
তানজিম আহমদ সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান। ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি গাজীপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি, দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব ও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন।
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

প্রধান উপদেষ্টা আপনাকে ফোন করেছিলেন। কী কথা হলো তাঁর সঙ্গে?
আমি খুবই সম্মানিত হয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল লরিয়েট, বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য ব্যক্তি। তিনি যে এত অমায়িকভাবে আমাকে ফোন দেবেন, আমি এতে খুবই আশ্চর্য হয়েছি, খুবই মুগ্ধ হয়েছি। তিনি ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে আমি যেদিন পদযাত্রা করেছি, সেদিন তিনি দেখা করতে পারেননি। তিনি স্বীকার করেছেন আমাদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। এ বিষয়টা তিনি দেখবেন। আমার বাবাসহ মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় নেতাদের অবদানের কথা বললেন।
আপনি ৩ নভেম্বর তিনটি দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন। বলেছেন এটি আপনার শেষ পদযাত্রা। শেষ পদযাত্রা কেন?
আমি এই পদযাত্রাটা তিন বছর ধরে করছি। আগের দুই বছর কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব যে দল দিয়েছিল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সেই দল সরকারে ছিল। এটা যদি সত্যিকারের নীতি-আদর্শের আওয়ামী লীগ হতো, অবশ্যই আমার দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে ফেলত। তারা তো তা করেইনি বরং উপেক্ষা করেছে।
এবার দেখছি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে অনেকের বিবৃতি আসছে। অথচ দুই বছর আগে আমাকে তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে হয়েছে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি। দুই বছর আগে আমি তাদের পেজে এমন কমেন্ট করেছি।
ওই যে একাত্তরের ইতিহাস, ওই যে একটা বিবাদ—সেটারই প্রতিফলন। আসলে একটা পরিবার আওয়ামী লীগ নামের দলটাকে কুক্ষিগত করে ফেলেছে। এটা আওয়ামী লীগ না।
আমি তো এই ছিনতাই হওয়া আওয়ামী লীগের কাছে কিছু পেলাম না। তাই এবার গেলাম প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে। কারণ, সারা দেশের মানুষের তাঁর ওপর অনেক আশা-ভরসা। আমরা সবাই আশা করছি সংস্কার হবে, যাতে করে আগামী দিনে যে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে, তারা যেন সঠিক পথে দেশ পরিচালনা করতে পারে।
আমি কেন বলছি শেষ পদযাত্রা? কারণ, রাষ্ট্রের কাছে আমার বাবাসহ জাতীয় নেতাদের সন্তান হিসেবে তাঁদের প্রতি সম্মান জানানোর অধিকার চাওয়ার বিষয়টি আমাকে খুব লজ্জিত করছে।
এরপরও যদি মানুষের কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হয়, তখনো কি এমন পদযাত্রা আর করবেন না?
আমি তো অনবরত কথা বলে যাচ্ছি। তবে একই দাবিতে পদযাত্রাটা শেষ করতে চাই, কারণ এতে আমি নিজে বিব্রত হচ্ছি। এটা খুব দুঃখজনক। আমার দাবি তিনটা সহজ। প্রথম, ৩ নভেম্বরকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া, যাতে মানুষ জানতে পারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। কারা এই চার নেতা? যাঁরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পৃথিবীতে শুধু দুটি রাষ্ট্র ‘ডিক্লেয়ারেশন অব ইনডিপেনডেন্সের’ মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। আমাদের একটা ডিক্লেয়ারেশন অব ইনডিপেনডেন্স আছে—প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স। ওইটার ভিত্তিতে আমরা ১০ এপ্রিল ১৯৭১ একটা সরকার গঠন করেছিলাম। ইতিহাস সংরক্ষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে যদি সেই দিনকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটা দ্বিতীয় দাবি। আমার তৃতীয় দাবি স্পষ্ট—জাতীয় চার নেতাসহ আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন—সকল বীর, হিরো, সুপারহিরো—যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের জীবনী তথা তাঁদের অবদান পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করা এবং সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা; যেন একজন তরুণ বা তরুণী পড়ে বলতে পারেন, ‘ও মাই গড, তাঁরা এত বিসর্জন দিয়েছেন দেশের জন্য! এটা অনুপ্রেরণা জাগায়, একদম রক্ত গরম করে ফেলে। তাঁরা আমার দেশের জন্য এত করেছেন, তাহলে আমাদের আরও ভালো কিছু করতে হবে।’ এই যৌক্তিক দাবি পূরণ না করার তো কোনো কারণ আমি দেখছি না।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই ব্যাপারে আপনার কী জানা আছে?
আমি যা জেনেছি এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। গণহত্যা যখন শুরু হলো ২৫ মার্চ, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেপ্তার হলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আমার বাবা সে রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ছিলেন। তিনি একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন। কথা ছিল যে বঙ্গবন্ধু এই টেপ রেকর্ডারে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন এবং একটা কাগজে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা ছিল একই মর্মে। সেই সময়ে শাহবাগে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সব সাংবাদিক অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই রেকর্ডেড মেসেজটা দেননি এবং ওই কাগজে স্বাক্ষর দেননি। আমার বাবা পরে বাসায় চলে আসেন। আমার মা-বোনদের মুখ থেকে শুনেছি, বাবা বাসায় এসে সব ফাইলপত্র ফেলে, তছনছ করে বলেছিলেন, ‘আমাদের ২৩ বছরের আন্দোলন নষ্ট হয়ে গেল।’
আমি যেটা ধারণা করছি, যেহেতু বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন এবং আমার বাবা তখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে মুক্তির সংগ্রামে যোগ দেবেন, এই সময়টুকুর মধ্যে ইপিআরে আক্রমণ হয়েছে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এই খবরগুলো ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে। জিয়াউর রহমান ছিলেন চট্টগ্রামে। আমি মনে করছি, যেহেতু জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন যে রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি, তিনি তখন নিজ উদ্যোগে ঘোষণা দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন প্রথমবার। প্রথমবার তিনি কিন্তু বলেছিলেন, ‘আই, প্রেসিডেন্ট জিয়া...’। তারপর রাজনৈতিক নেতারা তাঁকে বলেন যে আপনি ঘোষণাটা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দিন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘অন বিহাফ আওয়ার গ্রেট লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান...’। এগুলো হচ্ছে ইতিহাসের টুকরা টুকরা ঘটনা। এগুলোকে আমাদের পূর্ণাঙ্গভাবে বিবেচনা, বিশ্লেষণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জিয়াউর রহমান যেটা করেছিলেন একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে, তাঁর অবস্থান থেকে ওই সময়, ওই মুহূর্তে সেটা তিনি সঠিক মনে করেছিলেন। মানুষ তো রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘোষণার অপেক্ষায় থাকে, সেটা যখন আসছিল না, তখন তিনি নিজে এই পদক্ষেপটা নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকেই নির্দেশনা আসে। কিন্তু এখানে ২৫, ২৬, ২৭ মার্চের গ্যাপটা কেন সৃষ্টি হলো, এটাও প্রশ্নের একটা বিষয়।
মুক্তিযুদ্ধে আপনি সবার অবদানের কথা বলছেন। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মনে করেন কি না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে জেনেছি, পড়েছি। আমার কাছে মনে হয়, অনেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক, আবার বলছি। জনগণ তাঁর নামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাঁর নামেই যুদ্ধ হয়েছে। তাঁর নামেই সরকার যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। এখানে কিছু প্রশ্ন আসে। তাঁর কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি কোনো ভূমিকা ছিল না। আমার মতে, আমরা ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ বলতে পারি—বঙ্গবন্ধু একজন এবং বাকি যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁরা সবাই ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ হতে পারেন। আমরা তো এটাকে শেয়ার করতে পারি। কেন আমরা একজনের ওপরে দিয়ে দিচ্ছি সবকিছু? একজনই যদি হতে হয় তাহলে সেটা মানুষ সিদ্ধান্ত নিক যে তিনি জাতির পিতা কি না। যদি মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়, হ্যাঁ তিনিই জাতির পিতা এবং সঙ্গে ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ ছিল, সেটাও ঠিক আছে।
১৫-১৬ বছরে বঙ্গবন্ধুকে ব্যানার হিসেবে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে কি তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। এত বছরের লাগামহীন দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা, পাশাপাশি আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা, হত্যা, গুম, মানে অরাজকতার একটা মহোৎসব চলছিল। এখন যেহেতু তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করেছেন, সেহেতু এই পুরো জিনিসটাই বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রতিফলিত হলো। মানুষ তো এখন বঙ্গবন্ধুকে খাটো করে দেখছে। এ জন্যই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যগুলোর ওপর তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মানুষ এখন লিংক করছে এই অনিয়ম, দুর্নীতি, অত্যাচার—সবকিছু এই ব্যক্তির নামে হয়েছে। এটা তো খুবই অন্যায় করা হলো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে।
আপনি কি রাজনীতি ছেড়েছেন নাকি রাজনীতি আপনাকে ছেড়েছে?
এটা তো খুবই ইন্টারেস্টিং একটা প্রশ্ন। ২০০৮ সালে আমি খুব আশা নিয়ে এসেছিলাম দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন করব বলে। সরকারের প্রথম ছয় মাসের যে কর্মকাণ্ড দেখেছি, আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। আমি হুবহু আঁচ না করতে পারলেও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যে ৫ আগস্টের মতো ঘটনা হয়তো আসবে সামনে। ২০১৪-তে যদি সঠিক নির্বাচন দেওয়া হতো তাহলে হয়তো আর ৫ আগস্ট আসত না।
আমার অবস্থান থেকে, নৈতিকতার দিক থেকে আমি একটা শপথ নিয়েছিলাম বাংলাদেশের জনগণের কাছে, আমি যখন প্রতিমন্ত্রী হই। সেই শপথটা ছিল, আমি আমার সবকিছু দিয়ে সৎভাবে, সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। যখন দেখলাম আমাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না, যখন দেখলাম লাগামহীন দুর্নীতি শুরু হয়েছে, যখন দেখলাম রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না এনে দ্বিগুণ গতিতে একই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমার সিদ্ধান্ত ছিল পদত্যাগ করা। পদত্যাগের মাধ্যমে আমি চেয়েছিলাম প্রতিবাদের একটা বীজ বপন করে দিতে।
শুধু কি এই কারণেই আপনাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হলো? শেখ সেলিমের সঙ্গে নাকি আপনার বিরোধ হয়েছিল?
না, এ রকম কিছু হয়নি। হ্যাঁ, দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, কিন্তু ওটা কারণ ছিল না। কারণটা হচ্ছে, এক পরিবারের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু ছিল এবং কোনো না কোনোভাবে পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তার করা ছিল একটা প্রধান কারণ। আমি চেষ্টা করছিলাম প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য। কিন্তু ওই বিশেষ পারিবারিক চাপ ছিল পুলিশের ওপর। এটাও একটা কারণ, ব্যক্তিগতভাবে কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি। কিন্তু তাদের প্রভাব ছিল। সেই প্রভাবটা আমি বুঝতে পেরেছি, সেই প্রভাবটা একটা ফ্যাক্টর।
পদত্যাগের আর একটা কারণ ছিল বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত। যেভাবে তদন্ত হচ্ছিল আমার কাছে এটা ভালো লাগেনি। আমি চেয়েছিলাম তদন্তটা একদম পরিষ্কার হবে, স্বচ্ছ হবে। কিন্তু দেখা গেল তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলো তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খানকে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরোপুরি বাইপাস করে, যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ছিল বিডিআর। দৃশ্য থেকে আমাদের পুরোপুরি বাইরে রাখা হলো এবং তদন্তটা অন্যদিকে চলে যাচ্ছিল। আমি তো মে মাস পর্যন্ত ছিলাম, তদন্ত চলেছে তার পরেও। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না। ওই পর্যন্ত যখন আমি দেখলাম তদন্তটা আমাদের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আমার কাছে এটা খুব অস্বাভাবিক লেগেছে। এটা তো হওয়ার কথা না। এখানে তো আমাদের সম্পৃক্ত থাকার কথা। আমি যদি সম্পৃক্ত থাকতাম, চেষ্টা করতাম স্বচ্ছ একটা তদন্ত করাতে। এখন অনেক প্রশ্ন উঠেছে বিডিআরের তদন্ত নিয়ে।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। আবার তিনিই কি দলটির বড় ক্ষতির কারণ হলেন?
আমি এটাই বলব, আশি ও নব্বইয়ের দশকে দলের মধ্যে কিছুটা ব্যালান্স ছিল। কারণ ওই সময় পর্যন্ত দলীয় ফোরামগুলোতে কথা বলা যেত। বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হতো। কেউ কোনো বিষয়ে মতামত দিলে সেটা একেবারে অগ্রাহ্য করা হতো না। কিন্তু পরে ওই গণতন্ত্রটা যখন শেষ হয়ে যায়, তখন অধঃপতন শুরু হয়। দুর্ভাগ্যবশত আমরা নীতি-আদর্শকেন্দ্রিক না হয়ে সুবিধাকেন্দ্রিক হয়ে যাই। আপনি যখন এককভাবে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করবেন, আপনার কিন্তু লাইক-মাইন্ডের লোকজন লাগবে, যাঁরা আপনাকে অন্ধভাবে সমর্থন করবেন। তাই নীতি-আদর্শ বিচ্যুত করে আপনি দলের ভেতর এমন কিছু লোকজন ঢুকিয়েছেন, যাঁরা স্বার্থান্বেষী, যাঁরা নিজের পকেট ভারী করার জন্য, ক্ষমতা পাওয়ার জন্য এ দলটাকে একেবার মূল নৈতিক জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
সম্প্রতি আপনার বোন শারমিন আহমদ বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনায় আওয়ামী লীগের কারও মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। তাই এই দলটিতে তিনি যাবেন না, দল গড়বেন না। বোনের সঙ্গে কি আপনি একমত?
আমি সম্পূর্ণভাবে একমত। আমি বারবার বলছি, শেখ হাসিনাসহ এই আওয়ামী লীগ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার আওয়ামী লীগ না। খাঁটি আওয়ামী লীগ না। আওয়ামী লীগটাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নামটা ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ভেতরে কিন্তু ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। আমার আম্মা একটা কথা বলতেন সব সময়, মাছের পচন ধরে মাছের মাথা থেকে, রাজনৈতিক দলের পচনও ধরে মাথা থেকে।
আপনি আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন বলে শোনা যাচ্ছিল। কথাটি কি ঠিক?
কথাটা একেবারেই সত্যি না। অনেকেই অনেক জায়গা থেকে বলছেন। আমি জানি না কেন বলছেন। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, আমি রাজনীতিতে এলে তাঁদের অসুবিধা হয়ে যাবে, হয়তো আমি জনপ্রিয় বেশি, ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন—আমি জানি না। কিন্তু আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমি রাজনীতিতে আসছি না। আমি যেখানে আছি, আমার কাজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমি স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করছি।
বাংলাদেশে এখন বিশাল একটা সমস্যা হচ্ছে, এই যে চারদিকে এখন হাসপাতালে ভরে গেছে। চিকিৎসাখানা, ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে মানুষ ভুগছে। এটার কারণ হচ্ছে, একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখন আধুনিক জীবনযাপন করছে, শহরকেন্দ্রিক। যার ফলে আমরা নানাবিধ অসুখ-বিসুখে ভুগছি। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছি। আমি হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষের জীবন বদলে দিয়েছি—এটা আমাকে সাংঘাতিকভাবে সন্তুষ্টি দেয়। কারণ একটা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হচ্ছে স্বাস্থ্য, সুস্থতা। এখন আমি কথা বলছি, এটা যদি রাজনীতি হয়, তাহলে রাজনীতি। আমি তো কথা বলেই যাব, এটা তো আমার দেশ, আমার অধিকার আছে কথা বলার। কিন্তু ওই প্ল্যাটফর্ম করে রাজনীতি করার ইচ্ছা আমার নেই।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের যে প্রভাব গড়ে উঠেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী বলে আপনি মনে করেন?
উপায় হচ্ছে নতুন প্রজন্ম, নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পরিবর্তন আনল। তাই এখন নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের মালিকানা নিতে হবে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একাত্তর সালকে ভুলে গিয়ে না। কারণ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের প্রাণশক্তি। আর ৫ আগস্ট হচ্ছে সেটারই ধারাবাহিকতা। আবার বলছি, ৫ আগস্টের যে দাবিদাওয়া ছিল, সেগুলো কিন্তু মুক্তিযুদ্ধেরও দাবিদাওয়া। সেই সময়ের মানুষ যেটা চেয়েছিল, ৫ আগস্টেও ছাত্র-জনতা তা-ই চেয়েছে। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ একই সূত্রে গাথা। নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে ইতিহাস থেকে। সেটাকে প্রাণশক্তি করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। তাদের এগিয়ে আসতে হবে, কিন্তু তাদের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসও জানতে হবে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমরা অনুপ্রেরণা নিতে পারব তাঁদের কাছ থেকে, যাঁরা অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের জন্য।
যেকোনো সভ্যতার দিকে যদি তাকাই, আমি রোমের কথা, গ্রিসের কথাই বলব। তারা এতদূর এগোতে পেরেছিল একটা কারণে—তারা তাদের নায়কদের সম্মান করত। তাই আপনার জন্য যাঁরা অবদান রেখেছেন, বলিদান দিয়েছেন, আপনি যদি তাঁদের সম্মান না দেন তাহলে আপনার কোনো ভবিষ্যৎ হবে না। এটা ইতিহাসই বলে দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে আপনি কেন দলটির তেমন সমালোচনা করেননি, এখন যেমন করছেন?
আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমার এক ভাগনেকেও কিন্তু গুম করা হয়েছিল। তাকে ১১ দিন আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল। আমি যখন পদত্যাগ নাটকের শিকার হই—পদত্যাগ করতেও কিন্তু আমাকে প্রায় যুদ্ধ করতে হয়েছিল। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছিল না, বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছিল, অনেক যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। এখানেও আবার নাটক—আমি স্পিকার হামিদ সাহেবের কাছে পাঠিয়েছিলাম পদত্যাগপত্র। তিনি বললেন, এটা কে না কে পাঠিয়েছে! অথচ আমি তাঁকে ফোন করে বললাম, ‘হামিদ কাকু (তাঁকে কাকু ডাকতাম), আমি কিন্তু পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি। পরে আমি নিজে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিলাম। এটা শুনে প্রধানমন্ত্রী খুব আশ্চর্য হলেন, ‘তুমি পদত্যাগ করে আসছো?’ তার আগে অনেক ঘটনা ছিল। অনেকভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল আমাকে রাখার জন্য।
যাই হোক, এখানে বুঝতে হবে, বিডিআর বিদ্রোহ, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা পরম্পরায় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছে। রীতিমতো একনায়কতন্ত্রের পথে যাত্রা। ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের প্রভাব চারদিকে ছিল। ২০১১, ২০১২, ২০১৩ সালের দিকে কিন্তু গুম হওয়া শুরু করল। খোঁজ করে দেখেন, এই সংস্কৃতিটা শুরু হয়েছে তখন। এই অবস্থায় আমার আরেক ভাগনেকে পুলিশ বেধড়ক মারধর করল। এগুলো সব আমার জন্য ইশারা ছিল।
আমরা দেখেছি, সরকার যে-ই হোক না কেন, একটা পর্যায়ে গিয়ে ‘ফ্যাসিস্ট’ আচরণ প্রকাশ পেতে থাকে। জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ বইটি নিশ্চয়ই পড়েছেন, অনেকটা সে রকম। যেখানে শাসক বদলালেও স্বৈরশাসন বারবার ফিরে আসে। উপন্যাসটির সঙ্গে বাস্তবতার মিল পান কি?
‘অল অ্যানিমেলস আর ইক্যুয়াল বাট সাম অ্যানিমেলস আর মোর ইক্যুয়াল।’ পড়েছি অ্যানিমেল ফার্ম। যাই হোক, ফ্যাসিস্ট আচরণ আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল না। কারণ, এখানে ফ্যাসিস্ট সংজ্ঞার একটা বিষয় আছে। ফ্যাসিজম একটা মতাদর্শকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু এখানে তো কোনো মতাদর্শ ছিল না। এটা তো একটা দুর্নীতি, হত্যাযজ্ঞ, গুম, খুনের উৎসব ছিল। আমি বলব এটা একটা ক্লেপ্টোক্রেসি, মাফিয়া এবং পরিবারতন্ত্রের সম্মিলন—তিনটার সংমিশ্রণে এটা একটা হাইব্রিড ফিউশন সিস্টেম। এটার নাম এখনো কেউ দিতে পারেনি। এ জন্যই আমরা বলি ফ্যাসিস্ট।
কেন যেন এই উপমহাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা পরিবারকেন্দ্রিক। আমরা শ্রীলঙ্কায় সেটা দেখেছি। পাকিস্তানে দেখেছি। বাংলাদেশে দেখেছি। একমাত্র ভারত কিছুটা বেরিয়ে এসেছে, কারণ ওরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। যদিও কংগ্রেস আছে কিন্তু ওদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এত মজবুত যে ওই সুবিধা ওরা পাচ্ছে না আমাদের তুলনায়। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মজবুত করতে হবে, যাতে এ রকম ক্লেপ্টোক্রেসি, মাফিওক্রেসি পরিবারতন্ত্র আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। আমাদের সবার এক থাকতে হবে এই জায়গাটায়। সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য যেন হয় জনসেবা। রাজনীতির মূলে আমাদের চলে যেতে হবে। এ জন্য জনগণেরই চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু জনগণ তো খুব অসহায়।
শেখ হাসিনার ১৫-১৬ বছরের সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে আচরণ, সেটা কি তাঁর নিজের গড়া, নাকি আশপাশের কারও মাধ্যমে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন? আপনার কী মনে হয়?
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি তাঁর খুব কাছাকাছি থেকে বিরোধীদলীয় রাজনীতি করেছিলাম। পরে ২০০৮-০৯ সালে যখন মন্ত্রিসভায় ছিলাম, তাঁকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাঁর ভাবভঙ্গি, আচার পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তিনি আগে যেমন ছিলেন, তা থেকে রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে গেলেন। আমি যতটুকু দেখেছি, তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ নেই বাংলাদেশে। যা কিছু হতো, তাঁর ইচ্ছায় হতো। দলীয় ফোরামে এবং ইনফরমাল মিটিংয়ে কোনো বিষয়ে কথা হলে সবাই ভেবেছি তাঁকে এই ব্যাপারে বলতে হবে, কিন্তু তিনি আসার পর সবাই চুপ থাকতেন এবং তিনি কী শুনতে চান, সেটা আঁচ করে অন্যরা সুর পাল্টে ফেলতেন।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আপাতত আমার কোনো নির্ধারিত পরিকল্পনা নেই। আমি যে কাজটা করছি সেটা করেই আমি তৃপ্তি পাই, খুব সন্তুষ্ট আছি। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তো আমাদের কারোরই জানা নেই। এটা মহান আল্লাহ তাআলাই জানেন।
কিন্তু অনেকের বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে একটা আশা ছিল যে সোহেল তাজ একটা দল গঠন করবেন, দিশা দেখাবেন।
আমি বিশ্বাস করি যে তরুণদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা প্রত্যেকে একটা করে দুর্গ হতে পারি বাংলাদেশের জন্য। প্রত্যেককেই নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নীতি-আদর্শ থাকতে হবে এবং দৃঢ়তা থাকতে হবে। আমরা যদি এই অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে পারি, তাহলে আরও অনেকেই চলে আসবে। সবাইকে নিজ উদ্যোগে বেরিয়ে আসতে হবে, কারও জন্য অপেক্ষা করলে হবে না। তাহলে আপনা-আপনি একটা নেতৃত্ব চলে আসবে।
বর্তমান তরুণদের ওপর আপনার আস্থা কতটুকু?
আসলে আমরা সবাই আশ্চর্য হয়েছি এবারের এই আন্দোলনটা দেখে। আমরা ভেবেছিলাম জেন-জি হচ্ছে মোবাইল ডিভাইস নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু তারা প্রমাণ করল যে তারাও আন্দোলন করতে পারে, অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারে। জীবন দিতে পারে। এটা আমাদের আশান্বিত করে যে তারা পারবে।
এই অন্তর্বর্তী সরকার কতটুকু সফল বা ব্যর্থ বলে আপনি মনে করেন?
আমাদের বাংলাদেশ কিন্তু একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখনো আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। কারণ, ১৫-১৬ বছরে যে একনায়কতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল, তাতে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রে ‘ইয়েস ম্যান’ বসিয়ে তাদের মতলব হাসিল করা হয়েছে। এখন এই অন্তর্বর্তী সরকার এসে এ রকম একটা পরিস্থিতির ভেতরে পড়েছে। তাদের কোনো দল নেই। তাদের বসিয়েছে ছাত্ররা। অন্যদিকে বড় বড় রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সমর্থক গোষ্ঠী সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় আওয়ামী লীগে এখনো ন্যূনতম সমর্থক আছে ৩০ শতাংশ। বিএনপির আছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। ২০-২৫ শতাংশ আছে স্বতন্ত্র। বাকিরা জামায়াতের সমর্থক। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আপনি যখন সংস্কার করতে যাবেন, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল কিন্তু তাদের সুবিধাগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য নানাভাবে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করবে।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা। গণ-অভ্যুত্থান যখন ঘটে, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা কিন্তু আকাশচুম্বী হয়। জনগণ খুশি থাকে কখন? তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কাজ যখন সুন্দরভাবে করতে পারে। এর মধ্যে আছে দ্রব্যমূল্য, নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা। দুর্ভাগ্যবশত এই ক্ষেত্রগুলো কিন্তু এখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি এই সরকার। আমি আগে যে প্রতিকূলতার কথা বললাম, তাদের ওই বাধাগুলো অতিক্রম করতে একটু সময় লাগছে। আমি মনে করি, এদিকে নজর দেওয়া উচিত। সিন্ডিকেটগুলো ভাঙতে পারেনি। এখন উল্টো দাম বেড়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। আমার বিনীত পরামর্শ থাকবে যে এদিকে একটু বেশি মনোনিবেশ করার। কারণ, জনগণ যদি আবার তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো না পায় তাহলে কথা বলা শুরু করবে। তাই আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নাগালের মধ্যে আনতে হবে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আজকের পত্রিকার পাঠকদেরও।
প্রধান উপদেষ্টা আপনাকে ফোন করেছিলেন। কী কথা হলো তাঁর সঙ্গে?
আমি খুবই সম্মানিত হয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল লরিয়েট, বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য ব্যক্তি। তিনি যে এত অমায়িকভাবে আমাকে ফোন দেবেন, আমি এতে খুবই আশ্চর্য হয়েছি, খুবই মুগ্ধ হয়েছি। তিনি ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে আমি যেদিন পদযাত্রা করেছি, সেদিন তিনি দেখা করতে পারেননি। তিনি স্বীকার করেছেন আমাদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। এ বিষয়টা তিনি দেখবেন। আমার বাবাসহ মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় নেতাদের অবদানের কথা বললেন।
আপনি ৩ নভেম্বর তিনটি দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন। বলেছেন এটি আপনার শেষ পদযাত্রা। শেষ পদযাত্রা কেন?
আমি এই পদযাত্রাটা তিন বছর ধরে করছি। আগের দুই বছর কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব যে দল দিয়েছিল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সেই দল সরকারে ছিল। এটা যদি সত্যিকারের নীতি-আদর্শের আওয়ামী লীগ হতো, অবশ্যই আমার দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে ফেলত। তারা তো তা করেইনি বরং উপেক্ষা করেছে।
এবার দেখছি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে অনেকের বিবৃতি আসছে। অথচ দুই বছর আগে আমাকে তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে হয়েছে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি। দুই বছর আগে আমি তাদের পেজে এমন কমেন্ট করেছি।
ওই যে একাত্তরের ইতিহাস, ওই যে একটা বিবাদ—সেটারই প্রতিফলন। আসলে একটা পরিবার আওয়ামী লীগ নামের দলটাকে কুক্ষিগত করে ফেলেছে। এটা আওয়ামী লীগ না।
আমি তো এই ছিনতাই হওয়া আওয়ামী লীগের কাছে কিছু পেলাম না। তাই এবার গেলাম প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে। কারণ, সারা দেশের মানুষের তাঁর ওপর অনেক আশা-ভরসা। আমরা সবাই আশা করছি সংস্কার হবে, যাতে করে আগামী দিনে যে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে, তারা যেন সঠিক পথে দেশ পরিচালনা করতে পারে।
আমি কেন বলছি শেষ পদযাত্রা? কারণ, রাষ্ট্রের কাছে আমার বাবাসহ জাতীয় নেতাদের সন্তান হিসেবে তাঁদের প্রতি সম্মান জানানোর অধিকার চাওয়ার বিষয়টি আমাকে খুব লজ্জিত করছে।
এরপরও যদি মানুষের কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হয়, তখনো কি এমন পদযাত্রা আর করবেন না?
আমি তো অনবরত কথা বলে যাচ্ছি। তবে একই দাবিতে পদযাত্রাটা শেষ করতে চাই, কারণ এতে আমি নিজে বিব্রত হচ্ছি। এটা খুব দুঃখজনক। আমার দাবি তিনটা সহজ। প্রথম, ৩ নভেম্বরকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া, যাতে মানুষ জানতে পারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। কারা এই চার নেতা? যাঁরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পৃথিবীতে শুধু দুটি রাষ্ট্র ‘ডিক্লেয়ারেশন অব ইনডিপেনডেন্সের’ মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। আমাদের একটা ডিক্লেয়ারেশন অব ইনডিপেনডেন্স আছে—প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স। ওইটার ভিত্তিতে আমরা ১০ এপ্রিল ১৯৭১ একটা সরকার গঠন করেছিলাম। ইতিহাস সংরক্ষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে যদি সেই দিনকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটা দ্বিতীয় দাবি। আমার তৃতীয় দাবি স্পষ্ট—জাতীয় চার নেতাসহ আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন—সকল বীর, হিরো, সুপারহিরো—যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের জীবনী তথা তাঁদের অবদান পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করা এবং সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা; যেন একজন তরুণ বা তরুণী পড়ে বলতে পারেন, ‘ও মাই গড, তাঁরা এত বিসর্জন দিয়েছেন দেশের জন্য! এটা অনুপ্রেরণা জাগায়, একদম রক্ত গরম করে ফেলে। তাঁরা আমার দেশের জন্য এত করেছেন, তাহলে আমাদের আরও ভালো কিছু করতে হবে।’ এই যৌক্তিক দাবি পূরণ না করার তো কোনো কারণ আমি দেখছি না।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই ব্যাপারে আপনার কী জানা আছে?
আমি যা জেনেছি এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। গণহত্যা যখন শুরু হলো ২৫ মার্চ, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেপ্তার হলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আমার বাবা সে রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ছিলেন। তিনি একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন। কথা ছিল যে বঙ্গবন্ধু এই টেপ রেকর্ডারে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন এবং একটা কাগজে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা ছিল একই মর্মে। সেই সময়ে শাহবাগে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সব সাংবাদিক অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই রেকর্ডেড মেসেজটা দেননি এবং ওই কাগজে স্বাক্ষর দেননি। আমার বাবা পরে বাসায় চলে আসেন। আমার মা-বোনদের মুখ থেকে শুনেছি, বাবা বাসায় এসে সব ফাইলপত্র ফেলে, তছনছ করে বলেছিলেন, ‘আমাদের ২৩ বছরের আন্দোলন নষ্ট হয়ে গেল।’
আমি যেটা ধারণা করছি, যেহেতু বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন এবং আমার বাবা তখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে মুক্তির সংগ্রামে যোগ দেবেন, এই সময়টুকুর মধ্যে ইপিআরে আক্রমণ হয়েছে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এই খবরগুলো ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে। জিয়াউর রহমান ছিলেন চট্টগ্রামে। আমি মনে করছি, যেহেতু জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন যে রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি, তিনি তখন নিজ উদ্যোগে ঘোষণা দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন প্রথমবার। প্রথমবার তিনি কিন্তু বলেছিলেন, ‘আই, প্রেসিডেন্ট জিয়া...’। তারপর রাজনৈতিক নেতারা তাঁকে বলেন যে আপনি ঘোষণাটা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দিন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘অন বিহাফ আওয়ার গ্রেট লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান...’। এগুলো হচ্ছে ইতিহাসের টুকরা টুকরা ঘটনা। এগুলোকে আমাদের পূর্ণাঙ্গভাবে বিবেচনা, বিশ্লেষণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জিয়াউর রহমান যেটা করেছিলেন একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে, তাঁর অবস্থান থেকে ওই সময়, ওই মুহূর্তে সেটা তিনি সঠিক মনে করেছিলেন। মানুষ তো রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘোষণার অপেক্ষায় থাকে, সেটা যখন আসছিল না, তখন তিনি নিজে এই পদক্ষেপটা নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকেই নির্দেশনা আসে। কিন্তু এখানে ২৫, ২৬, ২৭ মার্চের গ্যাপটা কেন সৃষ্টি হলো, এটাও প্রশ্নের একটা বিষয়।
মুক্তিযুদ্ধে আপনি সবার অবদানের কথা বলছেন। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মনে করেন কি না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে জেনেছি, পড়েছি। আমার কাছে মনে হয়, অনেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক, আবার বলছি। জনগণ তাঁর নামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাঁর নামেই যুদ্ধ হয়েছে। তাঁর নামেই সরকার যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। এখানে কিছু প্রশ্ন আসে। তাঁর কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি কোনো ভূমিকা ছিল না। আমার মতে, আমরা ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ বলতে পারি—বঙ্গবন্ধু একজন এবং বাকি যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁরা সবাই ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ হতে পারেন। আমরা তো এটাকে শেয়ার করতে পারি। কেন আমরা একজনের ওপরে দিয়ে দিচ্ছি সবকিছু? একজনই যদি হতে হয় তাহলে সেটা মানুষ সিদ্ধান্ত নিক যে তিনি জাতির পিতা কি না। যদি মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়, হ্যাঁ তিনিই জাতির পিতা এবং সঙ্গে ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ ছিল, সেটাও ঠিক আছে।
১৫-১৬ বছরে বঙ্গবন্ধুকে ব্যানার হিসেবে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে কি তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। এত বছরের লাগামহীন দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা, পাশাপাশি আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা, হত্যা, গুম, মানে অরাজকতার একটা মহোৎসব চলছিল। এখন যেহেতু তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করেছেন, সেহেতু এই পুরো জিনিসটাই বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রতিফলিত হলো। মানুষ তো এখন বঙ্গবন্ধুকে খাটো করে দেখছে। এ জন্যই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যগুলোর ওপর তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মানুষ এখন লিংক করছে এই অনিয়ম, দুর্নীতি, অত্যাচার—সবকিছু এই ব্যক্তির নামে হয়েছে। এটা তো খুবই অন্যায় করা হলো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে।
আপনি কি রাজনীতি ছেড়েছেন নাকি রাজনীতি আপনাকে ছেড়েছে?
এটা তো খুবই ইন্টারেস্টিং একটা প্রশ্ন। ২০০৮ সালে আমি খুব আশা নিয়ে এসেছিলাম দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন করব বলে। সরকারের প্রথম ছয় মাসের যে কর্মকাণ্ড দেখেছি, আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। আমি হুবহু আঁচ না করতে পারলেও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যে ৫ আগস্টের মতো ঘটনা হয়তো আসবে সামনে। ২০১৪-তে যদি সঠিক নির্বাচন দেওয়া হতো তাহলে হয়তো আর ৫ আগস্ট আসত না।
আমার অবস্থান থেকে, নৈতিকতার দিক থেকে আমি একটা শপথ নিয়েছিলাম বাংলাদেশের জনগণের কাছে, আমি যখন প্রতিমন্ত্রী হই। সেই শপথটা ছিল, আমি আমার সবকিছু দিয়ে সৎভাবে, সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। যখন দেখলাম আমাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না, যখন দেখলাম লাগামহীন দুর্নীতি শুরু হয়েছে, যখন দেখলাম রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না এনে দ্বিগুণ গতিতে একই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমার সিদ্ধান্ত ছিল পদত্যাগ করা। পদত্যাগের মাধ্যমে আমি চেয়েছিলাম প্রতিবাদের একটা বীজ বপন করে দিতে।
শুধু কি এই কারণেই আপনাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হলো? শেখ সেলিমের সঙ্গে নাকি আপনার বিরোধ হয়েছিল?
না, এ রকম কিছু হয়নি। হ্যাঁ, দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, কিন্তু ওটা কারণ ছিল না। কারণটা হচ্ছে, এক পরিবারের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু ছিল এবং কোনো না কোনোভাবে পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তার করা ছিল একটা প্রধান কারণ। আমি চেষ্টা করছিলাম প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য। কিন্তু ওই বিশেষ পারিবারিক চাপ ছিল পুলিশের ওপর। এটাও একটা কারণ, ব্যক্তিগতভাবে কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি। কিন্তু তাদের প্রভাব ছিল। সেই প্রভাবটা আমি বুঝতে পেরেছি, সেই প্রভাবটা একটা ফ্যাক্টর।
পদত্যাগের আর একটা কারণ ছিল বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত। যেভাবে তদন্ত হচ্ছিল আমার কাছে এটা ভালো লাগেনি। আমি চেয়েছিলাম তদন্তটা একদম পরিষ্কার হবে, স্বচ্ছ হবে। কিন্তু দেখা গেল তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলো তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খানকে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরোপুরি বাইপাস করে, যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ছিল বিডিআর। দৃশ্য থেকে আমাদের পুরোপুরি বাইরে রাখা হলো এবং তদন্তটা অন্যদিকে চলে যাচ্ছিল। আমি তো মে মাস পর্যন্ত ছিলাম, তদন্ত চলেছে তার পরেও। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না। ওই পর্যন্ত যখন আমি দেখলাম তদন্তটা আমাদের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আমার কাছে এটা খুব অস্বাভাবিক লেগেছে। এটা তো হওয়ার কথা না। এখানে তো আমাদের সম্পৃক্ত থাকার কথা। আমি যদি সম্পৃক্ত থাকতাম, চেষ্টা করতাম স্বচ্ছ একটা তদন্ত করাতে। এখন অনেক প্রশ্ন উঠেছে বিডিআরের তদন্ত নিয়ে।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। আবার তিনিই কি দলটির বড় ক্ষতির কারণ হলেন?
আমি এটাই বলব, আশি ও নব্বইয়ের দশকে দলের মধ্যে কিছুটা ব্যালান্স ছিল। কারণ ওই সময় পর্যন্ত দলীয় ফোরামগুলোতে কথা বলা যেত। বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হতো। কেউ কোনো বিষয়ে মতামত দিলে সেটা একেবারে অগ্রাহ্য করা হতো না। কিন্তু পরে ওই গণতন্ত্রটা যখন শেষ হয়ে যায়, তখন অধঃপতন শুরু হয়। দুর্ভাগ্যবশত আমরা নীতি-আদর্শকেন্দ্রিক না হয়ে সুবিধাকেন্দ্রিক হয়ে যাই। আপনি যখন এককভাবে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করবেন, আপনার কিন্তু লাইক-মাইন্ডের লোকজন লাগবে, যাঁরা আপনাকে অন্ধভাবে সমর্থন করবেন। তাই নীতি-আদর্শ বিচ্যুত করে আপনি দলের ভেতর এমন কিছু লোকজন ঢুকিয়েছেন, যাঁরা স্বার্থান্বেষী, যাঁরা নিজের পকেট ভারী করার জন্য, ক্ষমতা পাওয়ার জন্য এ দলটাকে একেবার মূল নৈতিক জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
সম্প্রতি আপনার বোন শারমিন আহমদ বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনায় আওয়ামী লীগের কারও মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। তাই এই দলটিতে তিনি যাবেন না, দল গড়বেন না। বোনের সঙ্গে কি আপনি একমত?
আমি সম্পূর্ণভাবে একমত। আমি বারবার বলছি, শেখ হাসিনাসহ এই আওয়ামী লীগ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার আওয়ামী লীগ না। খাঁটি আওয়ামী লীগ না। আওয়ামী লীগটাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নামটা ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ভেতরে কিন্তু ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। আমার আম্মা একটা কথা বলতেন সব সময়, মাছের পচন ধরে মাছের মাথা থেকে, রাজনৈতিক দলের পচনও ধরে মাথা থেকে।
আপনি আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন বলে শোনা যাচ্ছিল। কথাটি কি ঠিক?
কথাটা একেবারেই সত্যি না। অনেকেই অনেক জায়গা থেকে বলছেন। আমি জানি না কেন বলছেন। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, আমি রাজনীতিতে এলে তাঁদের অসুবিধা হয়ে যাবে, হয়তো আমি জনপ্রিয় বেশি, ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন—আমি জানি না। কিন্তু আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমি রাজনীতিতে আসছি না। আমি যেখানে আছি, আমার কাজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমি স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করছি।
বাংলাদেশে এখন বিশাল একটা সমস্যা হচ্ছে, এই যে চারদিকে এখন হাসপাতালে ভরে গেছে। চিকিৎসাখানা, ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে মানুষ ভুগছে। এটার কারণ হচ্ছে, একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখন আধুনিক জীবনযাপন করছে, শহরকেন্দ্রিক। যার ফলে আমরা নানাবিধ অসুখ-বিসুখে ভুগছি। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছি। আমি হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষের জীবন বদলে দিয়েছি—এটা আমাকে সাংঘাতিকভাবে সন্তুষ্টি দেয়। কারণ একটা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হচ্ছে স্বাস্থ্য, সুস্থতা। এখন আমি কথা বলছি, এটা যদি রাজনীতি হয়, তাহলে রাজনীতি। আমি তো কথা বলেই যাব, এটা তো আমার দেশ, আমার অধিকার আছে কথা বলার। কিন্তু ওই প্ল্যাটফর্ম করে রাজনীতি করার ইচ্ছা আমার নেই।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের যে প্রভাব গড়ে উঠেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী বলে আপনি মনে করেন?
উপায় হচ্ছে নতুন প্রজন্ম, নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পরিবর্তন আনল। তাই এখন নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের মালিকানা নিতে হবে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একাত্তর সালকে ভুলে গিয়ে না। কারণ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের প্রাণশক্তি। আর ৫ আগস্ট হচ্ছে সেটারই ধারাবাহিকতা। আবার বলছি, ৫ আগস্টের যে দাবিদাওয়া ছিল, সেগুলো কিন্তু মুক্তিযুদ্ধেরও দাবিদাওয়া। সেই সময়ের মানুষ যেটা চেয়েছিল, ৫ আগস্টেও ছাত্র-জনতা তা-ই চেয়েছে। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ একই সূত্রে গাথা। নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে ইতিহাস থেকে। সেটাকে প্রাণশক্তি করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। তাদের এগিয়ে আসতে হবে, কিন্তু তাদের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসও জানতে হবে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমরা অনুপ্রেরণা নিতে পারব তাঁদের কাছ থেকে, যাঁরা অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের জন্য।
যেকোনো সভ্যতার দিকে যদি তাকাই, আমি রোমের কথা, গ্রিসের কথাই বলব। তারা এতদূর এগোতে পেরেছিল একটা কারণে—তারা তাদের নায়কদের সম্মান করত। তাই আপনার জন্য যাঁরা অবদান রেখেছেন, বলিদান দিয়েছেন, আপনি যদি তাঁদের সম্মান না দেন তাহলে আপনার কোনো ভবিষ্যৎ হবে না। এটা ইতিহাসই বলে দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে আপনি কেন দলটির তেমন সমালোচনা করেননি, এখন যেমন করছেন?
আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমার এক ভাগনেকেও কিন্তু গুম করা হয়েছিল। তাকে ১১ দিন আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল। আমি যখন পদত্যাগ নাটকের শিকার হই—পদত্যাগ করতেও কিন্তু আমাকে প্রায় যুদ্ধ করতে হয়েছিল। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছিল না, বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছিল, অনেক যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। এখানেও আবার নাটক—আমি স্পিকার হামিদ সাহেবের কাছে পাঠিয়েছিলাম পদত্যাগপত্র। তিনি বললেন, এটা কে না কে পাঠিয়েছে! অথচ আমি তাঁকে ফোন করে বললাম, ‘হামিদ কাকু (তাঁকে কাকু ডাকতাম), আমি কিন্তু পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি। পরে আমি নিজে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিলাম। এটা শুনে প্রধানমন্ত্রী খুব আশ্চর্য হলেন, ‘তুমি পদত্যাগ করে আসছো?’ তার আগে অনেক ঘটনা ছিল। অনেকভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল আমাকে রাখার জন্য।
যাই হোক, এখানে বুঝতে হবে, বিডিআর বিদ্রোহ, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা পরম্পরায় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছে। রীতিমতো একনায়কতন্ত্রের পথে যাত্রা। ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের প্রভাব চারদিকে ছিল। ২০১১, ২০১২, ২০১৩ সালের দিকে কিন্তু গুম হওয়া শুরু করল। খোঁজ করে দেখেন, এই সংস্কৃতিটা শুরু হয়েছে তখন। এই অবস্থায় আমার আরেক ভাগনেকে পুলিশ বেধড়ক মারধর করল। এগুলো সব আমার জন্য ইশারা ছিল।
আমরা দেখেছি, সরকার যে-ই হোক না কেন, একটা পর্যায়ে গিয়ে ‘ফ্যাসিস্ট’ আচরণ প্রকাশ পেতে থাকে। জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ বইটি নিশ্চয়ই পড়েছেন, অনেকটা সে রকম। যেখানে শাসক বদলালেও স্বৈরশাসন বারবার ফিরে আসে। উপন্যাসটির সঙ্গে বাস্তবতার মিল পান কি?
‘অল অ্যানিমেলস আর ইক্যুয়াল বাট সাম অ্যানিমেলস আর মোর ইক্যুয়াল।’ পড়েছি অ্যানিমেল ফার্ম। যাই হোক, ফ্যাসিস্ট আচরণ আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল না। কারণ, এখানে ফ্যাসিস্ট সংজ্ঞার একটা বিষয় আছে। ফ্যাসিজম একটা মতাদর্শকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু এখানে তো কোনো মতাদর্শ ছিল না। এটা তো একটা দুর্নীতি, হত্যাযজ্ঞ, গুম, খুনের উৎসব ছিল। আমি বলব এটা একটা ক্লেপ্টোক্রেসি, মাফিয়া এবং পরিবারতন্ত্রের সম্মিলন—তিনটার সংমিশ্রণে এটা একটা হাইব্রিড ফিউশন সিস্টেম। এটার নাম এখনো কেউ দিতে পারেনি। এ জন্যই আমরা বলি ফ্যাসিস্ট।
কেন যেন এই উপমহাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা পরিবারকেন্দ্রিক। আমরা শ্রীলঙ্কায় সেটা দেখেছি। পাকিস্তানে দেখেছি। বাংলাদেশে দেখেছি। একমাত্র ভারত কিছুটা বেরিয়ে এসেছে, কারণ ওরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। যদিও কংগ্রেস আছে কিন্তু ওদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এত মজবুত যে ওই সুবিধা ওরা পাচ্ছে না আমাদের তুলনায়। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মজবুত করতে হবে, যাতে এ রকম ক্লেপ্টোক্রেসি, মাফিওক্রেসি পরিবারতন্ত্র আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। আমাদের সবার এক থাকতে হবে এই জায়গাটায়। সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য যেন হয় জনসেবা। রাজনীতির মূলে আমাদের চলে যেতে হবে। এ জন্য জনগণেরই চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু জনগণ তো খুব অসহায়।
শেখ হাসিনার ১৫-১৬ বছরের সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে আচরণ, সেটা কি তাঁর নিজের গড়া, নাকি আশপাশের কারও মাধ্যমে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন? আপনার কী মনে হয়?
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি তাঁর খুব কাছাকাছি থেকে বিরোধীদলীয় রাজনীতি করেছিলাম। পরে ২০০৮-০৯ সালে যখন মন্ত্রিসভায় ছিলাম, তাঁকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাঁর ভাবভঙ্গি, আচার পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তিনি আগে যেমন ছিলেন, তা থেকে রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে গেলেন। আমি যতটুকু দেখেছি, তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ নেই বাংলাদেশে। যা কিছু হতো, তাঁর ইচ্ছায় হতো। দলীয় ফোরামে এবং ইনফরমাল মিটিংয়ে কোনো বিষয়ে কথা হলে সবাই ভেবেছি তাঁকে এই ব্যাপারে বলতে হবে, কিন্তু তিনি আসার পর সবাই চুপ থাকতেন এবং তিনি কী শুনতে চান, সেটা আঁচ করে অন্যরা সুর পাল্টে ফেলতেন।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আপাতত আমার কোনো নির্ধারিত পরিকল্পনা নেই। আমি যে কাজটা করছি সেটা করেই আমি তৃপ্তি পাই, খুব সন্তুষ্ট আছি। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তো আমাদের কারোরই জানা নেই। এটা মহান আল্লাহ তাআলাই জানেন।
কিন্তু অনেকের বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে একটা আশা ছিল যে সোহেল তাজ একটা দল গঠন করবেন, দিশা দেখাবেন।
আমি বিশ্বাস করি যে তরুণদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা প্রত্যেকে একটা করে দুর্গ হতে পারি বাংলাদেশের জন্য। প্রত্যেককেই নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নীতি-আদর্শ থাকতে হবে এবং দৃঢ়তা থাকতে হবে। আমরা যদি এই অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে পারি, তাহলে আরও অনেকেই চলে আসবে। সবাইকে নিজ উদ্যোগে বেরিয়ে আসতে হবে, কারও জন্য অপেক্ষা করলে হবে না। তাহলে আপনা-আপনি একটা নেতৃত্ব চলে আসবে।
বর্তমান তরুণদের ওপর আপনার আস্থা কতটুকু?
আসলে আমরা সবাই আশ্চর্য হয়েছি এবারের এই আন্দোলনটা দেখে। আমরা ভেবেছিলাম জেন-জি হচ্ছে মোবাইল ডিভাইস নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু তারা প্রমাণ করল যে তারাও আন্দোলন করতে পারে, অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারে। জীবন দিতে পারে। এটা আমাদের আশান্বিত করে যে তারা পারবে।
এই অন্তর্বর্তী সরকার কতটুকু সফল বা ব্যর্থ বলে আপনি মনে করেন?
আমাদের বাংলাদেশ কিন্তু একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখনো আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। কারণ, ১৫-১৬ বছরে যে একনায়কতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল, তাতে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রে ‘ইয়েস ম্যান’ বসিয়ে তাদের মতলব হাসিল করা হয়েছে। এখন এই অন্তর্বর্তী সরকার এসে এ রকম একটা পরিস্থিতির ভেতরে পড়েছে। তাদের কোনো দল নেই। তাদের বসিয়েছে ছাত্ররা। অন্যদিকে বড় বড় রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সমর্থক গোষ্ঠী সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় আওয়ামী লীগে এখনো ন্যূনতম সমর্থক আছে ৩০ শতাংশ। বিএনপির আছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। ২০-২৫ শতাংশ আছে স্বতন্ত্র। বাকিরা জামায়াতের সমর্থক। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আপনি যখন সংস্কার করতে যাবেন, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল কিন্তু তাদের সুবিধাগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য নানাভাবে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করবে।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা। গণ-অভ্যুত্থান যখন ঘটে, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা কিন্তু আকাশচুম্বী হয়। জনগণ খুশি থাকে কখন? তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কাজ যখন সুন্দরভাবে করতে পারে। এর মধ্যে আছে দ্রব্যমূল্য, নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা। দুর্ভাগ্যবশত এই ক্ষেত্রগুলো কিন্তু এখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি এই সরকার। আমি আগে যে প্রতিকূলতার কথা বললাম, তাদের ওই বাধাগুলো অতিক্রম করতে একটু সময় লাগছে। আমি মনে করি, এদিকে নজর দেওয়া উচিত। সিন্ডিকেটগুলো ভাঙতে পারেনি। এখন উল্টো দাম বেড়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। আমার বিনীত পরামর্শ থাকবে যে এদিকে একটু বেশি মনোনিবেশ করার। কারণ, জনগণ যদি আবার তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো না পায় তাহলে কথা বলা শুরু করবে। তাই আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নাগালের মধ্যে আনতে হবে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আজকের পত্রিকার পাঠকদেরও।

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৭ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৭ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৭ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান কারাবন্দী রয়েছেন। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থেকে একসময় তাঁর দল নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, সরকার গঠন করেছিল। এরপর কীভাবে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল, তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। কারাগারে তিনি সুস্থ আছেন, এই সংবাদ প্রকাশিত হলে ইমরান খানকে নিয়ে সংশয় কেটে যায়।
পাকিস্তানের ইতিহাস ঘাঁটলে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তন কীভাবে হয়, তা যে কেউ জেনে নিতে পারবে। নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে সরিয়ে হয় একটা পুতুল সরকার বসানো হয় অথবা সরাসরি ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভূত হন কোনো জেনারেল। ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান হয়ে আসিম মুনিরে এসে ঠেকেছে পাকিস্তানের বিধিলিপি। ফলে পাকিস্তানকে জেনারেলদের দুনিয়া বলা হলেও সত্যের অপলাপ হবে না। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন হতে চাইলেই সে সরকারের ওপর নেমে আসে বিভীষিকা। অরাজকতা যেন সেখানকার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।
ইমরান খান জনপ্রিয় নেতা। বিগত নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দলটির স্বতন্ত্র সদস্যরা জিতে নেন অনেকগুলো আসন। পাকিস্তানি রাজনীতিতে দলটির একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে। জেলখানায় বন্দী ইমরান খান পাকিস্তানে এখনো খুবই জনপ্রিয়। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি জেনারেলদের বিরোধের মধ্যে পড়ে নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন। এ ছাড়াও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় তিনি বিরোধী দলগুলোর রোষানলে পড়েন। যার ফলে তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ইমরান খানের একটি বক্তব্য স্মর্তব্য। তিনি তাঁর দলের সঙ্গে জুলুম হচ্ছে জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে কী হয়েছিল? সবচেয়ে বড় যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তাদের যে অধিকার ছিল, তা দেওয়া হয়নি।’ ইমরান আরও বলেছিলেন, ‘আমার জানা ছিল না, সেখানকার মানুষের ভেতরে কী পরিমাণ ঘৃণা জমেছিল। কেন ঘৃণা জমেছিল? তারা নির্বাচনে জিতেছিল আর আমরা তাদের সেই অধিকার দিচ্ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী তাদের হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখানে (পশ্চিম পাকিস্তানে) বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে দেব না।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র আসবে কি না, সেটা নির্ভর করবে দেশটি আইনের শাসনের প্রতি কতটা অনুগত, তার ওপর। আপাতত সেই পরিবেশের উন্নতি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আর সেই অন্ধকারই নিয়ন্ত্রণ করছে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান কারাবন্দী রয়েছেন। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থেকে একসময় তাঁর দল নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, সরকার গঠন করেছিল। এরপর কীভাবে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল, তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। কারাগারে তিনি সুস্থ আছেন, এই সংবাদ প্রকাশিত হলে ইমরান খানকে নিয়ে সংশয় কেটে যায়।
পাকিস্তানের ইতিহাস ঘাঁটলে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তন কীভাবে হয়, তা যে কেউ জেনে নিতে পারবে। নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে সরিয়ে হয় একটা পুতুল সরকার বসানো হয় অথবা সরাসরি ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভূত হন কোনো জেনারেল। ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান হয়ে আসিম মুনিরে এসে ঠেকেছে পাকিস্তানের বিধিলিপি। ফলে পাকিস্তানকে জেনারেলদের দুনিয়া বলা হলেও সত্যের অপলাপ হবে না। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন হতে চাইলেই সে সরকারের ওপর নেমে আসে বিভীষিকা। অরাজকতা যেন সেখানকার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।
ইমরান খান জনপ্রিয় নেতা। বিগত নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দলটির স্বতন্ত্র সদস্যরা জিতে নেন অনেকগুলো আসন। পাকিস্তানি রাজনীতিতে দলটির একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে। জেলখানায় বন্দী ইমরান খান পাকিস্তানে এখনো খুবই জনপ্রিয়। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি জেনারেলদের বিরোধের মধ্যে পড়ে নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন। এ ছাড়াও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় তিনি বিরোধী দলগুলোর রোষানলে পড়েন। যার ফলে তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ইমরান খানের একটি বক্তব্য স্মর্তব্য। তিনি তাঁর দলের সঙ্গে জুলুম হচ্ছে জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে কী হয়েছিল? সবচেয়ে বড় যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তাদের যে অধিকার ছিল, তা দেওয়া হয়নি।’ ইমরান আরও বলেছিলেন, ‘আমার জানা ছিল না, সেখানকার মানুষের ভেতরে কী পরিমাণ ঘৃণা জমেছিল। কেন ঘৃণা জমেছিল? তারা নির্বাচনে জিতেছিল আর আমরা তাদের সেই অধিকার দিচ্ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী তাদের হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখানে (পশ্চিম পাকিস্তানে) বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে দেব না।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র আসবে কি না, সেটা নির্ভর করবে দেশটি আইনের শাসনের প্রতি কতটা অনুগত, তার ওপর। আপাতত সেই পরিবেশের উন্নতি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আর সেই অন্ধকারই নিয়ন্ত্রণ করছে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

আমি খুবই সম্মানিত হয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল লরিয়েট, বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য ব্যক্তি। তিনি যে এত অমায়িকভাবে আমাকে ফোন দেবেন, আমি এতে খুবই আশ্চর্য হয়েছি, খুবই মুগ্ধ হয়েছি।
১০ নভেম্বর ২০২৪
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৭ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৭ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগেজাহীদ রেজা নূর

‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত। নারীকে সেখানে লালসার শিকার হিসেবে তুলে ধরে বাণিজ্যিক লাভালাভের খোঁজ করেছেন পরিচালকেরা। এরপর ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটাই তো থমকে দাঁড়াল। এমনভাবে সাংস্কৃতিক জগৎটা নির্মাণ করা হলো, যেন মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছুই ঘটেনি এ দেশে। এই মতলবি রাজনীতি চলেছিল অনেক দিন ধরেই। বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশে পরিণত করেছিল যারা, তাদের খায়েশ ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে আবার আঁতাত করার। যে রক্ত ঝরেছিল একাত্তরে, তাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল দম্ভ ভরে। কিন্তু সে সময় তাদের সে খায়েশ পূরণ হয়নি। একের পর এক সামরিক শাসক দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে সবচেয়ে যে বিষয়টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা হলো দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়।
কিছুটা সামাল দিয়ে আশির দশকে আবার শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ। কিন্তু মূলধারার চলচ্চিত্রে উল্লেখ করার মতো চলচ্চিত্র হয়নি বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। কোনো কোনো চলচ্চিত্রে মানবিক আবেদন আছে বটে, কিন্তু তা শিল্পের দাবির সঙ্গে একীভূত হতে পারেনি।
২. আজ আমরা এমন কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলব, যেগুলো নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার পরে। এই চলচ্চিত্রগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি নয়, স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিও নয়। এগুলো তথ্যচিত্র।
ছবিগুলোর মধ্যে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ নেই। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ভাবায়।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, নব্বইয়ের দশকে যখন ‘মুক্তির গান’ নিয়ে এলেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, তখন কীভাবে আলোড়িত হয়েছিল দেশের তরুণ সমাজ। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি এই সংযোগ একটা জাগরণী মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল। মার্কিন চলচ্চিত্রকার লিয়ার লেভিন যে ফুটেজগুলো ধারণ করেছিলেন একাত্তরে এবং যেগুলো অলসভাবে পড়ে ছিল তাঁর বেজমেন্টে, সেগুলো উদ্ধার করে এনে তারেক-ক্যাথরিন জুটি যা করলেন, তা আমাদের সত্যিকারের ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল।
হ্যাঁ, সে ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরও দেখা গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় হয়ে যা উঠে এসেছে, তা হলো স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায় এই যুদ্ধে। বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে যাওয়া শিল্পীরাই সংগঠিত হয়ে তৈরি করেছিলেন গানের দলটি। উদ্বাস্তু শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে তাঁরা শুনিয়েছেন জাগরণী গান। ব্যক্তিগতভাবে এই শিল্পীদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাঁদের কাছ থেকেই জেনেছি, খেয়ে-না খেয়ে কীভাবে তাঁরা কাজ করেছেন। আবার উদ্বাস্তুদের কেউ কেউ গানের শেষে জোর করে তাঁদের আপ্যায়ন করেছেন। খুবই সাধারণ খাবার, কিন্তু আন্তরিকতা? যুদ্ধে এই আন্তরিকতার প্রকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুদ্ধ তো মনস্তাত্ত্বিক খেলা। প্রচারণার খেলা। সেই খেলায় জয়ী হয় তারাই, যাদের পেছনে দেশের মানুষের সমর্থন থাকে। ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষ কীভাবে যোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাটির গান ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ। আরও অনেক কারণেই তা গুরুত্বপূর্ণ। একটি কারণের কথা তো উল্লেখ করতেই হবে—যারা একাত্তর নিয়ে এখন নতুন মিথ তৈরি করার মতো চালাকি করছে, তারা যেসব কারণে হালে পানি পাবে না, তার একটি হচ্ছে তথ্যভিত্তিক ইতিহাস। এই ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে নতুন বয়ান তৈরি করার চেষ্টা একসময় হাসির খোরাকে পরিণত হবে।
৩. ইদানীং দেখা যায়, অনেকেই একাত্তরে ধর্ষিতা নারীদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। অনেকে তো বলেই থাকেন, এই নারীরা নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় পাকিস্তানি হানাদারদের বাহুলগ্না হয়েছেন। এই অরুচিকর মন্তব্য কারা করতে পারেন, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই সচেতন, সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের ধারণা আছে। মুশকিল হলো, তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের কোন শিক্ষাটি নেবে? মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অনেকেই অনেক রকম ফায়দা তুলে নিয়েছেন। ফলে, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিংবা যাদের পরিবারে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই, অথবা যাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার সৌভাগ্য হয়নি, তারা তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতেই পারে। তাদের সামনে প্রামাণ্য উদাহরণ থাকলে তারা মাথা খাটিয়ে নিজেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে। তরুণদের দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই। তাদের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে না পারলে তারা অজায়গা-কুজায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সেখানেই বিপদ। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস খুঁজে নিতে হবে। তেমনই একটি তথ্যভান্ডার হতে পারে ইয়াসমিন কবিরের ‘এ সার্টেইন লিবারেশন।’
‘স্বাধীনতা’ বা ‘এ সার্টেইন লিবারেশন’ ছবিটি দেখতে বসলে প্রথমে বোঝাই যাবে না, এ ছবির প্রাণ কতটা গভীরে। গুরুদাসী মণ্ডলকে উন্মাদ মনে হতে পারে। খুলনার কপিলমুনির রাস্তাঘাটে যে পাগলিকে দেখা যায়, তার জীবনে একটা কাহিনি আছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে নারী, তাকে স্বাধীন বলা হবে নাকি পরাধীন—এই প্রশ্ন তো স্বভাবতই জেগে উঠতে পারে মনে। কাহিনি যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই মানুষ একটু একটু করে অনুভব করতে পারে আপাত এই স্বাধীনতা মোটেই মুক্তি নয়। বেঁচে থাকার অমোঘ নিয়মেই গুরুদাসীর এই পাগল বেশ।
এই ছবিতে অসাধারণ কিছু সংলাপ আছে। তার একটি এখানে বলা যেতে পারে। এক মুসলিম পরিবারের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করে গুরুদাসী। এ কারণেই সেই পরিবারে গরুর মাংস রান্না হয় না। এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী যখন ধর্মের বিষয়ে তার সরল স্বীকারোক্তি করে, বলে, সবার রক্তই লাল। তখন বড় বড় দার্শনিকের নানা আবিষ্কারও সেই সংলাপের কাছে ম্লান হয়ে যায়। এই নারী কথাগুলো শিখেছে জীবনে চলতে গিয়ে। তাই তা প্রগাঢ় সত্য হিসেবেই প্রতিভাত হয়।
একটা সময় গুরুদাসীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে শোনানো হয়। তার স্বামী এবং সন্তানদের কীভাবে তার সামনে হত্যা করা হয়েছে এবং কীভাবে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও মূর্ত হয়ে ওঠে ছবিতে।
একজন বীরাঙ্গনার জীবনকাহিনি ছবির ভাষায় বর্ণনা করে ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে যেভাবে এনেছেন ইয়াসমিন কবীর, তাতে তাঁকে সাধুবাদ দিতে হয়।
৪. একেবারে অন্য ধরনের একটি ছবি ‘নট এ পেনি, নট এ গান’। মকবুল চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ছবিটি। নিজের বাবাকে নিয়ে তৈরি এ ছবিটি। যে বিষয় নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে, সেদিকে সাধারণভাবে চোখ যায় না।
মকবুল চৌধুরীর বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুইয়া ছিলেন স্টিয়ারিং কমিটি অব দ্য অ্যাকশন কমিটি ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইউকের কনভেনর বা আহ্বায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনের বার্মিংহামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতেই তিনি ফিরে আসেন ঢাকায়। আর কখনো ব্রিটেনে ফিরে যাননি। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে যখন তিনি মারা যান, তখন তাঁর পরিবার আশা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি।
এরপর মকবুল চৌধুরী বার্মিংহামে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বার্মিংহামের বাঙালিদের সংগ্রাম এবং তাঁর নিজের বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুঁইয়ার অবদানের কথা। সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কিন্তু তাঁরা তাঁদের সেই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। রেখে দিয়েছেন সেই সংগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার কাটিং।
সেই ছবিতে পরিষ্কার হয়ে যায়, বার্মিংহাম তথা ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কত আত্মত্যাগ করেছেন কত মানুষ!
শুধু অস্ত্র হাতেই যুদ্ধ হয়নি, যুদ্ধ হয়েছে কতভাবে, সেটা জানা দরকার।
৫. আরও অনেক তথ্যচিত্রের কথা আলোচনায় আনতে হবে। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলোকে। এবং সে সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে, এই জনযুদ্ধের একজন জননায়ক ছিলেন। এই জনযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়েছে। সেটা মেনে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরা আজ আরও বেশি প্রয়োজন। যে তিনটি ছবির কথা উল্লেখ করা হলো, সেখানেও নির্মোহভাবে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করেই নতুন পরিবর্তনগুলো আসবে। অন্যভাবে নয়।

‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত। নারীকে সেখানে লালসার শিকার হিসেবে তুলে ধরে বাণিজ্যিক লাভালাভের খোঁজ করেছেন পরিচালকেরা। এরপর ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটাই তো থমকে দাঁড়াল। এমনভাবে সাংস্কৃতিক জগৎটা নির্মাণ করা হলো, যেন মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছুই ঘটেনি এ দেশে। এই মতলবি রাজনীতি চলেছিল অনেক দিন ধরেই। বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশে পরিণত করেছিল যারা, তাদের খায়েশ ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে আবার আঁতাত করার। যে রক্ত ঝরেছিল একাত্তরে, তাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল দম্ভ ভরে। কিন্তু সে সময় তাদের সে খায়েশ পূরণ হয়নি। একের পর এক সামরিক শাসক দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে সবচেয়ে যে বিষয়টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা হলো দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়।
কিছুটা সামাল দিয়ে আশির দশকে আবার শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ। কিন্তু মূলধারার চলচ্চিত্রে উল্লেখ করার মতো চলচ্চিত্র হয়নি বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। কোনো কোনো চলচ্চিত্রে মানবিক আবেদন আছে বটে, কিন্তু তা শিল্পের দাবির সঙ্গে একীভূত হতে পারেনি।
২. আজ আমরা এমন কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলব, যেগুলো নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার পরে। এই চলচ্চিত্রগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি নয়, স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিও নয়। এগুলো তথ্যচিত্র।
ছবিগুলোর মধ্যে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ নেই। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ভাবায়।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, নব্বইয়ের দশকে যখন ‘মুক্তির গান’ নিয়ে এলেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, তখন কীভাবে আলোড়িত হয়েছিল দেশের তরুণ সমাজ। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি এই সংযোগ একটা জাগরণী মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল। মার্কিন চলচ্চিত্রকার লিয়ার লেভিন যে ফুটেজগুলো ধারণ করেছিলেন একাত্তরে এবং যেগুলো অলসভাবে পড়ে ছিল তাঁর বেজমেন্টে, সেগুলো উদ্ধার করে এনে তারেক-ক্যাথরিন জুটি যা করলেন, তা আমাদের সত্যিকারের ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল।
হ্যাঁ, সে ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরও দেখা গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় হয়ে যা উঠে এসেছে, তা হলো স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায় এই যুদ্ধে। বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে যাওয়া শিল্পীরাই সংগঠিত হয়ে তৈরি করেছিলেন গানের দলটি। উদ্বাস্তু শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে তাঁরা শুনিয়েছেন জাগরণী গান। ব্যক্তিগতভাবে এই শিল্পীদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাঁদের কাছ থেকেই জেনেছি, খেয়ে-না খেয়ে কীভাবে তাঁরা কাজ করেছেন। আবার উদ্বাস্তুদের কেউ কেউ গানের শেষে জোর করে তাঁদের আপ্যায়ন করেছেন। খুবই সাধারণ খাবার, কিন্তু আন্তরিকতা? যুদ্ধে এই আন্তরিকতার প্রকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুদ্ধ তো মনস্তাত্ত্বিক খেলা। প্রচারণার খেলা। সেই খেলায় জয়ী হয় তারাই, যাদের পেছনে দেশের মানুষের সমর্থন থাকে। ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষ কীভাবে যোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাটির গান ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ। আরও অনেক কারণেই তা গুরুত্বপূর্ণ। একটি কারণের কথা তো উল্লেখ করতেই হবে—যারা একাত্তর নিয়ে এখন নতুন মিথ তৈরি করার মতো চালাকি করছে, তারা যেসব কারণে হালে পানি পাবে না, তার একটি হচ্ছে তথ্যভিত্তিক ইতিহাস। এই ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে নতুন বয়ান তৈরি করার চেষ্টা একসময় হাসির খোরাকে পরিণত হবে।
৩. ইদানীং দেখা যায়, অনেকেই একাত্তরে ধর্ষিতা নারীদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। অনেকে তো বলেই থাকেন, এই নারীরা নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় পাকিস্তানি হানাদারদের বাহুলগ্না হয়েছেন। এই অরুচিকর মন্তব্য কারা করতে পারেন, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই সচেতন, সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের ধারণা আছে। মুশকিল হলো, তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের কোন শিক্ষাটি নেবে? মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অনেকেই অনেক রকম ফায়দা তুলে নিয়েছেন। ফলে, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিংবা যাদের পরিবারে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই, অথবা যাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার সৌভাগ্য হয়নি, তারা তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতেই পারে। তাদের সামনে প্রামাণ্য উদাহরণ থাকলে তারা মাথা খাটিয়ে নিজেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে। তরুণদের দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই। তাদের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে না পারলে তারা অজায়গা-কুজায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সেখানেই বিপদ। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস খুঁজে নিতে হবে। তেমনই একটি তথ্যভান্ডার হতে পারে ইয়াসমিন কবিরের ‘এ সার্টেইন লিবারেশন।’
‘স্বাধীনতা’ বা ‘এ সার্টেইন লিবারেশন’ ছবিটি দেখতে বসলে প্রথমে বোঝাই যাবে না, এ ছবির প্রাণ কতটা গভীরে। গুরুদাসী মণ্ডলকে উন্মাদ মনে হতে পারে। খুলনার কপিলমুনির রাস্তাঘাটে যে পাগলিকে দেখা যায়, তার জীবনে একটা কাহিনি আছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে নারী, তাকে স্বাধীন বলা হবে নাকি পরাধীন—এই প্রশ্ন তো স্বভাবতই জেগে উঠতে পারে মনে। কাহিনি যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই মানুষ একটু একটু করে অনুভব করতে পারে আপাত এই স্বাধীনতা মোটেই মুক্তি নয়। বেঁচে থাকার অমোঘ নিয়মেই গুরুদাসীর এই পাগল বেশ।
এই ছবিতে অসাধারণ কিছু সংলাপ আছে। তার একটি এখানে বলা যেতে পারে। এক মুসলিম পরিবারের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করে গুরুদাসী। এ কারণেই সেই পরিবারে গরুর মাংস রান্না হয় না। এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী যখন ধর্মের বিষয়ে তার সরল স্বীকারোক্তি করে, বলে, সবার রক্তই লাল। তখন বড় বড় দার্শনিকের নানা আবিষ্কারও সেই সংলাপের কাছে ম্লান হয়ে যায়। এই নারী কথাগুলো শিখেছে জীবনে চলতে গিয়ে। তাই তা প্রগাঢ় সত্য হিসেবেই প্রতিভাত হয়।
একটা সময় গুরুদাসীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে শোনানো হয়। তার স্বামী এবং সন্তানদের কীভাবে তার সামনে হত্যা করা হয়েছে এবং কীভাবে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও মূর্ত হয়ে ওঠে ছবিতে।
একজন বীরাঙ্গনার জীবনকাহিনি ছবির ভাষায় বর্ণনা করে ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে যেভাবে এনেছেন ইয়াসমিন কবীর, তাতে তাঁকে সাধুবাদ দিতে হয়।
৪. একেবারে অন্য ধরনের একটি ছবি ‘নট এ পেনি, নট এ গান’। মকবুল চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ছবিটি। নিজের বাবাকে নিয়ে তৈরি এ ছবিটি। যে বিষয় নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে, সেদিকে সাধারণভাবে চোখ যায় না।
মকবুল চৌধুরীর বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুইয়া ছিলেন স্টিয়ারিং কমিটি অব দ্য অ্যাকশন কমিটি ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইউকের কনভেনর বা আহ্বায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনের বার্মিংহামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতেই তিনি ফিরে আসেন ঢাকায়। আর কখনো ব্রিটেনে ফিরে যাননি। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে যখন তিনি মারা যান, তখন তাঁর পরিবার আশা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি।
এরপর মকবুল চৌধুরী বার্মিংহামে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বার্মিংহামের বাঙালিদের সংগ্রাম এবং তাঁর নিজের বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুঁইয়ার অবদানের কথা। সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কিন্তু তাঁরা তাঁদের সেই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। রেখে দিয়েছেন সেই সংগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার কাটিং।
সেই ছবিতে পরিষ্কার হয়ে যায়, বার্মিংহাম তথা ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কত আত্মত্যাগ করেছেন কত মানুষ!
শুধু অস্ত্র হাতেই যুদ্ধ হয়নি, যুদ্ধ হয়েছে কতভাবে, সেটা জানা দরকার।
৫. আরও অনেক তথ্যচিত্রের কথা আলোচনায় আনতে হবে। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলোকে। এবং সে সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে, এই জনযুদ্ধের একজন জননায়ক ছিলেন। এই জনযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়েছে। সেটা মেনে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরা আজ আরও বেশি প্রয়োজন। যে তিনটি ছবির কথা উল্লেখ করা হলো, সেখানেও নির্মোহভাবে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করেই নতুন পরিবর্তনগুলো আসবে। অন্যভাবে নয়।

আমি খুবই সম্মানিত হয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল লরিয়েট, বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য ব্যক্তি। তিনি যে এত অমায়িকভাবে আমাকে ফোন দেবেন, আমি এতে খুবই আশ্চর্য হয়েছি, খুবই মুগ্ধ হয়েছি।
১০ নভেম্বর ২০২৪
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৭ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৭ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগেস্বপ্না রেজা

কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না। প্রকৃতির বিধানে মানবজাতির সঙ্গে কুকুর ও বিড়ালের এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিশ্বস্ততা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে এই দুটি প্রাণীর অবস্থান মানবজাতির সঙ্গে। এটাও যেন সৃষ্টিকর্তার বিধিভুক্ত। কুকুর, বিড়ালের মানুষের সঙ্গে অবস্থানের রহস্য সহনশীলতা, পছন্দ-অপছন্দ, ভালোবাসা—সবকিছুর পেছনে কারণ নিশ্চয়ই আছে, যা দৃশ্যমান হয় না। যেটুকু বুঝতে পারা যায় তা হলো, কুকুর-বিড়াল ভালোবেসে কেউ কেউ ঘরে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখে, যত্ন করে। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয় সমাজে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে। বিশেষ করে যাদের কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কাজ করে এবং সর্বোপরি যারা প্রকৃতার্থে মানবিক, তারা এমন মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ পেয়েছে। মূলধারার মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় অন্য প্রাণীপ্রিয় মানুষকে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। ঘটনাটি হলো পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় একজন নারী আটটি কুকুরের ছানাকে বস্তাবন্দি করে মেরে ফেলেছেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কুকুরের ডাকে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে এমন নির্মম কাজ করেছেন। তাঁর শিশুপুত্র বলেছে, তার মা বস্তায় ভরে কুকুরের ছানাগুলোকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। মা কুকুর তার ছানাদের না পেয়ে পুরো এলাকায় কান্না করে বেড়িয়েছে, অসহায় হয়ে ঘুরে ফিরেছে। তার স্তনে ছিল সন্তানদের জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আহার। সন্তানদের এই দুগ্ধপান করাতে না পারায় অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে মা কুকুর তার ছানাদের খুঁজে ফিরেছে। তার কণ্ঠে তার মতোই ভাষা ছিল। চোখে ছিল অশ্রু। শরীরের ভেতর নিদারুণ অসহায়ত্ব। একজন মা মানুষের মতোই তার আর্তনাদ ছিল। যিনি হত্যা করেছেন তিনি মা হয়েও বোঝেননি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে বিষয়টি পড়েছে। তাঁরা মর্মাহত হয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে চারপাশের প্রতিবাদে। জানা গেছে, যিনি হত্যা করেছেন তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ফলাও করে সেটা প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটা তাঁর বড় পরিচয় নয়। বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন মা মানুষ হয়ে একজন মা কুকুরকে নিঃসন্তান করেছেন, আটটি সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন।
যে মা কুকুর তার আটটি সন্তান হারিয়েছে তাকে স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন টমি। তাঁদের ভালোবাসায় সিক্ত টমি তার সন্তানদের আশ্রয় হিসেবে জায়গাটিকে সুরক্ষিত মনে করেছিল। কিন্তু সবকিছুকে অর্থহীন করে দিল একজন নিশি খাতুন, যিনি মা আর সন্তানের মধ্যকার গভীর টান, অনিবার্য সান্নিধ্যটুকু বুঝতে পারেন না। কিংবা স্বার্থপরের মতো কেবল নিজেরটা বুঝতে শিখেছেন। সমাজে একটা বোধ বেশ প্রচলন আছে, সেটা হলো, শিশু ও ফুলকে যে ভালোবাসে না সে আদতে ভালো মানুষ নয়। মানুষসহ সব জীবের কথাই এখানে প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে প্রায়ই একজন আরেকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে, নিঃস্ব করে, ধ্বংস করে এবং এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদির স্পৃহা। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিচারহীনতার বেষ্টনীতে থেকে যায়, থেকে যাচ্ছে। যার পেছনেও থাকে হীন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অপরাধ করে মুক্ত জীবনে বসবাস—এই এক ধরনের সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে আমাদের সমাজে। এই সংস্কৃতির চর্চা সর্বত্র এবং ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে সুবিধাবাদী করতে যথেষ্ট সহায়ক। আমাদের সমাজে শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়, যেভাবে ধর্ষণ করা হয়, তার পাশে আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে হত্যার ঘটনাটি কিন্তু বেমানান নয়, বরং বেশ মিলে যায়। কিছুদিন আগেও দেখা গেছে যে কুকুর প্রাণীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছে। একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, এই সমাজে কোনো প্রাণীই আর নিরাপদ নয়। হত্যার বিষয়টি প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে পৌঁছে গেছে। যেভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে, সেভাবে অন্য জীব হত্যা হচ্ছে। হত্যা করাই যেন সহজতর কাজ। এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সরকারি ও বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হরিণ মেরে খাওয়ার প্রবণতা ও স্পর্ধার তো অপ্রচলন ঘটেনি কখনো, বরং তা রয়েই গেছে।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, কুকুরছানা হত্যাকারী নিশি রহমান ধরা পড়েছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, তিনি বস্তায় ভরে রেখে এসেছেন কিন্তু পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেননি। কিন্তু নিশি রহমানের শিশুপুত্র বলেছে, কুকুরছানাদের বস্তায় ভরে পানিতে ফেলেছে। সব শিশুর ভেতরেই শিশুসুলভ সরলতা কাজ করে যা সত্য বলতে সহায়ক হয়। নিশি তাঁর অপরাধকে লুকাতে পারেননি নিজের শিশুপুত্রের সরলতার কারণেই। প্রকৃতির হিসাব কখনো ভুল হয়নি, ভুল হয় না। মিডিয়ায় দেখা গেল, মা কুকুরকে স্বস্তি ও শান্তি দেওয়ার জন্য দুটি কুকুরছানা এনে তার দুগ্ধপান করানো হচ্ছে। কাজটি করছেন স্থানীয় তরুণরা এবং বিষয়টি অবলোকন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মা কুকুরের সঙ্গে কুকুরছানা দুটিকে অভ্যস্ত করা হচ্ছে, টিভির পর্দায় দেখা গেল। মা কুকুর তার দুগ্ধপানে বেশ সহায়তা করছে ছানা দুটিকে। মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো, এই হিংস্র, হিংসাবিদ্বেষের জগতে ভিন্নতর ও সবচেয়ে মধুর ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করছি যেন। ভীষণ ভালো লাগল। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা জাগল, জগতের সব প্রাণীর স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিত করার চেতনা জাগ্রত হোক সর্বত্র।
একজন বলছিলেন, নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়েছে। প্রাণিসম্পদ রক্ষার আইনে তাঁর বিচার হলে মানুষের ভেতর সচেতনতা বাড়বে। এ ধরনের অপরাধ আর কেউ করবে না। ঠিক কথা। কিন্তু শেষ অবধি কী হয় বা হবে ? যেমন আমরা দেখি, মানবসন্তানকে হত্যা করেও অনেক অপরাধী বিচারবহির্ভূত জীবনযাপন করছে, আবার যেকোনো প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসায় শিশুরাই কেবল বলি হয় বা হচ্ছে, সেখানে কঠিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি কাজ করে এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, যাচ্ছে।
যেকোনো অপরাধ আইনের আওতায় আনা জরুরি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া হতে হবে সংবিধান অনুসারে এবং দলীয় রাজনীতিমুক্ত। মিডিয়ায় প্রচারনির্ভর কর্মকাণ্ড নয়, বরং লক্ষ্য হতে হবে প্রতিটি প্রাণীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাতেই সচেতনতা বাড়বে, মায়েদের শান্তি ফিরবে। দেশ হবে সবার বসবাসের উপযোগী।

কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না। প্রকৃতির বিধানে মানবজাতির সঙ্গে কুকুর ও বিড়ালের এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিশ্বস্ততা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে এই দুটি প্রাণীর অবস্থান মানবজাতির সঙ্গে। এটাও যেন সৃষ্টিকর্তার বিধিভুক্ত। কুকুর, বিড়ালের মানুষের সঙ্গে অবস্থানের রহস্য সহনশীলতা, পছন্দ-অপছন্দ, ভালোবাসা—সবকিছুর পেছনে কারণ নিশ্চয়ই আছে, যা দৃশ্যমান হয় না। যেটুকু বুঝতে পারা যায় তা হলো, কুকুর-বিড়াল ভালোবেসে কেউ কেউ ঘরে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখে, যত্ন করে। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয় সমাজে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে। বিশেষ করে যাদের কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কাজ করে এবং সর্বোপরি যারা প্রকৃতার্থে মানবিক, তারা এমন মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ পেয়েছে। মূলধারার মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় অন্য প্রাণীপ্রিয় মানুষকে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। ঘটনাটি হলো পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় একজন নারী আটটি কুকুরের ছানাকে বস্তাবন্দি করে মেরে ফেলেছেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কুকুরের ডাকে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে এমন নির্মম কাজ করেছেন। তাঁর শিশুপুত্র বলেছে, তার মা বস্তায় ভরে কুকুরের ছানাগুলোকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। মা কুকুর তার ছানাদের না পেয়ে পুরো এলাকায় কান্না করে বেড়িয়েছে, অসহায় হয়ে ঘুরে ফিরেছে। তার স্তনে ছিল সন্তানদের জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আহার। সন্তানদের এই দুগ্ধপান করাতে না পারায় অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে মা কুকুর তার ছানাদের খুঁজে ফিরেছে। তার কণ্ঠে তার মতোই ভাষা ছিল। চোখে ছিল অশ্রু। শরীরের ভেতর নিদারুণ অসহায়ত্ব। একজন মা মানুষের মতোই তার আর্তনাদ ছিল। যিনি হত্যা করেছেন তিনি মা হয়েও বোঝেননি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে বিষয়টি পড়েছে। তাঁরা মর্মাহত হয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে চারপাশের প্রতিবাদে। জানা গেছে, যিনি হত্যা করেছেন তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ফলাও করে সেটা প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটা তাঁর বড় পরিচয় নয়। বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন মা মানুষ হয়ে একজন মা কুকুরকে নিঃসন্তান করেছেন, আটটি সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন।
যে মা কুকুর তার আটটি সন্তান হারিয়েছে তাকে স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন টমি। তাঁদের ভালোবাসায় সিক্ত টমি তার সন্তানদের আশ্রয় হিসেবে জায়গাটিকে সুরক্ষিত মনে করেছিল। কিন্তু সবকিছুকে অর্থহীন করে দিল একজন নিশি খাতুন, যিনি মা আর সন্তানের মধ্যকার গভীর টান, অনিবার্য সান্নিধ্যটুকু বুঝতে পারেন না। কিংবা স্বার্থপরের মতো কেবল নিজেরটা বুঝতে শিখেছেন। সমাজে একটা বোধ বেশ প্রচলন আছে, সেটা হলো, শিশু ও ফুলকে যে ভালোবাসে না সে আদতে ভালো মানুষ নয়। মানুষসহ সব জীবের কথাই এখানে প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে প্রায়ই একজন আরেকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে, নিঃস্ব করে, ধ্বংস করে এবং এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদির স্পৃহা। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিচারহীনতার বেষ্টনীতে থেকে যায়, থেকে যাচ্ছে। যার পেছনেও থাকে হীন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অপরাধ করে মুক্ত জীবনে বসবাস—এই এক ধরনের সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে আমাদের সমাজে। এই সংস্কৃতির চর্চা সর্বত্র এবং ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে সুবিধাবাদী করতে যথেষ্ট সহায়ক। আমাদের সমাজে শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়, যেভাবে ধর্ষণ করা হয়, তার পাশে আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে হত্যার ঘটনাটি কিন্তু বেমানান নয়, বরং বেশ মিলে যায়। কিছুদিন আগেও দেখা গেছে যে কুকুর প্রাণীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছে। একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, এই সমাজে কোনো প্রাণীই আর নিরাপদ নয়। হত্যার বিষয়টি প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে পৌঁছে গেছে। যেভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে, সেভাবে অন্য জীব হত্যা হচ্ছে। হত্যা করাই যেন সহজতর কাজ। এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সরকারি ও বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হরিণ মেরে খাওয়ার প্রবণতা ও স্পর্ধার তো অপ্রচলন ঘটেনি কখনো, বরং তা রয়েই গেছে।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, কুকুরছানা হত্যাকারী নিশি রহমান ধরা পড়েছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, তিনি বস্তায় ভরে রেখে এসেছেন কিন্তু পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেননি। কিন্তু নিশি রহমানের শিশুপুত্র বলেছে, কুকুরছানাদের বস্তায় ভরে পানিতে ফেলেছে। সব শিশুর ভেতরেই শিশুসুলভ সরলতা কাজ করে যা সত্য বলতে সহায়ক হয়। নিশি তাঁর অপরাধকে লুকাতে পারেননি নিজের শিশুপুত্রের সরলতার কারণেই। প্রকৃতির হিসাব কখনো ভুল হয়নি, ভুল হয় না। মিডিয়ায় দেখা গেল, মা কুকুরকে স্বস্তি ও শান্তি দেওয়ার জন্য দুটি কুকুরছানা এনে তার দুগ্ধপান করানো হচ্ছে। কাজটি করছেন স্থানীয় তরুণরা এবং বিষয়টি অবলোকন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মা কুকুরের সঙ্গে কুকুরছানা দুটিকে অভ্যস্ত করা হচ্ছে, টিভির পর্দায় দেখা গেল। মা কুকুর তার দুগ্ধপানে বেশ সহায়তা করছে ছানা দুটিকে। মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো, এই হিংস্র, হিংসাবিদ্বেষের জগতে ভিন্নতর ও সবচেয়ে মধুর ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করছি যেন। ভীষণ ভালো লাগল। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা জাগল, জগতের সব প্রাণীর স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিত করার চেতনা জাগ্রত হোক সর্বত্র।
একজন বলছিলেন, নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়েছে। প্রাণিসম্পদ রক্ষার আইনে তাঁর বিচার হলে মানুষের ভেতর সচেতনতা বাড়বে। এ ধরনের অপরাধ আর কেউ করবে না। ঠিক কথা। কিন্তু শেষ অবধি কী হয় বা হবে ? যেমন আমরা দেখি, মানবসন্তানকে হত্যা করেও অনেক অপরাধী বিচারবহির্ভূত জীবনযাপন করছে, আবার যেকোনো প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসায় শিশুরাই কেবল বলি হয় বা হচ্ছে, সেখানে কঠিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি কাজ করে এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, যাচ্ছে।
যেকোনো অপরাধ আইনের আওতায় আনা জরুরি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া হতে হবে সংবিধান অনুসারে এবং দলীয় রাজনীতিমুক্ত। মিডিয়ায় প্রচারনির্ভর কর্মকাণ্ড নয়, বরং লক্ষ্য হতে হবে প্রতিটি প্রাণীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাতেই সচেতনতা বাড়বে, মায়েদের শান্তি ফিরবে। দেশ হবে সবার বসবাসের উপযোগী।

আমি খুবই সম্মানিত হয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল লরিয়েট, বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য ব্যক্তি। তিনি যে এত অমায়িকভাবে আমাকে ফোন দেবেন, আমি এতে খুবই আশ্চর্য হয়েছি, খুবই মুগ্ধ হয়েছি।
১০ নভেম্বর ২০২৪
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৭ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৭ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগেসানজিদা সামরিন

ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির কান্না শুনে একজন কৃষক তাকে উদ্ধার করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে দ্রুত শিশুটিকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিচয় জানা যায়নি।
গত এক মাসের কথাই যদি ধরি, এ রকম আরও কতগুলো খবর পড়তে হয়েছে তার হিসাব নেই। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে পলিব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে সন্তানের জন্মের পর মা নিজেই পালিয়ে গেছেন। একজন ডাক্তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্য়মে জানিয়েছেন, এক নবজাতকের জন্মের পর একটি কঠিন অসুখ দেখা দেয়। বাবা-মা চিকিৎসা করাতে চাননি। সন্তানটিকে হাসপাতালে ফেলে বাড়ি চলে যান। হাসপাতাল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চেষ্টা করেছে শিশুটিকে বাঁচাতে, কিন্তু সম্ভব হয়নি। সে মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়ে। নবজাতকের মৃতদেহ নেওয়ার জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা কেউ আসতে রাজি হননি। কী বীভৎস তাই না? ভাবতেই গায়ে শীতকাঁটা দিচ্ছে আমার, হয়তো আপনাদেরও। আবার এমন জানা যায়, হাসপাতালের টয়লেটের ওয়াটার ট্যাংকে নবজাতককে ডুবিয়ে রেখে পালিয়ে গেছেন তারই নিজের মা।
ওপরের প্রতিটি ঘটনা বা খবরই চিরাচরিত সেই কথাটিকে মিথ্য়ে করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, ‘মা’র মতো আপন আর কেউ হয় না।’ যদি তাই হয়, তাহলে যে শিশুটি আজ বা গতকাল পৃথিবীর আলো দেখল, তার স্থান ধানখেতে কেন। কেন সেখানে শিয়াল, কুকুর এসে আঁচড় কাটছে তার ফুলের মতো শরীরে? ময়লার স্তূপে পড়ে কাঁদছে কেন সে? কেন মা নিজেই চান তাঁর সন্তানটি মরে যাক!
অনেকেই হয়তো এর উত্তরে বলবেন, ‘উপায় ছিল না, তাই হয়তো’, অথবা ‘সেই নারী পরিস্থিতির শিকার’। যদি আমি আমার সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে উল্টোপথে হাঁটি, যদি বলি, এই শিশুগুলোর জীবন কোনো পরিস্থিতি নয়, বরং কারও ইচ্ছের ফল। সোজাসাপ্টাভাবে বললে, কোনো নারী, তিনি বিবাহিত হোন বা অবিবাহিত; স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান বা ধর্ষণের শিকার হন; ঘটনা যাই হোক, তিনি যদি গর্ভকাল এড়াতে চান তাহলে আগে থেকেই তো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল। ২০২৫-এ এসে কোনো শিশু জন্মের পরে গিয়ে পরিত্যক্ত হবে, এ ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন। বাজারে বিভিন্ন রকমের জন্মনিরোধক পাওয়া যায়, অপরিকল্পিত গর্ভধারণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে অ্যাবরশনও কিন্তু করা যায়। ফলে যে নারী বা যে দম্পতি সন্তান চাইবেন না, তিনি কেন এসব উপায় বেছে নেন না? আর যদি সেই গর্ভস্থ সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিতই হয়, সমাজের ভয়েই যদি জন্মের পর সন্তানকে ডাস্টবিনে, ওয়াটার ট্যাংকে ফেলে দিতে হয়, তাহলে ৯ মাস ১০ দিন ধরে তাকে গর্ভে রেখেছেনই কীভাবে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। যে নারী সবার চোখের সামনে নিজের গর্ভকাল পার করে ফেলতে পারেন, তিনি কিনা সমাজের দোহাই দিয়ে সদ্য় জন্মানো সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন? কথা এখানেই শেষ নয়, আরও আছে।
নিজের সন্তানকে হত্য়া করার আরও একটি কারণ পাওয়া যায়। হয়তো সেই নারী নতুন আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আর সেই সম্পর্ক সফল করতে হলে সন্তান নামের বাহুল্য না থাকাই হয়তো শ্রেয় বলে ভাবেন তিনি। আমার মতে, সেখানেও তো উপায় রয়েছে। এমন অনেক নিঃসন্তান মা রয়েছেন যাঁরা দিনের পর দিন মা ডাকটি শুনতে চান। এমন নিরাপদ কোনো পরিবার খুঁজে সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিলেই তো হয়। হত্য়ার দায় না নিয়ে জীবনসঙ্গীকে ডিভোর্স ও সন্তানকে দত্তক দিলে নিজের জীবনটাও নির্বিঘ্নে কাটানো যায়। ওই জীবনগুলোও বেঁচে থাকার নতুন কারণ খুঁজে পায়।
একজন মা নিজের সন্তানের জীবননাশকারী আরও একটি কারণে হয়ে ওঠেন। এই কারণটি ২০২৫ সালে এসেও অনেকের কাছে হাস্য়রসের বিষয়। তা হলো–পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বজুড়ে সন্তান প্রসবের পর প্রতি ১০০ জনে ৮৫ জন এই জটিলতায় ভোগেন। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যান অনেকে। কিন্তু যাঁরা স্বাভাবিক হতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেই ঘটে অঘটন। বেবি ব্লু থেকে সৃষ্টি হয় তীব্র হতাশার, তারপর তা রূপ নেয় পোস্টপার্টাম সাইকোসিসে। এসব ক্ষেত্রে মা নিজের সন্তানকে হত্য়া পর্যন্ত করতে পারেন। এমনিতেও খেয়াল করলে দেখবেন, একজন মা তাঁর সন্তানের সঙ্গে যত ধরনের বিরূপ আচরণ করেন, তার অন্যতম মূল কারণ পারিবারিক অসহযোগিতা। আমাদের দেশে এই সংকট আরও প্রবল। বেশির ভাগ পরিবারেই দেখা যায়, বাড়ির সব কাজ ও সন্তান লালন-পালনের প্রতিটি বিষয় মায়ের কাঁধে চেপে বসে আছে। ফলে দিন শেষে, তিনিও ভারসাম্য় হারাচ্ছেন। চোটপাট করছেন অবুঝ শিশুটির ওপর।
তবে যে কথা দিয়ে এই লেখার শুরু, তাতে একটা কথাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে; নিজেদের কাছে একটা আশা রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে, তা হলো–যদি কেউ সন্তান না চান, তাকে সুন্দর একটা জীবন দেওয়ার ইচ্ছা না থাকে বা বুঝে থাকেন পৃথিবীতে এলে তাকে অবহেলাই পেতে হবে; তাহলে তাকে পৃথিবীতে আসার পথ না দেখানোই ভালো। যে শিশু নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে না, তাকে আপনি তো আপনার ইচ্ছাতে হত্য়া করতে পারেন না। হাওয়ায় ভেসে আসা নবজাতকের কান্না, শিয়ালের আঁচড়ে কেঁপে ওঠা তার শরীর, জলের বুদ্বুদে মিশে যাওয়া তার বুকের মৃদু ধুকপুক শব্দ প্রকৃতিতে যে অভিশাপ ঢেলে দেয়। প্রকৃতি সব মনে রাখে। সেও তো সব কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দেয়। কী, দেয় না?

ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির কান্না শুনে একজন কৃষক তাকে উদ্ধার করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে দ্রুত শিশুটিকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিচয় জানা যায়নি।
গত এক মাসের কথাই যদি ধরি, এ রকম আরও কতগুলো খবর পড়তে হয়েছে তার হিসাব নেই। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে পলিব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে সন্তানের জন্মের পর মা নিজেই পালিয়ে গেছেন। একজন ডাক্তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্য়মে জানিয়েছেন, এক নবজাতকের জন্মের পর একটি কঠিন অসুখ দেখা দেয়। বাবা-মা চিকিৎসা করাতে চাননি। সন্তানটিকে হাসপাতালে ফেলে বাড়ি চলে যান। হাসপাতাল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চেষ্টা করেছে শিশুটিকে বাঁচাতে, কিন্তু সম্ভব হয়নি। সে মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়ে। নবজাতকের মৃতদেহ নেওয়ার জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা কেউ আসতে রাজি হননি। কী বীভৎস তাই না? ভাবতেই গায়ে শীতকাঁটা দিচ্ছে আমার, হয়তো আপনাদেরও। আবার এমন জানা যায়, হাসপাতালের টয়লেটের ওয়াটার ট্যাংকে নবজাতককে ডুবিয়ে রেখে পালিয়ে গেছেন তারই নিজের মা।
ওপরের প্রতিটি ঘটনা বা খবরই চিরাচরিত সেই কথাটিকে মিথ্য়ে করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, ‘মা’র মতো আপন আর কেউ হয় না।’ যদি তাই হয়, তাহলে যে শিশুটি আজ বা গতকাল পৃথিবীর আলো দেখল, তার স্থান ধানখেতে কেন। কেন সেখানে শিয়াল, কুকুর এসে আঁচড় কাটছে তার ফুলের মতো শরীরে? ময়লার স্তূপে পড়ে কাঁদছে কেন সে? কেন মা নিজেই চান তাঁর সন্তানটি মরে যাক!
অনেকেই হয়তো এর উত্তরে বলবেন, ‘উপায় ছিল না, তাই হয়তো’, অথবা ‘সেই নারী পরিস্থিতির শিকার’। যদি আমি আমার সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে উল্টোপথে হাঁটি, যদি বলি, এই শিশুগুলোর জীবন কোনো পরিস্থিতি নয়, বরং কারও ইচ্ছের ফল। সোজাসাপ্টাভাবে বললে, কোনো নারী, তিনি বিবাহিত হোন বা অবিবাহিত; স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান বা ধর্ষণের শিকার হন; ঘটনা যাই হোক, তিনি যদি গর্ভকাল এড়াতে চান তাহলে আগে থেকেই তো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল। ২০২৫-এ এসে কোনো শিশু জন্মের পরে গিয়ে পরিত্যক্ত হবে, এ ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন। বাজারে বিভিন্ন রকমের জন্মনিরোধক পাওয়া যায়, অপরিকল্পিত গর্ভধারণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে অ্যাবরশনও কিন্তু করা যায়। ফলে যে নারী বা যে দম্পতি সন্তান চাইবেন না, তিনি কেন এসব উপায় বেছে নেন না? আর যদি সেই গর্ভস্থ সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিতই হয়, সমাজের ভয়েই যদি জন্মের পর সন্তানকে ডাস্টবিনে, ওয়াটার ট্যাংকে ফেলে দিতে হয়, তাহলে ৯ মাস ১০ দিন ধরে তাকে গর্ভে রেখেছেনই কীভাবে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। যে নারী সবার চোখের সামনে নিজের গর্ভকাল পার করে ফেলতে পারেন, তিনি কিনা সমাজের দোহাই দিয়ে সদ্য় জন্মানো সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন? কথা এখানেই শেষ নয়, আরও আছে।
নিজের সন্তানকে হত্য়া করার আরও একটি কারণ পাওয়া যায়। হয়তো সেই নারী নতুন আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আর সেই সম্পর্ক সফল করতে হলে সন্তান নামের বাহুল্য না থাকাই হয়তো শ্রেয় বলে ভাবেন তিনি। আমার মতে, সেখানেও তো উপায় রয়েছে। এমন অনেক নিঃসন্তান মা রয়েছেন যাঁরা দিনের পর দিন মা ডাকটি শুনতে চান। এমন নিরাপদ কোনো পরিবার খুঁজে সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিলেই তো হয়। হত্য়ার দায় না নিয়ে জীবনসঙ্গীকে ডিভোর্স ও সন্তানকে দত্তক দিলে নিজের জীবনটাও নির্বিঘ্নে কাটানো যায়। ওই জীবনগুলোও বেঁচে থাকার নতুন কারণ খুঁজে পায়।
একজন মা নিজের সন্তানের জীবননাশকারী আরও একটি কারণে হয়ে ওঠেন। এই কারণটি ২০২৫ সালে এসেও অনেকের কাছে হাস্য়রসের বিষয়। তা হলো–পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বজুড়ে সন্তান প্রসবের পর প্রতি ১০০ জনে ৮৫ জন এই জটিলতায় ভোগেন। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যান অনেকে। কিন্তু যাঁরা স্বাভাবিক হতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেই ঘটে অঘটন। বেবি ব্লু থেকে সৃষ্টি হয় তীব্র হতাশার, তারপর তা রূপ নেয় পোস্টপার্টাম সাইকোসিসে। এসব ক্ষেত্রে মা নিজের সন্তানকে হত্য়া পর্যন্ত করতে পারেন। এমনিতেও খেয়াল করলে দেখবেন, একজন মা তাঁর সন্তানের সঙ্গে যত ধরনের বিরূপ আচরণ করেন, তার অন্যতম মূল কারণ পারিবারিক অসহযোগিতা। আমাদের দেশে এই সংকট আরও প্রবল। বেশির ভাগ পরিবারেই দেখা যায়, বাড়ির সব কাজ ও সন্তান লালন-পালনের প্রতিটি বিষয় মায়ের কাঁধে চেপে বসে আছে। ফলে দিন শেষে, তিনিও ভারসাম্য় হারাচ্ছেন। চোটপাট করছেন অবুঝ শিশুটির ওপর।
তবে যে কথা দিয়ে এই লেখার শুরু, তাতে একটা কথাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে; নিজেদের কাছে একটা আশা রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে, তা হলো–যদি কেউ সন্তান না চান, তাকে সুন্দর একটা জীবন দেওয়ার ইচ্ছা না থাকে বা বুঝে থাকেন পৃথিবীতে এলে তাকে অবহেলাই পেতে হবে; তাহলে তাকে পৃথিবীতে আসার পথ না দেখানোই ভালো। যে শিশু নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে না, তাকে আপনি তো আপনার ইচ্ছাতে হত্য়া করতে পারেন না। হাওয়ায় ভেসে আসা নবজাতকের কান্না, শিয়ালের আঁচড়ে কেঁপে ওঠা তার শরীর, জলের বুদ্বুদে মিশে যাওয়া তার বুকের মৃদু ধুকপুক শব্দ প্রকৃতিতে যে অভিশাপ ঢেলে দেয়। প্রকৃতি সব মনে রাখে। সেও তো সব কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দেয়। কী, দেয় না?

আমি খুবই সম্মানিত হয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল লরিয়েট, বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য ব্যক্তি। তিনি যে এত অমায়িকভাবে আমাকে ফোন দেবেন, আমি এতে খুবই আশ্চর্য হয়েছি, খুবই মুগ্ধ হয়েছি।
১০ নভেম্বর ২০২৪
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৭ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৭ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৭ ঘণ্টা আগে