Ajker Patrika

মানুষকে মধুর কাছে নিয়ে যায় যে পাখি

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ২১
মানুষকে মধুর কাছে নিয়ে যায় যে পাখি

হানিগাইড বার্ড নামে যে একধরনের পাখি আছে, এটা প্রথম জানতে পারি বিখ্যাত আইরিশ লেখক ও শিকারি জন টেইলরের বই পড়ে। এই মানুষটি ১৯২৩ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ পূর্ব আফ্রিকায় (বর্তমান মোজাম্বিক) শিকার করেন। সেই সূত্রেই পাখিটি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করি। তাতেই পরিষ্কার হয় আফ্রিকার জঙ্গলে বাস করা সবচেয়ে বিচিত্র পাখিদের একটি এই হানিগাইড। বেশ কয়েক জাতের পাখি এই নামে পরিচিত হলেও মধুর খোঁজ দেয় মূলত আফ্রিকান প্রজাতি গ্রেটার হানিগাইডরা।

এবার এই পাখিদের, মানে হানিগাইড বার্ডের এমন নামকরণের কারণটা বরং জেনে নিই। নাম দেখে যা বুজেছেন তা-ই, এরা মানুষকে মধুর খোঁজ দেয়। দুর্গমের কোনো ছোটখাটো বসতি বা জঙ্গলের মধ্যে কারও পাতা ক্যাম্পের ধারে এসে ডাকতে শুরু করে এসব পাখি। তারপর এক গাছ থেকে আরেক গাছে উড়ে যায়, উদ্দেশ্য মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ। আফ্রিকানরা এই পাখিদের সঙ্গে বেশ পরিচিত, অনেক সময়ই এদের পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান তাঁরা। তবে হানিগাইডরা দমবার পাত্র নয়, একটু অপেক্ষা করে আবার শুরু করে উত্তেজিত ডাকাডাকি, ওড়াউড়ি। 

এখন কেউ যদি মধুর খোঁজে পাখিটিকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হন, সমস্ত জোগাড়যন্ত্র শেষ করে শিস দিয়ে সংকেত দেন একে। ব্যাস, হানিগাইড কাজ শুরু করে। অর্থাৎ, অনুসরণকারীদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে মৌচাকের কাছে। গন্তব্যে পৌঁছার পরও ডাল থেকে ডালে উড়ে উত্তেজিত স্বরে ডাকতেই থাকে। তবে মানবসঙ্গী কাজ শুরু করলে ডাকাডাকি থামিয়ে কাছের একটা গাছে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে। পাছে আবার মৌ সংগ্রহকারী বিরক্ত হন! চাকে কোনো ঝামেলা থাকলে লোকটা শিস দেবেন। তখন পাখিটা আবার উড়তে উড়তে নতুন এক মৌচাকের কাছে নিয়ে যাবে। ছোট্ট এই পাখিরা কিন্তু মধুর জন্য এত কিছু করে না। বরং তাদের চাওয়া কেবল মধু সংগ্রহের পর মৌমাছির বাসার মোম আর কিছু শূককীট।

মৌচাক খুঁজে বের করতে এই পাখিরা যে সিদ্ধহস্ত, এটা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। আশ্চর্য ব্যাপার, এমনই এক মধুপাখিকে অনুসরণ করে দুই কিশোর বন্ধুসহ কাকতালীয়ভাবে ভয়ানক সুন্দর এক কালো কেশরের মানুষখেকো সিংহের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন জন টেইলর। অনেক দিন খুঁজেও যেটার হদিস পাচ্ছিলেন না। তবে টেইলর পাখিটির মনও খারাপ করেননি, সিংহটিকে মারার পর মধু গাইডকে ডেকে আনার ব্যবস্থা করেন। তারপর মধুও সংগ্রহ করেন দুই সঙ্গীর মাধ্যমে।

দক্ষিণ আফ্রিকার এক গাছে বসা হানিগাইড বার্ড। ছবি: ফেসবুকতো টেইলরের বইয়ে এই পাখিদের কথা জানতে পেরে একটু পড়াশোনার চেষ্টা করলাম এদের নিয়ে। এতে চমকটা আরও বাড়ল। মোটামুটি ১৭ ধরনের পাখি এই নামে পরিচিত হলেও এই নামটি ওরা পেয়েছে আফ্রিকান প্রজাতি গ্রেটার বা ব্ল্যাক থ্রোটেড হানিগাইডদের মধুর খোঁজ দেওয়ার আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই। অবশ্য আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পাওয়া যাওয়া আরেকটি প্রজাতি স্কেলি থ্রোটেড হানি গাইডেরও গুণটা আছে বলে দাবি করেন অনেকেই। 

হানিগাইড নাম পাওয়া বাকি প্রজাতিগুলো কিন্তু পথ দেখিয়ে মোটেই মধুর কাছে নিয়ে যায় না। এদের বেশির ভাগেরও বসতি আফ্রিকায়। এশিয়ায় যে দুই প্রজাতি আছে, তার একটির বিচরণ মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে, অপরটির হিমালয় অঞ্চলে। 

গ্রেটার হানিগাইডদের দেখা পাবেন মোজাম্বিক, বতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ের মতো দেশগুলোতে। আকারে একেবারেই ছোটখাটো, দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটারের মতো, ওজন ৫০ গ্রাম। পুরুষদের রং গাঢ় ধূসর-বাদামি, গলা কালো, কাঁধে হলদে দাগ, ঠোঁট গোলাপি। মেয়ে পাখিদের ঠোঁট কালচে।

হানিগাইড বার্ডদের এক হিসেবে অন্য বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিপরীত উদাহরণ বলা চলে। এমনিতে মানুষ বিভিন্ন পশু-পাখিকে পোষ মানায় শিকারের জন্য বা অন্য কোনো কাজে, এখানে উল্টো এরাই মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয় তাদের অনুসরণ করতে। 

শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে পাখিগুলোর এই আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য প্রথম লিপিবদ্ধ করেন মোজাম্বিকে ধর্ম প্রচার করা পর্তুগিজ মিশনারি জোয়াও সান্তোস। সেটা ১৫৮৮ সালের ঘটনা। সান্তোস প্রায়ই লক্ষ করতেন সোফালায় তাঁর গির্জার দেয়ালের ফাটলের মধ্য দিয়ে ছোট্ট এক পাখি ওড়াউড়ি করে, আর সুযোগ পেলেই গির্জায় রাখা মোমে ঠোকর দেয়। পরে জোয়াও সান্তোস আবিষ্কার করেন, এই পাখি গাছে গছে ওড়াউড়ি করে মানুষকে মধুর খোঁজ দেয়। 

কেউ যদি মধুর খোঁজে পাখিটিকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হন, শিস দিয়ে সংকেত দেন একে। ছবি: ফেসবুকপরের শতকগুলোতেও এই আশ্চর্য পাখিটা সম্পর্কে বিক্ষিপ্তভাবে নানান তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। তবে শুরুতে বিজ্ঞানীরা একে একটা গুজব বলেই ধরে নেন। একটি পাখি মানুষকে মধুর কাছে নিয়ে যাবে কে ভাবতে পেরেছিল? বহু পরে কেনিয়ার ইকোলজিস্ট ড. হোসেইন আইজাক এবং জার্মান প্রাণিবিদ হেইঞ্জ উলরিখ রেয়ার পাখিটির ব্যাপারে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন, সেটা ১৯৮৯ সালে। এভাবেই হানিগাইডদের কিংবদন্তি সত্যি বলে প্রমাণিত হলো।

তবে হানিগাইড পাখিদের এই বিরল গুণ দুই-একবার যে মানুষকে ঝামেলায় ফেলেনি তা-ও নয়। তবে একজন বন্যপ্রাণিপ্রেমী হিসেবে একে শাপে বর বলেই মনে হয়েছে আমার। বিখ্যাত স্কটিশ শিকারি ডব্লিউ. ডি এম বেল বা করামজো বেলের বইয়ে এমন একটি ঘটনার বিবরণ আছে। বিংশ শতকের গোড়ার দিকের ঘটনা, আফ্রিকার কোনো একটি জায়গায় হাতি শিকারে বেরিয়েছেন। ওই সময় মৌমাছিদের বাসাগুলো ছিল মধু ও শূককীটে পরিপূর্ণ। এদিকে অরণ্যটায় হাতি ছিল প্রচুর। চাষবাসের জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা আগুন দিয়ে কেবলই জঙ্গল পুড়িয়েছিল, তাই কালো মাটিতে হাতির পায়ের ছাপ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়, হানিগাইডরাও খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিল তখন। লেখক কিংবা তাঁর শিকারসঙ্গীদের দেখলেই মধুর কাছে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু করত। ব্যাস, এই চেঁচামেচিতে হাতিরাও শিকারিদের উপস্থিতি টের পেয়ে যেত। অবশ্য পরে স্থানীয় এক ওঝা আর এলাকাবাসীর সহায়তায় হানিবার্ডদের ফাঁকি দেন বেল।

গাম্বিয়ায় একটি গ্রেটার হানিগাইড পাখি। ছবি: উইকিমিডিয়াআফ্রিকান মধু সংগ্রাহকারীরা এই পাখিদের সঙ্গে যোগাযোগের চমৎকার এক পদ্ধতি বের করে নিয়েছেন। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ ক্ল্যায়ার স্পটিসউড আবিষ্কার করেন, মোজাম্বিকের ইয়াও গোত্রের মধু সংগ্রহকারীরা মধু-গাইড পাখিদের ডেকে আনতে প্রথমে চড়া, কাঁপা একটা আওয়াজ করে। তারপর করে অদ্ভুত একধরনের ঘোঁতঘোঁত শব্দ। এই ডাক শুনে পাখিরা বুঝে যায় ওরা অনুসরণের জন্য প্রস্তুত। তবে আফ্রিকার অন্যান্য গোত্রের লোকেরা নিশ্চয় এই সংকেত ব্যবহার করে না, তাঁদের অন্য তরিকা থাকার কথা। 

হানিগাইডদের প্রিয় খাবার মৌচাকের মোম হলেও কখনো মাকড়সা, গাছে থাকা কীটপতঙ্গ কিংবা ফলমূলও খায়। তা ছাড়া খাবারের ব্যাপারে অনেকটাই মানুষের সাহায্যনির্ভর এরা। ড. আইজাকের গবেষণায় উঠে এসেছে, মৌচাক থেকে এরা যে খাবার পায়, এর শতকরা ৯৬ ভাগই মানুষের সাহায্য ছাড়া জোগাড় করা অসম্ভব। এদিকে আফ্রিকার লোকেরা এখন জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের চেয়ে গাঁয়ে মৌমাছি পালনে বেশি উৎসাহী। বাধ্য হয়েই বেচারা হানিগাইডদের পূর্বপুরুষদের দেখিয়ে যাওয়া গাইডের কাজ ছেড়ে নিজের খাবার নিজে সংগ্রহের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।

সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, ম্যান ইটারস অ্যান্ড মরোডারস–জন টেইলর, দ্য ওয়ান্ডারিংস অফ এন অ্যালিফেন্ট হান্টার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি

ভারতের মধ্যাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় হঠাৎ পাওয়া একটি হিরার খোঁজ দুই বন্ধুর জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় সম্প্রতি এক শীতের সকালে শৈশবের বন্ধু সতীশ খাটিক ও সাজিদ মোহাম্মদের হাতে ধরা পড়েছে ১৫.৩৪ ক্যারেটের মূল্যবান ওই হিরাটি। এটির বাজারমূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, পান্না জেলা ভারতের অন্যতম হিরা উত্তোলন অঞ্চল। সেখানেই কয়েক সপ্তাহ আগে লিজ নেওয়া একটি জমিতে কাজ করতে গিয়ে চকচকে পাথরটির সন্ধান পান সতীশ ও সাজিদ। পরে সেটি শহরের সরকারি হিরা মূল্যায়ন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলে নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি উৎকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক হিরা।

সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি
সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি

মূল্যায়ন কর্মকর্তা অনুপম সিং জানান, হিরাটির সম্ভাব্য দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। শিগগিরই এটিকে সরকারি নিলামে তোলা হবে। এই নিলামে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা অংশ নেবেন। তিনি আরও জানান, হিরার দাম নির্ভর করে ডলারের বিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক রাপাপোর্ট রিপোর্টের মানদণ্ডের ওপর।

২৪ বছর বয়সী সতীশ খাটিক একটি মাংসের দোকান চালান, আর ২৩ বছরের সাজিদ মোহাম্মদ ফল বিক্রি করেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের পরিবার পান্নায় হিরা খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত দিন কোনো বড় সাফল্য আসেনি।

উন্নয়ন সূচকে পান্না জেলা পিছিয়ে থাকা একটি এলাকা। এখানে দারিদ্র্য, পানির সংকট ও বেকারত্ব নিত্যদিনের বাস্তবতা। তবে এই জেলাতেই ভারতের অধিকাংশ হিরা মজুত রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায়।

সাজিদের বাবা নাফিস জানান, বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি করেও তাঁরা পেয়েছেন শুধু ধুলো আর কাঁচের টুকরো। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর অবশেষে আমাদের ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন।’ সংসারের ক্রমবর্ধমান খরচ ও বিয়ের ব্যয় মেটাতে না পেরে হতাশা থেকেই জমিটি লিজ নিয়েছিলেন সাজিদ।

হিরা খোঁজার কাজ সহজ নয়। দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় কিংবা ছুটির সময় মাটি খুঁড়ে, পাথর ধুয়ে, চালুনিতে ছেঁকে হাজারো কণার ভিড় থেকে সম্ভাব্য হিরা আলাদা করতেন সতীশ ও সাজিদ। পান্নার জেলা খনি কর্মকর্তা রবি প্যাটেল বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর তারা জমিটি লিজ নেয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমন মানের হিরা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

এখনো নিলামের টাকা হাতে না পেলেও দুই বন্ধু আশাবাদী। বড় শহরে চলে যাওয়া বা ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা আপাতত তাঁরা বাদ দিয়েছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য—এই অর্থ দিয়ে নিজেদের বোনদের বিয়ে দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় টয়লেটে কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে ১৪ বার টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তাঁর সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতি নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি-এর পদে কাজ করার জন্য তাঁকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচার পর্বের পর আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং লি-এর কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তাঁর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করান।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালেও জিয়াংসু প্রদেশের আরেক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল এক দিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত