Ajker Patrika

বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি উপেক্ষা করে আরপিও সংশোধন হলো

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপিসহ সমমনা ডজনখানেক রাজনৈতিক দলের আপত্তির পরও জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তই বহাল রাখল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশের যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে এই বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

গত ২৩ অক্টোবর এই অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। এরপর জোটের প্রার্থীর নিজদলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান নিয়ে বিএনপি আপত্তি তোলে। দলটি বলেছে, এ বিষয়ে সরকার কোনো আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিধান বাতিল করে আগের বিধান পুনর্বহালে আইন উপদেষ্টাকে লিখিত আবেদন জানায় বিএনপি। পরে ১২-দলীয় জোটও নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি নিয়ে লিখিত আবেদন জানায়।

কিন্তু জামায়াত ও এনসিপি ২০ ধারার এ সংশোধন বহাল রাখার দাবি জানায়। কোনো একটি দলের চাপে অধ্যাদেশের সংশোধন পরিবর্তন না করতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে হুঁশিয়ারও করে এনসিপি।

এ নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে সে বিধান রেখেই অধ্যাদেশ জারি করা হলো। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে একাধিক নিবন্ধিত দল জোট করলেও জোট মনোনীত প্রার্থী বড় দলের বা অন্য দলের প্রতীকে ভোট করতে পারবেন না, নিজ দলের প্রতীকই নিতে হবে।

আরপিওর ২০ অনুচ্ছেদে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তাতে জোটভুক্ত হলেও মনোনীত প্রার্থীকে তাঁর দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। আগের বিধান অনুযায়ী, জোটের প্রার্থীরা নিবন্ধিত দলের যেকোনো একটি প্রতীকে ভোট করতে পারতেন।

সাধারণত জোটভুক্ত ছোট দলের কয়েকজন প্রার্থী প্রধান দলগুলোর প্রতীক ব্যবহার করতেন এবং তাঁরা জয়ীও হতেন। কিন্তু এবার এই পথ বন্ধ হলো। এ বিষয়ে বিএনপিসহ আপত্তি জানানো দলগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সংশোধিত আরপিওতে এমন কিছু বিধান আছে, যেগুলোর বিষয়ে আমরা আগে থেকেই একমত ছিলাম। কিন্তু প্রতীকের বিষয়ে যেটি পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সম্মতি ছিল না।’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর বিএনপির সঙ্গে একমত হয়েছিলেন আইন উপদেষ্টা। তাই বিএনপি ধরে নিয়েছিল, ধারাটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সংশোধিত আরপিওতে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হবে।

আগে আরপিওর ২০ ধারায় বলা ছিল—জোটভুক্ত দলগুলো চাইলে নিজেদের প্রতীকে বা জোটের মধ্যে সম্মত কোনো এক প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। তফসিল ঘোষণার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে তা জানাতে হতো। এতে ছোট দলগুলো জোটে থেকে কিছু আসন জয়ের সুযোগ পেত। এটা একটি ইতিবাচক ব্যবস্থা ছিল।

বিএনপির আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘এখন যেভাবে সংশোধনীর খসড়া পাস হয়েছে, কয়েক দিন পর অধ্যাদেশ আকারে পাস হবে। সেটা হলে অনেক ছোট দলের যাঁরা জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করতে চাইবেন—‘‘ছোট দল’’ বলে কাউকে অসম্মান করছি না, রাজনীতির মাঠে আকারে ছোট-বড় অনেক দল থাকে, যাদের জনসমর্থনের ভিত্তিতে এটা বলা হয়—তো তাঁরা জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবেন না।’

এরপর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে উল্টো দাবি জানানো হয়। জামায়াতসহ আটটি দল সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে স্মারকলিপি দেয়। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কোনোভাবেই সংশোধিত বিধান পরিবর্তন করা যাবে না। জোটে ভোট করলেও স্ব স্ব দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। আরপিও সংশোধনের চেষ্টার প্রতিবাদ জানান জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরও। সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সবশেষে আইন উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। দলের সচিব আখতার হোসেন সেখানে লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধনসংক্রান্ত আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে দেওয়া আপনার ব্যক্তিগত আশ্বাস ও অবস্থান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, একজন উপদেষ্টা হিসেবে আপনি রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ আইন উপদেষ্টা, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন।’

আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনী আইন সংশোধনের মতো বিষয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে এককভাবে আশ্বাস দেওয়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার পরিপন্থী।

গত রোববার এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সিইসির কাছে চিঠি দেন। সেখানে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, প্রতিটি নিবন্ধিত দলকে তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তা একটি ঐতিহাসিক ও নীতিগতভাবে সঠিক পদক্ষেপ। পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিওর সংশোধনীর মাধ্যমে উক্ত বিধান অনুমোদিত হয়েছে এবং শুধু গেজেট প্রকাশ হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে এখন সরকার বা নির্বাচন কমিশন যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির রাজনৈতিক চাপে পাস হওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার মাধ্যমে সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়, সে ক্ষেত্রে শুধু কমিশনের স্বাধীনতার ওপরই আঘাত নয়, বরং পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও সরকারের কার্যক্রমের ওপরও আঘাত।’

এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

উপদেষ্টা পরিষদের সংশোধনের পর নতুন করে আরপিওর ২০ অনুচ্ছেদ নিয়ে দলগুলোর অবস্থানে ‘হতাশা’ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি সরকার গঠন করলে গণঅধিকারকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করবে: নুর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নুরুল হক নুর। ছবি: সংগৃহীত
নুরুল হক নুর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি সরকার গঠন করলে গণঅধিকার পরিষদকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তিসহ সরকার পরিচালনায় তাদের ভূমিকা থাকবে, এমন আশ্বাস দিয়েছে বিএনপি।’

আজ বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নুরুল হক নুর। তিনি জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির সঙ্গে তাদের যুগপৎ আন্দোলন চলছে এবং দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে দুই দলের অবস্থান প্রায় একই রকম।’

নুরুল হক নুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একটি যুগপৎ আন্দোলনে আছি। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তারা আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদের পতন হলে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের নিয়ে একসাথে সরকার গঠন করবে এবং একসাথে নির্বাচন করবে।’

নুর জানান, সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বিএনপি তাদের জন্য দুটি আসনে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবেন। আজ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পটুয়াখালী-৩ আসনে নুরুল হক নুর (সভাপতি, গণঅধিকার পরিষদ) এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনে মুহাম্মদ রাশেদ খান (সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ)-এর জন্য বিএনপি আসন ছেড়ে দিয়েছে।

নুর বলেন, বিএনপির মতো একটি বড় দলের পক্ষ থেকে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। একই সঙ্গে জাতীয় সরকারে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখবে—এই বিষয়টি আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এসব বিবেচনায় আমরা আপাতত বিএনপির সাথেই থাকছি এবং একসাথে নির্বাচন ও সরকার গঠনের পথে এগোচ্ছি।

এর আগে গতকাল গণঅধিকার পরিষদের নির্বাহী পরিষদ সভায় বিএনপির সঙ্গে দুই আসনে সমঝোতা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সর্বশেষ রাজনৈতিক বাস্তবতা ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দলটি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে নির্বাচন ও সরকার গঠনের পথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান নুরুল হক নুর।

‘রাজনৈতিক কৌশল’ এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে স্থির বা রিজিড থাকা যায় না। সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তার বলেন, ‘আমাদের মতো দলের জন্য মাত্র দুটি আসনে সমঝোতা করা নেতাকর্মীদের কাছে মানানো কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারপরও দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা কিছু অপ্রাপ্তি মেনে নিয়েই এই সিদ্ধান্তে এসেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের জন্য উড়োজাহাজে এ-১ আসন নির্ধারণ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য লন্ডন থেকে ঢাকা অভিমুখী ফ্লাইটে A1 নম্বর আসন নির্ধারণ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স । তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার পথে রয়েছেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একাধিক সূত্র জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় তারেক রহমান লন্ডনের বাসা থেকে হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট BG-202–এ যাত্রা করছেন, যা লন্ডন হিথ্রো–সিলেট–ঢাকা রুটে পরিচালিত হচ্ছে।

সূত্র অনুযায়ী, ফ্লাইটটি বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯০০ উড়োজাহাজে পরিচালিত হচ্ছে। উচ্চপর্যায়ের যাত্রী থাকায় ফ্লাইট পরিচালনায় অতিরিক্ত অপারেশনাল সমন্বয় ও বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উড়োজাহাজে তারেক রহমানকে সামনের সারির A1 নম্বর আসনে বসানো হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, তারেক রহমান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমানের ফ্লাইট BG-202–এ সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরছেন। ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে (ঢাকা সময় রাত ১২টা ১৫ মিনিট) লন্ডন থেকে যাত্রা করবে।

বোয়িং উড়োজাহাজে পরিচালিত এই ফ্লাইটটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। সেখানে এক ঘণ্টার গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ড শেষে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সূচি নির্ধারিত রয়েছে।

এদিকে তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, তার আগমন নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও যথাসময়ে নির্বাচন চায় এনসিপি-জামায়াত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৯
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও যথাসময়ে নির্বাচন চায় এনসিপি-জামায়াত

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা থাকলেও যথাসময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে দল দুটির প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের এমন কথা জানান।

দুপুরে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ইসি আগামী ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে বলেছি, যাতে এই ঘোষিত তারিখ যেটা আছে, এটা যাতে না পেছায়; যাতে নির্বাচনটা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়। কারণ, আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে এবং ভারত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে।’

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট নিয়ে কোনো আশঙ্কা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশঙ্কা তো বাংলাদেশে রয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে বলেছি, যাতে ফেব্রুয়ারি ১২ তারিখে নির্বাচন করা যায়। আমরা আজকে অনুরোধ জানিয়েছি, মনোনয়ন আবেদনের যে তারিখগুলো আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না।’

নির্বাচন নিয়ে আপনাদের কোনো সন্দেহ বা উদ্বেগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ আছে। একজন প্রার্থী অলরেডি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আমাদের প্রার্থীদের আমরা বলেছি, আপনারা বিধিমালাগুলো মেনে চলবেন। নির্বাচন কমিশনকেও বলেছি, সকল দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।’

বিকেলে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসান মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘যেখানে যতটুকু আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে, আমরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে এনেছি। উনাদের (ইসি) বলেছি, যেন তাৎক্ষণিকভাবে যাতে ব্যবস্থা নেন।’

জুবায়ের বলেন, ‘ওনারা (বিএনপি) বিভিন্ন ধরনের ওয়াদা করছেন যে আমরা এত লক্ষ, এত কোটি কার্ড দিব, এক একটা কার্ডে এত হাজার, এত লাখ টাকা পাবেন। এই ধরনের অনেকগুলো ওয়াদা করছেন, যেটা নির্বাচন বিধির অর্থাৎ আচরণবিধির সুনির্দিষ্ট খেলাফ।’

তারেক রহমানে দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তা নিয়েও ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলেও জানান জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।

নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে এহসান মাহবুব বলেন, শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পরে জনমনে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। আমাদের ৩০০ প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন— এটা বাস্তব উদ্বেগ। আমরা বলেছি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, প্রশাসনকে আরও অ্যাকটিভ করতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘিত হলে কমিশন ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা দৃশ্যমান করার বিষয়ে ইসিকে বলা হয়েছে।

প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ব্যাপক সফর করবেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কেউ অনেক ফ্যাসিলিটি পাবেন, ভিভিআইপি ফ্যাসিলিটিজ পাবেন, আবার কেউ পাবেন না। এটা তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলো না। উনারা বলেছেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেখেন, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

৩ তারিখে আপনাদের সমাবেশ রয়েছে, সেখানে আচরণবিধির ব্যাপারে আপনারা সতর্ক আছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসার, ইসিকে আশ্বস্ত করেছি, জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের উদ্যোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লন্ডন থেকে রাত সোয়া ১২টায় দেশের পথে রওনা দেবেন তারেক রহমান, বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০০
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ অপারেশনাল ও নিরাপত্তা প্রস্তুতি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে বিমানের ফ্লাইট BG-202–এ সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরছেন। ফ্লাইটটি আজ বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে (ঢাকার সময় রাত ১২টা ১৫ মিনিট) লন্ডন থেকে যাত্রা করবে।

বোয়িং উড়োজাহাজের এই ফ্লাইট আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।

সেখানে এক ঘণ্টার গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ড শেষে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সূচি নির্ধারিত রয়েছে।

বিমান কর্মকর্তারা জানান, উচ্চপর্যায়ের যাত্রীর উপস্থিতির কারণে ফ্লাইটটির ওপর বিশেষ নজরদারি আরোপ করা হয়েছে। ফ্লাইট অপারেশন কন্ট্রোল, কেবিন সার্ভিস, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে পুরো অপারেশন পরিচালিত হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কেবিন ক্রু মোতায়েনেও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হয়েছে।

বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগিব সামাদ জানিয়েছেন, বিশেষ অপারেশনাল ও নিরাপত্তা বিবেচনায় আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রী ব্যতীত দর্শনার্থী ও স্বজনদের টার্মিনালে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যাত্রীসেবা, টার্মিনাল শৃঙ্খলা এবং এয়ারসাইড কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সম্ভাব্য যানজটের কথা বিবেচনায় রেখে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস আগামীকাল ভ্রমণকারী দেশি-বিদেশি যাত্রীদের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরামর্শ দিয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানবন্দর এলাকা, এয়ারপোর্ট রোড, গুলশান সংযোগ সড়ক ও পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে জনসমাগম বাড়তে পারে, যা সড়ক চলাচলে প্রভাব ফেলতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত