Ajker Patrika

স্থগিত কিস্তি ফেরত পাওয়ার ঝুঁকিতে ব্যাংক

ফারুক মেহেদী
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯: ০৮
স্থগিত কিস্তি ফেরত পাওয়ার ঝুঁকিতে ব্যাংক

আজকের পত্রিকা: কেমন চলছে ব্যাংকিং ব্যবসা?
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: ব্যাংকের হিসাবটা হচ্ছে নগদ। যা জমা হবে তা-ই হিসাব। এটাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। এখানে ব্যাংকগুলোতে করোনার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েনি। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিপত্র অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের আমরা বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছি। তাঁদের খেলাপি না করার একটা সুযোগ ছিল। পরিপত্র বলছে, করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে তাঁরা আপাতত ছাড় পাবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে এটা যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, এই স্থগিত কিস্তিগুলো আদায় করা যাবে।

আজকের পত্রিকা: অনেকে বলেন, কৃত্রিমভাবে ঋণ আনক্লাসিফাইড করে রেখেছে ব্যাংক।
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: করোনা যদি বাড়ে, যদি কিস্তি আদায় পিছিয়ে যায়, তাহলে ব্যাংকের ব্যবসায় সামনে একটি কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। কারণ, এত দিন ব্যাংকের এসব কিস্তি আদায় না হওয়া সত্ত্বেও আমরা এটাকে প্রকৃত আদায় হিসেবে আয় দেখাচ্ছি ও ডিভিডেন্ড নিচ্ছি। তার মানে হলো কিস্তিটা আমরা বাস্তবে না পেয়েও নগদে ডিভিডেন্ডটা দিয়ে দিচ্ছি অথচ ব্যাংকে কিস্তির টাকা জমা হচ্ছে না। ফলে এটা দীর্ঘায়িত হলে প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে বলে এটা করা হয়েছে। তবে সত্যিকার অর্থে এটা একটা বাবল বা ফানুস।

আজকের পত্রিকা: ঝুঁকির মধ্যেও ব্যাংকের জন্য আশার খবর কোনটি?
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: অর্থনীতির প্রাণ পোশাক খাত খুবই ভালো করছে। স্পিনিংও ভালো করছে। আমার ধারণা, এ বছর পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি অতীতের যেকোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ভারতের করোনা ঢেউ, মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবের কারণে আমরা পোশাক খাতে বাড়তি সুবিধাও পাচ্ছি। পোশাক খাতকে লকডাউনের বাইরে রাখা হয়েছিল। প্রতিটি কারখানায় এখন ব্যাপক অর্ডারের চাপ। এ শিল্প টিকে থাকলে ব্যাংকসহ আরও অনেক খাত বেঁচে থাকবে। ফার্মাসিউটিক্যালস খাতও ভালো করছে। বেশ কয়েকটি খাত ব্যাংকের লাইফ লাইন হিসেবে কাজ করছে। সরকারের প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। যেসব কাজে তৃতীয় পক্ষের হয়ে আমরা ব্যাংকিং খাত অর্থায়ন করছি। 

আজকের পত্রিকা: আপনারা এসএমই ও ব্যক্তি খাতকে ঋণ দেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: ব্যক্তি খাত এবং অধিকাংশ এসএমই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পোশাক খাতের সুবিধা হলো, দু-একটা অর্ডারে লাভ না হলেও পরের দুটি বা তিনটিতে তারা পুষিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু একটা এসএমই বা ক্ষুদ্রশিল্পে একবার তার পণ্যের দাম কমে গেলে সবই শেষ। আর ব্যাংকে ওদের অ্যাক্সেসিবিলিটি কম। তাদের অর্থায়ন করা আমাদের জন্য কঠিন। কারণ, তাদের কাছে নিজেদেরই কোনো তথ্য নেই। তাদের যদি বলা হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা দিচ্ছে। তোমার যে ক্ষতি হয়েছে, তা হিসাব করে নিয়ে আসো। আমার ধারণা, তাঁদের ১ শতাংশ উদ্যোক্তাও তা হিসাব করে আনতে পারবেন না।

আজকের পত্রিকা: এদেরও তো ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ঋণ না দিলে উপায় কী?
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: তাঁদের যে লোকসান হয়েছে, এটা তাঁরা বলতে পারবেন। কিন্তু আমি তাঁকে কত টাকা দেব, কী কাজে দেব ইত্যাদি সে আমাকে বোঝাতে পারেন না। ব্যাংক তো একটা প্রতিষ্ঠান। এটা তো ওদের মতো মাইক্রো কটেজ ইন্ডাস্ট্রি না। জন্ম থেকেই এসব শিল্প প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে ওঠেনি। যার ফলে আমাদের অ্যাসেসমেন্ট করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে এবং তাঁদের ওই রকম মর্টগেজ রাখার মতো ব্যবস্থাও নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের অর্থায়ন করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে করোনায় করপোরেট খাতের কিস্তি পাচ্ছি না, অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে যদি টাকা দিয়ে আমরা শেষ হয়ে যাই, তাহলে তো ব্যাংকই থাকবে না। 

আজকের পত্রিকা: সামনের দিনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে? 
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: আসলে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এখন প্রথম কাজ হচ্ছে গণহারে টিকা দেওয়া। এর কোনো বিকল্প নেই। এটা দিয়ে যদি করোনাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আমার ধারণা এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা ঘুরে দাঁড়াব। সরকারকে করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে। এটা অদৃশ্য জাদুস্পর্শে শেষ হবে না। টিকাসহ যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের অর্থনীতি শেষ হয়ে যায়নি। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, রপ্তানি—সবই এখনো ভালো আছে। কিন্তু করোনা যদি আবারও আঘাত হানে, তাহলে বড় ঝুঁকি তৈরি হবে অর্থনীতিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ