Ajker Patrika

বিপদের বন্ধু যখন স্কুটি

সাজিদ মোহন
বিপদের বন্ধু যখন স্কুটি

আকবর হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সায়েরা বানু পাপড়ি। কর্মস্থল থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। বাড়ি থেকে তিন-চার কিলোমিটার হাঁটার পর মেলে গাড়ির দেখা, কখনোবা মেলে না। কিছু পথ হেঁটে, কিছু পথ গাড়িতে চড়ে প্রতিদিন কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয় সকাল নয়টায়। ঝড়-বৃষ্টি হলে সীমা থাকে না দুর্ভোগের। সেই কষ্ট দূর করতে সম্প্রতি স্কুটি কিনেছেন তিনি। সেটি চালিয়ে নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়া করেন।

সায়েরা বানু পাপড়ি জানান, আগে হেঁটে, দু-তিনটা গাড়ি বদল করে স্কুলে আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যেত। আসা-যাওয়ায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচ হতো। এখন স্কুটি চালিয়ে স্কুলে আসতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। খরচও অনেক কম। এ ছাড়া ছেলেকে মাদ্রাসায় দেখতে যাওয়া, অফিস ও ব্যাংকে যাওয়া-আসা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে।

মূল ভূখণ্ড থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সন্দ্বীপ উপজেলায় যাতায়াতের জন্য নেই উন্নত গণপরিবহনের ব্যবস্থা। উপজেলার প্রধান দুটি সড়কে চলে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। উপসড়কগুলোতে মাঝেমধ্যে দেখা মেলে গাড়ির। চাকরিজীবী নারী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।

মাঝেমধ্যে গাড়ি মিললেও গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। সেই অন্ধকারে বর্তমানে আশার আলো দেখাচ্ছে স্কুটি।

সায়েরা বানু পাপড়ির মতো স্কুটি চেপে স্কুলে যাওয়া-আসা করেন মগধরা আবাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতকিয়া আনিকা। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। স্কুলে যাওয়া-আসার সময় গাড়ি পাওয়া যায় না। তাই স্কুটি কিনেছি।’

কিন্তু শুরুর পথটা বর্তমানের মতো অতটা সহজ ছিল না। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো স্কুটি চালিয়ে কলেজে যাওয়া শুরু করেন তাহমিনা আকতার। তিনি দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাহমিনা বলেন, ‘শুরুতে ৯৫ শতাংশ মানুষ আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রথম প্রথম কলেজ থেকে স্কুটি চালিয়ে বাড়ি আসার পর কান্না করতাম অনেকের বাজে মন্তব্য শুনে। তারা বলত, মা-বাবা আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে। আমি সন্দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট করছি। একসময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, স্কুটি চালিয়ে আর কলেজে যাব না। আমার পরিবারের সদস্যরা, বড় বোন শারমিন আকতার মিশু, নাজিম উদ্দীন স্যার, বড় ভাই-বোন ও সহপাঠীরা অনুপ্রাণিত করেছেন। সাংবাদিক অপু ইব্রাহিমের সহায়তায় বখাটেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। আগের প্রতিবন্ধকতা বর্তমানে অনেকটা কেটে গেছে। অনেক মেয়ে স্কুটি চালাচ্ছেন সন্দ্বীপে। দেখে খুব ভালো লাগে, সাহস পাই।’

নিজে স্কুটি চালানোর পাশাপাশি তাহমিনা স্কুটি চালানো শিখিয়েছেন সহপাঠী মানছুরা আক্তার শান্তাকে। মুস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্তা কলেজে যাওয়া-আসা করছেন স্কুটি চালিয়ে। তাঁদের দেখানো পথে স্কুটি চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন দুজন শিক্ষিকা, একজন সরকারি কর্মকর্তা ও দুজন স্কুলশিক্ষার্থী।

সন্দ্বীপ আনন্দ পাঠশালার শিক্ষার্থী উম্মে সালমা সামিয়া ও বিবি মরিয়ম সাদিয়ার বাবা বেলায়েত হোসাইন। তিনি মগধরা ষোলোশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বেলায়েত হোসাইন বলেছেন, ‘স্কুলের বাস আমাদের বাড়ি পর্যন্ত আসে আসে না। সেটি যেখানে থামে, সেখান থেকে আমাদের বাড়ির দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। স্কুলের বাসের সঙ্গে আমাদের সময় মেলে না। চাকরির কারণে আমি নিজেও মেয়েদের স্কুলে দিয়ে আসতে পারি না। স্কুটি কিনে দিয়েছি মেয়েদের। চালানো শিখিয়েছি। দুই বোন এখন একসঙ্গে স্কুটি চালিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে।’

মুস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ জামিল ফরহাদ জানিয়েছেন, মেয়েদের প্রতিবন্ধকতা জয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন নেসা চৌধুরী জেসিও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সন্দ্বীপের মতো জায়গায় স্কুটি চালিয়ে স্কুল, কলেজ, কর্মস্থলে যাতায়াতের বিষয়টিকে তিনি নতুন দিকের সূচনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ