মামুনুর রশীদ

আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়। সুদূর গ্রামে থাকা একটি শিশুর কাছে বিস্ময়টাই স্বাভাবিক। আমাদের কাছের বড় শহর টাঙ্গাইল, সে-ও ভীষণ অনুন্নত। এমনি অনুন্নত যে ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তাটাও তখন হয়নি। ঢাকায় আসতে হতো বাসে, ময়মনসিংহ হয়ে লোকাল ট্রেন ধরে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছাতে হতো ঢাকায়। ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টার একটি ভ্রমণ। কিন্তু এই ভ্রমণেও ক্লান্তি নেই, কারণ ঢাকায় এসে গেছি।
ঢাকায় এসে উঠেছিলাম খালার বাড়িতে। খালার বাসা ছিল ক্যান্টনমেন্ট। খালু সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে। কিন্তু তখনো তিনি একটি সরকারি অফিসে কাজ করেন। সুঠাম দেহ এবং সাইকেল চালানোয় পারদর্শী। তিনি সাইকেলের সামনে বসিয়ে আমাকে সদরঘাটে নিয়ে আসেন। সদরঘাটের জনারণ্য তখন অনেকটা সুশৃঙ্খল। বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ, নৌকার বহর। আমার সেই প্রবীণ আত্মীয় নিরলস সাইকেলচালক। বাকল্যান্ড বাঁধের পাশ দিয়ে বাবুবাজার, ইসলামপুর ঘুরে সাইকেলে বসে থেকে ক্লান্ত হলে নেমে কিছু দূর হেঁটে যেতাম। চোখে আমার দুরন্ত কৌতূহল এবং সেই সঙ্গে শরীরে অদ্ভুত এক প্রাণচাঞ্চল্য। প্রথম দিন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে একটা আত্মতৃপ্তি যে ঢাকা দেখে ফেলেছি।
পরবর্তী সময়ে আরেকটু বড় হওয়ার পর যখন ঢাকায় আসি, তখন প্রথম সিনেমা দেখি সদরঘাটেরই হল শাবিস্তানে। সিনেমার মাঝখানের বিরতিতে প্রথম ঢাকার লাচ্ছি খাওয়ার আনন্দ এখনো ভুলতে পারিনি। তখনো ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন আছে, নবাবপুরের রেলগেট আছে। রেলগেট পেরিয়েই একটা বিখ্যাত মোগলাই পরোটার দোকান ছিল, সেখানে মোগলাই পরোটা খাওয়াও আমার জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা। এরপর কিছু লেখালেখি, একুশের সংকলন প্রকাশনা—এসব ব্যাপারে প্রায়ই নবাবপুর রেলগেট পেরিয়ে যেতে হতো সদরঘাটের কাছাকাছি। কারণ, সব প্রেসের কর্মকাণ্ড হতো সদরঘাটের কাছাকাছি। বইয়ের দোকানপাট, খুচরা ও পাইকারি সবই একই এলাকায়—বাংলাবাজার। কিছুটা বাবুবাজার এলাকায়।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কলকাতা থেকে প্রায় এক শ বছর পরে ঢাকায় প্রকাশনাশিল্প গড়ে ওঠে। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ নাটকটি ১৮৬০ সালে ঢাকা থেকেই প্রকাশিত হয়। তখনকার ঢাকা ছিল অবহেলিত এবং দারিদ্র্যপীড়িত এক নগরী। কিন্তু একমাত্র যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল এই সদরঘাট থেকে। ঢাকা যখন সুবে বাংলার রাজধানী ছিল, তখন যে সমৃদ্ধ ঢাকা এই সদরঘাট থেকেই তৈরি হয়েছিল; তা এক শ-দেড় শ বছরের ব্যবধানে একেবারেই জীর্ণশীর্ণ চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আবার ঢাকা একটু একটু করে গড়ে উঠতে শুরু করে। তবে তার গতি অত্যন্ত শ্লথ।
এর বহু বছর পরে ঢাকা উত্তর দিকে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ষাটের দশকে যখন আমি ঢাকায় আসি, প্রায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করি, তখন গুলিস্তান হয়ে গেছে। গুলিস্তান, তার সঙ্গে আরেকটি ছোট সিনেমা হল, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, আইসক্রিমের দোকান ইত্যাদি। এই সময়ে কিছু সুউচ্চ অট্টালিকা দেখা যায় মতিঝিলে, বিশেষ করে বিরাট একটি ঘড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা ডিআইটির দালান। তারপর ঢাকা উত্তরের দিকে বাড়তে থাকে।
এ সময়ে রেলস্টেশনটিও ফুলবাড়িয়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে কমলাপুরে। মুক্তিযুদ্ধের পরে ঢাকা দেশের রাজধানী হওয়ার পর ক্রমে ক্রমে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং উত্তরের দিকেই বড়লোকদের জন্য আবাসিক এলাকা ও নিম্নবিত্তদের জন্য মালিবাগ, বাসাবো, খিলগাঁও, মান্ডা—এই সব জায়গায় জনবসতি গড়ে ওঠে। সদরঘাট একমাত্র নৌ-চলাচল ছাড়া আর সব ধরনের প্রয়োজন থেকে বিচ্যুত হয়। বাংলাবাজারের যে বইয়ের বিশাল বাজার হতে পারত তা সংকুচিত হতে থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্য জায়গাগুলোতে বইয়ের দোকানের আরেকটি বাজার বসে গেল, অর্থাৎ বইয়ের যে চর্চা, সেটাও কমতে শুরু করল। এ সময়ে কিছু আধুনিক বইয়ের খোঁজ পাওয়া যেত নিউমার্কেটের ভেতরে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের মতো একটি বইয়ের বাজার বাংলাবাজারও হতে পারত। কিন্তু এই শহরটি নবনির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো শহর বিশারদ বা টাউন প্ল্যানার ছিল না। অনেকটা ইঞ্জিনিয়ার ও ব্রিটিশের তৈরি পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের হাত দিয়েই হয়েছিল। যেহেতু ওই সব প্রকৌশলীর মধ্যে তেমন কোনো ভিশনারি বা সুদূরপ্রসারী বাস্তব পরিকল্পনাবিদ ছিল না, তাই রাস্তাঘাট অত্যন্ত ছোট ছোট। যার ফলস্বরূপ এখনকার ঢাকায় প্রচণ্ড যানজট আমরা অনুভব করি। মাত্র ষাট-সত্তর বছর আগেও ঢাকা শহরের যে পরিকল্পনা তা অত্যন্ত অদূরদর্শিতায় গড়ে ওঠা। স্বাধীনতার পরেও যখন হু হু করে বাড়ছে ঢাকার আয়তন, তখনো পথঘাট ও নগরীর ফুসফুস বলে আখ্যায়িত ফাঁকা জায়গা এবং পার্ক—এগুলোর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
পৃথিবীর অনেক বড় শহরের কেন্দ্রস্থলেই থাকে একটা বড় নদী। নদীতে থাকে বড় ব্রিজ। কলকাতার হাওড়া ব্রিজ দেখেই অনুমান করা যায় নিচে স্টিমার চলাচলের ব্যবস্থা রেখে এই সুউচ্চ ব্রিজটি দিয়ে বিশাল অঞ্চলের যোগাযোগ তারা সম্ভবপর করে তুলেছে। অনেক বিলম্বে বুড়িগঙ্গার ওপর একাধিক ব্রিজ এখন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তত দিনে অবৈধ দখলদারেরা নদীকে সংকুচিত করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, নদীর পানিকে দূষিত করার জন্য যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সব রকম কর্মকাণ্ড অদূরদর্শী কলকারখানার মালিকেরা নিয়ে ফেলেছেন। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে অবাধ নৌ-চলাচলের কারণে বুড়িগঙ্গার কালো পানিতে এখন আর কোনো মৎস্যসম্পদ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যথার্থই বলেছেন, ঢাকার রাজধানী হওয়া উচিত ছিল সদরঘাট। আর বাংলাবাজার হতে পারত কলকাতার মতো কলেজ স্ট্রিট, যেখানে সারা বছর ক্রেতা ও পাঠকদের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক ভাঙা-গড়া।
সদরঘাট থেকে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান উঠে গেছে। সেই শূন্য জায়গাগুলোতে বইয়ের বাজার হতে পারত। কিন্তু তা না হয়ে অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে আর বাংলাবাজার থেকে ফরাশগঞ্জ হয়ে লালকুঠি-সূত্রাপুরের দিকে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে কাঁচামালের অনেক পাইকারি আড়ত বসেছে। উদ্যোগী প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা মুক্তধারার মতো বিরাট প্রকাশনা সংস্থা ‘মুক্তধারা’ গড়ে তুলেছিলেন ফরাশগঞ্জে। আড়তের চাপে তাঁকেও সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে। বইয়ের প্রতি এবং বইকেন্দ্রিক প্রকাশনা শিল্পের প্রতি কোনো সরকারই গুরুত্বারোপ করেনি। এমনকি কোভিডের ভয়াবহতার সময় যখন প্রকাশনাশিল্প প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, তখনো সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রাণপণে উদাসীন থেকেছে। ঢাকা শহরটা যদি কোনো টাউন প্ল্যানারের হাতে নির্মিত বা সংস্কারের কাজ হতো, তাহলে অবশ্যই বুড়িগঙ্গা একটা বড় বিবেচনার জায়গায় থাকত এবং শহরবাসীর প্রয়োজনটাও তারা বুঝতে পারত।
এরপর উত্তরে ঢাকার যে সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে, সেখানেও মানুষের বিনোদনের জায়গা অত্যন্ত কম। গুলশান-বনানী-ধানমন্ডি-উত্তরায় সেভাবে বইয়ের কোনো দোকান নেই। সিনেমা হল নেই, নাট্যমঞ্চ নেই, মানুষ বসে যে একটু প্রাণভরে নিশ্বাস নেবে, সেই জায়গাটুকুও নেই। বহু বছর ধরে উত্তরায় একটি নাট্যমঞ্চ ও নাগরিক সুবিধার জন্য চেষ্টা করে আসা হচ্ছে। কিন্তু এখনো তার কোনো নাম-নিশানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিরপুর একটা বিশাল জনবহুল জায়গা, সেখানেও এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মিরপুর ১২ নম্বর (ডিওএইচএস মিরপুর) থেকে শাহবাগ আজিজ মার্কেট পর্যন্ত একটি বইয়ের দোকান নেই।
স্কুলের পাশে কোথাও পাঠ্যপুস্তক এবং খাতা, পেনসিল, কলমের দোকান হয়তো আছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো বইয়ের দোকান গড়ে ওঠেনি। যেহেতু প্রকৌশলীরা এই শহরের নকশা প্রণয়ন করেছেন, তাঁদের কাছে মানসিক বিষয়গুলোর কোনো গুরুত্বই পায়নি। হাতিরঝিল নির্মাণকালে যেহেতু স্থপতি, টাউন প্ল্যানার এবং কিছু ভিশনারির সমাবেশ ঘটেছিল, তাই এটি একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটি সবাই মূল্যায়ন করে থাকে।
একদা বুড়িগঙ্গা থেকে ফতুল্লা হয়ে শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত একটা বিনোদনের জায়গা ছিল। এখন নৌযানের প্রবল যানজটে সেটিও অনুপস্থিত। শিশু-যুবক-তরুণ থেকে শুরু করে প্রবীণদের জন্য এই জনবহুল শহরে একটু নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এবং চিত্তবিনোদনের জন্য প্রেক্ষাগৃহ, পাঠাগার সর্বোপরি বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা অত্যাবশ্যক। বিষয়গুলো কোনো অবস্থাতেই শুধু প্রকৌশলীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যাঁরা ভিশনারি, যাঁরা এসব নিয়ে ভাবতে পারেন, তাঁদের সমন্বয়ে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতীতে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়। সুদূর গ্রামে থাকা একটি শিশুর কাছে বিস্ময়টাই স্বাভাবিক। আমাদের কাছের বড় শহর টাঙ্গাইল, সে-ও ভীষণ অনুন্নত। এমনি অনুন্নত যে ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তাটাও তখন হয়নি। ঢাকায় আসতে হতো বাসে, ময়মনসিংহ হয়ে লোকাল ট্রেন ধরে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছাতে হতো ঢাকায়। ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টার একটি ভ্রমণ। কিন্তু এই ভ্রমণেও ক্লান্তি নেই, কারণ ঢাকায় এসে গেছি।
ঢাকায় এসে উঠেছিলাম খালার বাড়িতে। খালার বাসা ছিল ক্যান্টনমেন্ট। খালু সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে। কিন্তু তখনো তিনি একটি সরকারি অফিসে কাজ করেন। সুঠাম দেহ এবং সাইকেল চালানোয় পারদর্শী। তিনি সাইকেলের সামনে বসিয়ে আমাকে সদরঘাটে নিয়ে আসেন। সদরঘাটের জনারণ্য তখন অনেকটা সুশৃঙ্খল। বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ, নৌকার বহর। আমার সেই প্রবীণ আত্মীয় নিরলস সাইকেলচালক। বাকল্যান্ড বাঁধের পাশ দিয়ে বাবুবাজার, ইসলামপুর ঘুরে সাইকেলে বসে থেকে ক্লান্ত হলে নেমে কিছু দূর হেঁটে যেতাম। চোখে আমার দুরন্ত কৌতূহল এবং সেই সঙ্গে শরীরে অদ্ভুত এক প্রাণচাঞ্চল্য। প্রথম দিন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে একটা আত্মতৃপ্তি যে ঢাকা দেখে ফেলেছি।
পরবর্তী সময়ে আরেকটু বড় হওয়ার পর যখন ঢাকায় আসি, তখন প্রথম সিনেমা দেখি সদরঘাটেরই হল শাবিস্তানে। সিনেমার মাঝখানের বিরতিতে প্রথম ঢাকার লাচ্ছি খাওয়ার আনন্দ এখনো ভুলতে পারিনি। তখনো ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন আছে, নবাবপুরের রেলগেট আছে। রেলগেট পেরিয়েই একটা বিখ্যাত মোগলাই পরোটার দোকান ছিল, সেখানে মোগলাই পরোটা খাওয়াও আমার জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা। এরপর কিছু লেখালেখি, একুশের সংকলন প্রকাশনা—এসব ব্যাপারে প্রায়ই নবাবপুর রেলগেট পেরিয়ে যেতে হতো সদরঘাটের কাছাকাছি। কারণ, সব প্রেসের কর্মকাণ্ড হতো সদরঘাটের কাছাকাছি। বইয়ের দোকানপাট, খুচরা ও পাইকারি সবই একই এলাকায়—বাংলাবাজার। কিছুটা বাবুবাজার এলাকায়।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কলকাতা থেকে প্রায় এক শ বছর পরে ঢাকায় প্রকাশনাশিল্প গড়ে ওঠে। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ নাটকটি ১৮৬০ সালে ঢাকা থেকেই প্রকাশিত হয়। তখনকার ঢাকা ছিল অবহেলিত এবং দারিদ্র্যপীড়িত এক নগরী। কিন্তু একমাত্র যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল এই সদরঘাট থেকে। ঢাকা যখন সুবে বাংলার রাজধানী ছিল, তখন যে সমৃদ্ধ ঢাকা এই সদরঘাট থেকেই তৈরি হয়েছিল; তা এক শ-দেড় শ বছরের ব্যবধানে একেবারেই জীর্ণশীর্ণ চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আবার ঢাকা একটু একটু করে গড়ে উঠতে শুরু করে। তবে তার গতি অত্যন্ত শ্লথ।
এর বহু বছর পরে ঢাকা উত্তর দিকে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ষাটের দশকে যখন আমি ঢাকায় আসি, প্রায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করি, তখন গুলিস্তান হয়ে গেছে। গুলিস্তান, তার সঙ্গে আরেকটি ছোট সিনেমা হল, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, আইসক্রিমের দোকান ইত্যাদি। এই সময়ে কিছু সুউচ্চ অট্টালিকা দেখা যায় মতিঝিলে, বিশেষ করে বিরাট একটি ঘড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা ডিআইটির দালান। তারপর ঢাকা উত্তরের দিকে বাড়তে থাকে।
এ সময়ে রেলস্টেশনটিও ফুলবাড়িয়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে কমলাপুরে। মুক্তিযুদ্ধের পরে ঢাকা দেশের রাজধানী হওয়ার পর ক্রমে ক্রমে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং উত্তরের দিকেই বড়লোকদের জন্য আবাসিক এলাকা ও নিম্নবিত্তদের জন্য মালিবাগ, বাসাবো, খিলগাঁও, মান্ডা—এই সব জায়গায় জনবসতি গড়ে ওঠে। সদরঘাট একমাত্র নৌ-চলাচল ছাড়া আর সব ধরনের প্রয়োজন থেকে বিচ্যুত হয়। বাংলাবাজারের যে বইয়ের বিশাল বাজার হতে পারত তা সংকুচিত হতে থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্য জায়গাগুলোতে বইয়ের দোকানের আরেকটি বাজার বসে গেল, অর্থাৎ বইয়ের যে চর্চা, সেটাও কমতে শুরু করল। এ সময়ে কিছু আধুনিক বইয়ের খোঁজ পাওয়া যেত নিউমার্কেটের ভেতরে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের মতো একটি বইয়ের বাজার বাংলাবাজারও হতে পারত। কিন্তু এই শহরটি নবনির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো শহর বিশারদ বা টাউন প্ল্যানার ছিল না। অনেকটা ইঞ্জিনিয়ার ও ব্রিটিশের তৈরি পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের হাত দিয়েই হয়েছিল। যেহেতু ওই সব প্রকৌশলীর মধ্যে তেমন কোনো ভিশনারি বা সুদূরপ্রসারী বাস্তব পরিকল্পনাবিদ ছিল না, তাই রাস্তাঘাট অত্যন্ত ছোট ছোট। যার ফলস্বরূপ এখনকার ঢাকায় প্রচণ্ড যানজট আমরা অনুভব করি। মাত্র ষাট-সত্তর বছর আগেও ঢাকা শহরের যে পরিকল্পনা তা অত্যন্ত অদূরদর্শিতায় গড়ে ওঠা। স্বাধীনতার পরেও যখন হু হু করে বাড়ছে ঢাকার আয়তন, তখনো পথঘাট ও নগরীর ফুসফুস বলে আখ্যায়িত ফাঁকা জায়গা এবং পার্ক—এগুলোর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
পৃথিবীর অনেক বড় শহরের কেন্দ্রস্থলেই থাকে একটা বড় নদী। নদীতে থাকে বড় ব্রিজ। কলকাতার হাওড়া ব্রিজ দেখেই অনুমান করা যায় নিচে স্টিমার চলাচলের ব্যবস্থা রেখে এই সুউচ্চ ব্রিজটি দিয়ে বিশাল অঞ্চলের যোগাযোগ তারা সম্ভবপর করে তুলেছে। অনেক বিলম্বে বুড়িগঙ্গার ওপর একাধিক ব্রিজ এখন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তত দিনে অবৈধ দখলদারেরা নদীকে সংকুচিত করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, নদীর পানিকে দূষিত করার জন্য যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সব রকম কর্মকাণ্ড অদূরদর্শী কলকারখানার মালিকেরা নিয়ে ফেলেছেন। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে অবাধ নৌ-চলাচলের কারণে বুড়িগঙ্গার কালো পানিতে এখন আর কোনো মৎস্যসম্পদ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যথার্থই বলেছেন, ঢাকার রাজধানী হওয়া উচিত ছিল সদরঘাট। আর বাংলাবাজার হতে পারত কলকাতার মতো কলেজ স্ট্রিট, যেখানে সারা বছর ক্রেতা ও পাঠকদের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক ভাঙা-গড়া।
সদরঘাট থেকে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান উঠে গেছে। সেই শূন্য জায়গাগুলোতে বইয়ের বাজার হতে পারত। কিন্তু তা না হয়ে অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে আর বাংলাবাজার থেকে ফরাশগঞ্জ হয়ে লালকুঠি-সূত্রাপুরের দিকে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে কাঁচামালের অনেক পাইকারি আড়ত বসেছে। উদ্যোগী প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা মুক্তধারার মতো বিরাট প্রকাশনা সংস্থা ‘মুক্তধারা’ গড়ে তুলেছিলেন ফরাশগঞ্জে। আড়তের চাপে তাঁকেও সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে। বইয়ের প্রতি এবং বইকেন্দ্রিক প্রকাশনা শিল্পের প্রতি কোনো সরকারই গুরুত্বারোপ করেনি। এমনকি কোভিডের ভয়াবহতার সময় যখন প্রকাশনাশিল্প প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, তখনো সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রাণপণে উদাসীন থেকেছে। ঢাকা শহরটা যদি কোনো টাউন প্ল্যানারের হাতে নির্মিত বা সংস্কারের কাজ হতো, তাহলে অবশ্যই বুড়িগঙ্গা একটা বড় বিবেচনার জায়গায় থাকত এবং শহরবাসীর প্রয়োজনটাও তারা বুঝতে পারত।
এরপর উত্তরে ঢাকার যে সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে, সেখানেও মানুষের বিনোদনের জায়গা অত্যন্ত কম। গুলশান-বনানী-ধানমন্ডি-উত্তরায় সেভাবে বইয়ের কোনো দোকান নেই। সিনেমা হল নেই, নাট্যমঞ্চ নেই, মানুষ বসে যে একটু প্রাণভরে নিশ্বাস নেবে, সেই জায়গাটুকুও নেই। বহু বছর ধরে উত্তরায় একটি নাট্যমঞ্চ ও নাগরিক সুবিধার জন্য চেষ্টা করে আসা হচ্ছে। কিন্তু এখনো তার কোনো নাম-নিশানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিরপুর একটা বিশাল জনবহুল জায়গা, সেখানেও এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মিরপুর ১২ নম্বর (ডিওএইচএস মিরপুর) থেকে শাহবাগ আজিজ মার্কেট পর্যন্ত একটি বইয়ের দোকান নেই।
স্কুলের পাশে কোথাও পাঠ্যপুস্তক এবং খাতা, পেনসিল, কলমের দোকান হয়তো আছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো বইয়ের দোকান গড়ে ওঠেনি। যেহেতু প্রকৌশলীরা এই শহরের নকশা প্রণয়ন করেছেন, তাঁদের কাছে মানসিক বিষয়গুলোর কোনো গুরুত্বই পায়নি। হাতিরঝিল নির্মাণকালে যেহেতু স্থপতি, টাউন প্ল্যানার এবং কিছু ভিশনারির সমাবেশ ঘটেছিল, তাই এটি একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটি সবাই মূল্যায়ন করে থাকে।
একদা বুড়িগঙ্গা থেকে ফতুল্লা হয়ে শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত একটা বিনোদনের জায়গা ছিল। এখন নৌযানের প্রবল যানজটে সেটিও অনুপস্থিত। শিশু-যুবক-তরুণ থেকে শুরু করে প্রবীণদের জন্য এই জনবহুল শহরে একটু নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এবং চিত্তবিনোদনের জন্য প্রেক্ষাগৃহ, পাঠাগার সর্বোপরি বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা অত্যাবশ্যক। বিষয়গুলো কোনো অবস্থাতেই শুধু প্রকৌশলীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যাঁরা ভিশনারি, যাঁরা এসব নিয়ে ভাবতে পারেন, তাঁদের সমন্বয়ে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতীতে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়। সুদূর গ্রামে থাকা একটি শিশুর কাছে বিস্ময়টাই স্বাভাবিক। আমাদের কাছের বড় শহর টাঙ্গাইল, সে-ও ভীষণ অনুন্নত। এমনি অনুন্নত যে ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তাটাও তখন হয়নি। ঢাকায় আসতে হতো বাসে, ময়মনসিংহ হয়ে লোকাল ট্রেন ধরে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছাতে হতো ঢাকায়। ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টার একটি ভ্রমণ। কিন্তু এই ভ্রমণেও ক্লান্তি নেই, কারণ ঢাকায় এসে গেছি।
ঢাকায় এসে উঠেছিলাম খালার বাড়িতে। খালার বাসা ছিল ক্যান্টনমেন্ট। খালু সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে। কিন্তু তখনো তিনি একটি সরকারি অফিসে কাজ করেন। সুঠাম দেহ এবং সাইকেল চালানোয় পারদর্শী। তিনি সাইকেলের সামনে বসিয়ে আমাকে সদরঘাটে নিয়ে আসেন। সদরঘাটের জনারণ্য তখন অনেকটা সুশৃঙ্খল। বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ, নৌকার বহর। আমার সেই প্রবীণ আত্মীয় নিরলস সাইকেলচালক। বাকল্যান্ড বাঁধের পাশ দিয়ে বাবুবাজার, ইসলামপুর ঘুরে সাইকেলে বসে থেকে ক্লান্ত হলে নেমে কিছু দূর হেঁটে যেতাম। চোখে আমার দুরন্ত কৌতূহল এবং সেই সঙ্গে শরীরে অদ্ভুত এক প্রাণচাঞ্চল্য। প্রথম দিন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে একটা আত্মতৃপ্তি যে ঢাকা দেখে ফেলেছি।
পরবর্তী সময়ে আরেকটু বড় হওয়ার পর যখন ঢাকায় আসি, তখন প্রথম সিনেমা দেখি সদরঘাটেরই হল শাবিস্তানে। সিনেমার মাঝখানের বিরতিতে প্রথম ঢাকার লাচ্ছি খাওয়ার আনন্দ এখনো ভুলতে পারিনি। তখনো ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন আছে, নবাবপুরের রেলগেট আছে। রেলগেট পেরিয়েই একটা বিখ্যাত মোগলাই পরোটার দোকান ছিল, সেখানে মোগলাই পরোটা খাওয়াও আমার জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা। এরপর কিছু লেখালেখি, একুশের সংকলন প্রকাশনা—এসব ব্যাপারে প্রায়ই নবাবপুর রেলগেট পেরিয়ে যেতে হতো সদরঘাটের কাছাকাছি। কারণ, সব প্রেসের কর্মকাণ্ড হতো সদরঘাটের কাছাকাছি। বইয়ের দোকানপাট, খুচরা ও পাইকারি সবই একই এলাকায়—বাংলাবাজার। কিছুটা বাবুবাজার এলাকায়।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কলকাতা থেকে প্রায় এক শ বছর পরে ঢাকায় প্রকাশনাশিল্প গড়ে ওঠে। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ নাটকটি ১৮৬০ সালে ঢাকা থেকেই প্রকাশিত হয়। তখনকার ঢাকা ছিল অবহেলিত এবং দারিদ্র্যপীড়িত এক নগরী। কিন্তু একমাত্র যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল এই সদরঘাট থেকে। ঢাকা যখন সুবে বাংলার রাজধানী ছিল, তখন যে সমৃদ্ধ ঢাকা এই সদরঘাট থেকেই তৈরি হয়েছিল; তা এক শ-দেড় শ বছরের ব্যবধানে একেবারেই জীর্ণশীর্ণ চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আবার ঢাকা একটু একটু করে গড়ে উঠতে শুরু করে। তবে তার গতি অত্যন্ত শ্লথ।
এর বহু বছর পরে ঢাকা উত্তর দিকে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ষাটের দশকে যখন আমি ঢাকায় আসি, প্রায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করি, তখন গুলিস্তান হয়ে গেছে। গুলিস্তান, তার সঙ্গে আরেকটি ছোট সিনেমা হল, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, আইসক্রিমের দোকান ইত্যাদি। এই সময়ে কিছু সুউচ্চ অট্টালিকা দেখা যায় মতিঝিলে, বিশেষ করে বিরাট একটি ঘড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা ডিআইটির দালান। তারপর ঢাকা উত্তরের দিকে বাড়তে থাকে।
এ সময়ে রেলস্টেশনটিও ফুলবাড়িয়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে কমলাপুরে। মুক্তিযুদ্ধের পরে ঢাকা দেশের রাজধানী হওয়ার পর ক্রমে ক্রমে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং উত্তরের দিকেই বড়লোকদের জন্য আবাসিক এলাকা ও নিম্নবিত্তদের জন্য মালিবাগ, বাসাবো, খিলগাঁও, মান্ডা—এই সব জায়গায় জনবসতি গড়ে ওঠে। সদরঘাট একমাত্র নৌ-চলাচল ছাড়া আর সব ধরনের প্রয়োজন থেকে বিচ্যুত হয়। বাংলাবাজারের যে বইয়ের বিশাল বাজার হতে পারত তা সংকুচিত হতে থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্য জায়গাগুলোতে বইয়ের দোকানের আরেকটি বাজার বসে গেল, অর্থাৎ বইয়ের যে চর্চা, সেটাও কমতে শুরু করল। এ সময়ে কিছু আধুনিক বইয়ের খোঁজ পাওয়া যেত নিউমার্কেটের ভেতরে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের মতো একটি বইয়ের বাজার বাংলাবাজারও হতে পারত। কিন্তু এই শহরটি নবনির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো শহর বিশারদ বা টাউন প্ল্যানার ছিল না। অনেকটা ইঞ্জিনিয়ার ও ব্রিটিশের তৈরি পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের হাত দিয়েই হয়েছিল। যেহেতু ওই সব প্রকৌশলীর মধ্যে তেমন কোনো ভিশনারি বা সুদূরপ্রসারী বাস্তব পরিকল্পনাবিদ ছিল না, তাই রাস্তাঘাট অত্যন্ত ছোট ছোট। যার ফলস্বরূপ এখনকার ঢাকায় প্রচণ্ড যানজট আমরা অনুভব করি। মাত্র ষাট-সত্তর বছর আগেও ঢাকা শহরের যে পরিকল্পনা তা অত্যন্ত অদূরদর্শিতায় গড়ে ওঠা। স্বাধীনতার পরেও যখন হু হু করে বাড়ছে ঢাকার আয়তন, তখনো পথঘাট ও নগরীর ফুসফুস বলে আখ্যায়িত ফাঁকা জায়গা এবং পার্ক—এগুলোর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
পৃথিবীর অনেক বড় শহরের কেন্দ্রস্থলেই থাকে একটা বড় নদী। নদীতে থাকে বড় ব্রিজ। কলকাতার হাওড়া ব্রিজ দেখেই অনুমান করা যায় নিচে স্টিমার চলাচলের ব্যবস্থা রেখে এই সুউচ্চ ব্রিজটি দিয়ে বিশাল অঞ্চলের যোগাযোগ তারা সম্ভবপর করে তুলেছে। অনেক বিলম্বে বুড়িগঙ্গার ওপর একাধিক ব্রিজ এখন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তত দিনে অবৈধ দখলদারেরা নদীকে সংকুচিত করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, নদীর পানিকে দূষিত করার জন্য যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সব রকম কর্মকাণ্ড অদূরদর্শী কলকারখানার মালিকেরা নিয়ে ফেলেছেন। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে অবাধ নৌ-চলাচলের কারণে বুড়িগঙ্গার কালো পানিতে এখন আর কোনো মৎস্যসম্পদ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যথার্থই বলেছেন, ঢাকার রাজধানী হওয়া উচিত ছিল সদরঘাট। আর বাংলাবাজার হতে পারত কলকাতার মতো কলেজ স্ট্রিট, যেখানে সারা বছর ক্রেতা ও পাঠকদের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক ভাঙা-গড়া।
সদরঘাট থেকে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান উঠে গেছে। সেই শূন্য জায়গাগুলোতে বইয়ের বাজার হতে পারত। কিন্তু তা না হয়ে অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে আর বাংলাবাজার থেকে ফরাশগঞ্জ হয়ে লালকুঠি-সূত্রাপুরের দিকে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে কাঁচামালের অনেক পাইকারি আড়ত বসেছে। উদ্যোগী প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা মুক্তধারার মতো বিরাট প্রকাশনা সংস্থা ‘মুক্তধারা’ গড়ে তুলেছিলেন ফরাশগঞ্জে। আড়তের চাপে তাঁকেও সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে। বইয়ের প্রতি এবং বইকেন্দ্রিক প্রকাশনা শিল্পের প্রতি কোনো সরকারই গুরুত্বারোপ করেনি। এমনকি কোভিডের ভয়াবহতার সময় যখন প্রকাশনাশিল্প প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, তখনো সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রাণপণে উদাসীন থেকেছে। ঢাকা শহরটা যদি কোনো টাউন প্ল্যানারের হাতে নির্মিত বা সংস্কারের কাজ হতো, তাহলে অবশ্যই বুড়িগঙ্গা একটা বড় বিবেচনার জায়গায় থাকত এবং শহরবাসীর প্রয়োজনটাও তারা বুঝতে পারত।
এরপর উত্তরে ঢাকার যে সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে, সেখানেও মানুষের বিনোদনের জায়গা অত্যন্ত কম। গুলশান-বনানী-ধানমন্ডি-উত্তরায় সেভাবে বইয়ের কোনো দোকান নেই। সিনেমা হল নেই, নাট্যমঞ্চ নেই, মানুষ বসে যে একটু প্রাণভরে নিশ্বাস নেবে, সেই জায়গাটুকুও নেই। বহু বছর ধরে উত্তরায় একটি নাট্যমঞ্চ ও নাগরিক সুবিধার জন্য চেষ্টা করে আসা হচ্ছে। কিন্তু এখনো তার কোনো নাম-নিশানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিরপুর একটা বিশাল জনবহুল জায়গা, সেখানেও এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মিরপুর ১২ নম্বর (ডিওএইচএস মিরপুর) থেকে শাহবাগ আজিজ মার্কেট পর্যন্ত একটি বইয়ের দোকান নেই।
স্কুলের পাশে কোথাও পাঠ্যপুস্তক এবং খাতা, পেনসিল, কলমের দোকান হয়তো আছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো বইয়ের দোকান গড়ে ওঠেনি। যেহেতু প্রকৌশলীরা এই শহরের নকশা প্রণয়ন করেছেন, তাঁদের কাছে মানসিক বিষয়গুলোর কোনো গুরুত্বই পায়নি। হাতিরঝিল নির্মাণকালে যেহেতু স্থপতি, টাউন প্ল্যানার এবং কিছু ভিশনারির সমাবেশ ঘটেছিল, তাই এটি একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটি সবাই মূল্যায়ন করে থাকে।
একদা বুড়িগঙ্গা থেকে ফতুল্লা হয়ে শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত একটা বিনোদনের জায়গা ছিল। এখন নৌযানের প্রবল যানজটে সেটিও অনুপস্থিত। শিশু-যুবক-তরুণ থেকে শুরু করে প্রবীণদের জন্য এই জনবহুল শহরে একটু নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এবং চিত্তবিনোদনের জন্য প্রেক্ষাগৃহ, পাঠাগার সর্বোপরি বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা অত্যাবশ্যক। বিষয়গুলো কোনো অবস্থাতেই শুধু প্রকৌশলীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যাঁরা ভিশনারি, যাঁরা এসব নিয়ে ভাবতে পারেন, তাঁদের সমন্বয়ে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতীতে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়। সুদূর গ্রামে থাকা একটি শিশুর কাছে বিস্ময়টাই স্বাভাবিক। আমাদের কাছের বড় শহর টাঙ্গাইল, সে-ও ভীষণ অনুন্নত। এমনি অনুন্নত যে ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তাটাও তখন হয়নি। ঢাকায় আসতে হতো বাসে, ময়মনসিংহ হয়ে লোকাল ট্রেন ধরে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছাতে হতো ঢাকায়। ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টার একটি ভ্রমণ। কিন্তু এই ভ্রমণেও ক্লান্তি নেই, কারণ ঢাকায় এসে গেছি।
ঢাকায় এসে উঠেছিলাম খালার বাড়িতে। খালার বাসা ছিল ক্যান্টনমেন্ট। খালু সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে। কিন্তু তখনো তিনি একটি সরকারি অফিসে কাজ করেন। সুঠাম দেহ এবং সাইকেল চালানোয় পারদর্শী। তিনি সাইকেলের সামনে বসিয়ে আমাকে সদরঘাটে নিয়ে আসেন। সদরঘাটের জনারণ্য তখন অনেকটা সুশৃঙ্খল। বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ, নৌকার বহর। আমার সেই প্রবীণ আত্মীয় নিরলস সাইকেলচালক। বাকল্যান্ড বাঁধের পাশ দিয়ে বাবুবাজার, ইসলামপুর ঘুরে সাইকেলে বসে থেকে ক্লান্ত হলে নেমে কিছু দূর হেঁটে যেতাম। চোখে আমার দুরন্ত কৌতূহল এবং সেই সঙ্গে শরীরে অদ্ভুত এক প্রাণচাঞ্চল্য। প্রথম দিন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে একটা আত্মতৃপ্তি যে ঢাকা দেখে ফেলেছি।
পরবর্তী সময়ে আরেকটু বড় হওয়ার পর যখন ঢাকায় আসি, তখন প্রথম সিনেমা দেখি সদরঘাটেরই হল শাবিস্তানে। সিনেমার মাঝখানের বিরতিতে প্রথম ঢাকার লাচ্ছি খাওয়ার আনন্দ এখনো ভুলতে পারিনি। তখনো ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন আছে, নবাবপুরের রেলগেট আছে। রেলগেট পেরিয়েই একটা বিখ্যাত মোগলাই পরোটার দোকান ছিল, সেখানে মোগলাই পরোটা খাওয়াও আমার জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা। এরপর কিছু লেখালেখি, একুশের সংকলন প্রকাশনা—এসব ব্যাপারে প্রায়ই নবাবপুর রেলগেট পেরিয়ে যেতে হতো সদরঘাটের কাছাকাছি। কারণ, সব প্রেসের কর্মকাণ্ড হতো সদরঘাটের কাছাকাছি। বইয়ের দোকানপাট, খুচরা ও পাইকারি সবই একই এলাকায়—বাংলাবাজার। কিছুটা বাবুবাজার এলাকায়।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কলকাতা থেকে প্রায় এক শ বছর পরে ঢাকায় প্রকাশনাশিল্প গড়ে ওঠে। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ নাটকটি ১৮৬০ সালে ঢাকা থেকেই প্রকাশিত হয়। তখনকার ঢাকা ছিল অবহেলিত এবং দারিদ্র্যপীড়িত এক নগরী। কিন্তু একমাত্র যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল এই সদরঘাট থেকে। ঢাকা যখন সুবে বাংলার রাজধানী ছিল, তখন যে সমৃদ্ধ ঢাকা এই সদরঘাট থেকেই তৈরি হয়েছিল; তা এক শ-দেড় শ বছরের ব্যবধানে একেবারেই জীর্ণশীর্ণ চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আবার ঢাকা একটু একটু করে গড়ে উঠতে শুরু করে। তবে তার গতি অত্যন্ত শ্লথ।
এর বহু বছর পরে ঢাকা উত্তর দিকে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ষাটের দশকে যখন আমি ঢাকায় আসি, প্রায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করি, তখন গুলিস্তান হয়ে গেছে। গুলিস্তান, তার সঙ্গে আরেকটি ছোট সিনেমা হল, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, আইসক্রিমের দোকান ইত্যাদি। এই সময়ে কিছু সুউচ্চ অট্টালিকা দেখা যায় মতিঝিলে, বিশেষ করে বিরাট একটি ঘড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা ডিআইটির দালান। তারপর ঢাকা উত্তরের দিকে বাড়তে থাকে।
এ সময়ে রেলস্টেশনটিও ফুলবাড়িয়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে কমলাপুরে। মুক্তিযুদ্ধের পরে ঢাকা দেশের রাজধানী হওয়ার পর ক্রমে ক্রমে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং উত্তরের দিকেই বড়লোকদের জন্য আবাসিক এলাকা ও নিম্নবিত্তদের জন্য মালিবাগ, বাসাবো, খিলগাঁও, মান্ডা—এই সব জায়গায় জনবসতি গড়ে ওঠে। সদরঘাট একমাত্র নৌ-চলাচল ছাড়া আর সব ধরনের প্রয়োজন থেকে বিচ্যুত হয়। বাংলাবাজারের যে বইয়ের বিশাল বাজার হতে পারত তা সংকুচিত হতে থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্য জায়গাগুলোতে বইয়ের দোকানের আরেকটি বাজার বসে গেল, অর্থাৎ বইয়ের যে চর্চা, সেটাও কমতে শুরু করল। এ সময়ে কিছু আধুনিক বইয়ের খোঁজ পাওয়া যেত নিউমার্কেটের ভেতরে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের মতো একটি বইয়ের বাজার বাংলাবাজারও হতে পারত। কিন্তু এই শহরটি নবনির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো শহর বিশারদ বা টাউন প্ল্যানার ছিল না। অনেকটা ইঞ্জিনিয়ার ও ব্রিটিশের তৈরি পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের হাত দিয়েই হয়েছিল। যেহেতু ওই সব প্রকৌশলীর মধ্যে তেমন কোনো ভিশনারি বা সুদূরপ্রসারী বাস্তব পরিকল্পনাবিদ ছিল না, তাই রাস্তাঘাট অত্যন্ত ছোট ছোট। যার ফলস্বরূপ এখনকার ঢাকায় প্রচণ্ড যানজট আমরা অনুভব করি। মাত্র ষাট-সত্তর বছর আগেও ঢাকা শহরের যে পরিকল্পনা তা অত্যন্ত অদূরদর্শিতায় গড়ে ওঠা। স্বাধীনতার পরেও যখন হু হু করে বাড়ছে ঢাকার আয়তন, তখনো পথঘাট ও নগরীর ফুসফুস বলে আখ্যায়িত ফাঁকা জায়গা এবং পার্ক—এগুলোর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
পৃথিবীর অনেক বড় শহরের কেন্দ্রস্থলেই থাকে একটা বড় নদী। নদীতে থাকে বড় ব্রিজ। কলকাতার হাওড়া ব্রিজ দেখেই অনুমান করা যায় নিচে স্টিমার চলাচলের ব্যবস্থা রেখে এই সুউচ্চ ব্রিজটি দিয়ে বিশাল অঞ্চলের যোগাযোগ তারা সম্ভবপর করে তুলেছে। অনেক বিলম্বে বুড়িগঙ্গার ওপর একাধিক ব্রিজ এখন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তত দিনে অবৈধ দখলদারেরা নদীকে সংকুচিত করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, নদীর পানিকে দূষিত করার জন্য যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সব রকম কর্মকাণ্ড অদূরদর্শী কলকারখানার মালিকেরা নিয়ে ফেলেছেন। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে অবাধ নৌ-চলাচলের কারণে বুড়িগঙ্গার কালো পানিতে এখন আর কোনো মৎস্যসম্পদ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যথার্থই বলেছেন, ঢাকার রাজধানী হওয়া উচিত ছিল সদরঘাট। আর বাংলাবাজার হতে পারত কলকাতার মতো কলেজ স্ট্রিট, যেখানে সারা বছর ক্রেতা ও পাঠকদের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক ভাঙা-গড়া।
সদরঘাট থেকে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান উঠে গেছে। সেই শূন্য জায়গাগুলোতে বইয়ের বাজার হতে পারত। কিন্তু তা না হয়ে অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে আর বাংলাবাজার থেকে ফরাশগঞ্জ হয়ে লালকুঠি-সূত্রাপুরের দিকে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে কাঁচামালের অনেক পাইকারি আড়ত বসেছে। উদ্যোগী প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা মুক্তধারার মতো বিরাট প্রকাশনা সংস্থা ‘মুক্তধারা’ গড়ে তুলেছিলেন ফরাশগঞ্জে। আড়তের চাপে তাঁকেও সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে। বইয়ের প্রতি এবং বইকেন্দ্রিক প্রকাশনা শিল্পের প্রতি কোনো সরকারই গুরুত্বারোপ করেনি। এমনকি কোভিডের ভয়াবহতার সময় যখন প্রকাশনাশিল্প প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, তখনো সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রাণপণে উদাসীন থেকেছে। ঢাকা শহরটা যদি কোনো টাউন প্ল্যানারের হাতে নির্মিত বা সংস্কারের কাজ হতো, তাহলে অবশ্যই বুড়িগঙ্গা একটা বড় বিবেচনার জায়গায় থাকত এবং শহরবাসীর প্রয়োজনটাও তারা বুঝতে পারত।
এরপর উত্তরে ঢাকার যে সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে, সেখানেও মানুষের বিনোদনের জায়গা অত্যন্ত কম। গুলশান-বনানী-ধানমন্ডি-উত্তরায় সেভাবে বইয়ের কোনো দোকান নেই। সিনেমা হল নেই, নাট্যমঞ্চ নেই, মানুষ বসে যে একটু প্রাণভরে নিশ্বাস নেবে, সেই জায়গাটুকুও নেই। বহু বছর ধরে উত্তরায় একটি নাট্যমঞ্চ ও নাগরিক সুবিধার জন্য চেষ্টা করে আসা হচ্ছে। কিন্তু এখনো তার কোনো নাম-নিশানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিরপুর একটা বিশাল জনবহুল জায়গা, সেখানেও এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মিরপুর ১২ নম্বর (ডিওএইচএস মিরপুর) থেকে শাহবাগ আজিজ মার্কেট পর্যন্ত একটি বইয়ের দোকান নেই।
স্কুলের পাশে কোথাও পাঠ্যপুস্তক এবং খাতা, পেনসিল, কলমের দোকান হয়তো আছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো বইয়ের দোকান গড়ে ওঠেনি। যেহেতু প্রকৌশলীরা এই শহরের নকশা প্রণয়ন করেছেন, তাঁদের কাছে মানসিক বিষয়গুলোর কোনো গুরুত্বই পায়নি। হাতিরঝিল নির্মাণকালে যেহেতু স্থপতি, টাউন প্ল্যানার এবং কিছু ভিশনারির সমাবেশ ঘটেছিল, তাই এটি একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটি সবাই মূল্যায়ন করে থাকে।
একদা বুড়িগঙ্গা থেকে ফতুল্লা হয়ে শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত একটা বিনোদনের জায়গা ছিল। এখন নৌযানের প্রবল যানজটে সেটিও অনুপস্থিত। শিশু-যুবক-তরুণ থেকে শুরু করে প্রবীণদের জন্য এই জনবহুল শহরে একটু নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এবং চিত্তবিনোদনের জন্য প্রেক্ষাগৃহ, পাঠাগার সর্বোপরি বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা অত্যাবশ্যক। বিষয়গুলো কোনো অবস্থাতেই শুধু প্রকৌশলীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যাঁরা ভিশনারি, যাঁরা এসব নিয়ে ভাবতে পারেন, তাঁদের সমন্বয়ে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতীতে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়।
২১ এপ্রিল ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়।
২১ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়।
২১ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়।
২১ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫