বিভুরঞ্জন সরকার

দত্তবাড়ির পর বোদার চন্দবাড়ির কথা না লিখলে চলে না। দত্তবাড়ির মতো চন্দবাড়িতেও আছে আমার সহপাঠী ও বন্ধু। আবার দত্ত ও চন্দবাড়ির মধ্যেও আছে পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক।
বোদার থানাপাড়া এখন অনেক বড়। অনেক বাড়িঘর। আর আমাদের ছোটবেলায় থানা, ওয়াপদা অফিস এবং একদিকে চন্দবাড়ি, অন্যদিকে হকিকুল ডাক্তার সাহেবের বাড়ি ছাড়া আর কোনো বাড়িঘর ছিল বলে মনে পড়ে না।
উমেশ চন্দ্র চন্দ ও মন্মথ চন্দ দুই ভাই। উমেশ চন্দের দুই ছেলে সুধীর চন্দ্র চন্দ ও অধীর চন্দ্র চন্দ। উমেশ বাবুকে আমি দেখিনি। তবে মন্মথ বাবুকে দেখেছি। তাঁর বাড়ি অবশ্য থানাপাড়ায় ছিল না। তাঁর বাড়ি বাজার থেকে সিরাজ সরকার সাহেবের বাড়ি যেতে আগে পড়ত। হাতের বাঁয়ে। এখনো আছে সেই বাড়ি। মন্মথ চন্দের মেয়ে ছায়াদিকে বিয়ে করেন দত্তবাড়ির শিবেন দত্ত।
উমেশ চন্দের দুই ছেলের থানাপাড়ার বাসায় আমার ছিল অবাধ যাতায়াত। বড় ছেলে সুধীর চন্দের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। শিবানী চন্দ, কল্যাণী চন্দ (সুনু), সুধাংশু চন্দ (স্বপন), নারায়ণী চন্দ (বেণু), হিমাংশু চন্দ (তপন/তপু) ও প্রবীর চন্দ (নয়ন)। শিবানী চন্দকে আমি দেখিনি। তিনি অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়িতে মামাবাড়িতে একেবারে ছোট থেকেই বড় হয়েছেন। আর দেশে আসেননি। অন্য সবাই বোদায় ছিলেন বা আছেন। এর মধ্যে স্বপনদা অকালপ্রয়াত। সুনুদি, স্বপনদা ও বেণু আমার বড়। তবে বড় হলেও বেণু আর তপু আমার সহপাঠী। পরে সম্ভবত ক্লাস ফাইভ থেকে বেণু আমার ‘জুনিয়র’ হয়ে যায়। আর তপু হয়ে ওঠে আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন। আমি, তপু ও দত্তবাড়ির বিজন—এই তিনজন ছিলাম (দেখা-সাক্ষাৎ কম হলেও এখনো আছি) ‘এক দেহ, এক প্রাণ’। কত কথাই না মনে পড়ছে। একটি ঘটনার কথা না বলে পারছি না। হাইস্কুলে পড়ার সময় আমরা কয়েকজন (এর মধ্যে বিজন, তপু আর আমি কমন) প্রতি বৃহস্পতিবার টিফিনের সময় স্কুল পালিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে যেতাম সিনেমা দেখার জন্য। শুক্রবার নতুন ছবি শুরু হতো, কাজেই বৃহস্পতিবার আমরা বিদায়ী ছবিটা দেখতাম। বলাকা টকিজ নামের সিনেমা হলটির মালিক ছিলেন মির্জা রুহুল আমিন (চখা মিয়া নামে সমধিক পরিচিত)। তিনি ছিলেন বর্তমান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা এবং সাবেক সেনাপ্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের শ্বশুর।
স্কুল থেকে পালিয়ে আমরা একত্রিত হতাম সাতখামারে শামসুদ্দিন ডাক্তার সাহেবের ডিসপেনসারিতে। দুপুরবেলা ওটা ফাঁকা থাকত। আমার বাড়ি ছিল তার পাশেই। ওটা ছিল ঠাকুরগাঁওয়ে যাওয়ার সড়কের একেবারে লাগোয়া। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠলে কেউ দেখে ফেলতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই আমরা একটু এগিয়ে গিয়ে বাসে উঠতাম। প্রবাদ আছে, ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়’। একদিন আমাদের শামসুদ্দিন ডাক্তার চাচার ডিসপেনসারিতে জটলারত অবস্থায় দেখতে পান ডা. ফয়জুল করিম, আমাদের মশিয়ারের (মশিয়ার রহমান, এখন পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) বাবা। আমরা যে স্কুল পালিয়ে ওখানে সমবেত হয়েছি, সেটা তিনি বুঝতে পারেন। তিনি সম্ভবত রোগী দেখে সাইকেলে চেপে ফিরছিলেন। তিনি নিজে আমাদের কিছু বললেন না। তবে বাজারে গিয়ে তপুর বাবা সুধীর কাকুকে বিষয়টি অবগত করেন। কাকু দ্রুত ছুটে আসেন এবং আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তপুকে পাকড়াও করে পায়ের কাবলি স্যান্ডেল দিয়ে বেদম পেটাতে থাকেন। তপু চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে মিনতি করে বলতে থাকে, ‘দোহাই বাবা, আর মেরো না।’ কাকু কোনো কথা শোনেন না। একপর্যায়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে আমাদের সবাইকে শাসিয়ে তিনি চলে যান। আমরা ভাবলাম, অত পিটুনি খেয়ে তপু হয়তো আর সিনেমা দেখতে যাবে না। কিন্তু আমাদের অবাক করে তপু বলল, ‘মার তো খেয়েই ফেলেছি, তাহলে আর সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হব কেন?’
তপু ছিল আমাদের বন্ধুদের মধ্য সবচেয়ে ছোটখাটো। তাই ওকে নিয়ে কত ধরনের কাণ্ডই না আমরা করতাম। সেই তপু, হিমাংশু চন্দ এখন ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রধান নির্বাহী। তপুও খুব সরল মনের সাদাসিধে মানুষ। জীবনে টাকা-পয়সা যেমন উপার্জন করেছে, তেমন খরচও করেছে। ওর বাবা, আমাদের সুধীর কাকুও ছিলেন অত্যন্ত দরাজ দিল মানুষ। আমি তাঁর কাছ থেকে যে স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না।
আমার বন্ধু তপুর বাবা, আমাদের সুধীর কাকু ছিলেন আমার দেখা ‘অসাধারণ’ মানুষদের একজন। দেখতে ছিলেন সুদর্শন। অমন উন্নত নাক, গৌর বর্ণ, মাথা উঁচু করে হাঁটাচলা করা; দেখলেই মনের মধ্যে একটি সমীহ ভাব চলে আসত। তাঁকে আমরা একধরনের ভয়মিশ্রিত সমীহই করতাম। একেবারে ছোটবেলায় এড়িয়ে চলতাম। আস্তে আস্তে যতই তাঁর নৈকট্য লাভ করেছি, ততই মনে হয়েছে তাঁর মনের ভেতরটা কত নরম। পরিণত বয়সেও তিনি ঝুনা নারকেল না হয়ে কচি ডাবের মতোই ছিলেন।
প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন নামকরা ফুটবল খেলোয়াড়। জলপাইগুড়ি জেলায়ও তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা ছোটবেলায়ও তাঁকে বোদা হাইস্কুল মাঠে শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে দেখেছি। সুধীর কাকু, ডা. ফয়জুল চাচারা মাঠে নামলে জমে উঠত খেলা। তরুণদের উৎসাহিত করার জন্যই সে সময় তাঁরা নিয়মিত মাঠে যেতেন।
তপুর মা, মানে আমাদের কাকি মারা যান সম্ভবত ১৯৫৭ সালে। আমি হয়তো তাঁকে দেখিওনি। শুনেছি নয়নের তখন মাত্র দেড় বছর বয়স। তপুর তিন-সাড়ে তিন। কাজেই মায়ের কোনো স্মৃতি ওদের মনে থাকার কথা নয়। ওরা প্রকৃতপক্ষে মাতৃস্নেহে বড় হয়েছে দিদিমার কাছে। দিদিমা সরজুবালা দেবী ছিলেন সুধীর কাকুর মাসিমা। তিনি বাল্যবিধবা। বিয়ের অল্প পরই স্বামীহারা হয়ে সুধীর কাকুর সংসারে স্থায়ী হয়েছিলেন। তপু ও নয়ন এই দিদিমার কোলেপিঠে মানুষ। তাই তিনি ছিলেন ওদের মা, দিদিমা নয়!
এই মহীয়সী নারীকে যাঁরা না দেখেছেন, তাঁরা তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারবেন না। তিনিই কার্যত চন্দবাড়িতে অভিভাবক ছিলেন। তাঁর ছায়া-মায়ায় তপুরা ভাইবোন মানুষ হয়েছে। আরও একজন তপুদের মায়ের অভাব পূরণে বড় ভূমিকা রেখেছেন—তপুদের কাকিমা, অধীর কাকুর স্ত্রী। এই কাকিমার নাম রেখা রানী চন্দ। নিজের তিন মেয়ে ও দুই ছেলেসন্তানের সঙ্গে ভাশুরের সন্তানদেরও তিনি অকৃপণ স্নেহ-ভালোবাসা দিয়েছেন।
সুধীর কাকুর স্ত্রীবিয়োগের পর অনেকে তাঁকে আবার বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন এমন রেওয়াজ ছিল, কিন্তু প্রথম স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসা তাঁকে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণে নিরুৎসাহিত করেছিল। একসময় আমি চন্দবাড়ির সদস্যের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। ওই বাড়ির হাঁড়িতে আমার জন্য দুমুঠো চাল যেন দেওয়াই থাকত। আমি গেলে দিদিমা, কাকিমা কেউ বিরক্ত না হয়ে খুশি হতেন। হাসিমুখেই আমাকে স্বাগত জানাতেন। দিদিমা আর নেই। প্রায় ৯০ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কাকিমা এখনো সক্রিয় আছেন, সেঞ্চুরি করার অপেক্ষায়।
তপুর কাকাতো বোন রেবা রানী চন্দ; ডাক নাম পুতুল। আমাদের ছোট। দেখতে অনেকটা পুতুলের মতোই ছিল। আমি একটু বড় হওয়ার পর, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই মনে হয়, কেউ কেউ পুতুলের সঙ্গে আমার বিয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতেন বলে আমি শুনেছি। তবে বিষয়টি জোরালো হয়ে ওঠেনি।
তপুদের ভাইবোনেরা সবাই মুক্ত মনের অধিকারী। তপু আমার বন্ধু। ওর সঙ্গে মাখামাখি সম্পর্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ওর বড় ভাই স্বপনদা এবং ছোট ভাই নয়নের সঙ্গেও গোড়া থেকেই আমার সম্পর্ক অত্যন্ত প্রীতিময়। নয়ন এখন বোদার একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। কলেজে অধ্যাপনা থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়ে সংস্কৃতি-সাহিত্য-সমাজ নিয়ে কাজ করেন, লেখালেখি করেন। কবিতা ও গদ্যে সমান পারদর্শী।
এই পরিবারের সঙ্গে আমার অতি ঘনিষ্ঠতার আরেকটি বড় কারণ বোধ হয় এটাই যে, এরা সবাই কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক ছিলেন। পার্টির সদস্য না হয়েও এরা ছিলেন পার্টি অন্তপ্রাণ। এ রকম পরিবার বোদায় আরও দু-চারটি ছিল।
চন্দবাড়ির সুধীর চন্দের জন্ম ১৯১৭ সালের কোনো এক বুধবার। ওই বছর পৃথিবীতে প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল। অক্টোবর বিপ্লব বলে পরিচিত সেই বিপ্লবের অভিঘাত তখনই বোদায় গিয়ে পৌঁছানোর কথা নয়। তাই সুধীর চন্দের চেতনায় বিপ্লব আঘাত হানেনি। তবে একধরনের উদার মানবতাবাদী চেতনার বিকাশ তাঁর মধ্যে লক্ষ করা গেছে। তাঁর বাড়ির পরিবেশ যে কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন হয়েছিল, সেটা আগে উল্লেখ করেছি। একটি কাকতালীয় ব্যাপার হলো তাঁর জন্ম এবং মৃত্যু একই বারে। বুধবার। ২০০০ সালের এক বুধবার তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। প্রায় ৮৩ বছরের জীবন পেয়েছিলেন তিনি।
সুধীর চন্দ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেছিলেন সম্ভবত ১৯৩৭ সালে। তাঁর সঙ্গে একই বছর প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন বোদা হাইস্কুলের শিক্ষক সেলিমের বাবা সিদ্দিক সাহেব। ম্যাট্রিক পাসের পর সুধীর চন্দ আর পড়াশোনা না করে চাকরিতে ঢোকেন। তিনি অবিভক্ত ভারতেই জুট করপোরেশনে প্রথম চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। বন বিভাগেও নাকি তাঁর চাকরি হয়েছিল। সাপ, মশা ইত্যাদির ভয়ে তিনি সেই চাকরিতে যোগ দেননি।
ব্রিটিশরা ভারত ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারত দুই রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে ১৯৪৭ সালে বিদায় নেয়। সে সময় সুধীর চন্দ তৎকালীন পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তাঁর চাকরি ন্যস্ত হয় ডিসি কালেক্টরে তহসিল অফিসে, তহসিলদার হিসেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত তিনি ওই চাকরি করেছেন। বোদা ছাড়াও দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড় ও সেতাবগঞ্জে তিনি তহসিলদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি লুথার্ন ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন নামের একটি সাহায্য সংস্থায় চাকরি নেন। পরে এই সংগঠন আরডিআরএস নামে রূপান্তরিত হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে এই সংস্থা অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তখন ঠাকুরগাঁও কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কিছুদিন আরডিআরএসের কনস্ট্রাকশন বিভাগে কাজ করেছে আমার বন্ধু হিমাংশু চন্দ তপন বা তপু। বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিধ্বস্ত ভবন নতুন করে তৈরির কাজ তদারকির দায়িত্ব পালন করেছে তপু। সুধীর কাকু আরডিআরএসের চাকরি করেছেন ১৯৮০ সাল পর্যন্ত। ফলে তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঠাকুরগাঁওয়েই বসবাস করেছেন। বাসা ভাড়া নিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকতেন। তপু ও নয়ন ঠাকুরগাঁও কলেজে পড়ত। তপু ওই কলেজ থেকে বিএ পাস করেছে আর নয়ন এইচএসসি পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। দর্শনশাস্ত্রে মাস্টার্স করে বোদায় ফিরে পাথরাজ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করে। তপু বিয়েশাদি করে ঠাকুরগাঁওয়েই স্থায়ী হয়েছে।
তপুদের ঠাকুরগাঁওয়ের বাসায়ও নানা কারণে আমাকে বহুদিন রাত কাটাতে হয়েছে এবং পাত পাততে হয়েছে। তখন ঢাকায় আসার জন্য আমাকে হয় দিনাজপুর অথবা ঠাকুরগাঁও থেকে গাড়ি ধরতে হতো। পঞ্চগড় থেকে কোনো কোচ ডে কিংবা নাইট তখনো চালু হয়নি। ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়া এবং বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে আমার রাত্রিকালীন অবস্থান হতো তপুদের বাসায়। রান্নাঘরে একসঙ্গে বসে আমরা চারজন রাতের খাবার খেতাম। সুধীর কাকু পরম মমতায় আমাকে পুত্রবৎ পাশে বসাতেন। আহা, কত প্রীতিময় ছিল সেই দিনগুলো!
আগেই বলেছি, কাকু ছিলেন একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাবের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি সাত-আটবার ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) শিল্ড কাপ খেলেছেন। ট্রফি জিতেছেন। হেড করে গোল করায় তিনি খুব পারদর্শী ছিলেন। তখন মাঝগ্রামের আবদুর রহমান সাহেবও ভালো ফুটবল খেলতেন। তাঁর কর্নার কিক মানেই ছিল অবধারিত গোল। সে জন্যই তখন বলা হতো সুধীর চন্দের হেড আর আব্দুর রহমানের কর্নার কিক ইকুয়াল টু গোল। তিনি রংপুর ও দিনাজপুরে গিয়েও খেলেছেন।
সুধীর কাকু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। অস্ত্র হাতে সম্মুখ সমরে অংশ না নিলেও শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের নানা উপায়ে সাহায্য-সহযোগিতায় ছিলেন সদা তৎপর। যেসব রাজনৈতিক নেতাকর্মী ওপারে গিয়েছিলেন, তাঁদের জন্য বড় সহায় ছিলেন সুধীর কাকু। কিন্তু কিছু মানুষ যেমন যুদ্ধ শেষের পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন, সুধীর কাকু ছিলেন সেখানে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
চন্দবাড়ির স্বপনদা ছিলেন হাসিখুশি স্বভাবের, একটু যেন আপনভোলা মানুষ। সংসার করেছেন। কিন্তু প্রকৃত সংসারী বলতে যা বোঝায়, তিনি তা ছিলেন কি না, আমার সন্দেহ আছে। মাথার ওপর সুধীর কাকুর মতো বটবৃক্ষসম বাবা থাকলে অমনই বোধ হয় হওয়ার কথা।
স্বপনদা আমার বড়। বন্ধুর বড় ভাই। কিন্তু আমাদের মধ্যে একধরনের বন্ধুত্বের সম্পর্কই গড়ে উঠেছিল। তিনি আমার সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলতেন। রাজনীতি সচেতন ছিলেন। দেশ-দুনিয়া সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতেন। নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তেন।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আমাদের এলাকা থেকে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কামু ভাই, অ্যাডভোকেট কামরুল হোসেন। মনে আছে, ওই নির্বাচনী প্রচারে আমি আর স্বপনদা একসঙ্গে অনেক জায়গায় গিয়েছি। বিভিন্ন গ্রাম বা ইউনিয়নে আমাদের উভয়ের পরিচিতদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছি। আমি সাইকেল চালাতে পারতাম না। স্বপনদা সাইকেল চালিয়ে আমাকে নিয়ে যেতেন। তখন গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাট ভালো ছিল না। আলপথে অনেক কষ্ট করেই আমাদের যেতে হতো। হাসিমুখেই এই কষ্টকর কাজটি স্বপনদা করতেন। আমরা বুঝতে পারতাম, জনমত আমাদের অনুকূলে নয়। তার পরও কিসের আশায়, কিসের নেশায় যে দিনরাত গ্রাম থেকে গ্রামে, বাড়ি থেকে বাড়ি ছুটে বেড়াতাম!
আমি ঢাকায় আসার পর স্বপনদার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। তার পরও ছুটিছাঁটায় বোদায় গেলে স্বপনদা ছুটে আসতেন। কত জিজ্ঞাসা নিয়ে আমার কাছে সেসবের উত্তর জানতে চাইতেন। তাঁর সব কৌতূহল মেটানোর সাধ্য আমার ছিল না। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় স্বপনদা একটি পা হারান। তিনি ক্র্যাচে ভর দিয়ে এক পায়ে হাঁটতেন। শেষদিকে সম্ভবত ছাত্র পড়িয়ে উপার্জন করতেন। ২০০৩ সালে স্বপনদার মৃত্যু হয়। তিনি রেখে গেছেন দুই মেয়ে ও এক ছেলেসন্তান। বৌদি তাঁর দেবরদের সহযোগিতায় ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। বড় মেয়ে চৈতালি চন্দ সোমার বর ঝাড়বাড়ি কলেজের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক। ছোট মেয়ে বিপাশা চন্দ দোলন বরিশালে বিয়ে হলেও এখন সম্ভবত বোদাতেই আছে। ছেলে সৌমিত চন্দ জয়দ্বীপ কৃতী ছাত্র। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। জয়দ্বীপ জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিল, সভাপতি হয়েছিল। বাম রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ হয়তো এখনো বহাল আছে। গুজরাটে যাওয়ার আগে দৈনিক সমকালে কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছে। লেখালেখির হাত ভালো। এর মধ্যেই গবেষণামূলক কিছু গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ লিখে সুনাম অর্জন করেছে।
আমার বন্ধু হিমাংশু তপুও একজন সফল মানুষ। ঠাকুরগাঁওয়ে ওর একটি এনজিও আছে। অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। ছাত্রাবস্থাতেই তপু উপার্জনমুখী হয়েছে। প্রথমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি, তারপর ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কসমেটিকসের দোকান এবং সব শেষে শার্প নামে এনজিও প্রতিষ্ঠা। নানা ধরনের সামাজিক কাজকর্মেও তপু সময় দেয়। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েও ছাত্রাবস্থায় তপুর ভেতরের এত প্রতিভা সম্পর্কে আমরা কিছু আন্দাজ করতে পারিনি। তপুর একমাত্র ছেলে বুদ্ধদেব চন্দ তমাল কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে এসে এখন বগুড়ায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছে। তমাল বিয়ে করে এক সন্তানের জনকও হয়েছে। আমার বন্ধু তপু গর্বিত দাদু হিসেবে পরিতৃপ্তি নিয়ে সংসার করছে।
ভাইদের মধ্যে ছোট প্রবীর চন্দ নয়ন। মূলত সে-ই এখন চন্দবাড়ির অভিভাবক। বোদার একজন সচেতন ও সংস্কৃতি মনস্ক মানুষ। দর্শনশাস্ত্রে পড়াশোনা করেও সাহিত্যে তাঁর অনুরাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকেই। নিয়মিত কবিতা এবং নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে থাকে। দুটি কবিতার বইও বের হয়েছে। দুটি প্রবন্ধের বই প্রকাশের অপেক্ষায়। তার স্ত্রীও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছেলে শুভ্র প্রতিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে একটি অ্যাড ফার্মে চাকরি করছে। মেয়ে দেবলীনা দৈবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্রী।
চন্দবাড়ির মেয়েদের কথা কিছু না বললেই নয়। সুধীর চন্দের বড় মেয়ে জলপাইগুড়িতে থেকেছেন বলে তাঁর সঙ্গে আমার কখনো দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দু-তিনবার তিনি বোদায় এসেছেন। আমি তখন বোদা ছেড়েছি। ফলে শিবানী চন্দ আমার অদেখা বড় দিদি। কল্যাণী; অর্থাৎ সুনুদিই হলেন আমাদের দেখা বড় দিদি। কী হাসিখুশি মানুষ সুনুদি! মানুষকে আপন করে নেওয়ার শক্তি যেমন তাঁর আছে, তেমনি আছে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে চলার প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস।
আমাদের ছোটবেলায় সুনুদির বিয়ে হয়। প্রেমের বিয়ে। মধু জামাইবাবুও খুব সুন্দর ছিলেন। সুনুদি তো অবশ্যই সুন্দরী। ভালোই চলছিল সব। সময় গড়িয়ে দুটি ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জনক-জননী হন তাঁরা। তারপর যে কোথা থেকে কী হয়। জামাইবাবুকে আর বোদায় দেখা যায় না। তিনি সংসারত্যাগী হন। কী দুঃসহ মর্মজ্বালা বুকে চেপে সুনুদি তাঁর দুই ছেলে মিহির ও বিজনকে মানুষ করার কাজটি সম্পন্ন করেছেন, তা ভুক্তভোগী ছাড়া কারও পক্ষে বোঝা কঠিন। বাবা এবং পরিবারের সহযোগিতা-সমর্থন তিনি পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের কুচুটে সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করা যে কত কঠিন, সেটা না বললেও চলে। সুনুদি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর ছোট ছেলে বিজন সরকারও একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বড় ছেলে মিহির সরকার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত বলে শুনেছিলাম।
চন্দবাড়ির আরেক মেয়ে বেণু ওরফে নারায়ণী চন্দ, আমার বন্ধু এবং মামি। আমার মায়ের কোনো ভাইবোন নেই। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তবে মায়ের কয়েকজন পাতানো ভাই আছে, যারা আমার মামা। এ রকম একজন হলেন নারায়ণ চন্দ্র সাহা। ঢাকার বিক্রমপুরে বাড়ি। চাকরির সুবাদে বোদায় যান গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। তিনি কিছুদিন লজিং থাকতেন আমার পিসার বাসায়; অর্থাৎ কার্তিকদা-জ্যোতিষদাদের বাসায়। তখন অবশ্য পিসেমশাই শরৎ চন্দ্র সরকার জীবিত ছিলেন। যা হোক, ওই বাসায় লজিং থাকার সুবাদেই হয়তো আমার মায়ের ভাই হয়ে যান নারায়ণ সাহা। আমার মামা। এই মামাই বিয়ে করেন চন্দবাড়ির মেয়ে বেণুকে। বন্ধু হেয় গেল মামি। বিয়ের পর নতুন সংসার গোছানোর আগে কিছুদিন তাঁরা আমাদের বাড়িতেই ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিবারের সঙ্গেও আমার অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। একসময় এমনও ছিল যে, ঢাকা থেকে বাড়ি গেলে রাতটা আমি নারায়ণ মামার বাসাতেই কাটাতাম। ততদিনে তাঁদের মেয়ে ও ছেলে বড় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। একটি বিষয় লক্ষণীয়। মামার নাম নারায়ণ আর যাকে বিয়ে করলেন তাঁর নাম নারায়ণী। আমাকে আমার দু-এক বন্ধু তখন ঠাট্টা করে বলত, আমার স্ত্রীর নাম নাকি হবে হয় বিভা, না হয় রঞ্জনা! না, সেটা হয়নি।
বেণুও প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারি করেছে। ছেলে বাপ্পা ওরফে স্বরূপ সাহা এসএসসি পাস করে কলকাতায় চলে যায়। এমবিএ পাস করে বাপ্পা এখন বেঙ্গালুরুতে আছে বলে শুনেছি। বাপ্পা আমাকে মামা বলে ডাকে। কী অদ্ভুত সামাজিক সম্পর্কগুলো! বেণুর মেয়ে শম্পা কিছুদিন ঢাকায় ছিল। তারপর নাকি আমেরিকায় চলে গেছে। নারায়ণ মামার জীবনাবসান হয়েছে। মামি এখন অবসরজীবন যাপন করছেন।
নটে গাছটি মুড়োল, চন্দবাড়ির গল্প ফুরোল।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

দত্তবাড়ির পর বোদার চন্দবাড়ির কথা না লিখলে চলে না। দত্তবাড়ির মতো চন্দবাড়িতেও আছে আমার সহপাঠী ও বন্ধু। আবার দত্ত ও চন্দবাড়ির মধ্যেও আছে পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক।
বোদার থানাপাড়া এখন অনেক বড়। অনেক বাড়িঘর। আর আমাদের ছোটবেলায় থানা, ওয়াপদা অফিস এবং একদিকে চন্দবাড়ি, অন্যদিকে হকিকুল ডাক্তার সাহেবের বাড়ি ছাড়া আর কোনো বাড়িঘর ছিল বলে মনে পড়ে না।
উমেশ চন্দ্র চন্দ ও মন্মথ চন্দ দুই ভাই। উমেশ চন্দের দুই ছেলে সুধীর চন্দ্র চন্দ ও অধীর চন্দ্র চন্দ। উমেশ বাবুকে আমি দেখিনি। তবে মন্মথ বাবুকে দেখেছি। তাঁর বাড়ি অবশ্য থানাপাড়ায় ছিল না। তাঁর বাড়ি বাজার থেকে সিরাজ সরকার সাহেবের বাড়ি যেতে আগে পড়ত। হাতের বাঁয়ে। এখনো আছে সেই বাড়ি। মন্মথ চন্দের মেয়ে ছায়াদিকে বিয়ে করেন দত্তবাড়ির শিবেন দত্ত।
উমেশ চন্দের দুই ছেলের থানাপাড়ার বাসায় আমার ছিল অবাধ যাতায়াত। বড় ছেলে সুধীর চন্দের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। শিবানী চন্দ, কল্যাণী চন্দ (সুনু), সুধাংশু চন্দ (স্বপন), নারায়ণী চন্দ (বেণু), হিমাংশু চন্দ (তপন/তপু) ও প্রবীর চন্দ (নয়ন)। শিবানী চন্দকে আমি দেখিনি। তিনি অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়িতে মামাবাড়িতে একেবারে ছোট থেকেই বড় হয়েছেন। আর দেশে আসেননি। অন্য সবাই বোদায় ছিলেন বা আছেন। এর মধ্যে স্বপনদা অকালপ্রয়াত। সুনুদি, স্বপনদা ও বেণু আমার বড়। তবে বড় হলেও বেণু আর তপু আমার সহপাঠী। পরে সম্ভবত ক্লাস ফাইভ থেকে বেণু আমার ‘জুনিয়র’ হয়ে যায়। আর তপু হয়ে ওঠে আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন। আমি, তপু ও দত্তবাড়ির বিজন—এই তিনজন ছিলাম (দেখা-সাক্ষাৎ কম হলেও এখনো আছি) ‘এক দেহ, এক প্রাণ’। কত কথাই না মনে পড়ছে। একটি ঘটনার কথা না বলে পারছি না। হাইস্কুলে পড়ার সময় আমরা কয়েকজন (এর মধ্যে বিজন, তপু আর আমি কমন) প্রতি বৃহস্পতিবার টিফিনের সময় স্কুল পালিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে যেতাম সিনেমা দেখার জন্য। শুক্রবার নতুন ছবি শুরু হতো, কাজেই বৃহস্পতিবার আমরা বিদায়ী ছবিটা দেখতাম। বলাকা টকিজ নামের সিনেমা হলটির মালিক ছিলেন মির্জা রুহুল আমিন (চখা মিয়া নামে সমধিক পরিচিত)। তিনি ছিলেন বর্তমান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা এবং সাবেক সেনাপ্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের শ্বশুর।
স্কুল থেকে পালিয়ে আমরা একত্রিত হতাম সাতখামারে শামসুদ্দিন ডাক্তার সাহেবের ডিসপেনসারিতে। দুপুরবেলা ওটা ফাঁকা থাকত। আমার বাড়ি ছিল তার পাশেই। ওটা ছিল ঠাকুরগাঁওয়ে যাওয়ার সড়কের একেবারে লাগোয়া। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠলে কেউ দেখে ফেলতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই আমরা একটু এগিয়ে গিয়ে বাসে উঠতাম। প্রবাদ আছে, ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়’। একদিন আমাদের শামসুদ্দিন ডাক্তার চাচার ডিসপেনসারিতে জটলারত অবস্থায় দেখতে পান ডা. ফয়জুল করিম, আমাদের মশিয়ারের (মশিয়ার রহমান, এখন পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) বাবা। আমরা যে স্কুল পালিয়ে ওখানে সমবেত হয়েছি, সেটা তিনি বুঝতে পারেন। তিনি সম্ভবত রোগী দেখে সাইকেলে চেপে ফিরছিলেন। তিনি নিজে আমাদের কিছু বললেন না। তবে বাজারে গিয়ে তপুর বাবা সুধীর কাকুকে বিষয়টি অবগত করেন। কাকু দ্রুত ছুটে আসেন এবং আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তপুকে পাকড়াও করে পায়ের কাবলি স্যান্ডেল দিয়ে বেদম পেটাতে থাকেন। তপু চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে মিনতি করে বলতে থাকে, ‘দোহাই বাবা, আর মেরো না।’ কাকু কোনো কথা শোনেন না। একপর্যায়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে আমাদের সবাইকে শাসিয়ে তিনি চলে যান। আমরা ভাবলাম, অত পিটুনি খেয়ে তপু হয়তো আর সিনেমা দেখতে যাবে না। কিন্তু আমাদের অবাক করে তপু বলল, ‘মার তো খেয়েই ফেলেছি, তাহলে আর সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হব কেন?’
তপু ছিল আমাদের বন্ধুদের মধ্য সবচেয়ে ছোটখাটো। তাই ওকে নিয়ে কত ধরনের কাণ্ডই না আমরা করতাম। সেই তপু, হিমাংশু চন্দ এখন ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রধান নির্বাহী। তপুও খুব সরল মনের সাদাসিধে মানুষ। জীবনে টাকা-পয়সা যেমন উপার্জন করেছে, তেমন খরচও করেছে। ওর বাবা, আমাদের সুধীর কাকুও ছিলেন অত্যন্ত দরাজ দিল মানুষ। আমি তাঁর কাছ থেকে যে স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না।
আমার বন্ধু তপুর বাবা, আমাদের সুধীর কাকু ছিলেন আমার দেখা ‘অসাধারণ’ মানুষদের একজন। দেখতে ছিলেন সুদর্শন। অমন উন্নত নাক, গৌর বর্ণ, মাথা উঁচু করে হাঁটাচলা করা; দেখলেই মনের মধ্যে একটি সমীহ ভাব চলে আসত। তাঁকে আমরা একধরনের ভয়মিশ্রিত সমীহই করতাম। একেবারে ছোটবেলায় এড়িয়ে চলতাম। আস্তে আস্তে যতই তাঁর নৈকট্য লাভ করেছি, ততই মনে হয়েছে তাঁর মনের ভেতরটা কত নরম। পরিণত বয়সেও তিনি ঝুনা নারকেল না হয়ে কচি ডাবের মতোই ছিলেন।
প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন নামকরা ফুটবল খেলোয়াড়। জলপাইগুড়ি জেলায়ও তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা ছোটবেলায়ও তাঁকে বোদা হাইস্কুল মাঠে শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে দেখেছি। সুধীর কাকু, ডা. ফয়জুল চাচারা মাঠে নামলে জমে উঠত খেলা। তরুণদের উৎসাহিত করার জন্যই সে সময় তাঁরা নিয়মিত মাঠে যেতেন।
তপুর মা, মানে আমাদের কাকি মারা যান সম্ভবত ১৯৫৭ সালে। আমি হয়তো তাঁকে দেখিওনি। শুনেছি নয়নের তখন মাত্র দেড় বছর বয়স। তপুর তিন-সাড়ে তিন। কাজেই মায়ের কোনো স্মৃতি ওদের মনে থাকার কথা নয়। ওরা প্রকৃতপক্ষে মাতৃস্নেহে বড় হয়েছে দিদিমার কাছে। দিদিমা সরজুবালা দেবী ছিলেন সুধীর কাকুর মাসিমা। তিনি বাল্যবিধবা। বিয়ের অল্প পরই স্বামীহারা হয়ে সুধীর কাকুর সংসারে স্থায়ী হয়েছিলেন। তপু ও নয়ন এই দিদিমার কোলেপিঠে মানুষ। তাই তিনি ছিলেন ওদের মা, দিদিমা নয়!
এই মহীয়সী নারীকে যাঁরা না দেখেছেন, তাঁরা তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারবেন না। তিনিই কার্যত চন্দবাড়িতে অভিভাবক ছিলেন। তাঁর ছায়া-মায়ায় তপুরা ভাইবোন মানুষ হয়েছে। আরও একজন তপুদের মায়ের অভাব পূরণে বড় ভূমিকা রেখেছেন—তপুদের কাকিমা, অধীর কাকুর স্ত্রী। এই কাকিমার নাম রেখা রানী চন্দ। নিজের তিন মেয়ে ও দুই ছেলেসন্তানের সঙ্গে ভাশুরের সন্তানদেরও তিনি অকৃপণ স্নেহ-ভালোবাসা দিয়েছেন।
সুধীর কাকুর স্ত্রীবিয়োগের পর অনেকে তাঁকে আবার বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন এমন রেওয়াজ ছিল, কিন্তু প্রথম স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসা তাঁকে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণে নিরুৎসাহিত করেছিল। একসময় আমি চন্দবাড়ির সদস্যের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। ওই বাড়ির হাঁড়িতে আমার জন্য দুমুঠো চাল যেন দেওয়াই থাকত। আমি গেলে দিদিমা, কাকিমা কেউ বিরক্ত না হয়ে খুশি হতেন। হাসিমুখেই আমাকে স্বাগত জানাতেন। দিদিমা আর নেই। প্রায় ৯০ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কাকিমা এখনো সক্রিয় আছেন, সেঞ্চুরি করার অপেক্ষায়।
তপুর কাকাতো বোন রেবা রানী চন্দ; ডাক নাম পুতুল। আমাদের ছোট। দেখতে অনেকটা পুতুলের মতোই ছিল। আমি একটু বড় হওয়ার পর, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই মনে হয়, কেউ কেউ পুতুলের সঙ্গে আমার বিয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতেন বলে আমি শুনেছি। তবে বিষয়টি জোরালো হয়ে ওঠেনি।
তপুদের ভাইবোনেরা সবাই মুক্ত মনের অধিকারী। তপু আমার বন্ধু। ওর সঙ্গে মাখামাখি সম্পর্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ওর বড় ভাই স্বপনদা এবং ছোট ভাই নয়নের সঙ্গেও গোড়া থেকেই আমার সম্পর্ক অত্যন্ত প্রীতিময়। নয়ন এখন বোদার একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। কলেজে অধ্যাপনা থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়ে সংস্কৃতি-সাহিত্য-সমাজ নিয়ে কাজ করেন, লেখালেখি করেন। কবিতা ও গদ্যে সমান পারদর্শী।
এই পরিবারের সঙ্গে আমার অতি ঘনিষ্ঠতার আরেকটি বড় কারণ বোধ হয় এটাই যে, এরা সবাই কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক ছিলেন। পার্টির সদস্য না হয়েও এরা ছিলেন পার্টি অন্তপ্রাণ। এ রকম পরিবার বোদায় আরও দু-চারটি ছিল।
চন্দবাড়ির সুধীর চন্দের জন্ম ১৯১৭ সালের কোনো এক বুধবার। ওই বছর পৃথিবীতে প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল। অক্টোবর বিপ্লব বলে পরিচিত সেই বিপ্লবের অভিঘাত তখনই বোদায় গিয়ে পৌঁছানোর কথা নয়। তাই সুধীর চন্দের চেতনায় বিপ্লব আঘাত হানেনি। তবে একধরনের উদার মানবতাবাদী চেতনার বিকাশ তাঁর মধ্যে লক্ষ করা গেছে। তাঁর বাড়ির পরিবেশ যে কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন হয়েছিল, সেটা আগে উল্লেখ করেছি। একটি কাকতালীয় ব্যাপার হলো তাঁর জন্ম এবং মৃত্যু একই বারে। বুধবার। ২০০০ সালের এক বুধবার তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। প্রায় ৮৩ বছরের জীবন পেয়েছিলেন তিনি।
সুধীর চন্দ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেছিলেন সম্ভবত ১৯৩৭ সালে। তাঁর সঙ্গে একই বছর প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন বোদা হাইস্কুলের শিক্ষক সেলিমের বাবা সিদ্দিক সাহেব। ম্যাট্রিক পাসের পর সুধীর চন্দ আর পড়াশোনা না করে চাকরিতে ঢোকেন। তিনি অবিভক্ত ভারতেই জুট করপোরেশনে প্রথম চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। বন বিভাগেও নাকি তাঁর চাকরি হয়েছিল। সাপ, মশা ইত্যাদির ভয়ে তিনি সেই চাকরিতে যোগ দেননি।
ব্রিটিশরা ভারত ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারত দুই রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে ১৯৪৭ সালে বিদায় নেয়। সে সময় সুধীর চন্দ তৎকালীন পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তাঁর চাকরি ন্যস্ত হয় ডিসি কালেক্টরে তহসিল অফিসে, তহসিলদার হিসেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত তিনি ওই চাকরি করেছেন। বোদা ছাড়াও দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড় ও সেতাবগঞ্জে তিনি তহসিলদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি লুথার্ন ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন নামের একটি সাহায্য সংস্থায় চাকরি নেন। পরে এই সংগঠন আরডিআরএস নামে রূপান্তরিত হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে এই সংস্থা অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তখন ঠাকুরগাঁও কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কিছুদিন আরডিআরএসের কনস্ট্রাকশন বিভাগে কাজ করেছে আমার বন্ধু হিমাংশু চন্দ তপন বা তপু। বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিধ্বস্ত ভবন নতুন করে তৈরির কাজ তদারকির দায়িত্ব পালন করেছে তপু। সুধীর কাকু আরডিআরএসের চাকরি করেছেন ১৯৮০ সাল পর্যন্ত। ফলে তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঠাকুরগাঁওয়েই বসবাস করেছেন। বাসা ভাড়া নিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকতেন। তপু ও নয়ন ঠাকুরগাঁও কলেজে পড়ত। তপু ওই কলেজ থেকে বিএ পাস করেছে আর নয়ন এইচএসসি পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। দর্শনশাস্ত্রে মাস্টার্স করে বোদায় ফিরে পাথরাজ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করে। তপু বিয়েশাদি করে ঠাকুরগাঁওয়েই স্থায়ী হয়েছে।
তপুদের ঠাকুরগাঁওয়ের বাসায়ও নানা কারণে আমাকে বহুদিন রাত কাটাতে হয়েছে এবং পাত পাততে হয়েছে। তখন ঢাকায় আসার জন্য আমাকে হয় দিনাজপুর অথবা ঠাকুরগাঁও থেকে গাড়ি ধরতে হতো। পঞ্চগড় থেকে কোনো কোচ ডে কিংবা নাইট তখনো চালু হয়নি। ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়া এবং বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে আমার রাত্রিকালীন অবস্থান হতো তপুদের বাসায়। রান্নাঘরে একসঙ্গে বসে আমরা চারজন রাতের খাবার খেতাম। সুধীর কাকু পরম মমতায় আমাকে পুত্রবৎ পাশে বসাতেন। আহা, কত প্রীতিময় ছিল সেই দিনগুলো!
আগেই বলেছি, কাকু ছিলেন একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাবের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি সাত-আটবার ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) শিল্ড কাপ খেলেছেন। ট্রফি জিতেছেন। হেড করে গোল করায় তিনি খুব পারদর্শী ছিলেন। তখন মাঝগ্রামের আবদুর রহমান সাহেবও ভালো ফুটবল খেলতেন। তাঁর কর্নার কিক মানেই ছিল অবধারিত গোল। সে জন্যই তখন বলা হতো সুধীর চন্দের হেড আর আব্দুর রহমানের কর্নার কিক ইকুয়াল টু গোল। তিনি রংপুর ও দিনাজপুরে গিয়েও খেলেছেন।
সুধীর কাকু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। অস্ত্র হাতে সম্মুখ সমরে অংশ না নিলেও শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের নানা উপায়ে সাহায্য-সহযোগিতায় ছিলেন সদা তৎপর। যেসব রাজনৈতিক নেতাকর্মী ওপারে গিয়েছিলেন, তাঁদের জন্য বড় সহায় ছিলেন সুধীর কাকু। কিন্তু কিছু মানুষ যেমন যুদ্ধ শেষের পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন, সুধীর কাকু ছিলেন সেখানে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
চন্দবাড়ির স্বপনদা ছিলেন হাসিখুশি স্বভাবের, একটু যেন আপনভোলা মানুষ। সংসার করেছেন। কিন্তু প্রকৃত সংসারী বলতে যা বোঝায়, তিনি তা ছিলেন কি না, আমার সন্দেহ আছে। মাথার ওপর সুধীর কাকুর মতো বটবৃক্ষসম বাবা থাকলে অমনই বোধ হয় হওয়ার কথা।
স্বপনদা আমার বড়। বন্ধুর বড় ভাই। কিন্তু আমাদের মধ্যে একধরনের বন্ধুত্বের সম্পর্কই গড়ে উঠেছিল। তিনি আমার সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলতেন। রাজনীতি সচেতন ছিলেন। দেশ-দুনিয়া সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতেন। নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তেন।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আমাদের এলাকা থেকে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কামু ভাই, অ্যাডভোকেট কামরুল হোসেন। মনে আছে, ওই নির্বাচনী প্রচারে আমি আর স্বপনদা একসঙ্গে অনেক জায়গায় গিয়েছি। বিভিন্ন গ্রাম বা ইউনিয়নে আমাদের উভয়ের পরিচিতদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছি। আমি সাইকেল চালাতে পারতাম না। স্বপনদা সাইকেল চালিয়ে আমাকে নিয়ে যেতেন। তখন গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাট ভালো ছিল না। আলপথে অনেক কষ্ট করেই আমাদের যেতে হতো। হাসিমুখেই এই কষ্টকর কাজটি স্বপনদা করতেন। আমরা বুঝতে পারতাম, জনমত আমাদের অনুকূলে নয়। তার পরও কিসের আশায়, কিসের নেশায় যে দিনরাত গ্রাম থেকে গ্রামে, বাড়ি থেকে বাড়ি ছুটে বেড়াতাম!
আমি ঢাকায় আসার পর স্বপনদার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। তার পরও ছুটিছাঁটায় বোদায় গেলে স্বপনদা ছুটে আসতেন। কত জিজ্ঞাসা নিয়ে আমার কাছে সেসবের উত্তর জানতে চাইতেন। তাঁর সব কৌতূহল মেটানোর সাধ্য আমার ছিল না। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় স্বপনদা একটি পা হারান। তিনি ক্র্যাচে ভর দিয়ে এক পায়ে হাঁটতেন। শেষদিকে সম্ভবত ছাত্র পড়িয়ে উপার্জন করতেন। ২০০৩ সালে স্বপনদার মৃত্যু হয়। তিনি রেখে গেছেন দুই মেয়ে ও এক ছেলেসন্তান। বৌদি তাঁর দেবরদের সহযোগিতায় ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। বড় মেয়ে চৈতালি চন্দ সোমার বর ঝাড়বাড়ি কলেজের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক। ছোট মেয়ে বিপাশা চন্দ দোলন বরিশালে বিয়ে হলেও এখন সম্ভবত বোদাতেই আছে। ছেলে সৌমিত চন্দ জয়দ্বীপ কৃতী ছাত্র। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। জয়দ্বীপ জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিল, সভাপতি হয়েছিল। বাম রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ হয়তো এখনো বহাল আছে। গুজরাটে যাওয়ার আগে দৈনিক সমকালে কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছে। লেখালেখির হাত ভালো। এর মধ্যেই গবেষণামূলক কিছু গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ লিখে সুনাম অর্জন করেছে।
আমার বন্ধু হিমাংশু তপুও একজন সফল মানুষ। ঠাকুরগাঁওয়ে ওর একটি এনজিও আছে। অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। ছাত্রাবস্থাতেই তপু উপার্জনমুখী হয়েছে। প্রথমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি, তারপর ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কসমেটিকসের দোকান এবং সব শেষে শার্প নামে এনজিও প্রতিষ্ঠা। নানা ধরনের সামাজিক কাজকর্মেও তপু সময় দেয়। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েও ছাত্রাবস্থায় তপুর ভেতরের এত প্রতিভা সম্পর্কে আমরা কিছু আন্দাজ করতে পারিনি। তপুর একমাত্র ছেলে বুদ্ধদেব চন্দ তমাল কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে এসে এখন বগুড়ায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছে। তমাল বিয়ে করে এক সন্তানের জনকও হয়েছে। আমার বন্ধু তপু গর্বিত দাদু হিসেবে পরিতৃপ্তি নিয়ে সংসার করছে।
ভাইদের মধ্যে ছোট প্রবীর চন্দ নয়ন। মূলত সে-ই এখন চন্দবাড়ির অভিভাবক। বোদার একজন সচেতন ও সংস্কৃতি মনস্ক মানুষ। দর্শনশাস্ত্রে পড়াশোনা করেও সাহিত্যে তাঁর অনুরাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকেই। নিয়মিত কবিতা এবং নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে থাকে। দুটি কবিতার বইও বের হয়েছে। দুটি প্রবন্ধের বই প্রকাশের অপেক্ষায়। তার স্ত্রীও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছেলে শুভ্র প্রতিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে একটি অ্যাড ফার্মে চাকরি করছে। মেয়ে দেবলীনা দৈবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্রী।
চন্দবাড়ির মেয়েদের কথা কিছু না বললেই নয়। সুধীর চন্দের বড় মেয়ে জলপাইগুড়িতে থেকেছেন বলে তাঁর সঙ্গে আমার কখনো দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দু-তিনবার তিনি বোদায় এসেছেন। আমি তখন বোদা ছেড়েছি। ফলে শিবানী চন্দ আমার অদেখা বড় দিদি। কল্যাণী; অর্থাৎ সুনুদিই হলেন আমাদের দেখা বড় দিদি। কী হাসিখুশি মানুষ সুনুদি! মানুষকে আপন করে নেওয়ার শক্তি যেমন তাঁর আছে, তেমনি আছে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে চলার প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস।
আমাদের ছোটবেলায় সুনুদির বিয়ে হয়। প্রেমের বিয়ে। মধু জামাইবাবুও খুব সুন্দর ছিলেন। সুনুদি তো অবশ্যই সুন্দরী। ভালোই চলছিল সব। সময় গড়িয়ে দুটি ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জনক-জননী হন তাঁরা। তারপর যে কোথা থেকে কী হয়। জামাইবাবুকে আর বোদায় দেখা যায় না। তিনি সংসারত্যাগী হন। কী দুঃসহ মর্মজ্বালা বুকে চেপে সুনুদি তাঁর দুই ছেলে মিহির ও বিজনকে মানুষ করার কাজটি সম্পন্ন করেছেন, তা ভুক্তভোগী ছাড়া কারও পক্ষে বোঝা কঠিন। বাবা এবং পরিবারের সহযোগিতা-সমর্থন তিনি পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের কুচুটে সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করা যে কত কঠিন, সেটা না বললেও চলে। সুনুদি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর ছোট ছেলে বিজন সরকারও একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বড় ছেলে মিহির সরকার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত বলে শুনেছিলাম।
চন্দবাড়ির আরেক মেয়ে বেণু ওরফে নারায়ণী চন্দ, আমার বন্ধু এবং মামি। আমার মায়ের কোনো ভাইবোন নেই। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তবে মায়ের কয়েকজন পাতানো ভাই আছে, যারা আমার মামা। এ রকম একজন হলেন নারায়ণ চন্দ্র সাহা। ঢাকার বিক্রমপুরে বাড়ি। চাকরির সুবাদে বোদায় যান গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। তিনি কিছুদিন লজিং থাকতেন আমার পিসার বাসায়; অর্থাৎ কার্তিকদা-জ্যোতিষদাদের বাসায়। তখন অবশ্য পিসেমশাই শরৎ চন্দ্র সরকার জীবিত ছিলেন। যা হোক, ওই বাসায় লজিং থাকার সুবাদেই হয়তো আমার মায়ের ভাই হয়ে যান নারায়ণ সাহা। আমার মামা। এই মামাই বিয়ে করেন চন্দবাড়ির মেয়ে বেণুকে। বন্ধু হেয় গেল মামি। বিয়ের পর নতুন সংসার গোছানোর আগে কিছুদিন তাঁরা আমাদের বাড়িতেই ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিবারের সঙ্গেও আমার অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। একসময় এমনও ছিল যে, ঢাকা থেকে বাড়ি গেলে রাতটা আমি নারায়ণ মামার বাসাতেই কাটাতাম। ততদিনে তাঁদের মেয়ে ও ছেলে বড় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। একটি বিষয় লক্ষণীয়। মামার নাম নারায়ণ আর যাকে বিয়ে করলেন তাঁর নাম নারায়ণী। আমাকে আমার দু-এক বন্ধু তখন ঠাট্টা করে বলত, আমার স্ত্রীর নাম নাকি হবে হয় বিভা, না হয় রঞ্জনা! না, সেটা হয়নি।
বেণুও প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারি করেছে। ছেলে বাপ্পা ওরফে স্বরূপ সাহা এসএসসি পাস করে কলকাতায় চলে যায়। এমবিএ পাস করে বাপ্পা এখন বেঙ্গালুরুতে আছে বলে শুনেছি। বাপ্পা আমাকে মামা বলে ডাকে। কী অদ্ভুত সামাজিক সম্পর্কগুলো! বেণুর মেয়ে শম্পা কিছুদিন ঢাকায় ছিল। তারপর নাকি আমেরিকায় চলে গেছে। নারায়ণ মামার জীবনাবসান হয়েছে। মামি এখন অবসরজীবন যাপন করছেন।
নটে গাছটি মুড়োল, চন্দবাড়ির গল্প ফুরোল।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১ দিন আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১ দিন আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১ দিন আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

কাকু কোনো কথা শোনেন না। একপর্যায়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে আমাদের সবাইকে শাসিয়ে তিনি চলে যান। আমরা ভাবলাম, অত পিটুনি খেয়ে তপু হয়তো আর সিনেমা দেখতে যাবে না। কিন্তু আমাদের অবাক করে তপু বলল, ‘মার তো খেয়েই ফেলেছি, তাহলে আর সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হব কেন?’
০৫ মে ২০২২
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১ দিন আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১ দিন আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

কাকু কোনো কথা শোনেন না। একপর্যায়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে আমাদের সবাইকে শাসিয়ে তিনি চলে যান। আমরা ভাবলাম, অত পিটুনি খেয়ে তপু হয়তো আর সিনেমা দেখতে যাবে না। কিন্তু আমাদের অবাক করে তপু বলল, ‘মার তো খেয়েই ফেলেছি, তাহলে আর সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হব কেন?’
০৫ মে ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১ দিন আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১ দিন আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

কাকু কোনো কথা শোনেন না। একপর্যায়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে আমাদের সবাইকে শাসিয়ে তিনি চলে যান। আমরা ভাবলাম, অত পিটুনি খেয়ে তপু হয়তো আর সিনেমা দেখতে যাবে না। কিন্তু আমাদের অবাক করে তপু বলল, ‘মার তো খেয়েই ফেলেছি, তাহলে আর সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হব কেন?’
০৫ মে ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১ দিন আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১ দিন আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

কাকু কোনো কথা শোনেন না। একপর্যায়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে আমাদের সবাইকে শাসিয়ে তিনি চলে যান। আমরা ভাবলাম, অত পিটুনি খেয়ে তপু হয়তো আর সিনেমা দেখতে যাবে না। কিন্তু আমাদের অবাক করে তপু বলল, ‘মার তো খেয়েই ফেলেছি, তাহলে আর সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হব কেন?’
০৫ মে ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১ দিন আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১ দিন আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১ দিন আগে