Ajker Patrika

সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, পেছনে বিএনপি, অদৃশ্যে অন্যরা

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২২, ০৯: ৩২
সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, পেছনে বিএনপি, অদৃশ্যে অন্যরা

৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে একটি জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। এই জোটের সদস্য দলগুলো হচ্ছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। বেশ কয়েক মাস ধরেই বিএনপিসহ নতুন জোটের নেতারা বর্তমান সরকারকে উৎখাতে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামের একটি জোট গঠনের কথা বারবার গণমাধ্যমে উচ্চারণ করে আসছিলেন। তখন থেকেই সবাই অপেক্ষায়—কবে গণতন্ত্রের মঞ্চে আসীন হবেন আমাদের পরিচিত কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, যাঁদের কেউ কেউ নানা দলে নানা জোটে থেকে রাজনীতি করেছেন, কেউ কেউ আবার সংসদে গেছেন, সরকার অনুগত বিরোধীদলীয় নেতাও হয়েছেন। তবে গণতন্ত্র মঞ্চটি হালের নতুন কোনো সংস্থা নয়।

২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সদস্য মওদুদ আহমদ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সুসংহত করতে রাজধানীসহ দেশের জেলা ও উপজেলায় গণতন্ত্র মঞ্চ তৈরি করা হবে।’ পরদিন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মওদুদ আহমদের ওই সমালোচনার তীব্র প্রতিবাদ করে বলা হয়, ‘তাদের ওটা গণতন্ত্র মঞ্চ নয়, বরং রাজাকার মঞ্চ হবে।’ সে সময় দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে একদিকে তরুণ প্রজন্মের সিংহভাগ অংশ গণজাগরণ মঞ্চ নামে একটি আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী ওই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবির পক্ষে আন্দোলন সোচ্চার হতে থাকে। এমনকি সরকারও গণজাগরণ মঞ্চের দাবি পূরণ করতে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনের অসম্পূর্ণতা সংশোধন করে।

সে সময় এই বিচার এবং আন্দোলনের বিপক্ষে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতৃত্ব বক্তব্য দেন। বিএনপির কোনো কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অনেকেই গণজাগরণ মঞ্চেও যুক্ত হয়ে তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু দলের কঠোর অবস্থানের কারণে তাঁরা সরে যান। জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বিএনপির এই অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। জামায়াত-বিএনপি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে ধর্মবিরোধীদের আন্দোলন নামে ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করে। সরকারে না থাকার কারণে বিএনপি ও জামায়াত ‘গণতন্ত্র মঞ্চের’ কোনো জায়গা অধিকারে নিতে পারেনি। তবে রমনা পার্ক থেকে উচ্চ মঞ্চের ব্যানারে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। সেটিকে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরাই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর হেফাজতে ইসলামকে 
নিয়ে বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদেরবিচার বন্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। সে ইতিহাস সবারই জানা। 

গণতন্ত্র মঞ্চটি বোঝাই যাচ্ছে বিএনপির অত্যন্ত মনঃপূত একটি ‘শিশু’ সংস্থার নাম, যার আয়ুষ্কাল বেশি নয়। অনেকেই সেই সংগঠনটির নাম ভুলে গেলেও জামায়াত ও বিএনপি ভুলে যাবে, সেটি ভাবার কারণ নেই। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে দলগত অবস্থান নিতে পারে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতে গণতন্ত্র মঞ্চের জন্ম দিতে পারে, তাদের রাজনীতিতে অপকৌশল প্রয়োগের ক্ষমতা সম্পর্কে কম জানেন বা বোঝেন তাঁরা হয়তো ভুলে গেছেন।

আমি বিস্মিত হয়েছি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের মুখ থেকে যখন একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলতে শুনি, ২০১৩ সালে এমন সংগঠন যে সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি তাঁর জানা নেই। বিপ্লবীদের স্মৃতিশক্তি প্রখর, তাঁদের অনেক লেখাপড়াও আছে। রাজনীতিতে তাঁদের সৎ চরিত্রের একটা সুনাম আছে। দেশের জন্য বিপ্লবীদের ত্যাগের শেষ নেই। ২০ শতকের শুরু থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভারতবর্ষকে স্বাধীন করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু জীবনযুদ্ধে পরাজিত অনেক বিপ্লবী আন্দোলনে টিকে থাকতে পারেননি। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নানা তত্ত্বীয় বিভ্রান্তিতে পড়ে এমনকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরও অনেকে বিরোধিতা করেছিলেন। কেউ কেউ পাকিস্তানিদের পক্ষও নিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ নানা তত্ত্বে জড়িয়ে বিভক্ত হয়ে একে অপরের রক্তে হাত রঞ্জিত করেছেন।

দুঃখজনক হলো, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই বিপ্লব ও বিপ্লবী তত্ত্বের আবেগে আপ্লুত হয়ে অনেকেই রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির নানা জটিলতাকে বুঝতে একেবারেই অক্ষম হয়েছিলেন। আসলে বিপ্লবীদের মধ্যে রোমান্টিকতার যেমন বিস্তার ঘটে, একইভাবে ভুলভ্রান্তিতে দেশপ্রেম ও মেধাকে তেমন কেউই খুব একটা কাজে লাগাতে পারেননি। অথচ লাখো তরুণ-তরুণী স্বাধীনতা-উত্তরকালে বিপ্লবীদের বাঁশির সুরেই বিমোহিত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেটি হ্যামিলনের বংশীবাদকের গল্পের মতোই আমাদেরও কয়েকজন মেধাবী, দেশপ্রেমিক, উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়ী প্রজন্মকে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও শিক্ষা থেকে হারাতে হয়েছে। এর প্রধান কারণ, বিপ্লবী রাজনীতি যে ধরনের সামগ্রিক জ্ঞানচর্চার দাবি রাখে, সেটি অনেক ক্ষেত্রেই বেশির ভাগ নেতা-কর্মী অর্জন করতে পারেন না। ফলে তাঁরাও পা দেন সে পথে, যে পথ তাঁদের নিয়ে যায় অন্যত্র। এভাবেই বাংলাদেশেও বিপ্লবী বাম রাজনীতি কেবলই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হচ্ছে। এর জন্য আমাদের মনঃকষ্ট আছে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সম্ভবত আমরা বর্তমান কিংবা নিকট-ভবিষ্যতে দেখতে পাব না। গত ৫০ বছরের বিপ্লবীতত্ত্ব চর্চাকারীরাই নানা দলে বিভক্ত। কিন্তু কোন জোট তাদের খোসার মতো ব্যবহার করে ছুড়ে রাস্তায় ফেলে দেবে, সেই দূরদর্শিতা না থাকার কারণে তাঁরা বারবার ব্যবহৃত হয়েছেন।

এবার গণতন্ত্র মঞ্চের রূপরেখার কথা শোনা যাক। ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।…রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সরকারের জবাবদিহির কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার। একই সঙ্গে ফেডারেল পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় কমিশন গঠন।’

এসব নতুন কথা নয়। কিন্তু এসব করার ক্ষমতা এই জোটের নেই। যাঁরা তাঁদের এই মঞ্চটি ভাড়া দিয়েছেন, তাঁদের চিন্তার ধারেকাছে কখনো ছিল না, ক্ষমতায় গেলেও হবে না। যাঁরা এখন এই জোটের হয়ে কথা বলেন, তাঁরা জ্ঞানবুদ্ধিতে এঁদের চেয়ে মোটেও কম পাকা নন। কিন্তু তাঁরা এমন একটি দল করেন, যে দলের প্রতিষ্ঠাতা তাঁদেরই কারও কারও দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার রক্ত নিয়েছেন, নেতা-কর্মীদের জেলে পুরিয়েছেন, দল ভেঙে তছনছ করেছেন, নানাজনকে নানা স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এরপর যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। তিনি তো ঘোষণাই দিয়েছিলেন, ‘আমি রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে দেব।’ এ ক্ষেত্রে তিনি আসলেই সফল, সেটি বিশ্বাস করতেই হবে। নিজেই দল প্রতিষ্ঠিত করার আগেই স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, অতি ডান, অতি বাম ও সুবিধাবাদীদের জড়ো করেছেন। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ প্রতিষ্ঠা করে জামায়াত পুনঃপ্রতিষ্ঠার মহড়া দিয়েছেন। কারণ, তাঁর দল গঠনের জন্য দরকার ছিল অভিজ্ঞ আরেকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন, যার সঙ্গে আদর্শগত বিরোধ ততটা থাকবে না। কিন্তু চেহারায় নিজের দলটি থাকবে পাশ্চাত্য পোশাক, বেশভূষা এবং ক্লিন শেভড, অন্যদিকে মগজে থাকবে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের বাংলাদেশের ভাবনা, যার সঙ্গে জামায়াতের খুব বেশি দূরত্ব থাকবে না।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও জামায়াত-বিএনপি একজোটই ছিল, মাঝেমধ্যে একটু-আধটু ভিন্নতা দেখিয়েছে মাত্র। একানব্বইয়ের নির্বাচনের প্রাক্কালে খালেদা জিয়া গোলাম আযমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ২০৬ আসনে জামায়াতের ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করলেন। এর বিনিময়ে জামায়াতকে ৯৪টি আসনে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এভাবেই আসন ভাগাভাগি হয়। বিজয় লাভের পর সংসদে দুটি নারী আসন জামায়াতকে দেওয়া হয়। এসব গোপন তৎপরতার অনেক কিছুই অনেকের জানা ছিল না। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে জামায়াত তিনটি আসন পায়। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ঐক্য হয়নি। এরপর আবার জামায়াত এবং বিএনপি আদর্শগত ঐক্যে ফিরে যায়। ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর খালেদা জিয়া, গোলাম আযম, এইচ এম এরশাদ এবং মাওলানা আজিজুল হক স্বাক্ষর করলেন চারদলীয় জোটের রূপরেখায়। এরশাদ জোটছুট হলেও বাকিরা চারদলীয় জোটেই থেকে গেলেন। ২০০১-এর নির্বাচনে জয়লাভের পর বিএনপি-জামায়াতের সরকার কেমন ছিল, তা নিশ্চয়ই দেশবাসীর মনে আছে। 
জামায়াত এখন দৃশ্যপটে নেই। এটিও তাদের ঐকমত্যেই হচ্ছে। এটা বুঝতে আমাদের বাকি নেই। সামনে শুধু গণতন্ত্র মঞ্চের শোভাবর্ধন করা হচ্ছে। যদি ‘সুফল’ কিছু পাওয়া যায়! দেখা যাক কী হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত