শাকেরা তাসনীম ইরা

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?
উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?
উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।
প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?
উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।
এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?
উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা।
প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?
উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?
উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।
প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?
উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।
এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?
উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা।
প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।
শাকেরা তাসনীম ইরা

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?
উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?
উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।
প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?
উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।
এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?
উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা।
প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?
উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?
উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।
প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?
উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।
এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?
উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা।
প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।...
৪ দিন আগে
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
৫ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
৫ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
৫ দিন আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।
কুইন অব ক্রিসমাস মারায়া
বড়দিনের গানের কথা উঠলে যে নামটি সবার আগে স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে, তিনি হলেন মারায়া কেরি। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় বড়দিনের অলিখিত অ্যানথাম, ‘অল আই ওয়ান্ট ফর ক্রিসমাস ইজ ইউ...’ গানটি। এটি যৌথভাবে লিখেছিলেন মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এন আফানাসিফ। এর কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মারায়া। এই গানের প্রতিটি ছত্রে মিশে রয়েছে এক চিরন্তন আর্তি। তাঁর গানের কথায় ফুটে ওঠে সেই সত্য, ‘বড়দিনে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার,/ শুধু একটি জিনিসেরই বড় প্রয়োজন... বড়দিনে শুধু তোমাকেই চাই আমি!’ এর অর্থ, উৎসবের জাঁকজমক বা দামি উপহারের চেয়ে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যই আসল।

মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এ গানটি লিখতে ও সুর করতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র ১৫ মিনিট। গান লেখা ও কণ্ঠ দেওয়াই নয়, মারায়া ছিলেন এই গানের সুরকার। প্রতিবছরের ডিসেম্বরে বিলবোর্ড চার্টের শীর্ষে ফিরে আসা এই এক গান থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা রয়্যালটি পান, যা তাঁকে এনে দিয়েছে কুইন অব ক্রিসমাস বা বড়দিনের রানি উপাধি।
ড্রামের শব্দে ধ্রুপদি সুর

এক দরিদ্র শিশু, যার কাছে যিশুর জন্মের আনন্দ উৎসবে দেওয়ার মতো কোনো দামি উপহার ছিল না। তাই সে তার ছোট্ট ড্রামটি বাজিয়ে সম্মান জানাতে চেয়েছিল। এমনই একটি ঘটনাকে সুরে-তালে মিলিয়েছিলেন আমেরিকান সংগীত শিক্ষক ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ১৯৪১ সালের অনন্য সৃষ্টি ‘দ্য লিটিল ড্রামার বয়’ গানটি। প্রথমে এর নাম ছিল ‘দ্য ক্যারল অব দ্য ড্রাম’। গানটি একটি চেক গানের অনুকরণে তৈরি বলে ধারণা করা হয়। তবে এর সুর এবং কথা দুটোরই মূল কারিগর ছিলেন ক্যাথরিন। গানের সেই বিখ্যাত ‘পা-রাম-পাম-পাম-পাম’ সুরটি মূলত ক্যাথরিনেরই করা। আজও বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বড়দিনের ক্যারল হিসেবে এ সুরটি মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হয়।
চঞ্চলতা ও শাশ্বত আবেদন
বড়দিনের উৎসবে কেবল ভক্তি বা আবেগ নয়, মিশে থাকে কিছুটা চঞ্চলতা আর কৌতুকও। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্যান্টা বেবি’ গানটি তারই প্রমাণ। এর নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। তিনি ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন সিনেটর জ্যাকব জাভিটসের ভাইয়ের মেয়ে। সে সময়ে দাঁড়িয়ে এক নারীর এমন চটুল ও আধুনিক কথার গান লেখা ছিল বেশ সাহসী পদক্ষেপ। ফিল স্প্রিংগার ও টনি স্প্রিংগারের সঙ্গে মিলে জোয়ান এ গানটি লিখেছিলেন। গানটি আর্থ কিটের কণ্ঠে অমর হয়ে আছে। দশকের পর দশক পার হলেও গানটির আবেদন একটুও কমেনি। ম্যাডোনা থেকে শুরু করে কাইলি মিনোগ, টেইলর সুইফট এবং আরিয়ানা গ্রান্দের মতো বর্তমান সময়ের পপতারকারাও এ গানটি নতুন করে গেয়েছেন।

কিংবদন্তির সুর ও আধুনিকতার ছোঁয়া
কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি ডলি পার্টন বড়দিনের উৎসবকে রাঙিয়েছেন নিজের মেধা দিয়ে। তিনি বড়দিন উপলক্ষে একাধিক সফল অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন, যেগুলোর অধিকাংশ গানই ছিল তাঁর নিজের লেখা। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘হার্ড ক্যান্ডি ক্রিসমাস’ ও ‘ক্রিসমাস অব মেনি কালার্স’ গানগুলো আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
সিয়ার কণ্ঠে বড়দিনের আনন্দের স্রোত

সময়ের স্রোতে বড়দিনের গানে যোগ হয়েছে আধুনিকতার নতুন মাত্রা। তরুণ প্রজন্মের কাছে বড়দিন মানেই যেন অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ২০১৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘এভরিডে ইজ ক্রিসমাস’ অ্যালবামটি। সিয়া প্রমাণ করেছেন, বড়দিনের গানের জন্য কেবল পুরোনো ক্ল্যাসিকের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। তাঁর নিজের লেখা ‘স্নো ম্যান’ ও ‘স্যান্টা ইজ কামিং ফর আস’ গানগুলো এখনকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়।
বড়দিনের সুরের মূর্ছনা কেবল সুর নয়; বরং এক অদৃশ্য মিলনমেলা। পর্দার আড়ালে থাকা এই নারী কারিগরদের লেখনী আর সুরের মায়ায় বড়দিন হয়ে ওঠে আরও মধুময়, আরও প্রাণবন্ত। প্রিয়জন আর আত্মীয়স্বজনের সে মিলনমেলায় এ গানগুলোই হয়ে থাকে আত্মার খোরাক।
সূত্র: বিবিসি, ওয়েব্যাক মেশিন, কনকর্ড ফ্রি পাবলিক লাইব্রেরি, ভ্যানিটি ফেয়ার

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।
কুইন অব ক্রিসমাস মারায়া
বড়দিনের গানের কথা উঠলে যে নামটি সবার আগে স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে, তিনি হলেন মারায়া কেরি। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় বড়দিনের অলিখিত অ্যানথাম, ‘অল আই ওয়ান্ট ফর ক্রিসমাস ইজ ইউ...’ গানটি। এটি যৌথভাবে লিখেছিলেন মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এন আফানাসিফ। এর কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মারায়া। এই গানের প্রতিটি ছত্রে মিশে রয়েছে এক চিরন্তন আর্তি। তাঁর গানের কথায় ফুটে ওঠে সেই সত্য, ‘বড়দিনে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার,/ শুধু একটি জিনিসেরই বড় প্রয়োজন... বড়দিনে শুধু তোমাকেই চাই আমি!’ এর অর্থ, উৎসবের জাঁকজমক বা দামি উপহারের চেয়ে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যই আসল।

মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এ গানটি লিখতে ও সুর করতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র ১৫ মিনিট। গান লেখা ও কণ্ঠ দেওয়াই নয়, মারায়া ছিলেন এই গানের সুরকার। প্রতিবছরের ডিসেম্বরে বিলবোর্ড চার্টের শীর্ষে ফিরে আসা এই এক গান থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা রয়্যালটি পান, যা তাঁকে এনে দিয়েছে কুইন অব ক্রিসমাস বা বড়দিনের রানি উপাধি।
ড্রামের শব্দে ধ্রুপদি সুর

এক দরিদ্র শিশু, যার কাছে যিশুর জন্মের আনন্দ উৎসবে দেওয়ার মতো কোনো দামি উপহার ছিল না। তাই সে তার ছোট্ট ড্রামটি বাজিয়ে সম্মান জানাতে চেয়েছিল। এমনই একটি ঘটনাকে সুরে-তালে মিলিয়েছিলেন আমেরিকান সংগীত শিক্ষক ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ১৯৪১ সালের অনন্য সৃষ্টি ‘দ্য লিটিল ড্রামার বয়’ গানটি। প্রথমে এর নাম ছিল ‘দ্য ক্যারল অব দ্য ড্রাম’। গানটি একটি চেক গানের অনুকরণে তৈরি বলে ধারণা করা হয়। তবে এর সুর এবং কথা দুটোরই মূল কারিগর ছিলেন ক্যাথরিন। গানের সেই বিখ্যাত ‘পা-রাম-পাম-পাম-পাম’ সুরটি মূলত ক্যাথরিনেরই করা। আজও বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বড়দিনের ক্যারল হিসেবে এ সুরটি মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হয়।
চঞ্চলতা ও শাশ্বত আবেদন
বড়দিনের উৎসবে কেবল ভক্তি বা আবেগ নয়, মিশে থাকে কিছুটা চঞ্চলতা আর কৌতুকও। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্যান্টা বেবি’ গানটি তারই প্রমাণ। এর নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। তিনি ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন সিনেটর জ্যাকব জাভিটসের ভাইয়ের মেয়ে। সে সময়ে দাঁড়িয়ে এক নারীর এমন চটুল ও আধুনিক কথার গান লেখা ছিল বেশ সাহসী পদক্ষেপ। ফিল স্প্রিংগার ও টনি স্প্রিংগারের সঙ্গে মিলে জোয়ান এ গানটি লিখেছিলেন। গানটি আর্থ কিটের কণ্ঠে অমর হয়ে আছে। দশকের পর দশক পার হলেও গানটির আবেদন একটুও কমেনি। ম্যাডোনা থেকে শুরু করে কাইলি মিনোগ, টেইলর সুইফট এবং আরিয়ানা গ্রান্দের মতো বর্তমান সময়ের পপতারকারাও এ গানটি নতুন করে গেয়েছেন।

কিংবদন্তির সুর ও আধুনিকতার ছোঁয়া
কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি ডলি পার্টন বড়দিনের উৎসবকে রাঙিয়েছেন নিজের মেধা দিয়ে। তিনি বড়দিন উপলক্ষে একাধিক সফল অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন, যেগুলোর অধিকাংশ গানই ছিল তাঁর নিজের লেখা। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘হার্ড ক্যান্ডি ক্রিসমাস’ ও ‘ক্রিসমাস অব মেনি কালার্স’ গানগুলো আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
সিয়ার কণ্ঠে বড়দিনের আনন্দের স্রোত

সময়ের স্রোতে বড়দিনের গানে যোগ হয়েছে আধুনিকতার নতুন মাত্রা। তরুণ প্রজন্মের কাছে বড়দিন মানেই যেন অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ২০১৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘এভরিডে ইজ ক্রিসমাস’ অ্যালবামটি। সিয়া প্রমাণ করেছেন, বড়দিনের গানের জন্য কেবল পুরোনো ক্ল্যাসিকের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। তাঁর নিজের লেখা ‘স্নো ম্যান’ ও ‘স্যান্টা ইজ কামিং ফর আস’ গানগুলো এখনকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়।
বড়দিনের সুরের মূর্ছনা কেবল সুর নয়; বরং এক অদৃশ্য মিলনমেলা। পর্দার আড়ালে থাকা এই নারী কারিগরদের লেখনী আর সুরের মায়ায় বড়দিন হয়ে ওঠে আরও মধুময়, আরও প্রাণবন্ত। প্রিয়জন আর আত্মীয়স্বজনের সে মিলনমেলায় এ গানগুলোই হয়ে থাকে আত্মার খোরাক।
সূত্র: বিবিসি, ওয়েব্যাক মেশিন, কনকর্ড ফ্রি পাবলিক লাইব্রেরি, ভ্যানিটি ফেয়ার

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
৫ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
৫ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
৫ দিন আগেকাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট
এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।
এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’
কেন কমছে মেলার সংখ্যা
নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’
রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন
মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’
অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।
সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি
হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট
এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।
এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’
কেন কমছে মেলার সংখ্যা
নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’
রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন
মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’
অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।
সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি
হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।...
৪ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
৫ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
৫ দিন আগেআল আমিন

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।
২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।
খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।
রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।
২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।
খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।
রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।...
৪ দিন আগে
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
৫ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
৫ দিন আগেফিচার ডেস্ক

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।
চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই
মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।
ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা
২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।
সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।
আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।
অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য
মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।
ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা
মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন
মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।
সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।
চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই
মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।
ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা
২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।
সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।
আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।
অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য
মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।
ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা
মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন
মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।
সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।...
৪ দিন আগে
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
৫ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
৫ দিন আগে