Ajker Patrika

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা: সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ুন

পূর্ণতা হান্নান তিমি
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭: ৪১
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা: সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ুন

আর্থিক পরিস্থিতি আমার জন্য একটি বড় বাধা ছিল এবং তাই আমাকে সুযোগ খুঁজে বের করতে হয়েছে। আমি বৃত্তি ও ফান্ড খুঁজছিলাম। মিউনিখ, জার্মানিতে একটি ভালো সুযোগ পেয়ে যাই। মিউনিখ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সে মাস্টার্সে পড়ার সময় একটি জার্মান কোম্পানিতে খণ্ডকালীন চাকরি করি। আজ আপনাদের সঙ্গে আমার উচ্চশিক্ষার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।

স্বপ্নের কোনো সীমানা থাকা উচিত নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়ায় এবং একটি ছোট শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠার কারণে স্বপ্নপূরণে কিছু বাধা ছিল। বাবা-মা আমাকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিলেন এবং স্বপ্নগুলো অনুসরণ করতে সমর্থন করেছিলেন। শৈশব থেকেই পদার্থবিদ্যা ও গণিতের প্রতি আকর্ষণ ছিল। ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (প্রধান এভিওনিক্স) স্নাতক শেষ করার পর আমি স্টেমে বিদেশে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য দৃঢ় ছিলাম। 

প্রোফাইল তৈরি
মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে স্নাতক পড়ার সময় আমি আমার প্রথম বছর থেকেই বিভিন্ন প্রকল্প এবং ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য আগ্রহ ছিল। সেই প্রেরণা থেকেই আমার স্নাতকে থাকাকালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাঁচটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। আমার একটি গবেষণাপত্র আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ফিজিকসে প্রকাশিত হয়েছিল। আমি চারটির বেশি বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছি। এমআইএসটি রোবটিকস ক্লাব ও এমআইএসটি অ্যারোনটিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিকস ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ছিলাম। বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলাম এবং তাদের অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। এ ছাড়া রুয়েট, এনডিসি, ঢাবি, আইইউবিতে রোবটিকস ও লিডারশিপ প্রতিযোগিতার জন্য গিয়েছি। আমার অনুপ্রেরণা ছিল সিনিয়র ও পেশাদারদের কাছ থেকে শেখা এবং অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা। যখন বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করা শুরু করি, তখন আমি জানতে পারি যে তারা এসব বিষয়কে সামগ্রিক প্রোফাইল হিসেবে বিবেচনা করে। আমার আগ্রহ থেকে ছোট ছোট পদক্ষেপ আমাকে আমার লক্ষ্যের প্রথম ধাপে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। তাই আপনারা যাঁরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে ও স্কলারশিপে পড়তে চান, তাঁরা সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ুন। নিজের একটি প্রোফাইল তৈরি করুন।

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা
জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের জন্য ইংরেজিতে অনেক কোর্স অফার করা হয়। পদার্থবিদ্যার প্রতি আমার আগ্রহের কথা আমি শুরুতেই বলেছি, জার্মানিতে আবেদন করার সময় আমি সেখানে আটকে গিয়েছিলাম। আমি ২০১৯ সালে মিউনিখ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সে মাইক্রো ও ন্যানো টেকনোলজিতে আমার মাস্টার্স শুরু করেছি। কোর্সটি কোয়ান্টাম ফিজিকস ও সেমিকন্ডাক্টর, অ্যারোনটিক্যাল, বায়োমেডিকেল এবং আরও অনেক শিল্পের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের ওপর ভিত্তি করে ছিল। জার্মান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের সিস্টেমের চেয়ে অনেক আলাদা। আমি এটিকে প্রধানত কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান ১-এ খুব কঠিন বলে মনে করেছি, যার কোনো সিলেবাস বা সীমাবদ্ধতা নেই। প্রফেসররা জার্মানিতে খুব সহায়ক। আমি তাঁদের কাছে আমার আগ্রহ দেখিয়েছিলাম এবং তাঁরা আমাকে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন। এ ছাড়া আমি আরও কিছু কোর্স ও ব্যবহারিক পরীক্ষাগারের কাজ শেষ করেছি। প্রতিবার আমি শেখার জন্য নতুন জিনিস খুঁজে পেয়েছি এবং এটি আমাকে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণার জন্য অনেক বিকল্প রয়েছে। ভাগ্যক্রমে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বাইরেও বিকল্প পেয়েছি। 

বৃত্তি এবং অনুদান
জার্মানিতে মাস্টার্সের সময় আমি কয়েকটি বৃত্তি অর্জন করেছি। কিছু উল্লেখযোগ্য স্কলারশিপ হলো: ইরাসমাস প্লাস মোবিলিটি গ্রান্টি স্কলারশিপ, অস্কার কার্ল স্কলারশিপ, স্টিবেট স্কলারশিপ, হেনরিক ও লোটে মুহলফেঞ্জল স্টিফটাং স্কলারশিপ এবং কিছু অন্যান্য স্কলারশিপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টাল থেকে আমি সব বৃত্তি পেয়েছি। বৃত্তির প্রধান মানদণ্ড ছিল:

  • একটি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থাকা।
  • বর্তমান গ্রেড (জার্মান গ্রেডে ২.২-এর চেয়ে ভালো সব সময় ইতিবাচক)।
  • কভার লেটার/মোটিভেশন লেটার।
  • কারিকুলাম ভিটা (সিভি)।
  • সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম।
  • প্রকাশনা (বৃত্তির ওপর নির্ভর করে)। 

জার্মানির বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টিউশন ফি নেই। জার্মানিতে বসবাসের জন্য বৃত্তির পরিমাণ যথেষ্ট। এ ছাড়া ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং পরিবারের জন্য খরচ করতে পারেন। আমি জার্মানিতে মাস্টার্স করার সময় ইউরোপের প্রায় ১৬টি দেশ ভ্রমণ করেছি, যা আসলে আমার স্বপ্নের মধ্যে একটি ছিল, যখন আমি বাংলাদেশে প্রথম বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলাম।

খণ্ডকালীন চাকরি, গবেষণার সুযোগ এবং অন্যান্য
মিউনিখে পড়ার সময় আমি একটি জার্মান কোম্পানির কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছি। কোম্পানিটি ছিল একটি লিথোগ্রাফি ভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি। লিথোগ্রাফি হলো স্ট্যান্ডার্ড সেমিকন্ডাক্টর ফেব্রিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কৌশল, ছোট ছোট চিপ তৈরির জন্য প্যাটার্ন তৈরি করা হয়, যা সব ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে আমাদের সঙ্গে সর্বত্র থাকে। আমি কোম্পানির বিভিন্ন সফটওয়্যারের উন্নতি ও বিশ্লেষণের জন্য কাজ করছিলাম। এরপর বেলজিয়ামে মাস্টার্স থিসিসের জন্য একই বিষয়ে গবেষণার সুযোগ পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন স্কুলের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছি। তাই আপনাদের বলব, বিদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি বা বিভিন্ন ইন্টার্নশিপে যুক্ত হয়ে যাবেন। ফলে আপনার দক্ষতা যেমন বাড়বে, তেমনি কিছু আয়-রোজগারও হবে। 

পূর্ণতা হান্নান তিমি, স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী, মিউনিখ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স, জার্মানি

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরার গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল: স্বর্ণ রৌপ্য ব্রোঞ্জসহ ৭ অ্যাওয়ার্ড জয়

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
উত্তরার গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল: স্বর্ণ রৌপ্য ব্রোঞ্জসহ ৭ অ্যাওয়ার্ড জয়

বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো এবং মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক রচনা প্রতিযোগিতা কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৫-এ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে। স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জসহ সাতটি অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে উত্তরার গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

এ বছরের প্রতিযোগিতায় কমনওয়েলথের ৫৪টি দেশের মোট ৫৩ হাজার ৪৩৪ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশ নেওয়ার নতুন মাইলফলক। স্কুলটি জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের অসাধারণ সাফল্য উদ্‌যাপন করেছে স্কুলটি।

স্বর্ণপদক জিতেছে গ্রেড-৯-এর আনা তাসনুভা, গ্রেড-১০-এর আরিশা আহমেদ রায়না এবং গ্রেড-১১-এর মো. ফারজান আলী। রৌপ্য পদক অর্জন করেছে গ্রেড-৬-এর উমাইযা শামস ও গ্রেড-৯-এর কাজী আফসান রওনাক আনান। ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে গ্রেড-৭-এর আনজার সাইফান ও মো. ফাইজান আলী।

গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রশাসন বিভাগ থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের এই সাফল্য যেমনি তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল, একই সঙ্গে স্কুলের অঙ্গীকারেরও প্রমাণ। শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে, ভাবনার প্রকাশে এবং নেতৃত্বদানে সক্ষম করে তোলার জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানে বাংলাদেশি মিথিলার পথচলা

শিক্ষা ডেস্ক
মাহিমা ফেরদৌসী মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত
মাহিমা ফেরদৌসী মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা এবং বেড়ে ওঠা মাহিমা ফেরদৌসী মিথিলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। উদীয়মান এই চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে নৃবিজ্ঞানে পিএইচডি অধ্যয়নরত। তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্র চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান। বিশেষভাবে তিনি বহুমূত্র রোগ (ডায়াবেটিস) ও বায়োমার্কারকে কেন্দ্র করে মানবস্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও জৈবিক উপাদানের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি, চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তিনি। অনুলিখন মো. আশিকুর রহমানের।

নৃবিজ্ঞান বেছে নেওয়ার কারণ

বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞান এখনো তুলনামূলকভাবে অপরিচিত বিষয়। মিথিলা বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানের অতিরিক্ত চাপ নিতে না পেরে এমন একটি বিষয় খুঁজছিলাম, যেখানে পাস-ফেলের ভয় থাকবে না।’ তবে পুরো স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হওয়া তাঁর ‘চাপমুক্ত পড়াশোনা’র পরিকল্পনায় কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর ভাষায়, নৃবিজ্ঞানে শূন্য পাওয়া কঠিন হলেও ১০/১০ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ক্লাস নোট, বাংলা ও ইংরেজি নানা সোর্স ঘেঁটে পড়াশোনা করা এবং পরীক্ষার হলে সময় ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি বিষয় তাঁকে এগিয়ে রেখেছে।

মিথিলা মনে করেন, এই বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে সমাজের বৈচিত্র্যময় দিকগুলোর প্রতি সহনশীলতা বেড়েছে, সংস্কৃতির আলোচনায় দক্ষতা অর্জন করেছেন। গোল্ড মেডেল ও ডিনস অ্যাওয়ার্ড—এই স্বীকৃতির দিনগুলো তাঁর জীবনের স্মৃতির খাতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এসব অর্জন তাঁকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, ‘আমি না পারলে আর কে পারবে?’

হঠাৎ বদলে যাওয়া সিদ্ধান্ত

মিথিলা বলেন, শুরুতে পরিকল্পনা ছিল যুক্তরাজ্যে যাওয়ার। তবে হঠাৎ মনে হলো, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য এখন সবচেয়ে কঠিন সময়। এই সময়ে দেখি ফান্ড পাই কি না। নিজের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন মিথিলা। সবকিছু ঠিক থাকলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ হয়নি, যা কষ্টের ছিল। তবু নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। কারণ, যখন চেয়েছেন, তখনই যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পেরেছেন।

প্রফেসর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বড় কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। মিথিলার মতে, যাঁরা নির্দিষ্ট কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। না হলে সেখানে টিকে থাকা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। প্রস্তুতি আগেভাগে গুছিয়ে নেওয়া জরুরি। তাড়াহুড়ো করলে যেমন ভুল হয়, তেমনি আশানুরূপ ফলও আসে না।

গবেষণার বিষয়

বর্তমানে মিথিলা চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন এবং গবেষণার বিষয় হিসেবে ডায়াবেটিসকে চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই রোগের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বই এই ‘নীরব ঘাতক’ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে সামান্য অবদান রাখতে পারলেও সেটাই তাঁর কাছে বড় প্রাপ্তি।

ভয় যেভাবে করেছেন জয়

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ভয়। ভয় পেলে ইন্টারভিউ ভালো হয় না, কাগজপত্রের ঝামেলায় ঘাবড়ে যেতে হয়। তাই ভয় কমাতে হবে। তাঁর মতে, সঠিক গাইডলাইন ও পর্যাপ্ত তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করলে ভয় অনেকটা কমে। নিজের ফিল্ডের কোনো সিনিয়রের সঙ্গে আলোচনা করলে বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়। আর্থিক বিষয়ে তিনি বলেন, ফুল ফান্ডেড প্রোগ্রামে বড় কোনো খরচ থাকে না। যেটুকু হয়, সেটাও ধার করে শোধ করা সম্ভব। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য অন্তত এক বছর সময় নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।

কাছের মানুষের অনুপ্রেরণা

মিথিলার পথচলায় সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর বাবা। তিনি সব সময় বলতেন, আমেরিকায় গিয়ে এটা করা যাবে না, সেটা করা যাবে না। সেই নিষেধই যেন তাঁকে আমেরিকায় পৌঁছে দিয়েছে। ইন-লজরা তাঁর পড়াশোনায় সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। স্বামী যেভাবে প্রয়োজন হয়েছে, ঠিক সেভাবেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। মা ও বোন সময়-সময় সাহস জুগিয়েছেন। পাবলিক স্পিকিংয়ে সব সময় আতঙ্ক ছিল তাঁর। প্রেজেন্টেশনে তাঁর বন্ধুরা অনেক সময় ভরসা হয়ে উঠেছে। সিনিয়র ভাই-আপুদের দিকনির্দেশনা, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের স্নেহ—সবকিছুর কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন মিথিলা।

আগ্রহীদের জন্য পরামর্শ

মাহিমা ফেরদৌসী মিথিলার মতে, আমেরিকায় যাওয়া এবং সেখানে টিকে থাকতে হলে ধৈর্য ও পরিশ্রমের বিকল্প নেই। ফল একটু খারাপ হলেও পছন্দের ফিল্ডে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, মানবিক ও সমাজবিজ্ঞানের স্কোপ স্টেমের তুলনায় কম হলেও সুযোগ একেবারে কম নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আশা হারানো যাবে না। লেগে থাকতে হবে, তাহলেই পথ খুলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষক বাবার স্বপ্নপূরণে মেডিকেলে পড়ছেন উর্মি

মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঝিকরগাছা (যশোর)
সুচরিতা আক্তার উর্মি।
সুচরিতা আক্তার উর্মি।

বাবার স্বপ্নপূরণে মেডিকেলে পড়ছেন সুচরিতা আক্তার উর্মি। অনেক আগে অনন্তের জগতে পাড়ি জমানো কৃষক বাবার ইচ্ছা ছিল, তাঁর মেয়ে যেন চিকিৎসক হয়। বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে সুচরিতা আক্তার উর্মি সুচিকিৎসক হতে চান।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএসে যশোর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন উর্মি। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক বাবলুর রহমান ও গৃহিণী ঝরনা খাতুন দম্পতির মেয়ে উর্মি।

ছোটবেলা থেকে উর্মি ছিলেন মেধাবী। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে নির্বাসখোলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০২২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং ২০২৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি। স্কুল-কলেজ জীবনজুড়ে সব শ্রেণিতে প্রথম হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন উর্মি।

উর্মির বাবা বাবলুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন, তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে অন্তত একজন চিকিৎসক হোক। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই ২০১৬ সালে হঠাৎ মারা যান তিনি। বাবার অবর্তমানে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের কাঁধে। মায়ের সংগ্রাম আর বাবার অপূর্ণ স্বপ্নই উর্মির মনে চিকিৎসক হওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় গড়ে তোলে।

উর্মির মা ঝরনা খাতুন বলেন, ‘আমাদের কৃষক পরিবার হলেও মেয়েদের নিয়ে তাদের বাবা স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, অন্তত একটি মেয়ে যেন চিকিৎসক হয়। আমার বড় মেয়ে অনার্সে প্রাণিবিদ্যায় চতুর্থ বর্ষে পড়ে, ছোট মেয়েটি এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে। আর মেজ মেয়ে সুচরিতা আক্তার উর্মি যশোর মেডিকেল কলেজে পড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকে ব্যবহৃত ৮টি ইংরেজি বাক্য (পর্ব-৬)

শিক্ষা ডেস্ক
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৬
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আজ থাকছে আরও ৮টি প্রয়োজনীয় ইংরেজি বাক্য—

  • How can I apply for net banking? আমি কীভাবে নেট ব্যাংকিংয়ের জন্য আবেদন করতে পারি?
  • I want to activate mobile banking. আমি মোবাইল ব্যাংকিং সক্রিয় করতে চাই।
  • I have a problem with my account. আমার অ্যাকাউন্টের সঙ্গে একটি সমস্যা আছে।
  • My transaction did not go through. আমার লেনদেন সম্পন্ন হয়নি।
  • The ATM did not dispense cash. এটিএম টাকা দেয়নি।
  • I need help with online banking. অনলাইন ব্যাংকিংয়ে সাহায্য প্রয়োজন।
  • My password is not working. আমার পাসওয়ার্ড কাজ করছে না।
  • I forgot my PIN. আমি আমার পিন ভুলে গেছি।
  • Could you help me reset it? আপনি কি
  • এটি রিসেট করতে সাহায্য করবেন?
  • I need to report a suspicious transaction. আমাকে একটি সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট করতে হবে।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত