Ajker Patrika

একাত্তরের মার্চের জাতীয় ঐক্য কেন দূরে সরে গেল?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ০৯: ১৪
একাত্তরের মার্চের জাতীয় ঐক্য কেন দূরে সরে গেল?

আমাদের প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী ও মুক্তিযুদ্ধকালের রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের কাছে বেশ বেদনার অভিজ্ঞতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান জাতীয় জীবনের পরস্পরবিরোধী শক্তির অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তীকালেও একটি গোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক অধিকার অর্জনের লড়াই-সংগ্রামকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি। তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রকে নিয়ে অন্ধবিশ্বাসে বিভোর ছিল। সেই অন্ধত্ব মূলতই ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রচরিত্র সম্পর্কে তাদের আধুনিক জ্ঞানের অভাব। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব তাদের এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন এবং পূর্ব বাংলাবিরোধী মনোভাবকে তারা তুচ্ছজ্ঞান করেছিল। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা এখানেই।

তারা আধুনিক রাষ্ট্রচরিত্রকে বুঝতে মোটেও বিশ্বাসী ছিল না। ইতিহাসের অগ্রযাত্রায় এরা তাই বাধা হয়ে ওঠা ছাড়া কোনো অবদান রাখতে পারে না। কিন্তু সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে বিশ্বাসী পাকিস্তানকালের রাজনৈতিক শক্তি স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়েছে। সে কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাদের মাত্র দুজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিল। তবে সারা দেশে তাদের ভোট ২০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এটি দ্রুত কমে গিয়েছিল নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে পাকিস্তানের পূর্ব বাংলাবিরোধী আচরণের কারণে। তিন মাসের মধ্যেই  সংখ্যা অনেকটাই তলানিতে ঠেকেছিল। একাত্তরের মার্চ মাসে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি মোহমুক্তির সংখ্যা অনেক বেশি ঘটতে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক স্রোত দ্রুত সম্প্রসারিত হয়ে ওঠে। মানুষের সম্মুখে তখন পাকিস্তানকে পরিত্যাগ করা এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখার স্পৃহা জেগে ওঠে। রাজনৈতিক ঘটনার অভিজ্ঞতা এবং জাতিগত বোধ ও চিন্তার নবতর এক রূপান্তরের বিষয় হিসেবে এটি ঘটতে থাকে। সম্মুখে তখন তাদের কাছে বাঙালির নিজস্ব নেতৃত্ব আস্থার নতুন জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অগ্নিঝরা মার্চের সেই দিনগুলোতে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কান্ডারিরূপে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে উপস্থাপিত হন। তাঁর বক্তব্য ও স্বপ্ন দেখানোর ক্ষমতা মানুষকে সত্যি সত্যি উজ্জীবিত করেছিল। সে কারণেই মার্চ মাসের প্রতিটি দিন যেন জাতীয় ঐক্য গঠনের একেকটি স্তর পার করে চূড়ায় উপনীত হতে টেনে তুলে ধরেছিল। তেমন ইস্পাত কঠিন ঐক্য বাঙালির জাতীয় জীবনে এর আগে আর কখনো ঘটেনি। ২৫ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী অপারেশন সার্চলাইট নামে হত্যা শুরু করলেও জনগণ জাতীয় ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েনি কিংবা পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। বরং স্বাধীনতার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করে। প্রতিরোধের এই যাত্রা তিন সপ্তাহের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের একটি বৈধ সরকার গঠনের মাধ্যমে নতুন ধাপে উন্নীত হয়। গোটা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অল্প কিছুসংখ্যক ব্যক্তি, গোষ্ঠী পাকিস্তানিদের দখলকৃত অঞ্চলে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিলেও বেশির ভাগ মানুষই ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিংবা সীমান্ত পার হয়ে উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিয়েছিল। তাদের সামনে তখন ভরসার পারদ খুব বেশি ছিল না। যুদ্ধ করেই কেবল সেই পারদ ওপরে টেনে তুলতে হয়েছিল। লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আস্থাশীল হয়ে উঠতে থাকে। নানা প্রতিকূলতা, হতাশা, যুদ্ধবিগ্রহ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ ইত্যাদি কঠিন পর্ব অতিক্রম করে মানুষ জাতীয় ঐক্যকে আরও যেন শাণিত করে তুলেছিল। ক্রমেই এই ঐক্য পাকিস্তানিদের চারদিক থেকে আক্রমণ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এমন দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও উৎসর্গ করার মনোবৃত্তিই মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের চূড়ান্ত প্রান্তে নিয়ে আসে। ১৬ ডিসেম্বর যে বিজয় সূচিত হয়েছিল, তা ছিল বাঙালি জাতির সূচিত ঐক্যের সুফল। তখন স্বাধীনতার এই সুফল লাভের বিরুদ্ধে পরাজিতের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য।

দলগতভাবে এরা ছিল জামায়াত-এ-ইসলাম, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, পিডিপি নামক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মুষ্টিমেয় কিছু নেতা ও সমর্থক।

এদের সংখ্যা তখন গণনার মধ্যেও উল্লেখ করার মতো তেমন একটা ছিল না। নেতাদের কেউ কেউ পালিয়ে পাকিস্তানে কিংবা বিদেশে চলে যায়। কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই পরাজিত হয়ে ধরা পড়ে কিংবা পালিয়ে আত্মগোপন করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অস্বীকার করার মতো তাদের কোনো নৈতিক ক্ষমতা ছিল না। পাকিস্তানকেও তারা এই ভূখণ্ডে আর টিকিয়ে রাখতে পারেনি। ব্যর্থতার গ্লানি তাদের কতখানি জনবিচ্ছিন্ন করেছিল, সেটি তাদের দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যাওয়া থেকেই বুঝতে হবে। স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরোধিতার পরিণতি তখনই কেবল তারা অনুভব করতে সক্ষম হয়। আবার বাংলাদেশেই তাদের থাকতে হয়েছে।

 ১৯৭২ সালে রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভিন্নতা ধীরে ধীরে জন্ম নিতে থাকে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তখন একাত্তর সালের সূচিত ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্যকে ধরে রাখার গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্বের কথা অন্তর্দৃষ্টি ও রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসবোধ দিয়ে অনুভব করতে পারেনি। জাতীয় ঐক্যের বিপর্যয় ঘটলে পরিণতি কী হতে পারে, সে বিষয়ে সজাগ কেউ থাকেনি। ফলে ধীরে ধীরে জাতীয় ঐক্যের মধ্যে রাজনৈতিক ফাটল ছোট ছোট আকারে জন্ম নিতে থাকে। এখানে আবেগ, উচ্ছ্বাস, রোমান্টিকতা, হঠকারিতা, স্বার্থপরতা এবং ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনে যেসব পশ্চাৎপদ চিন্তাভাবনা ও বিশ্বাসের অবশিষ্টাংশ ক্রিয়াশীল ছিল, সেগুলো দ্রুতই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর প্রসারিত হতে থাকে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যারা সংগ্রাম, ত্যাগ এবং জীবনের অনেক ঝুঁকি নিয়েছিল, তারাই নতুন পরিস্থিতিতে কীভাবে জাতীয় ঐক্যকে রাষ্ট্র বিনির্মাণে পুনর্গঠিত করার প্রয়োজন ছিল, তা উপলব্ধি করতে পারেনি। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে জাতীয় ঐক্য গুরুত্ব হারায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটজনদের নৃশংস হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতায় যে শক্তির উত্থান ঘটে, তার চরিত্র নিরূপণ করতে অনেকেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অথচ এমন বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তির পুনরাবির্ভাব ঘটার পথ দেশে খুলে দেওয়া হলো। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী প্রধান নেতাদের কয়েকজন, মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম। এতে সমবেত হয় স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় ঐক্য এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল আদর্শবিরোধী সব পক্ষ। এটি কালক্রমে রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতি, প্রশাসন ও জনজীবনে এমন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে, তা তখন অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেনি।

বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে তখন জামায়াত আবার ফিরে আসে। রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে শাসকগোষ্ঠী এসব অপশক্তিকে রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে ফেলে। অন্যদিকে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক জাতি-রাষ্ট্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক শক্তির পুনরুত্থানকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। দেশের রাজনীতিতে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিও জাতীয় প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেনি, রাজনৈতিক চিন্তা আগের চেয়ে আরও বেশি বিভাজিত ও সংকীর্ণ হতে থাকে। গত ৫০ বছরে রাজনীতির বিভাজন পরস্পরবিরোধী দুটি ধারায় জাতিকে বিভক্ত করেছে। আশির দশকে সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে তিনটি রাজনৈতিক জোট গঠিত হয়েছিল। একটির মূল নেতৃত্ব দিয়েছিল বিএনপি, সঙ্গে ছিল জামায়াত এবং ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দল। বিপরীত দিকে অবস্থান করেছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন একটি জোট, যা পরে দুটি জোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৯১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বাম জোট গণতন্ত্র উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ কোনো কৌশল প্রণয়ন করতে পারেনি। বিপরীত দিকে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে গোপনে নির্বাচনী ঐক্য গঠন করে। ফলে তাদের অদৃশ্য ঐক্য বিজয়ের সাফল্য নিয়ে আসে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় নির্বাচিত সংসদ ও সরকার হিসেবে বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্ব প্রদান করে। আওয়ামী লীগ ও বাম শক্তি বিরোধী দলে অবস্থান করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলেও জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করার মতো তাগিদ গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনুভূত হয়নি। ১৯৯৯ সালে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে চারদলীয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জোট গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনায় সেই মেয়াদে বড় ধরনের সাফল্য দেখালেও গঠিত চারদলীয় জোটের কাছে ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়। বাংলাদেশে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের একটি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চরম ডান পন্থার সরকার গঠিত হয়। দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে হত্যা, বোমাবাজি ইত্যাদি চালিয়ে বেড়ায়। রাজনীতিতে আবারও ১৫ আগস্টের মতো ক্ষত ও বিভাজন স্থায়ী রূপ লাভ করে।

বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও তোষণ করার অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, অসাম্প্রদায়িক ধারার নেতৃত্ব প্রদান করতে গিয়ে ২০১৩-১৪ পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু নীতি ও কৌশলে পরিবর্তন ঘটায়। এর ফলে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক দায়িত্ব এই সময়ে উপেক্ষিত হয়েছে। ফলে দেশ এখন এক দিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের একটি ধারায় পরিচালিত হচ্ছে, অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ধারায় জাতীয় ঐক্য সম্পূর্ণরূপে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এর পরিণতি জাতি-রাষ্ট্রের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়।

লেখক: মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত