Ajker Patrika

রবিউল আউয়ালের শেষ জুমা: জীবনের পথনির্দেশ

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের প্রতিটি মাসেরই রয়েছে নিজস্ব মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য। তবে মুসলিম উম্মাহর জীবনে রবিউল আউয়াল মাসটি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি কেবল একটি সাধারণ মাস নয়, বরং এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শুভাগমনকে, যিনি মানবজাতিকে সত্য, ন্যায়, দয়া, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতার মতো অমূল্য মানবিক শিক্ষা প্রদর্শন করেছেন। নবীজির জীবন ও আদর্শ আমাদের জন্য সারা জীবনের পথনির্দেশ।

রবিউল আউয়াল মাসের শেষ জুমা আমাদের মনে করিয়ে দেয় নবীজির আদর্শ অনুসরণের গুরুত্ব। যদিও শরিয়তে এই দিনের জন্য কোনো বিশেষ আমল নির্দিষ্ট নেই, তবু এটি আত্মপর্যালোচনা, তওবা এবং নবীর সুন্নাহ অনুসরণের প্রতিজ্ঞা করার এক অনন্য সুযোগ। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা বছরের বাকি সময়গুলোতে নবীজির শিক্ষা কতটা বাস্তবায়ন করেছি। এই শেষ জুমার শিক্ষা হলো, ইমান ও আমল, ন্যায় ও সত্যবাদিতা, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা যেন শুধু ধর্মীয় কার্যকলাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের নৈতিক ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।

শেষ জুমার শিক্ষা ও তাৎপর্য

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকালকে আশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব: ২১)

এই আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, রাসুল (সা.)-এর জীবন আমাদের জন্য এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটি শুধু রবিউল আউয়াল বা বিশেষ কোনো দিনের জন্য নয়, বরং আমাদের সারা জীবনের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। নবীজির জীবন থেকে আমরা শিখি কীভাবে ন্যায়ের পথে চলতে হয়, সত্যের সঙ্গে অটল থাকতে হয় এবং মানবিক মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখতে হয়।

সারা বছরের দায়িত্ব

১. ইমান ও আমল দৃঢ় রাখা: ইসলামের ভিত্তি হলো পাঁচটি স্তম্ভ: কালিমা, নামাজ, জাকাত, রমজানের রোজা ও হজ। এই স্তম্ভগুলো আমাদের জীবনকে সুশৃঙ্খল করে তোলে। ইমান ও আমল দৃঢ় থাকলে আমরা নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বের প্রতি সচেতন থাকি। নামাজ, রোজা ও হজ আমাদের জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মতান্ত্রিকতা নিয়ে আসে, যা নৈতিক মূল্যবোধকে মজবুত করে।

২. সুন্নাহ অনুসরণ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহকে ভালোবাসে, সে আমাকে ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে, সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে।’ (জামে তিরমিজি: ২৬৭৮)। সুন্নাহ অনুসরণ শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা চর্চার নির্দেশনা দেয়।

৩. সত্যবাদিতা ও ন্যায়ের চর্চা: রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সত্যবাদী হও, কারণ সত্যবাদিতা মানুষকে নেকির দিকে নিয়ে যায় এবং নেকি মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যায়।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৬০৭)। সত্যবাদিতা সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে। একজন সত্যবাদী ব্যক্তি কেবল নিজের জন্য নয়, বরং সমাজের জন্যও আলোর দিশারি হিসেবে কাজ করে।

৪. মানবসেবা ও সহমর্মিতা: মানবসেবা কেবল দান-সদকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আমাদের প্রতিদিনের আচরণ, সহানুভূতি ও সততার মধ্যেও প্রকাশ পায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে মানুষের উপকারে আসে।’ (আল-মুজামুল আউসাত, তাবারানি: ৫৭৮৭)। এই শিক্ষা মুসলিম সমাজকে শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল করে এবং ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করে।

৫. ভ্রাতৃত্ব ও সহনশীলতা: আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা একে অপরের ভাই।’ (সুরা হুজুরাত: ১০)। ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহনশীলতা ব্যক্তি ও সমাজকে শক্তিশালী করে। পারস্পরিক বিদ্বেষ ও ঈর্ষা পরিহার করে আল্লাহর বান্দা হিসেবে একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।

৬. দাওয়াত ও সত্য প্রচার: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি তোমার প্রভুর পথে আহ্বান করো প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে।’ (সুরা নাহল: ১২৫)।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।’ (সহিহ্ বুখারি: ৩৪৬১)। দাওয়াত আমাদের দায়িত্বশীল ও সচেতন মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলে। এটি কেবল প্রচার নয়, বরং সঠিক পথে চলার আহ্বান এবং নৈতিক শিক্ষার বিস্তার।

আত্মপর্যালোচনা ও পরিবর্তন

রবিউল আউয়ালের শেষ জুমা আমাদের আত্মবিশ্লেষণের এক অনন্য সুযোগ। এই দিনে আমাদের উচিত নিজেদের আত্মার হিসাব নেওয়া এবং নতুন বছরে নবীজির সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের আত্মার হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৫৯)

রবিউল আউয়ালের শেষ জুমা আমাদের জন্য আত্মবিশ্লেষণ এবং নতুন প্রতিজ্ঞার এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নবীজির জীবন আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা এবং মানবসেবার চর্চা ব্যক্তি ও সমাজে শান্তি ও কল্যাণ আনতে পারে। আসুন, এই শেষ জুমার দিনে আমরা নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক উন্নতিতে মনোনিবেশ করি এবং সারা বছর নবীজির আদর্শ অনুসরণের দৃঢ় সংকল্প করি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ১০ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৯ মিনিট
ফজর০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
জোহর১২: ০২ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২১ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৩ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত