খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন অনুপম রায়। ৬টা থেকে হোটেল লবিতে অপেক্ষা। সঙ্গে আজকের পত্রিকার আরও দুই সাংবাদিক নাঈম হক ও তুষার পাল। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট দশেক পরে ব্যান্ড সদস্যদের নিয়ে লবিতে এলেন অনুপম রায়। সেখানে আমরা ছাড়া অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন। অনুপমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁরা। প্রিয় শিল্পীর জন্য নিয়ে এসেছেন পাঞ্জাবি ও রসগোল্লা। ভক্তদের সঙ্গে মিনিট দশেক কথা বলে, ছবি তুলে ও অটোগ্রাফ দিয়ে ফিরে এলেন অনুপম রায়। বসলেন মুখোমুখি। কয়েক বছর পর শুক্রবার (১০ মার্চ) ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। রাতে শো নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে। সাক্ষাৎকারটি শেষ করেই শোয়ের উদ্দেশে বেরোবেন। হাতে তাই সময় খুব কম।
এবার খুব টাইট শিডিউল, নাকি?
প্রতিবারই তাই হয়।
আপনার নতুন অ্যালবাম ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’-এর দুটো গান শুনলাম…
সবে রিলিজ করেছে।
ছয় বছরের মাথায় আপনার পঞ্চম অ্যালবাম?
হ্যাঁ।
অ্যালবামের দুটো গান ‘কেমন আছো অ্যানি হল’ ও ‘অবস’ শুনে মনে হয়েছে, কথায়-সুরে এই গানগুলো আরো ব্যক্তিগত, আরো গভীর। আপনার ভাবনা কী রকম ছিল ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামটি করার সময়?
আসলে বহু দিন ধরে সিনেমার কাজ করছি। তারপর সিঙ্গেলের কাজ। আজকাল তো অ্যালবাম তেমন আর হয় না। আমরা আর্টিস্টরা সবাই সিঙ্গেল রিলিজ করি, কারণ মানুষের গোটা অ্যালবাম শোনার ধৈর্য চলে গেছে। তো অনেক গান আমি করেছি বিভিন্ন মিউজিক লেবেলের জন্য। সেখানে একটা বাধ্যবাধকতা থাকে যে, একটু আনন্দের কিংবা মানুষকে একটু এন্টারটেইন করার। এন্টারটেইনমেন্ট ফ্যাক্টরটা খুব ইমপরটেন্ট থাকে আমরা যখন কারো জন্য গান করি। কারণ মানুষ গানবাজনা থেকে এন্টারটেইনমেন্ট চায়। আবার এমন অনেক গান তৈরি হয়, সেখানে কোনো এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালু নেই। বিনোদন দেওয়ার জন্য এই গানগুলো (‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামের গান) করিনি আমি। কারণ আমি তো আমার জীবন থেকে, আমার দর্শন থেকে গানগুলো বানাচ্ছি। আমার সব সময় দায়বদ্ধতা থাকে না যে মানুষকে বিনোদন দিতেই হবে। সেই জায়গা থেকে অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছিল একটা অ্যালবাম করতে চাই, যেখানে এমন কিছু গান থাকবে, যেগুলো মানুষকে বিনোদন দেবে না। সেই রকম কিছু গান নিয়ে এই অ্যালবাম তৈরি করেছি।
বিনোদন যদি কেউ পেতে চায়, সেটা তাঁর ব্যাপার…
হ্যাঁ, সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
[দ্য অনুপম রায় ব্যান্ডের ম্যানেজার রানা সিংহ রায় এগিয়ে এলেন। অনুপমকে জিজ্ঞেস করলেন, কফি বা স্ন্যাকস কিছু চান কি না। অনুপম ‘না’ সূচক জবাব দিলেন। বলে দিলেন, ‘পারলে সঙ্গে করে একটা জলের বোতল নিস।’ রানার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ শেষ করে আবার সাক্ষাৎকারে ফিরে এলেন অনুপম]
‘অবস’ গানের ভিডিওতে একটা মানুষ দার্জিলিংয়ের নির্জনতার মধ্যে সারাক্ষণ কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। একটা তারবিহীন টেলিফোনে কথা বলছে। এটা কি অনেকটা নিজের সঙ্গে নিজের কথা? নিজেকে খুঁজে ফেরা?
‘অবস’ আসলে আমার এক দশক আগের লেখা গান। যে ছেলেটির সঙ্গে কাজ করেছি, রাতুল, ও গিটার বাজায়, মিউজিক অ্যারেঞ্জ করতে আমাকে সাহায্য করেছে। ওর সঙ্গে বহু দিন ধরে কাজ করার কথা ছিল। এ গানটা পড়েই ছিল। এটা আমার খুব প্রিয় গান। গানটার মূল যে বক্তব্য, যে ফিল, সেটা হচ্ছে—মানুষ জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। হিউম্যান রিলেশন নিয়ে গান। (একটা মানুষ) তার কোনো অনুভূতি থেকে গানটা গাইছে এবং সে অবস হয়ে পড়ছে। একটা বিষণ্নতা চেপে ধরছে। কী কারণ, ওগুলো তো ইলাবরেটলি গানের মধ্যে নেই। কিন্তু তার অনুভূতিগুলোই গানের মধ্য দিয়ে বেরিয়েছে। সে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথাই হয়তো বলছে। এখান থেকেই খুব একটা ডার্ক, একটা মেলানকলি সুর তৈরি হয়েছিল। সেটাই রেখেছি ইচ্ছে করে। কারণ আমি জানি, এটার থেকে কেউ খুব একটা এন্টারটেইন হয়তো হবে না।
অ্যালবামের দুটো গান তো বেরিয়ে গেল। শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?
প্রতিক্রিয়া খুবই ভালো পাচ্ছি। কারণ আমার বহু ভক্ত আছে, বহু শ্রোতা আছে, যারা শোনে আমার গান। যারা আমার ফিলোসফিতে বিশ্বাস করে। এবং কোনো একটা শিল্প কনজিউম করার সময় তারাও হয়তো বিশ্বাস করে, সব সময় যে বিনোদন পেতে কনজিউম করছে তা নয়। নিজেকে ভাবাতে, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টা করছে এবং হয়তো এ গানগুলো সেটাতে সাহায্য করছে।
‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামে ৯টি গান থাকছে?
আটটা মনে হয় থাকবে শেষ পর্যন্ত।
গানগুলো কি এক সপ্তাহ পরপর রিলিজ হবে?
হ্যাঁ, দুই সপ্তাহ পর ‘অবস’ বেরিয়েছে। এবার দেখি পরের গানটা কবে রিলিজ করে।
গান তো রেডি হয়ে আছে। তাহলে রিলিজ নিয়ে এত অনিশ্চয়তা কেন?
গান রেডি হয়ে আছে। তবে সমস্যা হলো, আজকাল গান রিলিজ করা খুব ঝামেলার। প্রতি গানের জন্য ভিডিও লাগে। সেগুলো করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং সেটার জন্য অনেকটা এফোর্ট যায়। সেগুলো করছি, দেখি কবে পারি! কমিট করছি না এখনই কিছু।
অ্যালবামের নাম দিয়েছেন ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’। এই অদৃশ্য নাগরদোলা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
আমাদের জীবনের কথাই বলা হচ্ছে। আমরা নিজের অজান্তে কখন চড়ে বসেছি এই জীবনের নাগরদোলায় এবং দুলে চলেছি, ঘুরে চলেছি। যখন আমি নাগরদোলার কথা বলছি, সেটা আমি দেখতে পাই। যখনই তার সামনে একটা ‘অদৃশ্য’ শব্দ বসিয়ে দেওয়া হয়, সেটা যেন চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল। কিন্তু আসলে সেটা আছে। আমাদের জীবনে এ রকম বহু কিছু আছে, যেগুলো হয়তো আছে অথচ নেই। কিংবা নেই মনে হচ্ছে, কিন্তু আসলে আছে। এই সাবজেক্টটা নিয়ে বিভিন্ন গান তৈরি হয়েছে।
আরেকটা গান আছে ‘বিচার’ বলে। সব দেশেই বিচারব্যবস্থা আছে। আইন আছে। দেশের অনেক মানুষ সেই আইন সম্বন্ধে জানেই না। জানলেও তারা সেই বিচারব্যবস্থার সুফল জীবনে পায় না। এ রকম ছোট ছোট জিনিস তুলেছি আমি, যেগুলো সমাজে আমরা দেখতে পাই। এবং নিজেরাই বুঝতে পারি না, সেগুলো আছে নাকি নেই! সেই অদৃশ্য নাগরদোলার কথাই অ্যালবামের মধ্যে বলা আছে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে আপনার গান শুনছেন দুই বাংলার শ্রোতারা। নিজেদের প্রেম, বিরহ, উদ্যাপন—সবকিছুতে আপনার গানের কাছে একটা আশ্রয় খোঁজেন তাঁরা। নতুন গান তৈরির সময় শ্রোতাদের এই প্রত্যাশা কীভাবে সামলান?
আমি যখন গান বানাচ্ছি, আমি তো জানি না, আমার যে অনুভূতি তার সঙ্গে আরেকজন একাত্ম হবেন কি না। কারো মনে হতেই পারে আমার অনুভূতিটা ফালতু। আমার সঙ্গে তার কোনো যোগই নেই। সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি একাত্ম হয়ে যায়, সেটাই বরং অ্যাকসিডেন্ট। সেখান থেকে ডেফিনেটলি একটা প্রেসার তৈরি হয় যে, আগেরবার আমি কানেক্ট করতে পেরেছিলাম, এবার পারছি কি না। ফলে আমার ওই দায়বদ্ধতাটা থাকা উচিত না যে, কে কানেক্ট করতে পারছে আর কে পারছে না। আমি গান করছি। যদি কেউ কানেক্ট করতে পারে করবে, যদি কেউ না পারে করবে না।
এই কানেকশনটা আপনি বলছেন ‘অ্যাকসিডেন্ট’। তবে আপনার গানের সঙ্গে ব্যাপারটা বেশিই ঘটে। এটা চাপ হয়ে যায় কি না?
ডেফিনেটলি। যখন জীবন শুরু করেছিলাম, তখন কোনো প্রেশারই ছিল না। কেউ শোনেইনি আমার গান। এখন অনেক মানুষ শুনেছে, অনেক মানুষের অনেক রকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে। তারা তাদের প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে ফিরে আসছে।
সমাজের নানা ইতিবাচক-নেতিবাচক ঘটনা, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা—সবকিছু আপনাকে নিশ্চয়ই প্রভাবিত করে। আপনার গান কিংবা কবিতা লিখতে ইন্সপায়ারিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে কোন বিষয়গুলো?
একেক দিন একেকটা করে আরকি। একেক সময় একেকটা বিষয় নিয়ে বেশি ভাবিত হই। একেকটা ছবি দেখি বা বই পড়ি, সেটার মধ্যে বেশি ডুবে থাকি। সুতরাং কোনো একটা জিনিস নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।
[অনুপম যতক্ষণ ছিলেন না, হোটেলের লবি ছিল নির্জন। সেই পিনপতন নীরবতা উধাও তিনি লবিতে আসার পরে। এখানে-ওখানে অনেকে জড়ো হয়েছেন, হয়তো অনুপমের সঙ্গে একটু কথা বা একটা ছবি তোলার ইচ্ছা নিয়ে। লবি এখন গমগম করছে। কথা বলতে ও শুনতে অসুবিধা হচ্ছে। গলার আওয়াজ খানিকটা চড়িয়ে দেন অনুপম রায়]
আমি দীর্ঘদিন বাদে বাংলাদেশে এসেছি এবার, এটা হওয়ার কথা নয়। চার-পাঁচ বছর হয়ে গেছে আমি বাংলাদেশ, ঢাকা, চট্টগ্রামে আসতে পারিনি। এটার থেকে একটা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। দেশভ্রমণ বা নতুন জায়গা দেখা বা নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলার অদ্ভুত খিদে আমার আছে। একটা পিপাসা আছে। এখন এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সেটা আমাকে অনেক বেশি তাড়িত করছে। এই যে এসেছি, এটা আমার খুব ভালো লাগছে, এত দিন বাদে আমি ঢাকা শহরে এলাম। এয়ারপোর্টের রোডটা বেশি পাল্টে গেছে। সেটার খবর আমার কাছে ছিল না। রাস্তায় তো কনস্ট্রাকশনে দেখলাম ভরে গেছে। বলুন আর কী জানতে চান…
সোশ্যাল মিডিয়ায় তো আমরা নানা রকম কনটেন্ট দেখছি এখন। প্রচুর গান, রিলস, ভিডিও। মানুষকে হঠাৎ করে অনেক রকম কনটেন্টের মধ্যে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর ভিড়ে ভালো গান কিংবা যে কোনো ভালো কনটেন্টের প্রতি মুগ্ধতা কীভাবে বজায় থাকবে?
আসলে দিনের শেষে মানুষের যেটা ভালো লাগবে, সে সেটাই করবে। তার হাতে এখন কন্ট্রোল। আগে যে রকম ছিল, গানের ক্ষেত্রে যদি বলি, রেডিওতে যে গান বাজানো হবে, তাই-ই মানুষকে শুনতে হবে। বাড়িতে যে গ্রামোফোন রেকর্ড কেনা হবে, সে রেকর্ডই বাজবে। এর বাইরে অন্য গান সে শুনতে পাবে না। এখন মানুষের হাতে এত অপশন! ফলে তার সিনেমা দেখার ধরন, গান শোনার ধরন সব পাল্টে গেছে। আগে সিনেমা দেখতে গেলে প্রেক্ষাগৃহে যেতে হতো এবং সিনেমা হলের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। এখন মানুষ মোবাইল ফোনে দেখে। যদি কোনো সিন ভালো না লাগে স্ক্রল করে যায়, ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে দেয়।
সুতরাং দেখার অভ্যাস পাল্টে গেছে। গান শোনার অভ্যাস পাল্টে গেছে। আগে ক্যাসেটে যেটা হতো, খারাপ লাগলেও গানটা শুনতে হতো, তারপর পরের গানে যেতে হতো। এখন কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে পাল্টে দেওয়া যায়। সুতরাং আমরা যারা শিল্প তৈরি করার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এটা সমস্যার। কারণ মানুষের হাতে এত পাওয়ার চলে গেছে! যার ফলে আমরা কোনো একটা ভুল পদক্ষেপ নিতে পারি না। আমাদের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ ঠিক হতে হবে, না হলে মানুষ আমাদের গানও পাল্টে দেবে।
আপনি বললেন মানুষের দেখার ধরন পাল্টে গেছে। বড় কনটেন্ট দেখার বা শোনার ধৈর্য কমে যাচ্ছে। তো এখন যে দৈর্ঘ্যের গান তৈরি হচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটা আরো ছোট হয়ে যেতে পারে কি?
হতে পারে। ভবিষ্যতে কী লেখা আছে আমরা জানি না। এগুলো সবই বিনোদন এবং আনন্দ পাওয়ার জিনিস হয়ে যাচ্ছে। তাতে যদি বিনোদন পায় সে পাবে। সে ওইটাই শুনবে। কিন্তু ক্রিয়েটর হিসেবে আমাকে অতটা ভাবলে চলবে না। আমি যখন কোনো গান বানাচ্ছি, আমি তো অনুভূতিকে কথায়-সুরে প্রকাশ করছি। সেইটা যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। এবার গান তিন মিনিটের হলো, নাকি সাত মিনিটের হলো, আমি তো জানি না। কারণ আমার লেখা যত হবে, গানটার লেন্থ তা-ই হবে। তারপর মানুষ কী করবে, সেটা মানুষের হাতে।
এই যে নানা সময়ে হুটহাট এক-দুটো গান উড়ে আসে। যেটা হয়তো এক-দুই সপ্তাহ ধরে মানুষ শোনে। সেটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক চলতে থাকে। তারপর সেগুলো অতি দ্রুত হারিয়েও যায়। এই ‘ভাইরাল’ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
শিল্পীরাও চায় যে ভাইরাল হোক। নিজেরাই গান বানিয়ে নিজেরাই হ্যাশট্যাগ ভাইরাল লিখে পোস্ট করে। ভাইরাল হওয়া মানে কী? খুব জনপ্রিয় হওয়া। মানুষ জনপ্রিয়তা পছন্দ করে। কারণ জনপ্রিয় হওয়ার অনেক সুবিধা আছে। একটা অদ্ভুত আনন্দ দেয় যে, এত মানুষ ভালো বলছে। তবে শিল্পের খাতিরে যে গান বানাচ্ছি, সব গান ভাইরাল হওয়ার জন্য নয়, সব শিল্প ভাইরাল হওয়ার নয়। কিছু হবে, কিছু হবে না। এবং মেজরিটিই হবে না। তার মানে যে সেগুলো ফেলনা, তা নয়। সেগুলো কোনো মানুষকে কোন সময়ে কী দিয়েছে, সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারে না। আমি বলতেই পারি, আমার অনেক প্রিয় শিল্পীর গান যেগুলো অতটা জনপ্রিয় না, কিন্তু আমার কোনো জ্বরের সময় হয়তো সেগুলো শুনেছি এবং সেই গানের মধ্যে ডুবে গিয়েছি। এমন হয়েছে, আমার সারা দিন ভালো যায়নি, তারপর কোনো উপন্যাস পড়েছি। সেই উপন্যাসের মধ্যে এমন ডুবে গেছি, ওই লেখার মধ্যে আমি একটা আলাদা জগৎ, আলাদা জীবন খুঁজে পেয়েছি। সেগুলোর মূল্য কী? সেগুলোকে তো ভাইরাল বা এসব দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। সেগুলো তো আমার জীবনে ঘটেছে। যে শিল্পের মধ্য দিয়ে এটা ঘটেছে, সেই শিল্প তো আমার কাছে অত্যন্ত কাছের। এবং সেটা আজকে দশটা লোক খারাপ বললেও আমার কাছে ভালো লাগার জায়গাতেই থাকবে। সুতরাং আমি অত চিন্তিত নই ভাইরাল নিয়ে। কারণ এর কোনো শেষ নেই। এটা একটা অসম্ভব রাক্ষুসে খিদের মতো ব্যাপার। এ কোনো দিন মেটানো যাবে না।
[হোটেলের বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অনুপমের ব্যান্ডের সবাই গাড়িতে উঠে পড়েছেন। অনুপম এলেই গাড়ি ছুটবে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে। সেখানে রাতে পারফর্ম করবে অনুপমের ব্যান্ড। ম্যানেজার রানা এসে নিচু স্বরে অনুপমকে বললেন, ‘আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা রওনা দেব।’ অর্থাৎ আলাপ শেষ করতে হবে। একটু হালকা চালেই তাই শেষ প্রশ্নটা করা হলো]
বসন্ত এলেই চারদিকে আপনার ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি বাজতে শোনা যায়। আপনার বসন্ত কেমন কাটছে এবার?
বসন্ত ভালো শুরু হয়েছে, তার কারণ আমি বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। এর আগে প্রতি বছর বা প্রতি তিন মাস অন্তর একবার করে রিকোয়েস্ট আসত, তারপর সেই অনুষ্ঠান হতো না। ফাইনালি এই যে অনুষ্ঠানটি হচ্ছে, স্টেজে গেলে বুঝতে পারব হচ্ছে কি না, সেটার জন্য আমি খুবই আনন্দিত। এটা আমার খুব পছন্দের জায়গা, পছন্দের শহর, পছন্দের মানুষজন। ইচ্ছে করে এখানে এসে অনেক দিন থাকি। সব সময় হয়ে ওঠে না। এইভাবে দেখতে গেলে বসন্ত আমার ভালোই শুরু হয়েছে।
[আমাদের বিদায় দিয়ে, আরো কয়েকটি সেলফির আবদার মিটিয়ে, হোটেলের সামনে রাখা গাড়িতে গিয়ে বসলেন অনুপম রায়। যাওয়ার আগে বললেন, সকালেই ফিরতে হবে। এবার তো বেশি সময় পাওয়া গেল না। পরেরবার এসে ঘোরাঘুরিটা আরেকটু জমিয়ে হবে।]

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন অনুপম রায়। ৬টা থেকে হোটেল লবিতে অপেক্ষা। সঙ্গে আজকের পত্রিকার আরও দুই সাংবাদিক নাঈম হক ও তুষার পাল। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট দশেক পরে ব্যান্ড সদস্যদের নিয়ে লবিতে এলেন অনুপম রায়। সেখানে আমরা ছাড়া অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন। অনুপমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁরা। প্রিয় শিল্পীর জন্য নিয়ে এসেছেন পাঞ্জাবি ও রসগোল্লা। ভক্তদের সঙ্গে মিনিট দশেক কথা বলে, ছবি তুলে ও অটোগ্রাফ দিয়ে ফিরে এলেন অনুপম রায়। বসলেন মুখোমুখি। কয়েক বছর পর শুক্রবার (১০ মার্চ) ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। রাতে শো নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে। সাক্ষাৎকারটি শেষ করেই শোয়ের উদ্দেশে বেরোবেন। হাতে তাই সময় খুব কম।
এবার খুব টাইট শিডিউল, নাকি?
প্রতিবারই তাই হয়।
আপনার নতুন অ্যালবাম ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’-এর দুটো গান শুনলাম…
সবে রিলিজ করেছে।
ছয় বছরের মাথায় আপনার পঞ্চম অ্যালবাম?
হ্যাঁ।
অ্যালবামের দুটো গান ‘কেমন আছো অ্যানি হল’ ও ‘অবস’ শুনে মনে হয়েছে, কথায়-সুরে এই গানগুলো আরো ব্যক্তিগত, আরো গভীর। আপনার ভাবনা কী রকম ছিল ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামটি করার সময়?
আসলে বহু দিন ধরে সিনেমার কাজ করছি। তারপর সিঙ্গেলের কাজ। আজকাল তো অ্যালবাম তেমন আর হয় না। আমরা আর্টিস্টরা সবাই সিঙ্গেল রিলিজ করি, কারণ মানুষের গোটা অ্যালবাম শোনার ধৈর্য চলে গেছে। তো অনেক গান আমি করেছি বিভিন্ন মিউজিক লেবেলের জন্য। সেখানে একটা বাধ্যবাধকতা থাকে যে, একটু আনন্দের কিংবা মানুষকে একটু এন্টারটেইন করার। এন্টারটেইনমেন্ট ফ্যাক্টরটা খুব ইমপরটেন্ট থাকে আমরা যখন কারো জন্য গান করি। কারণ মানুষ গানবাজনা থেকে এন্টারটেইনমেন্ট চায়। আবার এমন অনেক গান তৈরি হয়, সেখানে কোনো এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালু নেই। বিনোদন দেওয়ার জন্য এই গানগুলো (‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামের গান) করিনি আমি। কারণ আমি তো আমার জীবন থেকে, আমার দর্শন থেকে গানগুলো বানাচ্ছি। আমার সব সময় দায়বদ্ধতা থাকে না যে মানুষকে বিনোদন দিতেই হবে। সেই জায়গা থেকে অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছিল একটা অ্যালবাম করতে চাই, যেখানে এমন কিছু গান থাকবে, যেগুলো মানুষকে বিনোদন দেবে না। সেই রকম কিছু গান নিয়ে এই অ্যালবাম তৈরি করেছি।
বিনোদন যদি কেউ পেতে চায়, সেটা তাঁর ব্যাপার…
হ্যাঁ, সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
[দ্য অনুপম রায় ব্যান্ডের ম্যানেজার রানা সিংহ রায় এগিয়ে এলেন। অনুপমকে জিজ্ঞেস করলেন, কফি বা স্ন্যাকস কিছু চান কি না। অনুপম ‘না’ সূচক জবাব দিলেন। বলে দিলেন, ‘পারলে সঙ্গে করে একটা জলের বোতল নিস।’ রানার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ শেষ করে আবার সাক্ষাৎকারে ফিরে এলেন অনুপম]
‘অবস’ গানের ভিডিওতে একটা মানুষ দার্জিলিংয়ের নির্জনতার মধ্যে সারাক্ষণ কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। একটা তারবিহীন টেলিফোনে কথা বলছে। এটা কি অনেকটা নিজের সঙ্গে নিজের কথা? নিজেকে খুঁজে ফেরা?
‘অবস’ আসলে আমার এক দশক আগের লেখা গান। যে ছেলেটির সঙ্গে কাজ করেছি, রাতুল, ও গিটার বাজায়, মিউজিক অ্যারেঞ্জ করতে আমাকে সাহায্য করেছে। ওর সঙ্গে বহু দিন ধরে কাজ করার কথা ছিল। এ গানটা পড়েই ছিল। এটা আমার খুব প্রিয় গান। গানটার মূল যে বক্তব্য, যে ফিল, সেটা হচ্ছে—মানুষ জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। হিউম্যান রিলেশন নিয়ে গান। (একটা মানুষ) তার কোনো অনুভূতি থেকে গানটা গাইছে এবং সে অবস হয়ে পড়ছে। একটা বিষণ্নতা চেপে ধরছে। কী কারণ, ওগুলো তো ইলাবরেটলি গানের মধ্যে নেই। কিন্তু তার অনুভূতিগুলোই গানের মধ্য দিয়ে বেরিয়েছে। সে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথাই হয়তো বলছে। এখান থেকেই খুব একটা ডার্ক, একটা মেলানকলি সুর তৈরি হয়েছিল। সেটাই রেখেছি ইচ্ছে করে। কারণ আমি জানি, এটার থেকে কেউ খুব একটা এন্টারটেইন হয়তো হবে না।
অ্যালবামের দুটো গান তো বেরিয়ে গেল। শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?
প্রতিক্রিয়া খুবই ভালো পাচ্ছি। কারণ আমার বহু ভক্ত আছে, বহু শ্রোতা আছে, যারা শোনে আমার গান। যারা আমার ফিলোসফিতে বিশ্বাস করে। এবং কোনো একটা শিল্প কনজিউম করার সময় তারাও হয়তো বিশ্বাস করে, সব সময় যে বিনোদন পেতে কনজিউম করছে তা নয়। নিজেকে ভাবাতে, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টা করছে এবং হয়তো এ গানগুলো সেটাতে সাহায্য করছে।
‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামে ৯টি গান থাকছে?
আটটা মনে হয় থাকবে শেষ পর্যন্ত।
গানগুলো কি এক সপ্তাহ পরপর রিলিজ হবে?
হ্যাঁ, দুই সপ্তাহ পর ‘অবস’ বেরিয়েছে। এবার দেখি পরের গানটা কবে রিলিজ করে।
গান তো রেডি হয়ে আছে। তাহলে রিলিজ নিয়ে এত অনিশ্চয়তা কেন?
গান রেডি হয়ে আছে। তবে সমস্যা হলো, আজকাল গান রিলিজ করা খুব ঝামেলার। প্রতি গানের জন্য ভিডিও লাগে। সেগুলো করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং সেটার জন্য অনেকটা এফোর্ট যায়। সেগুলো করছি, দেখি কবে পারি! কমিট করছি না এখনই কিছু।
অ্যালবামের নাম দিয়েছেন ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’। এই অদৃশ্য নাগরদোলা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
আমাদের জীবনের কথাই বলা হচ্ছে। আমরা নিজের অজান্তে কখন চড়ে বসেছি এই জীবনের নাগরদোলায় এবং দুলে চলেছি, ঘুরে চলেছি। যখন আমি নাগরদোলার কথা বলছি, সেটা আমি দেখতে পাই। যখনই তার সামনে একটা ‘অদৃশ্য’ শব্দ বসিয়ে দেওয়া হয়, সেটা যেন চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল। কিন্তু আসলে সেটা আছে। আমাদের জীবনে এ রকম বহু কিছু আছে, যেগুলো হয়তো আছে অথচ নেই। কিংবা নেই মনে হচ্ছে, কিন্তু আসলে আছে। এই সাবজেক্টটা নিয়ে বিভিন্ন গান তৈরি হয়েছে।
আরেকটা গান আছে ‘বিচার’ বলে। সব দেশেই বিচারব্যবস্থা আছে। আইন আছে। দেশের অনেক মানুষ সেই আইন সম্বন্ধে জানেই না। জানলেও তারা সেই বিচারব্যবস্থার সুফল জীবনে পায় না। এ রকম ছোট ছোট জিনিস তুলেছি আমি, যেগুলো সমাজে আমরা দেখতে পাই। এবং নিজেরাই বুঝতে পারি না, সেগুলো আছে নাকি নেই! সেই অদৃশ্য নাগরদোলার কথাই অ্যালবামের মধ্যে বলা আছে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে আপনার গান শুনছেন দুই বাংলার শ্রোতারা। নিজেদের প্রেম, বিরহ, উদ্যাপন—সবকিছুতে আপনার গানের কাছে একটা আশ্রয় খোঁজেন তাঁরা। নতুন গান তৈরির সময় শ্রোতাদের এই প্রত্যাশা কীভাবে সামলান?
আমি যখন গান বানাচ্ছি, আমি তো জানি না, আমার যে অনুভূতি তার সঙ্গে আরেকজন একাত্ম হবেন কি না। কারো মনে হতেই পারে আমার অনুভূতিটা ফালতু। আমার সঙ্গে তার কোনো যোগই নেই। সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি একাত্ম হয়ে যায়, সেটাই বরং অ্যাকসিডেন্ট। সেখান থেকে ডেফিনেটলি একটা প্রেসার তৈরি হয় যে, আগেরবার আমি কানেক্ট করতে পেরেছিলাম, এবার পারছি কি না। ফলে আমার ওই দায়বদ্ধতাটা থাকা উচিত না যে, কে কানেক্ট করতে পারছে আর কে পারছে না। আমি গান করছি। যদি কেউ কানেক্ট করতে পারে করবে, যদি কেউ না পারে করবে না।
এই কানেকশনটা আপনি বলছেন ‘অ্যাকসিডেন্ট’। তবে আপনার গানের সঙ্গে ব্যাপারটা বেশিই ঘটে। এটা চাপ হয়ে যায় কি না?
ডেফিনেটলি। যখন জীবন শুরু করেছিলাম, তখন কোনো প্রেশারই ছিল না। কেউ শোনেইনি আমার গান। এখন অনেক মানুষ শুনেছে, অনেক মানুষের অনেক রকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে। তারা তাদের প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে ফিরে আসছে।
সমাজের নানা ইতিবাচক-নেতিবাচক ঘটনা, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা—সবকিছু আপনাকে নিশ্চয়ই প্রভাবিত করে। আপনার গান কিংবা কবিতা লিখতে ইন্সপায়ারিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে কোন বিষয়গুলো?
একেক দিন একেকটা করে আরকি। একেক সময় একেকটা বিষয় নিয়ে বেশি ভাবিত হই। একেকটা ছবি দেখি বা বই পড়ি, সেটার মধ্যে বেশি ডুবে থাকি। সুতরাং কোনো একটা জিনিস নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।
[অনুপম যতক্ষণ ছিলেন না, হোটেলের লবি ছিল নির্জন। সেই পিনপতন নীরবতা উধাও তিনি লবিতে আসার পরে। এখানে-ওখানে অনেকে জড়ো হয়েছেন, হয়তো অনুপমের সঙ্গে একটু কথা বা একটা ছবি তোলার ইচ্ছা নিয়ে। লবি এখন গমগম করছে। কথা বলতে ও শুনতে অসুবিধা হচ্ছে। গলার আওয়াজ খানিকটা চড়িয়ে দেন অনুপম রায়]
আমি দীর্ঘদিন বাদে বাংলাদেশে এসেছি এবার, এটা হওয়ার কথা নয়। চার-পাঁচ বছর হয়ে গেছে আমি বাংলাদেশ, ঢাকা, চট্টগ্রামে আসতে পারিনি। এটার থেকে একটা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। দেশভ্রমণ বা নতুন জায়গা দেখা বা নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলার অদ্ভুত খিদে আমার আছে। একটা পিপাসা আছে। এখন এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সেটা আমাকে অনেক বেশি তাড়িত করছে। এই যে এসেছি, এটা আমার খুব ভালো লাগছে, এত দিন বাদে আমি ঢাকা শহরে এলাম। এয়ারপোর্টের রোডটা বেশি পাল্টে গেছে। সেটার খবর আমার কাছে ছিল না। রাস্তায় তো কনস্ট্রাকশনে দেখলাম ভরে গেছে। বলুন আর কী জানতে চান…
সোশ্যাল মিডিয়ায় তো আমরা নানা রকম কনটেন্ট দেখছি এখন। প্রচুর গান, রিলস, ভিডিও। মানুষকে হঠাৎ করে অনেক রকম কনটেন্টের মধ্যে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর ভিড়ে ভালো গান কিংবা যে কোনো ভালো কনটেন্টের প্রতি মুগ্ধতা কীভাবে বজায় থাকবে?
আসলে দিনের শেষে মানুষের যেটা ভালো লাগবে, সে সেটাই করবে। তার হাতে এখন কন্ট্রোল। আগে যে রকম ছিল, গানের ক্ষেত্রে যদি বলি, রেডিওতে যে গান বাজানো হবে, তাই-ই মানুষকে শুনতে হবে। বাড়িতে যে গ্রামোফোন রেকর্ড কেনা হবে, সে রেকর্ডই বাজবে। এর বাইরে অন্য গান সে শুনতে পাবে না। এখন মানুষের হাতে এত অপশন! ফলে তার সিনেমা দেখার ধরন, গান শোনার ধরন সব পাল্টে গেছে। আগে সিনেমা দেখতে গেলে প্রেক্ষাগৃহে যেতে হতো এবং সিনেমা হলের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। এখন মানুষ মোবাইল ফোনে দেখে। যদি কোনো সিন ভালো না লাগে স্ক্রল করে যায়, ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে দেয়।
সুতরাং দেখার অভ্যাস পাল্টে গেছে। গান শোনার অভ্যাস পাল্টে গেছে। আগে ক্যাসেটে যেটা হতো, খারাপ লাগলেও গানটা শুনতে হতো, তারপর পরের গানে যেতে হতো। এখন কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে পাল্টে দেওয়া যায়। সুতরাং আমরা যারা শিল্প তৈরি করার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এটা সমস্যার। কারণ মানুষের হাতে এত পাওয়ার চলে গেছে! যার ফলে আমরা কোনো একটা ভুল পদক্ষেপ নিতে পারি না। আমাদের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ ঠিক হতে হবে, না হলে মানুষ আমাদের গানও পাল্টে দেবে।
আপনি বললেন মানুষের দেখার ধরন পাল্টে গেছে। বড় কনটেন্ট দেখার বা শোনার ধৈর্য কমে যাচ্ছে। তো এখন যে দৈর্ঘ্যের গান তৈরি হচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটা আরো ছোট হয়ে যেতে পারে কি?
হতে পারে। ভবিষ্যতে কী লেখা আছে আমরা জানি না। এগুলো সবই বিনোদন এবং আনন্দ পাওয়ার জিনিস হয়ে যাচ্ছে। তাতে যদি বিনোদন পায় সে পাবে। সে ওইটাই শুনবে। কিন্তু ক্রিয়েটর হিসেবে আমাকে অতটা ভাবলে চলবে না। আমি যখন কোনো গান বানাচ্ছি, আমি তো অনুভূতিকে কথায়-সুরে প্রকাশ করছি। সেইটা যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। এবার গান তিন মিনিটের হলো, নাকি সাত মিনিটের হলো, আমি তো জানি না। কারণ আমার লেখা যত হবে, গানটার লেন্থ তা-ই হবে। তারপর মানুষ কী করবে, সেটা মানুষের হাতে।
এই যে নানা সময়ে হুটহাট এক-দুটো গান উড়ে আসে। যেটা হয়তো এক-দুই সপ্তাহ ধরে মানুষ শোনে। সেটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক চলতে থাকে। তারপর সেগুলো অতি দ্রুত হারিয়েও যায়। এই ‘ভাইরাল’ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
শিল্পীরাও চায় যে ভাইরাল হোক। নিজেরাই গান বানিয়ে নিজেরাই হ্যাশট্যাগ ভাইরাল লিখে পোস্ট করে। ভাইরাল হওয়া মানে কী? খুব জনপ্রিয় হওয়া। মানুষ জনপ্রিয়তা পছন্দ করে। কারণ জনপ্রিয় হওয়ার অনেক সুবিধা আছে। একটা অদ্ভুত আনন্দ দেয় যে, এত মানুষ ভালো বলছে। তবে শিল্পের খাতিরে যে গান বানাচ্ছি, সব গান ভাইরাল হওয়ার জন্য নয়, সব শিল্প ভাইরাল হওয়ার নয়। কিছু হবে, কিছু হবে না। এবং মেজরিটিই হবে না। তার মানে যে সেগুলো ফেলনা, তা নয়। সেগুলো কোনো মানুষকে কোন সময়ে কী দিয়েছে, সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারে না। আমি বলতেই পারি, আমার অনেক প্রিয় শিল্পীর গান যেগুলো অতটা জনপ্রিয় না, কিন্তু আমার কোনো জ্বরের সময় হয়তো সেগুলো শুনেছি এবং সেই গানের মধ্যে ডুবে গিয়েছি। এমন হয়েছে, আমার সারা দিন ভালো যায়নি, তারপর কোনো উপন্যাস পড়েছি। সেই উপন্যাসের মধ্যে এমন ডুবে গেছি, ওই লেখার মধ্যে আমি একটা আলাদা জগৎ, আলাদা জীবন খুঁজে পেয়েছি। সেগুলোর মূল্য কী? সেগুলোকে তো ভাইরাল বা এসব দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। সেগুলো তো আমার জীবনে ঘটেছে। যে শিল্পের মধ্য দিয়ে এটা ঘটেছে, সেই শিল্প তো আমার কাছে অত্যন্ত কাছের। এবং সেটা আজকে দশটা লোক খারাপ বললেও আমার কাছে ভালো লাগার জায়গাতেই থাকবে। সুতরাং আমি অত চিন্তিত নই ভাইরাল নিয়ে। কারণ এর কোনো শেষ নেই। এটা একটা অসম্ভব রাক্ষুসে খিদের মতো ব্যাপার। এ কোনো দিন মেটানো যাবে না।
[হোটেলের বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অনুপমের ব্যান্ডের সবাই গাড়িতে উঠে পড়েছেন। অনুপম এলেই গাড়ি ছুটবে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে। সেখানে রাতে পারফর্ম করবে অনুপমের ব্যান্ড। ম্যানেজার রানা এসে নিচু স্বরে অনুপমকে বললেন, ‘আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা রওনা দেব।’ অর্থাৎ আলাপ শেষ করতে হবে। একটু হালকা চালেই তাই শেষ প্রশ্নটা করা হলো]
বসন্ত এলেই চারদিকে আপনার ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি বাজতে শোনা যায়। আপনার বসন্ত কেমন কাটছে এবার?
বসন্ত ভালো শুরু হয়েছে, তার কারণ আমি বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। এর আগে প্রতি বছর বা প্রতি তিন মাস অন্তর একবার করে রিকোয়েস্ট আসত, তারপর সেই অনুষ্ঠান হতো না। ফাইনালি এই যে অনুষ্ঠানটি হচ্ছে, স্টেজে গেলে বুঝতে পারব হচ্ছে কি না, সেটার জন্য আমি খুবই আনন্দিত। এটা আমার খুব পছন্দের জায়গা, পছন্দের শহর, পছন্দের মানুষজন। ইচ্ছে করে এখানে এসে অনেক দিন থাকি। সব সময় হয়ে ওঠে না। এইভাবে দেখতে গেলে বসন্ত আমার ভালোই শুরু হয়েছে।
[আমাদের বিদায় দিয়ে, আরো কয়েকটি সেলফির আবদার মিটিয়ে, হোটেলের সামনে রাখা গাড়িতে গিয়ে বসলেন অনুপম রায়। যাওয়ার আগে বললেন, সকালেই ফিরতে হবে। এবার তো বেশি সময় পাওয়া গেল না। পরেরবার এসে ঘোরাঘুরিটা আরেকটু জমিয়ে হবে।]
খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন অনুপম রায়। ৬টা থেকে হোটেল লবিতে অপেক্ষা। সঙ্গে আজকের পত্রিকার আরও দুই সাংবাদিক নাঈম হক ও তুষার পাল। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট দশেক পরে ব্যান্ড সদস্যদের নিয়ে লবিতে এলেন অনুপম রায়। সেখানে আমরা ছাড়া অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন। অনুপমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁরা। প্রিয় শিল্পীর জন্য নিয়ে এসেছেন পাঞ্জাবি ও রসগোল্লা। ভক্তদের সঙ্গে মিনিট দশেক কথা বলে, ছবি তুলে ও অটোগ্রাফ দিয়ে ফিরে এলেন অনুপম রায়। বসলেন মুখোমুখি। কয়েক বছর পর শুক্রবার (১০ মার্চ) ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। রাতে শো নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে। সাক্ষাৎকারটি শেষ করেই শোয়ের উদ্দেশে বেরোবেন। হাতে তাই সময় খুব কম।
এবার খুব টাইট শিডিউল, নাকি?
প্রতিবারই তাই হয়।
আপনার নতুন অ্যালবাম ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’-এর দুটো গান শুনলাম…
সবে রিলিজ করেছে।
ছয় বছরের মাথায় আপনার পঞ্চম অ্যালবাম?
হ্যাঁ।
অ্যালবামের দুটো গান ‘কেমন আছো অ্যানি হল’ ও ‘অবস’ শুনে মনে হয়েছে, কথায়-সুরে এই গানগুলো আরো ব্যক্তিগত, আরো গভীর। আপনার ভাবনা কী রকম ছিল ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামটি করার সময়?
আসলে বহু দিন ধরে সিনেমার কাজ করছি। তারপর সিঙ্গেলের কাজ। আজকাল তো অ্যালবাম তেমন আর হয় না। আমরা আর্টিস্টরা সবাই সিঙ্গেল রিলিজ করি, কারণ মানুষের গোটা অ্যালবাম শোনার ধৈর্য চলে গেছে। তো অনেক গান আমি করেছি বিভিন্ন মিউজিক লেবেলের জন্য। সেখানে একটা বাধ্যবাধকতা থাকে যে, একটু আনন্দের কিংবা মানুষকে একটু এন্টারটেইন করার। এন্টারটেইনমেন্ট ফ্যাক্টরটা খুব ইমপরটেন্ট থাকে আমরা যখন কারো জন্য গান করি। কারণ মানুষ গানবাজনা থেকে এন্টারটেইনমেন্ট চায়। আবার এমন অনেক গান তৈরি হয়, সেখানে কোনো এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালু নেই। বিনোদন দেওয়ার জন্য এই গানগুলো (‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামের গান) করিনি আমি। কারণ আমি তো আমার জীবন থেকে, আমার দর্শন থেকে গানগুলো বানাচ্ছি। আমার সব সময় দায়বদ্ধতা থাকে না যে মানুষকে বিনোদন দিতেই হবে। সেই জায়গা থেকে অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছিল একটা অ্যালবাম করতে চাই, যেখানে এমন কিছু গান থাকবে, যেগুলো মানুষকে বিনোদন দেবে না। সেই রকম কিছু গান নিয়ে এই অ্যালবাম তৈরি করেছি।
বিনোদন যদি কেউ পেতে চায়, সেটা তাঁর ব্যাপার…
হ্যাঁ, সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
[দ্য অনুপম রায় ব্যান্ডের ম্যানেজার রানা সিংহ রায় এগিয়ে এলেন। অনুপমকে জিজ্ঞেস করলেন, কফি বা স্ন্যাকস কিছু চান কি না। অনুপম ‘না’ সূচক জবাব দিলেন। বলে দিলেন, ‘পারলে সঙ্গে করে একটা জলের বোতল নিস।’ রানার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ শেষ করে আবার সাক্ষাৎকারে ফিরে এলেন অনুপম]
‘অবস’ গানের ভিডিওতে একটা মানুষ দার্জিলিংয়ের নির্জনতার মধ্যে সারাক্ষণ কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। একটা তারবিহীন টেলিফোনে কথা বলছে। এটা কি অনেকটা নিজের সঙ্গে নিজের কথা? নিজেকে খুঁজে ফেরা?
‘অবস’ আসলে আমার এক দশক আগের লেখা গান। যে ছেলেটির সঙ্গে কাজ করেছি, রাতুল, ও গিটার বাজায়, মিউজিক অ্যারেঞ্জ করতে আমাকে সাহায্য করেছে। ওর সঙ্গে বহু দিন ধরে কাজ করার কথা ছিল। এ গানটা পড়েই ছিল। এটা আমার খুব প্রিয় গান। গানটার মূল যে বক্তব্য, যে ফিল, সেটা হচ্ছে—মানুষ জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। হিউম্যান রিলেশন নিয়ে গান। (একটা মানুষ) তার কোনো অনুভূতি থেকে গানটা গাইছে এবং সে অবস হয়ে পড়ছে। একটা বিষণ্নতা চেপে ধরছে। কী কারণ, ওগুলো তো ইলাবরেটলি গানের মধ্যে নেই। কিন্তু তার অনুভূতিগুলোই গানের মধ্য দিয়ে বেরিয়েছে। সে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথাই হয়তো বলছে। এখান থেকেই খুব একটা ডার্ক, একটা মেলানকলি সুর তৈরি হয়েছিল। সেটাই রেখেছি ইচ্ছে করে। কারণ আমি জানি, এটার থেকে কেউ খুব একটা এন্টারটেইন হয়তো হবে না।
অ্যালবামের দুটো গান তো বেরিয়ে গেল। শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?
প্রতিক্রিয়া খুবই ভালো পাচ্ছি। কারণ আমার বহু ভক্ত আছে, বহু শ্রোতা আছে, যারা শোনে আমার গান। যারা আমার ফিলোসফিতে বিশ্বাস করে। এবং কোনো একটা শিল্প কনজিউম করার সময় তারাও হয়তো বিশ্বাস করে, সব সময় যে বিনোদন পেতে কনজিউম করছে তা নয়। নিজেকে ভাবাতে, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টা করছে এবং হয়তো এ গানগুলো সেটাতে সাহায্য করছে।
‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামে ৯টি গান থাকছে?
আটটা মনে হয় থাকবে শেষ পর্যন্ত।
গানগুলো কি এক সপ্তাহ পরপর রিলিজ হবে?
হ্যাঁ, দুই সপ্তাহ পর ‘অবস’ বেরিয়েছে। এবার দেখি পরের গানটা কবে রিলিজ করে।
গান তো রেডি হয়ে আছে। তাহলে রিলিজ নিয়ে এত অনিশ্চয়তা কেন?
গান রেডি হয়ে আছে। তবে সমস্যা হলো, আজকাল গান রিলিজ করা খুব ঝামেলার। প্রতি গানের জন্য ভিডিও লাগে। সেগুলো করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং সেটার জন্য অনেকটা এফোর্ট যায়। সেগুলো করছি, দেখি কবে পারি! কমিট করছি না এখনই কিছু।
অ্যালবামের নাম দিয়েছেন ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’। এই অদৃশ্য নাগরদোলা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
আমাদের জীবনের কথাই বলা হচ্ছে। আমরা নিজের অজান্তে কখন চড়ে বসেছি এই জীবনের নাগরদোলায় এবং দুলে চলেছি, ঘুরে চলেছি। যখন আমি নাগরদোলার কথা বলছি, সেটা আমি দেখতে পাই। যখনই তার সামনে একটা ‘অদৃশ্য’ শব্দ বসিয়ে দেওয়া হয়, সেটা যেন চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল। কিন্তু আসলে সেটা আছে। আমাদের জীবনে এ রকম বহু কিছু আছে, যেগুলো হয়তো আছে অথচ নেই। কিংবা নেই মনে হচ্ছে, কিন্তু আসলে আছে। এই সাবজেক্টটা নিয়ে বিভিন্ন গান তৈরি হয়েছে।
আরেকটা গান আছে ‘বিচার’ বলে। সব দেশেই বিচারব্যবস্থা আছে। আইন আছে। দেশের অনেক মানুষ সেই আইন সম্বন্ধে জানেই না। জানলেও তারা সেই বিচারব্যবস্থার সুফল জীবনে পায় না। এ রকম ছোট ছোট জিনিস তুলেছি আমি, যেগুলো সমাজে আমরা দেখতে পাই। এবং নিজেরাই বুঝতে পারি না, সেগুলো আছে নাকি নেই! সেই অদৃশ্য নাগরদোলার কথাই অ্যালবামের মধ্যে বলা আছে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে আপনার গান শুনছেন দুই বাংলার শ্রোতারা। নিজেদের প্রেম, বিরহ, উদ্যাপন—সবকিছুতে আপনার গানের কাছে একটা আশ্রয় খোঁজেন তাঁরা। নতুন গান তৈরির সময় শ্রোতাদের এই প্রত্যাশা কীভাবে সামলান?
আমি যখন গান বানাচ্ছি, আমি তো জানি না, আমার যে অনুভূতি তার সঙ্গে আরেকজন একাত্ম হবেন কি না। কারো মনে হতেই পারে আমার অনুভূতিটা ফালতু। আমার সঙ্গে তার কোনো যোগই নেই। সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি একাত্ম হয়ে যায়, সেটাই বরং অ্যাকসিডেন্ট। সেখান থেকে ডেফিনেটলি একটা প্রেসার তৈরি হয় যে, আগেরবার আমি কানেক্ট করতে পেরেছিলাম, এবার পারছি কি না। ফলে আমার ওই দায়বদ্ধতাটা থাকা উচিত না যে, কে কানেক্ট করতে পারছে আর কে পারছে না। আমি গান করছি। যদি কেউ কানেক্ট করতে পারে করবে, যদি কেউ না পারে করবে না।
এই কানেকশনটা আপনি বলছেন ‘অ্যাকসিডেন্ট’। তবে আপনার গানের সঙ্গে ব্যাপারটা বেশিই ঘটে। এটা চাপ হয়ে যায় কি না?
ডেফিনেটলি। যখন জীবন শুরু করেছিলাম, তখন কোনো প্রেশারই ছিল না। কেউ শোনেইনি আমার গান। এখন অনেক মানুষ শুনেছে, অনেক মানুষের অনেক রকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে। তারা তাদের প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে ফিরে আসছে।
সমাজের নানা ইতিবাচক-নেতিবাচক ঘটনা, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা—সবকিছু আপনাকে নিশ্চয়ই প্রভাবিত করে। আপনার গান কিংবা কবিতা লিখতে ইন্সপায়ারিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে কোন বিষয়গুলো?
একেক দিন একেকটা করে আরকি। একেক সময় একেকটা বিষয় নিয়ে বেশি ভাবিত হই। একেকটা ছবি দেখি বা বই পড়ি, সেটার মধ্যে বেশি ডুবে থাকি। সুতরাং কোনো একটা জিনিস নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।
[অনুপম যতক্ষণ ছিলেন না, হোটেলের লবি ছিল নির্জন। সেই পিনপতন নীরবতা উধাও তিনি লবিতে আসার পরে। এখানে-ওখানে অনেকে জড়ো হয়েছেন, হয়তো অনুপমের সঙ্গে একটু কথা বা একটা ছবি তোলার ইচ্ছা নিয়ে। লবি এখন গমগম করছে। কথা বলতে ও শুনতে অসুবিধা হচ্ছে। গলার আওয়াজ খানিকটা চড়িয়ে দেন অনুপম রায়]
আমি দীর্ঘদিন বাদে বাংলাদেশে এসেছি এবার, এটা হওয়ার কথা নয়। চার-পাঁচ বছর হয়ে গেছে আমি বাংলাদেশ, ঢাকা, চট্টগ্রামে আসতে পারিনি। এটার থেকে একটা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। দেশভ্রমণ বা নতুন জায়গা দেখা বা নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলার অদ্ভুত খিদে আমার আছে। একটা পিপাসা আছে। এখন এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সেটা আমাকে অনেক বেশি তাড়িত করছে। এই যে এসেছি, এটা আমার খুব ভালো লাগছে, এত দিন বাদে আমি ঢাকা শহরে এলাম। এয়ারপোর্টের রোডটা বেশি পাল্টে গেছে। সেটার খবর আমার কাছে ছিল না। রাস্তায় তো কনস্ট্রাকশনে দেখলাম ভরে গেছে। বলুন আর কী জানতে চান…
সোশ্যাল মিডিয়ায় তো আমরা নানা রকম কনটেন্ট দেখছি এখন। প্রচুর গান, রিলস, ভিডিও। মানুষকে হঠাৎ করে অনেক রকম কনটেন্টের মধ্যে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর ভিড়ে ভালো গান কিংবা যে কোনো ভালো কনটেন্টের প্রতি মুগ্ধতা কীভাবে বজায় থাকবে?
আসলে দিনের শেষে মানুষের যেটা ভালো লাগবে, সে সেটাই করবে। তার হাতে এখন কন্ট্রোল। আগে যে রকম ছিল, গানের ক্ষেত্রে যদি বলি, রেডিওতে যে গান বাজানো হবে, তাই-ই মানুষকে শুনতে হবে। বাড়িতে যে গ্রামোফোন রেকর্ড কেনা হবে, সে রেকর্ডই বাজবে। এর বাইরে অন্য গান সে শুনতে পাবে না। এখন মানুষের হাতে এত অপশন! ফলে তার সিনেমা দেখার ধরন, গান শোনার ধরন সব পাল্টে গেছে। আগে সিনেমা দেখতে গেলে প্রেক্ষাগৃহে যেতে হতো এবং সিনেমা হলের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। এখন মানুষ মোবাইল ফোনে দেখে। যদি কোনো সিন ভালো না লাগে স্ক্রল করে যায়, ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে দেয়।
সুতরাং দেখার অভ্যাস পাল্টে গেছে। গান শোনার অভ্যাস পাল্টে গেছে। আগে ক্যাসেটে যেটা হতো, খারাপ লাগলেও গানটা শুনতে হতো, তারপর পরের গানে যেতে হতো। এখন কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে পাল্টে দেওয়া যায়। সুতরাং আমরা যারা শিল্প তৈরি করার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এটা সমস্যার। কারণ মানুষের হাতে এত পাওয়ার চলে গেছে! যার ফলে আমরা কোনো একটা ভুল পদক্ষেপ নিতে পারি না। আমাদের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ ঠিক হতে হবে, না হলে মানুষ আমাদের গানও পাল্টে দেবে।
আপনি বললেন মানুষের দেখার ধরন পাল্টে গেছে। বড় কনটেন্ট দেখার বা শোনার ধৈর্য কমে যাচ্ছে। তো এখন যে দৈর্ঘ্যের গান তৈরি হচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটা আরো ছোট হয়ে যেতে পারে কি?
হতে পারে। ভবিষ্যতে কী লেখা আছে আমরা জানি না। এগুলো সবই বিনোদন এবং আনন্দ পাওয়ার জিনিস হয়ে যাচ্ছে। তাতে যদি বিনোদন পায় সে পাবে। সে ওইটাই শুনবে। কিন্তু ক্রিয়েটর হিসেবে আমাকে অতটা ভাবলে চলবে না। আমি যখন কোনো গান বানাচ্ছি, আমি তো অনুভূতিকে কথায়-সুরে প্রকাশ করছি। সেইটা যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। এবার গান তিন মিনিটের হলো, নাকি সাত মিনিটের হলো, আমি তো জানি না। কারণ আমার লেখা যত হবে, গানটার লেন্থ তা-ই হবে। তারপর মানুষ কী করবে, সেটা মানুষের হাতে।
এই যে নানা সময়ে হুটহাট এক-দুটো গান উড়ে আসে। যেটা হয়তো এক-দুই সপ্তাহ ধরে মানুষ শোনে। সেটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক চলতে থাকে। তারপর সেগুলো অতি দ্রুত হারিয়েও যায়। এই ‘ভাইরাল’ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
শিল্পীরাও চায় যে ভাইরাল হোক। নিজেরাই গান বানিয়ে নিজেরাই হ্যাশট্যাগ ভাইরাল লিখে পোস্ট করে। ভাইরাল হওয়া মানে কী? খুব জনপ্রিয় হওয়া। মানুষ জনপ্রিয়তা পছন্দ করে। কারণ জনপ্রিয় হওয়ার অনেক সুবিধা আছে। একটা অদ্ভুত আনন্দ দেয় যে, এত মানুষ ভালো বলছে। তবে শিল্পের খাতিরে যে গান বানাচ্ছি, সব গান ভাইরাল হওয়ার জন্য নয়, সব শিল্প ভাইরাল হওয়ার নয়। কিছু হবে, কিছু হবে না। এবং মেজরিটিই হবে না। তার মানে যে সেগুলো ফেলনা, তা নয়। সেগুলো কোনো মানুষকে কোন সময়ে কী দিয়েছে, সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারে না। আমি বলতেই পারি, আমার অনেক প্রিয় শিল্পীর গান যেগুলো অতটা জনপ্রিয় না, কিন্তু আমার কোনো জ্বরের সময় হয়তো সেগুলো শুনেছি এবং সেই গানের মধ্যে ডুবে গিয়েছি। এমন হয়েছে, আমার সারা দিন ভালো যায়নি, তারপর কোনো উপন্যাস পড়েছি। সেই উপন্যাসের মধ্যে এমন ডুবে গেছি, ওই লেখার মধ্যে আমি একটা আলাদা জগৎ, আলাদা জীবন খুঁজে পেয়েছি। সেগুলোর মূল্য কী? সেগুলোকে তো ভাইরাল বা এসব দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। সেগুলো তো আমার জীবনে ঘটেছে। যে শিল্পের মধ্য দিয়ে এটা ঘটেছে, সেই শিল্প তো আমার কাছে অত্যন্ত কাছের। এবং সেটা আজকে দশটা লোক খারাপ বললেও আমার কাছে ভালো লাগার জায়গাতেই থাকবে। সুতরাং আমি অত চিন্তিত নই ভাইরাল নিয়ে। কারণ এর কোনো শেষ নেই। এটা একটা অসম্ভব রাক্ষুসে খিদের মতো ব্যাপার। এ কোনো দিন মেটানো যাবে না।
[হোটেলের বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অনুপমের ব্যান্ডের সবাই গাড়িতে উঠে পড়েছেন। অনুপম এলেই গাড়ি ছুটবে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে। সেখানে রাতে পারফর্ম করবে অনুপমের ব্যান্ড। ম্যানেজার রানা এসে নিচু স্বরে অনুপমকে বললেন, ‘আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা রওনা দেব।’ অর্থাৎ আলাপ শেষ করতে হবে। একটু হালকা চালেই তাই শেষ প্রশ্নটা করা হলো]
বসন্ত এলেই চারদিকে আপনার ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি বাজতে শোনা যায়। আপনার বসন্ত কেমন কাটছে এবার?
বসন্ত ভালো শুরু হয়েছে, তার কারণ আমি বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। এর আগে প্রতি বছর বা প্রতি তিন মাস অন্তর একবার করে রিকোয়েস্ট আসত, তারপর সেই অনুষ্ঠান হতো না। ফাইনালি এই যে অনুষ্ঠানটি হচ্ছে, স্টেজে গেলে বুঝতে পারব হচ্ছে কি না, সেটার জন্য আমি খুবই আনন্দিত। এটা আমার খুব পছন্দের জায়গা, পছন্দের শহর, পছন্দের মানুষজন। ইচ্ছে করে এখানে এসে অনেক দিন থাকি। সব সময় হয়ে ওঠে না। এইভাবে দেখতে গেলে বসন্ত আমার ভালোই শুরু হয়েছে।
[আমাদের বিদায় দিয়ে, আরো কয়েকটি সেলফির আবদার মিটিয়ে, হোটেলের সামনে রাখা গাড়িতে গিয়ে বসলেন অনুপম রায়। যাওয়ার আগে বললেন, সকালেই ফিরতে হবে। এবার তো বেশি সময় পাওয়া গেল না। পরেরবার এসে ঘোরাঘুরিটা আরেকটু জমিয়ে হবে।]

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন অনুপম রায়। ৬টা থেকে হোটেল লবিতে অপেক্ষা। সঙ্গে আজকের পত্রিকার আরও দুই সাংবাদিক নাঈম হক ও তুষার পাল। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট দশেক পরে ব্যান্ড সদস্যদের নিয়ে লবিতে এলেন অনুপম রায়। সেখানে আমরা ছাড়া অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন। অনুপমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁরা। প্রিয় শিল্পীর জন্য নিয়ে এসেছেন পাঞ্জাবি ও রসগোল্লা। ভক্তদের সঙ্গে মিনিট দশেক কথা বলে, ছবি তুলে ও অটোগ্রাফ দিয়ে ফিরে এলেন অনুপম রায়। বসলেন মুখোমুখি। কয়েক বছর পর শুক্রবার (১০ মার্চ) ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। রাতে শো নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে। সাক্ষাৎকারটি শেষ করেই শোয়ের উদ্দেশে বেরোবেন। হাতে তাই সময় খুব কম।
এবার খুব টাইট শিডিউল, নাকি?
প্রতিবারই তাই হয়।
আপনার নতুন অ্যালবাম ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’-এর দুটো গান শুনলাম…
সবে রিলিজ করেছে।
ছয় বছরের মাথায় আপনার পঞ্চম অ্যালবাম?
হ্যাঁ।
অ্যালবামের দুটো গান ‘কেমন আছো অ্যানি হল’ ও ‘অবস’ শুনে মনে হয়েছে, কথায়-সুরে এই গানগুলো আরো ব্যক্তিগত, আরো গভীর। আপনার ভাবনা কী রকম ছিল ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামটি করার সময়?
আসলে বহু দিন ধরে সিনেমার কাজ করছি। তারপর সিঙ্গেলের কাজ। আজকাল তো অ্যালবাম তেমন আর হয় না। আমরা আর্টিস্টরা সবাই সিঙ্গেল রিলিজ করি, কারণ মানুষের গোটা অ্যালবাম শোনার ধৈর্য চলে গেছে। তো অনেক গান আমি করেছি বিভিন্ন মিউজিক লেবেলের জন্য। সেখানে একটা বাধ্যবাধকতা থাকে যে, একটু আনন্দের কিংবা মানুষকে একটু এন্টারটেইন করার। এন্টারটেইনমেন্ট ফ্যাক্টরটা খুব ইমপরটেন্ট থাকে আমরা যখন কারো জন্য গান করি। কারণ মানুষ গানবাজনা থেকে এন্টারটেইনমেন্ট চায়। আবার এমন অনেক গান তৈরি হয়, সেখানে কোনো এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালু নেই। বিনোদন দেওয়ার জন্য এই গানগুলো (‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামের গান) করিনি আমি। কারণ আমি তো আমার জীবন থেকে, আমার দর্শন থেকে গানগুলো বানাচ্ছি। আমার সব সময় দায়বদ্ধতা থাকে না যে মানুষকে বিনোদন দিতেই হবে। সেই জায়গা থেকে অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছিল একটা অ্যালবাম করতে চাই, যেখানে এমন কিছু গান থাকবে, যেগুলো মানুষকে বিনোদন দেবে না। সেই রকম কিছু গান নিয়ে এই অ্যালবাম তৈরি করেছি।
বিনোদন যদি কেউ পেতে চায়, সেটা তাঁর ব্যাপার…
হ্যাঁ, সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
[দ্য অনুপম রায় ব্যান্ডের ম্যানেজার রানা সিংহ রায় এগিয়ে এলেন। অনুপমকে জিজ্ঞেস করলেন, কফি বা স্ন্যাকস কিছু চান কি না। অনুপম ‘না’ সূচক জবাব দিলেন। বলে দিলেন, ‘পারলে সঙ্গে করে একটা জলের বোতল নিস।’ রানার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ শেষ করে আবার সাক্ষাৎকারে ফিরে এলেন অনুপম]
‘অবস’ গানের ভিডিওতে একটা মানুষ দার্জিলিংয়ের নির্জনতার মধ্যে সারাক্ষণ কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। একটা তারবিহীন টেলিফোনে কথা বলছে। এটা কি অনেকটা নিজের সঙ্গে নিজের কথা? নিজেকে খুঁজে ফেরা?
‘অবস’ আসলে আমার এক দশক আগের লেখা গান। যে ছেলেটির সঙ্গে কাজ করেছি, রাতুল, ও গিটার বাজায়, মিউজিক অ্যারেঞ্জ করতে আমাকে সাহায্য করেছে। ওর সঙ্গে বহু দিন ধরে কাজ করার কথা ছিল। এ গানটা পড়েই ছিল। এটা আমার খুব প্রিয় গান। গানটার মূল যে বক্তব্য, যে ফিল, সেটা হচ্ছে—মানুষ জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। হিউম্যান রিলেশন নিয়ে গান। (একটা মানুষ) তার কোনো অনুভূতি থেকে গানটা গাইছে এবং সে অবস হয়ে পড়ছে। একটা বিষণ্নতা চেপে ধরছে। কী কারণ, ওগুলো তো ইলাবরেটলি গানের মধ্যে নেই। কিন্তু তার অনুভূতিগুলোই গানের মধ্য দিয়ে বেরিয়েছে। সে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথাই হয়তো বলছে। এখান থেকেই খুব একটা ডার্ক, একটা মেলানকলি সুর তৈরি হয়েছিল। সেটাই রেখেছি ইচ্ছে করে। কারণ আমি জানি, এটার থেকে কেউ খুব একটা এন্টারটেইন হয়তো হবে না।
অ্যালবামের দুটো গান তো বেরিয়ে গেল। শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?
প্রতিক্রিয়া খুবই ভালো পাচ্ছি। কারণ আমার বহু ভক্ত আছে, বহু শ্রোতা আছে, যারা শোনে আমার গান। যারা আমার ফিলোসফিতে বিশ্বাস করে। এবং কোনো একটা শিল্প কনজিউম করার সময় তারাও হয়তো বিশ্বাস করে, সব সময় যে বিনোদন পেতে কনজিউম করছে তা নয়। নিজেকে ভাবাতে, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টা করছে এবং হয়তো এ গানগুলো সেটাতে সাহায্য করছে।
‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’ অ্যালবামে ৯টি গান থাকছে?
আটটা মনে হয় থাকবে শেষ পর্যন্ত।
গানগুলো কি এক সপ্তাহ পরপর রিলিজ হবে?
হ্যাঁ, দুই সপ্তাহ পর ‘অবস’ বেরিয়েছে। এবার দেখি পরের গানটা কবে রিলিজ করে।
গান তো রেডি হয়ে আছে। তাহলে রিলিজ নিয়ে এত অনিশ্চয়তা কেন?
গান রেডি হয়ে আছে। তবে সমস্যা হলো, আজকাল গান রিলিজ করা খুব ঝামেলার। প্রতি গানের জন্য ভিডিও লাগে। সেগুলো করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং সেটার জন্য অনেকটা এফোর্ট যায়। সেগুলো করছি, দেখি কবে পারি! কমিট করছি না এখনই কিছু।
অ্যালবামের নাম দিয়েছেন ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’। এই অদৃশ্য নাগরদোলা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
আমাদের জীবনের কথাই বলা হচ্ছে। আমরা নিজের অজান্তে কখন চড়ে বসেছি এই জীবনের নাগরদোলায় এবং দুলে চলেছি, ঘুরে চলেছি। যখন আমি নাগরদোলার কথা বলছি, সেটা আমি দেখতে পাই। যখনই তার সামনে একটা ‘অদৃশ্য’ শব্দ বসিয়ে দেওয়া হয়, সেটা যেন চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল। কিন্তু আসলে সেটা আছে। আমাদের জীবনে এ রকম বহু কিছু আছে, যেগুলো হয়তো আছে অথচ নেই। কিংবা নেই মনে হচ্ছে, কিন্তু আসলে আছে। এই সাবজেক্টটা নিয়ে বিভিন্ন গান তৈরি হয়েছে।
আরেকটা গান আছে ‘বিচার’ বলে। সব দেশেই বিচারব্যবস্থা আছে। আইন আছে। দেশের অনেক মানুষ সেই আইন সম্বন্ধে জানেই না। জানলেও তারা সেই বিচারব্যবস্থার সুফল জীবনে পায় না। এ রকম ছোট ছোট জিনিস তুলেছি আমি, যেগুলো সমাজে আমরা দেখতে পাই। এবং নিজেরাই বুঝতে পারি না, সেগুলো আছে নাকি নেই! সেই অদৃশ্য নাগরদোলার কথাই অ্যালবামের মধ্যে বলা আছে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে আপনার গান শুনছেন দুই বাংলার শ্রোতারা। নিজেদের প্রেম, বিরহ, উদ্যাপন—সবকিছুতে আপনার গানের কাছে একটা আশ্রয় খোঁজেন তাঁরা। নতুন গান তৈরির সময় শ্রোতাদের এই প্রত্যাশা কীভাবে সামলান?
আমি যখন গান বানাচ্ছি, আমি তো জানি না, আমার যে অনুভূতি তার সঙ্গে আরেকজন একাত্ম হবেন কি না। কারো মনে হতেই পারে আমার অনুভূতিটা ফালতু। আমার সঙ্গে তার কোনো যোগই নেই। সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি একাত্ম হয়ে যায়, সেটাই বরং অ্যাকসিডেন্ট। সেখান থেকে ডেফিনেটলি একটা প্রেসার তৈরি হয় যে, আগেরবার আমি কানেক্ট করতে পেরেছিলাম, এবার পারছি কি না। ফলে আমার ওই দায়বদ্ধতাটা থাকা উচিত না যে, কে কানেক্ট করতে পারছে আর কে পারছে না। আমি গান করছি। যদি কেউ কানেক্ট করতে পারে করবে, যদি কেউ না পারে করবে না।
এই কানেকশনটা আপনি বলছেন ‘অ্যাকসিডেন্ট’। তবে আপনার গানের সঙ্গে ব্যাপারটা বেশিই ঘটে। এটা চাপ হয়ে যায় কি না?
ডেফিনেটলি। যখন জীবন শুরু করেছিলাম, তখন কোনো প্রেশারই ছিল না। কেউ শোনেইনি আমার গান। এখন অনেক মানুষ শুনেছে, অনেক মানুষের অনেক রকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে। তারা তাদের প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে ফিরে আসছে।
সমাজের নানা ইতিবাচক-নেতিবাচক ঘটনা, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা—সবকিছু আপনাকে নিশ্চয়ই প্রভাবিত করে। আপনার গান কিংবা কবিতা লিখতে ইন্সপায়ারিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে কোন বিষয়গুলো?
একেক দিন একেকটা করে আরকি। একেক সময় একেকটা বিষয় নিয়ে বেশি ভাবিত হই। একেকটা ছবি দেখি বা বই পড়ি, সেটার মধ্যে বেশি ডুবে থাকি। সুতরাং কোনো একটা জিনিস নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।
[অনুপম যতক্ষণ ছিলেন না, হোটেলের লবি ছিল নির্জন। সেই পিনপতন নীরবতা উধাও তিনি লবিতে আসার পরে। এখানে-ওখানে অনেকে জড়ো হয়েছেন, হয়তো অনুপমের সঙ্গে একটু কথা বা একটা ছবি তোলার ইচ্ছা নিয়ে। লবি এখন গমগম করছে। কথা বলতে ও শুনতে অসুবিধা হচ্ছে। গলার আওয়াজ খানিকটা চড়িয়ে দেন অনুপম রায়]
আমি দীর্ঘদিন বাদে বাংলাদেশে এসেছি এবার, এটা হওয়ার কথা নয়। চার-পাঁচ বছর হয়ে গেছে আমি বাংলাদেশ, ঢাকা, চট্টগ্রামে আসতে পারিনি। এটার থেকে একটা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। দেশভ্রমণ বা নতুন জায়গা দেখা বা নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলার অদ্ভুত খিদে আমার আছে। একটা পিপাসা আছে। এখন এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সেটা আমাকে অনেক বেশি তাড়িত করছে। এই যে এসেছি, এটা আমার খুব ভালো লাগছে, এত দিন বাদে আমি ঢাকা শহরে এলাম। এয়ারপোর্টের রোডটা বেশি পাল্টে গেছে। সেটার খবর আমার কাছে ছিল না। রাস্তায় তো কনস্ট্রাকশনে দেখলাম ভরে গেছে। বলুন আর কী জানতে চান…
সোশ্যাল মিডিয়ায় তো আমরা নানা রকম কনটেন্ট দেখছি এখন। প্রচুর গান, রিলস, ভিডিও। মানুষকে হঠাৎ করে অনেক রকম কনটেন্টের মধ্যে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর ভিড়ে ভালো গান কিংবা যে কোনো ভালো কনটেন্টের প্রতি মুগ্ধতা কীভাবে বজায় থাকবে?
আসলে দিনের শেষে মানুষের যেটা ভালো লাগবে, সে সেটাই করবে। তার হাতে এখন কন্ট্রোল। আগে যে রকম ছিল, গানের ক্ষেত্রে যদি বলি, রেডিওতে যে গান বাজানো হবে, তাই-ই মানুষকে শুনতে হবে। বাড়িতে যে গ্রামোফোন রেকর্ড কেনা হবে, সে রেকর্ডই বাজবে। এর বাইরে অন্য গান সে শুনতে পাবে না। এখন মানুষের হাতে এত অপশন! ফলে তার সিনেমা দেখার ধরন, গান শোনার ধরন সব পাল্টে গেছে। আগে সিনেমা দেখতে গেলে প্রেক্ষাগৃহে যেতে হতো এবং সিনেমা হলের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। এখন মানুষ মোবাইল ফোনে দেখে। যদি কোনো সিন ভালো না লাগে স্ক্রল করে যায়, ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে দেয়।
সুতরাং দেখার অভ্যাস পাল্টে গেছে। গান শোনার অভ্যাস পাল্টে গেছে। আগে ক্যাসেটে যেটা হতো, খারাপ লাগলেও গানটা শুনতে হতো, তারপর পরের গানে যেতে হতো। এখন কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে পাল্টে দেওয়া যায়। সুতরাং আমরা যারা শিল্প তৈরি করার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এটা সমস্যার। কারণ মানুষের হাতে এত পাওয়ার চলে গেছে! যার ফলে আমরা কোনো একটা ভুল পদক্ষেপ নিতে পারি না। আমাদের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ ঠিক হতে হবে, না হলে মানুষ আমাদের গানও পাল্টে দেবে।
আপনি বললেন মানুষের দেখার ধরন পাল্টে গেছে। বড় কনটেন্ট দেখার বা শোনার ধৈর্য কমে যাচ্ছে। তো এখন যে দৈর্ঘ্যের গান তৈরি হচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটা আরো ছোট হয়ে যেতে পারে কি?
হতে পারে। ভবিষ্যতে কী লেখা আছে আমরা জানি না। এগুলো সবই বিনোদন এবং আনন্দ পাওয়ার জিনিস হয়ে যাচ্ছে। তাতে যদি বিনোদন পায় সে পাবে। সে ওইটাই শুনবে। কিন্তু ক্রিয়েটর হিসেবে আমাকে অতটা ভাবলে চলবে না। আমি যখন কোনো গান বানাচ্ছি, আমি তো অনুভূতিকে কথায়-সুরে প্রকাশ করছি। সেইটা যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। এবার গান তিন মিনিটের হলো, নাকি সাত মিনিটের হলো, আমি তো জানি না। কারণ আমার লেখা যত হবে, গানটার লেন্থ তা-ই হবে। তারপর মানুষ কী করবে, সেটা মানুষের হাতে।
এই যে নানা সময়ে হুটহাট এক-দুটো গান উড়ে আসে। যেটা হয়তো এক-দুই সপ্তাহ ধরে মানুষ শোনে। সেটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক চলতে থাকে। তারপর সেগুলো অতি দ্রুত হারিয়েও যায়। এই ‘ভাইরাল’ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
শিল্পীরাও চায় যে ভাইরাল হোক। নিজেরাই গান বানিয়ে নিজেরাই হ্যাশট্যাগ ভাইরাল লিখে পোস্ট করে। ভাইরাল হওয়া মানে কী? খুব জনপ্রিয় হওয়া। মানুষ জনপ্রিয়তা পছন্দ করে। কারণ জনপ্রিয় হওয়ার অনেক সুবিধা আছে। একটা অদ্ভুত আনন্দ দেয় যে, এত মানুষ ভালো বলছে। তবে শিল্পের খাতিরে যে গান বানাচ্ছি, সব গান ভাইরাল হওয়ার জন্য নয়, সব শিল্প ভাইরাল হওয়ার নয়। কিছু হবে, কিছু হবে না। এবং মেজরিটিই হবে না। তার মানে যে সেগুলো ফেলনা, তা নয়। সেগুলো কোনো মানুষকে কোন সময়ে কী দিয়েছে, সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারে না। আমি বলতেই পারি, আমার অনেক প্রিয় শিল্পীর গান যেগুলো অতটা জনপ্রিয় না, কিন্তু আমার কোনো জ্বরের সময় হয়তো সেগুলো শুনেছি এবং সেই গানের মধ্যে ডুবে গিয়েছি। এমন হয়েছে, আমার সারা দিন ভালো যায়নি, তারপর কোনো উপন্যাস পড়েছি। সেই উপন্যাসের মধ্যে এমন ডুবে গেছি, ওই লেখার মধ্যে আমি একটা আলাদা জগৎ, আলাদা জীবন খুঁজে পেয়েছি। সেগুলোর মূল্য কী? সেগুলোকে তো ভাইরাল বা এসব দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। সেগুলো তো আমার জীবনে ঘটেছে। যে শিল্পের মধ্য দিয়ে এটা ঘটেছে, সেই শিল্প তো আমার কাছে অত্যন্ত কাছের। এবং সেটা আজকে দশটা লোক খারাপ বললেও আমার কাছে ভালো লাগার জায়গাতেই থাকবে। সুতরাং আমি অত চিন্তিত নই ভাইরাল নিয়ে। কারণ এর কোনো শেষ নেই। এটা একটা অসম্ভব রাক্ষুসে খিদের মতো ব্যাপার। এ কোনো দিন মেটানো যাবে না।
[হোটেলের বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অনুপমের ব্যান্ডের সবাই গাড়িতে উঠে পড়েছেন। অনুপম এলেই গাড়ি ছুটবে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে। সেখানে রাতে পারফর্ম করবে অনুপমের ব্যান্ড। ম্যানেজার রানা এসে নিচু স্বরে অনুপমকে বললেন, ‘আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা রওনা দেব।’ অর্থাৎ আলাপ শেষ করতে হবে। একটু হালকা চালেই তাই শেষ প্রশ্নটা করা হলো]
বসন্ত এলেই চারদিকে আপনার ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি বাজতে শোনা যায়। আপনার বসন্ত কেমন কাটছে এবার?
বসন্ত ভালো শুরু হয়েছে, তার কারণ আমি বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। এর আগে প্রতি বছর বা প্রতি তিন মাস অন্তর একবার করে রিকোয়েস্ট আসত, তারপর সেই অনুষ্ঠান হতো না। ফাইনালি এই যে অনুষ্ঠানটি হচ্ছে, স্টেজে গেলে বুঝতে পারব হচ্ছে কি না, সেটার জন্য আমি খুবই আনন্দিত। এটা আমার খুব পছন্দের জায়গা, পছন্দের শহর, পছন্দের মানুষজন। ইচ্ছে করে এখানে এসে অনেক দিন থাকি। সব সময় হয়ে ওঠে না। এইভাবে দেখতে গেলে বসন্ত আমার ভালোই শুরু হয়েছে।
[আমাদের বিদায় দিয়ে, আরো কয়েকটি সেলফির আবদার মিটিয়ে, হোটেলের সামনে রাখা গাড়িতে গিয়ে বসলেন অনুপম রায়। যাওয়ার আগে বললেন, সকালেই ফিরতে হবে। এবার তো বেশি সময় পাওয়া গেল না। পরেরবার এসে ঘোরাঘুরিটা আরেকটু জমিয়ে হবে।]

ওয়ার্নার ব্রস বা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিয়ে আলোচনার যেন শেষই হচ্ছে না। তবে এর অবসান টানতে ওয়ার্নার ব্রস নিজেরাই যেন তোড়জোড় শুরু করেছে। তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের ১০৮.৪ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
আগামী রোজার ঈদেও একগুচ্ছ সিনেমার মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসেছে ‘প্রিন্স’, ‘দম’, ‘রাক্ষস’, ‘বনলতা এক্সপ্রেস’, ‘পিনিক’সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা। এ তালিকায় যুক্ত হলো ‘বনলতা সেন’। ২০২৪ সালে সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল।
১৯ ঘণ্টা আগে
মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে আসছে নাটকের দল অবলোকন নাট্যদল। নাটকের নাম ‘গন্ধসূত্র’। নাটকটি লিখেছেন অপু শহীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। আজ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে গন্ধসূত্র নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
১৯ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে তাঁর। চিকিৎসা শেষে ছয় দিন পর ১২ ডিসেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে কাগজ-কলমে নচিকেতা লিখে...
১৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওয়ার্নার ব্রস বা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিয়ে আলোচনার যেন শেষই হচ্ছে না। তবে এর অবসান টানতে ওয়ার্নার ব্রস নিজেরাই যেন তোড়জোড় শুরু করেছে। তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের ১০৮.৪ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
এর আগে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স দাবি করেছিল, তাদের প্রস্তাবটি ওয়ার্নার ব্রাদার্সের চলচ্চিত্র ও স্ট্রিমিং ব্যবসা নিয়ে নেটফ্লিক্সের সঙ্গে করা ৭২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির চেয়ে ‘উন্নত’।
এ সময় হলিউডের অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতনামা চলচ্চিত্র স্টুডিওর নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে, সে প্রশ্নে নাটকীয় মোড় নেয়। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সুপারিশ করে। একই সঙ্গে তারা জানায়, নেটফ্লিক্সের সঙ্গে করা চুক্তিটিই প্রতিষ্ঠানের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা করে।
গত অক্টোবরে একাধিক সম্ভাব্য ক্রেতার আগ্রহ পাওয়ার পর ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিজেকে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করে। ওই আগ্রহীদের মধ্যে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সও ছিল।
এরপর ৫ ডিসেম্বর ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি জানায়, তারা তাদের চলচ্চিত্র ও স্ট্রিমিং ব্যবসা নেটফ্লিক্সের কাছে বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে।
দীর্ঘ আইনি নথিতে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির পরিচালনা পর্ষদ বলেছে, প্যারামাউন্টের প্রস্তাবটি বহু এবং গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। একই সঙ্গে তারা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনী পরিবার এলিসন পরিবার এই প্রস্তাবে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্যারামাউন্টের প্রস্তাবের পেছনে রয়েছে বিলিয়নিয়ার এলিসন পরিবার। এই পরিবারের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানা যায়।
বিনোদন শিল্পে বর্তমানে ক্ষমতার অবস্থান কোথায় তা তুলে ধরে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পরিচালনা পর্ষদ জানায়, স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের প্রস্তাবটি আর্থিকভাবে বেশি সুসংহত। পাশাপাশি এটি দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বেশি মূল্য সৃষ্টি করবে।
এদিকে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের এই সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছে নেটফ্লিক্স। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রধান নির্বাহী টেড সারানডোস বলেন, একীভূতকরণ চুক্তিটি ‘উন্নত’ এবং ‘শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোত্তম স্বার্থে’ করা হয়েছে।
ওয়ার্নার ব্রাদার্সের শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে নেটফ্লিক্স আবারও জানায়, তাদের প্রস্তাবে অর্থায়নের কাঠামো আরও স্পষ্ট। পাশাপাশি এতে নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম।
এ অবস্থায় প্যারামাউন্ট চাইলে নতুন করে আরেকটি প্রস্তাব দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে হলিউড আলোড়িত করা এই অধিগ্রহণ–নাটক এখানেই শেষ হচ্ছে না।
নেটফ্লিক্স ও প্যারামাউন্টের চুক্তির মধ্যে যে তফাত
নেটফ্লিক্স ওয়ার্নার ব্রাদার্সের চলচ্চিত্র স্টুডিও এবং এইচবিও স্ট্রিমিং সেবা কিনতে চায়। এতে তারা ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সমৃদ্ধ কনটেন্ট ভান্ডারের ব্যবহারের অধিকার পাবে। একই সঙ্গে নিজেদের গ্রাহকদের জন্য এসব সিনেমা ও অনুষ্ঠান নিশ্চিতভাবে দেখানোর সুযোগও সুরক্ষিত হবে।
তবে নেটফ্লিক্স মিডিয়া জায়ান্টটির পে-টিভি চ্যানেলগুলো নিতে আগ্রহী নয়। ফলে নেটফ্লিক্সের প্রস্তাবে গেলে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার আগে ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে সিএনএন ও টিএনটির মতো টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো আলাদা একটি কোম্পানিতে বিক্রি করে দিতে হবে।
অন্যদিকে প্যারামাউন্ট পুরো ওয়ার্নার ব্রাদার্সকেই কিনতে চায়। এর অর্থ হলো, তাদের নিজস্ব টিভি চ্যানেল সিবিএস, এমটিভি ও শোটাইমের প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেলগুলোকেও অধিগ্রহণের আওতায় আনতে হবে।
নেটফ্লিক্স ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণের চুক্তি ঘোষণা করার এক সপ্তাহ পরই প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স পুরো কোম্পানিটি কিনতে নতুন প্রস্তাব দেয়। এতে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে ক্রমেই বিনোদন শিল্পে মালিকানা একীভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ভোক্তাদের পছন্দের সুযোগ কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুলতে পারে। এছাড়া ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিযোগিতা-নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন ওয়ার্নার ব্রসকে নিয়ে এই লড়াই
ওয়ার্নার ব্রাদার্সের নতুন মালিক স্ট্রিমিং বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠানের ভান্ডার তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘হ্যারি পটার’, ‘মনস্টারভার্স’, ‘ফ্রেন্ডস’ এবং এইচবিও ম্যাক্স স্ট্রিমিং সেবা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের বিশ্লেষক মাইক প্রুলক্স বলেন, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে, সে লড়াইয়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যা ঘটছে, তা যেন এইচবিওর সাকসেশন সিরিজের বাস্তব রূপ, বা এর আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ একটি পর্বের মতো। আর যদি মনে করেন, এই কাহিনির শেষটা আপনি আগেই বুঝে গেছেন, তাহলে আবার ভাবুন।’
এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পের একটি অংশ ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পুরো বা আংশিক কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার পূর্ব ও পশ্চিম শাখা এই একীভূতকরণ ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছে।
তাদের যুক্তি, এই ধরনের একীভূতকরণ হলে মজুরি কমে যেতে পারে এবং কর্মসংস্থান হ্রাসের ঝুঁকি তৈরি হবে। পাশাপাশি দর্শকদের জন্য কনটেন্টের পরিমাণও কমে যাবে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

ওয়ার্নার ব্রস বা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিয়ে আলোচনার যেন শেষই হচ্ছে না। তবে এর অবসান টানতে ওয়ার্নার ব্রস নিজেরাই যেন তোড়জোড় শুরু করেছে। তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের ১০৮.৪ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
এর আগে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স দাবি করেছিল, তাদের প্রস্তাবটি ওয়ার্নার ব্রাদার্সের চলচ্চিত্র ও স্ট্রিমিং ব্যবসা নিয়ে নেটফ্লিক্সের সঙ্গে করা ৭২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির চেয়ে ‘উন্নত’।
এ সময় হলিউডের অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতনামা চলচ্চিত্র স্টুডিওর নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে, সে প্রশ্নে নাটকীয় মোড় নেয়। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সুপারিশ করে। একই সঙ্গে তারা জানায়, নেটফ্লিক্সের সঙ্গে করা চুক্তিটিই প্রতিষ্ঠানের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা করে।
গত অক্টোবরে একাধিক সম্ভাব্য ক্রেতার আগ্রহ পাওয়ার পর ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিজেকে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করে। ওই আগ্রহীদের মধ্যে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সও ছিল।
এরপর ৫ ডিসেম্বর ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি জানায়, তারা তাদের চলচ্চিত্র ও স্ট্রিমিং ব্যবসা নেটফ্লিক্সের কাছে বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে।
দীর্ঘ আইনি নথিতে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির পরিচালনা পর্ষদ বলেছে, প্যারামাউন্টের প্রস্তাবটি বহু এবং গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। একই সঙ্গে তারা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনী পরিবার এলিসন পরিবার এই প্রস্তাবে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্যারামাউন্টের প্রস্তাবের পেছনে রয়েছে বিলিয়নিয়ার এলিসন পরিবার। এই পরিবারের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানা যায়।
বিনোদন শিল্পে বর্তমানে ক্ষমতার অবস্থান কোথায় তা তুলে ধরে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পরিচালনা পর্ষদ জানায়, স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের প্রস্তাবটি আর্থিকভাবে বেশি সুসংহত। পাশাপাশি এটি দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বেশি মূল্য সৃষ্টি করবে।
এদিকে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের এই সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছে নেটফ্লিক্স। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রধান নির্বাহী টেড সারানডোস বলেন, একীভূতকরণ চুক্তিটি ‘উন্নত’ এবং ‘শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোত্তম স্বার্থে’ করা হয়েছে।
ওয়ার্নার ব্রাদার্সের শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে নেটফ্লিক্স আবারও জানায়, তাদের প্রস্তাবে অর্থায়নের কাঠামো আরও স্পষ্ট। পাশাপাশি এতে নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম।
এ অবস্থায় প্যারামাউন্ট চাইলে নতুন করে আরেকটি প্রস্তাব দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে হলিউড আলোড়িত করা এই অধিগ্রহণ–নাটক এখানেই শেষ হচ্ছে না।
নেটফ্লিক্স ও প্যারামাউন্টের চুক্তির মধ্যে যে তফাত
নেটফ্লিক্স ওয়ার্নার ব্রাদার্সের চলচ্চিত্র স্টুডিও এবং এইচবিও স্ট্রিমিং সেবা কিনতে চায়। এতে তারা ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সমৃদ্ধ কনটেন্ট ভান্ডারের ব্যবহারের অধিকার পাবে। একই সঙ্গে নিজেদের গ্রাহকদের জন্য এসব সিনেমা ও অনুষ্ঠান নিশ্চিতভাবে দেখানোর সুযোগও সুরক্ষিত হবে।
তবে নেটফ্লিক্স মিডিয়া জায়ান্টটির পে-টিভি চ্যানেলগুলো নিতে আগ্রহী নয়। ফলে নেটফ্লিক্সের প্রস্তাবে গেলে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার আগে ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে সিএনএন ও টিএনটির মতো টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো আলাদা একটি কোম্পানিতে বিক্রি করে দিতে হবে।
অন্যদিকে প্যারামাউন্ট পুরো ওয়ার্নার ব্রাদার্সকেই কিনতে চায়। এর অর্থ হলো, তাদের নিজস্ব টিভি চ্যানেল সিবিএস, এমটিভি ও শোটাইমের প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেলগুলোকেও অধিগ্রহণের আওতায় আনতে হবে।
নেটফ্লিক্স ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণের চুক্তি ঘোষণা করার এক সপ্তাহ পরই প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স পুরো কোম্পানিটি কিনতে নতুন প্রস্তাব দেয়। এতে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে ক্রমেই বিনোদন শিল্পে মালিকানা একীভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ভোক্তাদের পছন্দের সুযোগ কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুলতে পারে। এছাড়া ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিযোগিতা-নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন ওয়ার্নার ব্রসকে নিয়ে এই লড়াই
ওয়ার্নার ব্রাদার্সের নতুন মালিক স্ট্রিমিং বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠানের ভান্ডার তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘হ্যারি পটার’, ‘মনস্টারভার্স’, ‘ফ্রেন্ডস’ এবং এইচবিও ম্যাক্স স্ট্রিমিং সেবা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের বিশ্লেষক মাইক প্রুলক্স বলেন, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে, সে লড়াইয়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যা ঘটছে, তা যেন এইচবিওর সাকসেশন সিরিজের বাস্তব রূপ, বা এর আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ একটি পর্বের মতো। আর যদি মনে করেন, এই কাহিনির শেষটা আপনি আগেই বুঝে গেছেন, তাহলে আবার ভাবুন।’
এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পের একটি অংশ ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পুরো বা আংশিক কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার পূর্ব ও পশ্চিম শাখা এই একীভূতকরণ ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছে।
তাদের যুক্তি, এই ধরনের একীভূতকরণ হলে মজুরি কমে যেতে পারে এবং কর্মসংস্থান হ্রাসের ঝুঁকি তৈরি হবে। পাশাপাশি দর্শকদের জন্য কনটেন্টের পরিমাণও কমে যাবে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন অনুপম রায়। ৬টা থেকে হোটেল লবিতে অপেক্ষা। সঙ্গে আজকের পত্রিকার আরও দুই সাংবাদিক নাঈম হক ও তুষার পাল। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট দশেক পরে ব্যান্ড সদস্যদের নিয়ে লবিতে এলেন অনুপম রায়। সেখানে আমরা ছাড়া অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন। অনুপমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁরা
১২ মার্চ ২০২৩
আগামী রোজার ঈদেও একগুচ্ছ সিনেমার মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসেছে ‘প্রিন্স’, ‘দম’, ‘রাক্ষস’, ‘বনলতা এক্সপ্রেস’, ‘পিনিক’সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা। এ তালিকায় যুক্ত হলো ‘বনলতা সেন’। ২০২৪ সালে সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল।
১৯ ঘণ্টা আগে
মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে আসছে নাটকের দল অবলোকন নাট্যদল। নাটকের নাম ‘গন্ধসূত্র’। নাটকটি লিখেছেন অপু শহীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। আজ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে গন্ধসূত্র নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
১৯ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে তাঁর। চিকিৎসা শেষে ছয় দিন পর ১২ ডিসেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে কাগজ-কলমে নচিকেতা লিখে...
১৯ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

আগামী রোজার ঈদেও একগুচ্ছ সিনেমার মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসেছে ‘প্রিন্স’, ‘দম’, ‘রাক্ষস’, ‘বনলতা এক্সপ্রেস’, ‘পিনিক’সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা। এ তালিকায় যুক্ত হলো ‘বনলতা সেন’। ২০২৪ সালে সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পিছিয়ে আসেন। অবশেষে জানা গেল, নতুন বছরে আলোর মুখ দেখবে সিনেমাটি। আগামী রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে বনলতা সেন।
জীবনানন্দ দাশের কাল্পনিক চরিত্র বনলতা সেনকে ঘিরে সিনেমাটি বানিয়েছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। সরকারি অনুদানের এ সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাসুমা রহমান নাবিলা। তবে সহজেই এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাননি অভিনেত্রী। শুরুতে এ সিনেমার অন্য একটি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল নাবিলাকে। তবে রাজি হননি অভিনেত্রী। নির্মাতাকে শর্ত দিয়েছিলেন, তিনি বনলতা সেন চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী। এরপর তিনবার অডিশন দেওয়ার পর বনলতা চরিত্রে নাবিলাকে চূড়ান্ত করেন নির্মাতা।
বনলতা সেন সিনেমায় জীবনানন্দ দাশ চরিত্রে দেখা যাবে খায়রুল বাসারকে। আরও অভিনয় করেছেন সোহেল মণ্ডল, নাজিবা বাশার, প্রিয়ন্তী উর্বী, রুপন্তী আকীদ, শরিফ সিরাজ, সুমাইয়া খুশি প্রমুখ।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৭০ লাখ টাকার অনুদান পায় বনলতা সেন। নির্মাতা জানিয়েছেন, সিনেমাটি নির্মাণে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি তিনি। সময় বেশি লাগলেও যত্ন নিয়ে কাজ শেষ করেছেন। মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বলেন, ‘জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কাজ করা অনেক বেশি দায়বদ্ধতার। রিসার্চ করা, প্রস্তুতি নেওয়া, উপযুক্ত অভিনয়শিল্পী খোঁজা—পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক কঠিন ছিল। সিনেমার জন্য সবাইকে প্রস্তুত করে নেওয়ার একটা বিষয় ছিল। দীর্ঘদিন আমরা রিহার্সাল করেছি। এই সিনেমার অনেক বড় একটা পার্ট ছিল প্রোডাকশন ডিজাইন। আমি পর্দায় যেভাবে সিনেমাটি দেখতে চাই, তা প্রস্তুত করতে অনেক সময় লেগে যায়।’
বনলতা সেন মুক্তির বিষয়ে নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল জানান, ২০২৬ সালের ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সিনেমাটি মুক্তির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। শিগগির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হবে প্রচার-প্রচারণা।

আগামী রোজার ঈদেও একগুচ্ছ সিনেমার মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসেছে ‘প্রিন্স’, ‘দম’, ‘রাক্ষস’, ‘বনলতা এক্সপ্রেস’, ‘পিনিক’সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা। এ তালিকায় যুক্ত হলো ‘বনলতা সেন’। ২০২৪ সালে সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পিছিয়ে আসেন। অবশেষে জানা গেল, নতুন বছরে আলোর মুখ দেখবে সিনেমাটি। আগামী রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে বনলতা সেন।
জীবনানন্দ দাশের কাল্পনিক চরিত্র বনলতা সেনকে ঘিরে সিনেমাটি বানিয়েছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। সরকারি অনুদানের এ সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাসুমা রহমান নাবিলা। তবে সহজেই এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাননি অভিনেত্রী। শুরুতে এ সিনেমার অন্য একটি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল নাবিলাকে। তবে রাজি হননি অভিনেত্রী। নির্মাতাকে শর্ত দিয়েছিলেন, তিনি বনলতা সেন চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী। এরপর তিনবার অডিশন দেওয়ার পর বনলতা চরিত্রে নাবিলাকে চূড়ান্ত করেন নির্মাতা।
বনলতা সেন সিনেমায় জীবনানন্দ দাশ চরিত্রে দেখা যাবে খায়রুল বাসারকে। আরও অভিনয় করেছেন সোহেল মণ্ডল, নাজিবা বাশার, প্রিয়ন্তী উর্বী, রুপন্তী আকীদ, শরিফ সিরাজ, সুমাইয়া খুশি প্রমুখ।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৭০ লাখ টাকার অনুদান পায় বনলতা সেন। নির্মাতা জানিয়েছেন, সিনেমাটি নির্মাণে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি তিনি। সময় বেশি লাগলেও যত্ন নিয়ে কাজ শেষ করেছেন। মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বলেন, ‘জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কাজ করা অনেক বেশি দায়বদ্ধতার। রিসার্চ করা, প্রস্তুতি নেওয়া, উপযুক্ত অভিনয়শিল্পী খোঁজা—পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক কঠিন ছিল। সিনেমার জন্য সবাইকে প্রস্তুত করে নেওয়ার একটা বিষয় ছিল। দীর্ঘদিন আমরা রিহার্সাল করেছি। এই সিনেমার অনেক বড় একটা পার্ট ছিল প্রোডাকশন ডিজাইন। আমি পর্দায় যেভাবে সিনেমাটি দেখতে চাই, তা প্রস্তুত করতে অনেক সময় লেগে যায়।’
বনলতা সেন মুক্তির বিষয়ে নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল জানান, ২০২৬ সালের ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সিনেমাটি মুক্তির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। শিগগির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হবে প্রচার-প্রচারণা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন অনুপম রায়। ৬টা থেকে হোটেল লবিতে অপেক্ষা। সঙ্গে আজকের পত্রিকার আরও দুই সাংবাদিক নাঈম হক ও তুষার পাল। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট দশেক পরে ব্যান্ড সদস্যদের নিয়ে লবিতে এলেন অনুপম রায়। সেখানে আমরা ছাড়া অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন। অনুপমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁরা
১২ মার্চ ২০২৩
ওয়ার্নার ব্রস বা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিয়ে আলোচনার যেন শেষই হচ্ছে না। তবে এর অবসান টানতে ওয়ার্নার ব্রস নিজেরাই যেন তোড়জোড় শুরু করেছে। তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের ১০৮.৪ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে আসছে নাটকের দল অবলোকন নাট্যদল। নাটকের নাম ‘গন্ধসূত্র’। নাটকটি লিখেছেন অপু শহীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। আজ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে গন্ধসূত্র নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
১৯ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে তাঁর। চিকিৎসা শেষে ছয় দিন পর ১২ ডিসেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে কাগজ-কলমে নচিকেতা লিখে...
১৯ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে আসছে নাটকের দল অবলোকন নাট্যদল। নাটকের নাম ‘গন্ধসূত্র’। নাটকটি লিখেছেন অপু শহীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। আজ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে গন্ধসূত্র নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। একই স্থান ও সময়ে আগামীকাল মঞ্চস্থ হবে এই নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী।
নাটকের গল্প এগিয়েছে একটি মেয়ের জীবনকে ঘিরে। মেয়েটি যেন হঠাৎ করেই ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার ব্যক্তিগত অহং দলিত হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতায়। নিজ ঘরে সে শনাক্ত করে সেই নির্যাতক ও নিপীড়ককে। সমাজের আইনের প্রতি সে আস্থা হারিয়ে ফেলে। এ ঘটনা যেন পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রে, যেকোনো নগরে ঘটে থাকে। ঠিক এখনই কোথাও না কোথাও ঘটছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। যে দেশে দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট শাসনের পর গণতন্ত্র হামাগুড়ি দিতে শুরু করে, সেখানে এসব ঘটনা বেশি ঘটে।
নির্দেশক অপু শহীদ জানান, সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এই নাটক। সমকালের বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় জারিত এক দগদগে নাটক গন্ধসূত্র। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বই এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বের অর্থনীতি এখন সমাজ-রাজনীতি, উন্নয়ন-বিশ্বায়ন, যুদ্ধ-হিংস্রতায় এমন এক টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যেখানে ব্যক্তি মানুষের সুস্থ থাকাটা বেশ কৌতূহলপ্রদ। আধিপত্যবাদী চরিত্র পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছিল কিন্তু কিছুতেই একটা কাঠামোতে দাঁড় করানো যাচ্ছিল না। এই অস্থিরতার মধ্যে মনে পড়ে গেল আর্জেন্টাইন-আমেরিকান নাট্যকার অ্যারিয়েল ডর্ফম্যানের কথা। এই বিশ্বায়নের যুগে মূল ইংরেজি নাটক, পোলনস্কির ফিল্ম এমনকি হিন্দি সিনেমাও পেয়ে গেলাম। পেয়ে গেলাম ডর্ফম্যানের আরও অনেক লেখার সন্ধান। নাটকের মূল ভরকেন্দ্র রাখলাম পোলনস্কির “ডেথ অ্যান্ড দ্য মেইডেন” সিনেমার ওপর।’
নির্দেশক তৌফিকুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘গন্ধসূত্র নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়ে মনে হলো, এই নাটকের সময়টা শুধু আমাদের রাষ্ট্রের নয়, বর্তমান বিশ্বের যেখানেই গণতন্ত্র ধসে পড়ছে সেখানকার বাস্তবতা। নাটকে নির্যাতিত এক নারী ব্যক্তিগত যন্ত্রণার বদলা নিতে চাইছে, এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে দুই পুরুষ চরিত্র নাটকীয় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। নাটকের শেষে এসে মেয়ে এবং আগন্তুক এক ভয়ানক ডিসকোর্সে পৌঁছায়। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্রের বৈপরীত্যের কারণে সাধারণ নাগরিক একে অপরের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।’
গন্ধসূত্র নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসরিন অনু, সরওয়ার জাহান উপল, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, ডায়না প্রমুখ। সংগীতে আছেন চার্লস নিলয় চৌধুরী, সেট ডিজাইনে আবু বকর সিদ্দিকি, আলোক পরিকল্পনায় মোখলেছুর রহমান এবং কস্টিউম ডিজাইন করেছেন আইরিন পারভীন লোপা।

মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে আসছে নাটকের দল অবলোকন নাট্যদল। নাটকের নাম ‘গন্ধসূত্র’। নাটকটি লিখেছেন অপু শহীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। আজ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে গন্ধসূত্র নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। একই স্থান ও সময়ে আগামীকাল মঞ্চস্থ হবে এই নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী।
নাটকের গল্প এগিয়েছে একটি মেয়ের জীবনকে ঘিরে। মেয়েটি যেন হঠাৎ করেই ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার ব্যক্তিগত অহং দলিত হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতায়। নিজ ঘরে সে শনাক্ত করে সেই নির্যাতক ও নিপীড়ককে। সমাজের আইনের প্রতি সে আস্থা হারিয়ে ফেলে। এ ঘটনা যেন পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রে, যেকোনো নগরে ঘটে থাকে। ঠিক এখনই কোথাও না কোথাও ঘটছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। যে দেশে দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট শাসনের পর গণতন্ত্র হামাগুড়ি দিতে শুরু করে, সেখানে এসব ঘটনা বেশি ঘটে।
নির্দেশক অপু শহীদ জানান, সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এই নাটক। সমকালের বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় জারিত এক দগদগে নাটক গন্ধসূত্র। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বই এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বের অর্থনীতি এখন সমাজ-রাজনীতি, উন্নয়ন-বিশ্বায়ন, যুদ্ধ-হিংস্রতায় এমন এক টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যেখানে ব্যক্তি মানুষের সুস্থ থাকাটা বেশ কৌতূহলপ্রদ। আধিপত্যবাদী চরিত্র পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছিল কিন্তু কিছুতেই একটা কাঠামোতে দাঁড় করানো যাচ্ছিল না। এই অস্থিরতার মধ্যে মনে পড়ে গেল আর্জেন্টাইন-আমেরিকান নাট্যকার অ্যারিয়েল ডর্ফম্যানের কথা। এই বিশ্বায়নের যুগে মূল ইংরেজি নাটক, পোলনস্কির ফিল্ম এমনকি হিন্দি সিনেমাও পেয়ে গেলাম। পেয়ে গেলাম ডর্ফম্যানের আরও অনেক লেখার সন্ধান। নাটকের মূল ভরকেন্দ্র রাখলাম পোলনস্কির “ডেথ অ্যান্ড দ্য মেইডেন” সিনেমার ওপর।’
নির্দেশক তৌফিকুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘গন্ধসূত্র নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়ে মনে হলো, এই নাটকের সময়টা শুধু আমাদের রাষ্ট্রের নয়, বর্তমান বিশ্বের যেখানেই গণতন্ত্র ধসে পড়ছে সেখানকার বাস্তবতা। নাটকে নির্যাতিত এক নারী ব্যক্তিগত যন্ত্রণার বদলা নিতে চাইছে, এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে দুই পুরুষ চরিত্র নাটকীয় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। নাটকের শেষে এসে মেয়ে এবং আগন্তুক এক ভয়ানক ডিসকোর্সে পৌঁছায়। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্রের বৈপরীত্যের কারণে সাধারণ নাগরিক একে অপরের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।’
গন্ধসূত্র নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসরিন অনু, সরওয়ার জাহান উপল, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, ডায়না প্রমুখ। সংগীতে আছেন চার্লস নিলয় চৌধুরী, সেট ডিজাইনে আবু বকর সিদ্দিকি, আলোক পরিকল্পনায় মোখলেছুর রহমান এবং কস্টিউম ডিজাইন করেছেন আইরিন পারভীন লোপা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন অনুপম রায়। ৬টা থেকে হোটেল লবিতে অপেক্ষা। সঙ্গে আজকের পত্রিকার আরও দুই সাংবাদিক নাঈম হক ও তুষার পাল। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট দশেক পরে ব্যান্ড সদস্যদের নিয়ে লবিতে এলেন অনুপম রায়। সেখানে আমরা ছাড়া অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন। অনুপমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁরা
১২ মার্চ ২০২৩
ওয়ার্নার ব্রস বা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিয়ে আলোচনার যেন শেষই হচ্ছে না। তবে এর অবসান টানতে ওয়ার্নার ব্রস নিজেরাই যেন তোড়জোড় শুরু করেছে। তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের ১০৮.৪ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
আগামী রোজার ঈদেও একগুচ্ছ সিনেমার মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসেছে ‘প্রিন্স’, ‘দম’, ‘রাক্ষস’, ‘বনলতা এক্সপ্রেস’, ‘পিনিক’সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা। এ তালিকায় যুক্ত হলো ‘বনলতা সেন’। ২০২৪ সালে সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল।
১৯ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে তাঁর। চিকিৎসা শেষে ছয় দিন পর ১২ ডিসেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে কাগজ-কলমে নচিকেতা লিখে...
১৯ ঘণ্টা আগেবিনোদন ডেস্ক

ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে তাঁর। চিকিৎসা শেষে ছয় দিন পর ১২ ডিসেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে কাগজ-কলমে নচিকেতা লিখে রেখেছিলেন মৃত্যু নিয়ে তাঁর অনুভূতি। গতকাল ফেসবুকে নিজের কণ্ঠে প্রকাশ করেন ‘মৃত্যু মস্ত ফাঁকি’ শীর্ষক তাঁর এই উপলব্ধি।
জীবনে চলার পথে বেশ কয়েকবার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন নচিকেতা। সেই কথাই সবাইকে জানালেন তিনি। নচিকেতার কথায়, ‘মৃত্যুর মুখ থেকে বারংবার ফিরে মন্দ লাগছে না। প্রথমবার বাইক থেকে পড়ে মাথায় লেগে কোমায়, তখন বয়স ১৫। দ্বিতীয়বার মানিকতলায় বাসভাড়া বৃদ্ধি আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পাশের কমরেডের মৃত্যু আমার বদলে; হঠাৎ স্থান পরিবর্তনের কারণে। তখন বয়স কুড়ি। তৃতীয়বার পাতালরেলের নির্মিত হওয়া পরিত্যক্ত টানেলে জলে ডুবতে ডুবতে, তখন বয়স ১৬। ক্ষুদিরাম ছবি দেখে উৎসাহিত হয়ে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে বেঁচে যাওয়া। দড়িটা হঠাৎ ছিঁড়ে যাওয়ায়, বয়স তখন ৭। নকশাল আন্দোলন দেখে উত্তেজিত হয়ে স্কুলে আগুন লাগিয়ে মরতে মরতে, তখন বয়স ৬। ৪৭ বছর বয়সে দিল্লির হাসপাতালে মোস্ট কমপ্লিকেটেড হুইপল সার্জারির টেবিল থেকে। এ ছাড়াও কত দুর্ঘটনা বা সুপরিকল্পিত গুজবের মৃত্যু থেকে আজ অবশেষে অ্যাপোলোতে হৃদয় ছন্দ বন্ধ থেকে এই বয়সে।’
মৃত্যু নিয়ে তাঁর অনুভূতির এই ভিডিওতে নেটিজেনদের প্রতি নচিকেতার অভিমান ফুটে উঠেছে। কারণ, অনেকবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে তাঁর মৃত্যুর গুজব। এবারও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এমন খবর ছড়িয়েছিল। তাই তো অভিমানের সুরে নচিকেতা বললেন, ‘আমাকে তো আমার যা আয়ু, তার থেকে বেশিবার মারা হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। হয়তো ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করবেন। এবার আপনারা মৃত্যু ঘোষণা করলেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করব। কথা দিচ্ছি। অন্তত আপনাদের মান রাখতে।’
এ ভিডিওর শেষে নিজের ‘আগুনপাখি’ গানের দুটি লাইন জুড়ে দিয়েছেন নচিকেতা—‘মৃত্যু মস্ত ফাঁকি, দুচোখে আকাশ ডানায় আগুন, আরও আরও কত ওড়া বাকি’।

ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে তাঁর। চিকিৎসা শেষে ছয় দিন পর ১২ ডিসেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে কাগজ-কলমে নচিকেতা লিখে রেখেছিলেন মৃত্যু নিয়ে তাঁর অনুভূতি। গতকাল ফেসবুকে নিজের কণ্ঠে প্রকাশ করেন ‘মৃত্যু মস্ত ফাঁকি’ শীর্ষক তাঁর এই উপলব্ধি।
জীবনে চলার পথে বেশ কয়েকবার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন নচিকেতা। সেই কথাই সবাইকে জানালেন তিনি। নচিকেতার কথায়, ‘মৃত্যুর মুখ থেকে বারংবার ফিরে মন্দ লাগছে না। প্রথমবার বাইক থেকে পড়ে মাথায় লেগে কোমায়, তখন বয়স ১৫। দ্বিতীয়বার মানিকতলায় বাসভাড়া বৃদ্ধি আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পাশের কমরেডের মৃত্যু আমার বদলে; হঠাৎ স্থান পরিবর্তনের কারণে। তখন বয়স কুড়ি। তৃতীয়বার পাতালরেলের নির্মিত হওয়া পরিত্যক্ত টানেলে জলে ডুবতে ডুবতে, তখন বয়স ১৬। ক্ষুদিরাম ছবি দেখে উৎসাহিত হয়ে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে বেঁচে যাওয়া। দড়িটা হঠাৎ ছিঁড়ে যাওয়ায়, বয়স তখন ৭। নকশাল আন্দোলন দেখে উত্তেজিত হয়ে স্কুলে আগুন লাগিয়ে মরতে মরতে, তখন বয়স ৬। ৪৭ বছর বয়সে দিল্লির হাসপাতালে মোস্ট কমপ্লিকেটেড হুইপল সার্জারির টেবিল থেকে। এ ছাড়াও কত দুর্ঘটনা বা সুপরিকল্পিত গুজবের মৃত্যু থেকে আজ অবশেষে অ্যাপোলোতে হৃদয় ছন্দ বন্ধ থেকে এই বয়সে।’
মৃত্যু নিয়ে তাঁর অনুভূতির এই ভিডিওতে নেটিজেনদের প্রতি নচিকেতার অভিমান ফুটে উঠেছে। কারণ, অনেকবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে তাঁর মৃত্যুর গুজব। এবারও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এমন খবর ছড়িয়েছিল। তাই তো অভিমানের সুরে নচিকেতা বললেন, ‘আমাকে তো আমার যা আয়ু, তার থেকে বেশিবার মারা হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। হয়তো ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করবেন। এবার আপনারা মৃত্যু ঘোষণা করলেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করব। কথা দিচ্ছি। অন্তত আপনাদের মান রাখতে।’
এ ভিডিওর শেষে নিজের ‘আগুনপাখি’ গানের দুটি লাইন জুড়ে দিয়েছেন নচিকেতা—‘মৃত্যু মস্ত ফাঁকি, দুচোখে আকাশ ডানায় আগুন, আরও আরও কত ওড়া বাকি’।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন অনুপম রায়। ৬টা থেকে হোটেল লবিতে অপেক্ষা। সঙ্গে আজকের পত্রিকার আরও দুই সাংবাদিক নাঈম হক ও তুষার পাল। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট দশেক পরে ব্যান্ড সদস্যদের নিয়ে লবিতে এলেন অনুপম রায়। সেখানে আমরা ছাড়া অপেক্ষায় ছিলেন আরও কয়েকজন। অনুপমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁরা
১২ মার্চ ২০২৩
ওয়ার্নার ব্রস বা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিয়ে আলোচনার যেন শেষই হচ্ছে না। তবে এর অবসান টানতে ওয়ার্নার ব্রস নিজেরাই যেন তোড়জোড় শুরু করেছে। তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের ১০৮.৪ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
আগামী রোজার ঈদেও একগুচ্ছ সিনেমার মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসেছে ‘প্রিন্স’, ‘দম’, ‘রাক্ষস’, ‘বনলতা এক্সপ্রেস’, ‘পিনিক’সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা। এ তালিকায় যুক্ত হলো ‘বনলতা সেন’। ২০২৪ সালে সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল।
১৯ ঘণ্টা আগে
মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে আসছে নাটকের দল অবলোকন নাট্যদল। নাটকের নাম ‘গন্ধসূত্র’। নাটকটি লিখেছেন অপু শহীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। আজ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে গন্ধসূত্র নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
১৯ ঘণ্টা আগে