Ajker Patrika

মহত্তম কল্যাণের কাজ

মামুনুর রশীদ
আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ১০: ৫০
মহত্তম কল্যাণের কাজ

নরসিংদীর ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিষয়টির মধ্যে একটা বড় রাজনৈতিক আভাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র হিজাব-বোরকার যে ব্যাপক প্রচলন দেখা যাচ্ছে তা একেবারেই নারীদের স্বেচ্ছায় হয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।

হাতাহাতি, মারামারি, লাঞ্ছনা থেকে শুরু করে জুতাপেটা, কান ধরে ওঠবস করা, বিচারে দোররা মারা—এসব আজ যেন আমাদের সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
এক দিনেই পত্রিকায় দেখা গেল জনৈক সাংসদ একজনকে মারধর করেছেন, নরসিংদীর ঘটনা ঘটেছে এবং একটু খোঁজ করলেই দেখা যাবে এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে গেছে। নরসিংদীতে প্রকাশ্য দিবালোকে শুধু কারও অপছন্দের পোশাক পরার কারণে প্রথমে একজন নারী এবং পরে আরও অনেকে এক তরুণীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পুলিশ দ্রুত এসে তাদের উদ্ধার করে ট্রেনে তুলে না দিলে বিষয়টি আরও অনেক দূর যেতে পারত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ একজন ছবি তুলে প্রচার করলে সারা দেশের মানুষ এটা জানতে পারে। মাদ্রাসা বা স্কুলে ছাত্রদের ওপর বেত্রাঘাত এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সিলেটে এক বালককে অভিনব কায়দায় শাস্তি দিয়ে মেরেই ফেলা হয়েছিল। গ্রামবাংলার বিভিন্ন জায়গায় নারীকে দোররা মারা, চুল কেটে দেওয়া এগুলোর বিস্তর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আমরা দেখেছি গান গাওয়ার অপরাধে বাউলদের চুলও কেটে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় অসহায় মানুষেরা ভয় পেয়ে আরও বেশি অসহায়বোধ করে এবং সমাজের একশ্রেণির ক্ষমতাবান লোক নিজেদের ক্ষমতার গর্বে আরও বেশি এসব কাজে উৎসাহিত হয়। কখনো কখনো দেখা যায়, পুলিশি নির্যাতনে হাজতিদের মৃত্যু ঘটে।

অতীতে, বিশেষ করে সেনা শাসনের সময় নানা ধরনের অত্যাচারের ব্যবস্থা থাকত। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে রীতিমতো সন্দেহভাজনদের নিয়ে গিয়ে টর্চার সেলে নানাভাবে নির্যাতন করা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক নির্যাতনের ঘটনা শুনলে এখনো গা শিউরে ওঠে। শহীদ আলতাফ মাহমুদকে যেভাবে নির্মম অত্যাচার করতে করতে হত্যা করা হয়েছিল, তার বিবরণ আমাদের চমকে দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় থেকে চার নেতার মৃত্যুর বিবরণে আমরা আরও অসহায়বোধ করি। কিন্তু এই যে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে একেবারে জনগণের মধ্যে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তা সমাজের একটা বড় অংশকে ভীত করে তুলছে। জনপথ, বাজার, ঘাট, বাসস্টেশন, রেলস্টেশন যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান খুব কাছেই, সেখানেও এসব ঘটনা ঘটায় একটা বড় নিরাপত্তার অভাব বোধ তৈরি হয়েছে।

নরসিংদীর ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিষয়টির মধ্যে একটা বড় রাজনৈতিক আভাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র হিজাব-বোরকার যে ব্যাপক প্রচলন দেখা যাচ্ছে তা একেবারেই নারীদের স্বেচ্ছায় হয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। দিনের পর দিন বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ওয়াজ মাহফিল এবং মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া বেকার জনগোষ্ঠী একধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এর সঙ্গে ইংরেজি স্কুলে উচ্চশিক্ষায় পাঠ করেও একদল তরুণ হোলি আর্টিজানের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। বিপুল সংখ্যক গ্রামবাংলার শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে চাকরিবাকরি করেছেন এবং সেখানকার শিক্ষার আদলে নিজের মানসভূমি গড়ে তুলেছেন। এই মানসভূমি গড়ে তোলার পেছনে নেতিবাচক আরও কিছু মনোভাব সৃষ্টি করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবাধ প্রচার। এই প্রচারাভিযানের সাফল্য হিসেবে প্রচুর মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে এবং নারী মুক্তির ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক কিছু না ঘটে নারী সমর্পিত হচ্ছেন গভীর অন্ধকারে! অভিযোগ আছে, আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কোনো মেয়ে যদি হিজাব-বোরকা ছাড়া গ্রামে যান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োজিত হন, তাঁদের দল বেঁধে গ্রামের মাদ্রাসার ছেলেমেয়েরা নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া পাপের কারণ এবং মাদ্রাসায় পড়ালেখা করাটাই একমাত্র মুক্তির উপায়!

ওই সমাজের পরিবারটি যদি দুর্বল হয়, তাহলে ছুটির মধ্যেও সেই মেয়ের পক্ষে গ্রামে থাকা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। আজ থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগেও বাংলাদেশে এই চিত্র দেখা যায়নি; বরং মাদ্রাসায় শিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করা হতো বাস্তবজীবনের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে। অবশ্য এ কথাও ঠিক যে হেফাজতে ইসলাম বা তাদের অনুসারীদের নানা ধরনের চাপের মুখে সরকার কিছু আপস করেছে; বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তকে তার প্রভাব পড়েছে। যদিও আজকাল মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান এসব যুক্ত হয়েছে আলিয়া মাদ্রাসায়, কিন্তু কওমি মাদ্রাসা পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করেনি। তবুও সংখ্যায় তারা বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে এখন ক্রমাগতভাবে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার হচ্ছে বটে, কিন্তু ধর্মীয় আচার-ব্যবহার ও চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বিভাজনকে উসকে দিচ্ছে। আমাদের ইসলাম ধর্মে যে শান্তির বাণী যুগ যুগ ধরে যা চলে আসছে, তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

আজকাল গ্রামাঞ্চলে রাজনীতি করতে গিয়ে অনেকে অবৈধ অর্থে মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে থাকেন। মুসল্লিরা জেনেশুনে সেই সব মসজিদে নামাজ আদায় করেন। সেটা করা কতটা সমীচীন, তা-ও তাঁরা ভাবেন না। যেহেতু বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিয়েছিল, তাই এসব ধর্মভিত্তিক দল রাজনীতিতে বহুদিন পর্যন্ত খুব সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু রাজনীতির কারণেই একটি গণতান্ত্রিক দল বলে পরিচিত হয়ে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোকে ক্ষমতায় যাওয়ার সোপান হিসেবে নিজেদের মধ্যে জায়গা করে দেয়। এই সুযোগে সংগঠনগুলোর সদস্যরা বিভিন্ন দলে ঢুকে যান এবং দলটিকে নানা কলাকৌশলে তাঁদের আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসেন।

সরকারি দলের নেতা-নেত্রীরা এলাকায় খুব একটা যান না। তাঁদের কর্মীরাও শহরাঞ্চলে বসবাস করেন। নানা কারণে তাঁরা গ্রামকে আর নিরাপদ মনে করেন না।

এখন গ্রামে অসাধু, অনৈতিক ব্যবসায়ীরা ধর্মীয় লেবাসে নিরাপদে জীবনযাপন করেন। তাঁরাই বাংলার সংস্কৃতিকে ভয় পান এবং হেলিকপ্টারে করে আলেম-ওলামাদের এনে ওয়াজ মাহফিল করান। এই আলেম-ওলামাদের আগমনকে কেন্দ্র করে গ্রামাঞ্চলে একটা নতুন অর্থনীতি গড়ে ওঠে এবং দেখা যায় তাঁদের বিস্তর সম্পত্তি। খাঁটি আলেম-ওলামারা খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন এবং ওই সব আলেমের শক্তির সামনে তাঁরা নিঃসঙ্গবোধ করেন। এই বিত্তবান হুজুরদের মধ্য থেকেই জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়। এসব হুজুর মাদ্রাসার শিক্ষার ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের সুশিক্ষার চেষ্টা করেন না। মাদ্রাসাগুলোতে খেলার মাঠ নেই, ছোট্ট দুটি ঘরের মধ্যেই মাদ্রাসা গড়ে তোলা সম্ভব। আবার আছে বোর্ডিং বা আবাসিক মাদ্রাসা, যেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও এসব বোর্ডিং থেকে ছাত্ররা নিম্নমানের খাবার ও থাকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকে। অনেক এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা আছে, যার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ মাসের পর মাস মাদ্রাসার শিক্ষকেরা বেতন-ভাতাও পেয়ে যাচ্ছেন। ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশে এত মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল?
রাষ্ট্র শিক্ষায় লগ্নি করে শিক্ষার্থীদের সমাজের বিভিন্ন স্তরে আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা নিয়ে তারা রাষ্ট্রকে নানাভাবে সেবাদান করবে। কিন্তু এর পরিবর্তে এই শিক্ষা বিপুল পরিমাণ বেকারত্বের সৃষ্টি করে থাকে।

নরসিংদীতে যারা ওই তরুণীকে আঘাত করল, তারা কোন শিক্ষা পেয়েছে? যদি ওই তরুণীর পোশাক তার অপছন্দের হয়, তাহলে ধর্মের নিয়মানুসারে তাকে নসিহত করতে পারত। নসিহত না করে সরাসরি আক্রমণ করার বিধান কি ইসলাম ধর্মে আছে? অর্থাৎ ধর্মীয় শিক্ষাও তাদের মাঝে প্রবেশ করেনি। বুখারি শরিফে উল্লেখ আছে: 
মহানবী (সা.) প্রকৃত মুসলমানের পরিচয় বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। ব্যক্তি মুসলমান হতে হলে এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের পাশাপাশি উত্তম কাজ করতে হবে। জিহ্বা সংযত রাখতে হবে। অনর্থক কারও ওপর হাত তোলা যাবে না। মানুষকে কোনোভাবেই কষ্ট দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সে-ই মুসলমান, যার জিহ্বা ও 
হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ এ কথাও বলা আছে যে জুলুম বড় গুনাহের কাজ। কাউকে অকারণে কষ্ট দেওয়া জুলুমের অন্তর্ভুক্ত, যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।

আল্লাহ তাআলা জালিমদের পছন্দ করেন না। নরসিংদীর ঘটনাটি অবশ্যই জুলুমের মধ্যে পড়ে। যদি ওই আক্রমণকারীরা মনে করে থাকে যে তারা একটি ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেছে, তাহলে তা মারাত্মক ভুল হবে। তারপরেও একটা বড় দায়িত্ব এসে যায়—এ দেশে যাঁরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন এবং সর্বোচ্চ মানবিক কল্যাণের জন্য নিয়োজিত, সেই সব রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সচেতন মানুষের ওপর। যে যাঁর জায়গা থেকে মহত্তম নাগরিক কল্যাণের জন্য নিরন্তর সংস্কৃতির কাজ করে যেতে হবে।

মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুর ট্র্যাজেডি: নাটোরে পৌঁছাল মা-মেয়ের মরদেহ, দুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল চাবি

পদোন্নতির ডাক পেলেন শেখ হাসিনার সাজা প্রত্যাখ্যান করা শিক্ষক মাসুদ রানা

যে আমলে রিজিকে সচ্ছলতা আসে

শাজাহানপুরে পিস্তলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা আটক

আজকের রাশিফল: বিনিয়োগে মায়ের পরামর্শ মেনে চলুন, অতি রোমান্টিকতা বিপত্তি ডাকবে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুর ট্র্যাজেডি: নাটোরে পৌঁছাল মা-মেয়ের মরদেহ, দুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল চাবি

পদোন্নতির ডাক পেলেন শেখ হাসিনার সাজা প্রত্যাখ্যান করা শিক্ষক মাসুদ রানা

যে আমলে রিজিকে সচ্ছলতা আসে

শাজাহানপুরে পিস্তলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা আটক

আজকের রাশিফল: বিনিয়োগে মায়ের পরামর্শ মেনে চলুন, অতি রোমান্টিকতা বিপত্তি ডাকবে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুর ট্র্যাজেডি: নাটোরে পৌঁছাল মা-মেয়ের মরদেহ, দুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল চাবি

পদোন্নতির ডাক পেলেন শেখ হাসিনার সাজা প্রত্যাখ্যান করা শিক্ষক মাসুদ রানা

যে আমলে রিজিকে সচ্ছলতা আসে

শাজাহানপুরে পিস্তলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা আটক

আজকের রাশিফল: বিনিয়োগে মায়ের পরামর্শ মেনে চলুন, অতি রোমান্টিকতা বিপত্তি ডাকবে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুর ট্র্যাজেডি: নাটোরে পৌঁছাল মা-মেয়ের মরদেহ, দুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল চাবি

পদোন্নতির ডাক পেলেন শেখ হাসিনার সাজা প্রত্যাখ্যান করা শিক্ষক মাসুদ রানা

যে আমলে রিজিকে সচ্ছলতা আসে

শাজাহানপুরে পিস্তলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা আটক

আজকের রাশিফল: বিনিয়োগে মায়ের পরামর্শ মেনে চলুন, অতি রোমান্টিকতা বিপত্তি ডাকবে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুর ট্র্যাজেডি: নাটোরে পৌঁছাল মা-মেয়ের মরদেহ, দুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল চাবি

পদোন্নতির ডাক পেলেন শেখ হাসিনার সাজা প্রত্যাখ্যান করা শিক্ষক মাসুদ রানা

যে আমলে রিজিকে সচ্ছলতা আসে

শাজাহানপুরে পিস্তলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা আটক

আজকের রাশিফল: বিনিয়োগে মায়ের পরামর্শ মেনে চলুন, অতি রোমান্টিকতা বিপত্তি ডাকবে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত