Ajker Patrika

বৈষম্যমুখী প্রণোদনার ধারাই কি বহাল থাকবে?

আবু তাহের খান
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ২০
বৈষম্যমুখী প্রণোদনার ধারাই কি বহাল থাকবে?

বাংলাদেশের ব্যবসা ও শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের একটি সাংগঠনিক চর্চা এই যে সুযোগ পেলেই নানা অছিলায় তাঁরা সরকারের কাছে ঋণ ও সুদ মওকুফ, নগদ ভর্তুকি, কর ও শুল্ক হ্রাস, স্বল্পসুদে সহজ শর্তের ঋণ ইত্যাদি বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা ও সুবিধা দাবি করে থাকেন। তবে তাঁদের সবার দাবিদাওয়াই যে সমহারে পূরণ হয়, এমনটি বলা যাবে না। এসব দাবিদাওয়া পূরণে সাফল্যের মাত্রা নির্ভর করে দাবি উত্থাপনকারী শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মধ্যকার কার তদবির কতটা পোক্ত বা কর্তৃপক্ষীয় মহলের সঙ্গে তাঁদের কার যোগাযোগ কতটা শক্তিশালী, তার ওপর। যেমন পরিবহন মালিকদের দাবিদাওয়া প্রায় কখনোই বিফলে যায় না, পোশাক খাতের মালিকদেরটাও না। নির্মাণ খাত হয়তো কখনো পায় আবার কখনো খানিকটা ভোগে; তবে শেষ পর্যন্ত তাদেরটাও টিকে যায়। আর যেসব সংগঠনের সঙ্গে দাবিদাওয়া পূরণকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের নিজেদেরই স্বার্থ জড়িত, তাঁদের দাবি পূরণের হার শতভাগকেও ছাড়িয়ে যায়। মোটকথা, যে উদ্যোক্তাদের সংগঠন আছে, দেশশাসনের প্রয়োজনে সরকার তাঁদের প্রতি এতটাই উদার যে জনগণের করের অর্থ থেকে তাঁদের প্রত্যেকের জন্যই কিছু না কিছু প্রণোদনা বণ্টন হয়েই যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যাঁদের কোনো সংগঠন নেই; যেমন কৃষকের, তাঁদের কী হবে? তাঁদের দাবিদাওয়া কে তুলে ধরবে? কিন্তু সংগঠনের অভাবে তাঁদের দাবিদাওয়া প্রকাশ্যে বা সরকারের কাছে তুলে ধরার কেউ না থাকলেও তাঁদের বাস্তব প্রয়োজন তো অস্বীকার করা যায় না। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব হচ্ছে কৃষকের বা অনুরূপ অসংগঠিত শ্রেণির মানুষদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর ব্যাপারে স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু গত ৫০ বছরে রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান কি এ কাজটি করেছে বা করার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কোনো আগ্রহ বা দায়বোধ করেছে? জানামতে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটিরই কৃষক সংগঠন আছে। কিন্তু সেই কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃষকের স্বার্থে কখনো কোনো দাবিদাওয়া সরকারের কাছে উত্থাপিত হয়েছে—এমনটি জানা যায় না। এর মানে, রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দল কেউই এই অসংগঠিত, অনগ্রসর শ্রেণি ও পেশার মানুষদের অর্থনৈতিক ও পেশাগত অধিকারের ব্যাপারে ন্যূনতম পর্যায়ের সহানুভূতিও পোষণ করে না। অথচ এ বিষয়ে সংবিধান রাষ্ট্রের ওপর দায় আরোপ করেছে এই বলে যে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন’ (সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১৯.১)। কিন্তু বিভিন্ন আর্থিক ও অন্যান্য প্রণোদনা বরাদ্দের ক্ষেত্রে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা বা পরিবহনমালিকদের প্রতি রাষ্ট্র যেরূপ সহানুভূতিশীল আচরণ করছে, সেই একই আচরণ কি কৃষক বা সংগঠনবিহীন সাধারণ মানুষের সঙ্গে করা হচ্ছে? আর তা না করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পক্ষপাতদুষ্ট পন্থায় আর্থিক প্রণোদনা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিলি করার মধ্য দিয়ে সমাজে দিনে দিনে বৈষম্য বৃদ্ধিকেই কি উৎসাহিত করা হচ্ছে না?

সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা করে সমাজের সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শনের উপরিউক্ত প্রেক্ষাপটটি বাস্তব চর্চায়ও কীভাবে হুবহু মিলে যায়, তা উপলব্ধি করার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত কিছু সিদ্ধান্তের বিষয় সামনে আনা যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ এবং প্রথম লকডাউন জারি করা হয় ওই বছরেরই ২৩ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত। অবধারিতভাবেই তখন প্রথম উদ্বেগ ছিল লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া আয়হীন মানুষদের জীবিকার বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, সেটি। কিন্তু লক্ষ করা গেল, সে বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নিলেও সব বিষয় ছাড়িয়ে তাদের অগ্রাধিকার তালিকার একেবারে প্রথমেই চলে আসে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা। সরকার এই প্যাকেজ ঘোষণা করে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ২৪ মার্চ এবং তখন পর্যন্ত পোশাকশিল্পকে বাড়তি প্রণোদনাদানের মতো কোনো অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি এবং সরকারের কাছে কেউ প্রণোদনা চায়ওনি। অতএব সহজেই বোঝা যায়, সরকারের পক্ষপাতটি কোন দিকে।

আবু তাহের খানএ তো গেল করোনা ঘিরে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অগ্রাধিকারক্রমের চিত্র। করোনাকালীন গত দেড় বছরে প্রণোদনা বিতরণের বাস্তব চিত্র আরও করুণ। গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধে এর সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে ব্রিটেনের উলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস আর ওসমানী দেখিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় সরকার তার প্রণোদনা তহবিল থেকে যে অর্থ বিতরণ করেছে, তার ৬৭ শতাংশই পেয়েছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থাৎ বিত্তবানেরা। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান (এসএমই) পেয়েছে ২৬ শতাংশ। আর কৃষক পেয়েছেন মাত্র ৫ শতাংশ, যা প্রায় না পাওয়ারই শামিল। কারণ, ৬৪ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই যেখানে কৃষিনির্ভর, সেখানে ওই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ বরাদ্দ আসলে হয় করুণা, না হয় শোষণ ও বঞ্চনার নতুন রূপ। তা এটি শোষণ, বঞ্চনা নাকি করুণা, তা বোঝার জন্য খুব বেশি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে কষ্টের সঙ্গে শুধু এটুকুই স্মরণ করা যেতে পারে যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ২৩ বছরের সংগ্রামের মূলমন্ত্রই ছিল কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, যার সঙ্গে বর্তমান প্রণোদনা বণ্টনের এ নীতিমালা একেবারেই মেলে না এবং তা মেলে না রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের সঙ্গেও।

দেশের রাজস্বনীতি এখন এমন যে আয় যত বেশি, কর তত কম। ঋণ বিতরণকাঠামো ও নীতিমালা এমন যে গ্রামীণ মানুষকে চরম তাচ্ছিল্যে ডুবিয়ে মূল লক্ষ্য শহরের সদা সুবিধাভোগী উদ্যোক্তা। পণ্য ও সেবার মূল্য নির্ধারণের মানদণ্ড এমন যে কৃষক ও নিম্ন আয়ের সাধারণের ব্যবহার্য ডিজেলের দাম বেশি থাকে বিত্তবানের ব্যবহার্য অকটেন বা পেট্রলের চেয়ে; আবার সয়াবিন বা বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোক্তার চেয়ে উৎপাদকের স্বার্থই দেখা হয় সর্বাগ্রে। নগদ প্রণোদনার নীতিমালা এমন যে ‘দরিদ্র’ পোশাকমালিকদের জন্য নগদ প্রণোদনার পরিমাণ বাজেট থেকে বাজেটে বাড়তে থাকলেও দাতাদের পরামর্শে মুক্তবাজার অর্থনীতির নাম করে কৃষকের ব্যবহার্য সার, বীজ ও কীটনাশকের ওপর থেকে আরও বহু আগেই ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। উদাহরণের তালিকা এভাবে যত দীর্ঘ করা যাবে, ততই প্রকট হয়ে উঠবে রাষ্ট্রের বৈষম্যমুখী দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিমালা এবং এমন উদাহরণ খুব কমই পাওয়া যাবে, যেখানে রাষ্ট্রের নীতি কৃষক, শ্রমিক বা নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের পক্ষে গেছে।

ভারতের তিনটি কৃষি আইন সম্প্রতি সে দেশের সংসদ (লোকসভা) প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে কৃষিপণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়াসংক্রান্ত। আইনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে, অর্থাৎ পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমা বহাল থাকায় ভারতের বড় ব্যবসায়ীরা এখন আর ইচ্ছামতো পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারবেন না। সম্পদের মেরুকরণ ঠেকাতে, অর্থাৎ এর বৈষম্যমুখী প্রবণতা রোধে ভারতের পুরোনো আইনটির অনুরূপ একটি আইন বাংলাদেশেও থাকা উচিত বলে মনে করি, যা বর্তমানে নেই। আর তা না থাকার কারণেই অসাধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সুযোগমতো পণ্যের বিশাল মজুত গড়ে তুলছে এবং নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যখন-তখন পণ্যমূল্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়ে রাতারাতি বিরাট অঙ্কের মুনাফা লুটে নিতে পারছে। আর এর বিপরীতে ভোক্তা ও সাধারণ মানুষ লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির চাবুকে নিয়ত খাবি খাচ্ছে এবং অসহায় চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে কোনো বাড়তি শ্রম ও বিনিয়োগ ছাড়াই একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী কীভাবে রাষ্ট্রের ভুল নীতির কারণে রাতারাতি অগাধ বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে তারা এটাও দেখছে কীভাবে মফস্বল শহরের একজন সাধারণ চাতালিও মূলত ধূর্ততাকে পুঁজি করে কোনো যোগ্যতা ও সামর্থ্য ছাড়াই রাতারাতি বিশাল ক্ষমতা ও অগাধ পুঁজির মালিক হয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন।

উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কিংবা কৃষি মন্ত্রণালয় কি এ ব্যাপারে একটি নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়ে আদৌ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে? মনে হয় না। কারণ এই রাষ্ট্র বিত্তবানের স্বার্থ সমুন্নত রাখতেই শুধু ব্যস্ত নয়, একই সঙ্গে তাদের (বিত্তবানের) স্বার্থের যাতে কোনো হানি না ঘটে, তারও নিরন্তর পাহারাদার। অতএব বিত্তবানের বা বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থের হানি ঘটিয়ে পণ্যের মজুতের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়াসংক্রান্ত কোনো আইন বাংলাদেশ শিগগিরই করবে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশে কেন ও কীভাবে বৈষম্য বাড়ছে, তার একটি অতিসংক্ষিপ্ত ইঙ্গিতধর্মী আলোচনা ওপরে টানা হলো; যার উপসংহারে একবাক্যে শুধু এটিই বলা যায়, রাষ্ট্র এখন বিত্তবানের পক্ষে। এই অবস্থার জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ নানা অনুষঙ্গের পাশাপাশি পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার একচেটিয়াত্ব ও এককেন্দ্রিকতার দায়ও হয়তো অনেকখানি রয়েছে। কিন্তু আসল সত্য এই যে এই বৈষম্য টিকিয়ে রাখা বা না রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে, দুর্ভাগ্যবশত তাদের অধিকাংশের টানটিই সমতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে নয়। এমতাবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসংক্রান্ত ভবিষ্যৎ নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনাগুলোর চরিত্র ও কাঠামো নির্ধারণে এগুলোর বিদ্যমান বৈষম্যমুখী ধারাই বহাল থাকবে, নাকি তা সাধারণের পক্ষে ঢেলে সাজানো হবে, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা বৈকি! তবে সে ক্ষেত্রে এ বিষয়টিই শুধু সামনে আনতে চাই, শোষণ ও বৈষম্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একটি সমতাপূর্ণ গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের মৌলচেতনা এবং তা এ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নির্দেশনাও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত