শাকেরা তাসনীম ইরা

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?
উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?
উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।
প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?
উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।
এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?
উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা।
প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?
উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?
উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।
প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?
উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।
এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?
উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা।
প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।
শাকেরা তাসনীম ইরা

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?
উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?
উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।
প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?
উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।
এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?
উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা।
প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?
উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?
উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।
প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?
উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।
এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?
উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা।
প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন
৩ দিন আগে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার...
৪ দিন আগে
বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা।
৪ দিন আগে
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্ত
৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা অমানবিক।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে বক্তারা গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় আসনের দাবি জানান। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ ও সাইটসেভার্সের ‘ইকুয়াল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এই সংলাপের আয়োজন করে।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব এবং সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার অয়ন দেবনাথ। সালমা মাহবুব বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা নিয়ে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো যেন আমরা সেই আগের যুগে রয়ে গিয়েছি। প্রতিবন্ধী মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রথমেই বোঝা দরকার যে প্রতিবন্ধিতাটা কী। এটা সম্পর্কে যদি সুস্পষ্ট ধারণা থাকে, তাহলে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’
অয়ন দেবনাথ বলেন, যদি একটি ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি না যেতে পারে, তাহলে সেটা ভবনটির সমস্যা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমাজের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অধিকার থাকতে হবে। এখানে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।
সংলাপে আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশে স্কুল, অফিস, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নেই। যার ফলে তাঁরা চাইলেও অনেক জায়গায় অংশ নিতে পারেন না। আসন্ন নির্বাচনেও বহু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
ইউএনডিপির নির্বাচনী সহায়তা ব্যালট/ ড্রিপ প্রকল্পের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা আন্দ্রেজ দেল ক্যাস্তিলো সানচেজ বলেন, নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন সেখানে সবার মতো অংশ নিতে পারেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকা উচিত।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন সাইটসেভার্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও। সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট অসীম ডিও। আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। যদিও অধিকার সংখ্যা দিয়ে বিচার হয় না। যদি একজন মানুষ থাকে, তাকেও পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে একেক রকম তথ্য দেয়, কিন্তু কেউই সঠিক তথ্য দেয় না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য থাকা উচিত।
বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের উচিত প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্য ও অধিকারের অংশ হিসেবে তুলে ধরা। তবেই সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ভাঙবে এবং দেশের নীতি-পরিকল্পনা ও জনমানসে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা অমানবিক।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে বক্তারা গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় আসনের দাবি জানান। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ ও সাইটসেভার্সের ‘ইকুয়াল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এই সংলাপের আয়োজন করে।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব এবং সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার অয়ন দেবনাথ। সালমা মাহবুব বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা নিয়ে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো যেন আমরা সেই আগের যুগে রয়ে গিয়েছি। প্রতিবন্ধী মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রথমেই বোঝা দরকার যে প্রতিবন্ধিতাটা কী। এটা সম্পর্কে যদি সুস্পষ্ট ধারণা থাকে, তাহলে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’
অয়ন দেবনাথ বলেন, যদি একটি ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি না যেতে পারে, তাহলে সেটা ভবনটির সমস্যা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমাজের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অধিকার থাকতে হবে। এখানে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।
সংলাপে আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশে স্কুল, অফিস, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নেই। যার ফলে তাঁরা চাইলেও অনেক জায়গায় অংশ নিতে পারেন না। আসন্ন নির্বাচনেও বহু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
ইউএনডিপির নির্বাচনী সহায়তা ব্যালট/ ড্রিপ প্রকল্পের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা আন্দ্রেজ দেল ক্যাস্তিলো সানচেজ বলেন, নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন সেখানে সবার মতো অংশ নিতে পারেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকা উচিত।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন সাইটসেভার্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও। সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট অসীম ডিও। আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। যদিও অধিকার সংখ্যা দিয়ে বিচার হয় না। যদি একজন মানুষ থাকে, তাকেও পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে একেক রকম তথ্য দেয়, কিন্তু কেউই সঠিক তথ্য দেয় না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য থাকা উচিত।
বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের উচিত প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্য ও অধিকারের অংশ হিসেবে তুলে ধরা। তবেই সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ভাঙবে এবং দেশের নীতি-পরিকল্পনা ও জনমানসে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার...
৪ দিন আগে
বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা।
৪ দিন আগে
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্ত
৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ (রিপোর্ট) জানাতে পারেন না।
আজ বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘নারী ও প্রযুক্তি: অনলাইন সহিংসতা নিরসন ও আইনি সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নারী ও শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি) এ সভার আয়োজন করে।
সভায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা এবং সিএসডব্লিউসির ফোকাল মনীষা বিশ্বাস মূল নিবন্ধ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল ইত্যাদির রিপোর্টিং (অভিযোগ করা) ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রক্রিয়া জটিল ও ইংরেজিনির্ভর। অনেক ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকার কারণে রিপোর্ট ‘পলিসি ভায়োলেশন (নীতিভঙ্গ) নয়’ বলে বাতিল হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী সরাসরি কীভাবে রিপোর্ট করতে হয়, তা জানেন না৷
মূল নিবন্ধে অতীতের কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করেন না৷ আরও বলা হয়, এআই জেনারেটেড ছবি, ডিপফেক কনটেন্ট—এগুলো শনাক্ত ও মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তি সহায়তা সক্ষমতা সীমিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তি উদ্ভূত লিঙ্গভিত্তিক যৌন সহিংসতা-সংক্রান্ত কনটেন্ট রিপোর্ট করতে পারলেও তা খুব সীমিত। এ ছাড়া ইমো, লাইকির মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিপোর্ট করার সুবিধা না থাকায় অপরাধীরা এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে মনীষা বিশ্বাস জানান, থানায় ভুক্তভোগীরা পরামর্শ নেওয়ার পরে মামলা করতে উৎসাহিত না হওয়ায় অভিযোগ নেওয়া হয় না। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি থানায় এসে উপাত্ত সরানোর মাধ্যমে পারস্পরিক মীমাংসারও পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সভায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নোভা আহমেদ বলেন, ‘সাইবার সহিংসতার কথা যখন বলি, তখন প্রথমে মাথায় আসে, কেন এটা নিয়ে এত চিন্তা করছি। তার একটা কারণ হলো, এটি দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং একে কখনো মুছে ফেলা যায় না। আমাদের দেশে সাইবার সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীদের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান। ‘মি টু’ আন্দোলনে বাংলাদেশি নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার পেছনেও এই ভয় কাজ করেছে যে, কথা বললেই তাঁদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। বাস্তব জীবনে যেভাবে নারীদের দোষারোপ করা হয়, সেই একই চিত্র ডিজিটাল জগতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এর ফলে নারীরা নিরাপদভাবে অনলাইন পরিসরে বিচরণ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার হামিদুল মেজবাহ বলেন, ‘ফরেনসিক সাক্ষ্য সংরক্ষণের জন্য থানায় মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত ডিভাইস জমা দিতে হয়, যা ভুক্তভোগীকে আরও নিরুৎসাহিত করে মামলা করার ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে আমাদের যথাযথ ডেটা নেই যে কতজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন এবং কতজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন।’
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের হেল্পলাইন ইনচার্জ রাইসুল ইসলাম জানান, নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে ১০৯-এর জরুরি হেল্পলাইন সেবায় ভুক্তভোগীদের চাহিদার ধরনগুলো পরিবর্তন হচ্ছে এবং এখন সাইবারসংক্রান্ত অভিযোগ বেশি আসছে।
ঢাকা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার মোছা. মাকসুদা আক্তার বলেন, সাইবারসংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীদের জন্য মনোসামাজিক সেবা দরকার। যদি পুলিশের কাছে আসতে ভুক্তভোগীরা ভয় পান, তাহলে কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা দরকার।
সভার সমাপনী বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদ বলেন, সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং একে প্রান্তিক নারীবান্ধব করা প্রয়োজন। আইনবিদদের সঙ্গে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে বসা খুব জরুরি।
সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-কে সংশোধন করে ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত উপাদান এবং ডিজিটাল অসম্মতিপূর্ণ পর্নোগ্রাফিকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। ই-এফআইআর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যার ফলে ভুক্তভোগীকে ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে না, যা হয়রানি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ (রিপোর্ট) জানাতে পারেন না।
আজ বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘নারী ও প্রযুক্তি: অনলাইন সহিংসতা নিরসন ও আইনি সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নারী ও শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি) এ সভার আয়োজন করে।
সভায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা এবং সিএসডব্লিউসির ফোকাল মনীষা বিশ্বাস মূল নিবন্ধ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল ইত্যাদির রিপোর্টিং (অভিযোগ করা) ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রক্রিয়া জটিল ও ইংরেজিনির্ভর। অনেক ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকার কারণে রিপোর্ট ‘পলিসি ভায়োলেশন (নীতিভঙ্গ) নয়’ বলে বাতিল হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী সরাসরি কীভাবে রিপোর্ট করতে হয়, তা জানেন না৷
মূল নিবন্ধে অতীতের কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করেন না৷ আরও বলা হয়, এআই জেনারেটেড ছবি, ডিপফেক কনটেন্ট—এগুলো শনাক্ত ও মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তি সহায়তা সক্ষমতা সীমিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তি উদ্ভূত লিঙ্গভিত্তিক যৌন সহিংসতা-সংক্রান্ত কনটেন্ট রিপোর্ট করতে পারলেও তা খুব সীমিত। এ ছাড়া ইমো, লাইকির মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিপোর্ট করার সুবিধা না থাকায় অপরাধীরা এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে মনীষা বিশ্বাস জানান, থানায় ভুক্তভোগীরা পরামর্শ নেওয়ার পরে মামলা করতে উৎসাহিত না হওয়ায় অভিযোগ নেওয়া হয় না। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি থানায় এসে উপাত্ত সরানোর মাধ্যমে পারস্পরিক মীমাংসারও পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সভায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নোভা আহমেদ বলেন, ‘সাইবার সহিংসতার কথা যখন বলি, তখন প্রথমে মাথায় আসে, কেন এটা নিয়ে এত চিন্তা করছি। তার একটা কারণ হলো, এটি দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং একে কখনো মুছে ফেলা যায় না। আমাদের দেশে সাইবার সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীদের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান। ‘মি টু’ আন্দোলনে বাংলাদেশি নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার পেছনেও এই ভয় কাজ করেছে যে, কথা বললেই তাঁদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। বাস্তব জীবনে যেভাবে নারীদের দোষারোপ করা হয়, সেই একই চিত্র ডিজিটাল জগতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এর ফলে নারীরা নিরাপদভাবে অনলাইন পরিসরে বিচরণ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার হামিদুল মেজবাহ বলেন, ‘ফরেনসিক সাক্ষ্য সংরক্ষণের জন্য থানায় মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত ডিভাইস জমা দিতে হয়, যা ভুক্তভোগীকে আরও নিরুৎসাহিত করে মামলা করার ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে আমাদের যথাযথ ডেটা নেই যে কতজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন এবং কতজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন।’
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের হেল্পলাইন ইনচার্জ রাইসুল ইসলাম জানান, নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে ১০৯-এর জরুরি হেল্পলাইন সেবায় ভুক্তভোগীদের চাহিদার ধরনগুলো পরিবর্তন হচ্ছে এবং এখন সাইবারসংক্রান্ত অভিযোগ বেশি আসছে।
ঢাকা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার মোছা. মাকসুদা আক্তার বলেন, সাইবারসংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীদের জন্য মনোসামাজিক সেবা দরকার। যদি পুলিশের কাছে আসতে ভুক্তভোগীরা ভয় পান, তাহলে কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা দরকার।
সভার সমাপনী বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদ বলেন, সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং একে প্রান্তিক নারীবান্ধব করা প্রয়োজন। আইনবিদদের সঙ্গে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে বসা খুব জরুরি।
সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-কে সংশোধন করে ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত উপাদান এবং ডিজিটাল অসম্মতিপূর্ণ পর্নোগ্রাফিকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। ই-এফআইআর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যার ফলে ভুক্তভোগীকে ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে না, যা হয়রানি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন
৩ দিন আগে
বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা।
৪ দিন আগে
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্ত
৪ দিন আগেমুহাম্মদ শফিকুর রহমান

বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা। আর সেখান থেকে শুরু তাঁর উদ্যোগ—বাংলার আদি খাদ্য ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। এটি শুধু ব্যবসা নয়, দেশের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা। সংসার সামলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড়িয়েছেন শাহেলী। ‘আহরণ’ নামের ফেসবুক পেজের কান্ডারি তিনি।
পরিবার
স্বামী এবং এক সন্তানকে নিয়ে শাহেলীর পরিবার। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি। উদ্যোক্তা হতে গিয়ে শাহেলী স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন সব সময়।

শুরুর গল্প
বছর সাতেক আগে শাহেলী ব্যবসায় নেমে পড়েন। প্রথম দিকে টুকটাক সমস্যা হলেও বুদ্ধি করে সব সামলে নেন। শাহেলীর পেজ আহরণে অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। সাত বছর আগে খোলা এই পেজ তাঁর বিক্রির মাধ্যম। অবশ্য অফলাইনেও তিনি পণ্য বিক্রি করেন।
কেন উদ্যোক্তা হলেন
পড়াশোনা করে যে চাকরিই করতে হবে, এমন নয়। শাহেলী মনে করেন, উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মেধা আর দক্ষতা থাকলে চাকরি না করে নিজে কিছু করে অন্যের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত। কাজ করতে করতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন শাহেলী; যাকে বলে ঠেকে ঠেকে শেখা।

মাসে আয় আড়াই লাখ টাকা
শুরুতে তাঁর পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরিশ্রম ও দক্ষতায় এখন তাঁর মাসিক বিক্রি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় ওঠানামা করে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর কাজে সহকারী হিসেবে যুক্ত আছেন ১৪ জন।
যা বিক্রি করেন
শাহেলীর পেজ আহরণে পাওয়া যাবে মধু, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার, খেজুরের গুড়, শুঁটকি, বিভিন্ন প্রজাতির চাল ইত্যাদি।

কাঁচামাল সংগ্রহ
শাহেলী কাঁচামাল পেতে ছুটে বেড়ান কৃষকের দোরগোড়ায়। নিজে উপস্থিত থেকে পণ্যের সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করেন। মানের বেলায় তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দেন না। এ কারণে অনেক ক্রেতা বিভিন্ন জায়গায় প্রতারিত হয়ে তাঁর কাছে এসে স্বস্তি খুঁজে পান।
আনন্দ
উদ্যোক্তা হিসেবে শাহেলী এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তাই ভিড়ের মধ্যে একদম অচেনা কেউ এগিয়ে এসে যখন বলেন, ‘আপনি মেহেরুন না? আপনার পণ্যের গুণগত মান সত্যিই অসাধারণ’—সেই প্রশংসা শাহেলীর মন ভরিয়ে দেয়। অচেনা মানুষের এমন আন্তরিক সাড়া তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে এগিয়ে যেতে।
চ্যালেঞ্জ
একজন নারী সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের নানান জায়গায় ছুটে বেড়াবে—এটা অনেকে সহজে মেনে নিতে পারে না। শাহেলীর ভাষায়, ‘একজন নারীও পুরুষের মতো মাঠপর্যায়ে কাজ করার সাহস ও সক্ষমতা রাখে। কিন্তু অনেকে নানা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে। এতে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।’
তবে শাহেলী জানান, তিনি শুরু থেকে সাহসী। তাই এসব মন্তব্য বা চ্যালেঞ্জ তিনি খুব সহজে সামলে নিতে পারেন। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ তাঁর আগামীর পথ আরও দৃঢ় করে।

আফটার সেলস সার্ভিস
নানা কারণে কুরিয়ারে পণ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে কি ক্রেতা ক্ষতি মেনে নেবে? মোটেই না।
পণ্য নষ্ট হয়ে গেলে গ্রাহক যেভাবে ক্ষতিপূরণ চায়, সেভাবে ক্ষতিপূরণ দেন শাহেলী। আর যারা পণ্য নিতে চায়, পেজে বার্তা পাঠালেই তা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ভবিষ্যৎ
একটা গ্রাম হবে। সেই গ্রামে একজন মানুষ যখন প্রবেশ করবে, দেখবে ঢেঁকিতে ধান ভানা হচ্ছে, নারীরা পাটায় সর পিষছে, ঘানিতে সরিষা ভাঙিয়ে তেল বের হচ্ছে। মোটামুটি বাংলার আদি চিত্র দেখা যাবে সেই গ্রামে। এমন স্বপ্ন শাহেলীর। এ ধরনের একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা তাঁর।

বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা। আর সেখান থেকে শুরু তাঁর উদ্যোগ—বাংলার আদি খাদ্য ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। এটি শুধু ব্যবসা নয়, দেশের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা। সংসার সামলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড়িয়েছেন শাহেলী। ‘আহরণ’ নামের ফেসবুক পেজের কান্ডারি তিনি।
পরিবার
স্বামী এবং এক সন্তানকে নিয়ে শাহেলীর পরিবার। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি। উদ্যোক্তা হতে গিয়ে শাহেলী স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন সব সময়।

শুরুর গল্প
বছর সাতেক আগে শাহেলী ব্যবসায় নেমে পড়েন। প্রথম দিকে টুকটাক সমস্যা হলেও বুদ্ধি করে সব সামলে নেন। শাহেলীর পেজ আহরণে অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। সাত বছর আগে খোলা এই পেজ তাঁর বিক্রির মাধ্যম। অবশ্য অফলাইনেও তিনি পণ্য বিক্রি করেন।
কেন উদ্যোক্তা হলেন
পড়াশোনা করে যে চাকরিই করতে হবে, এমন নয়। শাহেলী মনে করেন, উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মেধা আর দক্ষতা থাকলে চাকরি না করে নিজে কিছু করে অন্যের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত। কাজ করতে করতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন শাহেলী; যাকে বলে ঠেকে ঠেকে শেখা।

মাসে আয় আড়াই লাখ টাকা
শুরুতে তাঁর পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরিশ্রম ও দক্ষতায় এখন তাঁর মাসিক বিক্রি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় ওঠানামা করে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর কাজে সহকারী হিসেবে যুক্ত আছেন ১৪ জন।
যা বিক্রি করেন
শাহেলীর পেজ আহরণে পাওয়া যাবে মধু, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার, খেজুরের গুড়, শুঁটকি, বিভিন্ন প্রজাতির চাল ইত্যাদি।

কাঁচামাল সংগ্রহ
শাহেলী কাঁচামাল পেতে ছুটে বেড়ান কৃষকের দোরগোড়ায়। নিজে উপস্থিত থেকে পণ্যের সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করেন। মানের বেলায় তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দেন না। এ কারণে অনেক ক্রেতা বিভিন্ন জায়গায় প্রতারিত হয়ে তাঁর কাছে এসে স্বস্তি খুঁজে পান।
আনন্দ
উদ্যোক্তা হিসেবে শাহেলী এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তাই ভিড়ের মধ্যে একদম অচেনা কেউ এগিয়ে এসে যখন বলেন, ‘আপনি মেহেরুন না? আপনার পণ্যের গুণগত মান সত্যিই অসাধারণ’—সেই প্রশংসা শাহেলীর মন ভরিয়ে দেয়। অচেনা মানুষের এমন আন্তরিক সাড়া তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে এগিয়ে যেতে।
চ্যালেঞ্জ
একজন নারী সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের নানান জায়গায় ছুটে বেড়াবে—এটা অনেকে সহজে মেনে নিতে পারে না। শাহেলীর ভাষায়, ‘একজন নারীও পুরুষের মতো মাঠপর্যায়ে কাজ করার সাহস ও সক্ষমতা রাখে। কিন্তু অনেকে নানা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে। এতে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।’
তবে শাহেলী জানান, তিনি শুরু থেকে সাহসী। তাই এসব মন্তব্য বা চ্যালেঞ্জ তিনি খুব সহজে সামলে নিতে পারেন। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ তাঁর আগামীর পথ আরও দৃঢ় করে।

আফটার সেলস সার্ভিস
নানা কারণে কুরিয়ারে পণ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে কি ক্রেতা ক্ষতি মেনে নেবে? মোটেই না।
পণ্য নষ্ট হয়ে গেলে গ্রাহক যেভাবে ক্ষতিপূরণ চায়, সেভাবে ক্ষতিপূরণ দেন শাহেলী। আর যারা পণ্য নিতে চায়, পেজে বার্তা পাঠালেই তা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ভবিষ্যৎ
একটা গ্রাম হবে। সেই গ্রামে একজন মানুষ যখন প্রবেশ করবে, দেখবে ঢেঁকিতে ধান ভানা হচ্ছে, নারীরা পাটায় সর পিষছে, ঘানিতে সরিষা ভাঙিয়ে তেল বের হচ্ছে। মোটামুটি বাংলার আদি চিত্র দেখা যাবে সেই গ্রামে। এমন স্বপ্ন শাহেলীর। এ ধরনের একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা তাঁর।

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন
৩ দিন আগে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার...
৪ দিন আগে
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্ত
৪ দিন আগেবাড়ছে আতঙ্ক
ফিচার ডেস্ক

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসেও সেই স্বপ্ন অধরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের ১১ মাসে সারা দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, বরং এটি নতুন করে আশা জাগানো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি একটি গভীর প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
চব্বিশের জুলাইয়ের পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় দায় রয়েছে, তা নতুন সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে বাস্তবতার ভিন্ন রূপ। ১১ মাসে মোট নির্যাতিতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪৯ জন; এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ মোট নির্যাতিতের প্রায় অর্ধেকই কন্যাশিশু ও কিশোরী। এই জরিপে বিভিন্ন নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।
কন্যা ও শিশুদের প্রতি নির্যাতনের এ সংখ্যা প্রমাণ করে, পরিবার বা সমাজের কোনো স্তরেই মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, এমনকি সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত পরিবারেও নারীরা নিরাপদ নয়।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসে ৫৯৩ নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ১০১ জন। নিপীড়নের শিকার হয় ৯৫ জন; এর মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ৬১ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৮১ জনকে, যাদের মধ্যে ১৪১ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭২৪ নারী ও কন্যাশিশু। এদের মধ্যে ৫০০ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও কন্যাশিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে ২৯ নারী ও কন্যশিশু। তাদের মধ্যে ১৬ জনের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে।
প্রতিবেদনটির উদ্বেগজনক দিক হলো, গত ১১ মাসের এই পরিসংখ্যান ২০২৪ সালের সারা বছরের মোট নির্যাতনের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ২ হাজার ২২৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
এটি দেশের নাগরিকদের জন্য এক চরম হতাশার বার্তা। এরই মধ্যে গঠন করা হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। যাদের কাজ আইনি, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য পর্যালোচনা করে প্রাসঙ্গিক সংস্কার প্রস্তাব করা। সে প্রস্তাব করাও হয়ে গেছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসের নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা গত বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসেও সেই স্বপ্ন অধরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের ১১ মাসে সারা দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, বরং এটি নতুন করে আশা জাগানো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি একটি গভীর প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
চব্বিশের জুলাইয়ের পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় দায় রয়েছে, তা নতুন সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে বাস্তবতার ভিন্ন রূপ। ১১ মাসে মোট নির্যাতিতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪৯ জন; এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ মোট নির্যাতিতের প্রায় অর্ধেকই কন্যাশিশু ও কিশোরী। এই জরিপে বিভিন্ন নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।
কন্যা ও শিশুদের প্রতি নির্যাতনের এ সংখ্যা প্রমাণ করে, পরিবার বা সমাজের কোনো স্তরেই মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, এমনকি সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত পরিবারেও নারীরা নিরাপদ নয়।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসে ৫৯৩ নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ১০১ জন। নিপীড়নের শিকার হয় ৯৫ জন; এর মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ৬১ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৮১ জনকে, যাদের মধ্যে ১৪১ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭২৪ নারী ও কন্যাশিশু। এদের মধ্যে ৫০০ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও কন্যাশিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে ২৯ নারী ও কন্যশিশু। তাদের মধ্যে ১৬ জনের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে।
প্রতিবেদনটির উদ্বেগজনক দিক হলো, গত ১১ মাসের এই পরিসংখ্যান ২০২৪ সালের সারা বছরের মোট নির্যাতনের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ২ হাজার ২২৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
এটি দেশের নাগরিকদের জন্য এক চরম হতাশার বার্তা। এরই মধ্যে গঠন করা হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। যাদের কাজ আইনি, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য পর্যালোচনা করে প্রাসঙ্গিক সংস্কার প্রস্তাব করা। সে প্রস্তাব করাও হয়ে গেছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসের নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা গত বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন
৩ দিন আগে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার...
৪ দিন আগে
বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা।
৪ দিন আগে