আবেদীন কাদের

যেকোনো দেশের রাজনীতিকদের অন্যতম দায়িত্ব জনচিত্তের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এবং তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বড় স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত করে তোলা। বড় স্বপ্ন দেখা, বিশেষ করে স্বদেশ ও স্বজাতি নিয়ে এবং তা প্রায় নিজের জীবন দিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাঁর ট্র্যাজিক মৃত্যুর পর বাঙালি খুব বড় স্বপ্ন দেখেছে, তা মনে হয়নি। তবে কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিগত বিষয়ে দেখেছেন, কিন্তু জাতীয়ভাবে বড় স্বপ্ন অবশ্যই পদ্মা সেতু। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আমাদের কোনো স্বপ্ন বাস্তবায়নে এত বিশাল প্রতিবন্ধকতা আগে আসেনি, সেসব প্রতিবন্ধকতা আর্থিক জোগান দেওয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের; যা বর্তমান সরকারের জন্য সত্যিকার চ্যালেঞ্জ ছিল। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আমাদের অভিজ্ঞতায় যেসব সরকার আগে এসেছে, তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হতো কি না, সে বিষয়ে আমার ঘোর সংশয় রয়েছে।
এই চ্যালেঞ্জ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেমন করে নিলেন এবং এতটা দুঃসাহসী তাঁর হওয়ার রাজনৈতিক ও নৈতিক কারণ বিষয়ে হয়তো একসময় সমাজবিজ্ঞানীরা অন্বেষণ করবেন। কিন্তু এই সেতু নির্মাণের ফলে অর্থনৈতিক বা সামাজিক বিবর্তন যা ঘটবে, সেসব নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক আলোচনা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু একটি বিষয় সেসব লেখায় আমি একেবারেই দেখিনি। হয়তো কেউ কেউ লিখেছেন, কিন্তু আমার চোখে পড়েনি। সে বিষয়টি আমি উল্লেখ করতে চাই, এটি হলো জাজিরা, ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া, সুরেশ্বর, বিক্রমপুরসহ পদ্মার দুই পাড়ের কয়েক লাখ মানুষের গত ৫০ বছর বা ততোধিক সময় অমানবিক দুর্দশার ইতিহাস।
গত শতাব্দীর মধ্য ৫০ থেকে বর্তমান জাজিরা, শরীয়তপুরের বিপুল অংশ এবং পদ্মার উত্তর পার, মানে লৌহজং বা বিক্রমপুরের একটি অংশের অগণিত মানুষ তাঁদের সর্বস্ব হারাতেন পদ্মার ভাঙনে। এই সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে সরকারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিপুল টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, সেটি হলো নদীশাসন। পদ্মার মতো একটি ভয়াল এবং বৈরী নদীকে শাসন করা সত্যিই দুরূহ কাজ, সেটি সেতুর সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা জানতেন। সেই অনুযায়ী তাঁরা দীর্ঘ সময়ের জন্য যাতে পদ্মা নিরীহ, ভয়ালতাবিবর্জিত থাকে, তার জন্য দুই পাড়ে সুদীর্ঘ এলাকাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিপন্মুক্ত হিসেবে নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ প্রতিবছর শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে ঘরবাড়ি এবং ফসলের জমি হারানোর ভয় থেকে মুক্ত হয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন।
পদ্মার ভাঙনের ইতিহাস ভুক্তভোগী মানুষ ছাড়া কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। কীভাবে মাঝারি থেকে বড় জমির মালিকেরা এক রাতের মধ্যে বাড়িঘর, জমাজমি হারিয়ে পথের নিঃস্ব ভিখারিতে পরিণত হতে পারেন, তা ওই এলাকার মানুষ খুব ভালো জানেন। আমি আমার ছেলেবেলার, বলা যায় শিশুবেলার কিছু স্মৃতি এ লেখায় উল্লেখ করব।
পদ্মা সেতু অত্র এলাকার, বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলার ১৭টি জেলার মানুষের জীবনে কী ভূমিকা রাখবে বা অন্য কী ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা জেগে উঠবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে, সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই অনেক লেখা হয়েছে। কিন্তু মানুষের মনের তুষ্টির দিকটি সম্ভবত কোনো অঙ্ক দিয়েই বোঝানো সম্ভব নয়। সেটি শুধু জমা থাকবে অত্র এলাকার মানুষের হৃদয়ে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য!
এই সেতু কী বিশাল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে আমাদের সমাজজীবনে, সেটিই আমাদের সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার গত কিছুদিনের আলোচনার বিষয়। ট্রান্সপোর্টেশন-সম্পর্কিত অর্থনীতির কিছু ভিন্ন রেমিফিকেশন বা প্রতিক্রিয়া থাকে সমাজের অন্যান্য সংস্কৃতিতে। সেটা অনেক সময়ই অর্থনীতিবিদেরা পরিমাপ করেন না। সেটা করতে পারেন সংস্কৃতির তাত্ত্বিকেরা, সৃজনশীল মানুষেরা বা একেবারেই ভিন্ন সমাজদৃষ্টি আছে যে প্রাজ্ঞ মানুষদের, তাঁরা। অর্থনীতিবিদেরা অঙ্ক কষে অর্থ বা পুঁজির দিকটা বোঝান, কিন্তু একজন কবি বা সৃষ্টিশীল শিল্পীর কাছে এর ভিন্ন দিক ধরা পড়ে।
সে কারণে আমাদের সাহিত্যিকদের অনেকে এই সেতুর ফলে সম্ভাব্য ভিন্ন উন্নয়নের দিক তাঁদের লেখায় উল্লেখ করেছেন। এই সেতু চালু হ হয়ে গেলে লাখ লাখ পরিবার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিজেদের জীবনের চিত্র বদলাতে দেখবেন। সেটা শুধু আর্থিক নয়; বরং তার মাঝে থাকবে অর্থের অতীত কিছু বিষয়, যা অর্থ দিয়ে ক্রয়যোগ্য নয়। সেটি হলো সাধারণ মানুষের চেতনার পরিবর্তন বা ট্রান্সফরমেশন। যে শিশু দক্ষিণ বাংলায় বা পদ্মা সেতুর ওপারে ১০ বছর পর জন্ম নেবে, তার চেতনালোক আজকের ১০ বছরের শিশুটির চেয়ে ভিন্নতর হতে বাধ্য। বিষয়টি এই সেতু নির্মাণের কালচারাল সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের একটি।
দুয়েকজন লেখক এ সেতুটিকে ঘিরে আমাদের রাজনীতিতে যে পরিবর্তনটা ঘটতে যাচ্ছে, সেটি বলেছেন তাঁদের লেখায়, কিন্তু তাঁদের কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন একটি বেদনার দিক, সেটি হলো—আমাদের বিখ্যাত মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ দেশে-বিদেশে হাজারটা অপপ্রচার চালিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতিকর ক্রিয়াকলাপ চালিয়েছেন, যা দুঃখজনক। তাঁরা নিজেদের পছন্দের দলীয় রাজনীতিকেই হয়তো জাতীয় উন্নয়ন বা জাতি হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদার দিকটির ওপর স্থান দিয়েছেন, যা ভবিষ্যৎ ইতিহাস ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভিন্নভাবে নিতে পারে। এই মানুষদের মধ্যে পণ্ডিত মানুষও রয়েছেন। তাঁরা এতটা বিষাক্ত মনোভাব, বিশেষ করে জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন পোষণ করেছেন, সেটি অনেককেই বিস্মিত করেছে।
আমি তাঁদের দুয়েকজনের পাণ্ডিত্য বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু তাঁদের মনের এই দীনতা আমাকে দুঃখ দিয়েছে। রাজনীতিতে দ্বিমত থাকবে, কিন্তু দেশের মানুষের কল্যাণের বিষয়ে আমাদের বিখ্যাত মানুষেরা কেন হীনতার বাইরে উঠতে পারেন না কিছু ক্ষেত্রে, আজও আমি তা বুঝি না। আমি নিজে বর্তমান সরকারের অনেক বিষয়ে ভীষণ সমালোচনামুখর, কিন্তু কিছু বিষয়কে আমি রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার পক্ষপাতী। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি আমি রাজনীতির বাইরে রাখতে চাই। এটি আমাদের জাতীয় কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি এক আলোচনায় জানিয়েছেন দুই-তিন দশক পর দেশের মানুষের চিন্তার চিত্রটা কেমন হতে পারে, কতটা বৈষম্য বা মানসিক দূরত্ব কমে আসতে পারে শহর ও গ্রামের মাঝে, অর্থনৈতিক বৈষম্য কতটা বাড়তে পারে। তাঁর মতে, আমরা সাধারণ মানুষেরা অনেক কিছুই বুঝতে পারি না, মানুষের স্বপ্ন এবং দূরাগত ভবিষ্যতে অসাধ্যসাধনের আকাঙ্ক্ষা যে বেড়ে যাবে।
কয়েক বছর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্প শুরু হওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী-প্রকৌশলীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই সেতু নির্মাণের ফলে অর্থনীতির উন্নয়ন ছাড়া আর কী কী গুরুত্বপূর্ণ লাভ হতে পারে। সম্প্রতি পরলোকগত সেই বিজ্ঞানী-প্রকৌশলী জানিয়েছিলেন, ‘এই সেতুর অনেক ধরনের অকল্পনীয় লাভের দিক আছে, সবচেয়ে বড় একটি দিক হলো আমাদের প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীরা বিশ্বের বড় বড় দেশের মতো একটি বিশাল প্রকল্পে কাজ করার ফলে সত্যিকার বড় কাজ করার আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘরে ফিরবেন। “আমরাও পারি” এই বোধ তাঁদের অনেকটা দূর যেতে, জাতিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।’ শেখ হাসিনা এ কথা শোনার পর তাঁকে নিশ্চিত করেছিলেন যে যেমন করে হোক সেতু তিনি নির্মাণ করবেনই!
এবার আমি আমার শিশুবেলার একটি স্মৃতি উল্লেখ করব, সেটি ১৯৫৯ সালের শ্রাবণ মাসের ঘটনা, আমি মাত্র চার বছরের শিশু। পদ্মার ভয়াল গ্রাসে আমার পরিবারসহ জাজিরা, সুরেশ্বর, বড়কান্দিসহ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, জমিজমা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আমার নিজের পরিবার একেবারে পথে বসার মতো অবস্থায় পড়ে। মাঝারি ধরনের বর্ধিঞ্চু কৃষক পরিবার, জীবনে যারা কোনো দিন বাজার থেকে চাল-ডাল কিনে খায়নি, বাড়িতে কোনো অভাবের অভিজ্ঞতা যাদের ছিল না, তারা তাদের বিপুল জমির আউশ ধানসহ ঘরবাড়ি চোখের সামনে পদ্মায় বিলীন হতে দেখল। বাড়ির বড়রা সবাই প্রায় বিপর্যস্ত, একমাত্র আমার দাদা আর দাদি একেবারে নিঃশঙ্ক, তাঁদের মুখে একটিই কথা ছিল সেদিন, ‘আল্লাহ দিয়েছিলেন, আল্লাহ কেড়ে নিয়েছেন। তিনিই আবার দেবেন।’
তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে ধার্মিক মানুষ, তাই অমন করে ভাবতে পেরেছিলেন, কিন্তু আমার বাবা-কাকাদের জলে ভরা চোখের সেই করুণ দৃশ্য আমার শিশুমনে খুব দাগ কেটেছিল সেদিন। অনেক দিন সেই বেদনাভরা আর্দ্র চোখগুলো আমাকে তাড়া করে ফিরেছে। আমার সেই শিশুবেলা থেকে প্রায় বালক হয়ে ওঠার কয়েকটি বছর আমি দেখেছি কী অসহায় ছিলেন বাবা-কাকারা, অন্যের জমিতে আমাদের বাড়ি। আমার মা, যিনি কোনো দিন নিজের ঘরের ঢেঁকিছাঁটা চাল ছাড়া ভাত খেতে পারতেন না, তিনি অসহায় দরিদ্র গৃহবধূর মতো সব কষ্ট নীরবে মেনে নিয়েছিলেন, কয়েক বছর পর আমাদের নিজেদের সব জমি জেগে ওঠার আগ অবধি!
আজ পদ্মা সেতু নিয়ে ভাবতে বসে বারবার আমার পদ্মার সেই ভয়াল দিকটির কথাই মনে পড়ছে! আমার মনে হয় সেতুর উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর কথা সবাই বলবেন বা বলেছেন, কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য নদীশাসনের ফলে যে বিশাল জনগোষ্ঠী তাঁদের জমিজিরাত নদীগর্ভে কোনো দিন আর হারাবে না, এ দিকটি সংবাদমাধ্যমে অবহেলিত রয়ে গেছে, এই দিকটির কথা সমাজবিজ্ঞানীরা ভেবে দেখতে পারেন, ভেবে দেখতে পারেন কী বিপুল ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবে ওই অঞ্চলের অগণিত মানুষ!
লেখক: প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক, এসেক্স কলেজ, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র

যেকোনো দেশের রাজনীতিকদের অন্যতম দায়িত্ব জনচিত্তের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এবং তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বড় স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত করে তোলা। বড় স্বপ্ন দেখা, বিশেষ করে স্বদেশ ও স্বজাতি নিয়ে এবং তা প্রায় নিজের জীবন দিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাঁর ট্র্যাজিক মৃত্যুর পর বাঙালি খুব বড় স্বপ্ন দেখেছে, তা মনে হয়নি। তবে কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিগত বিষয়ে দেখেছেন, কিন্তু জাতীয়ভাবে বড় স্বপ্ন অবশ্যই পদ্মা সেতু। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আমাদের কোনো স্বপ্ন বাস্তবায়নে এত বিশাল প্রতিবন্ধকতা আগে আসেনি, সেসব প্রতিবন্ধকতা আর্থিক জোগান দেওয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের; যা বর্তমান সরকারের জন্য সত্যিকার চ্যালেঞ্জ ছিল। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আমাদের অভিজ্ঞতায় যেসব সরকার আগে এসেছে, তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হতো কি না, সে বিষয়ে আমার ঘোর সংশয় রয়েছে।
এই চ্যালেঞ্জ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেমন করে নিলেন এবং এতটা দুঃসাহসী তাঁর হওয়ার রাজনৈতিক ও নৈতিক কারণ বিষয়ে হয়তো একসময় সমাজবিজ্ঞানীরা অন্বেষণ করবেন। কিন্তু এই সেতু নির্মাণের ফলে অর্থনৈতিক বা সামাজিক বিবর্তন যা ঘটবে, সেসব নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক আলোচনা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু একটি বিষয় সেসব লেখায় আমি একেবারেই দেখিনি। হয়তো কেউ কেউ লিখেছেন, কিন্তু আমার চোখে পড়েনি। সে বিষয়টি আমি উল্লেখ করতে চাই, এটি হলো জাজিরা, ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া, সুরেশ্বর, বিক্রমপুরসহ পদ্মার দুই পাড়ের কয়েক লাখ মানুষের গত ৫০ বছর বা ততোধিক সময় অমানবিক দুর্দশার ইতিহাস।
গত শতাব্দীর মধ্য ৫০ থেকে বর্তমান জাজিরা, শরীয়তপুরের বিপুল অংশ এবং পদ্মার উত্তর পার, মানে লৌহজং বা বিক্রমপুরের একটি অংশের অগণিত মানুষ তাঁদের সর্বস্ব হারাতেন পদ্মার ভাঙনে। এই সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে সরকারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিপুল টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, সেটি হলো নদীশাসন। পদ্মার মতো একটি ভয়াল এবং বৈরী নদীকে শাসন করা সত্যিই দুরূহ কাজ, সেটি সেতুর সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা জানতেন। সেই অনুযায়ী তাঁরা দীর্ঘ সময়ের জন্য যাতে পদ্মা নিরীহ, ভয়ালতাবিবর্জিত থাকে, তার জন্য দুই পাড়ে সুদীর্ঘ এলাকাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিপন্মুক্ত হিসেবে নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ প্রতিবছর শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে ঘরবাড়ি এবং ফসলের জমি হারানোর ভয় থেকে মুক্ত হয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন।
পদ্মার ভাঙনের ইতিহাস ভুক্তভোগী মানুষ ছাড়া কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। কীভাবে মাঝারি থেকে বড় জমির মালিকেরা এক রাতের মধ্যে বাড়িঘর, জমাজমি হারিয়ে পথের নিঃস্ব ভিখারিতে পরিণত হতে পারেন, তা ওই এলাকার মানুষ খুব ভালো জানেন। আমি আমার ছেলেবেলার, বলা যায় শিশুবেলার কিছু স্মৃতি এ লেখায় উল্লেখ করব।
পদ্মা সেতু অত্র এলাকার, বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলার ১৭টি জেলার মানুষের জীবনে কী ভূমিকা রাখবে বা অন্য কী ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা জেগে উঠবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে, সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই অনেক লেখা হয়েছে। কিন্তু মানুষের মনের তুষ্টির দিকটি সম্ভবত কোনো অঙ্ক দিয়েই বোঝানো সম্ভব নয়। সেটি শুধু জমা থাকবে অত্র এলাকার মানুষের হৃদয়ে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য!
এই সেতু কী বিশাল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে আমাদের সমাজজীবনে, সেটিই আমাদের সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার গত কিছুদিনের আলোচনার বিষয়। ট্রান্সপোর্টেশন-সম্পর্কিত অর্থনীতির কিছু ভিন্ন রেমিফিকেশন বা প্রতিক্রিয়া থাকে সমাজের অন্যান্য সংস্কৃতিতে। সেটা অনেক সময়ই অর্থনীতিবিদেরা পরিমাপ করেন না। সেটা করতে পারেন সংস্কৃতির তাত্ত্বিকেরা, সৃজনশীল মানুষেরা বা একেবারেই ভিন্ন সমাজদৃষ্টি আছে যে প্রাজ্ঞ মানুষদের, তাঁরা। অর্থনীতিবিদেরা অঙ্ক কষে অর্থ বা পুঁজির দিকটা বোঝান, কিন্তু একজন কবি বা সৃষ্টিশীল শিল্পীর কাছে এর ভিন্ন দিক ধরা পড়ে।
সে কারণে আমাদের সাহিত্যিকদের অনেকে এই সেতুর ফলে সম্ভাব্য ভিন্ন উন্নয়নের দিক তাঁদের লেখায় উল্লেখ করেছেন। এই সেতু চালু হ হয়ে গেলে লাখ লাখ পরিবার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিজেদের জীবনের চিত্র বদলাতে দেখবেন। সেটা শুধু আর্থিক নয়; বরং তার মাঝে থাকবে অর্থের অতীত কিছু বিষয়, যা অর্থ দিয়ে ক্রয়যোগ্য নয়। সেটি হলো সাধারণ মানুষের চেতনার পরিবর্তন বা ট্রান্সফরমেশন। যে শিশু দক্ষিণ বাংলায় বা পদ্মা সেতুর ওপারে ১০ বছর পর জন্ম নেবে, তার চেতনালোক আজকের ১০ বছরের শিশুটির চেয়ে ভিন্নতর হতে বাধ্য। বিষয়টি এই সেতু নির্মাণের কালচারাল সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের একটি।
দুয়েকজন লেখক এ সেতুটিকে ঘিরে আমাদের রাজনীতিতে যে পরিবর্তনটা ঘটতে যাচ্ছে, সেটি বলেছেন তাঁদের লেখায়, কিন্তু তাঁদের কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন একটি বেদনার দিক, সেটি হলো—আমাদের বিখ্যাত মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ দেশে-বিদেশে হাজারটা অপপ্রচার চালিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতিকর ক্রিয়াকলাপ চালিয়েছেন, যা দুঃখজনক। তাঁরা নিজেদের পছন্দের দলীয় রাজনীতিকেই হয়তো জাতীয় উন্নয়ন বা জাতি হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদার দিকটির ওপর স্থান দিয়েছেন, যা ভবিষ্যৎ ইতিহাস ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভিন্নভাবে নিতে পারে। এই মানুষদের মধ্যে পণ্ডিত মানুষও রয়েছেন। তাঁরা এতটা বিষাক্ত মনোভাব, বিশেষ করে জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন পোষণ করেছেন, সেটি অনেককেই বিস্মিত করেছে।
আমি তাঁদের দুয়েকজনের পাণ্ডিত্য বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু তাঁদের মনের এই দীনতা আমাকে দুঃখ দিয়েছে। রাজনীতিতে দ্বিমত থাকবে, কিন্তু দেশের মানুষের কল্যাণের বিষয়ে আমাদের বিখ্যাত মানুষেরা কেন হীনতার বাইরে উঠতে পারেন না কিছু ক্ষেত্রে, আজও আমি তা বুঝি না। আমি নিজে বর্তমান সরকারের অনেক বিষয়ে ভীষণ সমালোচনামুখর, কিন্তু কিছু বিষয়কে আমি রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার পক্ষপাতী। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি আমি রাজনীতির বাইরে রাখতে চাই। এটি আমাদের জাতীয় কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি এক আলোচনায় জানিয়েছেন দুই-তিন দশক পর দেশের মানুষের চিন্তার চিত্রটা কেমন হতে পারে, কতটা বৈষম্য বা মানসিক দূরত্ব কমে আসতে পারে শহর ও গ্রামের মাঝে, অর্থনৈতিক বৈষম্য কতটা বাড়তে পারে। তাঁর মতে, আমরা সাধারণ মানুষেরা অনেক কিছুই বুঝতে পারি না, মানুষের স্বপ্ন এবং দূরাগত ভবিষ্যতে অসাধ্যসাধনের আকাঙ্ক্ষা যে বেড়ে যাবে।
কয়েক বছর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্প শুরু হওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী-প্রকৌশলীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই সেতু নির্মাণের ফলে অর্থনীতির উন্নয়ন ছাড়া আর কী কী গুরুত্বপূর্ণ লাভ হতে পারে। সম্প্রতি পরলোকগত সেই বিজ্ঞানী-প্রকৌশলী জানিয়েছিলেন, ‘এই সেতুর অনেক ধরনের অকল্পনীয় লাভের দিক আছে, সবচেয়ে বড় একটি দিক হলো আমাদের প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীরা বিশ্বের বড় বড় দেশের মতো একটি বিশাল প্রকল্পে কাজ করার ফলে সত্যিকার বড় কাজ করার আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘরে ফিরবেন। “আমরাও পারি” এই বোধ তাঁদের অনেকটা দূর যেতে, জাতিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।’ শেখ হাসিনা এ কথা শোনার পর তাঁকে নিশ্চিত করেছিলেন যে যেমন করে হোক সেতু তিনি নির্মাণ করবেনই!
এবার আমি আমার শিশুবেলার একটি স্মৃতি উল্লেখ করব, সেটি ১৯৫৯ সালের শ্রাবণ মাসের ঘটনা, আমি মাত্র চার বছরের শিশু। পদ্মার ভয়াল গ্রাসে আমার পরিবারসহ জাজিরা, সুরেশ্বর, বড়কান্দিসহ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, জমিজমা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আমার নিজের পরিবার একেবারে পথে বসার মতো অবস্থায় পড়ে। মাঝারি ধরনের বর্ধিঞ্চু কৃষক পরিবার, জীবনে যারা কোনো দিন বাজার থেকে চাল-ডাল কিনে খায়নি, বাড়িতে কোনো অভাবের অভিজ্ঞতা যাদের ছিল না, তারা তাদের বিপুল জমির আউশ ধানসহ ঘরবাড়ি চোখের সামনে পদ্মায় বিলীন হতে দেখল। বাড়ির বড়রা সবাই প্রায় বিপর্যস্ত, একমাত্র আমার দাদা আর দাদি একেবারে নিঃশঙ্ক, তাঁদের মুখে একটিই কথা ছিল সেদিন, ‘আল্লাহ দিয়েছিলেন, আল্লাহ কেড়ে নিয়েছেন। তিনিই আবার দেবেন।’
তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে ধার্মিক মানুষ, তাই অমন করে ভাবতে পেরেছিলেন, কিন্তু আমার বাবা-কাকাদের জলে ভরা চোখের সেই করুণ দৃশ্য আমার শিশুমনে খুব দাগ কেটেছিল সেদিন। অনেক দিন সেই বেদনাভরা আর্দ্র চোখগুলো আমাকে তাড়া করে ফিরেছে। আমার সেই শিশুবেলা থেকে প্রায় বালক হয়ে ওঠার কয়েকটি বছর আমি দেখেছি কী অসহায় ছিলেন বাবা-কাকারা, অন্যের জমিতে আমাদের বাড়ি। আমার মা, যিনি কোনো দিন নিজের ঘরের ঢেঁকিছাঁটা চাল ছাড়া ভাত খেতে পারতেন না, তিনি অসহায় দরিদ্র গৃহবধূর মতো সব কষ্ট নীরবে মেনে নিয়েছিলেন, কয়েক বছর পর আমাদের নিজেদের সব জমি জেগে ওঠার আগ অবধি!
আজ পদ্মা সেতু নিয়ে ভাবতে বসে বারবার আমার পদ্মার সেই ভয়াল দিকটির কথাই মনে পড়ছে! আমার মনে হয় সেতুর উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর কথা সবাই বলবেন বা বলেছেন, কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য নদীশাসনের ফলে যে বিশাল জনগোষ্ঠী তাঁদের জমিজিরাত নদীগর্ভে কোনো দিন আর হারাবে না, এ দিকটি সংবাদমাধ্যমে অবহেলিত রয়ে গেছে, এই দিকটির কথা সমাজবিজ্ঞানীরা ভেবে দেখতে পারেন, ভেবে দেখতে পারেন কী বিপুল ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবে ওই অঞ্চলের অগণিত মানুষ!
লেখক: প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক, এসেক্স কলেজ, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

যেকোনো দেশের রাজনীতিকদের অন্যতম দায়িত্ব জনচিত্তের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এবং তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বড় স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত করে তোলা। বড় স্বপ্ন দেখা, বিশেষ করে স্বদেশ ও স্বজাতি নিয়ে...
২৭ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

যেকোনো দেশের রাজনীতিকদের অন্যতম দায়িত্ব জনচিত্তের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এবং তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বড় স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত করে তোলা। বড় স্বপ্ন দেখা, বিশেষ করে স্বদেশ ও স্বজাতি নিয়ে...
২৭ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

যেকোনো দেশের রাজনীতিকদের অন্যতম দায়িত্ব জনচিত্তের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এবং তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বড় স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত করে তোলা। বড় স্বপ্ন দেখা, বিশেষ করে স্বদেশ ও স্বজাতি নিয়ে...
২৭ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

যেকোনো দেশের রাজনীতিকদের অন্যতম দায়িত্ব জনচিত্তের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এবং তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বড় স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত করে তোলা। বড় স্বপ্ন দেখা, বিশেষ করে স্বদেশ ও স্বজাতি নিয়ে...
২৭ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫