Ajker Patrika

উপহাস—ইসলামের দৃষ্টিতে এক গুরুতর অপরাধ

ইসলাম ডেস্ক
উপহাস—ইসলামের দৃষ্টিতে এক গুরুতর অপরাধ

মানুষ স্বভাবতই আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন একটি প্রাণী। এই আত্মমর্যাদা ও সম্মানবোধ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা মানুষকে দান করেছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে বৈচিত্র্যপূর্ণ রং, আকার ও আকৃতি দিয়ে তৈরি করেছেন।

তাই কোনো মানুষের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য, দুর্বলতা বা ভিন্নতা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা, উপহাস করা অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গুরুতর অপরাধ। এটি মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার ও আত্মমর্যাদার ওপর আঘাত।

কেন উপহাস করা হারাম

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে উপহাস ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে।’ (সুরা হুজুরাত: ১১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। কেউ কারও ওপর অবিচার করবে না, কাউকে অপমানিত করবে না এবং অবজ্ঞা করবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৫৬৪)

ইসলামে কোনো মানুষের মান-সম্মান নষ্ট হয় এমন সব কাজকে হারাম করা হয়েছে। গিবত, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ এবং অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো—সবকিছুই এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।

রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৫৬৪)

উপহাসের ভয়াবহ পরিণতি

যারা মানুষের সম্মানহানি করে, উপহাস ও বিদ্রূপে লিপ্ত হয়, তাদের জন্য ইসলামে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। উপহাস করাকে কোরআনে গুরুতর পাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা পাপী তারা বিশ্বাসীদের উপহাস করত।’ (সুরা মাউন: ২৯)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মানুষের জন্য এতটুকু অনিষ্টই যথেষ্ট যে সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় করবে।’

উপহাস করা কাফেরদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কাফেরদের নিকট পার্থিব জীবন সুশোভিত করা হয়েছে। তারা মুমিনদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকে।’ (সুরা বাকারা: ২১২)

উপহাসকারীদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য রয়েছে মহা দুর্গতি।’ (সুরা হুমাজাহ: ১)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিল, পরিণামে তাই বিদ্রূপকারীদের পরিবেষ্টন করেছে।’ (সুরা আনআম: ১০)

মানুষের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা একজন মুমিনের মৌলিক গুণ। আসুন, আমরা একে অপরকে সম্মান করি এবং বিদ্রূপের মতো নিন্দনীয় অভ্যাস থেকে নিজেদের দূরে রাখি।

লেখক: মাওলানা আব্দুর রহমান, মুহাদ্দিস ও ইসলাম বিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতের টুপি পরে নামাজ আদায় করা যাবে কি?

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডার প্রকোপে অনেকেই কানটুপি, উলের টুপি কিংবা হুডি পরে থাকেন। এসব পরিধান করা অবস্থায় অনেক সময় নামাজের সময় হয়ে যায়। তাই নানা সময়ে মনে প্রশ্ন জাগে, শীতের টুপি বা হুডি পরে নামাজ আদায় করলে কি তা শুদ্ধ হবে?

ইসলামের বিধান হলো, নামাজে মাথা ঢাকা পুরুষের জন্য ফরজ নয়, বরং এটি নামাজের আদব ও সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত মাথা ঢেকেই নামাজ আদায় করতেন। আবু দাউদ শরিফে এসেছে, নবীজি (সা.) পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করতেন। ফিকহের দৃষ্টিতে কানটুপি, উলের টুপি বা সাধারণ টুপি—সবই মাথা ঢাকার পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে কানটুপি পরে নামাজ আদায় করা সম্পূর্ণ জায়েজ।

কানটুপি বা হুডি পরে নামাজ আদায় করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি—সেটি হলো সিজদা। সিজদার সময় কপাল সরাসরি মাটিতে বা জায়নামাজে লাগানো আবশ্যক। যদি টুপিটি এমনভাবে পরা হয়, যা কপালকে ঢেকে রাখে এবং মাটিতে কপাল ঠেকতে বাধা দেয়, তবে সিজদা অপূর্ণ থেকে যেতে পারে। তাই সিজদার সময় কপাল উন্মুক্ত রাখা উত্তম। তবে কপাল সামান্য আবৃত থাকলেও নামাজ হয়ে যাবে।

শীত থেকে বাঁচতে নাক-মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা অনুচিত। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। তাই কান ও গলা আবৃত থাকলেও নাক-মুখ খোলা রাখা উচিত।

তাই শৈত্যপ্রবাহের সময় নিশ্চিন্তে কানটুপি পরা যাবে যদি টুপিটি পবিত্র (পাক-সাফ) হয়, এটি অহংকার বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে না হয়ে কেবল শীত নিবারণের জন্য হয় এবং সিজদার সময় কপাল মাটিতে স্থাপনে কোনো বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ০৭ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৮ মিনিট
ফজর০৫: ১৯ মিনিট০৬: ৩৮ মিনিট
জোহর১২: ০১ মিনিট০৩: ৪৩ মিনিট
আসর০৩: ৪৪ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট
মাগরিব০৫: ২১ মিনিট০৬: ৪০ মিনিট
এশা০৬: ৪১ মিনিট০৫: ১৮ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১২ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ০৬ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৭ মিনিট
ফজর০৫: ১৮ মিনিট০৬: ৩৮ মিনিট
জোহর১২: ০০ মিনিট০৩: ৪৩ মিনিট
আসর০৩: ৪৪ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট
মাগরিব০৫: ২১ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
এশা০৬: ৪০ মিনিট০৫: ১৭ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতকালে অজুতে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা

ইসলাম ডেস্ক 
অজু। ছবি: সংগৃহীত
অজু। ছবি: সংগৃহীত

শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকে অজু করতে অলসতা করেন অথবা তাড়াহুড়ো করে অজুর অঙ্গগুলো ঠিকমতো না ভিজিয়েই ইবাদতে লিপ্ত হন। অথচ অজুর কোনো অংশ শুকনো থাকলে নামাজ ও ইবাদত কবুল হয় না। শীতের এ প্রতিকূল সময়ে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি:

শীতের কাপড়ের কারণে অনেকে হাতা ঠিকমতো না গুটিয়েই হাত ধুয়ে নেন, ফলে কনুই শুকনো থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখতে হবে, কনুই বা পায়ের টাখনুর কোনো অংশ সামান্য শুকনো থাকলেও অজু হবে না। (সহিহ্ মুসলিম: ২৪৬)

তাড়াহুড়ো করে অজু করতে গিয়ে অনেকে পায়ের গোড়ালি ঠিকমতো ভেজান না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আগুনের কঠিন শাস্তি সেই গোড়ালিগুলোর জন্য (যা অজুর সময় শুকনো থাকে)! তোমরা খুব ভালোভাবে অজু করো।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৪১)

ঠান্ডার ভয়ে অনেকে প্রস্রাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে আগের অজু দিয়ে নামাজ পড়ার চেষ্টা করেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও অপছন্দের। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের উপস্থিতিতে এবং মল-মূত্রের বেগ চেপে রাখা অবস্থায় কোনো নামাজ নেই।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৫৬০)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো মুমিনের জন্য মল-মূত্রের বেগ নিয়ে নামাজ পড়া বৈধ নয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৯১)

শীতের কষ্টকে উপেক্ষা করে যথাযথভাবে অজু সম্পন্ন করা মুমিনের ইমানি দৃঢ়তার পরিচয়। তাই আমাদের উচিত, তাড়াহুড়ো না করে অজুর প্রতিটি অঙ্গ ভালোভাবে ধৌত করা এবং পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের পর আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান হওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত