Ajker Patrika

‘শেষ কটা বছর ঋত্বিকের বেঁচে থাকাটাই একটা বিরাট অঘটন’

 খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ২১: ৪১
‘শেষ কটা বছর ঋত্বিকের বেঁচে থাকাটাই একটা বিরাট অঘটন’

ঋত্বিক ঘটক—যেন একজন গ্রিক মাস্টার! লম্বা শরীর, এলোমেলো চুল, একটা ঝোলা কাঁধ বেয়ে নেমে ঝুলে পড়েছে, পাঞ্জাবি—তার ওপর খাদির জ্যাকেট। বোতাম খোলা। আর জ্বলজ্বলে বুদ্ধিদীপ্ত দুটো চোখ, যেন ধরে রাখছে সব। প্রতিটি মুহূর্ত, দৃশ্য, জীবন—কিছুই ও চোখে এড়ায় না। সবমিলিয়ে ঋত্বিক ঘটক। বাংলা চলচ্চিত্র তাঁর হাতেই অনেকখানি জীবনবোধ শিখেছে, আন্তর্জাতিকতা পেয়েছে। এই ঋত্বিক ঘটক যতদিনে সবার পরিচিত ‘ঋত্বিক’ হয়ে ওঠেননি, তখন থেকেই মৃণাল সেনের সঙ্গে তাঁর দোস্তি। দেশভাগের যন্ত্রণা দুজনকেই তৈরি করছিল একটু একটু করে। শিল্পে, সংগ্রামে, রাজনীতিতে, ময়দানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছেন ঋত্বিক ও মৃণাল। ঋত্বিকের মৃত্যুর ৯ বছর পরে, ১৯৮৫ সালে, নির্মাতা মৃণাল সেন যে লেখাটি লিখেছিলেন ঋত্বিককে নিয়ে সেটার শেষ লাইনটি ছিল, ‘কে জানে হয়তো মরেই ঋত্বিক বাঁচল। শেষ কটা বছর ঋত্বিকের বেঁচে থাকাটাই একটা বিরাট অঘটন।’ তার আগে, মৃণালের পুরো লেখাটা জুড়ে, হাজির হয়েছেন সেই ঋত্বিক, যিনি ততদিনে তাঁর প্রথম সিনেমাটিও বানিয়ে ফেলতে পারেননি। তৈরি হচ্ছেন। নিজেকে প্রস্তুত করছেন ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সব ঝড় সামলাতে। আজ ঋত্বিকের জন্মদিনে পাঠকদের জন্য মৃণাল সেনের পুরো লেখাটি থাকল এখানে।

আমাদের একটা ছোট্ট দল ছিল তখন। একজন ছাড়া সবাই ছিলাম বেকার। কারুরই কোনো সংসার ছিল না, মা-বাবার সংসারে দায়িত্ব এড়িয়ে চলতাম সবাই। সকাল হতেই বেরিয়ে পড়তাম, হাজরা রোডের ওপর ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে ভিড় করতাম, আট বাই বারো ফিটের মতো একটা ঘর, ন্যাড়া টেবিল আর ভাঙা চেয়ারে ঠাসা দোকান, নাম প্যারাডাইস কাফে। ঋত্বিক ছিল আমাদের দলের সবচেয়ে লম্বাটে, সবচেয়ে রোগাটে এবং অবশ্যই সবচেয়ে ডাকসাইটে শরিক।

ঋত্বিক, সলিল চৌধুরী, তাপস সেন, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায় আর আমি—এই নিয়ে আমাদের দল। কখনো কখনো বিজন ভট্টাচার্য এসে জুটতেন আমাদের আড্ডায়, কখনোবা কালী বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চলত একটানা আসর। দোকানি ঝাঁপ বন্ধ করতেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে হত। আবার এসে জড়ো হতাম সূর্য ডোবার আগেই। গুচ্ছের চা গিলতাম, ভাগাভাগি করে এর ওর পকেট হাতড়ে ধার মেটাতাম, অবস্থার ফেরে ধারের অঙ্ক বাড়াতাম। আর কথা, কথা আর বক্তৃতা। যুক্তি তক্কো আর গল্পের ফোয়ারা। অঢেল, অশেষ। এসবের মধ্যমণি ছিল ঋত্বিক।

কী এত কথা বলতাম? দিনের পর দিন? যা কখনও ফুরিয়ে যেত না?

কী বলতাম না? সূর্যের তলায় যা কিছু ছিল সবই তুলে ধরতাম চায়ের টেবিলে, বিচারে আর বিশ্লেষণে মুখর হয়ে উঠতাম প্রতি মুহূর্তে। কিন্তু বারবার নানা কথার মধ্যেও যে-প্রশ্নে, যে-তর্কে, যে-বিষয়ে ফিরে আসতাম তা হল সিনেমা। সিনেমা, সিনেমা আর সশস্ত্র বিপ্লব।

সিনেমাকে বিপ্লবের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে আমরা চলতে শিখেছিলাম সেদিন থেকেই। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি অচঞ্চল বিশ্বাস রেখে সেদিন থেকেই আমরা অন্তঃসারশূন্য দেশজ সিনেমাকে তীব্রভাবে ঘৃণা করতে শিখেছিলাম, নতুন একটা ফ্রন্ট গড়ার জন্য মুখিয়ে উঠেছিলাম প্যারাডাইস কাফের ভাঙা চেয়ার-টেবিলে ঠাসা ওই ছোট্ট ঘরে, যে-ফ্রন্টে বিপ্লব আর সিনেমা হাত ধরাধরি করে চলবে। এই প্রাণচঞ্চল আসরগুলোয় যার গলা সবচেয়ে উঁচু পর্দায় বাধা ছিল সে হল ঋত্বিক।

 ১৯৭০-এর দশকে ঋত্বিক ঘটক। ছবি: সংগৃহীতঋত্বিক ছিল আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেপরোয়া। কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করত না ঋত্বিক, আগুপিছু ভাবার মতো ধৈর্য ছিল না। ধার আমরা সবাই করতাম। ধার করতাম কেন-না আমাদের কারুরই পকেটে পয়সা ছিল না। চা সিগারেট সবই আমাদের ধারে চলত, ধার করে সেই ধার মেটাতাম। ঋত্বিক চা খেত ঘন ঘন, সিগারেট খেত না। খেত বিডি। বিড়ি তখন এক পয়সায় তিন চারটে পাওয়া যেত। সেই বিড়িও ঋত্বিককে কিনতে হত ধারে। এক বিড়ির দোকানে শুধু বিড়ির জন্য ওর একবার ধার হয়েছিল আশি টাকা। ঋত্বিকের বেপরোয়া মেজাজের এ এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এই মেজাজ পরবর্তীকালে ঋত্বিকের দর্শক প্রত্যক্ষ করেছেন ‘অযান্ত্রিক’-এ, ‘মেঘে ঢাকা তারা’য়, ‘সুবর্ণরেখা’য়, ওর কথায় বার্তায়। ওর লিখিত বক্তব্যে।

সিনেমার রাজ্যে ঢোকা প্রায় যখন অসম্ভব মনে হচ্ছিল তখন আমরা সবাই ঠিক করলাম স্টুডিয়োর অসচ্ছল কর্মী ও কলাকুশলীদের নিয়ে একটি সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন দল গড়ে ভুলব। শুরু হল আমাদের অভিযান। দল বেঁধে স্টুডিয়ো স্টুডিয়ো ঘুরতাম, কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেতাম, বলতাম, বোঝাতাম, নিজেদের শক্তি সম্পর্কে ভালোবাসা ও প্রত্যয় জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালাতাম এবং শেষ পর্যন্ত একদিন স্টুডিয়োর মধ্যে জোরালো আওয়াজ তুললাম। সেই আওয়াজী মিছিলের প্রথম সারির মানুষ রোগাটে লম্বাটে ঋত্বিক।

‘সুবর্ণরেখা’ সিনেমার সেটে ঋত্বিক ঘটক। ছবি: সংগৃহীত

একদিন, রাতারাতি দেখা গেল, স্টুডিয়ো চত্বরে প্রচণ্ড উত্তেজনা। স্টুডিয়োর কর্মকর্তারা ঋত্বিকের ওপর খড়্গহস্ত হয়ে উঠলেন। কারণ, আগের দিন বিকেলে স্টুডিয়োর কর্মীদের এক সভায় ঋত্বিক বলেছে স্টুডিয়োর ভেতরে মদ্যপান চলবে না। ঋত্বিকের মতে এ এক অসহ্য বেলেল্লাপনা, এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে সংঘবদ্ধভাবে। কর্মকর্তারা খেপে উঠলেন, বললেন, ব্যক্তিগত জীবনে চারিত্রিক শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতার ওপর তাঁদের কোনো হাত নেই, কিন্তু ঋত্বিককথিত এহেন ঢালাও অপবাদ অন্যায় এবং অশালীন। আমাদের বাকিরা সবাই তখন ঋত্বিককে নিয়ে পড়লাম, কী করে ওকে সামলানো যায়। ওকে সামলাই তো কর্তারা বেঁকে বসছেন, কর্তাদের নরম করি তো ঋত্বিক গরম হয়ে উঠছে। শেষ পর্যন্ত অবস্থা আয়ত্তে এল। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হল। কিন্তু মদ সম্পর্কে ঋত্বিকের ঘৃণা তীব্রতর হয়ে উঠল। অথচ এই মদই পরবর্তী জীবনে ওকে গ্রাস করে বসল, মদ থেকে আত্মমর্দন, আত্মমর্দন থেকে আত্মহননের দিকে দ্রুত এগিয়ে চলল।

তখন গণ-আন্দোলনের জোয়ারে সারা পশ্চিমবঙ্গ তোলপাড়। একদিকে সংগ্রামী জনতা, কৃষক-মজদুর-মধ্যবিত্তের আপসহীন লড়াই, অন্যদিকে শাসকের লাঠি, গুলি আর মারণযজ্ঞের নানা প্রক্রিয়া। কাকদ্বীপে লাল এলাকা তৈরি হয়েছিল সেই সময়ে। সেই সময়েই কৃষকরমণী অহল্যাকে তার পেটের বাচ্চাসমেত খুন করেছিল দেশজ পুলিশ। এবং শহিদ অহল্যাকে স্মরণ করে ও সাধারণ মানুষের সংগ্রামী মননকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সলিল রচনা করেছিল এক মহৎ কবিতা— শপথ।

আমাদের ছোট্ট দলের সবাই ঠিক করলাম আমরা পালিয়ে যাব কাকদ্বীপে। আমরা শপথ নিলাম আমরা ছবি করব, নির্বাক ছবি, ষোলো মিলিমিটারে তুলব, লুকিয়ে লুকিয়ে কলকাতার কোনো ল্যাবরেটরিতে সেই ছবি ধোলাই করব, সম্পাদনা করব। তারপর লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রামে গ্রামে দেখিয়ে বেড়াব। আমি চিত্রনাট্য লিখলাম, সলিল নামকরণ করল ‘জমির লড়াই’, ঋত্বিক ভাঙা একটা ক্যামেরা জোগাড় করল। কাকদ্বীপে অবশ্য যাওয়া হল না শেষ পর্যন্ত। কিন্তু সেই সুযোগে ক্যামেরাটাকে, তা সে যতই প্রাচীন আর ভাঙা হোক না কেন, নাড়াচাড়া করতে পেরে ঋত্বিক ছবি তোলার কলাকৌশলের অনেকটা রপ্ত করে নিল।

 ১৯৪০ এর দশকে ঋত্বিক ঘটক

আমরা ঝগড়াও করেছি প্রচুর। তখন এবং পরবর্তী জীবনে। ঝগড়া করেছি, মতান্তর ঘটেছে, মনান্তর ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে এক এক সময়ে, আবার সময় আর ঘটনার মধ্য দিয়ে মিশে গিয়েছি আগেকার মতোই, এক সঙ্গে চলেছি।

ছেলেমানুষি করেছি অনেক: আমি, ঋত্বিক, আমরা সবাই। ছেলেমানুষিকে প্রশ্রয়ও দিয়েছি সবাই। অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটিয়েছি একাধিক। পরে বুঝতে পেরেছি, পুরোনো সম্পর্কে ফিরে যেতে চেষ্টা করেছি আপ্রাণ।

ফেব্রুয়ারির ছ-তারিখে রাত এগারোটা পাঁচ মিনিটে ঋত্বিক মরে গেল। ও মরবে আমরা জানতাম। ঋত্বিক নিজেও জানত। চব্বিশে ডিসেম্বর শেষবারের মতো জ্যান্ত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আমাদের বাড়িতে যখন এল, দেখলাম ও ধুঁকছে। ধুঁকতে ধুঁকতে কথা বলছে, হাসছে। অনেক খেল, বলল, মদ আর খাব না। আবার বলল: আর বেশি দিন বাঁচব না। বলল: এ যাত্রায় তো টাঁসলাম না। দেখা যাক।

সাল ১৯৭৬। ঋত্বিক ঘটকের স্মরণ সভায়। ছবি: সংগৃহীতঋত্বিক সেদিন আমাকে দেখতে পায়নি। কিন্তু ওর পাশে আমি দাঁড়িয়ে ও তখন মরছে। কোমায় আচ্ছন্ন ঋত্বিক, দামাল ঋত্বিক, বেপরোয়া ঋত্বিক, অসহিষ্ণু ঋত্বিক, বিশৃঙ্খল ঋত্বিক। ঋত্বিক মরল।

কে জানে, হয়তো মরেই ঋত্বিক বাঁচল। শেষ কটা বছর ঋত্বিকের বেঁচে থাকাটাই একটা বিরাট অঘটন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্যারামাউন্টের ১০৮ বিলিয়নের প্রস্তাবে না, নেটফ্লিক্সের ৭২ বিলিয়নের চুক্তিই চায় ওয়ার্নার ব্রস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬
ওয়ার্নার ব্রসকে অধিগ্রহণে চলছে নেটফ্লিক্স ও প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের লড়াই। ছবি: কাউন্সিল অব গিকস।
ওয়ার্নার ব্রসকে অধিগ্রহণে চলছে নেটফ্লিক্স ও প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের লড়াই। ছবি: কাউন্সিল অব গিকস।

ওয়ার্নার ব্রস বা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিয়ে আলোচনার যেন শেষই হচ্ছে না। তবে এর অবসান টানতে ওয়ার্নার ব্রস নিজেরাই যেন তোড়জোড় শুরু করেছে। তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের ১০৮.৪ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।

এর আগে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স দাবি করেছিল, তাদের প্রস্তাবটি ওয়ার্নার ব্রাদার্সের চলচ্চিত্র ও স্ট্রিমিং ব্যবসা নিয়ে নেটফ্লিক্সের সঙ্গে করা ৭২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির চেয়ে ‘উন্নত’।

এ সময় হলিউডের অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতনামা চলচ্চিত্র স্টুডিওর নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে, সে প্রশ্নে নাটকীয় মোড় নেয়। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সুপারিশ করে। একই সঙ্গে তারা জানায়, নেটফ্লিক্সের সঙ্গে করা চুক্তিটিই প্রতিষ্ঠানের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা করে।

গত অক্টোবরে একাধিক সম্ভাব্য ক্রেতার আগ্রহ পাওয়ার পর ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি নিজেকে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করে। ওই আগ্রহীদের মধ্যে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সও ছিল।

এরপর ৫ ডিসেম্বর ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি জানায়, তারা তাদের চলচ্চিত্র ও স্ট্রিমিং ব্যবসা নেটফ্লিক্সের কাছে বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে।

দীর্ঘ আইনি নথিতে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির পরিচালনা পর্ষদ বলেছে, প্যারামাউন্টের প্রস্তাবটি বহু এবং গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। একই সঙ্গে তারা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনী পরিবার এলিসন পরিবার এই প্রস্তাবে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, প্যারামাউন্টের প্রস্তাবের পেছনে রয়েছে বিলিয়নিয়ার এলিসন পরিবার। এই পরিবারের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানা যায়।

বিনোদন শিল্পে বর্তমানে ক্ষমতার অবস্থান কোথায় তা তুলে ধরে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পরিচালনা পর্ষদ জানায়, স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের প্রস্তাবটি আর্থিকভাবে বেশি সুসংহত। পাশাপাশি এটি দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বেশি মূল্য সৃষ্টি করবে।

এদিকে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের এই সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছে নেটফ্লিক্স। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রধান নির্বাহী টেড সারানডোস বলেন, একীভূতকরণ চুক্তিটি ‘উন্নত’ এবং ‘শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোত্তম স্বার্থে’ করা হয়েছে।

ওয়ার্নার ব্রাদার্সের শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে নেটফ্লিক্স আবারও জানায়, তাদের প্রস্তাবে অর্থায়নের কাঠামো আরও স্পষ্ট। পাশাপাশি এতে নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম।

এ অবস্থায় প্যারামাউন্ট চাইলে নতুন করে আরেকটি প্রস্তাব দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে হলিউড আলোড়িত করা এই অধিগ্রহণ–নাটক এখানেই শেষ হচ্ছে না।

নেটফ্লিক্স ও প্যারামাউন্টের চুক্তির মধ্যে যে তফাত

নেটফ্লিক্স ওয়ার্নার ব্রাদার্সের চলচ্চিত্র স্টুডিও এবং এইচবিও স্ট্রিমিং সেবা কিনতে চায়। এতে তারা ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সমৃদ্ধ কনটেন্ট ভান্ডারের ব্যবহারের অধিকার পাবে। একই সঙ্গে নিজেদের গ্রাহকদের জন্য এসব সিনেমা ও অনুষ্ঠান নিশ্চিতভাবে দেখানোর সুযোগও সুরক্ষিত হবে।

তবে নেটফ্লিক্স মিডিয়া জায়ান্টটির পে-টিভি চ্যানেলগুলো নিতে আগ্রহী নয়। ফলে নেটফ্লিক্সের প্রস্তাবে গেলে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার আগে ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে সিএনএন ও টিএনটির মতো টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো আলাদা একটি কোম্পানিতে বিক্রি করে দিতে হবে।

অন্যদিকে প্যারামাউন্ট পুরো ওয়ার্নার ব্রাদার্সকেই কিনতে চায়। এর অর্থ হলো, তাদের নিজস্ব টিভি চ্যানেল সিবিএস, এমটিভি ও শোটাইমের প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেলগুলোকেও অধিগ্রহণের আওতায় আনতে হবে।

নেটফ্লিক্স ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণের চুক্তি ঘোষণা করার এক সপ্তাহ পরই প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স পুরো কোম্পানিটি কিনতে নতুন প্রস্তাব দেয়। এতে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে ক্রমেই বিনোদন শিল্পে মালিকানা একীভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ভোক্তাদের পছন্দের সুযোগ কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুলতে পারে। এছাড়া ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিযোগিতা-নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কেন ওয়ার্নার ব্রসকে নিয়ে এই লড়াই

ওয়ার্নার ব্রাদার্সের নতুন মালিক স্ট্রিমিং বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠানের ভান্ডার তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘হ্যারি পটার’, ‘মনস্টারভার্স’, ‘ফ্রেন্ডস’ এবং এইচবিও ম্যাক্স স্ট্রিমিং সেবা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের বিশ্লেষক মাইক প্রুলক্স বলেন, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে, সে লড়াইয়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যা ঘটছে, তা যেন এইচবিওর সাকসেশন সিরিজের বাস্তব রূপ, বা এর আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ একটি পর্বের মতো। আর যদি মনে করেন, এই কাহিনির শেষটা আপনি আগেই বুঝে গেছেন, তাহলে আবার ভাবুন।’

এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পের একটি অংশ ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পুরো বা আংশিক কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার পূর্ব ও পশ্চিম শাখা এই একীভূতকরণ ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছে।

তাদের যুক্তি, এই ধরনের একীভূতকরণ হলে মজুরি কমে যেতে পারে এবং কর্মসংস্থান হ্রাসের ঝুঁকি তৈরি হবে। পাশাপাশি দর্শকদের জন্য কনটেন্টের পরিমাণও কমে যাবে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঈদের সিনেমার দৌড়ে ‘বনলতা সেন’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
মাসুমা রহমান নাবিলা। ছবি: সংগৃহীত
মাসুমা রহমান নাবিলা। ছবি: সংগৃহীত

আগামী রোজার ঈদেও একগুচ্ছ সিনেমার মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসেছে ‘প্রিন্স’, ‘দম’, ‘রাক্ষস’, ‘বনলতা এক্সপ্রেস’, ‘পিনিক’সহ আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা। এ তালিকায় যুক্ত হলো ‘বনলতা সেন’। ২০২৪ সালে সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পিছিয়ে আসেন। অবশেষে জানা গেল, নতুন বছরে আলোর মুখ দেখবে সিনেমাটি। আগামী রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে বনলতা সেন।

জীবনানন্দ দাশের কাল্পনিক চরিত্র বনলতা সেনকে ঘিরে সিনেমাটি বানিয়েছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। সরকারি অনুদানের এ সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাসুমা রহমান নাবিলা। তবে সহজেই এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাননি অভিনেত্রী। শুরুতে এ সিনেমার অন্য একটি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল নাবিলাকে। তবে রাজি হননি অভিনেত্রী। নির্মাতাকে শর্ত দিয়েছিলেন, তিনি বনলতা সেন চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী। এরপর তিনবার অডিশন দেওয়ার পর বনলতা চরিত্রে নাবিলাকে চূড়ান্ত করেন নির্মাতা।

বনলতা সেন সিনেমায় জীবনানন্দ দাশ চরিত্রে দেখা যাবে খায়রুল বাসারকে। আরও অভিনয় করেছেন সোহেল মণ্ডল, নাজিবা বাশার, প্রিয়ন্তী উর্বী, রুপন্তী আকীদ, শরিফ সিরাজ, সুমাইয়া খুশি প্রমুখ।

২০২১-২২ অর্থবছরে ৭০ লাখ টাকার অনুদান পায় বনলতা সেন। নির্মাতা জানিয়েছেন, সিনেমাটি নির্মাণে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি তিনি। সময় বেশি লাগলেও যত্ন নিয়ে কাজ শেষ করেছেন। মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বলেন, ‘জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কাজ করা অনেক বেশি দায়বদ্ধতার। রিসার্চ করা, প্রস্তুতি নেওয়া, উপযুক্ত অভিনয়শিল্পী খোঁজা—পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক কঠিন ছিল। সিনেমার জন্য সবাইকে প্রস্তুত করে নেওয়ার একটা বিষয় ছিল। দীর্ঘদিন আমরা রিহার্সাল করেছি। এই সিনেমার অনেক বড় একটা পার্ট ছিল প্রোডাকশন ডিজাইন। আমি পর্দায় যেভাবে সিনেমাটি দেখতে চাই, তা প্রস্তুত করতে অনেক সময় লেগে যায়।’

বনলতা সেন মুক্তির বিষয়ে নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল জানান, ২০২৬ সালের ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সিনেমাটি মুক্তির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। শিগগির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হবে প্রচার-প্রচারণা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবলোকন নাট্যদলের নতুন নাটক ‘গন্ধসূত্র’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
অবলোকন নাট্যদলের নতুন নাটক ‘গন্ধসূত্র’

মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে আসছে নাটকের দল অবলোকন নাট্যদল। নাটকের নাম ‘গন্ধসূত্র’। নাটকটি লিখেছেন অপু শহীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। আজ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে গন্ধসূত্র নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। একই স্থান ও সময়ে আগামীকাল মঞ্চস্থ হবে এই নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী।

নাটকের গল্প এগিয়েছে একটি মেয়ের জীবনকে ঘিরে। মেয়েটি যেন হঠাৎ করেই ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার ব্যক্তিগত অহং দলিত হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতায়। নিজ ঘরে সে শনাক্ত করে সেই নির্যাতক ও নিপীড়ককে। সমাজের আইনের প্রতি সে আস্থা হারিয়ে ফেলে। এ ঘটনা যেন পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রে, যেকোনো নগরে ঘটে থাকে। ঠিক এখনই কোথাও না কোথাও ঘটছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। যে দেশে দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট শাসনের পর গণতন্ত্র হামাগুড়ি দিতে শুরু করে, সেখানে এসব ঘটনা বেশি ঘটে।

নির্দেশক অপু শহীদ জানান, সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এই নাটক। সমকালের বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় জারিত এক দগদগে নাটক গন্ধসূত্র। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বই এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বের অর্থনীতি এখন সমাজ-রাজনীতি, উন্নয়ন-বিশ্বায়ন, যুদ্ধ-হিংস্রতায় এমন এক টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যেখানে ব্যক্তি মানুষের সুস্থ থাকাটা বেশ কৌতূহলপ্রদ। আধিপত্যবাদী চরিত্র পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছিল কিন্তু কিছুতেই একটা কাঠামোতে দাঁড় করানো যাচ্ছিল না। এই অস্থিরতার মধ্যে মনে পড়ে গেল আর্জেন্টাইন-আমেরিকান নাট্যকার অ্যারিয়েল ডর্ফম্যানের কথা। এই বিশ্বায়নের যুগে মূল ইংরেজি নাটক, পোলনস্কির ফিল্ম এমনকি হিন্দি সিনেমাও পেয়ে গেলাম। পেয়ে গেলাম ডর্ফম্যানের আরও অনেক লেখার সন্ধান। নাটকের মূল ভরকেন্দ্র রাখলাম পোলনস্কির “ডেথ অ্যান্ড দ্য মেইডেন” সিনেমার ওপর।’

নির্দেশক তৌফিকুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘গন্ধসূত্র নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়ে মনে হলো, এই নাটকের সময়টা শুধু আমাদের রাষ্ট্রের নয়, বর্তমান বিশ্বের যেখানেই গণতন্ত্র ধসে পড়ছে সেখানকার বাস্তবতা। নাটকে নির্যাতিত এক নারী ব্যক্তিগত যন্ত্রণার বদলা নিতে চাইছে, এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে দুই পুরুষ চরিত্র নাটকীয় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। নাটকের শেষে এসে মেয়ে এবং আগন্তুক এক ভয়ানক ডিসকোর্সে পৌঁছায়। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্রের বৈপরীত্যের কারণে সাধারণ নাগরিক একে অপরের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।’

গন্ধসূত্র নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসরিন অনু, সরওয়ার জাহান উপল, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, ডায়না প্রমুখ। সংগীতে আছেন চার্লস নিলয় চৌধুরী, সেট ডিজাইনে আবু বকর সিদ্দিকি, আলোক পরিকল্পনায় মোখলেছুর রহমান এবং কস্টিউম ডিজাইন করেছেন আইরিন পারভীন লোপা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাসপাতাল থেকে ফিরে অভিমানী নচিকেতা

বিনোদন ডেস্ক
নচিকেতা চক্রবর্তী
নচিকেতা চক্রবর্তী

ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে তাঁর। চিকিৎসা শেষে ছয় দিন পর ১২ ডিসেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে কাগজ-কলমে নচিকেতা লিখে রেখেছিলেন মৃত্যু নিয়ে তাঁর অনুভূতি। গতকাল ফেসবুকে নিজের কণ্ঠে প্রকাশ করেন ‘মৃত্যু মস্ত ফাঁকি’ শীর্ষক তাঁর এই উপলব্ধি।

জীবনে চলার পথে বেশ কয়েকবার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন নচিকেতা। সেই কথাই সবাইকে জানালেন তিনি। নচিকেতার কথায়, ‘মৃত্যুর মুখ থেকে বারংবার ফিরে মন্দ লাগছে না। প্রথমবার বাইক থেকে পড়ে মাথায় লেগে কোমায়, তখন বয়স ১৫। দ্বিতীয়বার মানিকতলায় বাসভাড়া বৃদ্ধি আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পাশের কমরেডের মৃত্যু আমার বদলে; হঠাৎ স্থান পরিবর্তনের কারণে। তখন বয়স কুড়ি। তৃতীয়বার পাতালরেলের নির্মিত হওয়া পরিত্যক্ত টানেলে জলে ডুবতে ডুবতে, তখন বয়স ১৬। ক্ষুদিরাম ছবি দেখে উৎসাহিত হয়ে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে বেঁচে যাওয়া। দড়িটা হঠাৎ ছিঁড়ে যাওয়ায়, বয়স তখন ৭। নকশাল আন্দোলন দেখে উত্তেজিত হয়ে স্কুলে আগুন লাগিয়ে মরতে মরতে, তখন বয়স ৬। ৪৭ বছর বয়সে দিল্লির হাসপাতালে মোস্ট কমপ্লিকেটেড হুইপল সার্জারির টেবিল থেকে। এ ছাড়াও কত দুর্ঘটনা বা সুপরিকল্পিত গুজবের মৃত্যু থেকে আজ অবশেষে অ্যাপোলোতে হৃদয় ছন্দ বন্ধ থেকে এই বয়সে।’

মৃত্যু নিয়ে তাঁর অনুভূতির এই ভিডিওতে নেটিজেনদের প্রতি নচিকেতার অভিমান ফুটে উঠেছে। কারণ, অনেকবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে তাঁর মৃত্যুর গুজব। এবারও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এমন খবর ছড়িয়েছিল। তাই তো অভিমানের সুরে নচিকেতা বললেন, ‘আমাকে তো আমার যা আয়ু, তার থেকে বেশিবার মারা হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। হয়তো ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করবেন। এবার আপনারা মৃত্যু ঘোষণা করলেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করব। কথা দিচ্ছি। অন্তত আপনাদের মান রাখতে।’

এ ভিডিওর শেষে নিজের ‘আগুনপাখি’ গানের দুটি লাইন জুড়ে দিয়েছেন নচিকেতা—‘মৃত্যু মস্ত ফাঁকি, দুচোখে আকাশ ডানায় আগুন, আরও আরও কত ওড়া বাকি’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত