাভূমি এলাকায় নিষিদ্ধ কার্যক্রমের বিবরণ প্রদান, নিষিদ্ধ কার্যক্রম সংঘটিত হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং ওই অপরাধের জন্য আরোপনীয় দণ্ডের বিধান করা হয়েছে।

হাওর ও জলাভূমি এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ব্যতিক্রম সাপেক্ষে অধিদপ্তরের মতামত গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অন্যান্য কর্তৃপক্ষ/দপ্তর/সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়, স্থানীয় অংশীজনদের সম্পৃক্ততা এবং সংরক্ষণ কার্যক্রমে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিধি, প্রবিধান ও নির্দেশিকা প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ: আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি: সংগৃহীত
আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি: সংগৃহীত

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগপত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে ২২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৮৭ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন আজ বৃহস্পতিবার চার্জশিট অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসাদুজ্জামান খান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে অসাধু উপায়ে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ২২ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ১৬২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

এ ছাড়া এই আসামি ৯টি ব্যাংক হিসাবে ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৩ টাকা লেনদেন করে মানি লন্ডারিংয়ে সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে তা রূপান্তর বা স্থানান্তর বা হস্তান্তর করেছেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে কমিশন কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারাসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ৯ অক্টোবর আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তদন্তে আসাদুজ্জামান খানের স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, তাঁর ছেলে শাফি মোদ্দাছির খান জ্যোতি ও মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানের সম্পৃক্ততা পায় সংস্থাটি।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৭ নভেম্বর আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সব রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসির নির্দেশনা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ বৃহস্পতিবার ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন নির্দেশনাটি স্বরাষ্ট্র সচিবকে পাঠিয়েছেন।

এতে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্বাচন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালপত্র ও যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে বিধায় এসব কার্যালয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালপত্রের সুরক্ষাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক বলে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

এই অবস্থায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের সদয় নির্দেশনা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিশন।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৭
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে চালানো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।

ওবায়দুল কাদের ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শেখ ফজলে শামস পরশ ও মাইনুল হোসেন নিখিল, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

এখন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিলে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের পর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিচারকাজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত