কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা

২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিস্ট্রুন মজল ফ্রস্টাডোত্তির। ৩৬ বছর বয়সে তিনি আইসল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এদিকে নিজের দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে দেশে ফিরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন নামিবিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সারা কুগোঙ্গেলওয়া। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ প্রায় পুরোপুরি পুরুষেরা শাসন করেছেন কিংবা করে চলেছেন। এই প্রধান স্রোতের বাইরে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার ইতিহাস নারীদেরও আছে।
ইউএন উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৮টি দেশে ৩০ জন নারী রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই নারীদের অনেকে তাঁদের উদ্ভাবনী ও কার্যকর নেতৃত্ব এবং দেশের চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর ভিন্ন ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়ার জন্য প্রশংসিত হচ্ছেন। বর্তমানে একক বা নিম্নকক্ষে সংসদ সদস্যদের মাত্র ২৭ দশমিক ২ শতাংশ নারী, যা ১৯৯৫ সালে ছিল মাত্র ১১ শতাংশ।
২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোর পর দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৪৫টি দেশের মধ্যে ৪টি দেশে নারী রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এশিয়া মহাদেশে মোট ১৪টি দেশে নারী রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। তবে বিশ্বের ১১৫টি দেশে এখনো কোনো নারী রাষ্ট্রপ্রধান হননি। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত ১৪টি দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। ১২টি দেশে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন নারী। এদিকে একমাত্র বার্বাডোজে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট—দুজনই নারী। একটি দেশে চেয়ারওম্যান অব দ্য কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স পদে এবং আরেকটি দেশে গভর্নর জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত আছেন একজন নারী।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর এই জরিপকে আরও ভাগ করে যদি মহাদেশভিত্তিক দেখা যায়, তাহলে ইউরোপের ১১টি দেশে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রিপরিষদের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরেশিয়ায় সেই সংখ্যা ১ জন। এশিয়ার দিকে তাকালে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩, দক্ষিণ আমেরিকায় ১, উত্তর আমেরিকায় ৪ এবং আফ্রিকায় ৬ জন। ইউএন উইমেনের তথ্যমতে, মাত্র ছয়টি দেশে সংসদের একক বা নিম্নকক্ষে ৫০ শতাংশ কিংবা তার বেশি নারী সদস্য রয়েছেন। আরও ২১টি দেশ রয়েছে, যেখানে নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বা তার বেশি। বিশ্বে এখনো ২১টি দেশ আছে, যেখানে সংসদের একক বা নিম্নকক্ষে নারী সদস্য ১০ শতাংশের কম। এমনকি তিনটি দেশের নিম্নকক্ষে কোনো নারী সদস্যই নেই। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ এবং সংসদ সদস্যদের মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। স্থানীয় সরকারে এই সংখ্যা ৩৪ শতাংশ।

নারী নেতৃত্ব কোথায় পরিবর্তন আনছে
১৪৫টি দেশের তথ্য অনুসারে, স্থানীয় পরামর্শমূলক সংস্থাগুলোয় নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ লাখের বেশি। শুধু দুটি দেশে স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ বা তার বেশি এবং আরও ২৬টি দেশে তা ৪০ শতাংশের বেশি। নারী নেতৃত্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। সমাজের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকর প্রভাব ফেলে। এই তথ্য উঠে এসেছে ইউএন উইমেনের গবেষণায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের গ্রামীণ পর্যায়ের পঞ্চায়েতে নারীদের নেতৃত্বাধীন এলাকায় পানীয় জলের প্রকল্পের সংখ্যা ৬২ শতাংশ বেশি ছিল পুরুষ নেতৃত্বাধীন এলাকার তুলনায়। নরওয়েতে নারীদের উপস্থিতি এবং শিশুসেবা কেন্দ্র বৃদ্ধির মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। নারীরা রাজনৈতিক নেতৃত্বে দলীয় সীমার বাইরে গিয়ে কাজ করেন। তাঁরা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, শিশুসেবা, পেনশন, লৈঙ্গিক সমতা আইন এবং নির্বাচনী সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। সংসদ ও স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে।
এবার হয়তো জাপানের পালা
সম্প্রতি নেপালের ৭৫ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসে আনুষ্ঠানিক নিয়োগের মাধ্যমে প্রথম নারী অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কারকি। তাঁর আগে দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত প্রথম নারী ছিলেন নেপালের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি। সম্প্রতি জাপানে সানায়ে তাকাইচি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) থেকে প্রার্থী হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনিই হতে পারেন জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৪ অক্টোবর এলডিপির ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৪৮টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১১৮তম। দেশটিতে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত সীমিত। সেখানে আজ পর্যন্ত কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হয়নি। সংসদেও নারী সদস্যের সংখ্যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক কম। ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত জাপানের নিম্নকক্ষ পার্লামেন্টে নারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ; যেখানে বৈশ্বিক গড় ২৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং এশীয় গড় ২২ দশমিক ১ শতাংশ। তবে জাপানে কি জনগণ নারী প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করতে প্রস্তুত? এই প্রশ্নের জবাবে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার বিশেষ উপদেষ্টা তোমোহিকো তানিগুচি বলেছিলেন, এখনই সময় জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার। গত ১০-১৫ বছরে দেশে যে সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, এটা তারই ধারাবাহিকতা।
নারা প্রিফেকচারের বাসিন্দা তাকাইচি জানান, তিনি জাপানের শান্তিপূর্ণ সংবিধানের ধারা ৯ সংশোধন করতে চান; যা দেশটিকে যুদ্ধ ঘোষণা করার অধিকার থেকে বিরত রাখতে পারে। তিনি কঠোর নীতির পক্ষে সংবিধান পরিবর্তন চান। তবে এলডিপির নেতা হলেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না। জাপানের নিম্নকক্ষের সদস্যদের ভোটে সিদ্ধান্ত হবে, কে হবেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
জাপান টাইমসে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক বিশ্লেষক জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী সানায়ে তাকাইচির প্রসঙ্গ ‘গ্লাস ক্লিফ’ ঘটনার একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে, জাপানের রাজনৈতিক সংকটের সময় তাঁকে ব্যবহার করে ব্যর্থ হলে পরে এমন বলা যেতে পারে, ‘আমরা নতুন কিছু চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সফল হইনি।’
আলোর নিচের অন্ধকার কতটা গভীর
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের এক-চতুর্থাংশ ছিলেন নারী প্রতিনিধি ও সিনেটর। কমলা হ্যারিস দেশটিতে প্রথমবার নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান এবং প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশটির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেননি কোনো নারী রাজনীতিবিদ।
অনেক সমাজে নারীদের নেতৃত্ব গ্রহণ অস্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়। এখনো নারীরা রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক সময় সহিংসতার শিকার হয়। রাজনৈতিক প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সম্পদের অভাবও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বাধা। জাপান, নেপালের মতো দেশগুলোয় নারীর ক্ষমতা কিংবা বার্বাডোজের মতো দেশের সর্বোচ্চ দুটি পর্যায়েই নারীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নারীর ক্ষমতায়নের ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। তারপরও বিশ্বব্যাপী নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের হার খুব একটা এগিয়েছে, সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিস্ট্রুন মজল ফ্রস্টাডোত্তির। ৩৬ বছর বয়সে তিনি আইসল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এদিকে নিজের দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে দেশে ফিরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন নামিবিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সারা কুগোঙ্গেলওয়া। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ প্রায় পুরোপুরি পুরুষেরা শাসন করেছেন কিংবা করে চলেছেন। এই প্রধান স্রোতের বাইরে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার ইতিহাস নারীদেরও আছে।
ইউএন উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৮টি দেশে ৩০ জন নারী রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই নারীদের অনেকে তাঁদের উদ্ভাবনী ও কার্যকর নেতৃত্ব এবং দেশের চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর ভিন্ন ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়ার জন্য প্রশংসিত হচ্ছেন। বর্তমানে একক বা নিম্নকক্ষে সংসদ সদস্যদের মাত্র ২৭ দশমিক ২ শতাংশ নারী, যা ১৯৯৫ সালে ছিল মাত্র ১১ শতাংশ।
২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোর পর দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৪৫টি দেশের মধ্যে ৪টি দেশে নারী রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এশিয়া মহাদেশে মোট ১৪টি দেশে নারী রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। তবে বিশ্বের ১১৫টি দেশে এখনো কোনো নারী রাষ্ট্রপ্রধান হননি। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত ১৪টি দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। ১২টি দেশে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন নারী। এদিকে একমাত্র বার্বাডোজে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট—দুজনই নারী। একটি দেশে চেয়ারওম্যান অব দ্য কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স পদে এবং আরেকটি দেশে গভর্নর জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত আছেন একজন নারী।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর এই জরিপকে আরও ভাগ করে যদি মহাদেশভিত্তিক দেখা যায়, তাহলে ইউরোপের ১১টি দেশে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রিপরিষদের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরেশিয়ায় সেই সংখ্যা ১ জন। এশিয়ার দিকে তাকালে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩, দক্ষিণ আমেরিকায় ১, উত্তর আমেরিকায় ৪ এবং আফ্রিকায় ৬ জন। ইউএন উইমেনের তথ্যমতে, মাত্র ছয়টি দেশে সংসদের একক বা নিম্নকক্ষে ৫০ শতাংশ কিংবা তার বেশি নারী সদস্য রয়েছেন। আরও ২১টি দেশ রয়েছে, যেখানে নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বা তার বেশি। বিশ্বে এখনো ২১টি দেশ আছে, যেখানে সংসদের একক বা নিম্নকক্ষে নারী সদস্য ১০ শতাংশের কম। এমনকি তিনটি দেশের নিম্নকক্ষে কোনো নারী সদস্যই নেই। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ এবং সংসদ সদস্যদের মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। স্থানীয় সরকারে এই সংখ্যা ৩৪ শতাংশ।

নারী নেতৃত্ব কোথায় পরিবর্তন আনছে
১৪৫টি দেশের তথ্য অনুসারে, স্থানীয় পরামর্শমূলক সংস্থাগুলোয় নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ লাখের বেশি। শুধু দুটি দেশে স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ বা তার বেশি এবং আরও ২৬টি দেশে তা ৪০ শতাংশের বেশি। নারী নেতৃত্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। সমাজের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকর প্রভাব ফেলে। এই তথ্য উঠে এসেছে ইউএন উইমেনের গবেষণায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের গ্রামীণ পর্যায়ের পঞ্চায়েতে নারীদের নেতৃত্বাধীন এলাকায় পানীয় জলের প্রকল্পের সংখ্যা ৬২ শতাংশ বেশি ছিল পুরুষ নেতৃত্বাধীন এলাকার তুলনায়। নরওয়েতে নারীদের উপস্থিতি এবং শিশুসেবা কেন্দ্র বৃদ্ধির মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। নারীরা রাজনৈতিক নেতৃত্বে দলীয় সীমার বাইরে গিয়ে কাজ করেন। তাঁরা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, শিশুসেবা, পেনশন, লৈঙ্গিক সমতা আইন এবং নির্বাচনী সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। সংসদ ও স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে।
এবার হয়তো জাপানের পালা
সম্প্রতি নেপালের ৭৫ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসে আনুষ্ঠানিক নিয়োগের মাধ্যমে প্রথম নারী অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কারকি। তাঁর আগে দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত প্রথম নারী ছিলেন নেপালের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি। সম্প্রতি জাপানে সানায়ে তাকাইচি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) থেকে প্রার্থী হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনিই হতে পারেন জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৪ অক্টোবর এলডিপির ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৪৮টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১১৮তম। দেশটিতে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত সীমিত। সেখানে আজ পর্যন্ত কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হয়নি। সংসদেও নারী সদস্যের সংখ্যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক কম। ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত জাপানের নিম্নকক্ষ পার্লামেন্টে নারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ; যেখানে বৈশ্বিক গড় ২৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং এশীয় গড় ২২ দশমিক ১ শতাংশ। তবে জাপানে কি জনগণ নারী প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করতে প্রস্তুত? এই প্রশ্নের জবাবে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার বিশেষ উপদেষ্টা তোমোহিকো তানিগুচি বলেছিলেন, এখনই সময় জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার। গত ১০-১৫ বছরে দেশে যে সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, এটা তারই ধারাবাহিকতা।
নারা প্রিফেকচারের বাসিন্দা তাকাইচি জানান, তিনি জাপানের শান্তিপূর্ণ সংবিধানের ধারা ৯ সংশোধন করতে চান; যা দেশটিকে যুদ্ধ ঘোষণা করার অধিকার থেকে বিরত রাখতে পারে। তিনি কঠোর নীতির পক্ষে সংবিধান পরিবর্তন চান। তবে এলডিপির নেতা হলেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না। জাপানের নিম্নকক্ষের সদস্যদের ভোটে সিদ্ধান্ত হবে, কে হবেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
জাপান টাইমসে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক বিশ্লেষক জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী সানায়ে তাকাইচির প্রসঙ্গ ‘গ্লাস ক্লিফ’ ঘটনার একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে, জাপানের রাজনৈতিক সংকটের সময় তাঁকে ব্যবহার করে ব্যর্থ হলে পরে এমন বলা যেতে পারে, ‘আমরা নতুন কিছু চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সফল হইনি।’
আলোর নিচের অন্ধকার কতটা গভীর
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের এক-চতুর্থাংশ ছিলেন নারী প্রতিনিধি ও সিনেটর। কমলা হ্যারিস দেশটিতে প্রথমবার নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান এবং প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশটির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেননি কোনো নারী রাজনীতিবিদ।
অনেক সমাজে নারীদের নেতৃত্ব গ্রহণ অস্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়। এখনো নারীরা রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক সময় সহিংসতার শিকার হয়। রাজনৈতিক প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সম্পদের অভাবও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বাধা। জাপান, নেপালের মতো দেশগুলোয় নারীর ক্ষমতা কিংবা বার্বাডোজের মতো দেশের সর্বোচ্চ দুটি পর্যায়েই নারীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নারীর ক্ষমতায়নের ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। তারপরও বিশ্বব্যাপী নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের হার খুব একটা এগিয়েছে, সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না।

কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়লেও কিছু কিছু পেশা এখনো প্রচলিতভাবে নারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এমনই এক চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার মেয়ে দিলরুবা হক মিলি। বাংলাদেশের প্রথম নারী বনরক্ষী তিনি।
২ দিন আগে
বাংলার নারী জাগরণের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম বেগম রোকেয়া। তিনি ছিলেন আন্দোলনকারিণী, পথপ্রদর্শিকা আর সাহসিকার আরেক নাম। যে যুগে নারীর মুখ উঁচু করে হাঁটা পর্যন্ত ‘অপমানজনক’ ভাবা হতো, সে সময় তিনি নারীর শিক্ষা, স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং অধিকারের কথা বলে গেছেন। এখনো তাঁর লেখা পড়লে মনে হয়—এ যেন আজকের সমাজ
২ দিন আগে
বাবা সহযোগিতা না করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আইনগতভাবে মায়ের তথ্য দিয়েই সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা যায়। মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সন্তানের জন্মের প্রমাণ থাকলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
২ দিন আগে
বার্লিনের বসতঘরে সেদিন এক অন্য রকম পরিবেশ। ১৩ বছরের কিশোরী জেইনা নাসার বসেছে মা-বাবার মুখোমুখি। তার একটাই দাবি বা অনুরোধ—বক্সিং করতে দিতে হবে। না, তর্ক নয়। সেদিন নাসার তার অভিভাবককে বুঝিয়েছিল, বক্সিং স্কুলে তার মনোযোগ বাড়াবে, সে কেবল মেয়েদের জিমে যাবে আর খেলাটা আসলে সম্মান ও শৃঙ্খলার নামান্তর।
২ দিন আগেমুহাম্মদ শফিকুর রহমান

কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়লেও কিছু কিছু পেশা এখনো প্রচলিতভাবে নারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এমনই এক চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার মেয়ে দিলরুবা হক মিলি। বাংলাদেশের প্রথম নারী বনরক্ষী তিনি।
এ পেশায় তাঁর পথচলা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং দেশের নারীদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
প্রকৃতিপ্রেম থেকে স্বপ্নের শুরু
২০১৬ সাল মিলির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া বছর। সে বছর বনরক্ষী হিসেবে যোগ দেন তিনি। তবে এই পেশায় প্রবেশের গল্প মোটেও সহজ বা পরিকল্পিত ছিল না। ছোটবেলা থেকে মিলির মধ্যে ছিল প্রকৃতি, গাছপালা আর বনের প্রতি একধরনের টান। বরিশালের মানুষ হিসেবে শৈশব থেকে তিনি দেখেছেন নদীর তীর, ঘন সবুজ গাছ আর প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য। পিরোজপুরের কাউখালীতে স্কুল ও কলেজ পর্বের পড়াশোনা শেষ করে তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
আকস্মিক সুযোগ
পড়াশোনা শেষ করার পর যখন স্থায়ী একটি চাকরির ভাবনা মাথায় ঘুরছিল, তখনই চোখে পড়ে বনরক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। প্রকৃতির সঙ্গে কাজ করার এক সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা মিলিকে সেই পদে আবেদন করতে উৎসাহিত করে। যদিও তখনো তিনি জানতেন না, এই পদের ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম নারী।
প্রশিক্ষণেই প্রথম বাধা
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় মিলি সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। তবে তাঁর জন্য আসল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল প্রশিক্ষণপর্বে। রাজশাহীর পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে প্রথম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিতে চাইছিলেন না। তাঁদের ধারণা ছিল, ‘মেয়েরা এ ধরনের চাকরি করে না’। কাগজপত্র দেখানোর পর তাঁরা অবাক হন এবং তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দেন।
শারীরিক ও মানসিক সংগ্রাম
প্রশিক্ষণপর্বে শুরু হয় বাস্তব লড়াই। শারীরিক, মানসিক ও পরিবেশগত প্রতিটি ধাপেই তাঁকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে। মিলি বলেন, ‘প্রথম দিকে নিজের মধ্যেও ভয় ছিল, পারব তো? তারপর বুঝলাম, প্রতিকূলতাকে পাত্তা দিলে চলবে না। একবার সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলে অনেক কিছুই সম্ভব।’
প্রশিক্ষণপর্বে দৃঢ়তা, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাঁকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পুরুষ সহপ্রশিক্ষণার্থীরা শুরুতে অবাক হলেও পরে তাঁকে সহায়তা করতে শুরু করেন।
আজকের এই অবস্থানে আসতে মিলিকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু কণ্টকাকীর্ণ পথ। কিন্তু ধৈর্য, নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাস তাঁকে দেশের প্রথম নারী বনরক্ষী হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে।
মিরপুর উদ্ভিদ উদ্যানে দায়িত্ব
২০১৬ সালে ঢাকায় বনরক্ষী হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে কর্মস্থল তাঁর দ্বিতীয়
ঘর হয়ে ওঠে। বর্তমানে তিনি কর্মরত রয়েছেন মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে; যা একদিকে দেশের সবচেয়ে বড় উদ্ভিদ সংরক্ষণাগার, অন্যদিকে ফুল, গাছ ও বিরল উদ্ভিদের দুর্লভ সংগ্রহশালা। তিনি বলেন, ‘উদ্ভিদ উদ্যানটা আমার কাছে বড় একটা জাদুঘরের মতো। প্রতিদিন এই উদ্ভিদ উদ্যানে দায়িত্ব পালন করতে এসে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকতে পারি, এটাই আমার বড় পাওয়া।’
নিরাপত্তা নিশ্চিতের কঠিন কাজ
একজন বনরক্ষীর দায়িত্ব যেমন কঠিন, তেমনি চ্যালেঞ্জিং। সকাল থেকে পুরো উদ্যানে ঘুরে ঘুরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। একসময় উদ্যানে ছিল অপরাধীদের আনাগোনা—ছিনতাই, হয়রানির মতো ঘটনা ঘটত প্রতিদিন। মিলি এবং তাঁর সহকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে পরিবেশটা নিরাপদ করে তোলেন। ধীরে ধীরে দর্শনার্থীদের আস্থা ফিরে আসে, সংখ্যা বাড়ে; সেই সঙ্গে রাজস্বও।
সহকর্মীদের স্বীকৃতি
এ ধরনের কাজ নারীদের অনুকূলে নয় বলে সবার ধারণা। কিন্তু মিলি সেসবে কখনো গুরুত্ব দেননি; বরং নিজের কর্মদক্ষতা দিয়ে সবার মন জয় করেছেন। তাঁর সহকর্মী আমিনুল্লাহ খন্দকার বলেন, ‘মিলি আমাদের একমাত্র নারী বনরক্ষী। কিন্তু সাহস আর নেতৃত্বদানে তিনি কারও চেয়ে কম নন। যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একদম নির্ভয়ে।’
সহকর্মী এখলাসুর রহমান ও মামুনুর রশীদেরাও মিলির আন্তরিকতা, সাহস ও দায়িত্ববোধের প্রশংসা করেন।
সমতার দৃঢ় বিশ্বাস
আজকের এই অবস্থানে আসতে মিলিকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু কণ্টকাকীর্ণ পথ। কিন্তু ধৈর্য, নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাস তাঁকে দেশের প্রথম নারী বনরক্ষী হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর সাফল্যের গল্প ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাখো মানুষের ভালোবাসা ও অভিনন্দন পেয়েছেন তিনি। দিলরুবা হক মিলি বিশ্বাস করেন, নারী ও পুরুষ সমান। মানুষের সামর্থ্যই আসল। তিনি বলেন, ‘যে কাজটি আনন্দ নিয়ে করা যায়, সেটিই করা উচিত। কাজের ক্ষেত্রে লৈঙ্গিকভেদে কোনো পার্থক্য হওয়া উচিত নয়।’
সাহসী নারীদের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে—এমনটাই আশা করেন দিলরুবা হক মিলি। তিনি এখন কেবল একজন বনরক্ষী নন; সাহসেরও প্রতীক।

কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়লেও কিছু কিছু পেশা এখনো প্রচলিতভাবে নারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এমনই এক চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার মেয়ে দিলরুবা হক মিলি। বাংলাদেশের প্রথম নারী বনরক্ষী তিনি।
এ পেশায় তাঁর পথচলা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং দেশের নারীদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
প্রকৃতিপ্রেম থেকে স্বপ্নের শুরু
২০১৬ সাল মিলির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া বছর। সে বছর বনরক্ষী হিসেবে যোগ দেন তিনি। তবে এই পেশায় প্রবেশের গল্প মোটেও সহজ বা পরিকল্পিত ছিল না। ছোটবেলা থেকে মিলির মধ্যে ছিল প্রকৃতি, গাছপালা আর বনের প্রতি একধরনের টান। বরিশালের মানুষ হিসেবে শৈশব থেকে তিনি দেখেছেন নদীর তীর, ঘন সবুজ গাছ আর প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য। পিরোজপুরের কাউখালীতে স্কুল ও কলেজ পর্বের পড়াশোনা শেষ করে তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
আকস্মিক সুযোগ
পড়াশোনা শেষ করার পর যখন স্থায়ী একটি চাকরির ভাবনা মাথায় ঘুরছিল, তখনই চোখে পড়ে বনরক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। প্রকৃতির সঙ্গে কাজ করার এক সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা মিলিকে সেই পদে আবেদন করতে উৎসাহিত করে। যদিও তখনো তিনি জানতেন না, এই পদের ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম নারী।
প্রশিক্ষণেই প্রথম বাধা
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় মিলি সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। তবে তাঁর জন্য আসল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল প্রশিক্ষণপর্বে। রাজশাহীর পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে প্রথম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিতে চাইছিলেন না। তাঁদের ধারণা ছিল, ‘মেয়েরা এ ধরনের চাকরি করে না’। কাগজপত্র দেখানোর পর তাঁরা অবাক হন এবং তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দেন।
শারীরিক ও মানসিক সংগ্রাম
প্রশিক্ষণপর্বে শুরু হয় বাস্তব লড়াই। শারীরিক, মানসিক ও পরিবেশগত প্রতিটি ধাপেই তাঁকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে। মিলি বলেন, ‘প্রথম দিকে নিজের মধ্যেও ভয় ছিল, পারব তো? তারপর বুঝলাম, প্রতিকূলতাকে পাত্তা দিলে চলবে না। একবার সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলে অনেক কিছুই সম্ভব।’
প্রশিক্ষণপর্বে দৃঢ়তা, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাঁকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পুরুষ সহপ্রশিক্ষণার্থীরা শুরুতে অবাক হলেও পরে তাঁকে সহায়তা করতে শুরু করেন।
আজকের এই অবস্থানে আসতে মিলিকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু কণ্টকাকীর্ণ পথ। কিন্তু ধৈর্য, নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাস তাঁকে দেশের প্রথম নারী বনরক্ষী হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে।
মিরপুর উদ্ভিদ উদ্যানে দায়িত্ব
২০১৬ সালে ঢাকায় বনরক্ষী হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে কর্মস্থল তাঁর দ্বিতীয়
ঘর হয়ে ওঠে। বর্তমানে তিনি কর্মরত রয়েছেন মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে; যা একদিকে দেশের সবচেয়ে বড় উদ্ভিদ সংরক্ষণাগার, অন্যদিকে ফুল, গাছ ও বিরল উদ্ভিদের দুর্লভ সংগ্রহশালা। তিনি বলেন, ‘উদ্ভিদ উদ্যানটা আমার কাছে বড় একটা জাদুঘরের মতো। প্রতিদিন এই উদ্ভিদ উদ্যানে দায়িত্ব পালন করতে এসে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকতে পারি, এটাই আমার বড় পাওয়া।’
নিরাপত্তা নিশ্চিতের কঠিন কাজ
একজন বনরক্ষীর দায়িত্ব যেমন কঠিন, তেমনি চ্যালেঞ্জিং। সকাল থেকে পুরো উদ্যানে ঘুরে ঘুরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। একসময় উদ্যানে ছিল অপরাধীদের আনাগোনা—ছিনতাই, হয়রানির মতো ঘটনা ঘটত প্রতিদিন। মিলি এবং তাঁর সহকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে পরিবেশটা নিরাপদ করে তোলেন। ধীরে ধীরে দর্শনার্থীদের আস্থা ফিরে আসে, সংখ্যা বাড়ে; সেই সঙ্গে রাজস্বও।
সহকর্মীদের স্বীকৃতি
এ ধরনের কাজ নারীদের অনুকূলে নয় বলে সবার ধারণা। কিন্তু মিলি সেসবে কখনো গুরুত্ব দেননি; বরং নিজের কর্মদক্ষতা দিয়ে সবার মন জয় করেছেন। তাঁর সহকর্মী আমিনুল্লাহ খন্দকার বলেন, ‘মিলি আমাদের একমাত্র নারী বনরক্ষী। কিন্তু সাহস আর নেতৃত্বদানে তিনি কারও চেয়ে কম নন। যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একদম নির্ভয়ে।’
সহকর্মী এখলাসুর রহমান ও মামুনুর রশীদেরাও মিলির আন্তরিকতা, সাহস ও দায়িত্ববোধের প্রশংসা করেন।
সমতার দৃঢ় বিশ্বাস
আজকের এই অবস্থানে আসতে মিলিকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু কণ্টকাকীর্ণ পথ। কিন্তু ধৈর্য, নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাস তাঁকে দেশের প্রথম নারী বনরক্ষী হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর সাফল্যের গল্প ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাখো মানুষের ভালোবাসা ও অভিনন্দন পেয়েছেন তিনি। দিলরুবা হক মিলি বিশ্বাস করেন, নারী ও পুরুষ সমান। মানুষের সামর্থ্যই আসল। তিনি বলেন, ‘যে কাজটি আনন্দ নিয়ে করা যায়, সেটিই করা উচিত। কাজের ক্ষেত্রে লৈঙ্গিকভেদে কোনো পার্থক্য হওয়া উচিত নয়।’
সাহসী নারীদের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে—এমনটাই আশা করেন দিলরুবা হক মিলি। তিনি এখন কেবল একজন বনরক্ষী নন; সাহসেরও প্রতীক।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিস্ট্রুন মজল ফ্রস্টাডোত্তির। ৩৬ বছর বয়সে তিনি আইসল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এদিকে নিজের দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে দেশে ফিরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন নামিবিয়ার সাবেক
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলার নারী জাগরণের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম বেগম রোকেয়া। তিনি ছিলেন আন্দোলনকারিণী, পথপ্রদর্শিকা আর সাহসিকার আরেক নাম। যে যুগে নারীর মুখ উঁচু করে হাঁটা পর্যন্ত ‘অপমানজনক’ ভাবা হতো, সে সময় তিনি নারীর শিক্ষা, স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং অধিকারের কথা বলে গেছেন। এখনো তাঁর লেখা পড়লে মনে হয়—এ যেন আজকের সমাজ
২ দিন আগে
বাবা সহযোগিতা না করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আইনগতভাবে মায়ের তথ্য দিয়েই সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা যায়। মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সন্তানের জন্মের প্রমাণ থাকলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
২ দিন আগে
বার্লিনের বসতঘরে সেদিন এক অন্য রকম পরিবেশ। ১৩ বছরের কিশোরী জেইনা নাসার বসেছে মা-বাবার মুখোমুখি। তার একটাই দাবি বা অনুরোধ—বক্সিং করতে দিতে হবে। না, তর্ক নয়। সেদিন নাসার তার অভিভাবককে বুঝিয়েছিল, বক্সিং স্কুলে তার মনোযোগ বাড়াবে, সে কেবল মেয়েদের জিমে যাবে আর খেলাটা আসলে সম্মান ও শৃঙ্খলার নামান্তর।
২ দিন আগেবেগম রোকেয়া
নুসরাত রুষা

বাংলার নারী জাগরণের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম বেগম রোকেয়া। তিনি ছিলেন আন্দোলনকারিণী, পথপ্রদর্শিকা আর সাহসিকার আরেক নাম। যে যুগে নারীর মুখ উঁচু করে হাঁটা পর্যন্ত ‘অপমানজনক’ ভাবা হতো, সে সময় তিনি নারীর শিক্ষা, স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং অধিকারের কথা বলে গেছেন। এখনো তাঁর লেখা পড়লে মনে হয়—এ যেন আজকের সমাজেরই কথা।
বেগম রোকেয়ার বড় শক্তি ছিল তাঁর মন। আর তাঁর বড় সহায় ছিলেন স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন। উনিশ শতকের শেষে—একজন পুরুষের পক্ষে নিজের স্ত্রীকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করা, ইংরেজি শেখানো কিংবা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকার সমর্থন দেওয়া ছিল বিরল ঘটনা। বেগম রোকেয়ার ভাষায়, ‘আমার স্বামী আমাকে ‘সহধর্মিণী’ হিসেবে বিবেচনা করতেন—দাসী হিসেবে নয়।’ এই একটি বাক্যে বোঝা যায়, বেগম রোকেয়ার পথ কতটা আলোয় ভরা ছিল, আর কতটা সম্মানের ওপর দাঁড়ানো ছিল।
হাসির বিষয়, আমরা যেটিকে ‘মডার্ন’ বলে গর্ব করি, সেই আধুনিক যুগে এসে সম্পর্কের ভিত্তি যেন সংকুচিত হয়ে গেছে। ডিগ্রি, চাকরি, প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দেশের হাজারো তরুণের মানসিকতা এখনো প্রাচীন। তাঁদের স্ত্রী পড়াশোনা করতে চাইলে বলেন, ‘তোমার এত পড়াশোনার কী দরকার?’ চাকরি করতে চাওয়ার বেলাতেও তাঁদের অভিব্যক্তি একই থাকে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া—সবই আছে, কিন্তু নারীর স্বাধীনতায় সমর্থন দেওয়ার যে মানবিকতা, তা নেই।
যে যুগে বেগম রোকেয়া বেঁচে ছিলেন, সে যুগ ছিল নারীদের জন্য অন্ধকার। সেই সময় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষাহীনতা হলো নারীর মূল শত্রু।’ তিনি বিশ্বাস করতেন, জ্ঞানই পারে নারীকে মুক্ত করতে। তাই সাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যুর পর তিনি নিজের জমানো টাকা দিয়ে খুললেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল। মেয়েদের পড়াশোনা শেখানোর জন্য তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে অভিভাবকদের রাজি করাতেন। যাঁরা বলতেন, ‘মেয়েরা লেখাপড়া করলে নষ্ট হয়ে যাবে’, তাঁদের মুখের ওপর বেগম রোকেয়া বলতেন, ‘মেয়ে নষ্ট হয় অজ্ঞতায়, শিক্ষায় নয়।’
কিন্তু এখন? নারীরা যে যুগে মহাকাশে যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে তো বটেই, পড়াচ্ছেও, নেতৃত্ব দিচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে, সে যুগেও একদল মানুষ বেগম রোকেয়ার নামে বেষ্টনী টেনে দেয়। তাদের কাছে রোকেয়া মানে ‘ধর্মদ্রোহী’, ‘নারীবাদের বিষ’। সামাজিক অগ্রগতির দাবিতে মুখ খুললেই তারা তেড়ে আসে। যেন নারীর উন্নতি মানেই সমাজের ভাঙন, আর নারীর স্বাধীনতা মানেই পুরুষের ক্ষতি।
বস্তুত, আমাদের সামাজিক মানসিকতার এই পশ্চাৎগতি গভীরভাবে চিন্তার বিষয়। বেগম রোকেয়া যখন নারীর শিক্ষার দাবি করেছিলেন, তখন তা ছিল মাত্র কিছু মানুষের রাগের বিষয়; এখন, শত বছর পরে, সেই রাগই যেন আরও তীব্র হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীর স্বাধীনতা নিয়ে কথা বললেই মন্তব্যের ঘরে নোংরা শব্দের বন্যা। যেন নারী মানুষ নয়, তার ইচ্ছা, অনুভূতি বা স্বপ্ন থাকার কোনো অধিকার নেই।
বেগম রোকেয়া যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তবে নিশ্চয় বিস্মিত হতেন। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন—শিক্ষা বাড়বে, সমাজ এগোবে, মানুষ পরিণত হবে আরও উন্নত চিন্তার স্তরে। কিন্তু কী ভীষণ বিপরীত ছবি আমরা দেখি। বেগম রোকেয়া যে সমাজকে আলোর দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন, আমরা কি আজ সেটিকে পিছিয়ে দিচ্ছি?
বেগম রোকেয়া আমাদের শেখান, নারীর অগ্রগতি কোনো ‘ফ্যাশন’ নয়, কোনো ‘বিদ্রোহ’ নয়—এটা সমাজের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। পুরুষের সমর্থন ছাড়া নারী এগোতে পারে না, আর নারীকে দমিয়ে রেখে পুরুষও এগোতে পারে না।
বেগম রোকেয়া একা যুদ্ধ করে দেখিয়েছিলেন—একজন আলোকিত পুরুষ পাশে থাকলে নারী ভেঙে দিতে পারে অজস্র সীমাবদ্ধতা। সেই সমর্থন, সেই মানবিকতা, আমাদের আজ বেশি দরকার।
লেখক: অধিকারকর্মী

বাংলার নারী জাগরণের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম বেগম রোকেয়া। তিনি ছিলেন আন্দোলনকারিণী, পথপ্রদর্শিকা আর সাহসিকার আরেক নাম। যে যুগে নারীর মুখ উঁচু করে হাঁটা পর্যন্ত ‘অপমানজনক’ ভাবা হতো, সে সময় তিনি নারীর শিক্ষা, স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং অধিকারের কথা বলে গেছেন। এখনো তাঁর লেখা পড়লে মনে হয়—এ যেন আজকের সমাজেরই কথা।
বেগম রোকেয়ার বড় শক্তি ছিল তাঁর মন। আর তাঁর বড় সহায় ছিলেন স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন। উনিশ শতকের শেষে—একজন পুরুষের পক্ষে নিজের স্ত্রীকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করা, ইংরেজি শেখানো কিংবা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকার সমর্থন দেওয়া ছিল বিরল ঘটনা। বেগম রোকেয়ার ভাষায়, ‘আমার স্বামী আমাকে ‘সহধর্মিণী’ হিসেবে বিবেচনা করতেন—দাসী হিসেবে নয়।’ এই একটি বাক্যে বোঝা যায়, বেগম রোকেয়ার পথ কতটা আলোয় ভরা ছিল, আর কতটা সম্মানের ওপর দাঁড়ানো ছিল।
হাসির বিষয়, আমরা যেটিকে ‘মডার্ন’ বলে গর্ব করি, সেই আধুনিক যুগে এসে সম্পর্কের ভিত্তি যেন সংকুচিত হয়ে গেছে। ডিগ্রি, চাকরি, প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দেশের হাজারো তরুণের মানসিকতা এখনো প্রাচীন। তাঁদের স্ত্রী পড়াশোনা করতে চাইলে বলেন, ‘তোমার এত পড়াশোনার কী দরকার?’ চাকরি করতে চাওয়ার বেলাতেও তাঁদের অভিব্যক্তি একই থাকে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া—সবই আছে, কিন্তু নারীর স্বাধীনতায় সমর্থন দেওয়ার যে মানবিকতা, তা নেই।
যে যুগে বেগম রোকেয়া বেঁচে ছিলেন, সে যুগ ছিল নারীদের জন্য অন্ধকার। সেই সময় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষাহীনতা হলো নারীর মূল শত্রু।’ তিনি বিশ্বাস করতেন, জ্ঞানই পারে নারীকে মুক্ত করতে। তাই সাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যুর পর তিনি নিজের জমানো টাকা দিয়ে খুললেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল। মেয়েদের পড়াশোনা শেখানোর জন্য তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে অভিভাবকদের রাজি করাতেন। যাঁরা বলতেন, ‘মেয়েরা লেখাপড়া করলে নষ্ট হয়ে যাবে’, তাঁদের মুখের ওপর বেগম রোকেয়া বলতেন, ‘মেয়ে নষ্ট হয় অজ্ঞতায়, শিক্ষায় নয়।’
কিন্তু এখন? নারীরা যে যুগে মহাকাশে যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে তো বটেই, পড়াচ্ছেও, নেতৃত্ব দিচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে, সে যুগেও একদল মানুষ বেগম রোকেয়ার নামে বেষ্টনী টেনে দেয়। তাদের কাছে রোকেয়া মানে ‘ধর্মদ্রোহী’, ‘নারীবাদের বিষ’। সামাজিক অগ্রগতির দাবিতে মুখ খুললেই তারা তেড়ে আসে। যেন নারীর উন্নতি মানেই সমাজের ভাঙন, আর নারীর স্বাধীনতা মানেই পুরুষের ক্ষতি।
বস্তুত, আমাদের সামাজিক মানসিকতার এই পশ্চাৎগতি গভীরভাবে চিন্তার বিষয়। বেগম রোকেয়া যখন নারীর শিক্ষার দাবি করেছিলেন, তখন তা ছিল মাত্র কিছু মানুষের রাগের বিষয়; এখন, শত বছর পরে, সেই রাগই যেন আরও তীব্র হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীর স্বাধীনতা নিয়ে কথা বললেই মন্তব্যের ঘরে নোংরা শব্দের বন্যা। যেন নারী মানুষ নয়, তার ইচ্ছা, অনুভূতি বা স্বপ্ন থাকার কোনো অধিকার নেই।
বেগম রোকেয়া যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তবে নিশ্চয় বিস্মিত হতেন। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন—শিক্ষা বাড়বে, সমাজ এগোবে, মানুষ পরিণত হবে আরও উন্নত চিন্তার স্তরে। কিন্তু কী ভীষণ বিপরীত ছবি আমরা দেখি। বেগম রোকেয়া যে সমাজকে আলোর দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন, আমরা কি আজ সেটিকে পিছিয়ে দিচ্ছি?
বেগম রোকেয়া আমাদের শেখান, নারীর অগ্রগতি কোনো ‘ফ্যাশন’ নয়, কোনো ‘বিদ্রোহ’ নয়—এটা সমাজের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। পুরুষের সমর্থন ছাড়া নারী এগোতে পারে না, আর নারীকে দমিয়ে রেখে পুরুষও এগোতে পারে না।
বেগম রোকেয়া একা যুদ্ধ করে দেখিয়েছিলেন—একজন আলোকিত পুরুষ পাশে থাকলে নারী ভেঙে দিতে পারে অজস্র সীমাবদ্ধতা। সেই সমর্থন, সেই মানবিকতা, আমাদের আজ বেশি দরকার।
লেখক: অধিকারকর্মী

২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিস্ট্রুন মজল ফ্রস্টাডোত্তির। ৩৬ বছর বয়সে তিনি আইসল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এদিকে নিজের দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে দেশে ফিরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন নামিবিয়ার সাবেক
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়লেও কিছু কিছু পেশা এখনো প্রচলিতভাবে নারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এমনই এক চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার মেয়ে দিলরুবা হক মিলি। বাংলাদেশের প্রথম নারী বনরক্ষী তিনি।
২ দিন আগে
বাবা সহযোগিতা না করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আইনগতভাবে মায়ের তথ্য দিয়েই সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা যায়। মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সন্তানের জন্মের প্রমাণ থাকলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
২ দিন আগে
বার্লিনের বসতঘরে সেদিন এক অন্য রকম পরিবেশ। ১৩ বছরের কিশোরী জেইনা নাসার বসেছে মা-বাবার মুখোমুখি। তার একটাই দাবি বা অনুরোধ—বক্সিং করতে দিতে হবে। না, তর্ক নয়। সেদিন নাসার তার অভিভাবককে বুঝিয়েছিল, বক্সিং স্কুলে তার মনোযোগ বাড়াবে, সে কেবল মেয়েদের জিমে যাবে আর খেলাটা আসলে সম্মান ও শৃঙ্খলার নামান্তর।
২ দিন আগেফিচার ডেস্ক

প্রশ্ন: সন্তানের জন্মনিবন্ধন দরকার স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। কিন্তু তার বাবার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে। এই অবস্থায় জন্মনিবন্ধন করতে গেলে শুধু মায়ের আইডি কার্ড বা জন্মনিবন্ধন দিয়ে কি সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা যাবে।
শবনম মনিরা, কুড়িগ্রাম
উত্তর: বাংলাদেশে সন্তানের জন্মনিবন্ধন মায়ের তথ্য দিয়েই করা সম্ভব, বিশেষ করে যখন বাবা কোনো নথি দিতে অনিচ্ছুক বা যোগাযোগের বাইরে থাকেন।
জন্মনিবন্ধন আইন ও স্থানীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, সন্তান যাঁর তত্ত্বাবধানে থাকে অথবা যিনি ‘অভিভাবক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; তিনি জন্মনিবন্ধনের আবেদন করতে পারেন। বাবা অনুপস্থিত বা সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানালে মায়ের তথ্য দিয়েই জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন করা যায়। এ ক্ষেত্রে বাবার তথ্য ‘আননোন’ বা ‘নট অ্যাপ্লিকেবল’ হিসেবে দেখানো যেতে পারে। এটি ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন কর্মকর্তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।
বাবা সহযোগিতা না করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আইনগতভাবে মায়ের তথ্য দিয়েই সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা যায়। মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সন্তানের জন্মের প্রমাণ থাকলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
জন্মনিবন্ধন করতে বাবার এনআইডি বা তথ্য বাধ্যতামূলক নয়, বিশেষ করে যখন মায়ের কাছে তা পাওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে স্কুলে ভর্তি, চিকিৎসা, পাসপোর্ট ইত্যাদি করাতে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না। কারণ, সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মা-ই স্বীকৃত। নিবন্ধনের সময় আপনি উল্লেখ করতে পারেন, বাবা অনুপস্থিত বা যোগাযোগের অযোগ্য। কর্মকর্তারা বিষয়টি বুঝে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।
আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন অফিসে গিয়ে সরাসরি আবেদন করা যায়। অথবা অনলাইনেও আবেদন করা যায় এই ঠিকানায়: bdris.gov.bd

প্রশ্ন: সন্তানের জন্মনিবন্ধন দরকার স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। কিন্তু তার বাবার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে। এই অবস্থায় জন্মনিবন্ধন করতে গেলে শুধু মায়ের আইডি কার্ড বা জন্মনিবন্ধন দিয়ে কি সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা যাবে।
শবনম মনিরা, কুড়িগ্রাম
উত্তর: বাংলাদেশে সন্তানের জন্মনিবন্ধন মায়ের তথ্য দিয়েই করা সম্ভব, বিশেষ করে যখন বাবা কোনো নথি দিতে অনিচ্ছুক বা যোগাযোগের বাইরে থাকেন।
জন্মনিবন্ধন আইন ও স্থানীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, সন্তান যাঁর তত্ত্বাবধানে থাকে অথবা যিনি ‘অভিভাবক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; তিনি জন্মনিবন্ধনের আবেদন করতে পারেন। বাবা অনুপস্থিত বা সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানালে মায়ের তথ্য দিয়েই জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন করা যায়। এ ক্ষেত্রে বাবার তথ্য ‘আননোন’ বা ‘নট অ্যাপ্লিকেবল’ হিসেবে দেখানো যেতে পারে। এটি ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন কর্মকর্তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।
বাবা সহযোগিতা না করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আইনগতভাবে মায়ের তথ্য দিয়েই সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা যায়। মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সন্তানের জন্মের প্রমাণ থাকলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
জন্মনিবন্ধন করতে বাবার এনআইডি বা তথ্য বাধ্যতামূলক নয়, বিশেষ করে যখন মায়ের কাছে তা পাওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে স্কুলে ভর্তি, চিকিৎসা, পাসপোর্ট ইত্যাদি করাতে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না। কারণ, সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মা-ই স্বীকৃত। নিবন্ধনের সময় আপনি উল্লেখ করতে পারেন, বাবা অনুপস্থিত বা যোগাযোগের অযোগ্য। কর্মকর্তারা বিষয়টি বুঝে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।
আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন অফিসে গিয়ে সরাসরি আবেদন করা যায়। অথবা অনলাইনেও আবেদন করা যায় এই ঠিকানায়: bdris.gov.bd

২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিস্ট্রুন মজল ফ্রস্টাডোত্তির। ৩৬ বছর বয়সে তিনি আইসল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এদিকে নিজের দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে দেশে ফিরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন নামিবিয়ার সাবেক
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়লেও কিছু কিছু পেশা এখনো প্রচলিতভাবে নারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এমনই এক চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার মেয়ে দিলরুবা হক মিলি। বাংলাদেশের প্রথম নারী বনরক্ষী তিনি।
২ দিন আগে
বাংলার নারী জাগরণের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম বেগম রোকেয়া। তিনি ছিলেন আন্দোলনকারিণী, পথপ্রদর্শিকা আর সাহসিকার আরেক নাম। যে যুগে নারীর মুখ উঁচু করে হাঁটা পর্যন্ত ‘অপমানজনক’ ভাবা হতো, সে সময় তিনি নারীর শিক্ষা, স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং অধিকারের কথা বলে গেছেন। এখনো তাঁর লেখা পড়লে মনে হয়—এ যেন আজকের সমাজ
২ দিন আগে
বার্লিনের বসতঘরে সেদিন এক অন্য রকম পরিবেশ। ১৩ বছরের কিশোরী জেইনা নাসার বসেছে মা-বাবার মুখোমুখি। তার একটাই দাবি বা অনুরোধ—বক্সিং করতে দিতে হবে। না, তর্ক নয়। সেদিন নাসার তার অভিভাবককে বুঝিয়েছিল, বক্সিং স্কুলে তার মনোযোগ বাড়াবে, সে কেবল মেয়েদের জিমে যাবে আর খেলাটা আসলে সম্মান ও শৃঙ্খলার নামান্তর।
২ দিন আগেফিচার ডেস্ক

বার্লিনের বসতঘরে সেদিন এক অন্য রকম পরিবেশ। ১৩ বছরের কিশোরী জেইনা নাসার বসেছে মা-বাবার মুখোমুখি। তার একটাই দাবি বা অনুরোধ—বক্সিং করতে দিতে হবে। না, তর্ক নয়। সেদিন নাসার তার অভিভাবককে বুঝিয়েছিল, বক্সিং স্কুলে তার মনোযোগ বাড়াবে, সে কেবল মেয়েদের জিমে যাবে আর খেলাটা আসলে সম্মান ও শৃঙ্খলার নামান্তর। কথা শুনে মা-বাবা মুগ্ধ হলেন, রাজিও হয়ে গেলেন। কিন্তু জেইনা জানত, এই রাজি করানোটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে সহজ কাজ। খেলে যাওয়াটাই বরং কঠিন।
ইউটিউবে নারী মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ভিডিও দেখেই তার প্রতি এক তীব্র আকর্ষণ জন্মেছিল জার্মানিতে জন্ম নেওয়া লেবানিজ বংশোদ্ভূত এই কিশোরীর। প্যাডের ওপর ঘুষির শব্দ, গতি আর প্রতিটি চালের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তি তাকে টানত। ২৭ বছর বয়সী জেইনা বলেন, ‘আমি ওটা দেখতাম আর দেখতাম। আমার ভেতরে এক বোধ জন্মাল, এটাই আমি চাই।’
মুসলিম হিসেবে হিজাব ছিল জেইনা নাসারের পরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু স্থানীয় জিমে যোগ দেওয়ার পর তিনি বুঝলেন, তাঁর আসল লড়াইটা অপেক্ষা করছে খেলার নিয়মের জালে। সে সময় জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো নিয়মেই প্রতিযোগিতার সময় হিজাব পরে অংশ নেওয়ার অনুমতি ছিল না। বিবিসিকে জেইনা বলেন, ‘মানুষজন আমাকে স্পষ্ট বলল, হয় হিজাব ছাড়ো, নয়তো খেলা। আমি বুঝতে পারতাম না কেন আমাকে একটিকে বেছে নিতে হবে? আমি তো কাউকে আঘাত করছি না। আমি শুধু বক্সিং করতে চাই।’ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর তাগিদই তাঁর জীবন আর ক্যারিয়ারকে নতুন দিশা দিল।
সাহস আর জেদ ছিল জেইনার বড় অস্ত্র। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই জার্মান অপেশাদার বক্সিংয়ের নিয়ম বদলে দিতে সমর্থ হলো সে। ফলে এখন একজন নারী মুষ্টিযোদ্ধা লম্বা হাতা এবং হেড স্কার্ফ পরে রিংয়ে নামতে পারেন। তবে প্রথমবার রিংয়ে নামার সময় অ্যাড্রেনালিনে শরীর কাঁপলেও কিশোরী জেইনা অনুভব করে অজস্র মানুষের কৌতূহলী দৃষ্টি।
সেই বয়সে জেইনা কেবল পারফরম্যান্সে মনোযোগ দিতে চাইল। রিংয়ের পারদর্শিতা ধীরে ধীরে সে মনোভাবে পরিবর্তন শুরু হলো। পরের ধাপে জেইনা জিতে নিলেন একাধিক বার্লিন ও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। একই সঙ্গে নিজের বিশ্বাসের প্রতিও থাকেন অবিচল।
যখন আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য জেইনাকে আমন্ত্রণ জানাল, তখন আবার বাধা। আন্তর্জাতিক স্তরে হিজাব তখনো নিষিদ্ধ।
তাই ১৯ বছর বয়সে জেইনা বৈশ্বিক মঞ্চে এই নিয়ম বদলের জন্য প্রচার শুরু করলেন। তাঁর অক্লান্ত সংগ্রামের ফল আসে ২০১৯ সালে। আইবিএ হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। বর্তমানে অলিম্পিক বক্সিং পরিচালনাকারী ওয়ার্ল্ড বক্সিংও হিজাবসহ পুরো শরীর ঢাকা পোশাকের অনুমতি দেয়। জেইনা নাসার একেই জীবনের সবচেয়ে বড় জয় বলে মনে করেন।
২০১৭ সালে নাইকি ব্র্যান্ড অ্যাথলেটদের জন্য যখন নতুন হিজাব বাজারে আনে, তখন জেইনা নাসার হয়ে ওঠেন তাদের প্রধান মুখ। কিন্তু পেশাদারির জগতে তাঁর পথ কি খুব সহজ ছিল?
অনেকে হিজাবের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মাঝেমধ্যে রিংয়ে হিজাব খুলে যাওয়ার ঝুঁকি বা তার কারণে কোনো বাড়তি সুবিধা পাওয়ার বিতর্কও উঠেছিল। জার্মান বক্সিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অলিভার উইটম্যান এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জেইনা নাসার এর জবাবে তুলে ধরেন নিজের অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০০টি অপেশাদার লড়াইয়ে এটি একবারের জন্যও সমস্যা সৃষ্টি করেনি’। এদিকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জেইনার পক্ষেই দাঁড়ান।
জেইনা নাসারের পেশাদার অভিষেক হচ্ছে পাকিস্তানের লাহোরে। সেই মঞ্চে চার দিনের লড়াই হবে। ২০ হাজারের বেশি দর্শক সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি

বার্লিনের বসতঘরে সেদিন এক অন্য রকম পরিবেশ। ১৩ বছরের কিশোরী জেইনা নাসার বসেছে মা-বাবার মুখোমুখি। তার একটাই দাবি বা অনুরোধ—বক্সিং করতে দিতে হবে। না, তর্ক নয়। সেদিন নাসার তার অভিভাবককে বুঝিয়েছিল, বক্সিং স্কুলে তার মনোযোগ বাড়াবে, সে কেবল মেয়েদের জিমে যাবে আর খেলাটা আসলে সম্মান ও শৃঙ্খলার নামান্তর। কথা শুনে মা-বাবা মুগ্ধ হলেন, রাজিও হয়ে গেলেন। কিন্তু জেইনা জানত, এই রাজি করানোটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে সহজ কাজ। খেলে যাওয়াটাই বরং কঠিন।
ইউটিউবে নারী মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ভিডিও দেখেই তার প্রতি এক তীব্র আকর্ষণ জন্মেছিল জার্মানিতে জন্ম নেওয়া লেবানিজ বংশোদ্ভূত এই কিশোরীর। প্যাডের ওপর ঘুষির শব্দ, গতি আর প্রতিটি চালের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তি তাকে টানত। ২৭ বছর বয়সী জেইনা বলেন, ‘আমি ওটা দেখতাম আর দেখতাম। আমার ভেতরে এক বোধ জন্মাল, এটাই আমি চাই।’
মুসলিম হিসেবে হিজাব ছিল জেইনা নাসারের পরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু স্থানীয় জিমে যোগ দেওয়ার পর তিনি বুঝলেন, তাঁর আসল লড়াইটা অপেক্ষা করছে খেলার নিয়মের জালে। সে সময় জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো নিয়মেই প্রতিযোগিতার সময় হিজাব পরে অংশ নেওয়ার অনুমতি ছিল না। বিবিসিকে জেইনা বলেন, ‘মানুষজন আমাকে স্পষ্ট বলল, হয় হিজাব ছাড়ো, নয়তো খেলা। আমি বুঝতে পারতাম না কেন আমাকে একটিকে বেছে নিতে হবে? আমি তো কাউকে আঘাত করছি না। আমি শুধু বক্সিং করতে চাই।’ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর তাগিদই তাঁর জীবন আর ক্যারিয়ারকে নতুন দিশা দিল।
সাহস আর জেদ ছিল জেইনার বড় অস্ত্র। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই জার্মান অপেশাদার বক্সিংয়ের নিয়ম বদলে দিতে সমর্থ হলো সে। ফলে এখন একজন নারী মুষ্টিযোদ্ধা লম্বা হাতা এবং হেড স্কার্ফ পরে রিংয়ে নামতে পারেন। তবে প্রথমবার রিংয়ে নামার সময় অ্যাড্রেনালিনে শরীর কাঁপলেও কিশোরী জেইনা অনুভব করে অজস্র মানুষের কৌতূহলী দৃষ্টি।
সেই বয়সে জেইনা কেবল পারফরম্যান্সে মনোযোগ দিতে চাইল। রিংয়ের পারদর্শিতা ধীরে ধীরে সে মনোভাবে পরিবর্তন শুরু হলো। পরের ধাপে জেইনা জিতে নিলেন একাধিক বার্লিন ও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। একই সঙ্গে নিজের বিশ্বাসের প্রতিও থাকেন অবিচল।
যখন আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য জেইনাকে আমন্ত্রণ জানাল, তখন আবার বাধা। আন্তর্জাতিক স্তরে হিজাব তখনো নিষিদ্ধ।
তাই ১৯ বছর বয়সে জেইনা বৈশ্বিক মঞ্চে এই নিয়ম বদলের জন্য প্রচার শুরু করলেন। তাঁর অক্লান্ত সংগ্রামের ফল আসে ২০১৯ সালে। আইবিএ হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। বর্তমানে অলিম্পিক বক্সিং পরিচালনাকারী ওয়ার্ল্ড বক্সিংও হিজাবসহ পুরো শরীর ঢাকা পোশাকের অনুমতি দেয়। জেইনা নাসার একেই জীবনের সবচেয়ে বড় জয় বলে মনে করেন।
২০১৭ সালে নাইকি ব্র্যান্ড অ্যাথলেটদের জন্য যখন নতুন হিজাব বাজারে আনে, তখন জেইনা নাসার হয়ে ওঠেন তাদের প্রধান মুখ। কিন্তু পেশাদারির জগতে তাঁর পথ কি খুব সহজ ছিল?
অনেকে হিজাবের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মাঝেমধ্যে রিংয়ে হিজাব খুলে যাওয়ার ঝুঁকি বা তার কারণে কোনো বাড়তি সুবিধা পাওয়ার বিতর্কও উঠেছিল। জার্মান বক্সিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অলিভার উইটম্যান এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জেইনা নাসার এর জবাবে তুলে ধরেন নিজের অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০০টি অপেশাদার লড়াইয়ে এটি একবারের জন্যও সমস্যা সৃষ্টি করেনি’। এদিকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জেইনার পক্ষেই দাঁড়ান।
জেইনা নাসারের পেশাদার অভিষেক হচ্ছে পাকিস্তানের লাহোরে। সেই মঞ্চে চার দিনের লড়াই হবে। ২০ হাজারের বেশি দর্শক সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি

২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিস্ট্রুন মজল ফ্রস্টাডোত্তির। ৩৬ বছর বয়সে তিনি আইসল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এদিকে নিজের দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে দেশে ফিরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন নামিবিয়ার সাবেক
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়লেও কিছু কিছু পেশা এখনো প্রচলিতভাবে নারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এমনই এক চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার মেয়ে দিলরুবা হক মিলি। বাংলাদেশের প্রথম নারী বনরক্ষী তিনি।
২ দিন আগে
বাংলার নারী জাগরণের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম বেগম রোকেয়া। তিনি ছিলেন আন্দোলনকারিণী, পথপ্রদর্শিকা আর সাহসিকার আরেক নাম। যে যুগে নারীর মুখ উঁচু করে হাঁটা পর্যন্ত ‘অপমানজনক’ ভাবা হতো, সে সময় তিনি নারীর শিক্ষা, স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং অধিকারের কথা বলে গেছেন। এখনো তাঁর লেখা পড়লে মনে হয়—এ যেন আজকের সমাজ
২ দিন আগে
বাবা সহযোগিতা না করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আইনগতভাবে মায়ের তথ্য দিয়েই সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা যায়। মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সন্তানের জন্মের প্রমাণ থাকলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
২ দিন আগে