Ajker Patrika

বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে ইসলাম

ড. ক্রেইগ কনসিডাইন
বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে ইসলাম

মক্কার সাধারণ এক ক্রীতদাস ছিলেন বিলাল ইবনে রাবাহ। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দাওয়াতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবিদের কাতারে নিজের নাম লেখান। বলা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের সূত্রপাত হয়েছিল তাঁকে ঘিরেই। তাঁর বাবা ছিলেন আরব ক্রীতদাস। মা ছিলেন ইথিওপিয়ান রাজকুমারী। সেকালের নিয়মমতো কোনো এক দুর্ভাগ্যের বেড়াজালে আটকে তিনি ক্রীতদাসীতে পরিণত হন।

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত ধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের কারণে বিলালের ওপর নেমে আসে দুর্বিষহ নির্যাতন। বিলালের মনিব তাঁর ওপর নির্মম অত্যাচার করতে শুরু করে। তাঁকে মক্কার পথে-প্রান্তরে, উত্তপ্ত মরুভূমিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার জন্য অত্যুৎসাহী জনতার কাছে ছুড়ে দেওয়া হতো। জ্বলন্ত অঙ্গারসম মরুভূমিতে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হতো। বুকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো বিশাল পাথর। এভাবে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে ইসলাম ত্যাগের আদেশ দিত নিষ্ঠুর মনিব। কিন্তু বিলাল বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হারাননি। তাঁর ইমানের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও তিনি ‘আল্লাহ এক’ ‘আল্লাহ এক’ বলে নির্যাতন সয়ে যান।

ইসলামের প্রতি বিলালের অটুট বিশ্বাস ও নজিরবিহীন ত্যাগ দেখে নবী মুহাম্মদ (সা.) আবু বকরের মাধ্যমে নিষ্ঠুর মনিবের কাছ থেকে বেশ চড়া দামে তাঁকে কিনে নেন। এরপর রাসুলের পরামর্শে আবু বকর তাঁকে দাসত্বের কবল থেকে মুক্ত করে দেন।

দাসত্বের শিকল থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিলাল প্রাথমিক মুসলিম সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাতারে শামিল হলেন এবং নবীজির সঙ্গে মক্কায় দাওয়াতের কাজ চালিয়ে গেলেন। মদিনায় হিজরতের পর আজানের প্রত্যাদেশ এলে নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁকেই মসজিদে নববিতে আজান দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। এভাবে তিনি ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিনের মর্যাদা লাভ করেন।

বিলাল কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন। তাঁর গায়ের রঙের কারণে বিষয়টি অনেকের কাছে বেমানান ঠেকল। একজন কালো মানুষের জন্য এমন সম্মানজনক দায়িত্ব মানায় না! একবার কোনো এক ঘটনার জেরে এক সাহাবি মুখ ফসকে বিলালের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন। ‘এই, কৃষ্ণাঙ্গের ছেলে’ বলে সম্বোধন করে তাঁকে অপমানিত করলেন। এ ঘটনায় নবীজি খুব বেশি অসন্তুষ্ট হলেন। সেই সাহাবিকে ডেকে বললেন, ‘তুমি তাঁর মায়ের নামে গালি দিয়েছ? তোমার মধ্যে দেখি এখনো কিছুটা জাহেলি যুগের স্বভাব রয়ে গেছে।’

এভাবেই বর্ণবৈষম্যের বিষবৃক্ষের শিকড় উপড়ে ফেলতে নবী মুহাম্মদ (সা.) মনোযোগী হন। যে সমাজে ব্যক্তির বংশপরিচয় তার নীতি-নৈতিকতা ও সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি ভাবা হয়, সেই সমাজকে তিনি অন্ধকার রাজ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই বর্ণবাদ বিরোধিতা সপ্তম শতাব্দীর প্রভাবশালী আরব বর্ণবাদকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়। ইসলামের প্রভাব যতই বেড়েছে, বর্ণবৈষম্যের কুসংস্কার পেছনে ঠেলে সাদা-কালোর পার্থক্য না করে মুসলমানরা একই শামিয়ানার তলে আশ্রয় নিয়েছে।

তর্ক সাপেক্ষে, নবী মুহাম্মদ (সা.)ই ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, বর্ণ বা বংশগুণে কেউ কারও ঊর্ধ্বে নয়। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে আরাফাতের ময়দানে দেওয়া বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণটি আজও ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই ভাষণে নবী মুহাম্মদ (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বর্ণবাদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘সমগ্র মানবজাতি আদম ও হাওয়ার সন্তান। অনারবের ওপর আরবের কোনো প্রাধান্য নেই। তেমনি আরবের ওপর অনারবেরও কোনো প্রাধান্য নেই। শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের বা কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য কেবল তাকওয়া, পুণ্য ও ভালো কাজের ভিত্তিতেই হবে।’

আজও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই শিক্ষা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবজাতিকে আলো বিতরণ করছে। যুগে যুগে মানুষ বর্ণপ্রথার মূলোৎপাটনে এবং সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আসছে। মুসলিম নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মালিক আল-শাহবাজের কথাই ধরা যাক, ম্যালকম এক্স নামেই যিনি অধিক পরিচিত। গত পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।

মক্কায় হজ পালন শেষে ম্যালকম এক্স সেই বিখ্যাত পত্রটি লেখেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘এখানে সারা বিশ্ব থেকে আগত লক্ষাধিক হাজি অংশ নিয়েছিলেন। কারও নীল চোখ, সোনালি চুল; কেউ আবার আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ। কিন্তু আমরা সবাই একই ধর্মানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের প্রকৃত অর্থ এখানেই ফুটে উঠেছে। অথচ আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে সাদা-কালোর এরকম বৈচিত্র্যপূর্ণ মিলনের অস্তিত্ব পৃথিবীর বুকে অসম্ভব!’

ম্যালকম এক্স আরও বলেছেন, ‘নিজেদের বর্ণের বাইরে গিয়ে, অন্যদের সঙ্গে মিশে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ ভ্রাতৃত্বের চর্চা ইতিপূর্বে তিনি কখনো দেখেননি। ম্যালকম মনে করেন, হজ বর্ণবাদের ঘৃণ্য দেয়াল ভেঙে দেয় এবং বর্ণসমতার পথ দেখায়।’

এ ছাড়া নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বর্ণবাদবিরোধী শিক্ষা সাধারণ বর্ণসমতার চিন্তাধারা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাধারণ অবর্ণবাদীরা বর্ণবাদের কুসংস্কারগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে না, সোচ্চারভাবে মত প্রকাশ করে না। সমাজ থেকে বর্ণবাদের অভিশাপ মুছে দিতেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। পক্ষান্তরে, নবী মুহাম্মদ (সা.) কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা ভেতরে-বাইরের সব ধরনের বর্ণবাদের দেয়াল ভেঙে ফেলেন। তিনি বর্ণবাদকে সমাজের মারাত্মক উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করেন, যার মূল কারণ মানুষের অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্বের মনোভাব।

আজকের পৃথিবী খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। আমি নিজেও একজন অমুসলিম, কিন্তু আমি স্বীকার করতে বাধ্য, নবী মুহাম্মদের বর্ণবৈষম্যবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি অনুপ্রাণিত হই। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, একজন মানুষ তার গোত্র পরিচয়ে অন্য কারও থেকে আলাদা নয়, বরং উন্নত চরিত্র ও ভালো আচরণের মাধ্যমে একে অন্যের চেয়ে পৃথক ও স্বতন্ত্র বিবেচিত হয়। 

লেখক: আইরিশ-আমেরিকান স্কলার এবং টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক। 
‘অ্যাবাউট ইসলাম’ থেকে মিশকাত মুহাম্মদের ভাষান্তর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ০১ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১২ মিনিট
ফজর০৫: ১৩ মিনিট০৬: ৩২ মিনিট
জোহর১১: ৫৫ মিনিট০৩: ৩৭ মিনিট
আসর০৩: ৩৮ মিনিট০৫: ১৩ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৫ মিনিট০৬: ৩৪ মিনিট
এশা০৬: ৩৫ মিনিট০৫: ১২ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পবিত্র কাবায় শিশুদের নিরাপত্তায় বিনা মূল্যে ‘সেফটি ব্রেসলেট’

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি কর্তৃপক্ষ মসজিদে হারামের অভ্যন্তরে হারিয়ে যাওয়া শিশু ও বয়স্কদের খুঁজে বের করার জন্য বিনা মূল্যে সেফটি ব্রেসলেট (রিস্টব্যান্ড) বিতরণ করছে। এই ব্রেসলেটগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে আজইয়াদ গেট ৩ এবং কিং ফাহাদ গেট ৭৯-এ।

গ্র্যান্ড মসজিদে আগত অভিভাবকেরা নির্দিষ্ট গেটগুলোতে প্রবেশের সময় এই ব্রেসলেটগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন। কর্মী বাহিনী এই সুনির্দিষ্ট স্থানগুলোতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদান করছে।

এই সুরক্ষা ব্রেসলেটগুলো গ্র্যান্ড মসজিদের ভেতরে শিশু ও বয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে—তাদের সহজে ট্র্যাক করতে সাহায্য করছে এবং হারিয়ে যাওয়া শিশুর ঘটনা প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে।

নিরাপত্তাকর্মী ও মসজিদ স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা হারিয়ে যাওয়া শিশু বা বয়স্কদের দেখলে ব্রেসলেটগুলো পরীক্ষা করতে পারেন এবং দ্রুত সেখানে তালিকাভুক্ত অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

ব্রেসলেটগুলোতে যোগাযোগের তথ্য সংযুক্ত থাকে, যাতে কোনো হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।

প্রতিটি ব্রেসলেটে একটি অনন্য আরএফআইডি (RFID) আইডি রয়েছে। ভিড়ের মধ্যে কেউ আলাদা হয়ে গেলে, নিরাপত্তাকর্মীরা আইডি স্ক্যান করে দ্রুত তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। এর জন্য কোনো রেজিস্ট্রেশন বা অ্যাপের প্রয়োজন নেই।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ব্রেসলেটগুলো একজন দর্শনার্থীর অবস্থানকালীন পুরো সময়জুড়ে সক্রিয় থাকে এবং প্রস্থান করার সময় নিষ্ক্রিয় করা হয়। এর জন্য কোনো খরচ লাগে না এবং কোনো ব্যক্তিগত তথ্যও সংরক্ষণ করা হয় না।

সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চার দশক বুখারি শরিফ পড়ানো শায়খুল হাদিস মাহবুবুল হক কাসেমীর ইন্তেকাল

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৬
মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী। ছবি: সংগৃহীত

জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ার স্বনামধন্য শায়খুল হাদিস মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর-২ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৩ বছর। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন।

আজ জোহরের নামাজের পর তাঁর কর্মস্থল জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁকে পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।

মরহুম মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী ১৯৬৪ সালে পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর থানার নলবুনিয়া গ্রামে এক দ্বীনি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মাওলানা শামসুল হক এবং দাদা ছিলেন মৌলভি নাজেম আলী হাওলাদার।

শৈশবেই নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি দ্বীনি শিক্ষার পথে অগ্রসর হন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দারুল উলুম বাদুরা মাদ্রাসায় উর্দু, ফারসি ও মিজান জামাত সম্পন্ন করেন। এরপর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাজুলিয়া মাদ্রাসায় নাহবেমির ও হেদায়াতুন্নাহু জামাত শেষ করেন। ১৯৭৮ সালে গওহরডাঙ্গা দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে কাফিয়া জামাত সমাপ্ত করে বোর্ড পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় শরহে জামি, শরহে বেকায়া ও হেদায়া জামাত সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে জালালাইন, মেশকাত, তাকমিলে দাওরা ও তাকমিলে আদব সম্পন্ন করেন। মেশকাত জামাতে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৮৭ সালে তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উর্দু সাহিত্যে মাস্টার্স সমমানের কামেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রশংসনীয় ফলাফল অর্জন করেন এবং বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। একই সময়ে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে খোশখাত বা ক্যালিগ্রাফিতে বিশেষ সনদও অর্জন করেন।

শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয় ভারতের রাজস্থানের জামিয়া লতিফিয়ায়। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেখানে তিনি বুখারি শরিফ, তিরমিজি, মুসলিম ও মিশকাত শরিফের দরস প্রদান করেন। পরবর্তীকালে দেশে ফিরে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জামিয়া রহমাতুল্লাহ আমলাপাড়া মাদ্রাসায় এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জামিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ২০০০ সালে জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ায় দাওরায়ে হাদিস চালু হলে তিনি সেখানে বুখারি ও তিরমিজি শরিফের দরস শুরু করেন। দীর্ঘদিন তিনি এখানে শিক্ষাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন এবং আমৃত্যু জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ার শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি লালমাটিয়া মাদ্রাসার পাশাপাশি লালবাগ জামিয়া শায়েখিয়া, জামিয়া আবরারিয়া কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় বুখারি শরিফের দরস প্রদান করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক কেল্লা শাহী মসজিদে নিয়মিত খতিবের দায়িত্ব পালন করেন।

ইসলাহি ও তাসাউফের ক্ষেত্রে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়নকালেই মাওলানা মছিহুল্লাহ খান জালালাবাদী (রহ.)-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে শাহ আবরারুল হক (রহ.) এবং এরপর আল্লামা কমরুদ্দীনের হাতে রুজু ও বাইআত গ্রহণ করে খেলাফত লাভ করেন।

মরহুম মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে সফর করে দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর ইন্তেকালে দেশের আলেম সমাজ, ছাত্রবৃন্দ ও ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাবলিগের প্রবীণ মুরব্বি হাজি সেলিমের ইন্তেকাল

ইসলাম ডেস্ক 
তাবলিগ জামাতের প্রবীণ মুরব্বি হাজি সেলিম। ছবি: সংগৃহীত
তাবলিগ জামাতের প্রবীণ মুরব্বি হাজি সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

তাবলিগ জামাতের প্রবীণ ও বিশিষ্ট মুরব্বি হাজি সেলিম আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ভোরে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি কেরানীগঞ্জের নিজ বাসভবনে ফজরের নামাজের আগে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ি নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

হাবিবুল্লাহ রায়হান মরহুমের কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘হাজি সেলিম সাহেব দীর্ঘকাল ধরে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। বিশেষ করে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে একটি বিশেষ জামাতের খেদমতে তাঁর অবদান ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য, যা সংশ্লিষ্টদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।’

হাবিবুল্লাহ রায়হান আরও জানান, মরহুম হাজি সেলিমের জানাজা আজ জোহরের নামাজের পর মান্দাইল-জিনজিরা ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

তাঁর ইন্তেকালে দাওয়াত ও তাবলিগের অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাবলিগের সাথি ভাই ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছেন—তিনি যেন তাঁকে ক্ষমা করেন, তাঁর কবরকে প্রশস্ত করেন, জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত